সুইটহার্ট-পর্ব:১৬

0
1062

#সুইটহার্ট
#Sohani_Simu
১৬.

আমাদের বিল্ডিং এর অডিটোরিয়ামে সোসাইটির সবাই মিলে হৈ হুল্লোর করছি।একটা বড় স্টেজ বানানো হয়েছে সেখানে নাচ-গান,কবিতা আবৃতি,কৌতুক সহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা হবে।সবার দেখে আমিও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করবো।পুরো অডিটোরিয়াম বেলুন আর ছোট ছোট কালারিং লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে।আমি একটা সিলভার কালার গাউন পরেছি,গাউনে অনেক স্টোন আর আর সুতো দিয়ে কাজ করা আছে।তৌসি আর ভাবির সাথে বিকেলে পার্লারে যেয়ে হালকা মেক আপ ও করে নিয়েছি।তৌসিও আমার মতো ড্রেস পরেছে কিন্তু ওরটা ব্লু কালার আর ভাবি কালো কালার শাড়ি পরেছে।ভাবির দেখে আমারও শাড়ি পরতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু সামলাতে পারবোনা দেখে পরিনি।

স্টেজের নিচে দাঁড়িয়ে টয়কে কোলে নিয়ে রকির সাথে ঝগড়া করছি।রকি একটা লাল-সবুজ পান্জাবি পরেছে সেটা আমার পছন্দ হয়নি তাই আমি ওকে সেটা চেন্জ করে শ্রাবণ ভাইয়ার মতো সাদা শার্ট আর নীল প্যান্ট পরতে বলছি কিন্তু রকি নাকি অনুষ্ঠানে ‘সবুজের অভিযান’ কবিতা আবৃতি করবে তাই এমন ড্রেস পরেছে।আমি এখন রাগ করছি দেখে রকি বলল,
“আচ্ছা ঠিক আছে কবিতা শেষ করে আমি ড্রেস চেন্জ করে নিবো ওকে?”

আমি থমথমে মুখ করে ওকে বলে সেখান থেকে চলে আসলাম।পুল সাইডে তৌসি আর কিছু আপু আড্ডা দিচ্ছে।তানজিল আপুকে দেখে ওদিকে যেতে লাগলাম তখনই আমার সামনে শ্রাবণ এসে দাঁড়ালেন।আমি মুচকি হেসে বললাম,”তানজিল আপু এসেছে।ফুপ্পি তানজিল আপুর সাথে আপনার বিয়ে দিবে।চলুন আপুর কাছে যায়।”

উনি রাগী কন্ঠে বললেন,”ওটাকে কোল থেকে নামা।”
আমি টয়কে শক্ত করে ধরে বললাম,”না।”

শ্রাবণ টয়কে একদমই পছন্দ করেন না কেন করেননা উনিই ভাল জানেন হয়তো টয়কে উনি ভয় পান।উনি আমার হাত থেকে টয়কে খুলে নেওয়ার চেষ্টা করতেই আমি তৌসিদের কাছে এক দৌঁড় দিতে গিয়ে পা স্লিপ করে পুলের মধ্যে ধপাস করে পরে গেলাম।আমি তো সাঁতার জানিনা এখন কি হবে!!নাক মুখ দিয়ে পানি ঢুকতে লাগলো।টয়কে ছেড়ে দিয়ে হাত-পা ছুটোছুটি করতে লাগলাম। তখনই কেউ আমাকে পানি থেকেই ফ্লোরে বসিয়ে দিল।উফ্ কি কনকনে ঠান্ডা পানি!নাক মুখ দিয়ে পানি ঢোকায় আমি বসে থেকে কাশতে লাগলাম।তৌসিরা ততক্ষণে আমার কাছে চলে এসেছে। শ্রাবণকে বুক পর্যন্ত পানিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বুঝলাম উনিই আমাকে উপরে তুলেছেন।টয় গা ঝারা দিয়ে শরীর থেকে পানি ঝরাচ্ছে।শ্রাবণ পুল থেকে উঠে ফ্লোরে থাকা ফোন হাতে নিয়ে বললেন,
“এখনই চেন্জ করে নে নাহলে ঠান্ডা লাগবে।এই তৌসি ভাবি কোথায় রে?”

তৌসি আমার পাশে বসে থেকে বলল,”বাসায়।”
শ্রাবণ আমার হাত ধরে আমাকে দাঁড় করিয়ে বললেন,”বাসায় চল।”

আমরা দুজনই ভিজে যাওয়ায় বাসায় যাওয়ার জন্য লিফটে উঠলাম।ড্রেস ভিজে অনেক ভাড়ি হয়ে গিয়েছে।আমি তো খুব ভয়ে আছি শ্রাবণ বকা দিবে সেজন্য কিন্তু উনি আমাকে একটুও বকছেন না।লিফটের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে কাঁপছিলাম হঠাৎই লাইট চলে গেল,লিফটও থেমে গেল।আমি ভীত কন্ঠে বললাম,”শ্রাবণ ভাইয়া?”

উনি ‘অহ শীট’ বলেই অন্ধকারে আমার হাত ধরে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,”ভয় পেয় না এখনই ঠিক হয়ে যাবে।”

আমি কাঁপতে কাঁপতে বললাম,”যদি ঠিক না হয়?সেদিন শুভ ভাইয়ার মতো যদি একঘন্টা বসে থাকতে হয়?”

উনি ভাইয়াকে কল দিয়ে বললেন আমরা লিফটে আটকে গেছি।ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে আমাকে বললেন,”ঠান্ডা লাগছে?”

আমি বললাম,”হুম।”উনি আমাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,”কিছুক্ষণের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে।”

তারপর আমার হাতে ফোন দিয়ে উনার শার্ট খুলে ফেললেন।আমি উল্টো দিকে ঘুড়ে বললাম,
“এই এই কি করছেন?আমি এখানে আছি আপনার লজ্জা করছে না?”

উনি কিছু বললেন না।শার্টটা চিপে আমাকে উনার দিকে ঘুরিয়ে আমার মাথা মুছে দিতে লাগলেন।আমি মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে থাকলাম।উনি আমার মাথা মুছে নিজের মাথা মুছতে লাগলেন।আমি এক চোখ একটু খুলে দেখি উনি একটা সাদা গেন্জি পরে আছেন যদিও উনার বুক পেট সব দেখায় যাচ্ছে তাতে কি কিছু তো পরে আছেন।আমি দুই চোখ খুলে স্বাভাবিকভাবে দাঁড়িয়ে বললাম,

“সব সাজ নষ্ট হয়ে গেল।আবার কখন সাজবো আর কখন কন্টেস্টে অংশগ্রহন করবো?সব হয়েছে আপনার জন্য।”

উনি ভেজা শার্টটা ফ্লোরে রেখে আমার সামনে এসে দুই হাত আমার দুই পাশ দিয়ে লিফটের দেয়ালে রেখে বললেন,”আপনি নাকি অংশগ্রহণ করবেনা?সকালেই আমাকে কি যেন একটা গালি দিলেন?আবার দিন তো আমি তখন ভাল মতো বুঝতে পারিনি।”

আমি ভীত চোখে উনার দিকে তাকালাম।মনে মনে ভাবলাম,কি কান মাইরি!তৌসির রুমে বসে উনাকে গালি দিলাম আর উনি তিন চারটে রুম পরে উনার রুমে বসে শুনে নিলেন!!!

আমি ইনোসেন্ট মুখ করে বললাম,”আপনি তো খুবই ভাল ভাইয়া।আমাকে একটুও বকেন না আর মারেনও না।আপনি সুপার কিউট ভাইয়া।”

উনি আমার গালে উনার গাল ঠেকিয়ে কানে কানে বললেন,”ভাইয়া নয় ফিউচার জাওজুন,ওকে?”

উনি মুচকি হেসে আমার দিকে তাকালেন।আমি ভ্রু কুচকে বললাম,”মানে?”

উনি আবার আমার গালে গাল ঠেকিয়ে কানে কানে বললেন,”মানে ইসলাম টিচারের থেকে শুনে নিও।”

“উফ্ আপনার গালে এসব কি,ফুটছে কেন?আপনার দাঁড়ি না এগুলো?”-বলেই আমি মাথা সরিয়ে নিলাম।উনি আমার পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন,”এত গালি দেওয়া কে শিখিয়েছে তোকে?”

আমি ফট করে বললাম,”সিজানের কাছে শিখেছি।”
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”সিজান এখানে থাকতো আগে?”

আমি একটা হাঁচি ফেলে বললাম,”সিজান তো রকির বন্ধু ছিল।আগে প্রায় রকির কাছে আসতো।আমি তখন রকির কাছে পড়তে গিয়েছিলাম সিজান রকিকে অনেক গালি দিচ্ছিল।ঢাকাতে থাকলে নাকি গালি শিখতেই হয় তাই আমি ওগুলো খাতায় নোট করে নিয়েছিলাম।সিজান তো এখন আর আসেনা তাই নতুন কোন গালি আর শিখা হয়নি।”

উনি বুকে হাত গুজে বললেন,”কেন আসেনা?”

আমি নিচে বসে বললাম,”রকি আসতে দেয় না।”
উনি আমার পাশে বসে বললেন,”রকিকে এখন থেকে ভাইয়া ডাকবি আর সিজানকেও।”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,”কেন?”
উনি ভেজা চুল ঠিক করতে করতে বললেন,”আমি বলেছি তাই আর আমাকে ভাইয়া বলবিনা আমি তোর….!”

আমি পরপর দুতিনটে হাঁচি ফেলতেই উনি ভীত হয়ে আমার একবাহু ধরে বললেন,
” তোর তো ঠান্ডা লেগে গেছে।আর কিছুক্ষণ প্লিজ তারপরই আমরা এখান থেকে বের হয়ে যাবো।”

সেই কিছুক্ষণটা এক ঘন্টা পরও শেষ হলো না।এই ঠান্ডার দিনে সন্ধ্যায় এতক্ষণ ভিজে থাকলে যে কেউ অসুস্থ হবে আর আমি তো ঠান্ডার রোগী।আমাদের ড্রেসের পানি ঝরে গিয়েছে।হাঁচি দিতে দিতে আমি কাহিল,জ্বরও এসেছে।প্রায় পনেরো মিনিট আগে ফোন ও অফ হয়ে গিয়েছে তাই অন্ধকারে আরও অস্বস্তি হচ্ছে।শ্রাবণ আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছেন।আমিও উনার সাথে লেগে আছি কারন আমার খুব শীত লাগছে।মাথাটা ঝিম ঝিম করছে,কেমন যেন ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছি আমি।চোখ বন্ধ করে দূর্বল কন্ঠে বললাম,”শ্রাবণ ভাইয়া,ঘুম পাচ্ছে আমার।”উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমার মাথায় চুমু দিয়ে বললেন,”ঘুমাও।”

আমি উনাকে আরও কিছু বলেছি কিন্তু কি বলেছি আমার মনে পরছে না।অনেকক্ষণ পর বুঝতে পেরেছিলাম আমি রুমে শুয়ে আছি কিন্তু ঘুমের কারনে কথা বলা হয়নি কারও সাথে।

.
এত বড় কোল্ড এ্যাটাক আমার কোনদিন হয়নি।টানা সাতদিন ধরে শুধু শুয়েই আছি।জ্বর উঠা নামা করছে কিন্তু ভাল হচ্ছেনা।হাঁচি তেমন পরেনা কিন্তু খুক খুক করে কাশি হচ্ছে।কাশির সিরাপ খেলে খুব ঘুম হচ্ছে।স্কুল পড়াশুনা সব লাটে উঠেছে।শরীর ঠিক নেই তাই আমার কথা বলাও অনেক কমে গিয়েছে।সেদিন আমি লিফটের মধ্যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম ঘুৃম ভাঙলে দেখি সকাল হয়ে গেছে আর আমি আমার রুমে আছি।লিফট থেকে কিভাবে বেড়িয়ে এলাম কিছুই দেখা হয়নি আমার।

সকালে ড্রয়িং রুমের সোফায় শুয়ে থেকে টিভিতে কার্টুন দেখছি তখনই কলিং বেল বাজলো।ভাবি যেয়ে দরজা খুলতেই শুভ ভাইয়া ভেতরে আসলেন।ভাবি অনেকটা বিরক্ত হয়ে বলল,”আমি তোকে নিষেধ করেছিলাম আসতে।”

শুভ ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,”এখন কেমন আছো তুমি?”
আমি উঠে বসে বললাম,”ভাল।”

আমি আর এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম।শুভ ভাইয়া দুইদিন আগে আমাকে আই লাভ ইউ বলেছিল আর আমাকেও বলতে বলেছিল,আমাকে বিয়েও করতে চেয়েছিল।আমি ভাইয়াকে বলে দিয়েছিলাম তখন ওই ছেলেটাকে বাসায় ঢুকতে দেওয়ার জন্য ভাবিকে অনেক বকেছিল।একদিন পর আজ আবার এসেছে।ছেলেটাকে আমার একটুও ভাল লাগেনা।ভাবিও উনাকে পছন্দ করেনা তাও প্রতিদিন এখানে আসে।ফুপ্পি আমাকে তাদের বাসায় নিয়ে যাবে বলছে কিন্তু আমি যাচ্ছিনা।ওখানে গেল ডিসিপ্লিনের করা ডোজে আমার মৃত্যুও হতে পারে।

প্রায় ত্রিশ মিনিট পর ভাবি এসে দরজায় টোকা দিল।আমি দরজা খুললে ভাবি উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,”জুঁই চল,তোকে শ্রাবণের কাছে রেখে আসবো।শুভ বিকেলে আবার আসবে নাহলে কাল আসবে,আসতেই থাকবে।তালহার সাথে আজই এব্যাপারে কথা বলতে হবে।”

আমি যেয়ে বিছানায় শুয়ে বললাম,”ফুপ্পিদের ফ্ল্যাটে আমার ভাল লাগেনা আমি এখানেই থাকবো।”

ভাবি আমাকে টেনে তুলে বলল,”চল তুই আগে তারপর এমনি ভাল লাগবে,তৌসি আছে ওখানে।”

ভাবি আমাকে নিয়ে ফুপ্পিদের ফ্ল্যাটে আসলো।এসেই শুনলাম শ্রাবণ বুয়েটে গিয়েছেন।উনি প্রতিদিন বুয়েট যান কেন বুঝিনা।তৌসিও কলেজ গিয়েছে।ফুপ্পি আর ভাবি আমাকে তৌসির রুমে যেতে বলে নিজেরা গল্প শুরু করলো।আমি তৌসির রুমে এসে শুয়ে থেকে গেইমস খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে গেলাম।কপালে, চোখে আর গালে কারও ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে দেখি শ্রাবণ।আমি ধরফর করে উঠে বসে ভ্রু কুচকে বললাম,
“এই আপনি আমাকে কিস করলেন?এতগুলো?”

উনি মুচকি হেসে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।আমি ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ বসে থেকেই উনার রুমে চলে গেলাম।উনাকে সোফায় ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকতে দেখে আমি উনার সামনে যেয়ে কোমড়ে দুই হাত রেখে ভ্রু কুচকে বললাম,”আপনি আমাকে কিস করলেন কেন?”

উনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”হোয়াট?আমি তোকে কখন কিস করলাম?”

“এখনই,তৌসির রুমে।” – রাগী কন্ঠে বললাম আমি।উনি ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বললেন,”তুই কি কিছু খেয়েছিস নাকি?মানে ড্রিংক ট্রিংক করেছিস?করলে আই সোয়্যার তোকে আস্ত রাখবো না।এতটুকু এক পিচ্চি সারাদিন মাথার মধ্যে ভালোবাসা,বিয়ে আর চুমুর চিন্তা ঘুরপাক করে শুধু?আমি কাজের প্রেশারে এক ঢোক পানি খাওয়ার টাইম পাচ্ছিনা আর তুই বলছিস তোকে চুমু খেয়েছি?”

আমি ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।হঠাৎ খেয়াল করলাম উনি কালো টিশার্ট পরে আছেন,একটু আগে তো চেক শার্ট পরেছিলেন আর প্যান্ট পরেছিলেন এখন টাউজার পরে আছেন।আমি তাহলে ভুল দেখলাম?আমি তো ঘুমোচ্ছিলাম,তাহলে কি স্বপ্ন দেখলাম?এত তাড়াতাড়ি উনি কিভাবে চেন্জ করলেন?

উনি বললেন,”কি হল বল?”
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম,”কি বলবো?”
উনি উঠে দাঁড়িয়ে দুষ্টু হেসে বললেন,”তোর কোথায় চুমু দিবো সেটা বল। ”

আমি চোখ বড় করে এক দৌঁড়।বাসায় যাবো কিন্তু ফুপ্পি আমাকে যেতে দিল না তাই তৌসির রুমে এসে বসে থাকলাম।

চলবে…………

(ব্যস্ততার মাঝেই লিখলাম।লিখায় ভুল থাকতে পারে প্রচুর।রি-চেইক করা হয়নি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here