সুখের_সন্ধানে পর্ব_৩৬

0
393

#সুখের_সন্ধানে
#পর্ব_৩৬
মিথিলার রিসেপশানেও আসলো না প্রিয়। কত বোঝালাম ছেলেটাকে। তবে সেলিম এসেছে। প্রিয় মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে । একটা মানুষ পা হারাল তার জন্য, এটা সে মেনে নিতে পারছে না কোনোভাবেই। আমারও সবমিলিয়ে খুব খারাপ অবস্থা কিন্তু না এসে তো উপায় নেই। মেয়ের বিদায়ের সময়ও থাকতে পারলাম না। আজও যদি না আসি তবে সবাই কী ভাববে?

আসার পর থেকেই দেখছি মিথিলা খুব আপসেট। কারো সাথে তেমন কোনো কথাবার্তাই বলছে না। আমার সাথেও দায়সারাভাবে দু’চারটার বেশি কথা বলছে না। আর সাজিদও কেমন চুপচাপ। দু’জনের মধ্যে তেমন কথাবার্তাই নেই । শুধু ফটোগ্রাফারদের ইশারায় কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে একের পর পোজ দিয়ে যাচ্ছে দু’জনই। নতুন কাপলদের মাঝে যে উচ্ছ্বাসটুকু দেখা যায় তার ছিটেফোঁটাও নেই সাজিদ বা মিথিলা কারো চোখে। সাজিদের মায়ের সাথে কথা বলে মনে হলো না তেমন কিছু হয়েছে। তাকে তো আসলে ওভাবে কিছু জিজ্ঞেস করাও যায় না। তবে উনি খুব খুশি মিথিলাকে পেয়ে। মিথিলাকে নিয়ে কত প্রশংসা করছে সবার কাছে ।

খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম আমি। কী হতে পারে মিথিলার সাথে? তাড়াহুড়া করে কি মেয়েটার সাথে কোনো অন্যায় করে ফেললাম? কী হচ্ছে এসব আমার সাথে? এতবড় ভুল ডিসিশান আমি কি করে নিলাম? একদিকে নিজের ছেলেটার মুখের দিকে তাকাতে পারছি না সেই টেনশানে খারাপ অবস্থা তার মধ্যে আবার মিথিলার এমন মলিন মুখ আমার মনের মধ্যে সুচের মতো বিঁধছে । এই মুহূর্তেই জানতে মন চাইছে কী হয়েছে? আমার তর সইছে না একদমই। কিন্তু ভয় হচ্ছে মিথিলা সত্য বলবে তো!

কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরেই দেখতে পেলাম মিথিলা একা বসে আছে স্টেজে। গেস্টরা খাওয়া দাওয়ায় ব্যস্ত। ফটোগ্রাফারও নেই আশেপাশে। সাজিদ গেস্টদের তদারকি করছে। আমি এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। সব কথা না জানা পর্যন্ত আমার গলা দিয়ে পানিও নামবে না । দ্রুত মিথিলার পাশে যেয়ে বসলাম । মিথিলা ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। আমি যে পাশে এসে বসেছি ওর খেয়ালই নেই। আমি কোনো কথা না বলেই ওর মুখখানা তুলে ধরলাম। দেখলাম ওর চোখদুটি ভেজা। আমি বুঝ্লাম আমার ধারণাই ঠিক কিছু তো হয়েছে ! এবং এটাও বুঝলাম যে সহজে এই মেয়ের মুখ থেকে কিছু বের হবে না। তাই আমিও কোমর বেঁধেছি যে করে হোক ওর পেট থেকে কথা বের করতে হবে । তাই কোনো প্রশ্ন না করে সরাসরি ওর হাতটা টেনে নিয়ে আমার হাতের ভেতর রেখে চাপাস্বরে ওর চোখে চোখ রেখে বললাম, তুই কিন্তু আমাকে ছুঁয়ে আছিস! একদমই কোনো মিথ্যে বলবি না। আর যদি একবিন্দু কিছু মিথ্যে বলিস তবে আমি ভাবব , তুই কখনো আমাকে মায়ের সমতুল্য ভাবিসই নি! খবরদার, এক বর্ণ কিছু মিথ্যে বলবি না। যদি বলিস তবে তোর সাথে আমার সব সম্পর্ক আজ এখানেই শেষ।

মিথিলা আমার এমন আচরণে হতভম্ভ হয়ে গেল। সে ভীতসন্ত্রস্ত চোখে বলল, না মানে রূম্পা মা! কী হয়েছে? এভাবে কথা বলছ কেন? কী মিথ্যে বলব আমি?

– খুব চাপা স্বরে বললাম, তুই কি প্রিয়কে পছন্দ করতি?

– মিথিলা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল হুট করে এমন প্রশ্নে।

– সে থতমত খেয়ে বলল, না …মানে! এসব কী বলছ?
এটা কেমন প্রশ্ন করছ?

– হ্যা অথবা না । আমি সবই জানি। তারপরেও তোকে জিজ্ঞেস করছি।

– মিথিলা নিশ্চুপ!

– কি রে কথা বলছিস না কেন?

– এসব কথা বলার এখন আর কী ফায়দা , রূম্পা মা? আমি এ নিয়ে কোন কথা বলতে চাই না, প্লিজ।

– আমি আমার উত্তর পেয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম, আমাকে বলিসনি কেন? আর সাজিদই বা এর মাঝে এল কী করে?

– মিথিলা আবারও নিশ্চুপ।

– একবিন্দু কিছু মিথ্যে বলবি না তবে খোদার কসম তোর সাথে আমার দেখা সাক্ষাৎ এই পর্যন্তই শেষ। ভালো করেই জানিস তোর মায়ের সাথেও আমি টানা পাঁচ বছর যোগাযোগ রাখিনি। এসব করার আমার পুরানো অভ্যাস আছে। রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললাম আমি।

কিন্তু মিথিলা কোনো কথা না বলে রোবটের মতো বসে আছে।

মিথিলাকে ধরে হালকা একটা ঝাঁকুনি দিলাম আমি। দাঁতে দাঁত পিসে বললাম , তুই যদি সবকিছু না বলিস তবে ভাবব আমার সাথে এতদিন তুই শুধু স্বার্থের জন্যই সম্পর্ক রেখেছিস। মন থেকে মায়ের স্থান দিতে পারিস নি। তুই যদি প্রিয়কে পছন্দই করেছিস তবে এত তাড়াহুড়া করে সাজিদকে বিয়ে করলি কেন? আর আমাকে সত্যি না বলে মিথ্যে কেন বলেছিস?

কিছুতেই মুখ খুলছে না মিথিলা । এরমাঝে এ আসছে ও আসছে ছবি তোলার জন্য। মিথিলা কোনোরকম করে সামলে নিচ্ছে।

মিথিলা কোনো উত্তর দিচ্ছে না দেখে আমি আবারও ওকে বললাম , তোর জন্য লাস্ট চান্স। বলতে না চাইলে আর জোরাজুরি নেই। আমি চলে যাচ্ছি। আমার সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করবি না।
বলেই আমি চোখ মুছতে মুছতে ওর হাত ছেড়ে উঠতে গেলাম তখনই ও হাতটা টেনে ধরে আমাকে বসিয়ে দিয়ে কোনোরকম কান্নাটাকে আটকিয়ে বলল,

রূম্পা মা, আমি যে অপারগ। আমাকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করো না ,প্লিজ। অন্য কোনো কথা বলো।

– কেন অপারগ? কিসের জন্য অপারগ? এমন কিছুই নেই যেটা মা মেয়ের সম্পর্কের মাঝে এসে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে ? তুই বলবি কিনা তাই বল!

– আচ্ছা, তবে শোনো! আমি চাইনি তোমার সাথে খালুর কোনো ঝামেলা হোক তাই সাজিদ ভাইকে ভালোবাসি এ কথা বলেছি।

– আমি মনে মনে এটাই সন্দেহ করেছিলাম । এবার বল , তোর খালু কিছু বলেছে?

– নাহ!

– তবে?

– আস্তে করে মিথিলা বলল, দাদি!

– মা? সে তো তোকে পছন্দ করে।

– দাদি হয়ত খালুর কথায়… মিথিলা আর কিছু বলার আগেই কেউ একজন আসল । ও থেমে গেল।

আমি যা বোঝার বুঝে গেলাম। অবাক হলাম আমি মা হয়ে ওদের ব্যাপারে কিছুই টের পেলাম না কিন্তু সেলিম কী করে?

সেলিম আর জীবনে শোধরাল না। উহ! ওর জন্য দুটো জীবন নষ্ট করলাম আমি। হায়রে অহংকার আর দেমাগ! কবে অবসান হবে এর?

মিথিলাকে বললাম, সবই বুঝলাম। এবার বল, সাজিদের সাথে তোর কী চলছে? ও তোর সাথে কথাবার্তা বলছে বলে তো মনে হলো না? ওকি সব জেনে গেছে?

– মিথিলা মাথা নিছু করে এতক্ষণে ফোঁপাচ্ছে । সে আস্তে মাথা নাড়িয়ে বলল, হুম।

আমি কেঁপে উঠলাম মিথিলার উত্তরে। কী চলছে মেয়েটার জীবনে?

– একদম কাঁদবি না। সোজা হয়ে বস। মেরুদন্ড সোজা কর। এভাবে অমেরুদন্ডী প্রাণীর মত বাঁচতে চাইলে সারা জীবন এভাবে কাঁদতে কাঁদতেই জীবন চলে যাবে।
এবার বল সাজিদ কী করে জানল? তুই বলেছিস? সিনেমার শাবানা হয়তো হতে গিয়েছিলি? নিজের অতীতের গল্প শোনাতে যেয়ে দেখ এখন তোর কি অবস্থা?

– আইমানের কথা বলেছিলাম না তোমায় ! আমাকে ডিস্টার্ব করত !

– হুম! তো? ঝাঁঝের সাথে বললাম আমি।

– ও গতকাল আমাকে আর ভাইয়াকে জড়িয়ে অনেক আজেবাজে কথা বলেছে। তখন সাজিদ এসে সব শুনে ফেলেছে। তুমি যেমনটা ভাবছো তেমনটা কিছুইনা। আমি সাজিদকে কিছুই জানায়নি। তাছাড়া আমার আর ভাইয়ার মধ্যে কখনো এমন কিছু হয়নি যে সেটা জানানোর প্রয়োজন আছে।

– মাই গড! আইমানও জানে! সে কী করে জানল?

– ওকে ভাইয়াই একদিন ভার্সিটিতে বসে বলেছিল। শুধু বলার জন্যই বলেছিল যাতে ও আমাকে বিরক্ত না করে, তাই।

– সবই বুঝেছি। শনির গ্রহণ লেগেছে আবার। আচ্ছা , তুই চোখ মোছ। সবাই তাকাচ্ছে বারবার। আমি একটু আসছি।

মিথিলাকে কী বলব আমারই কেমন যে লাগছে নিজেই বুঝতে পারছি না। দূরেই দাঁড়ানো সেলিমকে দেখে আমার মন চাইল ওকে গিয়ে জিজ্ঞেস করি এসব করে কী লাভ হয়েছে তার? কিন্তু ওর সাথে কথা বলতেও রুচি হলো না আমার। আমি কি করব ভেবে পাচ্ছি না। যা হয়েছে তা তো আর মোছা সম্ভব না। কিন্তু সাজিদের মনের ভুল ভাঙ্গানো দরকার!

হঠাৎ অনিকেতের কথা মনে পড়ল একটু এদিক-সেদিক ঘুরতেই অনিকেতকে দেখতে পেলাম। এই মুহূর্তে ওই একমাত্র ভরসা। অনেকের প্রিয়র ব্যাপারে সবকিছুই জানে। ওই পারবে সাজিদের ভুল ভাঙাতে।

অনিকেতের পাশে যেয়ে ওকে ইশারা দিয়ে বাইরে আসতে বললাম।

– আন্টি, সবকিছু ঠিক আছে তো? আপনাকে খুব টেনস্ড মনে হচ্ছে।

– কিছুই ঠিক নেই বাবা। অনেক বড় ঝামেলায় ফেঁসে গেছি।

– কী হয়েছে? প্রিয় ঠিক আছে তো? ও আজকেও এলো না? সাজিদ বারবার ওর কথা জিজ্ঞেস করছে। আপনাদের কাছে কিছু জিজ্ঞেস করেনি?

– না, আজকে সাজিদের সাথে আমার তেমন কথাই হয়নি।

– এখন সাজিদ প্রিয়র কথা জানতে চাচ্ছে কি বলব বুঝতে পারছি না। আমি কি ওকে গতকালের ঘটনাটা বলব?

– হ্যাঁ, বলবে! তবে একটু ঘুরিয়ে।

– মানে বুঝলাম না।

– তুমি সাজিদকে বলো। গতকালকে ওর সাথে কি কি হয়েছে সবই বলো কিন্তু মিথিলার ব্যাপারটা একটু এড়িয়ে যাবে। একটা বড় ঝামেলা হয়ে গেছে। সাজিদ কোনো ভাবে জেনে গিয়েছে প্রিয় আর মিথিলা একজন আরেকজনকে পছন্দ করে। সাজিদ এটা জানার পর থেকে মিথিলার সাথে খুবই অস্বাভাবিক আচরণ করছে।

এরপরে আমি অনিকেতকে আইমানের ব্যাপারটা খুলে বললাম।

সংসার জীবনের শুরুতেই যদি এত বড় একটা অবিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয় তাহলে বাকি জীবন তো পড়েই রয়েছে। বুঝতেই পারছ। আমার থেকে তুমি অবশ্য এসব বিষয়ে বেশি বোঝার কথা।
এখন কিভাবে কি করবে কি করে সাজিদের ভুল ভাঙ্গাবে আমি জানিনা। সবকিছু আমি তোমার উপর ছেড়ে দিলাম, বাবা। আমার এখন আর কোনো পথ নেই।

– অনিকেত খানিকক্ষণ কি যেন ভেবে বলল, আপনি চিন্তা করবেন না, আন্টি। আমি সাজিদের সাথে এখনই কথা বলছি।

– সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব, বাবা। তবে তুমি সাজিদের কাছে আমার কথাটা বলো না।

– এসব বলে লজ্জা দিচ্ছেন কেন? আপনি একদম চিন্তা করেন না। দেখি কি করা যায়।

অনিকেতের উপর কথায় কিছুটা ভরসা পেলাম কিন্তু দুশ্চিন্তা তো থেকেই যায়।

মিথিলাকে আজকে আমার বাড়িতে নিতে পারলে মন খুলে আরো কথা বলা যেত কিন্তু মিথিলা যাচ্ছে ওর বাবার বাড়িতে ওর বাবা আগেই বলে রেখেছিলো যে রিসিপশনের পরে মেয়ে আর জামাইকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে এবং এটাই হওয়া উচিত কারণ সাজিদের বাবার বাড়ির মানুষেরা আমার বাড়িতে যাওয়াটা ভালো চোখে হয়তো দেখবে না।

তাই যা করার আমাকে এখনই করতে হবে।

অনিকেত এসে সাজিদকে নিয়ে একটু নিরিবিলি জায়গায় বসল।

– কিরে নতুন বিয়ে করেছিস কিন্তু চোখেমুখে তো মনে হচ্ছে না নতুন বউ পেয়ে হ্যাপি। ব্যাপার কি? আমাদের ভাবী কি তোর মন মতো হয়নি? ভালোবেসেই তো বিয়ে করেছিস শুনলাম!

– নারে, দোস্ত! তেমন কিছু না। এই সবকিছু মিলিয়ে একটু ব্যস্ততা যাচ্ছে তাই। আচ্ছা, একটা ব্যাপার বলতো প্রিয় কালকে বিয়েতেও আসলো না আজকে রিসিপশনে আসলো না ব্যাপার কি জানিস নাকি কিছু? আমি আজও কয়েকবার ফোন দিয়েছি কিন্তু আমার ফোন রিসিভ করেনি।

– ও তোকে তো বলাই হয়নি প্রিয়র উপর দিয়ে তো ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ও হয়তো তোর নতুন জীবন শুরু হচ্ছে এজন্য এসব জানিয়ে বিরক্ত করতে চায়নি। কিন্তু তুই জিজ্ঞেস করলি তাই আমার মনে হলো তোকে এসব কথা জানানো দরকার।

– কি হয়েছে? কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করল, সাজিদ।

– গতকাল তোদের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছু আগে প্রিয়র গাড়িতে একজনের অ্যাক্সিডেন্ট হয়। লোকটা মরে যেতে পারত তবে ভাগ্য ভালো যার কারণে পায়ের উপর দিয়ে গেছে। একটা পা সম্ভবত কাটা পড়বে। লোকটা খুবই গরীব। ওদের অবস্থা দেখে আমার খুব খারাপ লাগছিল গতকাল।

– বলিস কি? তারপর!

– তার আর পর কি? যেটা হবার সেটাই হয়েছে। প্রিয়কে আরেস্ট করা হয়েছিল। গতকাল সারা দিন প্রিয় লকআপে ছিল। রুম্পা আন্টিও এ ব্যাপারটা প্রথম জানতো না। প্রিয়ই আন্টিকে জানাতে নিষেধ করেছে যাতে তোদের বিয়েতে কোন সমস্যা না হয়। তবে একসময় সেলিম আঙ্কেল ভাবলেন যে আন্টিকে সবই জানানো দরকার। তারপরে কি হয়েছে তা তো জানিসই। আন্টি তোদেরকে মিথ্যাসিথ্যা বুঝিয়ে এখান থেকে বেরিয়ে পড়ে।

– তারপরে বল, প্রিয় বের হলো কি করে নাকি এখনও জেলে?

– না, না। আঙ্কেলের হাত তো অনেক উপর লেভেলে তা তো জানিসই। অনেক বেগ পেতে হয়েছে তারপরেও কপাল ভালো যে সাকসেস হয়েছে।
গতকাল আমিও ছিলাম সেখানে। তবে মানসিকভাবে খুব ভেঙ্গে পড়েছে প্রিয়। সুযোগ হলে ওর সাথে একটু কথা বলে নিস

– আচ্ছা।

– সাজিদকে হঠাৎ কেমন চুপসে যেতে দেখে অনিকেত বলল, কিরে মনের মধ্যে কিছু কি চলছে?

সাজিদ একটা দীর্ঘসাস ছেড়ে বলল, না তেমন কিছু না।

– দেখ, সাজিদ আমার কাছে কিছু লুকাস না। তোর আর ভাবীর মধ্যে কিছু যে চলছে সেটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি। মনের কথা বন্ধুর কাছে যদি বলতে না পারিস তাহলে বলবি কোথায়?

– আরে না, বললাম তো তেমন কিছু না।

– তুই ভাল করেই জানিস তুই কথা লুকালে সেটা আমি ঠিকই টের পাই। এখন সত্যি করে বল, তোর মনের মধ্যে চলছে কি? আমি কেন যেন তোর চোখে অবিশ্বাসের ছাপ দেখতে পাচ্ছি।
এই অবিশ্বাসের ছাপ কার প্রতি? নিজের প্রতি? নাকি ভাবির প্রতি?

– বললাম তো কিছু না!

– তুই বললেই তো আমি মানছি না। তুমি যতক্ষন সত্যি কথা না বলবি ততক্ষণ এখান থেকে তোর ওঠার সাধ্য নেই।

– উহ, বলেছি তো কিছু হয়নি। চল, সবাই অপেক্ষা করছে।

– তুই না বললেও আমি তোর মনের খবর ঠিকই টের পেয়েছি। তুই কি প্রিয়কে নিয়ে কোন ধরনের কনফিউশানে ভুগছিস? আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তোর মধ্যে যা চলছে তার সাথে প্রিয়ার কোনো কানেকশন আছে। কারণ প্রিয়কে নিয়ে আমি যখন কথা বলছিলাম তখন তোর চোখে মুখে খুব উত্তেজনা দেখছিলাম যেটা মোটেই ভালো কোনো কিছু নয়।

– আরে নাহ! চোর ধরা পড়ার মতো করে বলল, সাজিদ।

– ঠিক আছে তুই যখন বলবি না তাহলে আমি বলছি শোন। তুই তোর বউকে অযথাই অবিশ্বাস করছিস! শুধু শুধু নিজে তো কষ্ট পাচ্ছিসই আর ওই পুচকু মেয়েটাকেও কষ্ট দিচ্ছিস!

– মানে? এসব কি বলছিস তুই? কার কাছে কি শুনেছিস?

– আমি কারো কাছে কিছু শুনিনি।

সাজিদ যেন এবার একটু নড়েচড়ে বসল।

– তুই ভাবছিস তোর বউয়ের সাথে প্রিয়র কোনো সম্পর্ক আছে তাইতো? মিথ্যে বলবি না কিন্তু!

সাজিদ মাথা নিচু করে বসে আছে দেখে অনিকেত বলল,

– প্রিয় সেদিন আমার চেম্বারে এসেছিল। কথাপ্রসঙ্গে ও আমাকে যেটা বোঝাল তাতে মনে হলো ও মিথিলাকে কিছুটা পছন্দ করে। তবে তখনো পর্যন্ত মিথিলাকে আমি চিনতাম না। প্রিয় মিথিলাকে কিছুটা পছন্দ করে ঠিকই তবে একথা সে আজ অবধি মিথিলাকে জানাতে পারেনি। কারণ মিথিলা অন্য আরেকজনকে ভালোবাসে একথা সে জানত।

– কে সে? কিছু টা কাঁপা গলায় বলল, সাজিদ।

– কে আবার? আরে গাধা তুই। প্রিয় আজ অবধি মিথিলাকে ওর ভালোবাসার কথা প্রকাশ পর্যন্ত করতে পারে নি। আর সেখানে তুই কি সব উল্টোপাল্টা ভেবে বউটাকে সন্দেহ করছিস।
মিথিলার চোখে প্রিয় বড় ভাই ছাড়া আর কোন কিছুই না। এই ভয়েই প্রিয় কখনোই মিথিলাকে জানাতে পারেনি তার মনের কথা।

– তাহলে মিথিলার এক কাজিন যে বলল!

– তুই ওই বাটপারটার কথায় তোর লাইফের শ্রেষ্ঠ সময় এভাবে হেলায় হারাচ্ছিস? স্টুপিড কোথাকার!
ওই ছেলে মিথিলাকে পছন্দ করে ক্লাস এইট থেকে। কিন্তু মিথিলা ওকে দু’চোখ দিয়ে দেখতে পারে না।
ভার্সিটিতে প্রায় বিরক্ত করত। এভাবে বিরক্ত করার সময় একদিন হাতেনাতে প্রিয়র কাছে ধরা পড়ে।

মিথিলাকে এভাবে বিরক্ত করছে দেখে সে ওকে বলতে বাধ্য হয় যে সে মিথিলার বয়ফ্রেন্ড যাতে আইমান তাকে আর বিরক্ত না করে। এই হচ্ছে হিস্টরি। সেটা থেকে আইমান বিশাল বড় হিস্টরি তৈরি করেছে আর তুই সেটা বিশ্বাস করে বসে আছিস।

– না মানে!

– এখনো? না মানে কিসের? তোর মাথায় এতোটুকু সেন্স নেই যে মিথিলাও যদি প্রিয় কে পছন্দ করত তাহলে ওদের বিয়েতে বাধা ছিল কোথায়? রুম্পা আন্টি মিথিলাকে প্রচুর পছন্দ করেন। মিথিলাও যদি প্রিয়কে পছন্দ করত তাহলে ওনার ছেলে বউ করে রাখতে কেউ আটকাতে পারত না ওনাকে।

মিথিলা প্রিয়কে বড় ভাইয ভেবেই সম্মান করে। সেই সম্পর্ক নিয়ে উল্টাপাল্টা কি সব ভেবে নিজেদের এমন পবিত্র সম্পর্ককে কেন প্রশ্নবিদ্ধ করছিস?

– কিন্তু আমার কথা হচ্ছে তুই এত সব জানলি কোথা থেকে?

– কিছু কথা প্রিয়র কাছে জেনেছি আর কিছু কথা পরিস্থিতি আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে। শুধু শুধু আজেবাজে কথায় কান দিয়ে মেয়েটাকে কষ্ট না দিয়ে সংসার জীবনটা এঞ্জয় কর। এসব ভুল একসময় ঠিকই ভেঙে যাবে কিন্তু এদিন আর ফিরে পাবি না। একজনকে আরেকজনের ভালো লাগতেই পারে এটাই স্বাভাবিক তুইও তো কত মেয়েকে একসময় পছন্দ করতি। কই তাদের এখন খোঁজ আছে? নাকি মনে রেখেছিস? তাই এসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে বর্তমানকে কি করে সুন্দর করবি সে চেষ্টা কর। তোর কাছে এতোটুকু অনুরোধ আমার। বাকিটা তোর ইচ্ছা। আমি একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে তোকে আবারো শুধু মনে করিয়ে চাই, এই দিন কিন্তু আর ফিরে পাবি না। তখন শুধু আফসোসই করবি আর আমার কথা মনে করবি।
চললাম। আমার আবার বিকেলে চেম্বার আছে।

সাজিদ মাথানিচু করে বসে আছে।

চলবে…..

-পর্ব- ৩৫

https://www.facebook.com/111576077291737/posts/377073914075284/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here