সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্ব-৬

0
1217

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ৬

ক্যাম্পাসে বৃত্তের মতো গোল করে বসে আড্ডায় মেতে উঠেছে ইলোরা, ডালিয়া, অরিশা, নাদিয়া, মুনা, অন্তর আর তাহসিন। হাসি ঠাট্টায় আড্ডা বেশ জমে উঠেছে। এমন সময় অদূরে দাঁড়িয়ে সাকিব ডেকে উঠল,“ইলু।”

ভাইয়ের কন্ঠ শুনে ইলোরা ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন ফিরে তাকাল। সাকিব হাতের ইশারায় ইলোরাকে কাছে ডাকল। ইলোরা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,“ভাই ডাকছে। মনে হয় কিছু বলবে। তোরা আড্ডা দে। আমি শুনে আসছি।”

সবাই তার কথায় মাথা নাড়ল। ইলোরা দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে ভাইয়ের দিকে পা বাড়াল। সাকিবের কাছাকাছি পৌঁছতেই হঠাৎ ইলোরা থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। মুহুর্তে তার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এল। নিঃশ্বাস যেন চলতেই চাইছে না। মাথাটাও হালকা ঘুরছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। কেমন যেন অস্থির লাগছে। কয়েক মুহূর্তের জন্য সে চোখের পলক ফেলতেও ভুলে গেল। ইলোরা শুকনো ঢোক গিলে ভাবল,“আশ্চর্য! এই ছেলে এখানে কী করছে? ইনি কি জানতো যে আমি এখানে আছি? হায় আল্লাহ্! এই ছেলে তো ভাইয়ের বন্ধু। তার মানে ইনি এই ভার্সিটিরই স্টুডেন্ট। এটা তো খেয়ালই ছিল না আমার। আচ্ছা, ইনি ভাইকে সব কথা বলে দিয়েছে না-কি? যদি বলে থাকে তাহলে কী হবে? ও আল্লাহ্ বাঁচাও। বাড়িতে গিয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ব। ওনার সামনে যেতে পারব না আমি। কিন্তু এখন তো কোনো উপায়ও নেই। কী করি? আল্লাহ্ প্লিজ হেল্প মি!”

ইলোরাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাকিব এগিয়ে এসে বলল,“স্ট্যাচু হয়ে গেলি কেন? চল ওদের সাথে কথা বলবি।”

ইলোরা ফট করে বলল,“না।”

সাকিব ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল,“কেন?”

ইলোরা থতমত খেয়ে গেল। আমতা-আমতা করে বলল,“এমনি।‌ এখন ইচ্ছে করছে না। অন্য একদিন কথা বলব।”

সাকিব ইলোরার কথায় পাত্তা না দিয়ে উচ্চস্বরে ডেকে উঠল,“এই রনি-এরেন।”

সাকিবের থেকে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে এরেন আর রনি হেসে হেসে গল্প করছিল। সাকিবের ডাকে দুজন একসাথে ফিরে তাকাল। সঙ্গে সঙ্গে এরেনের মুখের মুচকি হাসিটুকু মিলিয়ে গেল। কয়েক হাত দূরে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকা ইলোরাকে চিনতে তার ভুল হলো না। ইলোরাকে দেখেই এক মাস আগের সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। সে নিজেও স্ট্যাচু হয়ে গেল। রনি এরেনকে রেখেই হাসিমুখে এগিয়ে গেল। ইলোরাকে উদ্দেশ্য করে বলল,“ইলোরা যে। কেমন আছো?”

রনির কথায় ইলোরা মাথাটা হালকা উঁচু করে জবাব দিলো,“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো ভাইয়া?”

“আলহামদুলিল্লাহ। অনেক দিন পর দেখা হলো তোমার সাথে।”

“হ্যাঁ। তুমি তো অনেকদিন হলো আমাদের বাসায় যাও না।”

“সময় হয়ে ওঠে না। কোচিংয়ের এক্সামের টেনশনে কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না। আমাদের কোচিংয়ের টিচারটা যা ঘাড়ত্যাড়া! নাম্বার দিতেই চায় না।”

“আম্মু কিন্তু তোমার কথা জিজ্ঞেস করে ভাইয়ার কাছে।”

“হ্যাঁ, শুনেছি সাকিবের থেকে। এই মাসেই তো এক্সামের ঝামেলা শেষ। তারপর যাব একদিন।”

ওদের কথার মাঝেই এরেন ধীর পায়ে এগিয়ে এল। সাকিব হেসে বলল,“ইলু, এরেনের সাথে কথা বল।”

ইলোরা কাঁচুমাচু করে এরেনের দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে ইলোরা দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। পরিস্থিতি সামাল দিতে এরেনই আগে বলে উঠল,“কেমন আছো?”

ইলোরা এরেনের দিকে না তাকিয়েই নিচু স্বরে বলল,“ভালো। আপনি?”

এরেন হাসার চেষ্টা করে উত্তর দিলো,“ভালো।”

সাকিব ইলোরাকে বলল,“এই ইলু। আমি ওকে অনেকবার বলেছি যে আম্মু ওকে বাসায় যেতে বলেছে। কিন্তু ওর তো অজুহাতের শেষ নেই। এখন তুই বলে দে।”

সাকিবের কথায় এরেন মুচকি হেসে বলল,“অজুহাতের কী আছে? তুই তো জানিস আমি এমনিতেও কোথাও যাই না।”

ইলোরা আমতা-আমতা করে বলল,“আম্মু আপনাকে দেখতে চায়। রনি ভাইয়া তো মাঝে মাঝে যায় ভাইয়ের সাথে। কিন্তু আপনাকে তো কখনও দেখেনি।”

রনি হেসে বলল,“আরে ও যেতে না চাইলে কী? আমি আছি না? পরেরবার আমি যখন যাব তখন ওকে ধরে বেঁধে নিয়ে যাব।”

সাকিব হেসে বলল,“তাই করতে হবে মনে হচ্ছে। আসলে আম্মুর আফসোস হচ্ছে এই ছেলেটা তার মেয়ের এত বড়ো উপকার করল অথচ সে তাকে চেনেই না।”

রনি বলল,“তা তো ঠিকই। ইলোরা তো সবাইকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। ভাগ্যিস সেদিন এরেন ওই বাসে ছিল।”

ইলোরা মনে মনে ভাবল,“এটা ভাগ্য নয়, দুর্ভাগ্য।”

এরেন একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে ইলোরার দিকে তাকাল। মেয়েটা যে তাকে দেখে খুব বেশি অপ্রস্তুত হয়ে গেছে তা সে বুঝতে পারল। কেমন জড়োসড়ো হয়ে আছে তখন থেকে। তার নিজেরও তো কম অস্বস্তি হচ্ছে না। কিন্তু এই মুহূর্তে কিছুই করার নেই। ঠিক তখনই ইলোরা বেখেয়ালে এরেনের দিকে তাকাল। দ্বিতীয় বারের মতো আবার চোখাচোখি হতেই দুজন চোখ সরিয়ে নিল। দুজনেই হাঁসফাঁস করছে। ইলোরা মনে মনে কোনো অজুহাত খুঁজছে এখান থেকে কেটে পড়ার জন্য। কিন্তু সে তেমন কোনো অজুহাত খুঁজেই পাচ্ছে না। ইলোরাকে সুযোগ করে দিয়ে পেছন থেকে অরিশা ডেকে উঠল,“এই ইলো। ক্লাসে যেতে হবে আমাদের।”

ইলোরা মনে মনে খুশি হলো। এবার অন্তত এখান থেকে কেটে পড়া যাবে। সাকিব বলল,“ক্লাস শেষ হলে আমাকে ফোন করবি। আমি বাসায় নিয়ে যাব। এখন যা, ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।”

ইলোরা মাথা নাড়িয়ে আর এক মুহূর্তও সেখানে দাঁড়াল না। কোনোদিকে না তাকিয়ে গটগট করে হেঁটে প্রস্থান করল‌। এতক্ষণ এরেনের অস্বস্তি হলেও এখন কেন জানি মনটাই খারাপ হয়ে গেল। সাধারণত কোনো কারণ ছাড়া হুটহাট কখনো এরেনের মন খারাপ হয় না। কিন্তু এই মুহূর্তে হঠাৎ মন খারাপের কোনো কারণই সে খুঁজে পেল না।


অমাবস্যা বলে আকাশে চাঁদের অস্তিত্ব নেই। আকাশটা পুরোপুরি কালো হয়ে আছে। অমাবস্যার আকাশের মতোই এরেনের মনের আকাশটাও আজ অন্ধকার হয়ে আছে। এর কারণ যেন তার জেনেও জানা নেই। অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে ছাদের রেলিং ঘেঁষে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এরেন। যানবাহনের হর্নের শব্দ আর ঠান্ডা আবহাওয়ার কোনোটাই তার ধ্যানকে স্পর্শ করছে না। তার ধ্যান ভেঙে গেল একটা কোমল কন্ঠস্বরে। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল গায়ে চাদর জড়িয়ে ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে জারিন। অন্ধকারে ওর মুখটা দেখা যাচ্ছে না। এরেন বলল,“ডাকছিস কেন?”

জারিন ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে এরেনের পাশে রেলিং ধরে দাঁড়াল। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,“এই সময়ে ছাদে কী করছিস?”

এরেন স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিলো,“এমনিতেই দাঁড়িয়ে আছি। তুই এখানে এসেছিস কেন?”

“আম্মী বলল তুই ছাদে এসেছিস তাই এলাম। তোর শরীর খারাপ না-কি?”

“নাহ্।”

“তাহলে আজ বাসায় কেন? তুই তো কখনও এই সময়ে বাসায় থাকিস না। ফ্রেন্ডসদের সাথে আড্ডায় থাকিস। আজ হঠাৎ কী হলো?”

“ভালো লাগছে না। তাই বের হইনি।”

জারিন সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,“কিছু তো একটা হয়েছে। আমার কাছে লুকিয়ে লাভ নেই। বলে ফেল।”

এরেন জারিনের মাথায় হালকা চাটি মেরে বলল,“সবসময় এত বেশি বুঝিস কেন বুড়ি? আমি কখন বললাম আমার কিছু হয়েছে?”

জারিন সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,“বলা লাগে না। আমি এমনিতেই বুঝতে পারি তা তো তুই জানিস। আর তাছাড়া তুই এমনিতেও আমার থেকে কোনো কথা লুকাতে পারিস না। দেরিতে হলেও তো বলবিই। তার থেকে ভালো এখনই বল।”

এরেন বুক ফুলিয়ে জোরে শ্বাস নিল। এই মেয়েটার কাছে যে কোনো কথা লুকাতে পারবে না তা সে নিজেও জানে। জারিন তার থেকে পাঁচ বছরের ছোট। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট সে। লেখাপড়ায় এরেনের মতোই মনোযোগী। এমনকি রূপেও সে কম যায় না। এরেনের সাথে তার চেহারার অনেক মিল আছে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে অসম্ভব মিল। দুজনই দুজনকে চোখে হারায়। এরেন কখনও বোনের কাছে কোনো কথা লুকাতে পারে না। সব কথা সবার আগে বোনের সাথে শেয়ার করে। এমনকি কখনও ইচ্ছে করলেও সে জারিনের থেকে কোনো কথা লুকাতে পারে না। এরেনের ধারণা এই মেয়েটা তার মন পড়তে জানে। নইলে মুখ দেখেই কী করে সব আন্দাজ করে নেয়? এরেনের জীবনের এমন কোনো কথা নেই যা জারিনের অজানা। কিন্তু এই দিক থেকে এরেন অনেকটা হতাশ। কারণ সে জারিনের মুখ দেখে মন পড়তে পারে না। জারিন খুব চাপা স্বভাবের মেয়ে। যতক্ষণ না সে নিজে থেকে বলবে ততক্ষণ তার মনের খবর কেউ জানবে না। এরেন অবশ্য আগে চেষ্টা করত। কিন্তু বারবার বিফল হয়ে এখন আর এসব চেষ্টা করে না। জারিন নিজে থেকে বললে শোনে। তা না হলে কিছুই জানতে পারে না। তবে তাদের বাবা-মা নিজেদের ছেলে মেয়ের এই বন্ধন দেখে অনেক খুশি। সব মিলিয়ে খুব সুখী পরিবার তাদের।

এরেন জারিনের মুখের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে কোমল কন্ঠে বলল,“ওই মেয়েটার সাথে দেখা হয়েছিল আজ।”

এরেনের বলা কথাটা কানে যেতেই জারিন চমকে উঠল। ঘাড় ঘুরিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বলল,“কী? সত্যি বলছিস না-কি?”

এরেন ওপর নিচে মাথা দোলালো। জারিনের চোখ দুটো গোলাকার আকৃতি ধারণ করল। একইভাবে আবার প্রশ্ন করল,“কোথায়? কীভাবে?”

“ভার্সিটিতে। ঢাকা ভার্সিটিতে অ্যাডমিশন নিয়েছে। আমি তো শুনেছিলাম ও ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্যই বাসা থেকে রাগ করে মামার বাড়ি চলে গিয়েছিল। কিন্তু এতদিন এই কথাটা আমার মাথাতেই ছিল না। আজ সাকিবের কারণে হঠাৎ করেই দেখা হয়ে গেল।”

“ও তোর সাথে কথা বলেছে?”

“ভদ্রতার খাতিরে দু একটা কথা বলেছে। খুব অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিল আমার সামনে পড়ে।”

“আর তুই?”

এরেন মুচকি হাসল। ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,“হঠাৎ করে আবার দেখা হয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি। প্রথমে অবাক হয়েছিলাম। তারপর আমিও কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছিলাম।”

জারিন উত্তেজিত হয়ে বলল,“তাহলে তো এখন ভার্সিটিতে গেলে ওর সাথে ঘনঘন দেখা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ওহ্ মাই গড! আমার তো ভাবতেই ভালো লাগছে।”

এরেন ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,“কেন?”

জারিন দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,“তোদের দুজনের যতবার দেখা হবে ততবার শুধু বিয়ের কথা মনে পড়বে। একে অপরের প্রতি অজানা একটা টান অনুভব করবি। আস্তে আস্তে দেখবি দুজন দুজনের প্রেমে পড়ে গেছিস। আর তারপর মেয়েটা পারমানেন্টলি আমার ভাবি হয়ে যাবে।”

এরেন অবাক হয়ে বলল,“একটা কথায় এত কিছু ভেবে নিলি তুই? এত ফাস্ট ভাবিস কেন?”

জারিন ভেংচি কেটে বলল,“ফাস্ট হলেও এটাই হবে। আমার কথা মিলিয়ে নিস। আল্লাহ্ কোনো কারণ ছাড়া কিছুই করেন না। আগেরবার দেখা হয়েছিল হুট করে দুজনের বিয়ে হবে বলে। আবার যখন দেখা হয়েছে তার মানে অবশ্যই এর পেছনেও কোনো না কোনো কারণ আছে। একবার ভাব তো। সত্যি সত্যিই যদি এমন কিছু হয় যে দুজন দুজনের প্রেমে পড়ে স্বামী-স্ত্রী ভাবতে শুরু করে দিবি। তাহলে তো ভালোই হয়। তাই না?”

এরেন এবার আর কোনো উত্তর দিলো না। জারিনের কথাটা যদি সত্যি হয় তাহলে তো মন্দ হয় না। মেয়েটা তার জীবনের সাথে হঠাৎ করেই জড়িয়ে গেল। এক শীতের রাতে অতিথি পাখির মতো এসে তার জীবনে জায়গা করে নিল। অতিথি পাখিরা তো শীতের শেষে আবার চলে যায় নিজেদের গন্তব্যে। কিন্তু এই অতিথি পাখি হয়ে আসা মেয়েটা চলে গিয়েও আবার ফিরে এসেছে। আবারও কী চলে যাবে সে নিজের গন্তব্যে? আচ্ছা? এমনটা কি হতে পারে না যে, এবার এই অতিথি পাখিটা ফিরে যাওয়ার পথ ভুলে গিয়ে তার কাছেই থেকে গেল? সত্যিই কি এমন কিছু হবে? হলে ক্ষতি কী? মানুষের জীবনে বিয়ে নামক বন্ধনটা অনেক মূল্যবান। আর সেই মূল্যবান সম্পর্কে নিজেদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও জড়িয়ে গেছে তারা। নিজেরা না মানলেও সম্পর্কটা তো আর মিথ্যে হয়ে যাবে না। আচ্ছা? মেয়েটার পরিবার যদি অন্য কারো সাথে ওর বিয়ে দিয়ে দেয়! সেই বিয়ে তো জায়েজ হবে না। কেউ তো আর জানে না যে এই মেয়েটার একজন স্বামী আছে। এক স্বামী থাকাকালীন মেয়েদের দ্বিতীয় বিয়ে ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মেয়েটা কি তা জানে? এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে মেয়েটা কি তার পরিবারকে বলবে তাদের বিয়ের কথা? বলতেও পারে আবার নাও বলতে পারে। সে যে মেয়েটাকে নিয়ে এতকিছু ভাবছে, মেয়েটাও কি এভাবে তাকে ভাবছে? হয়তো ভাবছে। হঠাৎ করে আবার দেখা হওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে সেও হয়তো চিন্তিত।

এরেনের আকাশ পাতাল ভাবনায় ছেদ পড়ল জারিনের কানফাটানো কন্ঠে। এরেন চমকে উঠে বলল,“কী সমস্যা? এভাবে চিৎকার করে ডাকছিস কেন?”

জারিন গাল ফুলিয়ে বলল,“এত কী ভেবে চলেছিস? আস্তে ডাকলাম তা তো কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি। তাই জোরে ডাকলাম। কী ভাবছিলি বল তো? ঐ মেয়েটার কথা?”

এরেন এবার চোখ পাকিয়ে বলল,“পাকামো কম কর বুড়ি। এখন যা এখান থেকে।”

জারিন গোঁ ধরে বলল,“যাব না। ছাদে ভালো লাগছে। রুমে গেলে ভালো লাগবে না এখন। তার থেকে বরং এখানেই কাটাই কিছুক্ষণ। তুই তো আছিস। না-কি চলে যাবি?”

“আরো কিছুক্ষণ থাকব।”

জারিন খুশি হয়ে রেলিংয়ের সাথে ঠেস দিয়ে সোজা হয়ে দাড়াল। কিছুক্ষণ দুজনেই নীরবতা পালন করল। এরেন খেয়াল করল তার মনটা এখন আগের চেয়ে অনেকটা হালকা লাগছে। এর কারণ হয়তো জারিনের সাথে কথাটা শেয়ার করা। হঠাৎ করে এরেনের মাথায় দুষ্টুমি এসে ভর করল। জারিনকে উদ্দেশ্য করে বলল,“আজ আবার পাশের বাসার আন্টির সাথে দেখা হয়েছিল।”

জারিন কিছু না বুঝতে পেরে ভ্রুকুটি করে প্রশ্ন করল,“কোন আন্টি?”

“আরে ওই সায়মা আন্টি।”

নামটা শুনেই জারিনের চোখ মুখ বিরক্তিতে কুঁচকে গেল। এরেন সেটা খেয়াল করে দুষ্টু হেসে বলল,“আমি ভাবছি এবার ওনার প্রস্তাব নিয়ে ভেবে দেখব।”

সঙ্গে সঙ্গে জারিন চিৎকার করে বলে উঠল,“কী? কোনো ভাবাভাবির দরকার নেই। ওই মহিলাকে আমার একদম সহ্য হয় না। বারবার না বলা সত্ত্বেও এক কথা নিয়েই পড়ে থাকে। আমি যখন বলে দিয়েছি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করব না তো করবই না।”

এরেন জারিনকে রাগানোর উদ্দেশ্যে কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে বলল,“ছেলেটা তো খুব ভালো। আমি দেখেছিলাম একবার। তোর জন্য সব দিক থেকেই পারফেক্ট। ফ্যামিলিও ভালো। এমন ছেলে হাতছাড়া করা ঠিক না। আমি কালই বাবার সাথে কথা বলব এই ব্যাপারে।”

জারিন এবার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,“ভাইয়া, সত্যি সত্যিই যদি এমন কিছু করিস তাহলে তোর খবর আছে বলে দিলাম।”

কথাটা বলেই জারিন রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে গটগট করে হেঁটে ছাদ থেকে চলে গেল। পেছন থেকে এরেন কয়েকবার ডাকলেও ফিরে তাকাল না। জারিনের রাগ দেখে এরেন একা একাই হুঁ হা করে হেসে উঠল।

চলবে…………………..🌸

(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ছোটো ছোটো ভুলগুলোও ধরিয়ে দিবেন। হ্যাপি রিডিং।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here