সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্ব-৭

0
1052

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ৭

ভার্সিটির গেইটে পা রাখতেই ইলোরার হার্টবিট দ্বিগুণ বেড়ে গেল। আজ যদি আবার ওই ছেলেটার সাথে দেখা হয়ে যায?। সে তো ভুল করেও আর কখনও ওই ছেলের সামনেই পড়তে চায় না। দুরুদুরু বুকে ডালিয়াকে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকতেই বন্ধুদের সামনে পড়ল। এগিয়ে গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় যোগ দিলো। ইলোরা হঠাৎ সবার দিকে চোখ বুলিয়ে প্রশ্ন করল,“নাদিয়া কোথায়?”

টুম্পা বলল,“আসেনি।”

ডালিয়া প্রশ্ন করল,“কেন?”

মুনা বলল,“শোক পালন করছে।”

“কিসের শোক?”

“আরে গতকাল আবার তাহসিন রিজেক্ট করেছে না ওকে। এখন দু এক দিন একা একা শোক পালন করবে। কারো সাথে কোনো কথা বলবে না, ক্লাস করবে না। আবার দুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে।”

তাহসিন গম্ভীর কন্ঠে বলল,“ওর এসব পাগলামি যে কবে বন্ধ হবে আল্লাহ্ জানে। গত একবছর ধরে একজন ছেলেকেই প্রপোজ করে চলেছে। বারবার রিজেক্ট করার পরও বিরক্ত হচ্ছে না। অন্য মেয়ে হলে এতদিনে বিরক্ত হয়ে অন্য ছেলে খুঁজত। আর ও তো কিছু বুঝতেই চায় না।”

অন্তর হেসে বলল,“সি রিয়েলি লাভস ইউ তাহসিন।”

“বাট আই ক্যান্ট লাভ হার। আমি ওকে জাস্ট ফ্রেন্ড ভাবি। এর বাইরে ওর প্রতি তেমন কোনো ফিলিংস নেই আমার। ওকে তো আমি এই ব্যাপারটা হাজারবার বুঝিয়েছি। কিন্তু ও তো কিছুই বুঝতে চায় না। ওর এই বারবার প্রপোজের ব্যাপারটা আমি সত্যিই আর নিতে পারছি না। বিরক্ত হয়ে গেছি।”

অরিশা বলল,“কী আর করার আছে বল? যে বুঝতে চায় না তাকে তো আর জোর করে বুঝানো সম্ভব না। যাক, বাদ দে এখন এসব। শুধু শুধু কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।”

ডালিয়া হঠাৎ ইলোরাকে লক্ষ্য করে প্রশ্ন করল,“এই ইলো‌, তুই কি কাউকে খুঁজছিস?”

ইলোরা কিছুটা নড়েচড়ে বসে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,“কই‌? না তো।”

“তাহলে এদিক-ওদিক কী দেখছিলি?”

ইলোরা হাসার চেষ্টা করে বলল,“আরে কিছু না। এমনিই।”

ডালিয়া আর কথা বাড়াল না। আসলে ইলোরার মাথায় সারাক্ষণ শুধু একটা কথাই ঘুরছে,‘যদি ওই ছেলেটার সাথে দেখা হয়ে যায়।’ তাই না চাইতেও চোখ জোড়া বারবার এদিক-ওদিক বিচরণ করছিল। সেটা যে এভাবে ডালিয়ার চোখে পড়ে যাবে ভাবেনি।

সবার কথার মাঝে টুম্পা বলল,“চল ক্লাসে যাই।”

টুম্পার কথায় সায় দিয়ে সবাই ক্লাসে চলে গেল। ক্লাস চলাকালীন ডালিয়া হঠাৎ খেয়াল করল তাহসিন বারবার তার দিকে তাকাচ্ছে। ব্যাপারটা কয়েকবার চোখে পড়তেই ডালিয়া ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে গেল। মাত্র দুদিনেই ইলোরার সব ফ্রেন্ডদের সাথে তার খুব ভাব হয়ে গেছে। সবাই কত মিশুক! দুদিন মিশেই মনে হচ্ছে যেন সবাই কত বছরের পরিচিত। কিন্তু তাহসিন কেন এভাবে তাকিয়ে আছে? ও কি বুঝতে পারছে না সে অস্বস্তি বোধ করছে? এমন হলে তো সে ওর সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারবে না। বেখেয়ালে হঠাৎ মুনার চোখ চলে গেল তাহসিনের দিকে। তাহসিনের দৃষ্টি অনুসরণ করতেই মুনা অবাক হয়ে গেল। কিছুক্ষণ আড়চোখে তাহসিন আর ডালিয়াকে নিরীক্ষণ করে তার প্রচন্ড হাসি পেল। হঠাৎ সে ফিক করে হেসেই ফেলল। কিন্তু তাতে বেঁধে গেল এক বিপত্তি। মুনার হাসিটা নির্জন ক্লাসে স্যারের কান পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। বন্ধুরা সবাই তার দিকে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকাল। ক্লাসের অন্যান্য কয়েকজন স্টুডেন্টও এতক্ষণে অবাক হয়ে তাকাল। ডালিয়া মুনার এক হাত চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল,“মুনা, সামনে তাকা।”

ডালিয়ার কথায় সামনে তাকাতেই মুনার মুখের হাসিটুকু বিলীন হয়ে গেল। স্যার নিজের লেকচার থামিয়ে স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। স্যারের দৃষ্টি দেখেই মুনার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। একটা শুকনো ঢোক গিলে সে মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রইল। মনে মনে ভাবতে লাগলো,“আল্লাহ্, এইবারের মতো বাঁচিয়ে দাও। আর কোনোদিনও এভাবে ক্লাসের মধ্যে হাসব না। নইলে এই ভরা ক্লাসের মধ্যে স্যারের বকা শুনলে লজ্জায় কাউকে মুখ দেখাতে পারব না। দ্বিতীয় দিনেই স্যারের বকা শুনতে হবে! স্যার কী ভাবছে কে জানে? যেভাবে তাকিয়ে আছে তাতে তো মনে হচ্ছে এক্ষুনি হয়তো কিছু কড়া কথা শুনিয়ে ছাড়বে। কিন্তু আমি তো আর ইচ্ছে করে হাসিনি। হাসি চলে এসেছে। তাতে আমার দোষ কোথায়?”

মুনার এই স্বভাবের উপর ওর বন্ধুরা সবাই খুব বিরক্ত। সবসময় যেকোনো স্বাভাবিক কথায় যেখানে মুচকি হাসার কথা সেখানে সে দুনিয়া কাঁপিয়ে হাসে। আস্তে হাসতে চাইলেও তার হাসির শব্দ বেড়েই যায়। তার এই স্বভাবের কারণে প্রত্যেক ক্লাসে সে শিক্ষকদের বকা শুনে এসেছে। তার জন্য মাঝে মাঝে বাকিরাও বিনা অপরাধে বকা শুনেছে। এইজন্য সবাই তাকে কম কথা শোনায় না। কিন্তু তবু সে হাসি কন্ট্রোলে রাখতে পারে না। মুনাকে অবাক করে দিয়ে স্যার আবার নিজের লেকচার শুরু করল। দেখে মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি। মুনা খুব অবাক হয়ে গেল। তবে তার থেকে বেশি খুশি হলো। চাহনি দেখে মনে হয়েছে কত কড়া কথা শোনাবে,অথচ কিছুই বলল না। স্যারটা নিশ্চয়ই খুব ভালো। মনে মনে স্যারকে হাজারবার ধন্যবাদ দিলো মুনা। এদিক ওদিক আর না তাকিয়ে ক্লাসের দিকে মনোযোগ দিলো।


রাত দশটা পঁয়ত্রিশ বাজে। মিথিলা ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু ইলোরা আর ডালিয়া সজাগ। দুজনেই ফেসবুক স্ক্রলিং করছে আর মাঝে মাঝে টুকটাক কথা বলছে। ইলোরা শুয়ে আছে আর ডালিয়া তার পাশেই বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে। কথায় কথায় ডালিয়া বলে উঠল,“তাহসিন এমন কেন রে?”

ইলোরা না তাকিয়েই প্রশ্ন করল,“কেমন?”

“কেমন যেন। ক্লাসে আজ সারাক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।”

ইলোরা পুনরায় প্রশ্ন‌ করল,“কী?”

ডালিয়া ফোনের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখেই বলল,“কানে শুনিস না নাকি? বললাম তাহসিন আজ পুরোটা ক্লাস আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছিল। ক্লাসে একটুও মনোযোগ দেয়নি।”

ইলোরা এবার লাফিয়ে উঠে বসে পড়ল। ডালিয়ার হাত থেকে ফোনটা ছোঁ মেরে নিতেই ডালিয়া বিরক্ত হয়ে বলল,“আরে ফোন নিলি কেন? ফোন দে।”

ইলোরা বলল,“আরে ফোন রাখ। আগে তাহসিনের ব্যাপারটা বুঝিয়ে বল। কাহিনি কী? ও সত্যিই তোর দিকে তাকিয়ে ছিল পুরো ক্লাস?”

“হ্যাঁ। আমি খুব অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলাম। আরে মুনা এজন্যই হেসে উঠেছিল। তাহসিনের দিকে নজর পড়ে গিয়েছিল ওর। বুঝলাম না, ও ওভাবে তাকিয়ে ছিল কেন।”

ইলোরা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ ডালিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে চাপা কন্ঠে বলল,“আচ্ছা। তাহলে মাত্র দুদিনেই ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে।”

ডালিয়া হামি তুলতে তুলতে বলল,“কী বললি? শুনিনি।”

ইলোরা ডালিয়ার ফোন ফেরত দিয়ে বলল,“শুনতে হবে না। হামি তুলছিস, ঘুমিয়ে পড়।”

তারপর ইলোরা নিজের ফোন রেখে শুয়ে পড়ে আবার বলল,“লাইটটা অফ করে আয়।”

ডালিয়া উঠে গিয়ে লাইট অফ করে দিলো। তারপর গায়ে কম্বল টেনে ইলোরার পাশে শুয়ে পড়ল।


অন্তরের সাথে ভার্সিটির গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে গল্প করছে মুনা‌। বাকিরা কেউ এখনও আসেনি। তাই দুজন গেটের কাছে দাঁড়িয়ে সবার জন্য অপেক্ষা করছে। মুনা হঠাৎ বলে উঠল,“এই অন্তু, কাল আমি ক্লাসের মধ্যে হেসেছিলাম কেন জানিস?”

অন্তর পাল্টা প্রশ্ন করল,“কেন?”

মুনা মুচকি হেসে বলল,“তাহসিনের কাহিনি দেখে।”

অন্তর কিছু বুঝতে পারল না। আবার প্রশ্ন করল,“কী?”

মুনা গতকাল ক্লাসের পুরো ঘটনাটা খুলে বলতেই অন্তর কিছুটা অবাক হলো। পরক্ষণেই শব্দ করে হেসে আফসোসের সুরে বলল,“কী বলছিস এসব! তাহলে আমাদের নাদিয়ার কী হবে? বেচারি যদি শোনে তার ক্রাশ অন্য কারো উপর ক্রাশড হয়ে বসে আছে, তাহলে তো ও দুঃখে পাগল হয়ে যাবে। হায় হায়! আমার তো এখনই টেনশন হচ্ছে।”

মুনা হেসে বলল,“সে যাই হোক। একটা ব্যাপার ভেবে কিন্তু আমার বেশ আনন্দ লাগছে।”

“কী?”

“এতদিন তো তোর আর নাদিয়ার এক কাহিনি দেখতে দেখতে বোর হয়ে গেছি। এখন থেকে তাহসিনের নতুন কাহিনি দেখব। তোদের পুরনো কাহিনি বাদ।”

অন্তর ধমক দিয়ে বলল,“চুপ কর সাদা মুলা।”

মুনা তেতে উঠে বলল,“একদম উল্টাপাল্টা নামে ডাকবি না আমায়। কতদিন বলেছি এই নামে ডাকবি না। শেষমেষ কি না মুলার মতো সবজি!”

“খারাপ কী? মুনা মুলা একই ব্যাপার। মুনায় ’ন’ আর মুলায় ‘ল।’ এইটুকুই শুধু পরিবর্তন।”

“এটা এইটুকু পরিবর্তন? পুরো নামটাই তো পরিবর্তন করে দিলি। এই নামটার উৎপত্তি হয়েছিল কার থেকে রে?”

অন্তর একটু ভেবে বলল,“মনে নেই।”

“তুই না-কি?”

“নাহ্।”

মুনা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,“তাহলে কে? কে এই বাজে নামটা শুরু করেছিল তাকে আজ আমি খুঁজে বের করব। তোদের মধ্যে কেউ একজন তো শুরু করেছিল। তারপর বাকি সবাই তাকে ফলো করেছে। একবার খুঁজে পাই। খবর আছে তার।”

অন্তর দাঁত বের করে হেসে বলল,“আরে তুই জানিস না, তোর জন্য এই মুলা নামটাই পারফেক্ট। কী কিউট নামটা!”

মুনা তেড়ে গিয়ে অন্তরের বাহুতে এক ঘা বসিয়ে দিল। আর অন্তর শব্দ করে হেসে উঠল। ঐ মুহুর্তে গেইট দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকছিল গতকালের সেই স্যার। মুনা আর অন্তর হাসি থামিয়ে ভদ্রভাবে দাঁড়িয়ে সসম্মানে তাকে সালাম দিল। স্যার সালামের উত্তর দিয়ে তাদের দুজনের সামনে মুখোমুখি দাঁড়াল। তারা দুজনেই কিছুটা অবাক হলো। ভার্সিটির কোনো স্যারের সাথে এখনও তারা পরিচিত হয়ে ওঠেনি। মাত্র তিনদিন হলো তারা ভার্সিটিতে আসছে। তাই কাউকে সেভাবে চেনেও না। এই স্যারটা গতকাল ক্লাস নিয়েছিল সেই সুবাদে এনাকে চেনে। কিন্তু তার নামধাম কিছুই জানে না। গতকাল ক্লাসে ঢুকে প্রথমেই নিজের পরিচয় দিয়েছিল। কিন্তু কেউই সেভাবে খেয়াল করেনি। অন্তর আর মুনা প্রশ্নভরা চোখে স্যারের দিকে তাকাল। স্যার মুচকি হেসে অন্তরকে প্রশ্ন করল,“বেস্ট ফ্রেন্ড?”

অন্তর প্রথমে কিছু না বুঝে মুনার দিকে তাকাল। পরক্ষনেই মাথা দুলিয়ে বলে উঠল,“জি স্যার।”

“দেখেই বুঝতে পেরেছি। যেভাবে মারলো।”

কথাটা শুনে মুনা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। স্যার এবার মুনাকে উদ্দেশ্য করে বলল,“হাসি, মারামারি সবকিছুতেই তো দেখছি খুব পটু। তা পড়াশোনায় কেমন পটু?”

মুনা মাথা নত অবস্থায় ভ্রু কুঁচকে ফেলল। স্যার এই কথাটা কি তাকে খোঁচা মারার জন্য বলল? কাল ক্লাসে কিছু বলেনি বলে আজ সামনে পেয়ে কথা শোনানোর ধান্দায় আছে মনে হয়। এই স্যারকে তো সে ভালো ভেবেছিল। মনে মনে কতগুলো ধন্যবাদও দিয়েছিল। অথচ আজ সামনে পেয়ে ঠিকই খোঁচা মেরে কথা বলছে। এই লোক কিছুতেই ভালো হতে পারে না। মুনাকে চুপ থাকতে দেখে স্যার আবার বলল,“কী? এত চঞ্চল মেয়ে এই একটা প্রশ্নে চুপ হয়ে গেল যে? পড়াশোনা ভালো লাগে না? এইচএসসির রেজাল্ট কী?”

প্রশ্নটা শুনে মুনার মুখটা চুপসে গেল। এই প্রশ্নের কী উত্তর দেবে সে? বন্ধুদের সবার থেকে তার রেজাল্ট কিছুটা খারাপ। তাই সে কাউকে নিজের রেজাল্ট বলে না লজ্জায় পড়তে হবে বলে। আর ইনি তো শিক্ষক। খারাপ রেজাল্টের কথা শুনলে কী ভাববে? হয়তো কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দেবে। আবার পড়াশোনা নিয়ে ঝুড়ি ভর্তি উপদেশও দিতে পারে। এসব শিক্ষকদের দিয়ে বিশ্বাস নেই। সুযোগ পেলেই স্টুডেন্টদের উপদেশ দিয়ে দিয়ে পাগল করে ফেলে। মুনাকে এবারও চুপ দেখে স্যার হাসিমুখে বলল,“বুঝতে পেরেছি। বলার মতো রেজাল্ট না। থাক বলতে হবে না। ভার্সিটিতে যখন ভর্তি হয়েছো লেখাপড়ায় একটু মন দাও। নইলে ভার্সিটিতে আসা যাওয়া করে তো কোনো কাজ নেই। আর হ্যাঁ, হাসিটা একটু কন্ট্রোলে রাখার চেষ্টা করবে। ওকে? আমি হয়তো কিছু বলিনি, কিন্তু অন্য স্যাররা তো আর বকা না দিয়ে চুপ থাকবে না। সো বি কেয়ারফুল।”

মুনার এবার রাগ উঠে গেল। ঠিক এই ভয়টাই সে পাচ্ছিল। রেজাল্ট বলল না তবু উপদেশ শোনাতে ভুল করেনি। এই লোকটাকে কি-না সে গতকাল ভালো ভেবেছিল। এ তো আস্ত পাজি লোক। স্যার অন্তরের পিঠ চাপড়ে বলল,“হ্যান্ডসাম! নাম কী তোমার? ছোটো নাম বলো যাতে মনে রাখতে পারি।”

অন্তর হাসিমুখে উত্তর দিলো,“অন্তর।”

“বাহ্।

স্যার এবার মুনাকে প্রশ্ন করল,“আর তোমার?”

মুনার আর ইচ্ছে করছে না এই লোকের সাথে কথা বলতে। তবু স্যার তো। প্রশ্নের উত্তর না দিলে বেয়াদবি হয়ে যাবে। মুনা নিচু স্বরে উত্তর দিলো,“মাহজাবীন মুনা।”

“সুন্দর নাম। তবে মুনার শেষে আ-কার টা না থাকলে বেশি ভালো হতো। তোমার জন্য মুন নামটা পারফেক্ট।”

মুনা খুব বিরক্ত হলো। এখন আবার তার নাম নিয়ে পড়েছে। আর কোনো কাজ নেই লোকটার? স্যার বোধ হয় বুঝতে পারল মুনা রাগে ফুঁসছে। মুচকি হেসে বলল,“ক্লাসে দেখা হবে। বাই।”

মুনা মাথাটা হালকা উঁচু করে মৃদু হাসার চেষ্টা করল। স্যারের মুখের হাসিটা দেখেই রাগটা যেন আরো একগুণ বেড়ে গেল। কিন্তু সে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল। অন্তর হেসে বলল,“ওকে স্যার।”

স্যার হাসিমুখেই সেখান থেকে চলে গেল। মুনা রাগে গজগজ করতে করতে মুখ ফুলিয়ে শ্বাস নিল। অন্তর তাকে লক্ষ্য করে ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করল,“এই মুলা, তোর আবার কী হইছে?”

মুনা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,“লোকটা কী শয়তান দেখেছিস? সুযোগ পেয়ে কতগুলো কথা শুনিয়ে গেল। আমি একে কত ভালো মানুষ ভেবেছিলাম। ধুর!”

অন্তর হেসে বলল,“ভালোই তো। খুব মিশুক দেখলি তো। ইচ্ছে করে এসে কী সুন্দর কথা বলল আমাদের সাথে!”

মুনা ভেংচি কেটে বলল,“বুঝি বুঝি। ওই একবার হ্যান্ডসাম বলেছে তো সেজন্য এখন ওই পাজি লোকটার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিস।”

অন্তর কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বলল,“তবে এই স্যারের বয়স কিন্তু খুব কম। একদম ইয়াং। আমার মনে হয় উনি হয়তো নতুন জয়েন করেছেন। কথাবার্তায় কত সুন্দর মিশুক স্বভাব। কয়েকদিন ওনার সাথে কথা বললে বন্ধু মনে হবে। কত ভালো মনের মানুষ খেয়াল করেছিস?”

মুনা চোখ পাকিয়ে বলল,“দরকার নেই আমার খেয়াল করার। তুই আরও বেশি করে খেয়াল কর। দরকার পড়লে সারাক্ষণ গিয়ে ওই লোকের পেছনে পড়ে থাক। ফালতু যতসব!”

কথাটা বলেই মুনা হনহন করে হেঁটে ক্যাম্পাসের ভেতরে চলে গেল। অন্তর হাসতে হাসতে মুনাকে কয়েকবার পিছু ডাকল। কিন্তু মুনা একবারও ফিরে তাকাল না।

চলবে……………………🌸

(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here