হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার
৩৫.
-তুই কি রেগে আছিস?
মোজাম্মেল সাহেবের প্রশ্নের জবাবে স্বাভাবিক গলায় হিমি বললো,
-না। আমার মন খারাপ। দুপুরে ঠিকঠাক ছিলো তবে বিকেল থেকে মন খারাপ ক্রমেই বাড়ছে।
-এর কারন কি?
-বলতে পারছি না। হয়তো দোহার হলুদের অনুষ্ঠানে যেতে পারি নি বলে। আবার এও হতে পারে তুমি আসার পর থেকে আমায় সময় দাও নি বলে। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।
মোজাম্মেল সাহেব মৃদু হাসলেন। বললেন,
-তখন ওবাড়ি যাওয়া জরুরী ছিলো। এখন তো সময় দিচ্ছি!
-তখন আর এখনের মধ্যে বিস্তর ফারাক তোমার চোখে পরছে না জ্যাঠুমনি! তুমি জানো, তোমার অভিমান হবে ভেবে আমি এক ঘন্টার জন্যও বান্ধবীর গায়ে হলুদে থাকতে চাই নি। সবার অনুরোধকে নাকচ করে দিয়েছি। অথচ তোমার কোনো হেলদোল নেই!
-আমি কি জানতাম না কি যে তুই আমার জন্য এতবড় সেক্রিফাইস করছিস? জানলে অবশ্যই যেতাম না।
-মিথ্যে কথা। তুমি যেতে।
-আমি যেতাম? সেটা তুই কি করে বলছিস?
-না বলার কি আছে? আমি জানি। চিনি তোমায়। ভাতিজার বিয়ের তারিখ ঠিক করা আর ভাইঝির সাথে সময় কাটানো এক নয়। দুটোর গুরুত্বও এক নয়।
-তোর কথায় কোনো যুক্তি খুঁজে পেলাম না।
-পাবেও না। ছাড়ো। কিছু খাবে? আমার খিদে পেয়েছে দেখি রান্নাঘরে কিছু পাই কি না!
মোজাম্মেল সাহেব খাটে দু হাত রেখে পেছন দিকে শরীর এলিয়ে দিলেন। ঘাড় উল্টো দিকে শক্ত করে রেখে পা টানটান করে বললেন,
-তোর বড়মাকে বল চা করে দিতে।
-বড়মা তো এখন রান্নাঘরে নেই।
-নেই তো কি হয়েছে। গিয়ে করে দেবে।
-রাত নটার আগে বড়মা দাদুর ঘর থেকে বেরুবে না।
-কেনো?
-দাদুকে ঔষধ খাইয়ে, পা ম্যাসাজ করে, মাথা টিপে ঘুম পারাবে তাই। সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
-তুই চা বানাতে পারিস?
-চা বানাতে দেখেছি অনেককে। কখনো চেষ্টা করি নি। আজ করবো?
-না থাক। তোর ছোটমাকে বল দু কাপ চা করে দিতে। তুই আর আমি খাবো।
হিমি মাথা দুলিয়ে চলে গেলো। রান্নাঘরে আসতেই চোখে পরলো রাদিবাকে। তিনি চোখ মুখ শক্ত করে কাজ করছেন। করছেন বললে ভুল হবে দুমদাম করে জিনিস এদিক ওদিক রাখছেন। হিমিকে দেখে যেনো ওনার কাজের গতি বাড়লো। চোখ রাঙিয়ে হিমির দিকে তাকিয়ে মুখে কিছু বিরবির করলেন। হিমি ভাবলো ছোটমা কি তাকে গালি দিলো? দিলে কি গালি দিলো? আর কেনোই বা গালি দিলো? যদি না দিয়ে থাকে তবে বিরবির করে কি বললো? অভিশাপ দিলো বুঝি? দিতেই পারে। তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই হিমির। ভাবনা এটাই যে কি অভিশাপ দিলো। ফলবে না তো!
রাদিবা ধপাধপ পা ফেলে কেবিনেটের কাছে এসে দাঁড়ালেন। তারপর হাতের গুড়া মরিচের বয়ামটা ঠাস করে কেবিনেটের উপর রাখলেন। ঘুরে গিয়ে অন্য দিকের তাক থেকে তরকারির হাড়ি তুলে এনে চুলায় বসালেন। খট করে চুলার আগুন জ্বেলে দিয়ে লবনের কৌটটা ডানদিক হতে বামদিকে সরালেন। চামচের রিঙ থেকে বড় চামচ নিয়ে হাড়ির ঢাকনা সরিয়ে তাতে চামচ নাড়তে লাগলেন। পুরো কাজটাই তিনি করলেন হিমির দিকে তীক্ষ্ণ কড়া নজরে তাকিয়ে। হিমি রান্নাঘরের দরজাতেই থম মেরে দাঁড়িয়ে থেকে রাদিবার কান্ড কারখানা দেখলো। রাদিবা ক্ষীপ্ত গলায় বললেন,
-এখানে পিলার হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? কি করতে এসেছিস করে বিদায় হো।
হিমি মৃদু হাসার চেষ্টা করে রান্নাঘরে ঢোকলো। ফ্রিজ খোলে এক লিটারের সেভেন আপ এর বোতল হাতে নিলো। বোতলে সেভেন আপ নেই, পানি। ঠান্ডা হিম শীতল পানি। হিমি বরাবরই বোতল উপর করে মুখ হা করে পানি খায়। কিন্তু এবার গ্লাস নিলো সে। অর্ধেকটা ঠান্ডা পানিতে পূর্ণ করে বাকি অর্ধেকটা ফিল্টার থেকে নরমাল পানিতে পূর্ণ করলো। অন্যদিনের মতো এক নিশ্বাসে ঢকঢক করে সব পানি খেয়ে নিয়ে বোতলের কমে যাওয়া অংশে পানি ভরে আবারও ফ্রিজে রাখলো।
রাদিবা ভ্রু কুঁচকে দেখলেন একবার। রাদিবার জায়গায় আমিনা হলে ভড়কে যেতেন। হা করে তাকিয়ে থাকতেন হিমির দিকে। মৃদু হেসে বলতেন,’কি ব্যাপার রে? কিছু চাই?’
কিন্তু রাদিবা উচ্চবাচ্য করলেন না। হিমি ঢোক গিলে চায়ের কথা বলতে গিয়েও বললো না। রান্নাঘর থেকে বেরোতে নিতেই রাদিবা বলে উঠলেন,
-শোন? তোর ওই বোনকে বলে দিস তোর মতো অকর্মণ্য যেনো নাহয়! কাজ ফাজ শিখে আসে যেনো। এখানে আমি ওকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবো না! কখনো কেউ বউয়ের মর্যাদা না দিলেও এখন শাশুড়ির মর্যাদা পাওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না আমায়। একটা মানুষও আমার কথা শুনলো না। আসুক ওই মেয়ে ঘরে, দেখাবো, আমি কি জিনিস!
হিমি শুকনো হেসে বেরিয়ে এলো। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজালো সে। মিশ্মি এবাড়ির বউ হলে তার সাথে কি কি হবে সেসব হিমি জানে না তবে এটুকু জানে তার ছোটমা শাশুড়ির মর্যাদা পেতে গিয়ে বউয়ের মর্যাদার কথা ভুলে গেছেন। এবং ভবিষ্যতে তিনিও বিশ্বাস করবেন বউদের মতামতের কোনো প্রয়োজন নেই। তারা পরের বাড়ির মেয়ে। শ্বশুর বাড়িতে শুধুই কর্তব্য পালন করতে আসবে বিনিময়ে অধিকার পাবে না কিছুই।
হিমিকে হতাশ হয়ে ফিরতে দেখে উঠে দাঁড়ালেন মোজাম্মেল সাহেব। পাঞ্জাবীর হাতা ঠিক করতে করতে বললেন,
-বাচ্চা ডাক্তার কে রে?
হিমি কপাল কুঁচকালো। জ্যাঠুমনির দিকে তাকিয়ে রইলো নির্বিকার। তিনি আবারও বললেন,
-বাচ্চা ডাক্তার কে?
-তুমি কি করে চেনো?
-চিনি না তো। জানতে চাইলাম কে এই ব্যক্তি!
-হঠাৎ জানতেই বা চাইছো কেনো ওনার কথা? ‘বাচ্চা ডাক্তার’ কেনো বললে? আমি তো কিছু বলি নি ওনার বিষয়ে!
চলবে,,,,,,,,
[লিখালিখির ইচ্ছে হারিয়ে ফেলছি। সব কিছুতে কেমন বিষাদ! দুদিন ধরে চারবারেরও বেশি এই পর্বটা লিখেছি এবং নোট থেকেই ডিলিট করে দিয়েছি। ইচ্ছেক করেই করেছি। মনে হচ্ছিলো ঠিক করে লিখতে পারছি না আমি। আবোল তাবোল লিখছি। এই পর্বেও অসাধারন কিছু লিখিনি। আগের মতোই হাবিজাবি লিখেছি। আর পারছি না। তাই উপায়ন্তর না পেয়ে পোস্ট করলাম। দেরি হওয়ার জন্য এবং পর্বটা বিশ্রী, খাপছাড়া হওয়ার জন্য দুঃখিত।]