হুজুরের বউ যখন ডক্টর
রাইটার :রাকিবুল ইসলাম
পর্বঃ১৬
তাই একটু রাস্তার পাশে জঙ্গলে বসে মেয়েকে
দুধ দিতাম।এইভাবে আমার চলে গেল একদিন
পেটে প্রচন্ড ক্ষুদা আর হাটতে পারিনা।
তাই ডাসবিনের কাছে গিয়ে দেখি কোন পচা
খাবার পাই কিনা।
ডাসবিনে কুকুরের সাথে পচা খদ্য ভাগাভাগি করে
খেতাম।তারপরও পর্দার খেলাফ করিনাই।
আর আমার কোলে খাদিজা শুধু কান্না করে
তারপরও মানুষের দরজায় হাত পাতি নাই….!!!
কি করব আমি অসহায় একটা নারী
বাবা মা তো সেই ছোটবেলায় মারা গেছে,,,, আর
আমি তো দাদির কাছে মানুষ হয়েছি।
আমার দাদিও হঠাৎ মারা গেছে,,,,,,, কি করতাম আমি কিছুই করার ছিলোনা।
ওই এলাকায় কয়েকদিন ঘুরাঘুরি করলাম
কিন্তু এতো পর্দা করে চলার পরও
বখাটে ছেলেদের নজরে পড়ে গেলাম
তারা আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো হয়তো
মানুষের জন্য আমাকে কিছু করতে পারতো না।
একদিন রাত্রিবেলা এক দোকানের পাশ দিয়ে
হাটছিলাম।ওই দোকানে ক্রামবোর্ড খেলতেছিল
ছেলে গুলো।
আমি খাদিজাকে কোলে করে নিয়ে হাটতেছিলাম
আমাকে দেখে ওই বখাটে গুলো আমার পিছু পিছু
হাটতেছিল।কিন্তু আমাকে তারা ডাইরেক্ট আক্রমণ করতে পারছিল না।
কারণ মানুষের ভিতর দিয়ে চলাফেরা করছি।
এইভাবে এশার সময় হয়ে গেল।
কিন্তু নামাজ পড়ার দরকার।কিভাবে নামাজ পড়বো, বুঝতে পারছি না। কারণ সন্ধা থেকেই বখাটে ছেলে গুলো আমার পিছু নিয়েছে।
পাশে একটা পুকুর ওখানে ওযু করে কোনরকম নামাজ পড়া যাবে জঙ্গলে।কিন্তু নির্জন জঙ্গলে যদি ওরা আমাকে ঢুকতে দেখে হয়তো।
ওরা আমাকে আক্রমণ করতে পারে।অনেক টেনশনে পড়ে গেলাম।হে আল্লাহ ১৪ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত আমার ইজ্জতকে হেফাজত করেছি
কিন্তু আজ মানুষ রুপির জানোয়ারদের লালসার স্বীকার হতে যাচ্ছি।আমি তো পর্দা করতে কোন কমতি করিনাই।হাত মোজা, পা মোজা, সব পর্দা দিয়ে ঢাকা আছে।কিন্তু তারপরও বখাটে ছেলে গুলো আমার পিছু নিয়েছে….!!!!
ছেলে গুলোর মতলব ভাল মনে হচ্ছিলোনা তাই
রেল স্টেশনে গেলাম।কারণ ওখানে অনেক মানুষের ভিড় তারা আমাকে ধরতে পারবেনা..।।
রেল স্টেশনে গিয়েও দেখি বখাটে গুলো আমার পিছু ছাড়ছেনা।
চোখ দিয়ে পানি পড়ছে টপ টপ করে।
আজ যদি মা বাবা বেচে থাকতো তাহলে
এই কঠিন পরিস্থির স্বীকার হতে হতো না
কি করে বাচি এদের হাত থেকে। পালাতেও পারছিনা.
এমন সময় একটা ট্রেন আসলো আমি ওই ট্রেন এ উঠলাম,জানি না এই ট্রেন কোথায় যাবে।
কিন্তু যার বাড়িঘর নাই তার আবার হিসাব করে
কি লাভ।
ট্রেনে বসে আছি একটা সিটে,চোখের পানি গুলো
পড়ছে টপ টপ করে। হে আল্লাহ আমার সহায় হও
মানুষের বদ নজর থেকে আমায় রক্ষা করো।
নাহ বখাটে ছেলে গুলোকে আর দেখা যাচ্ছেনা
যাক বাচা গেল আর কোন টেনশন নাই..!
অন্তত ছেলে গুলোর হাত থেকে রেহাই পেলাম।
কয়েকদিন ধরে ঘুম হয় নাই তাই ট্রেনে বসে ঘুমিয়ে গেলাম কিছুই বুঝতে পারলাম না কখন যে ঘুমিয়ে গেছি।
খাদিজা আমার কোলে ঘুমাচ্ছে,হঠাৎ একটা শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
চোখ খুলে দেখছি একটা লোক বলছে টিকিট দেন
আমি বললাম আমার কাছে কোন টিকিট নাই।
লোকটি রেগে গিয়ে বললো সামনের স্টেশনে ট্রেন থামলে নেমে যাবেন।
নয়তো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব।
মানুষের কথা সয্য করতে পারিনা
মাথা নিচু করে আছি……..সামনের স্টেশনে ট্রেন
থামলো নেমে গেলাম।
চারদিকে তাকিয়ে আছি কোথায় যাবো এই রাতে।
রাত বাজে এগারো টা মানুষের কোন আনাগোনা নাই।আশেপাশে কোন জঙ্গল নাই
জঙ্গল থাকলে এশার নামাজটা আদায় করতে
পারতাম।
হঠাৎ একটা লোক আমাকে পিছন থেকে ডাক দিয়ে বললো মা তুমি এখানে কি করছো।
তাকিয়ে দেখলাম লোকটার মুখে দাড়ি আছে
পান্ঞ্জাবী পরা। দাড়ি গুলো সব পাকা।
বাবার বয়সী একটা লোক।
আমি তাকে আমার অবস্থান টা খুলে বললাম
লোকটা বললো মা কিছু মনে না করলে আমি তোমার সব কিছু ব্যাবস্থা করে দিতে পারি
মনে মনে চিন্তা করলাম এটা তো মুরুব্বি মানুষ
বাবার বয়সী।
লোকটাকে বিশ্বাস করা যায়।
লোকটার সাথে যাচ্ছি তার বাসায়, মুরুব্বি মানুষ তো।তাই স্বরল মনে যাচ্ছি।
চারদিকে নির্জন পাতাল জমি, আমি বললাম চাচা
এখানে তো আশেপাশে বাড়ি দেখতে পাচ্ছি না কোথায় নিয়ে যান আমাকে…
স্বামী : হুমমমমম তারপর কি হলো বলো
স্ত্রী : তারপর :
লোকটা জবাব দিলো এই জমি দিয়ে আমার বাড়িতে যেতে হয়।তবুও মনে সাহস নিয়ে মুরুব্বি লোকটার পিছু পিছু হাটতেছি।
আমি বললাম আর কতোদূর আপনার বাসা।
লোকটি বললো ওই যে আলো জ্বলছে ওখানে
আমি থাকি এসো…
আমি স্বরল মনে গেলাম, গিয়ে দেখি কোন ঘর না
ধানের জমিতে পানি দেয়া একটা ডিপ।
আর ডিপের পাশে ছোট একটা ঘর…….
রাত বারোটা বাজে তখন।
লোকটা জবাব দিলো আমি এখানে থাকি
তুমি এখানে থাকতে পারো মা।
ওইযে বিছানা, ওখানে গিয়ে বিশ্রাম করো,,।।
আমি তোমার জন্য একটু খাবার নিয়ে আসতেছি।
এইবলে লোকটি চলে গেল খাবার আনতে।
আমি একটু খাদিজাকে নিয়ে বিছানায় বসে
আছি।
প্রায় আধা ঘন্টা পর লোকটি আসলো আমার জন্য
খাবার নিয়ে।আমিও অনেক ক্ষুদার্থ।
তাই কোন বিলম্ব না করে চুপ করে বসে আছি।
লোকটি : তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি খেয়ে নাও মা।
আমি : আপনি….
লোকটি : আমি খেয়ে এসেছি তুমি খেয়ে নাও
আমি : ওহ..
লোকটি : লজ্জা পেওনা আমি বাহিরে আছি তুমি খেয়ে নাও।
এই বলে মুরুব্বি লোকটি বাহিরে চলে গেল
আমি খাবার খেয়ে নিলাম।
পানির একটা বোতল ছিলো সেই বোতলটা খাদিজার পা লেগে পড়ে গেল ।
খাওয়া সেষ হবার পর।লোকটি আমাকে বললো
সব খাবার খেয়েছো।
আমি বললাম হ্যা,,, সব খাবার খেয়েছি।
আমার ভিতরে ভয় কাজ করছিলনা কারণ লোকটা মুরুব্বি, অন্তত আমার কোন ক্ষতি
করবেনা।
লোকটি বললো পানি খেয়েছো, আমি বললাম
আসলে পানি খাইনাই মেয়ের পা লেগে পানি পড়ে গেছে।লোকটি বললো ইশ এটা একটা কথা হল
পানিটা কিভাবে পড়ে গেল
আমি বললম এটা কোন ফ্যাক্ট না, ডিপ চলছে।
ওখানে গিয়ে পানি পান করব।
আমি ওখানে গিয়ে পানি পান করলাম।
লোকটি বললো তুমি বিছানায় ঘুমাও আমি বাহিরে থাকব,,,, আমাকে ফসল পাহারা দিতে হয়।
এখানে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো,কোন অসুবিধা হলে আমাকে ডাক দেবে কেমন।
লোকটা এই বলে বের হয়ে গেল,আমি খাদিজাকে
নিয়ে শুয়ে পড়লাম।
শরীরটি অনেক ক্লান্ত,, খুব ঘুম পাচ্ছে তাই ঘুমিয়ে
গেলাম। কারণ কয়েকদিন ধরে ঘুমাতে পারি নাই।
রাত্রি গভীর হয়ে যাচ্ছে….!!!
হঠাৎ ঘুম আমার ভেঙ্গে গেল, নজর করলাম কে যেন আমার হাতটা ধরে টিপতেছে।
হাতের মোজা টা খোলা।
আমি চোখ খুলে দেখি সেই বৃদ্ধ লোকটি,
অবাক হয়ে গেলাম যে লোকটা আমাকে মা
বলে ডেকেছে।সেই লোকটা আমার হাত টিপতেছে কেন…..!!!
তাও আবার পিতার বয়সী।
আমি টের পেয়ে হাতটা সরিয়ে নিলাম,
তাড়াতড়ি উঠে বসে পড়লাম
ছি ছি চাচা,,,, আপনি এসব কি করছেন ছি ছি
লোকটি বললো তোমার কিছু হবেনা মা
তুমি আমার দিল কে খুশি করো।
তোমার জন্য যা করার দরকার তাই করব
আমি রেগে গিয়ে বললাম ছি ছি লজ্জা করেনা
আপনার।আমাকে মা বলে ডাকছেন আবার খারাপ নিয়তে আমার দিকে এগোচ্ছেন।
ভেবেছিলাম আপনি আমার বাবার বয়সী কিছু
করবেন না।
কিন্তু আপনার কাছে্ও একটা অসহায় নারী
নিরাপদ না,,,ছি ছি ছি।
লোকটি বললো ওসব বাদ দাও এই নির্জন জায়গায় কেউ দেখবেনা তুমি আমাকে একটু
খুশি করো।আমার স্ত্রী মারা গেছে নয় বছর
হয়েছেন।
আমি রেগে বললম বউ মারা গেছে আরেকটা
বিয়ে করুণ। এক পা কবরে চলে গেছে
তারপরও কি মরার ভয় হয় নাই আপনার।
সরে দাড়ান আমি চলে যাবো এখান থেকে
লোকটি বললো বললো বের হওয়ার মত
কোন রাস্তা নাই।তোমাকে কোথাও যেতে দেব
না। আজ রাত টা আমার সাথে কাটাতে হবে
কোথাও পালাতে পারবেনা।
এইবলে লোকটি আমার হাত খপ করে
ধরলো।খুব ব্যাথা পাচ্ছিলাম হাতে……!!!
জোর করে আমাকে বিছানায় ফেলে দিলো
খাদিজা এমন সময় কান্না করে উঠলো।
বিছানা থেকে উঠতে পারছিনা, বৃদ্ধ একটা লোক
এতোটা খারাপ হবে বুঝতে পারছিনা।
বৃদ্ধ হলেও ওনার গায়ে প্রচুর শক্তি…….!!!!
বিছানায় যখন ফেলে দিলো আমি বললাম প্লিজ চাচা আমার এইভাবে ক্ষতি করবেন না।
কিন্তু লোকটা কোন কথা আমার শুনতেছেনা
ক্ষেপা কুকুরের মতো আমার শরীরে ঝাপিয়ে
পড়লো।কিছুই করার ছিলোনা কারণ বুঝতে পেরেছি উনার শক্তির সাথে আমি পেরে উঠতে পারব না।তাই নিজের মাথাটা ঠান্ডা রেখে চুপ
করে রইলাম কোন চিৎকার করিনাই।
তারপর ওই লোকটা যখন আসতে করে দূর্বল
হচ্ছে তাকিয়ে দেখলাম বিছানার পাশে একটা
তালা।দরজায় তালা দেয়া থাকতো সেই বড়
সাইজের একটা তালা।
আসতে করে ডান হাত টা বাড়িয়ে তালা হাতে নিয়ে
বৃদ্ধ লোকটার মাথায় এতো জোরে মারলাম
সাথে সাথে উনি চিৎকার দিয়ে উঠলো…..!!!!!!
সাথে সাথে উনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে..
আর একটু সময় চুপ করে থাকলে হয়তো আমার
সবকিছু শেষ হয়ে যাইতো।
লোকটা অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইলো ওই মধ্য রাত্রিতে
খাদিজাকে কোলে করে নিয়ে বেরিয়ে গেলাম
ওখান থেকে।
চারদিকে হাটতেছি, আশেপাশে কোন গ্রাম নেই
শুধু ধানের ক্ষেত।শিয়ালের ডাক।খুব ভয় লাগছিল
কি করব আমি কোথায় যাবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
হে আল্লাহ তুমি।আমাকে রক্ষা করো প্লিজ
আমি ক্লান্ত বাস্তবতার সাথে লড়াই করে।
হাটতেছি নিজেও জানিনা কোথায় যাবো
হঠাৎ করে শুনতে পেলাম কয়েকজন লোক
ফিস ফিস করে কথা বলছে।
দূরে দাড়িয়ে আছি তাদের কথা গুলো শুনলাম
তাদের ভিতরে একটা ছেলে বলে উঠলো
লাশটাকে তাড়াতাড়ি নামা।
এই কথা শুনতেই বুঝতে বাকি রইলোনা না
এটা কোন সন্ত্রাসী হবে কাউকে হত্যা করেছে।
আমি দূরে তাকিয়ে দেখছি তারা গর্ত করতেছে
অন্ধকার ঠিকমত বুঝতে পারছিনা
এক ছেলে বলে উঠলো ওস্তাদ এখনো বেচে আছে
ছেলেদের ভিতরে একজন বললো আচ্ছা বেচে
থাক চাপা মাটি দিলেই মারা যাবে তাড়াতাড়ি।
ওরা ওই লাশটাকে মাটি দিয়ে চলে গেল
আমাকে দেখতে পায়নাই।
ওরা যখন বললো বেচে আছে,,, আমি গিয়ে হাত
দিয়েই মাটি খুড়তে লাগলাম দেখলাম আপনি
সেই ব্যাক্তি।মাথায় আপনার ভারি কোন যন্ত্র দিয়ে
আঘাত করেছে।তাই এখনো রক্ত পড়ছে।
জায়গার মাটি লাল হয়ে গেল।ফজরের সময় হয়ে
গেছে….!!! অন্ধকার দূর হচ্ছে।
একটা লোক বাজারে কাচা তরকারির দোকান দেয়ার জন্য ভোরবেলা যাচ্ছিলো।
ওই লোকটা খাদিজার কান্না শুনতে পেয়ে
নিচে আসলো।তারপর লোকটাকে সব কিছু
খুলে বললাম পৃথিবীতে এখনো অনেক ভাল মানুষ
আছে যাদের জন্য দুনিয়াটা এখনো ঠিক।
লোকটা আমাকে অনেক হেল্প করেছে।
আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো
ডাক্তার রিপোর্ট দিলো তোমাকে সুস্থ হতে
দেড় বছর সময় পার হয়ে যাবে।
কিন্তু আমি কি করব মানুষের বাড়িতে আর কতোদিন বসে বসে থাকবো এবং খাবো।
আমি কোরআনের হাফেজা ইয়াদ ভালো ছিলোনা
তাই মহিলা মাদ্রাসায় চাকরির সুযোগ হয় নাই।
তাই পাশে গার্মেন্টস চাকরি করতাম।
পনেরো হাজার টাকা বেতন পেতাম সেটা দিয়েই
আপনার চিকিৎসা করতাম।
এইভাবে দেড় বছর পার হয়ে গেল,আপনি তখন
অনেকটাই সুন্থ হয়ে গেলেন।আপনার সেবা যত্ন করতে গিয়ে আপনার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম
তাই আমি আপনাকে নিজের করে নেয়ার জন্য
দুজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি।
আর ডাক্তার বলেছিল আপনার কোনদিন পুরোনো কথা মনে পড়বে না।তাই আপনি আমারই
থাকবেন বলে ঠিক করলাম।
গার্মেন্টস থেকে ঘোষণা আসলো বিদেশে লোক
নেবে।তাই আপনাকে নিয়ে দূরে যাবার সিদ্ধান্ত
নিয়ে নিলাম।কারণ এই দেশে থাকলে কোনদিন
আপনাকে দেখেও ফেলতে পারে।
তাই গার্মেন্টস এর সহযোগিতায় মুম্বাই চলে আসলাম।কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস আজ আমরা
এই মু্ম্বাইয়ের নাগরিক হয়ে গেছি।
আর জাফরীর সাথে যে কোন ভাবে দেখা মিলেছে।
স্বামী : তুমি আগে কেন বলোনি (কান্না)
স্ত্রী : তোমাকে হারানোর ভয় ছিলো বেশি তাই
বলতে পারিনাই।কিন্তু আপনাকে আজ কথা দিতে হবে।আপনি কিন্তু ওয়াদা করেছেন আমার কথা রাখবেন।
স্বামী : কি কথা
স্ত্রী : তুমি জাফরীর কাছে যাও ওই মেয়েটা তোমাকে পাগলের মত ভালোবাসে।
স্বামী : কিন্তু তোমার এই অবস্থায় রেখে
স্ত্রী : আমার কোন সমস্যা হবেনা
স্বামী : তোমাকে রেখে একা কি করে যাবো।
স্ত্রী : নাহ আমার কিছু হবেনা বাড়িতে অনেক কাজের আপু আছে।
স্বামী : কিন্তু….
স্ত্রী : কোন কিন্তু না আমাকে কথা দিয়েছেন তো
আর জাফরীকে সুস্থ হতে হবে বুঝেছেন।
প্লিজ আপনি যাবেন।
স্বামী : কিন্তু তোমার কি
স্ত্রী : চুপ….. আর একটা কথাও না আপনি যাবেন ব্যাস।
খাদিজার আব্বু আর কি করবে স্ত্রীর মুখে সব
কিছু শোনার পর কেন যেন গোটা দুনিয়াটা
অন্ধকার লাগছে। এতোবড় সত্যি আর আমার মনে নাই।
পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নিলো মেহেদি জাফরীর কাছে
যাবে।
তাই পাসপোর্ট ভিসা করতে পনেরো দিন সময়
লাগবে।
________________
নাসরিন : জাফরীর অবস্থা দিন দিন খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে।
রেহেনা : তাহলে কি করবি।
নাসরিন : আন্টিকে এসব জানা যাবেনা।
রেহেনা : চোখের পানি গুলো তো আটকাতে পারছিনা। পানি শুকিয়ে গেছে।আর কিছুদিন
গেলে হয়তো চোখ দিয়ে রক্ত পড়বে।
নাসরিন : কি করব আমরা সব তো করেছি
আর কিছু করার নাই রে আমাদের
এখন তাকিয়ে থাকতে হবে আল্লাহর দিকে।
রেহেনা : মেহেদি ভাইযে এতোটা স্বার্থপর হবে
বুঝতে পারিনি।জাফরীর কপালটা খারাপ সে
একজন ভুল মানুষকে ভালবেসেছে।
ভালোবাসার মানুষটা এইভাবে অসুস্থ বছর হয়ে
আছে।কিন্তু একটা ফোন দিয়ে কোনদিন খোজ
নিলোনা মেহেদি ভাই।
নাসরিন : রাইট বলেছিস মেহেদি ভাইকে আমরা ভালো ভাবতাম কিন্তু আজ মনে হচ্ছে পৃথিবীর
সব চেয়ে খারাপ ব্যাক্তি।
রেহেনা : ঠিক বলেছিস একদম কারেট।
______________
পনেরো দিন পেরিয়ে গেল মেহেদি ওরফে খাদিজার আব্বু বাংলাদেশে রওয়ানা দেবে
খাদিজার আব্বু : নিজেল খেয়াল রাখবে
আমি খালাকে বলেছি তোমাকে দেখে দেখে
রাখবে।
খাদিজার আম্মু : হুমমমমম
খাদিজার আব্বু : কিরে পাগলী কান্না করছো কেন
খাদিজার আম্মু : নাহ এমনি কিছুনা।
খাদিজার আব্বু : তোমার কোন ভয় নেই আমি
তোমারই,,, এবং তোমারই থাকবো।
খাদিজার আম্মু : এখন এসব কথা বাদ
দোয়া করি আপনার সফর সফল হোক
আমার স্বতীন টাকে একটু ভালকরে আদর করিও
মেয়েটা খুব কষ্ট পেয়েছে।
খাদিজার আব্বু : তোমার স্বতীন
খাদিজার আম্মু : হ্যা…. জাফরী তোমার বড় স্ত্রী
তার সম্পূর্ণ অধিকার আছে।
আপনার সফর সফল হোক……!!!!!
এই কামনা।
খাদিজা : আস্সালামুআলাইকুম আব্বু তুমি কই যাবে।
খাদিজার আব্বু : এইতো আম্মু তোমার জাফরী আন্টির কাছে যাবো।
খাদিজা : আমি্ও যাবো
খাদিজার আম্মু : পরে যাবি মা…..আগে তোর
বাবা যাক ওখানে তারপর।
________________
মেহেদি মুম্বাই থেকে রওয়ানা দিলো বিকালবেলা
বাংলাদেশে ইয়ারপোর্ট নামলো।
ক্যাম্পাস থেকে জাফরীদের বাড়ির ঠিকানা নিয়েছিল মেহেদি।
সাথ বছর পর নিজের দেশে পা রাখলো মেহেদি
যেন সব কিছু খুব চেনা চেনা।
তারপরও কেন আমার অতিত জীবনের কাহিনি
মনে নাই।কেন মনে পড়েনা সেই দিনের কথা গুলো
বাসে চড়ে মেহেদি জানালার কাছে বসে আছে।
মাঠে বাধা আছে গরু ছাগল, কুকিল পাখির ডাক
সবুজ শ্যামল ভারা দেশ।
চোখ যতোদূর যায় ততোদূর পর্যন্ত ফসলের মাঠ।
বাচ্চারা এক মাথা থেকে দৌড়ে পুকুরে
দিচ্ছে লাফ।
জেলেরা নদীতে ধরছে মাছ।আবার কেউ হাটু
জ্বলে পার হচ্ছে ওপারে।
রাখাল বাজায় ঘাড় কাটা বাশি,নৌকায় মাঝি
গাইছে বাউল গান।
শস্য শ্যামলা স্বর্ণ প্রসবিনি সোনার বাংলা।
এটাই বুঝি আমাদের বাংলাদেশ।
এটাই বুঝি আমার জন্ম স্থান……!!!!
খুব সুন্দর দেশ তো। মেহেদি জানালার ধারে বসে
আছে আর এই কথা গুলো ভাবছে।
চলতে চলতে চলেই গেল নিজের জেলায় নিজের গ্রামে।বাস থেকে যখন মেহেদি নামলো।
এক দোকানের পাশ দিয়ে হাটতেছে,
আসলে মেহেদি ঠিকমত কাউকে চিনেনা জানেনা।
একলোক বড়বড় নজর করে তাকিয়ে আছে
মেহেদির দিকে।
লোকটি : ভু ভু ভুত
মেহেদি : মানে কোথায় ভুত।আর আপনি আমাকে দেখে ভুত ভুত করছেন কেন….??
লোকটি : ভু ভু ভুত
মেহেদি : আরে দাদা কে আপনি আমাকে দেখে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছেন মানে।
আর ভুত বলতে কি কিছু আছে।
আল্লাহ মানুষ আর জ্বীন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন।
লোকটি ভুত ভুত বলতেই দৌড় দিলো।
কি অবাক কান্ড পাগল নাকি লোকটা আমাকে
দেখে দৌড় দিলো মানে।মাথায় মনেহয় কোন
সমস্যা আছে।
মেহেদি দোকানে গিয়ে বলছে ভাই একটা পানির
বোতল দেন তো।কিন্তু দোকানদার পানির বোতল
দেয়া বাদ দিয়ে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে
মেহেদির দিকে।
দোকান ওয়ালাও পর্যন্ত ভয়ে দিলো এক দৌড়।
ব্যাপার কি সবাই আমাকে দেখে দৌড় দিচ্ছে
কেন।কি হয়েছে সবার।অবাক কান্ড।
একলোক কে গিয়ে মেহেদি জিজ্ঞেস করলো চাচা
এখানে গনী মেম্বারের বাড়ি কই…..!!!!
কিন্তু ওই লোকটাও চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।বুড়ো মানুষ তো ভয়ে কাপতেছে।
মেহেদি বললো চাচা তুমি কাপছো কেন কি হয়েছে
তোমার।
চাচা : কে কে কে,,, তুমি (ভয়ে)
মেহেদি : আমি গনী মেম্বারের ছেলে মেহেদি
চাচা : তুমি কোথায় থেকে আসলে (ভয়ে)
মেহেদি : আমি মুম্বাই থেকে এসেছি
চাচা : তাহলে তুমি গনী মেম্বারের ছেলে নিজের বাপের বাড়ি খুজতে।।। তুমি আমাকে বলছো।
কে বাবা তুমি (ভয়ে)
মেহেদি : অবাক কান্ড আপনি আমাকে ভয় পাচ্ছেন কেন। আমার সামনে দাড়িয়ে ভালভাবে
কথা বলুন, আপনি এমন থরথর করে কাপছেন কেন চাচা।
চাচা : তুমি কী সত্যি মেহেদি নাকি অন্য কিছু।
বাবা আমাকে ছেড়ে দাও আমাকে মেরোনা
মেহেদি : কি অবাক কান্ড
মেহেদি নজর করে দেখছে গ্রাম থেকে সবাই দৌড়ে আসছে মেহেদিকে দেখার জন্য।
ছোট, বড়, বুড়া বুড়ি সবাই ভেঙ্গে আসছে মেহেদি কে এক নজর দেখার জন্য।অনেক লোক এসে
মেহেদির চারপাশে দাড়ালো।মেহেদি বুঝতে পারলো না আসলে তারা আমাকে ঘিরে কেন দাড়ালো।কি হচ্ছে এসব।
মেহেদি অবাক নজরে তাকিয়ে আছে
সবার দিকে।
মেহেদি : (আস্সালামুআলাইকুম) কে আপনারা
আর আমাকে কেন ঘিরে ধরেছেন।
গ্রামের লোক : তুমি কে
মেহেদি : আমি গনি মেম্বারের ছেলে মেহেদি।
গ্রামের লোকেরা সবাই তাকিয়ে আছে এই সেই
আমাদের মেহেদি যে প্রায় আট বছর ধরে
নিখোঁজ। একই রকম চেহারা, একই রকম কথার বলার ধরণ।একই রকম চলাফেরা।সবার বুঝতে কষ্ট হলোনা যে এটাই মেহেদি। এতোদিন তুমি।কোথায় ছিলে বাবা।
তোথায় থেকে তুমি হঠাৎ বের হলে।
মেহেদি তাদের প্রশ্নের জবাবে কিছুই বুঝতে পারছেনা কারণ তার পুরোনো কথা গুলো
মনে নাই।সবার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
গ্রামের লোক বলছে কি হলো জবাব দাও
তুমি এতোদিন কোথায় ছিলে আর কোথায়
থেকে বের হলে। তোমাকে কত খুজেছি, কতো জায়গায় খুজে বেড়িয়েছি।মেহেদি তাকিয়ে আছে তাদের দিকে কোন উত্তর দিতে পারছেনা।
নাসরিন : আমি জবাব দেব আপনাদের সব
কথার।
_____________
খাদিজা : মা আব্বু কবে আসবে আমাদের এখানে
খাদিজার আম্মু : হুমমম আসবে আসবে।
তবে আমরা অনেক দূরে চলে যাবো।
তুই আমি, আমার পেটে যে আছে সে।
খাদিজা : আর আব্বু
খাদিজার আম্মু : তোর আব্বু তো অন্য কারো
আমাদের সেই সুযোগ হবে না রে মা।
আগে তোর আন্টি সুস্থ হোক তারপর যা করার
দরকার আমি নিজেই করব।
______________________
নাসরিন সবাইকে সবকিছু খুলে বলার পর
গ্রামের লোকেরা শান্ত হলো।
নাসরিন বললো মেহেদি ভাই চলেন আমি আপনার
বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।
মেহেদি : হুমমমমম
মেহেদি আর নাসরিন আরো কয়েকজন মেহেদির
বাড়িতে গেল।মেহেদি তাকিয়ে দেখছে বাড়ির
ইট গুলো আসতে আসতে খুলে গেছে।
দরজায় একটা বড় তালা দেয়া…..!!!!
মেহেদি বললো আমাদের বাড়ির এই অবস্থা কেন
আর দরজায় তালা দেয়া কেন।
নাসরিন : কারণ আপনার মা আট বছর আগে আপনার শোকে হার্ড এট্যাক করে মারা গেছে।
জাফরী যখন সুস্থ ছিল তখন মাঝে মাঝে বাড়িতে
প্রায় আসতো।
এই কথা শোনার পর মেহেদির কলিজায়
গিয়ে আঘাত লাগলো। আমার মা আমার শোকে হার্ড এট্যাক করে মারা গেছে।
আমার মা মারা গেছে,,, চোখের কোঠায় পানি চলে
আসলো মেহেদির। চোখ দুটো যখন বন্ধ
করলো। তখন চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে মাটিতে
পড়লো।
মেহেদি দরজার পাশে ইট দিয়ে তালা ভেঙ্গে দরজা যখন খুললো।তাকিয়ে দেখছে
বাড়ির উঠানে অনেক গাছ জন্ম নিয়েছে।
জঙ্গলে পরিনত হয়ে গিয়েছে।পাখি বাসা বেধেছে
ঘরে।যেন আট বছর ধরে এই বাড়িতে কেউ ঢুকেনি
শুধু একটা মানুষের জন্য এই বাড়িটা বুঝি শষানে পরিনত হয়ে গেছে।
জঙ্গল সরিয়ে মেহেদি বাড়ির উঠানে প্রবেশ করলো
তাকিয়ে দেখছে ঘরে তালা দেয়া।
ঘরের তালা গুলো জং ধরে শেষ…..!!!!!তিনটা ঘর,,, তার আগে মেহেদি মায়ের ঘরের দরজার পাশে দাড়ালো।চোখের পানি গুলো টপ টপ করে পড়ছে।ঘরের চাল গুলো ভেঙ্গে পড়েছে।ঘরের ইট
গুলো আসতে আসতে খুলে খুলে যাচ্ছে।
মেহেদি একটা ইট নিয়ে মায়ের ঘরের দরজার তালা টা ভেঙ্গে ফেলল।
দরজা খোলার সাথে সাথে চামচিকা উড়ে বের হয়ে গেল।ঘরের সব জায়গায় মাখরাসার জাল দিয়ে
পুরো ঘরটা আটকানো।
মাখরাসা বাসা বেধেছে……!!!!
মাখরাসার জাল ভেদ করে ঘরে ঢুকলো মেহেদি
তাকিয়ে দেখছে মায়ের বিছানা টা খালি পড়ে আছে।খাটের এক পা ঘুন ধরে শেষ হয়েছে।
চোখের কোঠায় পানি ছলছল করছে
মায়ের পান পাতার থালাটা এখনো পড়ে আছে
খাটের পাশে। থালায় কয়েকটা পান পাতা শুকিয়ে দুমড়ে মুছড়ে গেছে।চুনের কটুয়া শুকিয়ে গিয়ে
চুন হয়েছে পাথরের মত শক্ত।
মেহেদি চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলোনা
চোখের পানি গুলো টপ টপ করে মায়ের শুকনা
পান পাতার উপর পড়ছে।
ওমা তোমার পান পাতা গুলো তো শুকিয়ে গেছে
তুমি যে বিছানায় ঘুমাও, সেই বিছানা খালি পড়ে
আছে।কোথায় মা তুমি।
চোখে পানি নিয়ে আরেকটা ঘরের ভিতরে ঢুকলো
তাকিয়ে দেখছে অনেক গুলো হাদিসের কিতাব
অনেক বই তাকে তাকে সাজানো আছে।
ময়লা পড়ে বই গুলো ঢেকে গেছে,মেহেদি আসতে
করে ফু দিয়ে তাকিয়ে দেখছে অনেক গুলো বই।
এই বই গুলো মনেহয় আমিই এক সময় পড়তাম
কিন্তু আট বছর ধরে এই বই গুলো কেউ খুলে
দেখেনি।
আলমারির দিকে এগোচ্ছে,,,, আলমারির
কাপাট খুলে দেখছে দুইটা বোরখা আর একটা টুপি।এই টুপি টা বোধহয় আমার।আর এই বোরখা
দুটো মনেহয় জাফরীর।
মেহেদি আসতে করে বোরখা দুটো হাতে নিয়ে
বোরখা গুলোতে চুমু দিচ্ছে।
আট বছর ধরে হয়তো জাফরী এই বোরখা গুলো
পরে নাই।
আয়নার সামনে এগোচ্ছে মেহেদি।একটা কাপড় দিয়ে আয়না ঢাকা আছে।
মেহেদি আয়নার কাপড় টা সরিয়ে দেখছে।
ময়লা পড়ে আয়না টা অন্ধ হয়ে গেছে, মুখ দেখা
যাচ্ছে না।
হাত দিয়ে ময়লা সরিয়ে নিজের চেহারা দেখছে
হঠাৎ আয়নার এক কোনায় তাকিয়ে দেখছে
I Love you huzur….. লেখা।
আয়নার আরেক কোনায় লেখা আছে
M+j….. মেয়েটা বোধহয় আমাকে খুব ভাল বাসত
লেখার উপর একটু স্পর্স করলো।
বাড়ির চারপাস ঘুরছে মেহেদি,বাড়ি আছে,,,,,,,, ঘর আছে। সব কিছু আগের মতোই আছে
কিন্তু সময়ের ব্যাবধানে সব কিছুতে ধরেছে জং
আমরাও আজ নতুন মানুষ, হায়াতের শেষ
সিমানায়।
জং ধরে শেষ হয়ে যাবো।পড়ে রবে সবকিছু।
এমন চিন্তা করে মেহেদি কান্না করছে,,সেই কান্নাটা হলো নিরব কান্না।
মায়ের ঘর খালি, আমার এতো গুলো ইসলামী
বই পড়ার মত কেউ নাই।
চোখের অশ্রু গাল বেয়ে পড়ছে এমন সময়
নাসরিন ডাক দিয়ে বলছে মেহেদি ভাই
এখানে আর কতোক্ষণ থাকবেন হাসপাতালে জাফরী তো এক বছর ধরে
বন্ধ চোখ নিয়ে কান্না করছে।জানিনা সুস্থ হবে কিনা।কিন্তু আমার কেন যেন মন বলছে আপনার
অছিলায় সুস্থ হতে পারে।
চলেন ভাইজান আমার বান্ধবীটাকে আর কষ্ট
দিয়েন না।
মেহেদি : দাড়ান আমি আম্মুর চাঁদর একটা দেখেছি। সেই চাদরটা নিই। আম্মুর চাদর টা সৃতি হিসেবে রেখে দেব।
নাসরিন : হুমমমমমমমম
মেহেদি আম্মুর চাদর নিয়ে ঘরে পূনরায় তালা
দিয়ে আবার রওয়ানা হচ্ছে হাসপাতালের
একজন মানুষকে সুস্থ একমাত্র করতে পারে আল্লাহ।কিন্তু ঔষুধ মাত্র অসিলা।
মেহেদি জাফরীর কাছে গেলে জাফরী কি সুস্থ হতে
পারবে।আগের মতো কি হাসতে পারবে।
আগের মতো কি হাসি খুশি ভাবে চলাফেরা করতে
পারবে জাফরী।
নাকি আর কোনদিনও পারবেনা আগের মতো
সুস্থ হতে।কি হবে জাফরীর।
চলুন পাঠক বন্ধুরা জেনে আসি শেষ পরিনতি।
__________________
জাফরীর মুখে অক্সিজেন লাগানো শ্বাস যেন বন্ধ
হবার পথে।নাসরিনের সাথে মেহেদি আর কয়েজন
এসেছে হাসপাতালে।
মেহেদির মনটা কেন যেন সটফট করছে জাফরীকে এক নজর দেখার জন্য।
মেহেদি : কোন icu জাফরী
নাসরিন : এইতো ভাই একটু সামনে
মেহেদি : মেয়েটি অনেক কষ্ট পাচ্ছে মনেহয়
নাসরিন : হ্যা ভাই।আমরা সিংঙ্গাপুর পর্যন্ত
জাফরীকে নিয়ে গেছি তারপরও কোন কিছুই
হয় নাই।
মেহেদি জাফরীর icu গেলো,,, দরজার সামনে দাড়িয়ে গ্লাস এর উপর দিয়ে মেহেদি তাকিয়ে
দেখছে জাফরীর মুখে অক্সিজেন।চোখ দুটো
বন্ধ।ফর্সা শরীরটা যেন কুচকুচে কালো হয়ে
গেছে জাফরীর।
মেহেদি জাফরীর মুখের দিকে নজর করে তাকিয়ে
দেখছে।যেন ওর মুখটা মায়াবী দরদ দিয়ে ভরা।
যেন ইচ্ছে করছে ওকে জড়িয়ে ধরে মুখে একটা
চুমু দিই।আমি কি করে পারলাম শপিংমলে জাফরীকে এইভাবে অপমান করতে।যেন মেয়েটার
মুখটা দেখে খুব ইচ্ছা হচ্ছে ওকে একটু বুকে জড়িয়ে নিতে।পুরো মুখটা যেন মায়াবী ভরা
চোখের কোণ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো মেহেদির
নাসরিন : মেহেদি ভাইয়া,,, মেহেদি ভাইয়া,, মেহেদি ভাইয়া
মেহেদি : উহ
নাসরিন : কি ভাবছিলেন
মেহেদি : কই নাতো কিছু ভাবিনাই
নাসরিন : তাহলে আই সি ইউ তে যান
মেহেদি আসতে করে আই সি ইউ তে প্রবেশ করল
প্রবেশ করে তাকিয়ে আছে জাফরীর দিকে।
কোন রকম শ্বাস চলছে জাফরীর
মেহেদি আসতে করে গিয়ে জাফরীর কপালে হাত
রাখলো। হাতটা কপালে লাগিয়ে চুল গুলো
বিলি কাটছে।মেহেদি হাত দেয়ার সাথে সাথে
জাফরীর শরীর টা একটা ঝাকুনি দিয়ে উঠলো
মেহেদি শুধু জাফরীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে
মুখটা শুকিয়ে গেছে চোখের চারপাশে ঘা ফুটে
উঠেছে।
জাফরীর হাতটা ধরে বলছে আপু আপনি আমাকে
এতোটা ভালবাসেন বুঝতে পারি নাই।
খুব বাজে আমি, খুব খারাপ আমি, আপনার সাথে
দূর ব্যাবহার করে অনেক অন্যয় করেছি।
আপনি কবে সুস্থ হবেন। আর কবে আপনার কাছে
ক্ষমা চাইতে কবে পারব…!!
এই ম্যাডাম আপনি কী আমার কথা গুলো শুনতে
পাচ্ছেন।খুব রাগ করছেন আমার উপর তাইনা।
তাই বোধহয় বেচে থাকার ইচ্ছাটা আপনার
নাই তাইনা।আমি আপনার কাছে মাফ চাচ্ছি আপনি আমাকে মাফ করে দেন।
আপনি সুস্থ হবার পর আমাকে মারেন।
বকা দিয়েন আমি কিছু মনে করবনা, তবুও আমি
আল্লাহর কাছে দোয়া করি আপনি যেন সুস্থ হন।
মেহেদির এক ফোটা চোখের পানি জাফরীর
গালের মধ্যে টপ করে পড়লো।
মেহেদি জাফরীর হাতটা শক্ত করে ধরেছিলো।
এমন সময়মেহেদির ফোনটা বেজে উঠলো মেহেদি ফোনটা রিসিভ করলো
খাদিজার আম্মু : আস্সালামুআলাইকুম
মেহেদি : ওয়ালাইকুম আস্সালাম
খাদিজার আম্মু : একটু ডাটা কালেকশন অন করে
ভিডিও কলে এসো।
মেহেদি : কেন
খাদিজার আম্মু : আহ যা বলছি তাই করো তো।
মেহেদি : আচ্ছা আসছি।
মেহেদি ডাটা কালেকশন অন করে ডাইরেক্ট ভিডিও কল দিলো খাদিজার আম্মুকে।
খাদিজার আম্মু ফোনটা রিসিভ করে বললো
তুমি কেমন আছো।
মেহেদি : আলহামদুলিল্লাহ
খাদিজার আম্মু : কি খবর তোমার মুখটা শুকনা দেখা যাচ্ছে কেন।
মেহেদি : কই নাতো
খাদিজার আম্মু : বুঝেছি তুমি ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করছোনা তাইতো।তুমি না খেলে আমি খাবোনা। আর আমি না খেলে তোমার সন্তান টা
যে আমার পেটে। সেও কিন্তু খেতে পারবেনা।
সেটা কি ভাল দেখাবে।
মেহেদি : এই না না এমন টা করবেন না।
প্লিজ ঠিকমত খাওয়া করবেন।
খাদিজার আম্মু : আর আমি জানি তোমার ভালকরে খেতেও মনেহয় কষ্ট হবে।
কারণ তোমার আরেক জন তো খেতে পারেনা
আচ্ছা হুজুর আমার স্বতীন টার একটু মুখটা
দেখি ক্যামেরা টা একটু ঘোরান তো।
যখন ক্যামেরা জাফরীর দিকে ঘুরালো
তখন খাদিজার আম্মু জাফরীর মুখের দিকে
তাকিয়ে কেদে দিলো।
মেহেদি : তুমি কান্না করছো কেন
খাদিজার আম্মু : আসলে আমি জাফরীর মুখের দিকে তাকিয়ে চোখে পানি ধরে রাখতে পারলাম না
ও যখন মুম্বাই এসেছিল দেখেছিলাম কতো সুন্দর
একটা ফুটফুটে মেয়ে।
আজ মেয়েটার চেহারার দিকে তাকাতেই পারছিনা
আচ্ছা হুজুর চোখের চারপাশে ওনার ঘা বেরিয়েছে তাইনা।
মেহেদি : হুমমমম চোখে সব পানি গড়িয়ে পড়ে
তাই ঘা হয়েছে।
খাদিজার আম্মু : এই শুনো আমার স্বতীনটার যেন কোন কষ্ট না হয়।আমার কথা তোমাকে ভাবতে হবেনা। তুমি আমার স্বতীন চার একটু যত্ন করিয়ো
কেমন
মেহেদি : আমি কি স্বপ্ন দেখছি
খাদিজার আম্মু : কেন…???
মেহেদি : তুমিতো দ্বিতীয় বিয়ে সয্য করতে পারতেনা।তাহলে আজ নিজের স্বতীনকে যত্ন করার জন্য উপদেশ দিচ্ছো।
খাদিজার আম্মু : হ্যা দেব,,, আমি মেয়ে তাই মেয়ের কষ্ট টা বুঝি।আমি মহান রবের দরবারে
দোয়া করছি আমার বড় বইনটাকে যেন আল্লাহ
অতি শিঘ্রই সুস্থ করে দেয়।
ওকে একটু বেশি বেশি আদর করিয়ো গো
কারণ তোমার ভালোবাসা থেকে বন্চিত হয়ে
আজ জাফরী এই পর্যায়ে দাড়িয়েছে।
আচ্ছা শুনো আমি একটু ঘুমাবো পরে কথা হবে
কেমন…..!!!
মেহেদি : হুমমমম আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ
খাদিজার আম্মু ফোনটা কেটে দিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে কান্না করছে।
খালা : কিরে কান্না করছিস কেন….
খাদিজার আম্মু : কই নাতো।
খালা : আমাদের বয়স হয়েছে আমরা বুঝিরে মা
মেয়েরা সব কিছু দিতে পারলেও স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারেনা।
খাদিজার আম্মু : খালা তুমি এসব কি বলছো
খালা : যেটা বলছি ঠিকই বলছি।আমি জানি তোর খুব কষ্ট হচ্ছে।
খাদিজার আম্মু : খালা আসলে আমার হুজুরকে
ছেড়ে দূরে কোনদিন থাকি নাই তো।
তাই আমার একটু কষ্ট হচ্ছে গো খালা….!!!!
খালা : চিন্তা করিসনা সব ঠিক হবে
__________________
মেহেদির আসা এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেল
জাফরীর কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছেনা
আসলে সুস্থ করার মালিক তো আল্লাহ
অবস্থা আরো ভয়াবহ
চলবে……