যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:৩২

0
642

#যে_শ্রাবণে_এলে_তুমি💕💕
#পর্ব:_32
#লেখনিতে:_মৌসুমী

আরে আরে ,,করো কি?ছেলেটাকে এভাবে মারছো কেনো?ছাড়ো….
ওকে আজ ছাড়বোইনা,কত্তবড় সাহস আমার মুখ চেপে ধরে।
ওহ মাগো ,,আপু ছাড়ো,,লাগছে।আর ধরবোনা মুখ তোমার,ভাইয়া আপনার বৌকে ধরেননা ,আমায় মেরে ফেললো।

ফয়েজ অনেক কষ্টে নিহাকে উৎসর কাছ থেকে সড়ালো।উৎস মার খেয়ে হাপাচ্ছে।ওদের চিল্লাচিল্লি শুনে নিরা আর ফারদিনো সেখানে এসে হাজির হয়েছে।নিরা বললো,
-কি হয়েছে আপু,এই ছ্যামড়াকে মারছিলে কেনো?
-আর বলিসনা,ওর কত্তবড় সাহস আমার মুখ চেপে ধরে,দিয়েছি বসিয়ে পিঠের ওপর।ফয়েজ হাসতে হাসতে নিহাকে বললো,
-তুমি যে এমন গুন্ডি, আগে জানতাম না তো?
-আমি কখনোই গুন্ডি না,ছোট ভাইকে শাসন করলাম এই আর কি।
-আমি কি করেছি যে তুমি আমাকে এভাবে শাসন করলে?
-কি করিসনি তাই বল?পড়াশোনা বাদ দিয়ে তুমি ফেসবুকে টেম্পু চালাও আর বলিস কি করিসনি,
নিরা পাশে থেকে ওমনি নিহার কাছাকাছি গিয়ে বললো?
-কি বলছো আপু?আমিতো এর কিছুই জানিনা।
ফয়েজ আর ফারদিন চুপচাপ দাঁড়িয়ে ওদের ভাইবোনদের কথা শুনছে।
নিহা বললো,
-আমি একটু আগেই হাতে নাতে ধরেছি।এই দেখ বলে ফোনটা নিরার মুখের সামনে ধরলো নিহা।
নিরা ফোনের দিক তাকিয়ে চরম পর্যায়ের অবাক।ফোনের স্ক্রীনে যে মেয়েটার ছবি সে দেখতে পাচ্ছে সে পাশের বিল্ডিংএ কয়েকমাস আগে ভাড়া এসেছে তার পরিবার নিয়ে।মেয়েটার বাবা একজন পুলিশ অফিসার।খুব বদমেজাজি সেই লোক নিরা সেই লোকের মুখ দেখলেই বুঝতে পারে।
উৎস কাচুমাচু হয়ে মাথা নিচু করে প্যান্টের পকেটে হাত ভোরে দাঁড়িয়ে আছে।
নিরা নিহার দিকে তাকিয়ে বললো,
-এ তো ফারহা,
নিহা ছবিটির দিকে তাকিয়ে নিরা কে বললো,
-তুই চিনিস নাকি মেয়েটাকে?
-তো চিনবোনা,আমাদের পাশের বিল্ডিংএ ভাড়া থাকে।নিহা ছবির দিক থেকে মুখ তুলে উৎস দিকে তাকালো,বেচারা উৎস চুপসে গেছে একদম।ফারদিন আর ফয়েজ মিটিমিটি হাসছে।ফয়েজ হাসতে হাসতেই উৎসর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো,উৎসর কাঁধে হাত রেখে বললো,
-আমাদের উৎস বড় হয়ে গেছে আর আমরা বুঝতেই পারিনি ,কবে থেকে চলছে এসব?
উৎস ঠোঁট কামড়ে ধরে আছে দাঁত দিয়ে।কিছু বলছেনা।নিরা বললো,
-কাউকে আর পেলি না,সেই ওই বদমেজাজি লোকটার মেয়েকেই।
নিহা কঠিন চোখে উৎসর দিকে তাকিয়ে বললো,
-বলছিস না কেনো?কবে থেকে টেম্পু চালাচ্ছিস?
উৎস চোখে মুখে হালকা রাগ ফুটিয়ে বললো,
-টেম্পু চালানো এসব আবার কি ধরনের কথা আপু?
নিরা উৎসর গাল টিপে বললো,
-ওলে,ওলে,হিলো রেগে গেছে।
উৎস এবার আরো বেশি রেগে গেলো,তারপর নিহার হাত থেকে আচমকা ফোনটা নিয়ে তার রুমের দিকে হাঁটা দিলো।উপস্থিত সবাই ওর যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে।



ফারদিন চলে গেছে হাসপাতালে,আজ রাতে আর সে আসবেনা।নিরা গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে।রাতে সে কিছুই খাইনি।ঔষুধ ও না।ফারদিন যাওয়ার আগে বার বার বলে গেছে খাওয়ার কথা তাও সে খাইনি।এখন জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।খুব ঠান্ডাও লাগছে তার ।ঘুমাতে পারছেনা।হঠাৎ খট করে দরজাটা খুলে গেলো,নিরা মাথা তুলে হালকা ডিম লাইটের আলোয় দেখলো রুমে তার মা মাহফুজা বেগম এসেছেন।মাহফুজা বেগম খাটের পাশে দাঁড়িয়ে নিরার কপালে হাত রাখলো।নিরা চোখ বন্ধ করে আছে,তাকাচ্ছেনা।মাহফুজা বেগম নিরার কপালে হাত রেখে আৎকে উঠলেন,মনে মনে বলছে,মেয়েটার এত জ্বর এসেছে তবু আমাকে ডাকেনি।এত জ্বর নিয়ে কিভাবে যে থাকে এই মেয়ে,ছোটবেলা থেকে এক অভ্যাস।নিজের মনে কিছুক্ষণ কথা বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন মাহফুজা বেগম।কিছুক্ষণ পর আবার ঔষুধ হাতে করে এসে নিরাকে না ডেকেই ধরে ধরে বসালো ।মাহফুজা বেগম জানেন তার মেয়ে ঘুমাইনি।নিরাকে বসাতেই নিরা চোখ মেলে তার মায়ের দিকে তাকালো,মাহফুজা বেগম বললেন,
-এত জ্বর নিয়ে কিভাবে থাকিস?নে ঔষুধটা মুখে নে।আমি ভাত নিয়ে আসি।
-ভাত খাবোনা আম্মু।
-না খেতে হবে নাহলে সমস্যা হবে।



ফিসফিস করে ফোনে কথা বলছে উৎস,ওপাশের মানুষটার রাগ ভাঙাচ্ছে।রাগ বলা যাইনা এটাকে বলে অভিমান।বিকেলে উৎস ছাদে যাইনি বলে ফারহা অভিমানে উৎসর সাথে ঠিক করে কথায় বলছেনা।উৎস বললো,
-তোমার রাগ করা মানাচ্ছেনা একদম,এমনিতেই আজ আপুদের কাছে ধরা পড়ে গেছি।তুমি যে সময় ছবি দিলে মেসেন্জারে সে সময় ই বড় আপু কোথায় থেকে এসে দেখে ফেললো।তাইতো পরে আর রুম থেকে বের হয়নি লজ্জায়।
ফারহা একটা ভেংচি কেটে বললো,
-দেখেছে ঠিক হয়েছে।তুমি তাহলে আর অন্য মেয়েদের সাথে কখনোই প্রেম করতে পারবানা।প্রেম করতে গেলেই তোমার বোনদের হাতে ধোলায় খাবে বলেই ফারহা হি হি করে হাসতে শুরু করলো।উৎস মনোযোগ দিয়ে ফারহার খিলখিল হাসি শুনছে।শুনতে শুনতেই ওপাশ থেকে ফারহার বাবার গলার আওয়াজ কানে এলো,ফারহার বাবা বলছে,
-পাগলের মত হাসছিস কেনো?আর কানে ফোন কেনো এতো রাত?ফারহার বাবার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে রেগেই কথা বলছেন তিনি।
ফারহা তার বাবাকে দেখে মুখটা কাচুমাচু করে বললো,
-কারো সাথে না আব্বু,আমার কথা রেকর্ড করে আমিই কানের কাছে নিয়ে শুনছি আর হাসছি।
ফারহার বাবা নাজিম উদ্দিন কিছুক্ষণ মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন তারপর বললেন,
-ঘুমিয়ে পড়ো,কাল সকালে পড়তে বসতে হবে।ফোন দিয়েছি বলেই সারাক্ষণ ফোন নিয়ে পড়ে থাকতে হবেনা।
ফারহা ভয়ে ভয়ে ফোনটা কেটে শুয়ে পড়লো।উৎস বিরক্তিতে মুখে চ এর মত করে বললো,ধুর ঠিক করে একটু কথাও বলতে পারিনা,সবসময় কেউ না কেউ চলে আসবেই।



সকালবেলা ফারদিন বাড়ি না গিয়ে সোজা নিরাদের বাড়িতেই চলে এসেছে।এসে দেখে নিরা রুমে নেই।একটু পর ওয়াসরুমের ভিতর থেকে বের হয়ে আসলো নিরা।ফারদিনকে দেখে বললো,
-কখন আসলেন?
-এইতো,একটু আগে।
-ওহ,যান ফ্রেশ হয়ে নিন,আমি আম্মুকে বলি নাস্তা দিতে।
-বলতে হবেনা।আমি খেয়েছি।এখন আমি ঘুমাবো।
-আচ্ছা।
শুতে শুতে ফারদিন বললো,
-জ্বর এসেছিলো রাতে?
-হ্যাঁ,একটু।
-ঔষুধ খেয়েছিলেনা নিশ্চয়?
-না।জ্বর তো ছিলোনা তাই,,
-বুঝেছি,তোমাকে কোন কিছু বললে যে শুনবেনা তা আমার জানা।
নিরা কিছু বললোনা,দরজা লাগিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

ফয়েজ নাস্তা করতে বসেছে।নিরা গিয়ে বসলো পাশের চেয়ারে।তুলতুল কাঁদতে কাঁদতে দৌঁড়ে এসে ফয়েজকে ধরলো।ফয়েজ তুলতুলকে কোলের ওপর বসিয়ে বললো,
-কি হয়েছে,কাঁদছো কেনো?
-বাবাই আমি আমাদেল বালি দাবো,দাদাভাই আর দাদিমাকে দেকবো,ওদেল দেকার জন্য মনটা কেমন কলছে,
-ওরে আমার মারে,কাঁদেনা।উৎস তোমাকে নিয়ে রেখে আসবে কেমন।
-কখন?
-একটু পরে,
-নাহ,আমি একুনি দাবো,চলো ,আমাকে নিয়ে চলো।
নিহা দাঁড়িয়ে আছে কিছু বলছেনা সে।দুদিনো হয়নি সে বাপের বাড়ি এসেছে এর মধ্যে তার মেয়ে দাদা-দাদিকে দেখার জন্য অস্থির।
ফয়েজ খাওয়া কোন রকমে শেষ করে তুলতুলকে নিয়ে বের হয়ে গেছে,তাকে বাসায় পৌছে দিয়ে সে কাজে চলে যাবে।
নিহা আজ মনে মনে মেয়ের ওপর খুব রেগে গেছে।সকালে কিছু খাইয়োনি,দরজা বন্ধ করে নিজের রুমেই বসে আছে।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here