যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:৩৪

0
678

#যে_শ্রাবণে_এলে_তুমি💕💕
#পর্ব_34
#লেখনিতে_মৌসুমী

নিহা যখন নাইমার মুখের সামনে পানি ধরলো তখন মনে মনে তার একবার মনে হলো পানিটা তার মুখে ছুঁড়ে দিতে তাহলে এই বদ মেয়েটাকে একটু হলেও শাসন করা হতো কিন্তু তা তো আর হবেনা,মনের ভাবনা সে মনেই রেখে দিলো।নিরাকেও সাবধান করলো তার সাথে যেনো কোন বির্তকে না যাই।

রাতের খাবারের আয়োজন মোটামোটি ভালোয় হয়েছে।তৃপ্তি নিয়ে সবাই খাচ্ছে।সে সময় দরজায় বেল বাজতেই নিরা গিয়ে দরজা খুললো,ফারদিন এসেছে।ফারদিন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে যখন ডাইনিং টেবিলের কাছে গেলো তখন নাইমা,সাহেদা বেগম আর ফজিলা বেগম খাচ্ছিলেন।ওদের খেতে দেখে ফারদিন ফিরে আসতেই নাইমা তাকে পেছন থেকে ডাক দিলো।ফারদিন দাঁড়িয়ে নাইমার দিকে তাকিয়ে মুখে হাসি নিয়ে এসে বললো,
-ভালো আছো নাইমা?
নাইমা সেই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বললো,
-চলে যাচ্ছেন ক্যান?খাবেননা?
-খাবো একটু পর,তোমরা খেয়ে নাও তারপর।
-আমার সাথেই খান না,,
-না সমস্যা নেই,তুমি খেয়ে নাও।
-না,আসেননা,আমার পাশে বসেন।এই চেয়ারে।
নাইমার এভাবে বলাতে ফারদিন আর তাকে ফেরালোনা,এতো করে যখন বলছে তখন না খেলে খারাপ দেখায় তাই বসে পড়লো নাইমার পাশের চেয়ারে।নিরা এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছিলো আর রাগে ফুসছিলো,কেনো তার নিজের স্বামী ওই মেয়ের সাথে কথা বলবে,ওই বদমায়েশটার সাথে হ্যাঁ,যখন ফারদিন সত্যিই নাইমার কথায় নাইমার পাশের চেয়ারে বসলো তখন নিরার রাগটা আরো দিগুন হয়ে গেলো।মনে মনে বললো,কেনোরে তোকে ওই চেয়ারেই কেনো বসতে হবে আর কি চেয়ার এই টেবিলে নাই।পড়ে আবার নিজেই নিজের মনে বলছে,আমি কেনো রাগ করছি ওই পোলার ওপর,আমার রাগ করা তো ঠিক হচ্ছেনা,না না রাগ করবোনা কেনো,রাগ করবো,করবোই কারণ সে আমার বিয়ে করা স্বামী ,তার ওপর রাগ করা,অধিকার দেখানো আমার কর্তব্য।না হলে পাপ হবে পাপ।ফজিলা বেগম নিরাকে বললেন,
-কিরে কি ভাবিস দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ?ফারদিনকে ভাত তুলে দে।
নিরা ফারদিনের চেয়ারের পাশে গিয়ে ভাত তুলে দিলো একদম প্লেট বোঝায় করে,তারপর দিলো একগাদা তরকারি,ফারদিন তখন তার ফুফু সাহেদার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত ছিলো বলে দেখেনি নিরা তাকে কতগুলো ভাত,তরকারি তুলে দিয়েছে ,সাহেদা বেগমের সাথে কথা বলা শেষ করে যখন ফারদিন প্লেটের দিকে তাকালো তখন তার আক্কেল গুড়ুম,এতোগুলো ভাত সে তার বাপ-মা,চৌদ্দগুষ্ঠির জন্মেও খাইনি।
-এতগুলো ভাত কে দিলো আমার প্লেটে?
ফজিলা বেগম ফারদিনের প্লেটে তাকিয়ে আবার নিরার দিকে তাকালো,নিরা ভাবান্তর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,তার মধ্যে কোন যাই আসেনা ভাব।ফজিলা বেগম বললেন,
-একি করেছিস নিরা,এতোগুলো ভাত ফারদিন খেতে পারবেনা তো।ভাতগুলো দেখেশুনে তুলে দিবিনা।
ফারদিন নিরার দিকে তাকিয়ে কি যেনো ভাবলো তারপর প্লেটে হাত দিয়ে বললো,
-সমস্যা নাই আম্মা,ভাত নষ্ট হবেনা নিশ্চিত থাকো।
-তুই পারবি এতগুলো খেতে?
-সেটা দেখছি,তোমার খাওয়া তো শেষ,যাও বিশ্রাম করো,সাহেদা বেগমেরো খাওয়া শেষ সেও রুমে চলে গেলো।ফজিলা বেগম ছেলের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে পড়লো।ফজিলা বেগম যেতেই ফারদিন নাইমাকে বললো,
-নাইমা আরেকটু ভাত নাও?
-না আমি আর নিবোনা ,এগুলোই খায়।
-আরে ভয় পাচ্ছো নাকি?আমার প্লেটেরগুলো নিতে হবেনা,অন্যগুলো নাও।আমার প্লেটের গুলোর ব্যবস্থা আমি করে ফেলবো।
-নাহ,আর ভাত নিবোনা।আপনি খান।
-আচ্ছা তাহলে তুমি আরামে এখানে বসে খাও আমি আমার প্লেট নিয়ে রুমে যাই কেমন,রুমে গিয়েই খাবো।নিরা থম মেরে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনেই যাচ্ছে।নিরা মনে মনে এটাও ভাবছে যে এতগুলো ভাত কি এখন সে রুমে গিয়ে বারান্দা দিয়ে ফেলে দিবে নাকি যে ঘরে যেতে চাচ্ছে।ফারদিন তার প্লেট নিয়ে নিরার দিকে এক পলক দেখে চলে গেলো তার ঘরে।

নাইমা হাসিমুখে বসে বসে খাচ্ছে,নিরা নিহার জন্য অপেক্ষা করছে,নিহা তুলতুলকে ঘুম পাড়িয়ে আসলেই দুইবোন একসাথে খাবে।

ফারদিন রুমে প্লেট রেখে আবার এসেছে ডাইনিংয়ে।নিরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিরাকে পাঁজাকোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে গেলো ফারদিন।নাইমা খাওয়া ছেড়ে হা করে ফারদিনের কান্ড দেখলো তারপর রাগে খাবারের প্লেটটা সরিয়ে উঠে চলে গেলো হনহন করে।

নিরা অনবরত ফারদিনের পিঠে কিল গুসি দিচ্ছে আর বলছে,
-নামান আমাকে,কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আর আপনার লজ্জাসরম নাই এভাবে আমাকে মানুষের সামনে কোলে নিয়েছেন?
-না নাই আমার লজ্জাসরম,আর তোমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছি রুমে।
-শাস্তি,কিসের শাস্তি?আমি কি করেছি?
-কি করোনি তাই বলো?আমার প্লেটে ইচ্ছে করে এক গাদা ভাত তুলে দিয়েছো তুমি।এবার সেই ভাত তোমাকে আমি খাওয়াবো।
-না আমি খাবোনা,আমি আপুর সাথে খাবো,আমাকে যেতে দিন।
-কখনোই না বলে ঘরের দরজাটা লক করে দিলো ফারদিন।তারপর নিরাকে কোল থেকে নামিয়ে নিজে বসলো তারপর আবার নিরার কোমড় ধরে নিরাকেও বসালো তার কোলে।একহাতে নিরাকে ধরে আছে আর আরেক হাতে ভাতের প্লেট।নিরাকে বললো,
-আগে আমাকে খাওয়াও তারপর আমি তোমাকে খাইয়ে দেবো,নাহ,একসাথেই খাবো ।আমি তোমাকে খাওয়াবোনা তুমি একবার নিজের মুখে দিবে তারপর আমাকে দিবে কেমন বলে একটা চোখ টিপ দিলো ফারদিন।ঠোঁটের কোনে ডেভিল হাসি দেখে নিরার মোটেও ফারদিনকে খাওয়াতে ইচ্ছে করছেনা,মনে মনে ভাবছে,এই ছেলের বদ মতলব আছে আমি নিশ্চিত।
-কি হলো খাওয়াও,নাহ,আগে তুমি মুখে দাও।
ইচ্ছে না থাকা সত্বেও আগে নিজের মুখে খাবার নিয়ে এবার ফারদিনের মুখের কাছে এক লোকমা ভাত নিলো নিরা।ফারদিন মুখে ডেভিলমার্কা হাসি নিয়ে নিরার চোখের দিয়ে তাকিয়ে ভাত মুখে নিলো সাথে নিলো নিরার আঙ্গুলগুলোও।এমনভাবে নিরার আঙ্গুল ফারদিন মুখের মধ্যে আটকে রেখেছে যে নিরা আর তা বের করতে পারছে না।ফারদিন আবার চোখ টিপে নিরার একটা আঙ্গুলে হালকা কামড় দিয়ে তারপর ছাড়লো।কামড় খেয়ে নিরা হাত টেনে নিয়ে মনে মনে ফারদিনকে দু চারটা খারাপ গালি দিলো।এভাবেই খাওয়া শেষ করে শেষে ফারদিন নিরার আঙ্গুলের সাথের খাবারগুলোও খেলো।এদিকেতো ফারদিনের এই অত্যাচারে নিরার
যাই যাই অবস্থা।বিরক্ত ও লাগছে তার।

পৃথিবীর সব অত্যাচারের থেকে ভালোবাসার অত্যাচারটা খুব ভয়ংকর।কিন্তু যত ই ভয়ংকর হোক না কেনো তবু সব নরনারী এই অত্যাচারটা হাসিমুখে সহ্য করে যাই।খাওয়ার পালা অনেক আগেই শেষ করে ফারদিন এখন নিরাকে ভালোবাসার অত্যাচারে কাহিল করে দিচ্ছে।নিরা সেটা সহ্য করতে পারছেনা তবু বাঁধাও দিতে পারছেনা।মনে হচ্ছে সে এই অত্যাচারের কাছে হেরে যাচ্ছে,নিজের ইচ্ছাতেই হেরে যাচ্ছে।ওর কাছে মনে হচ্ছে এই অত্যাচার চলেই যাক সারাক্ষণ তারপর হঠাৎ একসময় নিরার বিবেক তাকে বাঁধা দিলো,বললো,কি করছিস নিরা তুই,থামা ফারদিনকে।তুই তো তাকে ভালোবাসিসনা তুই যাকে ভালোবাসিস তার সবটুকু কেনো তুই এই ফারদিন নামের মানুষটাকে দিয়ে দিচ্ছিস,এটা ঠিক না।তুই ঠিক করছিসনা।
এতক্ষণে ফারদিন অনেকদূর এগিয়ে গেছে,নিরার মাঝে পুরোপুরিভাবে ডুবে যাওয়ার আগ মুহূর্তেই নিরা তাকে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিলো,এলোমেলো ভাবেই ছুটলো ওয়াসরুমের দিকে।ফারদিন তখন নিজের দুনিয়ায় চলে এসেছে,তার চোখ,কান,নাক আগা লাল হয়ে গেছে রাগে।বার বার নিরার এই অপমান সে সহ্য করতে পারছেনা।বিছানার চাদরটা এক হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে আগুন চোখে তাকালো ওয়াসরুমের দরজার দিকে।একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তো আছেই।নিরাও দরজা লাগিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।সে বুঝতে পারছেনা সে কি করবে,যাকে সে মন দিয়ে এতবছর ধরে ভালোবাসে তাকে ভূলে যাবে নাকি যাবেনা।কিছুই বুঝতে পারছেনা।এদিকে ফারদিনকেও দূরে সড়াতে পারছেনা সে।ফারদিনের স্পর্শে সে বার বার দূর্বল হয়ে যাচ্ছে।নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছেনা।

কাঁন্নাকাটি অনেক্ষণ করে চোখে,মুখে পানি দিয়ে বের হয়ে আসছে নিরা।রুমে এসে দেখে মেঝেতে সিগারেটের টুকরো পড়ে আছে।বিছানায় এক কাত হয়ে শুয়ে আছে ফারদিন।মনে হচ্ছে ঘুমাচ্ছে।আসলে কি সে ঘুমাচ্ছে সেটা নিরা বুঝতে পারছেনা।বারান্দায় হেঁটে গিয়ে বারান্দার ইজি চেয়ারে গিয়ে বসে অতিতের কথাগুলো ভাবতে শুরু করলো ।হঠাৎ নিরার মনে হলো ডায়েরির কথা ,যেটা সে আলমারীতে দেখেছিলো।

চলবে।

আপনারা যারা আমার লিখা এই গল্প পড়েন তারা দয়া করে একটা লাইক দিবেন প্লিজ।তাহলে বুঝতে পারবো কতজন গল্পটা পড়ে।তবে যারা পড়েননা অযথা লাইক ,রিয়্যাক্ট দেওয়ার দরকার নাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here