ভালোবাসি আমি যে তোমায় ২*পর্ব:১০

0
1984

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu

৮.

সকাল দশটা।সকালের মিষ্টি রোদ জানালার কাচ ভেদ করে রুমের সাদা টাইলসে পরে পুরো রুম ঝকঝক করছে।গোলাপি পর্দা গুলো জানালার পাশে সটান দাঁড়িয়ে আছে।আমি মন খারাপ করে একপাশ হয়ে শুয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে আছি।দিনটা তিক্ততার মধ্যে দিয়ে শুরু হলো।রিপনের কথা গুলো আমার কাছে একটুও ভাল লাগেনি।আমি মোটেও ছেলেদের মাথা খেতে ভার্সিটিতে যাইনা।আমি যথেষ্ট ভাল হয়ে থাকার চেষ্টা করি।তারপরও রিপন আমাকে খারাপ মেয়ে বলল।কপালে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেতেই আমি চমকে তাকালাম।নির্ভীক ভাইয়াকে দেখে অবাক হলাম।উনাকে কিছুটা চিন্তিত মনে হচ্ছে।কপালে জ্বর চেক করে উনি আমার পাশে বসে মলিন মুখ করে বললেন,
“খুব বেশি মাথাব্যথা করছে?মেডিসিন নিয়েছো?

আমি চট করে উঠে বসলাম।ব্যাপারটা যে উনি এত সিরিয়াসলি নিবেন আমি আগে বুঝতে পারিনি।মনে মনে গিলটি ফিল করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“আমার একটুও মাথা ব্যথা করছেনা।তখন আপনাকে মিথ্যে কথা বলেছিলাম,সরি।

উনি চিন্তিত হয়ে বললেন,
“কিন্তু তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?কি হয়েছে?ক্লাস না করে চলে আসলা কেন?”

ইচ্ছে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
“সে অনেক কথা ভাইয়া।আমি বলছি সব আপনাকে।”

আমি মুখ ফুলিয়ে বসে থাকলাম আর ইচ্ছে ভার্সিটিতে কি হয়েছে না হয়েছে সব নির্ভীক ভাইয়াকে বলে দিল।নির্ভীক ভাইয়া রিপনের ফোন নাম্বার নিয়ে জ্যাকেটের পকেট থেকে বড় বড় দুটো ডেইরি মিল্কবার বের করে আমাদের দিয়ে চলে গেলেন।উনি যেতেই ইচ্ছে মুচকি হেসে চকলেট খেতে খেতে বলল,
“আচ্ছা জানু রাযীন ভাইয়ার সাথে তো আপুর বিয়ে প্রায় হয়েই গিয়েছে এখন নির্ভীক ভাইয়ার সাথে তোর বিয়ে হলে কেমন হয়?”

আমি চমকে ইচ্ছের দিকে তাকালাম।এই মেয়ে বলে কি!আমি রেগে ভ্রু কুচকে বললাম,
“এই একদম বাজে কথা বলবিনা।”

ইচ্ছে আমার কাছে এগিয়ে এসে আমাকে দুই হাত দিয়ে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“শোন না,নির্ভীক ভাইয়ার সাথে প্রেম করবি?আমি তোকে হেল্প করবো।কর না প্লিজ!”

আমি ওর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,
“তোর ইচ্ছে হলে তুই কর।”

ইচ্ছে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বেডে হাত পা মেলে শুয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“করতাম তো,বিশ্বাস কর উনি যদি তোর মতো আমাকে কেয়ার করতেন আমি নিশ্চয় উনার সাথে প্রেম করতাম।”

“তোকে কেয়ার করে না?কত সুন্দর করে বলে ইচ্ছেমতি।আহা!কত সুন্দর ভয়েস উনার!এই দেখ তোর জন্য চকলেট নিয়ে এসেছে।আমার জন্যও নিয়ে এসেছে।আই থিংক উনি আমাদের দুজনারই কেয়ার করেন।আসলে কেয়ার নয় ডিউটি।এখানে তো আমাদের কেউ নেই তাই অ্যাঙ্কেল-অ্যান্টি,নির্ভীক ভাইয়া আমাদের অনেক কেয়ার করেন তাই না?”

ইচ্ছে উঠে বসলো।ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছে ও এখন টিচারদের মতো আমাকে পড়া বুঝাবে।ভাল টিচারা পড়া বুঝতে না পারলে যেমন বুঝাতেই থাকে ইচ্ছেও সেরকম ভাবে আমাকে বুঝাতেই থাকবে।ইচ্ছে তাই করল,একটা ছোট্টশ্বাস ফেলে বলল,
“দেখ আমি চাই নির্ভীক ভাইয়ার সাথে তোর বিয়ে হোক।কেন চাই সেসব তোকে বিয়ের পর বলব।এখন তোকে যা বলব তা হল নির্ভীক ভাইয়া তোকে খুব পছন্দ করে।সেই প্রথম দিন থেকে।যদি নাই পছন্দ করতেন তাহলে ভার্সিটিতে প্রতিদিন তোর সাথে কথা বলতে আসতেন কেন?তখন তো উনি আমাদের চিনতেন না তাও কেন তোকে ঢাকা যেতে দিবেনা বলছিল?অতো কথা বাদ তুই নির্ভীক ভাইয়ার সাথে চুটিয়ে প্রেম করবি,ব্যস।”

আমি চোখ কটমট করে ইচ্ছের দিকে তাকালাম।ইচ্ছে মুচকি হেসে বলল,
“একটা ব্যাপার খেয়াল করেছিস?তোর সামান্য মাথাব্যথার কথা শুনে উনি ক্লাস ফেলে চলে এসেছেন।সেদিন অত রাতে ব্যান্ডেজ নিতে গিয়েছিলেন।যদি শুধু দায়িত্ব হতো তাহলে ব্যান্ডেজ দিয়ে চলে যেতেন কিন্তু উনি চেয়ার টেনে ভোররাত পর্যন্ত তোর পাশে বসে ছিলেন,খুব চিন্তত দেখাচ্ছিল উনাকে।এটাকে কি বলবা জানু?এটা তাও ছোট খাটো কিছু বললাম বড় সড় কিছু বললে তুই পাগলি হয়ে যাবি।প্রেম করনা নির্ভীক ভাইয়ার সাথে,প্লিজ!”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
“বড় সড় কিছু কি?”

ইচ্ছে একটু মুচকি হেসে বলল,
“মনে কর তোর পায়ে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে পায়ে কয়েকটা কিস করে দিল আর সেদিন তুই যেমনটা বলেছিলি উনি তোকে জড়িয়ে ধরে বন বন করে ঘুরে কপালে কিস করলো।”

আমি ভ্রু স্বাভাবিক করে বললাম,
“এসব সত্যি নয়।”

ইচ্ছে আরও কিছু বলতে চাইলো কিন্তু আমি ওকে কিছু বলতে দিলাম না।বই হাতে নিয়ে ছাদে চলে গেলাম,রোদে বসে পড়বো।

বিকেলের শেষ ভাগ চলছে।ড্রইং রুমের সোফায় শুয়ে থাকতে থাকতে থাকতে কখন যে চোখ লেগে গিয়েছে বুঝতে পারিনি।ঘুমের মধ্যেই মনে হচ্ছে কেউ আমার দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে আছে।আমি চোখ খুলে দেখি আমার সামনে পাশের সোফায় নির্ভীক ভাইয়া ল্যাপটপ কোলে নিয়ে বসে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি অপ্রস্তুত হয়ে ল্যাপটপের স্ক্রেনে তাকালেন।আমি চট করে উঠে বসলাম তারপর নির্ভীক ভাইয়া মৃদু হেসে বললেন,
“ঘুম হলো?”

হঠাৎই আমি কেমন যেন লজ্জায় পরে গেলাম।আমি এখানে পরে পরে ঘুমোচ্ছিলাম আর উনি আমাকে দেখছিলেন ভাবতেই ইচ্ছের কথা মনে আসলো।ইচ্ছে বলছিল উনি আমাকে পছন্দ করেন।এখন আমার মনে হচ্ছে এমনটা তো হতেই পারে।এমনটা হলে এখানে আর একমুহূর্তও থাকা যাবে না।আমি উনাকে মাথা নাড়িয়েই দ্রুত উপরে নিজের রুমে চলে আসলাম।

.
আজকে অনেক সকালে সূর্য উঠেছে।ঝলমলে মিষ্টি রোদ দেখে মনে হচ্ছে শীতের বিদায় বার্তা চলে এসেছে,খুব তাড়াতাড়ি বসন্ত আসন্ন।ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ চলছে,পাঁচদিন পর পহেলা ফাগুন আর দোশরা ফাগুন জারিফ ভাইয়ার বিয়ে।এর মধ্যে বাবা আর ভাইয়া এসে সবাইকে বিয়ের কার্ড দিয়ে ইনভাইট করে গিয়েছে।আমাদের এখন পুরো দমে ক্লাস চলছে তাই আমরা যেতে পারছিনা কিন্তু দুতিন দিনের মধ্যে আমরা চলে যাবো।আমাদের যাওয়ার কথা শুনে নির্ভীক ভাইয়ার মন খারাপ।উনিও যাবেন কিন্তু আমরা আট-দশদিন থাকবো আর উনি বিয়ে শেষেই চলে আসবেন।গাড়ির পেছন সিটে বসে লুকিং গ্লাসে নির্ভীক ভাইয়াকে দেখছিলাম তখনই ইচ্ছে সামনের সিট থেকে বলল,
“সানভি এখনও অন্তকে ডিস্টার্ব করে আর আপনার কাজিন শৈবাল ভাইয়া,উনিও আর টোয়া আপু একটুও ভাল না।”

নির্ভীক ভাইয়া আমার দিকে তাকাতেই আমি অন্যদিকে তাকালাম।উনি বললেন,
“ওদের সাথে কথা বলারই দরকার নেই,ইগনোর করবা আর আমাকে অবশ্যই সব জানাবা।সানভির থেকে দূরে থাকবা ওর ভাই সুজনকে আমি মেরেছিলাম আমার জন্য ওকে দুইমাসের জন্য ভার্সিটি থেকে বের করে দিয়েছে।সেজন্য আলাদা রাগ আছে ওদের।তোমরা সাবধানে থাকবা।”

আমি মিন মিন করে বললাম,
“আপনি কেন মেরেছেন?ভার্সিটি থেকে বের করে দিল কেন?”

নির্ভীক ভাইয়া সামনের দিকে তাকিয়ে বললেন,
” একবার চারুকলা ইউনিটে মারামারি করেছিলাম তোমরা দেখেছো নিশ্চয়?ওই ছেলেটায় সুজন।একটা মেয়ের বাজে ছবি একেছিল শুধু তাই নয় সেটা আবার সবাইকে দেখাচ্ছিল সেজন্য মেরেছি ওকে।আসুক আবার ভার্সিটিতে এবার ওকে পার্মানেন্টলি তাড়ানোর ব্যবস্থা করব।আই থিংক তোমার ফোনে ওই ভিডিও সুজনই পাঠিয়েছিল।”

ইচ্ছে অবাক হয়ে বলল,
“কেন?অন্তর সাথে ওই ছেলের কিসের শত্রুতা?আমরা তো ওকে চিনিই না!”

নির্ভীক ভাইয়া কথা ঘুরালেন।গ্লাসে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,
“তুমি কি এখনও রিপনের উপর রেগে আছো?”

আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,
“হুম দুশো দিন কথা বলবোনা ওর সাথে।”

ইচ্ছে হাসতে হাসতে বলল,
“তুই এসব বলেই থাকিস জীবনে করতে পারিসনা।সেদিন সকালে আরাফ ভাইয়াকে বললি আর কখনও ভাইয়ার সাথে কথা বলবিনা,বিকেলে ভাইয়ার সাথে কে কথা বলল শুনি?”

আমি ভাব নিয়ে বললাম,
“আরাফ ভাইয়া আর রিপন এক হলো নাকি।কোথায় আরাফ ভাইয়া আর কোথায় রিপন মালু!”

নির্ভীক ভাইয়া গ্লাসে তাকিয়ে বললেন,
“এক নয়?”

আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“উহুম।আরাফ ভাইয়া তো মানুষ নয় এলিয়েন।ভাল এলিয়েন।ভাইয়ার উপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকায় যায় না।ম্যাজিক করে সব ঠিক করে দেয়,তাইনা ইচ্ছে?”

আমার কথা নির্ভীক ভাইয়ার পছন্দ হলো না।উনি মুখ মলিন করলেন,আমি কিছু বুঝলাম না।ইচ্ছে বলল,
“তুই ভাইয়াকে ভাল বলছিস?আর একবার বল তো রেকর্ড করে ভাইয়ার কাছে পাঠিয়ে দিব।ধূর ভাইয়া যে কবে আসবে!”

আমি ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“তোর ভাইয়া একটা কাম চোর।কাজ করার ভয়ে বিদেশে বসে আছে আর আমার ভাইয়া কত পরিশ্রমী জানিস?আমি এখনই ফোন দিব আর ভাইয়া বলবে কি বলবি বল আমি এখন ব্যস্ত আছি।”

আমার কথা শুনে ইচ্ছে আর নির্ভীক ভাইয়া হেসে দিল।আমিও মুচকি হাসলাম।ভার্সিটিতে এসে নির্ভীক ভাইয়া আমাদের নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।আর আমি ক্লাস শেষ হওয়ার প্রহর গুনতে লাগলাম কারন ক্লাস শেষ হলেই নির্ভীক ভাইয়া এসে নিয়ে যাবেন।আজকাল কেন যেন সব সময় নির্ভীক ভাইয়ার আশেপাশে থাকতে ভাল লাগে।ইচ্ছের আজাইরা কথা শুনতে শুনতে আমি মনে হয় নির্ভীক ভাইয়ার প্রেমে পরে গেছি।

সন্ধ্যায় আমি আর ইচ্ছে টেবিলে বসে পড়ছিলাম তখনই ইচ্ছে বলল,
“পড়তে ইচ্ছে করছে না চল একটু ঘুরে আসি।”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
“কোথায় ঘুরবি?”
ইচ্ছে চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“ছাদে যাই চল।হাঁটাহাটি করলে ব্রেনে রক্ত চলাচল করবে তখন এই অসহ্য জৈব যৌগ গুলো একটু হলেও ব্রেনে ধরবে।”

আমরা ছাদে আসলাম।আকাশ পরিষ্কার।কোটি কোটি তারার মধ্যে থালার সমান একটা চাঁদ অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ একটু বেশি আলো ছড়াচ্ছে।চারপাশটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার লাগছে আর সেই পরিষ্কার আলোতে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি নির্ভীক ভাইয়া মাদুর পেতে বসে থেকে ল্যাপটপ চালাচ্ছেন।উনার একপাশে গিটার সামনে ফোন আর কফির মগ আরেক পাশে পাতলা একটা কম্বল রাখা আছে।উনাকে দেখে ব্যস্ত মনে হচ্ছে তাই আমরা উল্টোদিকে ঘুড়ে চলে আসতে লাগলাম তখনই নির্ভীক ভাইয়া ডাকলেন,

“অন্ত?ওই পিচ্চি দাঁড়াও,এখানে আসো।”

ইচ্ছে আমার এক বাহুতে ধাক্কা দিয়ে মুচকি হেসে বলল,
“যাও পিচ্চি তোমাকে ডাকছে।আমি আসি হ্যা?”

ইচ্ছে চলে যেতে লাগলে নির্ভীক ভাইয়া ওকেও ডাকলো কিন্তু বদমাইশ মহিলাটা কফি আনার নাম করে নিচে চলে গেল।আমি গুটি গুটি পায়ে উনার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম উনি ল্যাপটপ পাশে রেখে আমাকে বসতে বললেন।আমি উনার পাশে একটু দূরে বসলাম।উনি চট করে সব জিনিস পত্র সাইডে রেখে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলেন।উনি এমনটা করবেন আমি বুঝতে পারিনি।আমি হকচকিয়ে নড়ে চড়ে উঠতেই উনি আমার একহাত ধরে বললেন,
“উঠছো কেন?চুপ করে বসে থাকো।কথা বলো একটু।”

আমার হৃৎস্পন্দন দ্রুত হল,পায়ের আঙুলগুলো মৃদু কাঁপছে।এমনিতেই উনাকে নিয়ে আমার ফিলিংসের অভাব নেই তারউপর উনি এমন একটা কান্ড করে বসলেন।আমার খুব লজ্জা লাগছে আর একটু অসস্তিও হচ্ছে।অকসাৎ উনি আমার গালে হাত রেখে ক্ষীণ কন্ঠে বললেন,

“তুমিই সেই পিচ্চি?জারিফ ভাইয়ার ছোটপাখি তুমি?এত বড় হয়ে গিয়েছ? কিন্তু তোমার গাল গুলো তো আগের মতোই আছে।এত নরম কেন এগুলো?কি খাও তুমি?”

আমি কোল থেকে উনার মাথা সরাতে সরাতে বললাম,
“উঠুন,বসে কথা বলুন।”

উনি কোল থেকে মাথা সরালেন না।গাল থেকে হাত সরিয়ে বললেন,

“কি হলো বলো?”

আমি একটু নড়ে চড়ে বসে বললাম,
“কি বলবো?”

উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“তুমি সত্যি ছোটপাখি?”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
“হ্যা ভাইয়া তো আমাকে ছোটপাখি বলেই ডাকে।সত্যি মিথ্যার কি আছে?”

উনি মুচকি হেসে আমার এক হাত উনার মাথায় রেখে বললেন,
“ওকে তাহলে একটু চুল টেনে দাও।আমি একটু প্ল্যান করি।খুব টেনশনে আছি রে পিচ্চি।”

আমি উনার মাথা থেকে হাত সরিয়ে ভ্রু কুচকে বললাম,
“কিসের প্ল্যান আর কিসের টেনশন?”

উনি আমার হাত নিজের বুকের উপর নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“আমার অনেক টেনশন।তোমার ভাই একটা ছাগল।কোথায় বোনদের বিয়ে আগে দিবে তা না নিজের বিয়ে নিয়ে পাগল হয়ে গিয়েছে।”

আমি উনার থেকে হাত টান দিয়ে রাগী কন্ঠে বললাম,
“আপনি আমার ভাইয়াকে ছাগল বললেন?”

উনি আবার আমার হাত টেনে নিয়ে চোখ বন্ধ করে বললেন,
“শুধু ছাগল নয় তোমার ভাই একটা দাহ্য পদার্থ, আমাদের দুই ভাইয়ের হার্টে আগুন ধরিয়ে নিজে বিয়ে করে নিচ্ছে।হার্টলেস ছাগল একটা!”

আমি উনাকে ঠেলে তুলতে তু্লতে বললাম,
“এসবের মানে কি।ভাইয়া কি করেছে?”

উনি উঠে বসে বললেন,
“কি করেনি তোমার ভাইয়া বলো?নিজের বিয়ের জন্য রাযীন ভাইয়ার বিয়ে পিছিয়ে দিল।কত সুন্দর প্ল্যান করে রেখেছিলাম রাযীন ভাইয়ার বিয়ে হবে সকালে আমি বিয়ে করবো বিকেলে।ভালোবাসা দিবসে আমাদের বিয়ে হবে!ধূর কিছু ভাল লাগছেনা।এভাবে চুপ করে বসে থাকলে এবছর আর আমার বিয়ে হবে বলে মনে হচ্ছে না।”

আমি অবাক হয়ে বললাম,
“আপনি বিয়ে করবেন?”

উনি মুচকি হেসে বললেন,
“হুম,কি করে করবো বুঝতে পারছিনা।তুমি আমাকে একটু বুদ্ধি দাও তো।জারিফ ভাইয়ার বিয়ে ভাঙতে হবে।রাযীন ভাইয়ার বিয়ে সকালে হবে বিকেলে আমি বিয়ে করবো।হাতে মাত্র পাঁচদিন সময় আছে।”

আমি হতবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।উনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে মুচকি হেসে বললেন,
“আরেকটা কাজ করা যায় রাযীন ভাইয়ার বিয়ে আগেরদিন হবে পরেরদিন জারিফ ভাইয়া আর আমার বিয়ে হবে,প্রবলেম সল্ভ।না সল্ভ নয় জারিফ ভাইয়ার বিয়ে আমি ভেঙে দিব।অনেক জ্বালিয়েছে ছাগলটা আমাকে।”

বলেই উনি ফোন নিয়ে কাউকে ফোন করলেন।ওপাশ থেকে কল রিসিভ করতেই নির্ভীক ভাইয়া বললেন,
“জারিফ ভাইয়া?শোনো…”

উনি আর কিছু বলার আগেই আমি উনার কাছে থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে কানে ধরে বললাম,

“ভাইয়া শোনো,নির্ভীক ভাইয়া তোমার বিয়ে ভেঙে দিবে বলছে।”

জারিফ ভাইয়া ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
“আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখন বিজি আছি,পরে কথা বলছি।”

ভাইয়া ফোন কেটে দিল।আমি হ্যালো হ্যালো করে আবার ফোন দিলাম কিন্তু কেঁটে দিল।নির্ভীক ভাইয়া ঠিকই বলেছেন আমার ভাই আসলেই একটা ছাগল।ছাগল না হলে এত সিরিয়াস একটা কথা শুনেও এভাবে কল কেটে দিতে পারতো না।নির্ভীক ভাইয়া আমার হাত থেকে ফোন নিয়ে বললেন,
“তোমার দেখছি অনেক বুদ্ধি হয়েছে।ডিরেক্ট বলে দিলা আমি বিয়ে ভেঙ্গে দিব?তোমার একটা ব্যবস্থা করতে হবে নাহলে ভাইয়ার বিয়ে ভাঙা ইজি হবেনা।ভাইয়ার বিয়ে ভাঙার আগে তোমার বিয়ে করিয়ে দিতে হবে তাহলে তোমার বর তোমাকে নিয়ে চলে যাবে তুমি আর কোন ঝামেলা ক্রিয়েট করতে পারবানা,হুম এটাই বেটার হবে।”

আমি রেগে বললাম,
“কি হয়েছে বলুনতো আপনার?এরকম পাগলের মতো আচরণ করছেন কেন?রাযীন ভাইয়া দুমাস পর বিয়ে করবে জন্যই তো রাযীন ভাইয়ার বিয়ে পিছিয়ে গেল।আমার ভাইয়ার কি দোষ!!আজব তো!”

উনিও রাগী কন্ঠে বললেন,
“সব দোষ তোমার ভাইয়ার।তোমার ভাইয়ার জন্য আমার এত কষ্ট।তুমি জানো আমার কত কষ্ট?আমার ওই আকাশ সমান কষ্ট।তা জানবে কেন তুমিও তো ভাইয়ের মতোই হার্টলেস না!”

আমি রেগে উঠে দাঁড়ালাম।উনিও আমার সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালেন।আমি রেগে বললাম,
“আপনি বিয়ে করলে করুন না ভাইয়ার বিয়ে কেন ভাঙতে চাইছেন?আপনি কি মজা করছেন আমার সাথে?আমি কিন্তু আপনার সাথে আর কখনও কথা বলবোনা।”

উনি মৃদু হাসলেন।চাঁদের আলোই মোহনীয় দেখালো উনার সেই হাসি মাখা মুখ।হঠাৎ আমি সংবিৎ ফিরে পেলাম।মস্তিষ্কের নিউরন গুলো তির তির করে আমাকে জানান দিল উনি বিয়ে করতে চান।মানে উনি নিশ্চয় কাউকে ভালোবাসেন।মুহূর্তেই আমার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল,দমবন্ধ ভাব হতে লাগলো।উনি পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললেন,
“তুমি কিন্তু আমার ফ্রেন্ড,তুমি সব সময় আমার সাইডে থাকবা।আগে আমরা দুই ভাই বিয়ে করব তারপর তোমার ভাইয়ের কপালে বিয়ে থাকলে নিশ্চয় হবে।”

আমি মুখ মলিন করে বললাম,
“কাকে বিয়ে করবেন আপনি?”

উনি আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
“আমার প্রিয়তাকে।”

চলবে…………..

(বি.দ্র. :- রমজান মাসে প্রতিদিন গল্প দেওয়া সমস্যা।দু-একদিন পর পর দিব।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here