অস্তিত্বের খোঁজে পর্বঃ৪১

0
2837

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৪১



– শুভ্র চুপ করে শুয়ে আছে। যা হচ্ছে ওর বুকের ভিতর শুধু ও জানে। সব কিছু একনিমিষেই শেষ হয়ে গেছে। ২ টা মা। একটা অতীত আর একটা বর্তমান।


– পরী রুমে এসে বেডে সুয়ে পরে। অনেকক্ষন পর একদম শুভ্রের বুকের ভিতর ঢুকে ওকে জড়িয়ে ধরল।
শুভ্র কিছুই বলছেনা।


– পরী! আমাকে তুমি কতটা ভালবাস?

– শুভ্রের কথা শুনে পরী চমকে ওঠে। শুভ্র এভাবে কথা বলছে কেন!
কি হইছে তোমার এই কথা বলছো কেন শুভ্র?


– এবার শুভ্র চিৎকার করে ওঠে। যা বলছি জাষ্ট তার জবাব দে?

– শুভ্রর ধমকে পরী ভয় পেয়ে যায়। আমি তোমাকে অনেক অনেক অনেক ভালবাসি শুভ্র। তুমিতো সব জানো তাহলে কেন প্রশ্ন করছো?

– এবার শুভ্র পরীকে ধাক্কা মেরে সরে দিয়ে উঠে বসে লাইট টা জ্বালায়।

– শুভ্র কাঁদছিল এতক্ষন! চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। অজানা ভয়ে আমার বুক ধক ধক করে উঠল।
শুভ্র কি হইছে তোমার আমাকে বলো! তুমি কাঁদছো কেন?
আমার কি কোন ব্যবহারে তুমি কষ্ট পাইছো?
আমাকে বল আমি নিজেকে শুধরে নিব।


– আমাকে যখন এতই ভালবাসিস তাহলে আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলি কেন? তোর একবারও মনে পরে নি আমার কি হবে! ৬ টা মাস আমি ঠিকমত ঘুমাতে পারি। আমার জিবন তুই শেষ করে দিয়েছিস পরী। কেন করছিলি এরকম। শক্ত করে পরীর হাত ধরে শুভ্র।


– আমার খুব বড় ভুল হয়ে গেছে শুভ্র! আর কথাটা বলনা আমাকে। আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনা এই জন্য। একা একা থেকে আমি বুঝেছি তখন,,,,,,, তুমি নেই যে জিবনে সে হল মরন।

আর কখনও এমন কাজ করবনা। প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও। বল তোমার কি হইছে?


– এবার শুভ্র যেন পাগল হয়ে যায়। একদম পরীর কাছে হাটু গেরে বসে বলল,,,,,,,,, আমাকে কখনও ছেড়ে যাবিনা তো! প্রমিস কর।


– শুভ্র! তুমি কি সব বলছো? তোমাকে ছেড়ে আমি কি নিয়ে থাকব। তুমি জানোনা আমি তোমাকে কতটা চাই বলেই পরী কাঁদতে লাগল।
তুমি বার বার একই কথা বলে কেন আমাকে আঘাত করছো।


– শুভ্রর কোন দিকে খেয়াল নেই। ও আবার বলে উঠল কোরআন বুকে নিয়ে বল আমাকে ছেড়ে যাবিনা?


– পরী তাই করে,,,,,, তবুও শুভ্রর মন মানে। জান্নাতকে ছুয়ে বল আমাকে ছেড়ে যাবিনা কখনও। সেটাও পরী করে। নাহ্ এভাবে না ♥আল্লাহ্♥ র নামে ওয়াদা করে বল। পরী সেটাও করে।
না পরী আমার মন মানছেনা শুভ্রের মা যেমন ছোট্ট শুভ্র আর ওর বাবাকে ছেড়ে গেছে চিরদিনের জন্য তুমিও আমাকে আর জান্নাতকে ছেড়ে যাবে। আমাকে ছুয়ে বল কক্ষন্ন আমাদের ছেড়ে চলে যাবেনা।


– এবার পরী এসে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে বলে তোমাকে ছেড়ে আমি কই যাবো শুভ্র! আমার পুরো জিবনই তোহ্ তুমি বলেই পরী কয়েকটা কিস করে শুভ্রের বুকে।


– শুভ্র এবার ফিকরে মা,,,,,মা,,,,আ বলে কেঁদে ওঠে ছোট বাচ্চাদের মত। কান্না থামছেই না পাগলের মত আচরন করছে। মানুষ কতটা আঘাত পেলে এরকম করে। তাও আবার ওর মত কঠিন একটা মানুষ। শুভ্রর কষ্টে বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। আমার মা শুধু এই শুভ্রের মা। আর কারো না। আমাকে পৃথিবীতে কেন আনতে গেলা মা! আমিতো এটা চাইনি। আমি তোমাকে এখন কই কেমনে খুজে পাবো মা………….

পরী! আজ আমি অনেক কষ্ট পাইছি। কেন আমি দুনিয়াতে আসলাম। মনে হয় আমার জন্য সব কিছু হইছে। সব কিছুর জন্য আমি দায়ী বলে কান্নায় ভেঙ্গে পরে শুভ্র।

পরী কেন কেউ কখনও শুভ্রর মায়ের জন্য এভাবে আর্তনাদের চিৎকার শুনেনি। পুরো চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। চোখের পানিতে গেঞ্জির খানিকটা ভিজে গেছে অবদি।


– শুভ্রকে শক্ত করে পরী আবার জড়িয়ে ধরে নিজের ঠোট দিয়ে শুভ্রের ঠোট চিপে ধরে। কারন শুভ্রকে কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না।২ জনেরই চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছিল।

পরী এবার শুভ্রর ঠোট ছেড়ে দিয়ে বলল,,,,,
একদম এমন কথা বলবা না। তুমি আমার জন্য……..শুধু এই পরীর জন্য পৃথিবীতে আসছো। এরকম কেন করছো বল! আমার খুব কষ্ট হচ্ছে শুভ্র। কেন আমাকে কষ্ট দিচ্ছো!

কি হইছে তুমি বল আমাকে! আচ্ছা ঠিক আছে বলতে হবে না। যখন তোমার ইচ্ছা হয় তখন বল। না বললেও আর কখনও শুনতে চাইবোনা। অনেকক্ষন শুভ্র চুপ করে থাকে পরীর বুকে।



– পরী! বাবাকে ভালবাসার বিকল্প মানুষ ছিল তাই উনি এখনও বেঁচে আছেন। তুমি ছাড়া কিন্তু আমার বিকল্প কেউ নেই। তুমি আমাকে এবার ছেড়ে গেলে কিন্তু আমি পাগল হয়ে যাবো। আমার শুধু জান্নাতকে দিয়ে একদমই চলবে না। আমার তোমাকেও চাই পরী। আমাকে কখনও কষ্ট দিওনা প্লিজ।


– বাবা! তোমাকে কিছু বলছে শুভ্র!


– হুম,,,,,,,,,,, আমি যতই কষ্ট দেইনা কেন তোমাকে আমাকে কখনও ছেড়ে যাবেনা তো পরী!


– পরী একদম শুভের বুকের কাছে গিয়ে একটা পর একটা কিস করছে আর বলছে আমি কত বার তোমাকে বলব হুম বুঝোনা তুমি! নিজের কলিজা বের করে কি তোমাকে দেখিয়ে বোঝাতে হবে যে পরী তার শুভ্রকে কতটা ভালবাসে।


– শুভ্র আর কিছু না বলে পরীর কোলে শুয়ে চোখ মুছে ঠান্ডা গলায় বলল খাবার কেন খাওনি!


– ইচ্ছা হয়নি তাই খাইনি। বাদ দাওতো। আর শোন,,,,,

♥আল্লাহ্♥ কে যেমন ভালবাসি এবং দিন দিন ভালবাসা বৃদ্ধিই পায় তেমন ওনার পর আমি দুনিয়াতে একমাত্র তোমাকেই ভালবাসি। আর এই সত্যটা ইনশাল্লাহ্ কোন দিন বদলাবেনা।


– হুমম,,,,,,,, যাও খাবার খেয়ে আসো?

– না আমার তোমার কাছে থাকতেই বেশি ভাল লাগছে। প্রতিদিন তো খাই একদিন না খেলে অসুবিধা হবে না শুভ্র!

– এবার শুভ্র উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেল। পরী ওভাবেই বসে রইছে। কিছুক্ষন পর খাবার নিয়ে এসে বলল খেয়ে নাও।

– তুমি খাইছো?

– হুম আমার মায়ের পছন্দের সব খাবার কিন্তু বিশ্বাস কর খাবার আমার গলা দিয়ে একদম নামতে চাচ্ছিল না। আমি বাবার সামনে কিছু বলতে পারিনি। আমি যদি ইমশোনাল হয়ে পরতাম বাবা আর নিজের মধ্য থাকতে পারত না। পুরো পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করতো বাবা। আমি ছেলে হয়ে মাকে কেমনে কষ্ট দেই বল!


– আচ্ছা পরে আমরা এ বিষয়ে কথা বলব এখন একদম চুপ করে বসে থাকবা এখানে।
কিন্তু পরী কিছুই বুঝতে পারলনা আসল সমস্যাটা কি!

হাত ধুয়ে এসে প্লেটটা হাতে নিয়ে শুভ্রের মুখে এক লোকমা ভাত তুলে ধরল।
শুভ্র! আমি কিন্তু প্রথম তোমাকে খাওয়াই দিচ্ছি তাই না করবা না কিন্তু।


– শুভ্র পরীর হাতে কিস করে বলল,,,,,,আমি জানি।
শুভ্রকে পরী খাওয়াই দিচ্ছে শুভ্র একমনে খাবার খাচ্ছে আর গভীর চিন্তা করছে।

পরী! বাঁকিটা তুমি খাও আমি আর খাবনা বলেই শুভ্র পানি খেয়ে একটা সিগারেট নিয়ে বেলকুনিতে চলে গেল। পরী খাওয়া কমপ্লিট করে নিচে সব কিছু রেখে আসে।


– পরী বেলকুনিতে গিয়ে দেখে শুভ্র আবার নতুন করে সিগারেট ধরাল। হয়ত অনেক টেনশন করছে। শুভ্র লম্বা একটা সিগারেটে টান দিতেই পরী সিগারেটটা কেড়ে নিয়ে ফেলে দিয়ে শুভ্রর ঠোট দুটি নিজের ঠোটে নেয়। কিন্তু সিগারেটের ধোয়া পরীর মুখে চলে যায়। পরী শুভ্রকে ছেড়ে দিয়ে খুক খুক করে কাঁশি দিতে লাগল।

– এবার শুভ্র উচ্চ স্বরে হেঁসে বলল,,,,,,,,, কি কিস করার সখ মিটে গেছে?


– তুমি এগুলো খাওয়া ছেড়ে দিবে! এটা খাওয়ার জিনিস হল? দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।


– আমিতো এখন খুবই কম খাই পরী! দিনে ৩ / ৪ টা এর বেশি না। তবে একটা নিদিষ্ট সময়ে এটাও ছেড়ে দিব ইনশাল্লাহ্।


– ওকে চল ঘুমাব। অনেক রাত হয়ে গেছে।

– হুম বলে শুভ্র রুমে এসে শুয়ে পড়ল। কিন্তু ঘুম আর ওর আসছে না। বার বার বাবার কথাগুলো মনে পড়ছে।


– অনেকক্ষন পর পরী এবার ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

– পরী! তুমি ঘুমাওনি এখনও?

– নাহ্,,,,,,, পরী শুভ্রর চুলে হাত বুলিয়েই যাচ্ছে।

– পরী! জান্নাত শুধু আমার মেয়ে না। আমার কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়া নিষ্পাপ শুধু একমাত্র শুভ্রর মা। ওকে কিন্তু তুমি কখনও কষ্ট দিবেনা। আমি কিন্তু সহ্য করবনা।

– আচ্ছা,,,,,, তুমি ঘুমাও তো!

– শুভ্র একসময় গভীর ঘুমে মগ্ন হয়ে যায়। আর পরী সারাটা রাত জেগে থাকে। ফজরের আযানের দিকে ঘুমিয়ে পড়ে।



– শুভ্র ভোরে উঠে ফযরের নামায পড়ে পরীকে ডাক দেয় কিন্তু ও আর উঠতে চায়না। শেষে শুভ্র ওকে কোলে নিয়ে গিয়ে ওয়াসরুমে রেখে শাওয়ার চালু করে দেয়।


– পানি গায়ে পড়তেই পরী চিল্লায় উঠে বলল,,,,,, এটা কি হল! এই ভোরে আমাকে এখানে দাড় করলা?

– হুম,,,,,,,, যাও নামায পড়ে আবার ঘুমাও। শুভ্রও পরীকে নিয়ে ভিজছে একসাথে।

– পরী শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,,, শুভ্র! ভাল করে বললেই পারতা। আমি ভেবে পাইনা শুভ্র আমার মত মেয়ের জিবনে তোমার মত হিরা আসল কিভাবে!

– শুভ্র পরীর কপালে একটা কিস করে বলল আমি না তুমি আমার জিবনে পরশ পাথর হয়ে আসছো। যার শুকরিয়া আমি আদায় করতে পারবোনা। ফ্রেস হও বলে শুভ্র ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে আসল।

– সব কাজ কমপ্লিট করে এসে নামায পড়ে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে সুয়ে পড়ল পরী।

তারপর থেকে অনিতার সাথে আরও বেশি করে সময় কাটাতে লাগল শুভ্র। এই মা টাকে শুভ্র খুব ভালবাসে।

এভাবেই ওদের সুখের দিনগুলো কাটতে লাগল।


– বাসায় অর্পিতার বিয়ের কথা চলছে। পাত্র খুব ভাল পরিবারের ছেলে এবং ছেলেটিও অনেক চমৎকার তাই পরিবার রাজি হয়ে গেছে। কিন্তু শুভ্রের মনে খটকা লাগল। কারন অর্পিতার হবু বর মানে “রনক” আকিকের ছোট বেলার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আকিক কোন প্লান করে কাজটি করেনিতো!


– শুভ্র সরাসরি রনক কে ওর অফিসে ডাকে।


– দুপুরের পর রনক শুভ্রর অফিসে গেল। হেই শুভ্র কেমন আছো! আর আমাকে এখানে কেন ডাকছো?

– শুভ্র রুমে একজনকে ডেকে রনকের জন্য নাস্তা দিতে বলল। এবার শুভ্র রনকের দিকে তাকাল।

রনক! যদি তোমার শত্রুতা থাকে আমার সাথে তাহলে আমার সাথেই সামনা সামনি লড়ো। কিন্তু আমার ছোট্ট বোনের লাইফ নিয়ে খেলনা। আমি কিন্তু একদমই সহ্য করবো না।


– শুভ্র! তোমার আর আকিকের দন্ধ সম্পর্কে সব জানি আমি। বউদি কে নিয়ে ওর সাথে তোমার ঝামেলা।

তবে টেনশন নিও না আমি সত্যিই অর্পিতাকে পছন্দ করি। তাই তুমি নিশ্চিন্তে থাক।
আমার দ্বারা তোমাদের ক্ষতি কোন দিনই হবে না অন্তত আমি বেঁচে থাকতে ,,,,,,,,, কথা দিলাম তোমায়।


– শুভ্র রনকের কথা শুনে অনেকটা নিশ্চত হয়ে গেল। যাহোক আকিকের মত অন্তত এ না। কারন শুভ্র খুব ভাল করে মানুষকে চিনে তার কথা বার্তায়।


– অর্পিতার বিয়েটা ঠিক হয়ে যায়। বাসার একটাই আদরের মেয়ের বিয়ে তাই কোন কমতি রাখতে চায়না সবাই। ১ মাস আগে থেকে আয়োজন।


– রনকের নাকি ২ টা বউদি আছে সেই স্টাইলিশ। তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে নিদ্রা আপু আর আমাকে নাকি চলতে হবে। এটা নিদ্রা আপুর ধারনা। কিন্তু সমস্যা হয়ে গেল আমাকে নিয়ে। আপু তাই এই এক মাস আগে থেকে আমাকে ট্রেনিং দিতে শুরু করল। কিভাবে চলতে হবে এবং সব কিছুর সমন্ধে জানতে হবে এগুলো আর কি! কারো নিচে যেন আমি থাকি না।

উফ্ মনে হয় আমি নতুন স্কুলে ভর্তি হয়েছি। আমাকে নিদ্রা আপু তার কাছেই বেশি ভাগ রাখে। শুভ্রকেও সময় দিতে পারিনা।


– শুভ্র একদিন প্রচন্ড রেগে গিয়ে ওর মাকে বলল,,,,,
মা! বউদি আমার বউকে শেষ করে দিল। বউদি এগুলো কি শুরু করছে।
সেদিনের ঘটনার কি এখন প্রতিশোধ নিচ্ছে আমার সাথে। পরীকে এত্ত স্টাইলিশ্ কেন বানাতে হবে। আমার অবুঝ বউকে চালাক বানিয়ে আমার ব্যান্ড বাজানো ধান্দা বউদির তাই না!

– আরে ছাড় তো! একটু মজা করছে ২টা মেয়ে আর তোর সেটাও সহ্য হচ্ছেনা?

– আমার বউকে নিয়ে যদি টানাহিচড়া না করতো তাহলে সহ্য হত মা! কিন্তু তিনি তো একা কাজ করছেন না পরীকেও সাথে নিছে। আমার একটা কথাও আর শুনবেনা পরী এরকম চলতে থাকলে।

– কেন! তোর কোন কথা ও শোনেনি আমাকে বল?

– ধুর সবাই যে যার ইচ্ছামত কাজ করছে বলেই শুভ্র চলে গেল।

– সেদিন রাতে বাসার সবাই মিলে মিটিং এ বসে গেল। কত লোক খাওয়া দাওয়া, দাওয়াত, ডেকোরেশনেরর কাজ, প্লেস ঠিক করা, সব মিলিয়ে কত টাকা খরচ হবে। সব কিছু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

– বাবা জান্নাতকে নিয়ে বসে আছে। আমি দিদুনের সাথে বসে ছিলাম। আর সবাই কথা বলছে। আমি চট করে বলে উঠলাম আমার একটা আবদার আছে দাদু। বিয়েতে যত্তগুলো মেহমান আসবে তাদের থেকে একটাও গিফট্ নিবনা আমরা। আমরা অর্পিতার বিয়ে তে কারও কাছে বিন্দু পরিমানও ঋণী হতে চাইনা।


– ঐ ছুড়ি কি বলিস। সবাইতো ভালবেসে গিফট্ দেয়। আর না নিলেতো গেস্টরা মন খারাপ করবে। আর তুই হয়ত জানিস না গিফট্ নিয়েও বিয়েতে প্রতিযোগিতা চলে।( বিমলা)


– চলুক কিন্তু আমরা গিফট্ নিচ্ছিনা এটাই ফাইনাল বলেই শুভ্রের দিকে তাকাতেই চুপসে গেলাম। চোখ গরম করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি মিন মিন করে বললাম ♥আল্লাহ্♥ গো কিছু ভুল বলে ফেললাম নাকি।

– পরী তোমারটা অনেকে তো মেনেই নিবেনা মা!মনোমালিন্য পর্যন্ত হয়ে যাবে ।( অনিল)


– কেন! কার্ডে আগে ছাপিয়ে দিবেন। কঠোর ভাবে কথাটা লিখবেন তাহলেই তোহ্ লেটা চুকে যায়। পরী জ্বিভে কামড় দিয়ে বলল স্যরি ঝামেলা শেষ হয়ে যায়।


– এবার অনিল, নিতাই আর কৌশিক উচ্চস্বরে হেঁসে উঠল। আমি আড়চোখে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও মুচকি মেরে হাসছে। যাক্ আমার সাহেব একটু হেঁসেছে।

– নিদ্রা তোমার কি কোন আবদার আছে পরীর মত?( নিতাই)

– বাবা ডেকোরেশনেরর কাজ গুলো আমি দেখব আর বাহির থেকে নাচের শিল্পী আনব। এতেই আমি খুশি।

– আচ্ছা ঠিক আছে তোমাদের ২ জনের কথাই রাখলাম। আরও থাকলে বলো। (নিতাই)

– না বাবা আমাদের কিছু সখ নেই নিদ্রা আর পরী দুজনেই এক সাথে কথাটি বলে উঠল।


– ওকে তাহলে সব কমপ্লিট কাল থেকে কাজে লেগে যাও সবাই। মিটিং সমাপ্ত,,,,,,,


– বউদি আর অর্পিতা মিলে আমাকে নাচের ট্রেনিং দিতে লাগল। একসাথে শপিং করা ইচ্ছা মত ঘুরে বেড়ানো সব কিছু চলতে লাগল। শুভ্রকে টাইম দেওয়ার মত সময় একদমই তার নাই।


– শুভ্রও রাগ করে পরীর সাথে কথা বলা টোটালি অফ করে দিছে। ও যখন ও গুলোতেই মেতে উঠেছে ওগুলো নিয়েই থাক।


– অনিতা সন্ধার পর নিদ্রা আর পরীকে নিয়ে বসে রুমের ভিতর একটার পর একটা গহনা বের করে দেখাচ্ছে। তারা বিয়ের দিন কে কি পড়বে এসব আর কি । বিমলাও ওদের সাথে আছে।

– পরীতো হা করে আছে এত্ত গুলো গহনা দেখে। জিবনে দেখেনি এত্ত গহনা। গহনা দেখে ওর বুকের ভিতর ধক ধক করতে লাগল। কেমন জানি অসস্তি হতে লাগল ওর।

– মা! তোমরা দেখ আমি রুমে গেলাম বলেই পরী নিচে এসে ওর দাদুর কাছে বসে পড়ল।

– নিদ্রা, অনিতা, বিমলা তো অবাক। একবার তাকিয়ে আর ২য় বার তাকালো না! এ কেমন মেয়ে…..

– মা! পরীকে যত দেখি ততই অবাক হই। এর ভিতর শুভ্রর অস্তিত্ব ছাড়া আর কিছু নেই। সবই মনে হয় ওর কাছে ফিকে জিনিস। পরীর মত মেয়ে আমি কোন দিন দেখিনি। আর এ এমন কেন সেটার কারনও খুজে পাইনি।( নিদ্রা)

– হুম তাইতো দেখছি। গহনা গুলোতে হাত অবদি দিল না। (বিমলা)


– শুভ্র এমন সময় জান্নাতকে কোলে নিয়ে ওর মায়ের রুমে এসে বলল পরী কই মা? আমি কাজ করব জান্নাতকে নিয়ে পারছিনা কাজ করতে।

– আমাকে দাও শুভ্র বলেই নিদ্রা জান্নাতকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগল।

– শুভ্র! পরী গহনা গুলো দেখেই মন খারাপ করে বাহিরে চলে গেল কেন! তুই কি এর কারন জানিস? (অনিতা)

– শুভ্র গহনা গুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে কিছুক্ষন পর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,,,,,,, আমি রুমে টাকা অবদি এনে রাখতে পারিনা ওর জন্য। আনলেও ওর অজান্তে রেখে দিতে হয়। তার নাকি সমস্যা হয়। মাত্র ২ হাজার টাকা একসাথে দেখলেই তার সমস্যা শুরু হয়ে যায়। এত্ত টাকা নিয়ে সে কি করবে এই ভেবে। ওটাই নাকি তার কাছে অনেক টাকা।

আর আজ এত্ত গুলো গহনা দেখছে তার মানে দেখ কই ভিমরি খেয়ে পড়ে আছে। ওর বেশি কিছু দেখে গা হাত পা কাঁপে।
তাই ওকে এগুলো না দেখানোই বেটার ছিল মা!
শুভ্র রুম থেকে বের হয়ে যায়।


– পরী নিতাইকে নিয়ে বাসার বাহিরে হাঁটছে আর নিতাইয়ের থেকে পুরনো দিনের গল্প শুনছে।

– দাদু শুভ্রের কি কোন অতীত আছে!

– এবার নিতাই চুপ করে গেল। তারমানে শুভ্র পরীকে কিছুই বলেনি।

– সেটা শুভ্রের কাছ থেকেই জেনে নিবা!( নিতাই)

– কেবল শীতের আমেজ পড়ছে তাই একটু ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। একটু পর অর্পিতাও এসে যোগ দিল। ৩ জন মিলে কথা বলছে আর হাঁটছে। লাইটের আলোকিত বাগানের রাস্তায় হাটতে বেশ লাগছে।

অর্পিতা সুইমিং পুলে বসে পা পানিতে নেমে দিল আর পরী কাছে এসে বসল। নিতাইয়ের হাটুতে ব্যাথা তাই দাড়িয়েই রইল।


– দুরে কাজের লোক ছিল তাকে ইশারা করে পরী একটা চিয়ার আনতে বলল। চিয়ার আনলে নিতাই সেখানে বসে পড়ল।

– বউদি পানিতে পা দাও দারুন লাগবে। (অর্পিতা)

– না না তুমি দাও আমার ভয় করে কেউ যদি পা টেনে নিয়ে যায়!

– এবার নিতাই এদের ২জনকে ভুতের গল্প বলে ভয় দেখাতে লাগল। এইটা হইছে ওটা হইছে বলে অনেক কথা। নিদ্রাও কিছুক্ষন পর এসে এদের সাথে যোগদান দিল।

– দাদু ভয় দেহান কিল্লের লায়। এমনি আমার সমস্যা তার ভিতর এই সময় এগুলো কথা বলছেন?

– পরী! তোমার কথা গুলো আমার কিন্তু দারুন লাগে। অনেক অঞ্চলের ভাষা এক বাক্যতে সাজিয়ে ফেল। (নিতাই)


– দাদু পরী অনেক নাচ শিখছে দেখবেন? (নিদ্রা)

– ওকে দেখাও। আমারি ভাল এই বয়সে নাত বউদের নাচ দেখতে পাচ্ছি।

– পরী শুরু করো বলেই নিদ্রা ওর ফোনে গান চালিয়ে দেয়।

– আমার লজ্জা লাগছে আপু আমি পারবনা।

– তুমি আর আমার মানসম্মান রাখবানা বলেই পরীকে একটা ধমক দেয় নিদ্রা।

– শেষে পরী নেচে দেখাল ওদেরকে।

– গুড জব পরী। সব তোমার মনে আছে দেখছি। আচ্ছা তুমি কোন গুলো গহনা পড়বা ঠিক করেছো?

– আপনি চুজ করে দিয়েন আপু…….

– সব সময় নিজেকে অন্যর দাসী হিসেবে কেন পরিচয় দাও পরী! তুমি কেন নিজের লাইফটা নিজের মত গড়তে পারোনা? অন্যর উপর কেন এত্ত ডিপেন্ড করো হুম,,,,,,,

– এবার পরীর মন খারাপ হয়ে গেল। চুপ করে আছে ও।

– কি সব বলছো নিদ্রা ওর মন খারাপ করে দিলাতো!(নিতাই)

– না দাদু ওকে শিখতে হবেনা! এভাবে কেন ও থাকে। আমাকে ওকে এভাবে দেখতে একদম ভালো লাগেনা। নিজের জিবন বলেতো কিছু আছে নাকি!


– শুভ্র বেলকুনিতে দাড়িয়ে সব শুনছে। এতক্ষন ও পরীর নাচ দেখছিল। শুভ্রর বেলকুনির নিচে কয়েক হাত দুরেই সুইমিং পুল। তাই ভালভাবেই সব শুনতে পেল।

শুভ্র নিদ্রার কথা শুনে কিছুটা রেগে গেল।
এই বউদি আমার পরীটাকে একদম শেষ করে দিল আধুনিকতার নাম দিয়ে। কবে না জানি ছোট ছোট ড্রেস পড়ে সারা শহর ঘুড়িয়ে এনে বলবে দেখতো শুভ্র তোমার পরীর কত্ত উন্নতি আমি করেছি। কিছুতো একটা করতে হবে। এভাবে চলতে দেওয়া যাবেনা।


– রাতে রুমে এসে পরী ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। শুভ্র রুমে ছিলনা। জান্নাতকে নিজের কাছে নিয়ে শুয়ে পড়ল পরী। কিন্তু নাচ প্যাক্টিস্ করার জন্য পা ব্যাথা করতে লাগল। শুধু একবার এপাশ হচ্ছে আর ওপাশ হচ্ছে। ঘুমাতে আর পারছেনা।


– শুভ্র রুমে এসে পরীকে ঐ অবস্থায় দেখে বলল কি হইছে ওরকম করছো কেন? জান্নাত উঠে যাবেতো?


– উমমমম আমার পা চাবাচ্ছে……

– আমি বুঝলাম না,,,,,, পা আবার কেমনে চাবায়।

– পা ব্যাথা করছে শুভ্র!

– অ,,,,,,হ্ এই সমস্যা!

– হুম বলে অসহায় ভাবে শুভ্রের দিকে তাকালো পরী।

– বেশ হইছে! নাচবা না,,,,,,, এবার বেলী ডান্সও দিয় পেটেরও এক্সারসাইজ হবে। সাথে অনেক ডান্স আছে সেগুলো ও পাক্টিস্ করো কেমন?

– শুভ্র! স্যতি আমার পা ব্যাথা করছে আমাকে একটু মেডিসিন দিবা?

– নাহ্ একদম না। যেমন আছো তেমন থাকো। উমহ্ আমাকে তার টাইম দেওয়ার মত সময় পর্যন্ত হয়না আর এখন ঠেলায় পরে আমার কাছে আসছে।

– শুভ্র! আমি বাঁকি নিবনা এর বিনিময়ে তোমাকে কিছু দিব। তুমি যেটা চাও। যা খেতে চাও তাই বানিয়ে খাওয়াবো। একটা মেডিসিন দাওনা।

– যা যা খেতে চাব তাই দিবাতো! কথার খেলাফ করলে কিন্তু হবেনা আগেই বলে দিলাম।

– ওকে তাই দিব। তাও দাও তুমি।

– ওকে শুয়ে পড় আমি দিচ্ছি বলেই শুভ্র এসে ওর পা টা মাসেজ করে দিতে লাগল।

– পরী চট করে উঠে বসে পা সরিয়ে নিল। কি করছো তুমি পায়ে হাত দিচ্ছো কেন! আমিতো মেডিসিন চাইছি।

– সুয়ে পড়,,,,,,,,, এটাই মেডিসিন। এর বিনিময়ে অবশ্যই তোমার কাছ থেকে কিছু নিব বলেই আবার ওর কাজ শুরু করে দিল শুভ্র।

– পরী ঘুমিয়ে পড়েছে। শুভ্র উঠে ফোনটা নিয়ে ব্যালকুনিতে গিয়ে কল দিল।

– ফোনের ওপারে হ্যালো বলতেই শুভ্রের ২চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু ঝড়ে গেল।

– স্যার! কেমন আছেন?

চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here