একটুখানি পর্ব : ৪৪

0
608

একটুখানি
— লামইয়া চৌধুরী
পর্বঃ৪৪
কলরব আর কুহুর বিয়ের ডেট ঠিক করা হলো। দেড়
মাস পর বিয়ে। ইরিনের পরীক্ষা তারপর কলরবের
আবার অফিসের ট্রেনিং চলবে। এতে পনেরো
দিন লাগবে। ইফতেখার সাহেব চেয়েছিলেন
বিয়েটা কলরবের ট্রেনিং শুরুর আগেই সেরে
ফেলতে। সাহরা বাধ সেধেছেন। ইরিনের একমাত্র
ভাই কলরব। ওর পরীক্ষার সময় বিয়ে এটা মানাই যায় না।
ইরিনের পরীক্ষার রুটিন অনুসারে বাইশ দিন লাগবে
পরীক্ষা শেষ হতে। এসএসসি পরীক্ষা তাই
হেলাফেলা করার মতো না। ইরিনের পরীক্ষার পর
পর কলরবের ট্র্যানিং শুরু,ঢাকা যেতে হবে। ইরিনের
পরীক্ষা শেষে বিয়ের শপিং করা শুরু হবে। সাহরা
বিয়ের শপিং নিয়ে সবচেয়ে বেশি ইন্টারেস্টেড।
একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা। এই এক
ছেলের বিয়েতে উনি তা করবেন যা মানুষ সাত
ছেলের বিয়েতেও করে না। বাসায় যেয়েই
খুশিতে আগে নিজের গহনাগুলো দু ভাগে ভাগ
করলেন তিনি। ইফতেখার সাহেব যে বেশি একটা
গহানা গড়ে দিয়েছেন তা নয়। তবে নিজের বাবার
বাড়ির দেয়া অনেক গহনা উনার। সেগুলো সমান
ভাগে ভাগ করে একভাগ রাখলেন ইরিনের জন্য আর
বাকিগুলো কুহুকে দিবে। তাছাড়া নতুন গহনা তো
দিবেনই। কলরবের স্যালারীর বড় অংশটুকু জমানো
আছে। সেগুলো দিয়ে কুহুকে বেশ সুন্দর
করে সাজানো যাবে। সব মিলিয়ে ঠিকঠাক হলো
দেড় মাস পর বিয়ে।
..
– পিহু! পিহু! শোন না..
– বললে তো শুনবো ফুলটুশী।
– কলরবকে একটা কল দিই?
পিহু ধমকে বললো,
– কি বলছিস কি তুই? তুই কলরব ভাইকে কল দিবি
কেনো?
কুহু কাঁচুমুঁচু হয়ে বললো,
– না মানে খুব খারাপ দেখাবে কি?
পিহু টেবিলে চাপড় দিয়ে বললো,
– অবশ্যই খারাপ দেখা যাবে। শুধু খারাপ কেনো খুব
বেশি খারাপ হবে…
কুহু ব্যস্ত হয়ে বললো,
– না সে তো নাম্বার দিয়ে গেল। তাই ভেবেছিলাম
ফোন না দিলে হয়তো রাগ করবে। বাট দিব না তুই
শিউর থাক। আমি এত ছ্যাঁচড়ি নাকি?
পিহু নিজের কপালে চাপড় দিয়ে বললো,
– আরে মা তুই আমার কথা তো শেষ করতে দে
আগে তারপর নাহয় বলিস।
– আচ্ছা বল।
– তুই আমার কথায় বাধ সাধচ্ছিস কেনো? আমাকে
বলতে দে।
কুহু পিহুর কথা শুনে চুপসে গেল।
পিহু ভাব নিয়ে বললো,
– তুই কলরব ভাইকে কল দিবি না..
– বললামই তো দিব না।
পিহু দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
– কুহু আরিজা তোকে যদি আমি এখন খামচে না দিই না
তাহলে আমার নামও পিহু আলিশা না।
কুহু পিহুকে ভেঙচি কেঁটে বললো,
– আমাকে খামচে দিবেন উনি আর আমি বুঝি হাত পা
গুটিয়ে বসে থাকবো??
– তুই কি আমাকে বলতে দিবে….
কুহু ঠোঁটে আঙুল রাখতেই পিহু বললো,
– কলরব ভাইকে কল দিয়ে ছ্যাঁচড়ি সাজবি না একদম
তবে মিসড কল দিতেই পারিস।
পিহু কথা শেষ করেই চোখ মারলো কুহুকে। কুহু
হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।
– উফ্ তুই যেভাবে বলেছিলি আমি তো ভাবলাম কিনা
কি।
– দুলাভাইয়ের আমার ভাব বেশি। তোর নাম্বার তো
আছেই ওদের কাছে তারপরো নিজে ফোন
দিবেন না। বসে বসে মিসড কলের অপেক্ষা
করবেন।
কুহু আর পিহু বসে বসে কথা বলছিল এতক্ষণ। পিহুর কথা
শেষ হতেই কুহু পিহুর দিকে মোবাইল বাড়িয়ে দিয়ে
বললো,
– নে তোর এটিএম কার্ডকে মিসড কল দে।
– কেনো আপনি কি পঙ্গু?? হাত নেই আপনার?
শ্বশুরবাড়ি যেয়ে ঠিকই তো এই হাত দিয়ে রুটি
বেলবেন,বাসন মাজবেন,কাপড় কাঁচবেন। বাপের
বাড়িতে এত ঢং কিললাই দেখান?
– তোকে না বললাম সুন্দর করে কথা বলবি।
– মজাও করতে পারি না তোর জন্য।
– পিহুন সোনা আমার আমি মিসড কল দিয়ে দিচ্ছি তবে
ব্যাক করলে বলবি তুই করেছিস। আর কিসব বলছি আমি?
মিসড কল কেনো দিব? আমি কল দিব, তুই লাউড দিয়ে
কথা বলবি।
পিহু আৎকে উঠে বললো,
– মাথা খারাপ নাকি? তুই জানিস না আমি ফোনে কথা
বলতে জানি না? একদম না পারতেই কথা বলি। আর
কেমন হাম্বুশলি কথা বলি আমি। কলরব ভাইয়ের সামনে
মান ইজ্জত পাম্পচার।
– আরে একটুখানি বলবি সমস্যা কি তোর?
– অনেকখানি সমস্যা আছে। তুই কথা বল ফোন
দিয়ে। ফোনে হোক আর বাস্তবেই হোক তুই
সবার সাথে গুছিয়ে কথা বলতে পারিস। যা আমি একদম
পারি না আর ফোনে তো কথা বলতেই আমার বিরক্ত
লাগে। বরং তুই হেব্বি করে কথা বলতে পারিস
ফোনে। মনে নেই মৌসুমী আপুর বিয়ের আগে
তুই দুলাভাইয়ের সাথে আপু সেজে কত কথা
বলেছিলি?
কুহু কপালে পড়ে থাকা চুলে ফুঁ দিয়ে বললো,
– তা আর বলতে বাকি?? ফোনে আমি হাজারজনকে
পটাতে পারবো। আই অ্যাম দ্যা প্লে গার্ল।
কুহু পিহু দুজনই হেসে দিল। হাসি থামতেই পিহু বললো,
– তা আপনি এখন নিজের আসল মানুষটার সাথে
ফোনে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন কেনো
ফুলটুশী?
কুহু পিহুর চুল টেনে বললো,
– একদম ফুলটুশী বলবি না।
– ঠিক আছে।
– পিহু আসলে আমি না কলরবকে দেখলেই
অনেককিছু গুলিয়ে ফেলি। মানে যা বলতে চাই বা
করতে চাই তা করতে পারি না, বলতেও পারি না। সব
কেমন যেন আটকে যায়।
পিহু কুহুর পিঠে হাত রেখে বললো,
– মাই গার্ল! ব্রেভো গার্ল! তুমি ঠিক ঠিক পারবে। এখন
আমার এটিএম কার্ডকে কল দাও দেখি।
কুহু পিহুর কথায় মাথা নেড়ে সায় দিয়ে কলবের নাম্বারটা
ডায়াল করলো। নাম্বারটা মুখস্হ করে নিয়েছে কুহু।
ডায়াল করলো ঠিকই কিন্তু ব্যালেন্স না থাকায় কল
হলো না। ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স এর জন্য ডায়াল
করলো সে। সাথে সাথে দুইটা মেসেজ এলো।
কুহু মেসেজ চেক করে দেখলো একটা
ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স এর অন্যটা আননোউন নাম্বার
থেকে। মেসেজ ওপেন করে জোরে
জোরে পড়লো সে।
” ফুলটুশী আপনার লিপস্টিক খরচ করায় কি আপনি রাগ
করেছেন? যদি রাগ না করে থাকেন তাহলে কি ঐ
গানটা ভালো লাগেনি? গানটা অবশ্য আমারো ভালো
লাগে না। কিন্তু ঐটাই পার্ফেক্ট লেগেছিল তাই
লিখেছি। আচ্ছা একটুখানি কষ্ট করে আপনার মহামূল্যবান
সময় নষ্ট করে আমাকে কি একটা মিসড কল দেওয়া
যায় না?
~ “আজব কলরব”
কুহু মেসেজ পড়া শেষ করতেই দুইবোনের
চোখাচোখি হলো। দুইজন চোখের ইশারায় কথা
শেষ করেই দুজন চিৎকার করে হাই ফাইব দিয়ে
একসাথে বললো,
– ইয়াহু!! এখন মজ্জা হবে।
..
কলরব মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছে
পনেরো মিনিট ধরে কিন্তু কুহুর ফোন আসার নাম
গন্ধও নেই। বিরক্ত হয়ে পকেট থেকে ছবিটা
বের করলো। লাল সাদা একটা শাড়ি পরে আছে কুহু।
মাঝে মাঝে সোনালী কাজও করা কিছু। পহেলা
বৈশাখের শাড়ির মতন লাগলো কলরবের কাছে। লম্বা
চুলগুলো সাইড সিঁথি করে আঁচড়ে ছেড়ে
রেখেছে, হাত ভর্তি লাল চুড়ি, সেজেছেও
বেশ। কলরব বেশ অবাক হয়েছে কুহুকে এভাবে
দেখে। ইরিন আসলে সত্যি বলেছিল কুহুকে
সাজলে আরো অনেক বেশি সুন্দর দেখায়। তবে
কুহুর চুলের প্রশংসা কম হয়ে গেছে। ইরিন যতটুকু
বলেছে তার চেয়ে বহুগুণ সুন্দর কুহুর চুলগুলো।
ছবিটা একটা বাড়ির আঙিনার বেঞ্চিতে বসে
তোলা,বাইরে কোথাও নয়। বাড়িটা চিনলো না কলরব
হয়তো কুহুর কোনো আত্মীয়র বাড়ি। কুহুর ছবিটার
দিকে একনজরে কতক্ষণ চেয়ে থাকার পর
কলরবের অনুভব হতে লাগলো ওর দম বন্ধ হয়ে
যাচ্ছে, শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে, চোখ ধাঁধানো
সুন্দর লাগছে কুহুকে। কলরবের হার্টবিটও বেড়ে
গেল হঠাৎ। কলরব তাড়াতাড়ি করে ছবিটা বালিশের
নীচে রেখে চোখ বন্ধ করলো । তারপর
ফিসফিসিয়ে বললো,
– কুহু! তুমি এত সুন্দর কেনো? এত অপরূপা
কেনো? আজ আফসোস হচ্ছে কবি হতে পারিনি
বলে।কবি হলে তোমার জন্য দুই এক লাইন লিখতাম।
কূজন ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই দেখলো কলরব
চোখ বন্ধ করে ফিসফিসিয়ে কি যেন বলছে।
কূজন কিছু শুনেনি তারপরো বুঝলো কলরব কুহুকেই
ভাবছে। প্রেমিক হৃদয় প্রেমেজর্জরিত সকল
হৃদয়কেই অনুভব করতে পারে। তাই কূজনের ও
বুঝতে অসুবিধা হলো না কলরব এখন কুহুতেই মগ্ন।
কূজনের চোখগুলো হঠাৎ জ্বলতে শুরু করলো,
রক্তবর্ণ লাভ করলো তার চোখজোড়া। সে
তাড়াতাড়ি করে কলরবের রুম থেকে বেড়িয়ে
পড়লো।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here