#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব :৫৪
🌼
প্রকৃতি যখন প্রখর রৌদ্রে পুড়ছে ঠিক তখনই প্রকৃতিকে রাঙিয়ে দিতে নিজের সবটুকু রঙ ছড়াতে শুরু করেছে কৃষ্ণচূড়া।বসন্ত এসে গেছে।গাছে গাছে ফুলের সমারহ।ধরিত্রী যেন প্রান ফিরে পেয়েছে। বসন্তকে রাঙাতে কৃষ্ণচূড়ার সেকি তোড়জোড়!!!আকাশের ক্যানভাসে দিগন্তে যেন আগুন জ্বলছে।বনে বনে কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙ মনে জ্বালিয়ে দিচ্ছে বিদ্রোহের আগুন।বিপ্লবের আগুন,,প্রেমের আগুন।কেবল আনন্দ অনুভূতির সঙ্গেই নয়,,,বসন্ত কখন যেন জড়িয়ে গেছে চেতনার অনুষঙ্গে।বসন্তের আগমনে প্রকৃতি ফিরে পেয়েছে তার নিজস্ব রঙ।নতুন জিবনের নতুন শুরু।পাখিরাও যেন নতুন জিবন পেয়েছে।এই গাছ থেকে ওই গাছে উড়ে বেড়ানোর মাধ্যমেই তারা তাদের সজিবতা প্রকাশ করতে ব্যস্ত।নতুন সূর্যের আলোই পৃথিবী সেজেছে নতুন করে।প্রকৃকির সাথে সাথে আজ আমিও সেজেছি বধু বেশে।আজ আমি জিবনের শেষ সময়ে এসে দাড়িয়েছি।আমার জিবনের যে পাতা গুলো ঝরে পড়েছে সেগুলো নতুন করে গজাবার সুযোগ নেই।কিছু গান আছে যেগুলো আমার ভিষন প্রিয় কিন্তু আমি গাইতে পারি না।কিছু স্বপ্ন আছে যেগুলো আমার খুব পছন্দের কিন্তু সেগুলো আমার ঠিক ঠাক মনেও থাকে না।আই উইশ…ফেরি টেলস এ পড়া কাহিনির প্রিন্সেসের মত হতে পারতাম!!আমি এমন স্বপ্ন দেখতে চাই না যেটা মাঝ পথেই ভেঙে যাই।আমার খুব কাছেই আমার প্রিন্স চার্মিং দাড়িয়ে আছে,,অথচ যখনই আমি তার কাছাকাছি যাবো,, তাকে একটু ছুঁয়ে দিতে হাত বাড়াবো ঠিক সেই মূহুর্তে ঘুমটা ভেঙে যাবে,,,এমন স্বপ্ন আমি একদমই দেখতে চাই না।”
আর কিছু লেখার সময় হয়ে উঠল না রিয়ার।বরযাত্রী এসে গেছে।রিয়া ডায়রিটা বন্ধ করে বারান্দার দিকে পা বাড়ালো।বরযাত্রীর গাড়িগুলো গেইট পার করে ভেতরে ঢুকছে।রিয়ার নজর বড় গেইটটা পেরিয়ে পিচঢালা রাস্তায়।মানুষটা কি আসবে না? একটা বার বুকে জড়িয়ে নেবে না?সবকিছুই ধোয়াশার মত মনে হচ্ছে রিয়ার।হুয়াই লাভ ইজ সো হার্ড?এক মিনিট দু’মিনিট করে পেরিয়ে গেল টানা দশটা মিনিট।তবুও অপেক্ষার প্রহর ফুরালো না।রিয়া ভেজা চোখ মুছে বারান্দা ত্যাগ করল।বিছানায় বসে ফোনটা হাতে নিয়ে জয়কে ফোন করতে গিয়েও থেমে গেল।সে আর ফোন দেবে না।ভাল যখন সে একাই বেসেছে তখন তার মাসুলও তাকে একাই দিতে হবে।রিয়া মোবাইলটা ছুঁড়ে ফেলে ফুঁপিয়ে উঠল।সব কিছু থেকেও কেন এত শূন্যতা তার? কেন চারপাশে এতো নেই নেই আহাজার?কেন তার জিবনটা ফেরি টেলস এর মত না?জিবনটা যদি ফেরি টেলস এর মত সুন্দর নাই হবে তাহলে কেন ছোট থেকে সেই কাহিনি গুলো শুনানো হত তাকে?কেন বলা হত ঘোড়ায় চেপে রাজকুমার আসবে তাকে নিতে?রিয়া চোখ বুজে শ্বাস নিল।দম নিতে কষ্ট হচ্ছে। নিশ্বাসটা কি তবে এখনই আটকে যাবে? এমনটা হলেই হয়ত ভালো হবে।এই নেই নেই শূন্যতা থেকে তো অনন্ত রেহায় পাবে।
কেটে গেল আরো একটা ঘন্টা।জয় আসল না।তারই ভুল।সেই ভুল সময়ে ভালবেসেছে।জয় তো বারবার তাকে বলেছে,,, তার প্রতি জয়ের কোনো অনুভূতি নেই।তাহলে কি দরকার ছিল ওই নিষ্ঠুর মানুষটাকে এতো ভালবাসার? কিশোরি মনের ছোট্ট বুকটাতে এতো কষ্ট জমানোর?বন্ধ দরজায় ধাক্কা পড়ছে।ওপাশ থেকে কেউ একজন বিরামহীন ডেকে চলেছে তার নাম ধরে।রিয়ার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।জয়কে দেওয়া সময়ের শেষ দু মিনিট বাকি। রিয়ার মনে কোথাও একটা সুপ্ত আশা এখনো আছে।জয় আসবে।তাকে নিতে অবশ্যই আসবে।রিয়া বেলকোনিতে পা বাড়ালো।বড় গেইটটার দিকে তাকিয়ে রইল চাতক পাখির মত।জয় নেই।হয়ত আসবেও না।রাজকন্যার স্বপ্ন বুঝি এভাবেই শেষ হয়ে যাবে?জয়কে দেওয়া সময়ের কাটা শেষ মিনিটে পৌছাতেই চোখ বুজে শ্বাস নিলো রিয়া।জয়ের মুখটা শেষ বারের মত মনে করার চেষ্টা করে শূন্যে ভাসল।ফেরি টেলস এর পরিদের মত তার ডানা থাকলে হয়ত সে শূন্যে ভেসে থাকত।কিন্তু আফসোস!!!তার মত দুঃখি পরির কোনো ডানা নেই।মুহূর্তেই দো’তলা থেকে আঁচড়ে পড়ল মাটিতে।মুখ থেকে বেরিয়ে এলো তাজা রক্তের ধারা।মাথা ফেটে চৌচির হয়ত।ঝাপসা চোখে অস্পষ্ট কাউকে দৌড়ে আসতে দেখা গেল।মানুষটাকে চেনা গেল না।কারো অার্তনাদ কানে এলো। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে সেটাও আর শোনা গেল না।রিয়ার চোখ জোড়া বন্ধ হওয়ার সাথে সাথেই রিয়ার নিথর দেহের পাশে হাটু গেড়ে বসে পড়ল জয়।রিয়ার রক্তাক্ত মাথাটা কোলের উপর তুলে নিয়ে ডাকতে লাগল একের পর এক।
-রিয়া..?এই রিয়া??উঠো না।দেখো আমি এসে গেছি।তোমাকে নিতে এসেছি রিয়া।এই পিচ্চি,,,, তাকাও একবার।আমাকে আবার একা করে তুমি চলে যেতে পারো না।এবার যে আমি মরেই যাবো।কথা বলো আমার সাথে।আমি দেরি করেছি বলে রাগ করেছো না? আচ্চা বাবা,আই এম সরি।আমাকে মারো।বকো।আমি কিচ্ছু বলবো না।তারপরেও তাকাও প্লিজ। কথা বলো আমার সাথে।এই পিচ্চি…!!!তুমি আমার কথা না শুনে যেতে পারো না।আই লাভ ইউ।আই লাভ ইউ রিয়া।এবার তো উঠে যাও।আর কি চাও ইয়ার? দেখো তুমি যেটা শুনতে চাইছিলে সেটা আমি বলেছি।এরপরেও কেন কথা বলছো না।উঠো না পিচ্চি।প্লিজ কথা বলো।
ততোক্ষনে ওদেরকে ঘিরে ভীড় জমে গেছে।অধির,রোশনি,সাহিল,আদি, নাতাশা, পিয়া সবাই এসে দাড়িয়েছে।রিয়ার রক্তাক্ত শরির আর জয়ের আর্তনাদে তারা স্তব্ধ। মূহুর্তেই চোখ ভিজে গেল সবার।নাতাশা চিৎকার করে বলে উঠল,
-ওকে হসপিটালে নিতে হবে।তাড়াতাড়ি করো সাহিল।দেরি হওয়ার আগে মেয়েটাকে বাঁচাতে হবে।
নাতাশার কথায় হুশ এলো ওদের।ওরা এতোটাই শকড যে,,হসপিটালে নেওয়ার কথাটাও বেমালুম ভুলে গেছে।সাহিল আর আদি রিয়াকে ধরতে নিলেই জয় দুহাতে আকড়ে ধরে রিয়ার শান্ত দেহটাকে।সাহিল,আদি দ্বিতীয় বারের মত রিয়াকে ধরতে গেলে একই কাজ করে জয়। অধির শান্ত পায়ে এগিয়ে এসে জয়ের কাঁধে হাত রাখে।ছলছল চোখে চেয়ে নরম গলায় বলে,
-ওকে হসপিটালে নিতে হবে জয়।পিচ্চিটাকে বাঁচাতে হবে।
জয় করুন চোখে চাইলো। কেন তার কপালেও এত কষ্ট? কেন এত যন্ত্রনা? এই তীব্র হাহাকার যে সহ্য করার মত না।একদমই না।
——
হাসপাতালের করিডোরে অপেক্ষায় বসে থাকা ক্লান্ত মানুষের তপ্ত নিশ্বাসের শব্দ। একেকটা দির্ঘশ্বাসে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে বাতাস।হাসপাতালের দেওয়াল ঘেষে পেতে রাখা চেয়ারটাতে বসে আছে রোশনি।কিছুটা দূরেই পিলারে হেলান দিয়ে হাত ভাজ করে দাড়িয়ে আছে অধির।আজ প্রায় দুইটা মাস ঠিক ঠাক মত কথাও হয় না দুজনের।এক ঘরে থেকেও মাপহীন দুরত্ব।আগের মত বুকে টেনে নেওয়ার জোরটাও কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।এখন আর অধিরের আদুরে ডাকে ঘুম ভাঙে না তার।অধিরের গরম নিশ্বাস চোখে মুখে আচড়ে পড়ে না।তাকে লজ্জায় রাঙাতে সেই অসভ্য কথাগুলোও হারিয়ে গেছে দির্ঘশ্বাসের আড়ালে।সেই ঘটনার পর প্রায় পাঁচ মাস কেটে গেছে।দিয়া আর দেমির আবারো পাড়ি জমিয়েছে তাদের আগের ঠিকানায়।দিয়ার প্রেগনেন্সির পাঁচ মাস পার হয়েছে।সবই আগের মত রয়েছে।শুধু বদলেছে তার সাথে অধিরের সম্পর্ক।দোষটা তো তারই ছিল।ভালবাসাতে বিশ্বাস লাগে সেটাই বুঝতে পারে নি সে। রোশনি ছোট্ট শ্বাস টেনে চোখ বুজলো।চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে মেলাতে লাগল পাওয়া না পাওয়ার হিসাব।সেদিন তৃতীয় আঘাতের আগেই জ্ঞান হারায় দিয়া।যখন জ্ঞান ফিরল তখন সবটা শুনে স্তব্ধ হয়ে বসেছিল সে।দেমিরের এই রুপটা তার অজানা।দেমির নিজেও জানত না রোশনি দিয়ার বোন।দিয়া ভিষন চাপা স্বভাবের মেয়ে।রোশরির বিষয়টা দেমিরকেও জানায় নি সে।দেমির যদি জানতো রোশনি দিয়ার বোন তাহলে কখনোই রোশনিকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতো না।আর যাইহোক দিয়ার চোখে পানি ঝরবে এমন কোনো কাজই সে করতে চাই না।দেমির অধিরের কাছে ক্ষমা চাইলে অধিরও আর কথা বাড়ায় না।ক্ষমা করে দেয় দেমিরকে।এরপর একমাস পরেই ওরা আগের ঠিকানায় চলে যায়।এরপর আরো একটা মাস কাটে।একদিন হঠাৎ করেই দিদাম আসে।বাড়িতে তখন রোশনি একাই ছিল।দিদাম সেদিন একটা ভিডিও ক্লিপ দেখিয়েছিল রোশনিকে।ভিডিও ফুটেজে অধিরের মুখ স্পষ্ট।কালো পোশাকে গান হাতে শক্ত চোখে চেয়ে আছে।কাউকে একটা দাতে দাত চেপে বলছে,
-ওকে আমি ছাড়বো না।আমার আর রোশনির মাঝখানে যে আসবে তাকেই আমি শেষ করে দেবো।সে যেই হোক না কেন।
অধিরের কথার মাঝেই কেউ একজন প্রশ্ন করল অধিরকে।তবে লোকটার মুখ দেখা যাচ্ছে না।কন্ঠটাও পরিচিত নয় রোশনির কাছে।
-তাহলে কি ওকে মেরে ফেলবো স্যার?
-উঁহু….ওকে আমি নিজে হাতে মারবো।এখানে যখন এসেই গেছি তখন কিছু না করে তো যাবো না।গাড়ি রেডি করো।আমি এখুনি যেতে চাই।
ভিডিওটা শেষ হতেই ভ্রু কুচকে তাকালো রোশনি।শিড়দাড়া সোজা করে বসে প্রশ্ন করল,
-কি ছিল এটা? আর এসব আমাকে দেখানোর মানে কি?
-উফফ রোশনি!!!তুমি ভিষন বোকা।অধির কাউকে খুন করতে চাইছে বুঝতে পারছো না?
রোশনির ভ্রু জোড়া আবারো কুচকে গেল,
-সেটা আমিও শুনেছি দিদাম।কেউ হয়ত আমাদের দুজনের মাঝে আসতে চাইছে সেজন্যই তাকে মারার কথা বলছে।
-এক্সজেক্টলি,,,,।জানতে চাইবে না সে কে?
-আপাততো চাইছি না।এমনিতেও তোমার অনেক বাজে কথা শুনে নিয়েছি।এবার তুমি আসতে পারো।
-চলে তো অবশ্যই যাবো।থাকতে তো আসি নি।তবে আমার মনে হয় অধির কাকে মারতে চাইছে তার নামটা তোমার জানা উচিত।আফটার অল সে তোমার দূরের কেউ তো আর নয়।
রোশনি ভ্রু কুচকে তাকায়।বলে,
-কি বলতে চাইছো?
-এটাই বলতে চাইছি যে,,,, অধির যাকে মারার কথা বলছে সে আর কেউ নয়,,তোমার ভাই আয়াশ।
রোশনি এবার বিরক্ত হয়ে উঠে দাড়ালো।ভদ্রতা দেখিয়ে এই মেয়েকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়াটাই ভুল হয়েছে তার।দূর দূর করে তাড়িয়ে দেওয়াটাই ভাল ছিল।রোশনি তেজ দেখিয়ে বলল,
-কি যা তা বলছো? তোমার এসব ফালতু কথা শোনার টাইম আমার নেই।আমার রান্না বসাতে হবে। অধিরের আসার সময় হয়ে গেছে। তুমি চলে যাও এখান থেকে।
দিদাম সোফা ছেড়ে উঠে দাড়াতে দাড়াতে বলল,
-অধির দুপুরে আসবে না রোশনি।ওর আসতে আজ লেইট হবে।হতে পারে ভোর রাতে ফিরবে।
রোশনির মেজাজ খারাপ হচ্ছে।এই মেয়েকে ঠাটিয়ে দুটো চড় দিতে মন চাইছে।রোশনি বিরক্ত গলায় আবারো বলে উঠল,
-দেরি করে আসবে মানে?দেখো,,,তোমার অর্ধেক কথা আমি বুঝি না আর বাকি অর্ধেক কথা আমি বুঝতে চাই না।দয়া করে তুমি এখান থেকে চলে যাও।
-ঠিক আছে চলে যাচ্ছি।আমার কথা বিশ্বাস না হলে অায়াশের কথা জিজ্ঞাসা করো অধিরের কাছে।আয়াশের সাথে কথা বলাতে বলাও।আমি জানি ওর সাথে তোমার বেশ কিছুদিন কথা হয় নি।
রোশনি ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করল,
-তুমি কি করে জানলে আয়াশের সাথে কিছুদিন যাবৎ আমার কথা হয় নি?
দিদাম শব্দহীন হেসে বলল,
-আমি আরো অনেক কিছুই জানি যেটা তুমি জানো না।অধির তোমায় নিশ্চয় বলেছে আয়াশকে সে বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়েছে? সব মিথ্যে রোশনি।আয়াশকে কোনো বোর্ডিং স্কুলে পাঠানো হয় নি।অধির তোমাকে মিথ্যে বলেছে।আমি মানছি যে অধির তোমাকে ভিষন ভালবাসে।তোমাদের মাঝে ও কাউকে সহ্য করতে পারে না। তোমার আর ওর মাঝে যে আসবে তাকে সরাতে অধির দ্বিতীয় বার ভাববে না।এন্ড আনফরচুনেন্টলি আয়াশ তোমার আর অধিরের মাঝে চলে এসেছে।অধিরের মনে হয় তুমি ওর থেকেও আয়াশকে নিয়ে বেশি কনসিয়াস।ওর থেকেও বেশি আয়াশকে ভালবাসো।সেজন্যেই বোর্ডিং স্কুলের নাম করে আয়াশকে ও খুন করে ফেলেছে।
রোশনি সন্দিহান চোখে তাকায়।এই মেয়ে যা বলছে সব মিথ্যে।অধির এমনটা কখনোই করতে পারে না।তার মত অধিরও আয়াশকে ভিষন ভালবাসে।এর সব কথা বানোয়াট।
-তোমার মাথা ঠিক আছে? কি সব যা তা বলছো তখন থেকে?
-আমার মাথা তো ঠিক আছে কিন্তু অধিরের মাথা ঠিক নেই।ও একটা সাইকো।আর সাইকোরা সব করতে পারে।আমার কথা বিশ্বাস না হলে অধিরকে প্রশ্ন করো।আয়াশের সাথে কথা বলতে চাও।আমি ড্যাম সিউর,,,,অধির কখনোই আয়াশের সাথে কথা বলাতে পারবে না।
–
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা।তবুও অধিরের ঘরে ফেরার নাম নেই।সারা দিনে একটা বার ফোনও দেয় নি।বেশ কিছুদিন ধরেই অধিরের বিহেভ অন্যরকম লেগেছে রোশনির কাছে।অফিসে কাজের প্রেশার বেশি মনে করে অতোটা পাত্তা দেয় নি রোশনি।কিন্তু সকালে দিদামের বলা কথাগুলো শোনার পর অধিরের পাল্টে যাওয়া রুপটাই বার বার ভেসে উঠছে সামনে।ক’দিন ধরে আয়াশের কথা জিজ্ঞাসা করলেই কোনো না কোনো ভাবে এড়িয়ে গেছে অধির।আয়াশের স্কুলের নাম্বার চেয়েও পায় নি রোশনি।দেশে থাকলে হয়ত নিজেই খোঁজ নিতে পারত কিন্তু সুদূর প্যারিসের খবর সে কিভাবে নেবে।দিদামের কথা গুলো কিছুতেই মাথা থেকে সরানো যাচ্ছে না।রোশনি বুক ভরে শ্বাস নিয়ে অধিরের নাম্বারে আবার ডায়াল করল।বরাবরের মতোই বন্ধ দেখাচ্ছে।রোশনি ফোন রেখে বালিশে হেলান দিয়ে বসল।দিদামের কথাটাই কি তবে ঠিক!!অধির বাড়ি ফিরতে এতো রাত কখনোই করে না।সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসে।দুপুরেও একবার আসে।অথচ বারোটা বাজতে চলল অধিরের ফেরার নাম নেই।না চাইতেও খারাপ চিন্তা এসে জমা হচ্ছে মষ্তিষ্ক জুড়ে।রোশনি ছোট্ট শ্বাস টেনে জানালার পাশে গিয়ে দাড়ালো।গ্রীলের ভাজে হাত রেখে বাজে চিন্তা গুলোকে দূর করতে চাইল।সচেতন মষ্তিষ্ককে বোঝাতে লাগল অধিরের হয়ত জরুরী কোনো কাজ পড়ে গেছে।কাজের প্রেশারে হয়ত ফোন দেওয়ার সময় পায় নি।হতে পারে ফোনে চার্জ নেই।এমন নানা রকম যুক্তি দেখিয়ে কিছুটা শান্ত হল মন।তবে চিন্তা হচ্ছে অধির ঠিক আছে কি না।কোনো বিপদ হয় নি তো?
অধির যখন ঘরে ফিরল তখন রাত তিনটে বাজে।অধির রুমে ঢুকে দেখল রোশনি বালিশে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে আছে।অধির শব্দ না করে হাতের কোর্টটাকে সোফার উপর ছুড়ে ফেলে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।পনেরো মিনিটের মাথায় শাওয়ার ছেড়ে বেরোতেই দেখে রোশনি জেগে গেছে।অধির কিছুই বলল না।ভেজা চুলগুলো মুছে নিয়ে ভেজা টাওয়েলটা বারান্দায় মেলে দিয়ে আসল।অধিরের মুখ গম্ভীর।কোনো কারনে হয়ত চিন্তিত।রোশনি কথা না বাড়িয়ে খাবার নিয়ে এল রুমে।অধির কোনো কথা ছাড়ায় খেতে শুরু করল।একটা বার রোশনি খেয়েছে কিনা সেটাও জানতে চাইল না।রোশনি গোপনে দির্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসল।দুপুরের পর থেকে একমুঠো ভাতও পেটে পড়ে নি তার।অধিরের খাবার শেষ হতেই রোশনি প্লেট বাটি গুলো রান্নাঘরে রেখে আসল।অধির ততোক্ষনে বিছানায় গা এলিয়েছে।রোশনি ছোট্ট শ্বাস টেনে লাইট অফ করে অধিরের পাশে শুয়ে পড়ল।অধির এক হাত মাথার নিচে আর এক হাত কপালের উপর আড়াআড়ি ভাবে রেখে শুয়ে আছে।অন্য দিনের মত রোশনিকে বুকে টেনে নিচ্ছে না আজ।কয়েক মিনিট পার হওয়ার পরেও যখন অধিরের সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না তখন মুখ খুল রোশনি।নিচু গলায় বলল,
-আপনি ঠিক আছেন অধির?কিছু কি হয়েছে?
অধির ওভাবে শুয়ে থেকেই জবাব দিল,
-সকালে কথা বলি?
-হুম।
রোশনি আর কথা বাড়ালো না।পাশ ফিরে শুতেই চোখের কোনা বেয়ে একফোটা গরম পানি গড়িয়ে পড়ল।অধিরের এমন ব্যবহার তার সহ্য হচ্ছে না।একদমই সহ্য হচ্ছে না।
–
পরের দিন সকালেও অধিরের সাথে তেমন কোনো কথা হল না রোশনির।সারা দিনেও ফোন এল না অধিরের।রাতে ফিরলোও দেরি করে।এভাবেই কাটলো দু’টো দিন।তিন দিনের মাথায় রোশনি যখন আয়াশের কথা জানতে চাইল তখন খুব সাবধানে এড়িয়ে গেল অধির।পরের দিন রোশনি যখন আয়াশের সাথে কথা বলতে চাইল তখন এটা ওটা বলে অজুহাত দেখাল অধির।রোশনি যখন জিদ দেখালো সে কথা বলবেই তখন হঠাৎই রেগে গেল অধির।রোশনি বেশ অবাক হয়েছিল অধিরের ব্যবহারে।এরপর কেটে যায় আরো কিছু দিন।অধিরের ব্যবহার একই রকম আছে।একদিকে অধিরের এমন ব্যবহার,,আরেক দিকে আয়াশের সাথে যোগাযোগ করতে না পারার টেনশন,,,,অন্য দিকে দিদামের বলা কথাগুলো।সব কিছুর চাপে রোশনির অবস্থা পাগল প্রায়।কয় দিন ধরে ঠিক মত খাওয়া হয় নি সেটাও মনে নেই রোশনির।রাতের বেশি সময়ও কাটে নির্ঘুম।একদিন আবারো দিদামের ফোন এল।জানালো অধির নাকি আয়াশকে মেরে ফেলেছে।কথাটা প্রথমে বিশ্বাস না হলেও পরে মনে হয়েছে হয়ত দিদামের কথাটা ঠিক।এমনটা যদি নাই হবে তাহলে অধির কেন আয়াশের সাথে কথা বলাচ্ছে না? কেন ওর কথা তুললেই রেগে যাচ্ছে?মাথা ভর্তি প্রশ্নগলোতে বিষিয়ে উঠল মন।তৈরি হল অধিরের প্রতি ক্ষোভ।যেই মানুষটা তাকে বিয়ে করার জন্যে আয়াশকে কিডন্যাপ করে আটকে রাখতে পারে তার পক্ষে আয়াশকে মেরে ফেলা খুব একটা কঠিন কিছু নয়।কিছুদিন আগে আয়াশ এখানে এসে বেশ কিছুদিন ছিল।তখন অধিরকে খুব একটা সময়ও দিকে পারে নি রোশনি।এমনকি রাতেও আয়াশ থাকত ওদের মাঝে।হয়ত এসব কারনেই অধির তাকে…!!রোশনি আর ভাবতে পারছে না।মাথাটা ফেটে যাচ্ছে তীব্র যন্ত্রনায়। রাতে যখন অধির বাড়ি ফিরল তখন রোশনি আয়াশের কথা তুলতেই রেগে গেল অধির।রোশনির মনটাও বিষাক্ত হয়ে উঠল অধিরের প্রতি।বরাবরই আয়াশ তার দূর্বলতা।রোশনি যখন কাদতে কাদতে রান্না ঘরে এসে দাড়ালো তখনই দিদামের ফোন এল।রোশনি চোখের পানি মুছে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে দিদাম বলে উঠল,
-এখন বিশ্বাস হয়েছে তো আমার কথা? আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম।ওই লোকটা একটা সাইকো।
রোশনি ফুঁপিয়ে উঠল।বলল,
-অধির এটা কিভাবে করতে পারে?আমার ভাইটাকে মেরে দিল!!!আমি ওকে কখনো ক্ষমা করবো না।কখনো না।
-ক্ষমা করা উচিতও নয় রোশনি।ভাল হয়েছে ওমন একটা সাইকোর হাত থেকে আমি বেঁচে গিয়েছি।আজ তোমার ভাইকে মেরেছে,, কাল তোমার বোনকে মারবে না তার কি গ্যারান্টি আছে!!!
-না এটা হতে পারে না।অধির এমনটা করতে পারে না।
-এমনটাই হবে রোশনি।এখন কেবল তুমিই তোমার বোনকে বাঁচাতে পারো।আয়াশের খুনের প্রতিশোধ নিতে পারো।
-আমি!!!আমি কিভাবে?
-অধিরকে মেরে দাও।
-না।এটা আমি করতে পারবো না।কিছুতেই না।
-ঠিক আছে। মেরো না।কাল যখন দিয়াকে মারবে তখন সহ্য করতে পারবে তো তুমি?
-চুপ করো।এমন কিছুই হবে না।আমার বোনের কিচ্ছু হতে দেবো না আমি।আমি থাকতে আমার বোনের কোনো ক্ষতি আমি হতে দেবো না।বুঝেছো তুমি..!
পরের দিন সকালে দিদামের পাঠানো পয়জন অধিরের কফিতে মিশিয়ে রুমের দিকে হাটা দিল রোশনি।কিছুতেই সে দিয়ার ক্ষতি হতে দেবে না।আদরের ছোট ভাইটার মৃত্যুর প্রতিশোধ সে নেবেই।কোনো খুনির প্রতি তার কোনো মায়া, ভালবাসা থাকতে পারে না।রোশনি চোখ মুছে রুমে ঢুকলো।অধির তখন ল্যাপটপে কিছু করছিল।রোশনির হাত পা কাপছে।অধিরের নিষ্পাপ মুখটা দেখে সব কিছু ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে।এক মুহূর্তের জন্যেও ভাবতে কষ্ট হচ্ছে এই মানুষটা তার ভাইটাকে মেরে ফেলেছে।কিন্তু ওই ভিডিওটা…!!!না তাকে শক্ত থাকতে হবে।রোশনি অধিরের দিকে কফির মগ এগিয়ে দিতেই অধির খেয়াল করল রোশনির হাত কাঁপছে।অধির ভ্রু কুচকে তাকায়।কফির মগটা হাতে নিয়ে প্রশ্ন করে,
-ঠিক আছো?
রোশনি ছোট্ট করে জবাব দেয়,
-হু…..
অধির কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে কফির মগে চুমুক দিতে গেলেই রোশনি দ্রুত ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় কফির মগ।সাথে সাথে কফি সহ মগ আচড়ে পড়ে মেঝেতে।অধির ভ্রু কুচকে তাকায়।রোশনির শরির থরথর করে কাঁপছে।কি করতে যাচ্ছিলো সে? কেউ একজনের কথায় অধিরকে মারতে যাচ্ছিলো সে?যেই মানুষটা তাকে পাগলের মত ভালবাসে তাকে মারতে যাচ্ছিলো?কিভাবে পারল সে এমনটা করতে? দিদামের কথাগুলো যে পুরোপুরি সত্য তার তো কোনো প্রমান নেই।সামান্য কিছু কথার প্রেক্ষিতে এতো বড় পাপ সে করতে যাচ্ছিলো?রোশনিকে কাঁপতে দেখে অধির কিছু বলবে তার আগেই নজর গেল মেঝেতে।টাইলস এর উপর পড়ে থাকা কফিতে বেশ কয়েকটা মাছি মরে পড়ে থাকতে দেখে কপাল কুচকে যায় অধিরের।পরমুহূর্তেই ব্যাপারটা বুঝতে পেরে স্তব্ধ হয়ে যায় অধির।নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না তার।এমনটাও কি সম্ভব? অধির হতাশ চোখে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,
-রোশনি….!!!এটা….!!!
রোশনি হাটু ভেঙে বসে পড়ে মেঝেতে।ডুঁকড়ে কেঁদে উঠে বলে,
-আর কি করতাম আমি?আপনি আমার ভাইটাকে মেরে ফেলেছেন। কি দোষ ছিল ওর? কেন করলেন এমনটা? কেন মেরে ফেললেন ওকে অধির? কেন?
অধির কিছু বলার মত শব্দ খুজে পেল না।নিষ্পলক চেয়ে থেকে হতাশ গলায় বলল,
-কেন করলে এমনটা সুইটহার্ট? কেন?আমার ভালবাসাকে গলা টিপে মেরে ফেললে? ইউ ব্রোক মাই হার্ট সুইটহার্ট। ইউ ট্রোটালি ব্রোক মাই হার্ট।
কথাটা শেষ করতেই গলা ধরে এল অধিরের।ডান হাতের আঙুল দিয়ে চোখের নিচে গড়িয়ে পড়া পানিটুকু মুছে নিয়ে নিঃশব্দে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ।এর পরের দিন আয়াশকে নিয়ে রোশনির সামনে দাড়ায় অধির।ছোট করে শুধু বলে,
-আয়াশকে কেউ কিডন্যাপ করেছিল।কিছুদিন ধরে ওকেই পাগলের মত খুজে বেড়াচ্ছিলাম।চেয়েও কথাটা বলতে পারি নি তোমায়।যাতে তুমি টেনশনে না পড়ো।এসবের পেছনে দিদাম ছিল।পুলিশ ওকে ধরে নিয়েছে।চাইলে পড়াশোনার জন্যে ওকে প্যারিসে পাঠাতে পারো।ওখানে আমার চেনা পরিচিত লোক আছে।আশা করি আয়াশের কোনো প্রবলেম হবে না।বাকিটা তোমার সিদ্ধান্ত।
এরপর আয়াশকে প্যারিসে পাঠানো হয়।তারপর থেকে অধিরের সাথে সম্পর্কটা আর আগের মত নেই রোশনির।না থাকাটাই স্বাভাবিক।রোশনি না বুঝে যে ভুলটা করেছে তার কোনো ক্ষমা হয় না।রোশনির নিজের প্রতিই ঘৃনা লাগে তার কাজের জন্যে।দুজনে এক ঘরে থাকলেও কথা হত না। রোশনি প্রথম ক’দিন অপরাধবোধে অধিরের সামনে গিয়ে দাড়ানোর সাহস পায় নি।এরপর চেয়েও অধিরের সাথে কথা বলতে পারে নি সে।বারবারই এড়িয়ে গেছে অধির।এরই মধ্যে রিয়া একদিন হুট করে বলে বসল সে বিয়ে করতে চাই।সেটাও দুদিনের মধ্যে।প্রথমে সবাই এটাকে রিয়ার ছেলেমানুষি মনে করলেও যখন দেখল রিয়া খাওয়া দাওয়া ছেড়ে সারা দিন ঘরবন্ধি হয়ে পড়ে থাকছে তখনই টনক নড়ে সবার।বরাবরই ভিষন জেদি রিয়া।বাড়ির সবচেয়ে ছোট সন্তান হওয়ার সুবাদে তার ভাগে আদরটাও ছিল বেশি।তিন ভাইয়ের আদরে জিদটাও বেড়েছে লাগাম ছাড়া।কোনো উপায় না পেয়ে এক প্রকার বাধ্য হয়েই তিন দিনের মাথায় বিয়ের আয়োজন করা হয়।আর বিয়ের দিনই যে এমনটা একটা ঘটনা ঘটবে সেটা কেউ কল্পনাতেও ভাবে নি।হঠাৎ কারো চিৎকারে ভাবনার সুতো কাটল রোশনির।সচেতন চোখে তাকাতেই দেখল ওটির দরজায় ক্রমাগত ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে জয়।জয়ের পাগলামোর কারনে তাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল।এরই মধ্যে ঔষুধের রিয়্যাকশন কেটে গেল ছেলেটার? সাহিল,পিয়া কেউই জয়কে থামাতে পারছে না।রোশনি দ্রুত ছুটে গেল ওদের দিকে।জয়ের পিঠে হাত রেখে নরম গলায় ডাকতেই দুহাতে জড়িয়ে ধরল জয়।ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলল,
-আমার সাথেই কেন এমন হয় রোশনি? কি দোষ করেছি আমি? আমার রিয়াকে চাই রোশনি।প্লিজ ওকে ফিরিয়ে দাও।ওর কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচতে পারবো না।ওই পিচ্চিটাকে আমার চাই রোশনি।ওকে আমার চাই।
জয়কে শান্তনা দেওয়ার মত কোনো শব্দ খুজে পেল না রোশনি।তবে রিয়া আর জয়ের বিষয়টা এখনও তার কাছে পরিষ্কার নয়।রোশনির মত বাকি সবাইও এই বিষয়ে অজ্ঞাত।মনের মধ্যে অসংখ্য প্রশ্ন থাকলেও এই মুহূর্তে সবাই চুপ করেই আছে।সবার এখন একটাই প্রার্থনা মেয়েটা যেন ঠিক থাকে।রোশনি জয়ের পিঠে হাত রেখে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখল অধির অনুভূতিহীন চোখে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।দুজনের চোখাচোখি হতেই দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল অধির।রোশনি খুব সাবধানে দির্ঘশ্বাস ফেলল।জিবন তাকে এ কোন মোড়ে এনে ফেলেছে!!!!
চলবে…..