#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ৪
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই পায়ে ভেজা কিছুর স্পর্শ পেয়ে আতকে উঠে প্রহর।তাকাতেই দেখে একটা ছোট্ট বিড়াল ছানা ঘাপটি মেরে বসে আছে ওর পায়ের কাছে।সামনেই দাড়ানো আজরাহান।বিড়ালটিকে কোলে তুলে নেয়।মাথায় হাত বুলাতে থাকে।
“কিরে কুম্ভকর্নের মতো ঘুমাচ্ছিস,,কলেজে যাবি না??
প্রহর একটা হামি তুলে বলে–
“যাবো তো।আপনি এতো সকালে কি করে উঠেন??
“তোর মতো রাত জেগে চুরিতো করি না আমি।”
প্রহর ভ্রু কুচকে চোখ ছোট করে বলে–
“কি চুরি করি আমি??
আজরাহান ঘাড় টা একটু নিচু করে বলে–
“আমার মন।
যা তাড়াতাড়ি রেডি হ।দেরি করলে কিন্তু একদম রেখে যাবো তোকে।”
“আপনি দিয়ে আসবেন আমাকে??
“আজ থেকে আমিই দিয়ে আসবো তোকে।”
“সত্যি???
“নাহ।মিথ্যা।যাবি নাকি এক চড় মারব??
“যাচ্ছি,যাচ্ছি।
শরীরের উপর থেকে ব্ল্যাংকেট সরিয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে যায় প্রহর।
নিচে এসে খাবারের টেবিলে বসে আজরাহান।বাকি সবাই উপস্থিত।সামান এক নাগাড়ে গো গ্রাসে গিলছে।তার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।বাবার গড়া ব্যবসা এখন সে সামলায়।আজরাহান এর এইসব এ ইন্টারেস্ট নেই।তার ইচ্ছে নিজে কিছু করা।আজরাহান এর বিপরীত পাশেই সানোয়ার আহমেদ বসা।গত কয়েকদিনে যা হয়েছে তাতে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।আজরাহান এর উপর তার পুরো ভরসা আছে।
সানায়া সোফায় বসে তার ছেলে কে খাওয়াচ্ছে।
সিড়ি দিয়ে নেমে আসছে প্রহর।পরনে তার কলেজ ড্রেস।কুহেলিকা রাগ আর ধরে না।
“কিরে কোথায় যাচ্ছিস??
“ছোট মা,,
আজরাহান উঠে দাড়ায়।
“ও কলেজে যাবে।”
“কলেজে যাবে মানে??
“ওর সামনে পরীক্ষা।কলেজে তো যেতেই হবে।”
সানায়া নিজের ছেলেকে বসিয়ে উঠে আসে।
“ও নবাবরানী তাহলে এখন জজ,ব্যারিস্টার হবে।”
“আপু,,আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি প্রহর কে একটাও বাজে কথা বলবে না।”
“কেনো বলবো না শুনি।এতো কিসের পড়ালেখা তার?
দরকার কি?সে কি চাকরি করবে না কি??
“প্রহর ওর স্বপ্ন পূরন করবে।
তাতে তোমার কি সমস্যা??বাবা তো তোমাকেও পড়াতে চেয়েছে,তুমি তো তা করলে না।ইন্টার পাস করেই তারাফ ভাইয়ার মাথাটা চিবিয়ে খেলে।বাধ্য হয়ে বেচারা কে তোমায় গলায় বাধতে হলো।”
সানায়া এবার কাদতে শুরু করে।
“দেখলে মা দেখলে তোমার ছেলে আমাকে কি বলল??
সানোয়ার আহমেদ শক্ত গলায় বললেন–
“আজরাহান,সানায়া তোমার বড় বোন।ওকে তুমি এভাবে বলতে পারো না।”
“সরি বাবা।”
কুহেলিকা বেগম স্বামীর কাছে গিয়ে দাড়ান।
“ও যে লেখাপড়া করবে তার খরচ দিবে কে শুনি??
“কেনো,,এতোদিন যে দিয়েছে।বাবা দিবে।
সানোয়ার আজরাহান এর দিকে তাকিয়ে বলে–
“নাহ।এতোদিন প্রহর এই বাড়ির মেয়ে ছিলো তাই তার যাবতীয় খরচ আমি বহন করেছি।কিন্তু এখন সে এ বাড়ির বউ তাই তার সমস্ত খরচ তার স্বামী হিসেবে তোমাকেই বহন করতে হবে।”
“কিন্তু বাবা,,
“তুমি যদি তাকে পড়াতে চাও তাহলে সে ব্যবস্থা তোমাকেই করতে হবে।”
সানোয়ার আহমেদ চলে যায়।তার এই কথায় কুহেলিকা,সানায়া আর নুরাইসা বেশ খুশি হয়।কারন আজরাহান এখনো বেকার।তার পক্ষে প্রহর সব খরচ চালানো সম্ভব নয়।
বাড়ির বাইরে বাইকে বসে আছে আজরাহান।প্রহর এসে দাড়ায়।
“এই তুই ঠোঁটে কি দিয়েছিস??
“কই কিছু না তো।”
“ঠাটিয়ে এক চড় মারবো।যেনো উনি বিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন লিপস্টিক মুছ।”
“কেনো,,একটু খানিই তো দিয়েছি।”
“মুছতে বলছি মুছ।আর কখনো এইসব রঙ ঠোঁটে লাগাবি না।”
প্রহর হেসে কুটিকুটি হয়।
“হাসিছ কেনো তুই?
“এগুলো রঙ কে বলল আপনাকে?
“তুই কি কলেজ যাবি,নাকি আমি তোকে রেখেই চলে যাবো।”
প্রহর আজরাহান এর হাত চেপে ধরে।
“না,না রাহান ভাইয়া।আমি এখনি সব ঠিক করছি।”
ব্যাগ থেকে একটা টিস্যু পেপার বের করে তা দিয়ে লিপস্টিক মুছে নেয় প্রহর।
“বস।আর ঠিকভাবে বসবি।পড়ে গেলে কিন্তু আমি জানি না।”
প্রহর সামনের দিকে পা দিয়ে পিছন দিকের হাতল টা ধরে বসে।আজরাহান বাইক চালাতে থাকে।
কিছুক্ষন পর প্রহর হাত উঠিয়ে ধীরে ধীরে আজরাহান এর কোমড়ে পিছন থেকে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে।আর তখনি আজরাহান ব্রেক কষে।
“এই সরে বস।তোকে না বলেছি একদম আমাকে স্পর্শ করবি না।”
“এমন করেন কেনো আপনি?
“ঘুরে বস বলছি।পাঁচ ইঞ্চি দূরত্বে বসবি।একদম আমার গায়ের সাথে লাগবি না।
লজ্জা করে না তোর ছেলেদের সাথে ঘেষাঘেষি করতে?
প্রহর চুপচাপ শুনে।
“উঠে বস।আর একবার আমার সাথে লাগলে এখানেই ফেলে রেখে যাবো।”
প্রহর আবার উঠে বসে।ওর রাহান ভাইয়া আসলেই পাগল।নাহলে নিজের স্ত্রীর সাথে কেউ এমন করে।
বাইক চলছে আপন গতিতে।
“এই তুই সত্যিই মেয়ে তো!!মেয়েরা তো এমন চুপকা চুপকি করে না।”
লম্বা বেনি করার পরও প্রহর এর সামনের কিছু চুল বাতাসে উড়ছে।ও আনমনেই হাসে।ওর রাহান ভাইয়া ওকে যাই ই বলুক।কথা তো বলে,এই ই ওর জন্য ঢের।তার আর কিছু চাই না।
বাইকের সামনে বসায় আজরাহান এর মুখ জুড়ে হাওয়ার বিচরন।মনে মনে বলে,,,তোর স্পর্শ আমার হৃদয়ে যে ঝড় তুলে তা থামানোর শক্তি আমার নেই।তুই তো আমার স্বর্গীয় ফুল,আমার স্পর্শে আমি তোকে অপবিত্র করতে পারবো নারে প্রহরিনী।
কলেজ গেটে ওকে নামিয়ে দেয় আজরাহান।প্রহর কে দেখে দৌড়ে আসে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড নির্ধা।
“কেমন আছেন আজরাহান ভাইয়া??
“ভালো,,তুমি কেমন আছো।”
“ভালো।আজ যে আপনি ওকে কলেজে দিয়ে গেলেন??
“এখন থেকে রোজ আমি ই দিয়ে যাবো।কেনো কোনো সমস্যা??
“না।এই চল ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।”
প্রহর আজরাহান কে বিদায় জানায়।
আজরাহান ওকে আবার ডাকে।ওর কানের কাছে গিয়ে বলে–
“একদম ছেলেদের সাথে ঘেষাঘেষি করবি না।নাহলে একদম মেরে হারগোড় ভেঙে ফেলবো।”
প্রহর ভ্রুক্রুটি করে।
“আর কলেজ শেষে কোথাও যাবিনা।আমি এসে নিয়ে যাবো তোকে।যা এখন।”
“আচ্ছা।”
,
,
,
হাতে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে চেয়ারে বসে শিহরণ।মারশিয়াদ এর কলিজা।
“তুই কি শুরু করলি বলতো,,এই নিয়ে এই মাসে তিনবার অ্যাকসিডেন্ট করলি।সেই মতে বছরে কটা করিস তুই??
মারশিয়াদ ব্যান্ডেজ করা হাতে একটা চুমু খেয়ে বলে–
“যতদিন না আমি আমার কাজলচোখী কে খুজে পাই।”
“তাই বলে রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে মেয়েদের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবি??
“কি করবো বল, আমি তো ওর ওই দুই চোখকেই চিনি।”
“তাই বলে,,,,,
‘ ভালোবাসা সীমাহীন,অন্তহীন বহমান ধারা
ভালোবাসা ছুয়ে দিলে হয়ে যায় তা পরশ পাথরের মায়া।’
“আমি আমার পরশ পাথরকে পেয়েগেছি বন্ধু।আমার কাজলচোখী।যার স্পর্শে আমার জীবন বদলেছে।এখন শুধু তাকে নিজের করে নিবো আমি।আসি রে বন্ধু।”
শিহরন ফোস করে এক শ্বাস ছাড়ে।এই ছেলেটাকে ও কিছুতেই বোঝাতে পারে না।আরে যার নাম,ঠিকানা এমনকি চেহারা পর্যন্ত দেখেনি তার জন্য বদ্ধ পাগল হয়ে গিয়েছে।যখনি কোন মেয়েকে দেখে তার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে।আর এইসব করতে গিয়ে মাসে দু তিনটা অ্যাকসিডেন্ট তো হয়েই যায়।শিহরণ পেশায় ডক্টর।কিন্তু তার অর্ধেক সময় ব্যয় হয় তার বন্ধুর চিকিৎসা করতেই।
,
,
,
বাইক রেখে হাপাতে হাপাতে একটা বহুতল ভবনের সামনে দাড়ানো আশফিক এর কাছে আসে আজরাহান।
“তো তোর সময় হলো??
“সরি রে দোস্ত।একটু দেরি হয়ে গেলো।”
“একটু না এক ঘন্টা।এখন আর লাভ নেই।ইন্টারভিউ আওয়ার শেষ।”
“কি বলছিস??
আজরাহান ঘড়ি দেখে।ঠিকই এক ঘন্টা লেট হয়েছে।
“এখন আর কি করার যা কচু গাছে গিয়ে ফাসি দে।”
“সরি ইয়ার।আসলে প্রহর কে কলেজে দিয়ে আসলাম।আর রাস্তায় এতো জ্যাম।”
“আর কি, চল এখন কফি হাউজ বাদ দিয়ে টঙ দোকানে পা তুলে রঙ চা গিলি।”
ওরা দুইজন একটা টঙ এর দোকানে বসে।
“এতো কষ্ট করে তোর জন্য চাকরি টা ম্যানেজ করলাম আর তুই কিনা,,
“সরি দোস্ত।”
“এখন কি করবি বল??এক লক্ষ টাকা পাবি কোথায়??আজরাহান চায়ের কাপ থেকে চুমুক উঠিয়ে বলে–
“কোথায় পাবো জানি না।কিন্তু ফেরত তো দিতেই সবে সে আমার এতোবড় উপকার করলো তাকে দেওয়া কথা তো রাখতেই হবে।আর এখন চাকরি টা বেশি দরকার।বাবা বলেছে প্রহর এর সব দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে।”
“বলিস কি??
“হ্যাঁ।”
“আচ্ছা আমি দেখছি।কিন্তু এর পরের বার আর লেট করবি না।তাহলে কিন্তু তোর একদিন কি আমার যতদিন লাগে।”
“আর হবে নারে।আমার যে চাকরি টা খুব প্রয়োজন।আমার প্রহরিনী কে যে আমার পেতেই হবে।”
,
,
,
নিগূঢ় কালো আঁধারে ঢেকে আছে পুরো আকাশ।আভার পসরা সাজিয়ে বসে আছে চাঁদ।টিপ টিপ করে জ্বলছে তারা।হালকা বাতাসে ঝি ঝি র ডাক।আজরাহান এর সিগারেট এর ধোয়া গোলা পাকিয়ে মিশে যাচ্ছে বাতাসে।
“কি করে পারলাম আমি আমার প্রহরিনী কে সবার সামনে অপমান করতে।ওকে তো আমি ভালোবাসি।তাহলে ওকে সবার সামনে কি করে ছোট করলাম!!
ও কি আমাকে কখনো ক্ষমা করবে??
রুমে এসে দেখে পুরো ঘুমে আচ্ছন্ন প্রহর।জানালা দিয়ে চাঁদের আলোয় ওর পুরো শরীর মাখিয়ে দিচ্ছে।আজরাহান এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
” কি নিগূঢ় চাহনি,স্বচ্ছ দিঘীর জল
চাঁদের আলো ছুইয়েছে আজ আমার প্রহরিনীর মল।”
ওর গোলাপ রাঙা ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে এক অদ্ভুত নেশা লেগে যায় ওর।এক দমবন্ধ করা চুমু খেতে ইচ্ছে করে ওর ঠোঁটে।কিন্তু তা সে করবে না।প্রহর এর ঘুম ভেঙে যায় গন্ধরাজ ফুলের তীব্র গন্ধে।উঠে বসে সে।
“রাহান ভাইয়া আপনি আবার সিগারেট খেয়েছেন??
“হ্যাঁ।”
“কেনো খান??সিগারেট খাওয়া তো ভালো না।”
“সেটা কি তোর থেকে শিখতে হবে আমার??
প্রহর এর মুখে অমাবস্যা ভর করে।ওর রাহান ভাইয়া কখনো ওর কোনো কথা শোনে না।
“আমাকে ছাড়া থাকতে পারবি প্রহরিনী??
প্রহর এর বুকটা ধক করে উঠে।কেনো বলল ওর রাহান ভাইয়া একথা।ও তো তাকে ছাড়া একটা নিঃশ্বাস নেওয়ার কথাও ভাবতে পারে না।তাহলে কি,,
চলবে,,,
(বিঃদ্রঃ আপনাদের রেসপন্স দেখে মনে হচ্ছে গল্পটা আপনাদের ভালো লাগছে না।২,২.৩০ ঘন্টা সময় নিয়ে একটা পার্ট লিখতে পারি তাহলে কি আপনাদের কি উচিত নয় ১ মিনিট সময় নিয়ে গল্প সম্পর্কে একটা মতামত প্রদর্শন করা।আর না হলে বন্ধ করে দেই।ধন্যবাদ।হ্যাপি রিডিং।)