#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ১৩
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি
গাড়ির স্প্রীড প্রায় সত্তর এর উপরে দিয়ে ড্রাইভ করছে ইনশিরাহ।ওর বাবা ইংল্যাণ্ড থেকে ফিরেছে।মারশিয়াদ যে ওর সাথে এতো কিছু করেছে তার কিছুই সে জানায় নি তার বাবা কে।লোকটা যাই ই করুক ওর সাথে, তারপরও সে নিজের করে চায় তার প্রানহারক কে।গাড়ির সামনে একটা বাইক আসতেই ব্রেক কষে ইনশিরাহ।বাইক এবং বাইকের আরোহী দুইজনের অবস্থাই কাহিল।গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে ইনশিরাহ।
“আর ইউ অলরাইট??
ছেলেটি বাইক টাকে কোনোমতে দাড় করায়।
“আর কিছু পেলেন না আমার গার্লফ্রেন্ড টার কোমড় ভেঙে দিলেন??
ইনশিরাহ ভ্রু কুঞ্চি করে বলে–
“হোয়াট??
“জ্বি মিস।”
ছেলেটি হাত বুলায় বাইকটাকে আর কয়েকটা চুমুও খেয়ে নেয়।ইনশিরাহ তা দেখে কিছুটা ইতস্তত বোধ করে।
“ছিঃ,,এইভাবে কেউ বাইকে,,,ছিঃ।”
“দেখুন মিস একেতো আমার গার্লফ্রেন্ড এর বারোটা বাজিয়েছেন তার উপর এইসব নাক ছিটকানো বাদ দিন।তিন মাস বাবার সামনে ঘ্যান ঘ্যান করে বাইক টা নিয়েছিলাম।”
ইনশিরাহ মুচকি হাসে।ছেলে মানুষ এতো ফানি হয় কি করে!!
“দেখুন মি,,,
“আপনি আমাকে আশফিক বলে ডাকতে পারেন।আমি কিছু মনে করবো না।”
“আপনার নাম ধরে ডাকার কোনো আগ্রহ আমার নেই।আপনার এই কোমার রোগীটাকে এখান থেকে সরান।”
“বাহ,,একে অ্যাকসিডেন্ট তার উপর আমার গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে হাসা হচ্ছে।”
ইনশিরাহ বিরক্ত বোধ করে।ছেলে মানুষ এতো কথা কি করে বলে।ও গাড়ি থেকে পার্স নিয়ে তা থেকে কিছু টাকা নিয়ে আশফিক কে ওফার করে।
“সরি মিস।এতোটা ছোটলোক নই।আপনার টাকা আপনার কাছেই রাখুন।আর সাবধানে গাড়ি চালাবেন।এইটা তো আর কারো বাবার সম্পত্তি নয় পাবলিক প্রপার্টি।বাইকের জায়গায় মানুষ হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।সো বি কেয়ার ফুল।আসি।ভালো থাকবেন।”
ইনশিরাহ নাক ফুলায়।ও বুঝতে পারে ছেলেটি তাকে ভদ্র ভাষায় অপমান করেছে।
,
,
,
মাথার উপর সূর্যের ক্ষীন রশ্মি।পূর্ব আকাশ থেকে সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়তে শুরু করেছে।রোদের তাপ বেশি না হলেও ভ্যাবসা ঘরম পড়েছে।হালকা হালকা বাতাসও আছে।কিন্তু তা ম্রিয়মান।
ছাতা মাথায় দিয়ে দাড়িয়ে আছে নির্ধা আর প্রহর।মাত্রই এক্সেম হল থেকে বেড়িয়েছে।এই সময়টাতে ওদের আনা নেওয়ার দায়িত্ব আশফিক এর উপর।আজরাহান নতুন জয়েন করেছে তাই তার পক্ষে ছুটি নেওয়া সম্ভব না।আশফিক তার কোম্পানির পুরোনো ইমপ্লয়ি আর তার বসের সাথে অনেক সখ্যতাও গড়ে উঠেছে।তাই তার পক্ষে সময় ম্যানেজ করা ব্যাপার হয়নি।
ওরা অপেক্ষা করছে আশফিক এর জন্য।কিন্তু আজ ওদের প্ল্যান অন্য কোথাও যাওয়ার।গত কয়েকদিন যাবৎ শিহরণ নির্ধার কল রিসিভ করে না।বারবার কল করলে সুইচ অফ করে দেয়।মেয়েটার অবস্থা নাজেহাল।গত এক বছরের সম্পর্কে শিহরণ কখনো এমন আচরণ করেনি।কারন যথেষ্ট ম্যাচিউর সে।আঠাশ বছরের সুদর্শন যুবক।কিন্তু আজ হঠাৎ কি হলো কিছুই বুঝতে পারছেনা নির্ধা।প্রহর কে সব জানায় ও।তাই প্রহর আজরাহান এর মোবাইল থেকে কল করে অনেক বুঝিয়ে রাজী করায় শিহরণ কে দেখা করার জন্য।আশফিক এসে দাড়ায় ওদের সামনে।
“সরি রে একটু দেরী হয়ে গেলো।রাস্তায় যে জ্যাম।”
“সমস্যা নেই।”
ওরা একজন আরেকজন এর দিকে তাকায়।প্রহর বলে–
“আশফিক ভাইয়া তুমি চলে যাও।আমাদের একটু লাইব্রেরিতে যেতে হবে।”
“তাহলে চল আমিও যাই।”
“আরে না না।তোমার যেতে হবে না।আমরা একাই পারবো।তুমি যাও।তুমি না বললে তোমার জরুরী কাজ আছে??
তা আছে।কিন্তু তোকে একা রেখে গেলে আমাকে আজরাহান চিবিয়ে খাবে।”
“ওই হাদারাম কে তোমার বলতে হবে না।এমনিতেই সবার হাড়,মাংস চিবিয়ে খায়।”
“কারো টা না খেলেও তোর টা যে খায় তা শিওর।”
নির্ধা ভ্রু বাকিয়ে প্রহর এর দিকে তাকায়।
“আরে তুমি চুপ করো তো।”
“আচ্ছা,ঠিক আছে।সাবধানে যাস।”
“তুমি কোনো চিন্তা করো না।আমরা তো লেডি গ্যাংস্টার।সবাই আমাদের এমনিতেই ভয় পায়।”
আশফিক নিজের বোনের দিক তাকিয়ে দেখে কেমন যেনো ফ্যাকাশে হয়ে রয়েছে।
“তোর কি হলো??
“ককই ককিইছু নাআ তো।”
“ওকে আমি তাহলে যাই।”
“হুম।”
আশফিক গেলে ওরা একটা রিক্সায় উঠে।সামনেই একটা পার্কে আসতে বলেছে শিহরণ কে।
“তুই মুখটা এমন চুষা আমের মতো করে রেখেছিস কেনো??
“আমার কিছু ভালো লাগছে নারে।ডাক্তারবাবু তো কখনো এমন করে না।”
“ওই অঘাটার সাথে প্রেম করতে গেলি কেনো??
নির্ধা ওকে মারশিয়াদ আর তার কাজলচোখীর ঘটনা খুলে বলে।
“কি বলিস এইসব!!
এইবার মনে হচ্ছে ওই পাগলটার সাথে থেকে জিজুর মাথা টাও গেছে।
অঘা আর মঘা একসাথে থাকলে যা হয় আর কি।”
নির্ধা কেদে উঠে।
“আরে তুই কাদছিস কেনো??
কাদবে তো ওই অঘা।বেশি তিরিং বিরিং করলে আমাকে বলবি।কষে একটা চড় মেরে দিবো ওর গালে।শখ কতো প্রেম করবে আবার এতো ঢং।”
কিছুক্ষনের মধ্যেই ওদের রিক্সা গন্তব্যস্থলে এসে পৌছায়।পার্কে ঢুকেই দেখে শিহরণ আগে থেকেই দাড়িয়ে আছে।
“তুই যা কথা বল।আমি এখানে বসি।”
“আচ্ছা।”
,
,
“কেমন আছেন আপনি??
“ভালো।তুমি কেমন আছো??
নির্ধা একপলক দেখে শিহরণ কে।এ কয়েকদিন এ কেমন হয়ে গেছে চেহারা টা।একদম বিধ্বস্ত।
“কি হয়েছে আপনার,,কেনো করছেন আপনি এইরকম??
“কিছু না।”
“তাহলে??আমার কি কোনো ভুল হয়েছে???
শিহরণ একটা উষ্ণ দম ফেলে।বেঞ্চিতে বসে সে।
তারপর সবকিছু খুলে বলে।নির্ধা পুরো অবাক।প্রহর ঠিকই বলেছে।এই দুইটাই অঘা আর মঘা।
শিহরণ উঠে দাড়ায়।
“মারশিয়াদ তোমাকে ভালো রাখবে পিচ্চি।ওকে একবার ভালোবেসে দেখো।”
নির্ধার চোখের কোনে জল থৈ থৈ করছে।কেমন মানুষকে ভালোবাসলো সে যে কিনা তার ভালোবাসার মানুষকে অন্যের হাতে তুলে দিতে চায়!!!
“আমার ইচ্ছে হচ্ছে আপনাকে থাটিয়ে একটা চড় মারি।কিন্তু পারছিনা।কারন আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
“নির্ধা একটু বোঝার চেষ্টা করো।প্লিজ কেদো না।”
“আসলে আপনারা সব ছেলেই এক।প্রেম করার সময় বলেন প্রেয়সী তোমার জন্য তো আকাশের ওই চাঁদটাও আমি এনে দিবো কিন্তু আসলে আপনারা ভালোবেসে একটা কদম ফুলও আনার কথার ভুলে যান।”
“নির্ধা মারশিয়াদ তোমাকে আমার চেয়ে হাজার গুন বেশি ভালোবাসে।”
“চুপ করুন আপনি।অন্যের তরফদারী করতে হবে না আপনার।
আপনি যে আমাকে কখনো ভালোবাসেন নি তা আমি আজ বুঝতে পেরে ছি।”
“নির্ধা ভুল ভাবছো তুমি।”
“আমি ভুল এতোদিন ভেবেছি।
আচ্ছা আপনি কখনো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন??
কখনো আমাকে কাজল দিতে দেখেছেন??
শিহরণ এক ঝটকা খায়।ঠিকই তো নির্ধা কে ও কোনোদিনও কাজল দিতে দেখেনি।তাহলে ও কি করে মারশিয়াদ এর কাজলচোখী হয়!!!
“কি হলো কথা বলছেন না কেনো??
“কিন্তু ওই স্কেচ,,,
“আপনার বন্ধু কে মানষিক ডাক্তার দেখান।সাথে নিজের চিকিৎসাও করে নিবেন।”
একটু শান্ত হয়ে নির্ধা আবার বলে–
“আমার কাজল এ এলার্জি।তাই চোখে কাজল দিলে আমার চোখে চুলকানি হয় সাথে চোখ থেকে পানি পড়ে।তাই আমি কখনো কাজল দেই না।”
শিহরন ওর হাতের বাজু ধরে বলে–
“আই অ্যাম রিয়েলী সরি।আসলে ওই স্কেচ দেখে আমার মাথাই কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো।”
“থাকুন আপনি আপনার কলিজা আর মাথা নিয়ে।আর
কখনো আমার সাথে যোগাযোগ করবেন না।”
দ্রুত পা চালিয়ে চলে যায় নির্ধা।শিহরণ ওকে কয়েকবার পিছু ডাকে।কিন্তু ওর এখন মারশিয়াদ এর সাথে কথা বলা বেশি জরুরী।
,
,
,
চোখে আইমাক্স লাগিয়ে ডিভাইন এর উপর এক পা সোজা করে দিয়ে অন্য পা ডিভাইনের উপরের দিকে দিয়ে অদ্ভুত ভাবে শুয়ে আছে মারশিয়াদ।বিমর্ষ মুখ নিয়ে আসে শিহরণ।একটা চেয়ার টেনে বসে শিহরণ গলার স্বর স্মিত করে বলে—
“তোর সাথে আমার কথা আছে।”
“চোখে আই মাক্স লাগিয়েছি কানে তালা দেইনি।বল আমি শুনছি।”
“ওই মেয়ে তোর কাজলচোখী হতে পারে না।”
মারশিয়াদ আই মাক্সটা সরিয়ে উঠে বসে।
“কে বলল ও আমার কাজলচোখী??
“তাহলে ওই স্কেচ???
মারশিয়াদ উঠে বেডরুম ফ্রিজ থেকে একটা ড্রিংস বের করে তাতে চুমুক দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়।বারান্দার থেকে কয়েকহাত দুরেই একটা জারুল গাছ।ঘন অন্ধকারে টিপ টিপ আলো দেখা যাচ্ছে সেখানে।হয়তো জোনাকি!!
“ওই মেয়েটা তোর গার্লফ্রেন্ড??
শিহরণ চকিত হয়।
“তাহলে তুই কেনো স্কেচ বানালি??
মারশিয়াদ হালকা হাসে।ওর বাম কপোল(গাল)এর ডিম্পল স্পষ্ট হয়।
“এতোদিন কেনো সময় নিলি তুই??
“বিশ্বাস কর,;আমি ভেবেছিলাম নির্ধাই তোর,,,
“ভুল ভেবেছিস।”
মারশিয়াদ এর চোখ উজ্জল হয়।
“আমার কাজলচোখী আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারে না।তার হৃদয়ে শুধু তার জান এর নাম থাকবে।সে শুধুই আমার।”
মারশিয়াদ ছোট্ট দম নেয়।
“তোর মনে আছে সেদিন গ্যালারিতে আসার পর তোর কল এসেছিলো।আমি তোর ওয়ালপেপারে তার ছবি দেখেছি।তখনই আমার মনে পড়ে মনিটরে আমি কাজলচোখীর পাশে একটা মেয়েকে দেখেছি।সে নিশ্চয়ই আমার কাজলচোখী কে চিনে!!!
“তাহলে তুই আগে বলিস নি কেনো??
“তোর আমার উপর বিশ্বাস নেই তাই না??আমি ইচ্ছে করে সেদিন টেবিলের উপর ওই স্কেচ রেখেছিলাম।”
“আই অ্যাম সরি ইয়ার।”
“কতোদিন আমাকে অপেক্ষা করালি বলতো??আমি ওয়েট করছিলাম কখন তুই নিজে এসে আমাকে জানাবি।”
“আসলে আমি ভাবতেও পারিনি এইসব।আমি ভেবেছি নির্ধাই তোর কাজলচোখী।যাকে তুই পাগলের মতো ভালোবাসিস।
তুই চাইলে তো আমি আমার জানটাও তোর জন্য দিয়ে দিতে পারি।”
মারশিয়াদ হেসে বলে–
“তোর জান আমার চাইনারে বন্ধু।আমার তৃষ্ণার্ত বুকের পিপাসা মেটাতে শুধু আমার কাজলচোখী কে প্রয়োজন।
চল।”
“কোথায়??
“আমার হবু ভাবীর বাসায়।”
“পাগল হয়েছিস,;রাত দশটা বাজে।”
“তাতে কি।”
“এই শহরের মানুষ রাত্রি দ্বিপ্রহর পর্যন্ত জেগে থাকে।”
“এখন না।আমরা কাল যাই।আর এটাতো নিশ্চিত না যে নির্ধা আসলেই তো কাজলচোখী কে চিনে।”
“তুই তো দুইটা পাস নিয়েছিলি??
“হা,,একটা ওর আরেকটা ওর,,,,
ঘন্টা বাঝতে থাকে ওর মনে।তাহলে কি প্রহর,,
“প্লিজ ইয়ার,,পায়ে পড়ি তোর চল।তাকে আজ না দেখলে আমি সত্যিই মরে যাবো।”
“কিন্তু মারশিয়াদ,,
“তোর পায়ে পড়ি আমি।”
“শালা ছাড় বলছি।কি করছিস তুই??
তুই বিয়ের আগে সত্যিই আমাকে বিধবা বানিয়ে ছাড়বি।”
“তোর আর নির্ধার বিয়ের গ্যারান্টি আমি দিচ্ছি।চল দোস্ত।”
“ওকে।”
চলবে,,,