অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি পর্বঃ১৪

0
2350

#অদ্ভূত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ১৪
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি

রাত১১ টা হতে চলল,,
নিয়নের বাতির আবছা আলোয় দ্রুতবেগে চলছে মারশিয়াদ ব্ল্যাক মার্সেডিজ।ওর ড্রাইভ করায় ভীষন আতঙ্কিত শিহরণ।

“তুই কি মেরে ফেলবি নাকি??
ধীরে ড্রাইভ কর।”

“সময় নেই রে বন্ধু।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে আমার কাজলচোখীর কাছে যে পৌছাতে হবে।আজ আমার তৃষ্ণার্ত বুকের অথৈ জল হয়ে সমস্ত তৃষ্ণা মিটাবে আমার কাজলচোখী।”

মারশিয়াদ এর পাগলামী ভয়ংকর রুপ নিচ্ছে।যদি প্রহরই সেই মেয়ে হয়ে থাকে তাহলে তো কোনো সমস্যাই নাই।আজই ওদের বিয়ে পাকাপোক্ত করে এই পাগলটাকে ঠিক করতে হবে।

নির্ধাদের বাড়ি শিহরণ চিনে না।যতবারই ওকে পৌছে দিয়েছে ততবারই বাড়ি থেকে দুরে মোড়ের সামনে নামিয়ে দিয়েছে।ওরা সেখানেই নামে।নির্ধার বাবা একসময় এখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন।তাই মোটামুটি সবাই চিনে।ওরা দুজন দু একটা বাড়ি এবং চায়ের দোকানে ওর বাবার নাম বলে ঠিকানা জিঙ্গেস করে।ভাগ্যবিধাতার রহমতে পেয়েও যায়।

কলিং বেলের টুংটাং শব্দে নির্ধার মা দরজা খুলে।মাত্রই রাতের খাবার খেয়ে আশফিক আর ওর বাবা ড্রয়িং রুমে বসেছে।

“আপনারা কারা??কাকে চাই??

শিহরণ কিছু বলবে তার আগেই মারশিয়াদ বলে—

“আশফিক আছে বাসায়??

ইতিয়ারা ভাবলেন হয়তো ছেলের পরিচিত হবে।তাই ওদের ভিতরে আসতে দিলো।

আশফিক আর আশরাফ সাহেব ওদের দেখে সোফা থেকে উঠে এলেন।

“কারা আপনারা??

“হাই,আই এম মারশিয়াদ আরজান।হি ইজ মাই ফ্রেন্ড।”

ইতিয়ারা ঢোক গিলেন।তিনি তো ভেবেছিলন তার ছেলের পরিচিত।কিন্তু তা তো নয়।যদি সন্ত্রাসী হয়!!!
কিন্তু দেখে তো ভদ্র মনে হচ্ছে।

“আপনি আমাদের চিনবেন না।
নির্ধা কে একটু ডেকে দিবেন প্লিজ??

আশফিক ব্যতিব্যস্ত হয়।এতো রাতে দুজন ছেলে এসে ওর বোনের কথা কেনো জিঙ্গেস করবে!!!

“ওকে দিয়ে আপনার কি কাজ??
আর এতো রাতে কোনো ভদ্রলোক এইধরনের আচরণ করে??

শিহরণ জানে আশফিক একটু গরম তেলের পিঠে।ও চটে যাবেই।

“প্লিজ,,আপনার একটু বোঝার চেষ্টা করুন।মারশিয়াদ তুই চুপ কর আমি দেখছি।”

“এতো দেখাদেখির কিছু নেই।বের হোন এখান থেকে।”

আশরাফ জোয়ার্দার বেশ বিচলিত।একে তো মধ্যরাত।তার উপর দুজন সুঠাম দেহের পুরুষ তার মেয়েকে কেনো খুজছে!!
উল্টা পাল্টা কিছু হয়নি তো??

মারশিয়াদ ফোস করে একটা শ্বাস ছাড়ে।নিচু কন্ঠে বলে–

“দেখুন আমরা কোনো ঝামেলা করতে আসি নি।আমি শুধু নির্ধাকে একটা প্রশ্ন করবো।আমার উত্তর পেলেই আমরা চলে যাবো।”

“তাই নাকি!!
আর যদি না দেয় তাহলে কি করবেন আপনি??

“আমি কি করবো সেইটা আপনার চিন্তার বাহিরে।সো বি কুল।”

“কুল মাই ফুট।আমি এখনই পুলিশ কে কল করছি।”

মারশিয়াদ রাগে গজরাতে থাকে।কপালে শিরা গুলো ফুলে উঠে।ঘাড়ের রগ দেখে মনে হচ্ছে এখনই তা ছিড়ে বেরিয়ে আসবে।দাঁতের উপর দাঁত চেপে কোমড়ে থাকা পিস্তল বের করে ফ্লোরে শুট করে দেয়।

ভয়ে ওরা তটস্থ হয়ে পড়ে।শিহরণ মারশিয়াদ এর কাছে গিয়ে বলে—

“কি শুরু করলি তুই,,গান কেনো বের করলি??

মারশিয়াদ ট্রিগারে হাত রেখে সোফায় গিয়ে বসে।গান এর মুখে ফু মেরে বলে–
“আসার সময়ই লোড করে নিয়ে এসেছি।
জানতাম এর প্রয়োজন পড়বে।”

ওরা সবাই ভ্যাবাচাকা।

“তো পুলিশ কে কি আপনি কল করবেন নাকি আমি নিজেই করবো মি.আশফিক??

ইতিয়ারা ছেলের কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে বলে–

“ওদের কাছে বন্দুক আছে ঝামেলা করিস না বাবা।নির্ধা কে ডেকে নিয়ে আয়।”

“কিন্তু মা,,,

“আপনার মা কিন্তু বুদ্ধিমতী মি.আশফিক। আমিও ঝামেলা একদম পছন্দ করি না।
বললাম তো একটাই প্রশ্ন করবো আর তার উত্তর নিয়েই চলে যাবো।প্লিজ,ডেকে নিয়ে আসুন মিস নির্ধা কে।”

নির্ধা নিজের রুমেই কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনছিল তাই সে কিছুই শুনতে পায় নি।আশফিক নির্ধাকে নিচে নিয়ে আসে।মারশিয়াদ কে ও আগে কখনো সরাসরি দেখেনি।মারশিয়াদ প্রেসের সামনে কখনই আসে না।তাই ওকে দেখে চেনার কোনো উপায় নেই।কিন্তু শিহরণ কে দেখে নির্ধার বুঝতে বাকি নেই এটাই মারশিয়াদ।কিন্তু এতো রাতে এই অঘা মঘা টাকে এখানে কেনো নিয়ে এলো??

ওর ভাই যদি একবার জানতে পারে ওদের সম্পর্কে তাহলে আর রক্ষে নেই।আশরাফ সাহেব নিরুত্তাপ।সোফায় বসে আছেন তিনি।তার হার্টে সমস্যা।বেশি টেনশন নিতে পারেন না।প্রেশার হাই হয়ে যায়।তাই ইতিয়ারা তার পাশে বসেই তাকে আশ্বস্ত করেন।ছেলে দুটো ভদ্র ঘরের মনে হয়।আপনি টেনশন করবেন না।

মারশিয়াদ গিয়ে নির্ধার সামনে দাড়ায়।নির্ধা ভালো করে দেখে ওকে।হার্টথ্রবই বটে।আর গালের ওই ডিম্পল সে তো মারাত্মক।

“কেমন আছেন মিস নির্ধা??

“জ্বিজজজ,,ভভভাললো।”

“ভয় পাবেন না।আমি আপনাদের কোনো ক্ষতি করবো না।”

নির্ধার চোখ আটকে মারশিয়াদ এর হাতে থাকা গান এ।শুকনো ঢোক গিলে ও।এ তো সত্যিই পাগল।প্রহর ঠিকই বলেছে এই অঘা আর মঘা মিলে না জানি কি অঘটন ঘটায়।শিহরণ একটু দুরেই দাড়িয়ে আছে।নির্ধার অগ্নিদৃষ্টি শিহরণ কে ভষ্ম করে দিচ্ছে।

“আপনি কি মারশিয়াদ আরজান??

“জ্বি।শিহরন এর কলিজা।এই নামেই তো আপনি আমাকে জানেন তাই তো??

“না,,মানে।”

আশফিক ভ্রুকুটি করে।তার মানে শিহরণ নির্ধার পূর্ব পরিচিত।

“আপনাকে আমি একটা প্রশ্ন করবো প্লিজ তার উত্তর দিবেন।”

নির্ধা মনে মনে বলে,,মারশিয়াদ আরজান রিকোয়েস্ট ও করতে পারে!!!!

“জ্বি,,,বলুন।”

“আপনি কি সেদিন আমার এক্সিবিশনে গিয়েছিলেন??

নির্ধা সকলের দিকে একবার চোখ ঘুরায়।গিয়েছিলো
তো কি হয়েছে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেছে নাকি!!

“হুম।”

মারশিয়াদ এক স্নিগ্ধ কন্ঠে বলে–

“সেদিন আপনার সাথে যে কাজল চোখের মেয়ে ছিলো সে কোথায় থাকে??

নির্ধার শ্বাস আটকে যায়।কাজল চোখের মেয়ে!!
সেইটা আবার কে??তার সাথে তো প্রহর ছিলো।আর প্রহর তো,,,,
ও মোর আল্লাহ তাহলে কি প্রহরই কাজলচোখী!!!!
ও তো সেদিনও কাজল দিয়েছিলো।

“কি হলো বলুন।”

নির্ধা শুনতে পায় না।মারশিয়াদ একটু জোরেই বলে–

“মিস নির্ধা,,কিছু বলছেন না কেনো???

“কে কাজল চোখের মেয়ে??
আমি তো জানিননননি না।”

“প্লিজ নির্ধা,,একবার বলুন।কোথায় থাকে আমার কাজলচোখী?প্লিজ একবার বলুন।”

মারশিয়াদ এর কন্ঠ সিক্ত।

নির্ধা কিছুক্ষন দম মেরে থাকে।তারপর কিছুক্ষন পর বলে–

“ও আমার বান্ধবী প্রহর।ও আপনার কাজলচোখী কি করে হবে??

মারশিয়াদ এক প্রশান্তির নিঃশ্বাস নেয়।তার চেহারা ঔজ্জ্বল্য বলছে সে তার হারানো জিনিস খুজে পেয়েছে।

“প্রহর!!!!
তার মানে আমার কাজলচোখীর নাম প্রহর??

মারশিয়াদ এর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে।

হাত দুটো নির্ধার সামনে উঠিয়ে বলে—

“প্লিজ,,কোথায় থাকে সে বলুন।একবার বলুন।

আশফিক মারশিয়াদ এর কান্ডে হতবিহব্বল।ও মোবাইল হাতে নিয়ে লাগাতার কল করে যাচ্ছে আজরাহান কে।আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিবে বলে।কিন্তু ও কিছুতেই রিসিভ করছে না।মূহুর্ত টা ঠিক তেমন যেমন ভয়ংকর কিছু ঘটে যাওয়ার আগের নিরবতা।

অনেকটা সংকচ আর দ্বিধা নিয়ে নির্ধা মারশিয়াদ কে প্রহর এর বাড়ির ঠিকানা বলে।মারশিয়াদ আর দেরি করে না।গান টা আবার আগের জায়গায় রাখে।আশফিক,আশরাফ,ইতিয়ারা সবার কাছেই হাত জোড় করে ক্ষমা চায় তার ব্যবহার এর জন্য।তারা পুরাই চকিত কোনো মানুষ মূহুর্তেই কি করে বদলে যায়!!
,
,
,
বিছানায় উপুর হয়ে লম্বা হয় শুয়ে আছে আজরাহান।দুইহাত বিছানার উপর ভাজ করে তার উপর চিবুক দিয়ে অক্ষি নিবদ্ধ করেছে কিঞ্চির ওই নীল চোখে।ওর মুখের সামনেই একটা কাগজের উপর কিছু বিস্কুটের গুড়ো দিয়ে রেখেছে আর কিঞ্চি তার ছোট্ট গোলাপী জিহ্বা দিয়ে তা চেটে চেটে খাচ্ছে।তার চোখ ও আজরাহান এর চোখে।

কিঞ্চি আর আজরাহান এর সম্পর্কটা অদ্ভুত।একটা নির্বাক প্রানী হলেও ও বেশ বুঝে আজরাহান কে।যতক্ষন ও ঘুমায় বেশিরভাগ সময় কিঞ্চি ওর বুকের উপর গুলটি মেরে শুয়ে থাকে।বিছানার পাশেই একটা ছোট ঝুড়ির ভিতরে তুলো রেখে তার উপর একটা কাপড় দিয়ে কিঞ্চির জন্য বিছানা বানানো হয়েছে।যা আজরাহান এর মাথার কাছে।রাতে ওকে ঘুমোতে দিলে ওর ওই নীল জ্বলন্ত চোখ দিয়ে যতক্ষন না ঘুম আসে ততক্ষন আজরাহান এর দিকে চেয়ে থাকে।ওদের সম্পর্কই ঐশ্বরিক।

প্রহর বিছানার এক কোনে বসে কঠিন দৃষ্টি দিয়ে রেখেছে কিঞ্চির দিকে।এই বিড়াল টাকে ওর একদম সহ্য হয়।আরে একটা বিড়াল ই তো এতো আদর যত্নের কি আছে??

একদম আমার সতীন।হতচ্ছাড়ি বিড়ালি।ইচ্ছে করছে এখনই নিয়ে ফেলে দিয়ে আসি বড় রাস্তার সে পেটওয়ালা কুকুরটার কাছে।কিভাবে দেখে আমার রাহান ভাইয়া কে।চোখ দুটো উঠিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।

“তুই এমন করে আমার কিঞ্চি র দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো??চোখ সংযত কর,ওর পেট খারাপ করবে।”
প্রহর হাতের বইটা ঝাড়া মেরে ফেলে বলে–

“ইশশ,ডং দেখে আর বাচি না।আমার কিঞ্চি বলা হচ্ছে।
এমন করে কি দেখেন ওর দিকে??কই আমার দিকে তো কখনো ফিরেও তাকান না??

আজরাহান উঠে বসে।প্রহর এর একদম কাছে চলে যায়।আজরাহান এর প্রতিটি উষ্ণ নিঃশ্বাস প্রহর এর শরীর কাপিয়ে তুলে।
এতো কাছে কেনো আসে এই মানুষটা!!!
আবার চলেও যায়।

আজরাহান ওর চোখ প্রহর এর পুরো শরীরে একবার ঘুরিয়ে আনে।তারপর সোজা হয়ে বসে বলে—

“তোর মধ্যে দেখার কি আছে??
এইতো ফড়িং এর মতো একটা শরীর আর শ্যাওড়া গাছের শাখচুন্নির মতো চারটা হাত পা।আর একগাছি চুল।অবশ্য তোর ওই মাথা ভরা চুল না থাকলে তোকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে তুই মেয়ে।আফসোস!!
চেহারার যা অবস্থা,, কতদিন ধরে আয়না দেখিস না তুই??

প্রহর এর এবার ভিষণ রাগ হয়।এই লোকটা এমন কেনো করে??

“এতোই যখন অপছন্দ তাহলে আমাকে বিয়ে করেছেন কেনো??

“আমার কিঞ্চির দেখাশোনার জন্য।দেখ,,কেমন শুকিয়ে গেছে আমার কিঞ্চি।
সারাদিন করিসটা কি তুই ??একটু খেয়াল রাখতে পারিস না ওর।”

প্রহর এর মনে হচ্ছে এখনই ওই কিঞ্চি কে গলা টিপে দেই।

“আর একদম নজর দিবি না আমার কিঞ্চিরানীর দিকে।যদি ওর পেট খারাপ করে তাহলে তোকে স্যালাইন গিলাবো আমি।”

ড্রেসিং টেবিলে চোখ যেতেই দেখে মোবাইল ভাইব্রেট হচ্ছে।আজরাহান ধরতেই কল কেটে যায়।এই পর্যন্ত ২০+ কল করেছে আশফিক।আজরাহান কল ব্যাক করতে গেলেই অবিরত বাজতে থাকে ডোর বেল।প্রহর একটু অবাক হয়ে উঠে দাড়ায়।এতো রাতে কে আসতে পারে???

“তুই পড় আমি দেখছি।”

অজরাহান নিচে এসে লাইট অন করে।দরজা খুলতেই হুড়মুড়িয়ে ঢুকে মারশিয়াদ।আজ তার অপেক্ষার অবসান ঘটবে।

মারশিয়াদ পুরো ঘরে চোখ বুলায়।

“কারা আপনারা??

ধীম গলায় প্রশ্ন করে আজরাহান।

“কাজলচোখখীই না মানে আসলেএএ,,,মিস প্রহর আছে??
ওনাকে একটু ডেকে দিবেন।”

আজরাহান হকচকিয়ে যায়।এতো রাতে অপরিচিত মানুষ কেনো প্রহরকে খুজছে??

নন্দিতার পিচ্চি মেয়েটা ঘুমিয়েছে অনেকক্ষন।ও ছাড়া বাড়ির বাকি সকলে ঘুম কাতুরে চোখে এসে দাড়ায় সেখানে।
মারশিয়াদ ওর আর্দ্রতা ভরা কন্ঠে আবার বলে–

“প্লিজ ওনাকে একবার ডেকে দিন।”

“কে আপনি??আর এতো রাতে এখানে কেনো এসেছেন??আর প্রহর এর সাথে আপনার কি সম্পর্ক??

আজরাহান ছাড়া আজ পর্যন্ত অন্য কোনো পুরুষের সাথে প্রহর এর এতোটা সখ্যতা গড়ে উঠেনি যে মাঝরাতে ওকে খুজতে আসবে।

“আমাদের সম্পর্কের কি নাম তা তো আমি জানি না।শুধু জানি সে আমার আঁধারকালো ঘরের একমাত্র চাঁদ জোসনা।আমার নিঃসঙ্গ আকাশের একমাত্র ধ্রুভতারা।আমার বিনিদ্র রজনীর একমাত্র সঙ্গী,আমার তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের একমাত্র জলপ্রপাত।”

আজরাহান এর হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।ওর মাথায় ভীষন যন্ত্রনা শুরু হয়।সবকিছু যেনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ওর বিক্ষিপ্ত মস্তিষ্কের এধার ওধারে।

সানোয়ার আহমেদ গলা উচু করে বললেন–

” এইসব কি ধরনের রসিকতা??রাতবিরাতে ভদ্রলোকের বাড়িতে এসে কি সব হচ্ছে??

কুহলিকাও হাল ছেড়ে দেয়না।

“আমি জানতাম এই মেয়ে এমন কিছুই করবে।রাস্তার মেয়ে এর চেয়ে আর বেশি কি করবে!!রাস্তাঘাটে গিয়ে ছেলদের সাথে গিয়ে রঙ্গলীলা করে বেড়ায়।”

“মা,,তুমি চুপ করবে???
কুহেলিকা গিলে নেয় তার কথা।

মারশিয়াদ বুঝতে পারে না বৃদ্ধ মহিলা কাকে এইসব বলছেন।অবশ্য সেইসবে তার বিন্দু মাত্র আগ্রহ নেই।

“কি হলো ডাকুন তাকে।”

“আপনি ভাবলেন কি করে যে আপনি বললেই আমি ওকে ডেকে আনবো।গেট আউট,,গেট আউট ফ্রম মাই হাউস।”

মারশিয়াদ এর ধৈর্য্যশক্তি আজ তার চরম পরীক্ষা নিচ্ছে।তার পক্ষে আর অপেক্ষা করা সম্ভব নয়।শিহরণ ভয় পেয়ে যায় ও আবার না গান বের করে।তাই ও আজরাহান এর কাছে গিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে–

“দেখুন,আমরা দুঃখিত।আমাদের এতোরাতে এখানে আসা উচিত হয়নি।আসলে আমরা কাউকে খুজছি।হয়তো সে প্রহর।”

“তা হতেই পারে না।আপনারা এখন আসতে পারেন।”

নিচে কোলাহল শুনে নরম পায়ে নেমে আসে প্রহর।আজরাহান এর পাশে এসে দাড়ায়।মারশিয়াদ আর শিহরণ দৃষ্ট আবদ্ধ করে প্রহর এর দিকে।
মারশিয়াদ এর হেলদোল নেই।সে হারিয়ে গেছে তার কাজলচোখী তে।

শিহরণ এর আগে দু একবার প্রহর কে দেখেছে।কিন্তু ভালোকরে দেখা হয় নি।পাতলা গড়নের দেহে দুধে আলতা গায়ের রঙ।চোখগুলো ভাসা ভাসা।চোখের পাপড়ি গুলো একদম ময়ূরের পালকের মতো।কিন্তু চোখে তার কাজল নেই।সবচেয়ে মজার বিষয় ওর চুল।ঘন কালো দীঘল চুল আলগোছে বিছিয়ে রয়েছে ওর কোমড় ছাড়িয়ে।মেয়েটার শরীরের তিনভাগের একভাগ ওজন মনে হয় ওর চুলেরই হবে।ভাগ্যিস মারশিয়াদ ওর চুল দেখেনি।

মারশিয়াদ অধর প্রসারিত করে।চোখে তার অনুক্ত প্রজ্জলন শিখা।তার চোখ তার কাজলচোখী কে পেয়েছে।
এক মিষ্টি পুরুষালী কন্ঠ ভেসে আসে প্রহর এর কানে।

” কেমন আছেন কাজলচোখী??
প্রহর আজরাহান এর হাত চাপড়ে ধরে।শিহরণ কে দেখতে পায় ও।

“মারশিয়াদ আরজান!!!!

এক নিগূঢ় নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে মারশিয়াদ এর স্বরনালী দিয়ে।হ্যা,,,এই তার কাজলচোখী।এই কন্ঠস্বর ই সেদিন প্রানহরণ করেছে।

“আপনি আপনার জান কে চিনতে তো পেরেছেন।”

প্রহর ঘাড় বাকিয়ে উচু করে তাকায় আজরাহান এর দিকে।

” গত দুবছর ধরে পাগলের মতো খুজেছি আমি আপনাকে।কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন আপনি??

“কি বলছেন আপনি এইসব??কে কাজলচোখী??

মারশিয়াদ নিরুত্তাপ স্বরে বলে–
“আপনি।
যাকে আমি আমার দু চোখ দিয়া ভালোবেসেছি।
আপনার মনে আছে বংশাল এ একদিন আমি গাড়ি থেকে বেরিয়েছি আর আমার গাড়ির দরজার আঘাতে আপনার পেটে ব্যথা লাগে।
মনে আছে আপনার??

প্রহর ভাবে।কিন্তু মনে করতে পারে না।কিছুই না।”

মারশিয়াদ আবার বলে—
“আপনি আমাকে ইচ্ছেমতো বকা দিলেন।কিন্তু আপনার জান তো কিছুই শুনতে পায় নি।সে তো আপনার ওই কাজলকালো চোখে হারিয়ে গিয়েছিলো।আপনার ওই চোখে এতোটাই ব্যস্ত ছিলাম যে কখন আপনি ভীড়ের মধ্যে হারিয়ে গেলেন বুঝতেই পারিনি।”

প্রহর সেদিন বোরখা পড়া ছিলো।আসলে সেদিন আজরাহান কে ফাকি দিয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলো বন্ধুদের সাথে সিনেমা হল যাবে বলে।

মারশিয়াদ এক হাটু গেড়ে নিচে বসে।বুক পকেট থেকে একটা কাজলের কৌটা বের করে।

কৌটা গোল্ডেন রঙের যা স্বর্ন দিয়ে তৈরি।ঢাকনার উপর একসাথে লাগোয়া তিনটা নীল রঙের পাথর একদম প্রহর এর চোখের মনির মতো। ডায়মন্ড তা।এইটা সে দুবছর ধরে বয়ে বেড়ায়।কারন কখন তার কাজলচোখী সামনে চলে আসে বলা তো যায় না!!!

মারশিয়াদ কৌটা টা তার ডান হাতে নিয়ে প্রহর এর দিকে বাড়িয়ে বলে,,,,,,

” তোমার ওই কাজল আঁখি ছুয়েছে আমার দিবানিশি,
আমার শিরা উপশিরায় মিশিয়েছে তোমার নাম,
কাজলচোখী কন্যা,
দেবে কি অনুমতি হারিয়ে যেতে তোমার ওই কাজলের কালিমায়??????

প্লাটিনাম দিয়ে মেয়ে পটানো যায় না আর উনি আসছেন কাজল নিয়ে।

শিহরণ ভাবছে,,,একবার প্রহর হ্যাঁ বলুক।আজই সব পাকাপোক্ত করে যাবে।
কিন্তু,,,,,,,,

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here