#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ৩৮
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি
পড়ন্ত বিকেল।পার্কের বেঞ্চিতে বসে আশে প্রহর আর আজরাহান।আজরাহান এর হাত বুকের সাথে জড়িয়ে ওর হাতের বাজুতে মাথা দিয়ে রেখেছে।পার্কের মাঝে কিছু দূরত্ব পর পর এক একটা বড় গাছ যার পাশেই বাধানো এখানে ঘুরতে আসা মানুষের জন্য সাময়িক বিশ্রামের আয়োজন।সবুজের ছড়াছড়ি পার্ক জুড়ে।আজরাহান নিজেও পড়েছে হালকা সবুজ রঙের শার্ট।প্রহর বুঝেনা কেনো ওর রাহান ভাইয়ার সবুজ রঙের প্রতি এতো আকর্ষন।বিদঘুটে ব্যপার।
দুদিন বাদেই আজরাহান চলে যাবে।তাই প্রহর চেয়েছিলো আজকের দিনটা সারাদিন ওরা একসাথেই কাটাবে।আজরাহান বসে মোবাইলে গেমস খেলছে।ওদের সামনেই তিন চার বছরের দুটো ছেলে মেয়ে বল নিয়ে খেলছে।মেয়ে বাচ্চাটির পড়নে হালকা গোলাপী রঙের প্রিন্সেস ফ্রক।পায়ে গোলাপী কেডস্।মাথার চুলও বেশ ঠিক যেনো ছোট্ট প্রহর।গুলুমলু।ছেলেটি একটি টি শার্ট পড়া আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট।বল হাতে নিয়ে ছেলেটি ছুড়ে মাড়তেই তা গিয়ে লাগে মেয়ে বাচ্চাটির মাথায়।ধুম করে ঘাসের উপর বসে অশ্রুতে বাসায় তার ফুলানো গাল দুটো।প্রহর চকিতে আজরাহান এর বাজু থেকে মাথা উঠায়।ওর মনে পড়ে সেই ছোটবেলার কথা।একদিন আজরাহান খেলতে গিয়ে বল ছুড়ে মারলে তা গিয়ে লাগে প্রহর এর কপালে।খানিকা কেটেও যায়।ভয়ে আতঙ্কিত আজরাহান সেদিন খুব কেঁদেছিলো যে তার প্রহরিনীর কিছু হয়ে না যায়।রাত গভীর হলে জ্বর চড়ে বসে প্রহর এর।তিনদিন জ্বরে বিছানায় পড়ে থাকে প্রহর।আজরাহান সেই তিনদিন একচুল নড়েনি ওর বিছানার পাশ থেকে।
একদিন আজরাহান খেলায় প্রাইজ জিতে বাসায় আসলে তা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলে প্রহর এর হাত ফসকে তা পড়ে যায়।আর ভেঙে একাকার।কুহেলিকা বেজায় রেগে বেধড়ক মারে প্রহরকে।আজরাহান ইচ্ছে থাকা সত্বেও কিছু না করতে পেরে কাঁদতে থাকে।অবশেষে কুহেলিকা শর্ত জুড়ে ও যদি প্রহর সাথে আর কথা না বলে তাহলে ওকে আর মারবে না।সেই থেকে আজরাহান প্রহর এর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়।
ওদের অবুঝ ভালোবাসার অব্যক্ত অনুভুতি পাহাড়সম হয়ে পড়ে থাকে ওদের চিত্তে।যার ঢাল ভেঙে পড়ে যেদিন কুহেলিকা জোর করে এক অর্ধবুড়োর সাথে প্রহর এর বিয়ে দিতে যায়।
বিকেল তার অস্বিত্ব হারিয়ে ফেলছে সন্ধ্যার মায়াতে।সূর্য প্রায় ডুবন্ত।দেখে মনে হচ্ছে অর্ধেক পৃথিবীর বুকে আর অর্ধেক মর্ত্যলোকে তার জায়গা করে নিচ্ছে।মানুষ ফিরে যাচ্ছে।প্রভাকর তার লাল আভায় পশ্চিমাদেশ রঞ্জিত করে ফেলেছে।
“কিরে বাসায় যাবি না??
“হুম।”
পার্ক ছেড়ে অনেকদূর চলে এসেছে ওরা।ফুটপাত ধরে হাটছে।ফুটপাতে বসে আছে হকার রা।সন্ধানরাতের এই সময়টাও কারো কারো কাছে জীবন সংগ্রামের আরেক প্রহর।জীবন সে তো নদীর মতো।সকল বাধ্যকতা ঠেলে সামনে এগিয়ে যেতে হয়।
“কিরে চমচম??
চুপ করে আসিছ কেনো??
“তো কী ড্যান্স করবো!!
আজরাহান মৃদু হাসে।রাস্তার পাশের অসংখ্য রিক্সার ক্রিং ক্রিং আওয়াজ।লোকজনের কোলাহল।চলন্ত গাড়ির সাই করে চলে যাওয়া।সড়কবাতির আবছা আলোয় দিগন্ত পথের নিরবধি চলাচল।রোজকার মধ্যবিত্তদের জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটে তাদের পরিবর্তি জীবনের কথা ভেবে।সারাদিন ক্লান্তি শেষে যখন মধ্যরাতে ঘুম নেমে আসে দুচোখের পাতায় তখন মস্তিষ্কে চলতে থাকে নতুন আরেকটা দিনের সংগ্রামের জন্য তৈরি হএয়ার চিন্তা।
হাটতে হাটতে ওরা চলে আসে হাইওয়ের কাছাকাছি।অনেকটা নিরব তা।প্রহর চেপে ধরে আছে আজরাহান এর হাত।এই একটাই খুটি তার যার নিগূঢ় ভালোবাসা তাকে আজও পৃথিবীর ধ্বংস যজ্ঞ থেকে বাচিয়ে রেখেছে।তার বন্দি জীবনের খোলা আকাশ।কেউ না থাকার পরও সে নিজেকে কখনো একা ভাবে না।কারণ তার রাহান ভাইয়া যে তার সব বিপদের ঢাল হয়ে তার সামনে দাড়িয়ে থাকে।
“রসগোল্লা,খাবি কিছু??
“হুম।”
“আইসক্রীম??
প্রহর দুবার মাথা ঝাকায়।প্রহর এর স্থিত অধরে পরিস্ফুরণ হয় হাসির।
মূহুর্তেই একটা গাড়ি থামে ওদের সামনে।বিচলিত আজরাহান কিছু বুঝে উঠার আগেই কয়েকজন লোক নামে গাড়ি থেকে।প্রহর ফাকা ঢোক গিলে।নিজেকে আড়াল করে আজরাহান এর পিছনে।আজরাহান এর ঘাড়ের ফাঁক দিয়ে ভয়াতুর চোখে তাকায় সামনে থাকা লোকগুলোর দিকে।চোখ টুকু ছাড়া বাকি সব ঢাকা তাদের রুমালে আতিশয্যে।আজরাহান এর ভ্রু জোড়া মাঝ বরাবর কুঞ্চিত হয়।চোখ বড় বড় করে।ও শ্বাস আটকে নেয়।তাদের মধ্যে একজন আজরাহান কে ধাক্কা মেরে প্রহর এর হাত ঝাপটে ধরে।আচমকা ধাক্কায় আজরাহান একটু সড়ে পড়ে।সেখান থেকে এক পা এগুতেই বাকিরা ওকে দুহাতে ধরে নেয়।প্রহর এর চিৎকার শুধু তার রাহান ভাইয়ার যেনো কিছু না হয়।আজরাহান ওদের ছাড়িয়ে প্রহর এর হাত ছাড়িয়ে নেয়।লোকটাকে একটা ঘুষি মারতেই ঘুড়ে পড়ে গাড়ির উপর।
ওদের থেকে একটু দুরেই দুজন পুলিশ একে অপরের সাথে দাড়িয়ে আছে।প্রহর চিৎকার করে সেদিকে দৌড়ে যেতেই গাড়ির দরজা বন্ধের আওয়াজ আসে কানে।প্রহর ফিরে তাকাতেই ওরা হাওয়া।প্রহর আজরাহান এর নাম ধরে কিছুক্ষন চেচামেচি করতেই দেখে দুরে দাড়ানো দুজন পুলিশ ওর পাশেই দাড়ানো।আসলে পুলিশদের দেখেই ওর সেখান থেকে দ্রুত বেগে পালায়।
,
,
,
আজরাহান এর কথা শুনতেই ঠাস,ঠাস করে দুটো চড় বসিয়ে দেয় কুহেলিকা প্রহর এর গালে।
হকচকিয়ে উঠে সবাই।প্রহর এর উপচে পড়া চোখের জল ওর বুকের ভেতরে ঝড়ের অংশবিশেষ মাত্র।সমস্ত শরীর কেপে কেপে উঠে ক্ষনে ক্ষনে।ধপাস করে বসে পড়ে প্রহর।
গলায় আক্রোশ নিয়ে চেচিয়ে বলে কুহেলিকা–
“কালনাগিনী,বলছিলাম এ মেয়ে একদিন আমার ছেলে কে শেষ করে ছাড়বে!!
দেখলে তো তোমরা,দেখলে!!!
কুহেলিকা শ্বাসে বুক ভারী হয়ে আসে তার।আজরাহান যে তার চোখের মনি।
“কতো করে বললাম ছেড়ে দে এই মেয়েকে।না ছাড়বে না সে।”
কুহেলিকা ক্রোধিত হয়ে প্রহর এর চুল মুষ্ঠিবদ্ধ করে।মুখটা উর্ধ্বমুখী করে বলে–
“কী জাদু করেছিস আমার ছেলেকে??
কেনো চলে যাস না ওকে ছেড়ে??
প্রহর ব্যথায় যতটা না ককিয়ে উঠে তারচেয়ে বেশি কুহেলিকার কথায় ওর বুকের পাজর ভেঙে ঝনঝন করে উঠে।
“ছোট মা,,,,,
নন্দিতা দৌড়ে এসে ছাড়িয়ে নেয় কুহেলিকা কে।
“আম্মা, ওকে কেনো মারছেন।ওর কী দোষ??
“সব দোষ ওর।এই মেয়ে আমার ছেলের জীবনের অভিশাপ।”
ক্রন্দনরত প্রহর দু হাতে ফ্লোরে ভর দিয়ে থাকে।চুলের খোপা খুলে চুল ছড়িয়ে পড়েছে ওর চোখে মুখে।কালো আঁধার কেনো বারবার ওর সুখের ঘরের প্রদীপ নিভিয়ে দেয়??
ওর তো একটাই সম্বল।তাও কেনো বারবার ওকে ভাগ্যের কাছে নত হতে হয়!!!
কুহেলিকা এক বড় শ্বাস নিয়ে ঢলে পড়ে।প্রেসার ফল করেছে।নুরাইসা তাকে নিয়ে সোফায় বসায়।সানায়া কিছু বলছে না।থম মেরে বসে আছে।সকাল হতেই কেমন যেনো অস্থিরতা ভর করে রেখেছ।কু ডেকেছে তার মনে।এই ই হয়তো হওয়ার ছিলো!!
সানোয়ার আহমেদ নিজেকে সামলালেন।এমন মুহূর্তে তার কী ধরনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করা উচিত তিনি ভেবে পান না।তার ছেলে কখনো কোনো অন্যায় কাজ করেন নি।তাহলে!!!
গম্ভীর গলায় তটস্থ হয়ে তিনি সামানকে বললেন থানায় যাওয়ার কথা।কিন্তু চব্বিশ ঘন্টা হওয়ার আগে কোনো ধরনের কেস নেওয়া হবে না বলে দমে যান।আজকাল বুকের ব্যথাটা একটু একটু করে জানান দেয় সময় অনেকটা পাড়ি দেওয়া হয়েছে।এখন শুধু অপেক্ষা সেই অমোঘ সত্যের।চিনচিনে ব্যথায় বুকে হাত চেপে নিজের ঘরে গিয়ে বসলেন।
নুরাইসা নিস্তব্ধ।আজরাহান কে হয়তো এ জীবনে পাবে না কিন্তু তার প্রতি নুরাইসার ভালোবাসার বিন্দুসমও যদি আজরাহান নূরাইসা কে ফেরত দিতো হয়তো সে হাসতে হাসতে তার জীবনটা তার কাছে অর্পন করতো।কিন্তু বেঁচে থাকাও আজ অভিশপ্ত তার কাছে।বুকের খাচায় বন্দি ভালোবাসাকে সে উড়তে দিয়েছে।
খানিকবাদে কিছু একটা ভেবে প্রহর ওর চোখের পানি মুছে নেয়।শাড়ির আঁচল টা উঠিয়ে হন হন করে বেরিয়ে যায়।সবাই তা দেখলেও কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করলো না।
,
,
,
মাথার উপর একটা বালিশ চাপিয়ে ঘুমিয়ে আছে মারশিয়াদ।দরজা কড়াঘাত পড়তেই বিরক্তিভরা কন্ঠে বলে–
“চাচা কেউ আসলে যেতে বলেন,আর ওই নির্ধারন শালা এলে বলেন বসতে।আমি এখন ঘুমাচ্ছি।”
মারশিয়াদ আবার বালিশের নিচে দেয় মাথা।এই জন্যই দেওয়া যেনো ইব্রাহিম এর কড়াঘাত ওর কানে না পৌছায়।কিন্তু দরজায় আবারো কড়াঘাত পড়ে।মারশিয়ার ভ্রক্রুটি করে।আজকাল ঠিক মতো ঘুম হয় না তার।কখনো নিজের ইচ্ছায়,কখনো অন্যের।একরাশ বিরক্তি আর রাগ নিয়ে দরজা খুলেই—
“চাচা আপনাকে না,,,,,,
মারশিয়াদ এর ঘুম উবে যায় এক ঝলকে।এক শুকনো ঢোক গিলে।তার হৃদস্পন্দন এর গতি যেনো রকেট কেও হার মানায়।
,
,
কাউচে বসে আছে প্রহর।এক পা কাউচে অন্য পা নিচে দিয়ে প্রহর এর দিকে মুখ করে বসে আছে মারশিয়াদ।শিরা উপশিরায় বয়ে চলছে তার এক স্নিগ্ধ অনুভুতি।কিন্তু অধর ম্লান।প্রহর এর শান্ত শরীরের ভারী নিঃশ্বাস মারশিয়াদ কে বলছে এই তার ভালোবাসার ফাগুন এলো।প্রহর এর অক্ষিপল্লব ভেজা তার নেত্রনীড় এ।তা গড়িয়ে পড়ছে চিবুক বেয়ে তার পায়ের উপর।চুল এলোথেলো।এমন অবস্থায়ও তার সৌন্দর্যের কোনো অংশে ভাটা পড়েনা।
দু হাত নিজের কোলের মধ্যে রেখে নখ খুটে যাচ্ছে প্রহর।একটু পর পর নাক টেনে নিচ্ছে।কন্ঠে জড়তা নেই মারশিয়াদ এর।শীতল কন্ঠে বলে–
“আপনার কেনো মনে হলো আমি আপনার রাহান ভাইয়া কে ফিরিয়ে আনতে পারবো??
প্রহর নির্বাক থাকে।মারশিয়াদ জিঙ্গাসু কন্ঠে আবার বলে—
“বিশ্বাস করেন আমাকে,কাজলচোখী??
প্রহর চোখ মুছে।হালকা ঘাড় বাকাতে গেলে মারশিয়াদ বিদ্যুৎ গতিতে বলে—
“তাকাবেন না আপনি আমার দিকে।একবার তাকিয়েছেন বলে আমি আজও আপনার ওই চোখের মায়া ছাড়তে পারি নি।আর একবার তাকালে আমি সত্যিই মরে যাবো।”
প্রহর এক শ্বাস টেনে নেয়।হেচকি উঠেছে তার।কন্ঠে তার আর্দ্রতা মনে তার আশংকা।কান্নাজড়িত কন্ঠে হেচকি তুলে বলে–
“আপনি আমার রাহান ভাইয়া কে এনে দিন।”
প্রহর এর গলা কাঁপতে থাকে।সাথে তার পুরো শরীর।
“প্লিললজজ,এনে দিইনন আআমারর রাআহান ভাইয়া কে।ওরা তার কোনো ক্ষতি করে ফেলবে।প্লিজজ।”
প্রহর এর বলা প্রতিটি শব্দ মারশিয়ার মনে তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে।কম্পিত যে যন্ত্রটা আছে তার বুকের বা’পাশে তার কম্পন বেড়ে চলছে।মস্তিষ্ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তীব্র যন্ত্রণা।শরীর থেকে থেকে কেঁপে উঠছে।তার কাজলচোখী আজ তার একদম কাছে।যাকে সে ভালোবাসে।কিন্তু সে কোনোদিনও তার হবার নয়।
“ভালোবাসা মুক্ত পাখির মতো।তাকে উড়তে দিয়ে মুক্তির স্বাদ আস্বাদন করানো উচিত নাকি সোনার খাঁচায় বন্দি রেখে তার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া!!!
তার হৃদয় তো অনেক আগেই ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেছে।তার চোখের জল কেনো যেনো তাকে আজ ভাসাতে চায় তা সে জানে না।
কন্ঠে কোমলতা এনে বলে–
“ভয় পাচ্ছেন??
ভয় পাবেন না।আমি কথা দিচ্ছি,আপনার রাহান ভাইয়ার কিছু হবে না।
আমি থাকতে আপনার রাহান ভাইয়ার কেউ কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”
প্রহর তার অজান্তেই কান্না গিলে নেয়।মারশিয়াদ এর বলা কথায় তার কাপুনি থামে।সে বিশ্বাস করে তাকে।
,
,
,
“গাধার বাচ্চারা,বলেছি মেয়েটাকে উঠিয়ে আনতে এইটাকে কেনো আনলি??
লোকটার বলা কথাগুলো যেনো ইচ্ছে হচ্ছে ওর মুখের মধ্যেই আবার ডুকিয়ে দেয় আজরাহান।কয়েকদিন আগে রাস্তায় একটা মেয়েকে উত্তক্ত করার জন্য কয়েকটা ছেলেকে খুব মেরেছিলো আজরাহান।ওরাই আজ প্রহর কে তুলে আনতে গিয়ে আজরাহান কে তুলে এনেছে।
“ভেবেছিলাম আজকের রাত টা মজমাস্তি করে কাটাবো।কী করলি তোরা।দিলি তো পান্তা ভাতে ঘি ঢেলে!!!!
আজরাহান এর মাথার শিরাগুলো দপদপ করে বাজতে লাগলো।কন্ঠের তীব্রতায় বলল—
“ছাড় আমাকে।আর একবার ওর নামে বাজে কথা বলবি আমি তোদের একটাকেও ছাড়বো না।”
লোকটি উচ্চ শব্দে হেসে উঠে।ক্রুর সে হাসি।
“এইটাকে বসিয়ে রেখে এর সামনেই ওর বউয়ের সাথে ব্লেইমলেস নাইট কাটাবো।কাল গিয়ে ওর বউ কে তুলে আনবি।”
বলেই বিকট হাসিতে কাঁপিয়ে তোলে পুরো গোডাউন।হাত পা বাধা অবস্থায় নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে আজরাহান।
“ব্লেইমলেস নাইট কাটানোর শখ তোর উপরে গিয়ে পূরন করিস।”
একটা শক্ত এবং আক্রোশ ভরা কন্ঠ শুনতেই লোকটি পিছনে তাকাতেই একটা বুলেট এসে লাগে ঠিক র কপালের মধ্যখানে।ধম করে পড়ে যায়।
ক্ষীপ্র আওয়াজে বাকিদের বলে–
“তোদের কী নেমন্ত্রন করতে হব??
বাধন খোল ওর হাতের।”
দলের লিডার এর এমন করুন পরিনতিতে বাকি চ্যালাদের হাত পায়ের কাঁপন অলরেঠি শুরু হয়ে গেছে।শুকনো ঢোক গিলে যাচ্ছে একের পর এক।
ওরা আজরাহান এর বাধন খুলে দেয়।শিহরণ পাশেই দাড়ানো আর ও দাড়ানো কিছু লোক ওদের পাশেই।
মারশিয়াদ শ্বাস ছেড়ে শান্ত কন্ঠে বলে —
“ওকে গাড়িতে দিয়ে আয় শিহরণ।ওর ফিরে যাওয়া প্রয়োজন।”
মারশিয়াদ এর ক্ষীপ্ত দৃষ্টি ঠিক যেনো ভাগাড়ে থাকা মাংসের উপর শকুনের।তাকিয়ে আছে গুলিবিদ্ধ সেই লোকটির দিকে।আজরাহান নিরব চাহনি নিক্ষেপন করে মারশিয়াদ এর দিকে।ঘাড়ের রগ ফেপে উঠেছে তার।হাতের শিরা গুলোর বার্ডসার্কুলেশন যেনো পাল্লা দিয়ে দৌড়াচ্ছে।কপালে জমেছে ঘাম।
আজরাহান নিরব।হয়তো আন্দাজ ঠিক।শিহরণ ওকে গাড়িতে দিয়ে আসে।ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে থাকা নোংরা ছেলেগুলোর শেষ রক্ষা হয়নি।কারন মারশিয়াদ কাউকেই ছাড়েনি।গান এ সাইলেন্সার লাগানো তাই শুট করার আওয়াজ বাইরে থেকে পাওয়া যায়নি।কিন্তু বিপত্তি বাধে মারশিয়াদ এর পাগলামো তে।যে লোকটি প্রহর কে নিয়ে বাজে কথা বলেছে তার গলায় একের পর এক ছুরির আঘাতে পুরোই থ্যাতলে গিয়েছে।আর একটু হলেই যেনো মাথা থেকে শরীর আলাদা হয়ে যাবে।
ত্রস্ত পায়ে দৌড়ে এসে থামায় মারশিয়াদ কে।সমস্ত শরীরে রক্ত লেগে আছে।
“মারশিয়াদ থাম।”
“ওর সাহস কী করে হয় আমার কাজলচোখী কে বাজে কথা বলার!!
শিহরণ মারশিয়াদ কে উঠিয়ে ওদের সাথে আসা লোকগুলো কে লাশ গুলো সরিয়ে নিতে বলে।
,
,
,
ডিভানে বিবশ হয়ে বসে আছে মারশিয়াদ।বুকে তার অবাধ্য ব্যথা।যা ক্রমশ তার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।হৃদয়ে জমে থাকা তার লালিত যন্ত্রনাগুলো উপচে বেরিয়ে আসতে চাইছে যা সে দাবিয়ে রেখেছে।কষ্ট গুলো যেনো দলা পাকিয়ে তার গলায় বিধে গেছে।সে নিঃশ্বাস নিতে পারছেনা।
কন্ঠে তার একরাশ অভিমান।
“কেনো এলো সে আমার সামনে??কেনো এলো??
আমার এতো কাছে আসার অধিকার তো তার নেই।”
“শান্ত হ মারশিয়াদ।”
“আমি পারবো না তাকে ভুলতে।কোনো কিছুর বিনিময়ে না।”
হঠাৎ মারশিয়াদ পাগলের মতো আচরণ শুরু করে।শিহরণ কে ঝাকিয়ে বলতে থাকে–
“আমি কেনো তাকে যেতে দিলাম!!আমি চাইলেই তো তাকে নিজের করে নিতে পারতাম।বল না শিহরণ,বল।
তাহলে কেনো পারলাম না।আমার ভালোবাসা যে পবিত্র।আমি তাকে অপবিত্র করতে পারবো না।ভালো থাকুক সে।খুব ভালো থাকুক।”
শিহরণ ব্যথিত।তার কিছুই করার নেই।মারশিয়াদ আচমকাই শিহরণ কে জড়িয়ে ধরে।তার কন্ঠের ধলা পাকানো যন্ত্রনা তার কথায় পরিস্ফুটিত।
“সে কেনো পারলো না তার এক সমুদ্র ভালোবাসার এক বিন্দু আমাকে দিতে!!!
কেনো পারলো না।কেনো উপর ওয়ালা তাকে আমার সামনে এনে দিলো।আমার কাজলচোখী আমার অজানাতেই থাকতো।আমি না হয় তাকে আমার স্বপ্নেই ভালোবেসে যেতাম।সে বাস্তবে কেনো এলো আমার সামনে।আমি তাকে ভুলতে পারবো না।পারবো না।আমার এই জনমের প্রথম ভালোবাসা সে।পারবো না আমি।পারবো না।”
শিহরণ অনুভব করে ওর কাঁধের অংশে ভেজা।মারশিয়াদ কাঁদছে।আজ প্রথম ও কাঁদছে।
“হৃদয়ের যন্ত্রণায় যখন মরিচা ধরে তখন চোখের জলেই তা প্রশমিত হয়।”
“মানুষ তো পাথর নয়।অব্যক্ত অনুভুতি তাকে পাথর করে দেয় যা ভারী কিছুর আঘাতেই চূর্ন বিচূর্ন হয়।মানুষকে হতে হয় পানির মতো।যেনো সব পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে।”
শিহরণ এর দৃষ্টিপাত হয় মারশিয়াদ এর হাতে।ভয়ার্ত কন্ঠে বলে—
“মারশিয়াদ তুই আবারো ইঞ্জেকশন নিয়েছিস!!!!!
কাঁধ থেকে সরিয়ে দু বার ঝাকুনি দেয়।
“ওঠ মারশিয়াদ,ওঠ।”
ততক্ষনে মারশিয়াদ শান্ত।একদম স্নিগ্ধ শান্ত।
চলবে,,,
(বিঃদ্রঃ প্লিজ যারাই পেজ থেকে পড়বেন রিয়েক্ট এন্ড ছোট্ট করে কমেন্টস কইরেন।ইটস আ রিকোয়েস্ট)