মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব :১৬
ক্লাসে এসেই ইশা রাইমার পাশে বসে। ইশার চোখে পানি কিন্তু মুখে হাসি। রাইমা ভ্রু কুঁচকে ইশার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে,
“কিরে হাসছিস না কাঁদছিস?”
ইশা হেসে বলে,, ” দুটোই”
“মানে? ”
ইশা শুধু মুচকি হাসছে কিছু বলেনা। রাইমা বিরক্ত হয়ে বলে,
“কি হয়েছে বলবি?”
তারপর ইশা রাইমাকে আরিয়ানের কথা বলে। আরিয়ান লেংড়ি দিয়ে ওকে ফেলে দেওয়া, ক্লাসে নিয়ে যাওয়া,জড়িয়ে ধরা, ভালোবাসার কথাগুলো সব বলে। রাইমা হা করে সব শুনছে। তারপর ইশাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“তুই কি উত্তর দিলি?”
ইশা কিছু বলে না শুধু মুচকি হাসে।রাইমা ইশার হাসির মানে বুঝতে পেরে বলে,
” ইশা সত্যি?? এখন তোরা দুজন দুজনকে ভালবাসিস,,তারমানে তোরা এখন রিলেশনে আছিস?”
“রিলেশনে আছি কিনা জানিনা কিন্তু ভালোবাসি বলছি”
রাইমা ইশার পিঠে চাপড় দিয়ে বলে,
“গ্রেট জব..এতদিনে তুই একটা ভাল কাজ করেছিস”
ইশার তখনকার কথা মনে পড়ে, ইশা যখন আরিয়ানের বুকে মুখ গুঁজে দাঁড়িয়ে ছিল তখন আরিয়ান আবার জিজ্ঞেস করে,
“ভালোবাসো আমায়..???”
ইশা অনেকক্ষণ পর আরিয়ানের বুক থেকে মুখ তুলে আরিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে ” হুম ” বলে দৌড়ে বেরিয়ে সোজা ক্লাসে চলে আসে।
রাইমা গালে হাত দিয়ে সব শুনছে তারপর খুশিতে লাফিয়ে বলে,
“ইশু তুই জানিস না আমি আজকে কত খুশি! আজকে আরিয়ান ভাইয়াকে ধরবো ট্রিট দেওয়ার জন্য”
ইশা অবাক হয়ে বলে,, “কিসের ট্রিট?”
রাইমা ভাব নিয়ে বল,,
“বাহ রে তোরা দুজন প্রেম করছিস আর আমি ট্রিট পাবো না?”
ইশা রাইমার দিকে একটু রাগি চোখে তাকায়,,রাইমা বলে,,
“কিরে রাগছিস কেন?আমি কি ভুল বলেছি নাকি ? ”
ইশা কিছু বলে না বাইরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। রাইমাও ইশাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে আরিয়ানের কথা বলে ইশা লজ্জা ফেলে।
ক্লাস শেষে ইশা আর রাইমা মাঠে দিয়ে হাটঁছে,,হঠাৎ কোথা থেকে আরিয়ান এসে ওদের সামনে উপস্থিত হয়।আরিয়ানকে দেখে রাইমা খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলে,
“আরিয়ান ভাই আমার ট্রিট কোথায়? ”
আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে বলে, “কিসের ট্রিট??”
রাইমা বলে,, “আপনিও ইশার মতো! কিসের ট্রিট মানে,,আপনারা প্রেম করছেন আর আমি ট্রিট পাবো না?”
আরিয়ান হেসে বলে,, “অফকোর্স,পাবে না কেনো?”
ইশা একটু রেগে বলে,, ” আপনি ওর কথায় সায় দিচ্ছেন?কোনো ট্রিট লাগবে না”
তখন কোথা থেকে রিহান এসে বলে,,
“কেন?লাগবে না কেন তোমরা প্রেম করবে আর আমরা বুঝি ট্রিট পাবো না?এখনই বয়ফ্রেন্ডের টাকা বাঁচাও!”
রাইমা রিহানের তালে তালে বলে,, “হুমম..আমাদের ট্রিট চাই”
আরিয়ান হালকা হেসে বলে, “চলো আজকে তোমাদের সব কথা পূরণ করবো”
রাইমা খুশিতে লাফিয়ে বলে,, “চলেন চলেন”
ইশা আর কিছু বলেনা।
.
আরিয়ান,রিহান,ইশা আর রাইমা সবাই রেস্টুরেন্টে যায়। ইশা আরিয়ানের পাশে বসে আর রিহানের পাশে রাইমা বসে। আরিয়ান বলে,,
“রাইমা তোমার কি খেতে ইচ্ছা করছে তুমি অর্ডার দাও”
রাইমা অবাক হয়ে বলে,, “আমি?”
আরিয়ান মুচকি হেসে বলে, “হুম..তুমি ”
তারপর রাইমা খুশি হয়ে খাবার অর্ডার দে। খাবার খেতে খেতে রিহান আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“তোদের সব মান অভিমান ঠিক হলো কীভাবে?আমাকে কিন্তু বললি না”
আরিয়ান বলে, ” পরে বলব,,এখন খা”
রিহান আর কিছু বলে না।আরিয়ানের পাশে বসে খেতে ইশা কেন জানি আনইজি ফিল করছে।
আরিয়ান চামচ দিয়ে খাবার উঠিয়ে ইশার মুখের সামনে ধরে বলে,
“খাও ”
ইশা অবাক হয়ে আরিয়ানের হাতের দিকে তাকায়। আরিয়ান চোখের ইশারায় ইশাকে খেতে বলে। রাইমা,রিহান মুচকি মুচকি হাসছে। ইশা চারদিকে তাকায়।আরিয়ান বিরক্তি নিয়ে বলে,
“তোমাকে চারদিকে তাকাতে বলেনি, খেতে বলেছি… খাও”
ইশা অনেক অস্বস্তি নিয়ে খাবার মুখে দে। আরিয়ান আরএক চামচ মুখে দিতে গেলে ইশা বলে,,
“আপনার দিতে হবে না আমি খাচ্ছি”
আরিয়ানা ইশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে খাওয়া শুরু করে।
খাবার শেষে,আরিয়ান খাবারের বিল দিয়ে সবাই বেড়িয়ে আসে।আরিয়ান ইশা কে বলে,,
“চল তোমাকে আমি ড্রপ করে দি”
ইশা রাইমার দিকে তাকিয়ে বলে,, ” কিন্তু রাইমা কিভাবে যাবে?”
রাইমা আফসোস করে বলে,,
” কিভাবে আবার একা যাবো,,আজকে একটা বিএফ নেই বলে একা একা যেতে হচ্ছে!”
তখন রিহান বলে,
“তুমি চাইলে আমি তোমাকে ড্রপ করে দিতে পারি”
“না না..লাগবে না”
তখন ইশা বলে,
“লাগবেনা কেন?তোকে একা যেতে হবে না,তুই রিহান ভাইয়ার সাথে চলে যা”
আরিয়ান বলে, “হ্যাঁ রাইমা তুমি রিহানের সাথেই চলে যাও,না হলে তোমার বান্ধুবী তোমাকে একা যেতে দিবে না আর আমার সাথে যাবে না”
তারপর আরিয়ান রিহানকে বলে, “তুই ওকে বাসায় ড্রপ করে দিস”
রিহানকে এটা বলে আরিয়ান ইশার হাত ধরে গাড়িতে নিয়ে বসায়। আরিয়ান গাড়ি স্টার্ট দে,ইশা হাত দেখিয়ে রাইমাকে বিদায় জানায়।
আরিয়ান ইশা চলে যাওয়ার পর রিহান রাইমার দিকে তাকিয়ে বলে,” চলুন”
রাইমা আর কিছু না বলে বাইকে উঠে বসে।রিহান মুচকি হাসে।
রিহান বাইক চালাচ্ছে আর রাইমা রিহানের কাঁধে হাত দিয়ে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর রাইমা বলে,,
“ইশা আর আরিয়ান ভাইয়ার মান অভিমান কিভাবে ভাঙলো সেটা আপনি শুনতে চাই ছিলেন না?”
“হুম..তুমি জানো নাকি?”
“হ্যাঁ জানি তো। শুনবেন? ”
রিহান বলে, “হুম হুম.. বল”
তারপর ইশা রাইমাকে যা বলে,রাইমা রিহানকে বলে।রিহান বলে,,
“ওয়াও সো কিউট! দুজনকে কিন্তু ভালোই মানায়।তাই না?”
রাইমা সামনের দিকে তাকিয়ে বলে, “হুম খুব”
আবার কিছুক্ষণ নিরবতা। রাইমা রিহান কেউ কিছু বলে না।তারপর হঠাৎ রিহান বলে,
“আচ্ছা তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে?”
বয়ফ্রেন্ডের কথা শুনে রাইমা হকচকিয়ে যায়। তারপর আবার অবাক হয়,, ওর নাকি থাকবে বয়ফ্রেন্ড!
রাইমা একটা হাসি দিয়ে বলে,, ” না না আমার ওসব নেই”
রিহান একটু অবাক হয়ে বলে, “কেন?”
“মনের মত কাউকে পাইনি তাই ”
” তা তোমার কেমন ছেলে পছন্দ?”
“সেটা জেনে আপনি কি করবেন?”
“আরে বলোনা,,একটু জেনে রাখি”
“যে আমাকে খুব ভালবাসবে, আমি রেগে গেলে মিষ্টি করে রাগ ভাঙ্গাবে। মাঝে মাঝে ঘুরতে নিয়ে যাবে। আর হ্যাঁ অনেক কেয়ারিং হতে হবে”
রিহান হেসে বলে, “বাব বাহ..এত কিছু একসাথে থাকতে হবে?”
রাইমা একটু ভাব নিয়ে বলে, “হ্যাঁ তো?”
“নাহ কিছুনা”
” আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?
“নাহ..গার্লফ্রেন্ড মানেই প্যারা”
রাইমা অবাক হয়ে বলে, “গার্লফ্রেন্ড মানে প্যারা?”
রিহান বিরক্তি নিয়ে বলে, “হ্যাঁ”
রাইমার জোরে হেসে দে। তারপর বলে,
“তা আগে কয়টা ছিলো যে আপনার গার্লফ্রেন্ড মানে প্যারা মনে হয়!”
“আমার একটা ছিলো কিন্তু বন্ধুদের গার্লফ্রেন্ড গুলো দেখেই আরে প্রেম করতে ইচ্ছে করেনা”
“একটা ছিলো? ব্রেকআপ হলো কেন?”
“ওর বিয়ে হয়ে গিয়েছে”
রাইমা এবার জোরে হেসে দেয়।
তারপর বলে,, “সো স্যাড”
রিহান বলে, “তখন আমি কলেজে পড়তাম,ছোট ছিলাম এখন সব ভুলে গেছি”
রাইমা কিছু না বলে মিটিমিটি হাসছে। ওর কেন জানি রিহানের গার্লফ্রেন্ডের বিয়ের কথা শুনে হাসি পাচ্ছে।রিহান বাইকের আয়নায় রাইমার হাসি মুখ দেখে বলে,
“হাসছো কেন?”
রাইমা তাড়াতাড়ি হাসি থামিয়ে বলে, “না না কিছু না”
রিহান আর কিছু বলে না।রাইমার হাসি মুখ দেখতে থাকে!
আরিয়ান ইশাদের বাসার সামনে গাড়ি থামিয়ে ইশার দিকে তাকায়।
ইশা মিষ্টি হেসে বলে, ” আমি আসছি”
.
ইশা গাড়ির দরজা খুলতে যাবে তখন আরিয়ান ইশার হাত ধরে অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে,
“আর একটু থাকো না প্লিজ”
ইশা হেসে বলে, “থাকবো মানে বাসায় চলে এসেছি তো”
“তোমাকে আজকে ছাড়তে ইচ্ছা করছে না, ইচ্ছে করছে সারাক্ষণ তোমাকে আমার সামনে বসিয়ে রাখি!”
ইশা এবার জোরে হেসে দেয় আরিয়ানের পাগলামি দেখে। তারপর বলে, “একদিনেই এই অবস্থা..!”
আরিয়ান কিছু বলে না,ইশার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আবার অনেকক্ষণ পর ইশা বলে,
“এবার অনেক দেরি হয়ে গেছে আসছি”
ইশা গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ে। তারপর গাড়ির জানালা দিয়ে আরিয়ানকে বিদায় জানিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকে পড়ে।আরিয়ান ইশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়!
ইশা বাসায় এসে দৌড়ে ব্যালকনিতে চলে যায়,দেখে আরিয়ানের গাড়ি চলে যাচ্ছে।তারপর ইশার রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে আর মুচকি মুচকি হাসে। তারপর লজ্জা পেয়ে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢাকে, ইশার বারবার আরিয়ানের জড়িয়ে ধরার কথাটা মনে পড়ছে!
তারপর ইশা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য।আজকে ও খুব খুশি…!
চলবে….