মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব :১৯
কেটে গেছে অনেক দিন।আরিয়ানের সাথে ইশা খুব খুশিতে আছে,, ওদের রিলেশনের খুব ভালোভাবে চলছে।মাঝে মাঝে ক্লাস না থাকলে ঘুরতে যাওয়া,রাত জেগে ফোনে কথা বলা, ভার্সিটিতে লুকিয়ে দেখা করা।দিনকাল ভালোই কাটছে…
কিন্তু ইশা একটা বিষয় বুঝতে পারছেনা,আরিয়ান ওদের রিলেশনের কথা ওর বন্ধুদের কেন বলছে না! আরিয়ানের তো কোনো সমস্যা নেই তবুও আরিয়ান কাউকে বলেনও ওদের রিলেশনের কথা। শুধুমাত্র রিহান জানে! ইশা মাঝে মাঝে এভাবে আরিয়ানকে প্রশ্ন করবে কিন্তু পরে আবার ভাবে আরিয়ান যেহেতু সিক্রেট রাখতে চায় তাহলে থাক!
অন্যদিকে রাইমা রিহানের সম্পর্কটা খুব ভালো হয়েছে। এখনও ওরা ঝগড়া করে,, তবে খুব কম।রিহান প্রায় সময়ই রাইমাকে বাসায় ড্রপ করে দেয়।আবার ভার্সিটিতে আসার সময় রাইমার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকে।রাইমাও রিহানকে কিছু বলে না..!!
আরিয়ান আর ইশা অনেকক্ষণ ধরে গাড়িতে বসে আছে।আরিয়ান ইশাকে বাসা থেকে ভার্সিটিতে নিয়ে আসে।ভার্সিটিতে এসে ইশা গাড়ি থেকে নামতে গেলে আগে আরিয়ান ওকে আটকে দেয়।সেই থেকে এখন পর্যন্ত বসিয়ে রেখেছে। ইশা বিরক্তি নিয়ে বলে,
“কি হলো,, এবার যাই? আমার ক্লাস দেরি হয়ে যাবে তো!”
“তোমার শুধু ক্লাস আর ক্লাস,,তোমার বয়ফ্রেন্ডের দিকে একটু নজর দিতে পারো না?”
ইশা এবার আরিয়ানের সামনে সোজাসোজি হয়ে বসে বলে,
“হ্যাঁ দিলাম নজর.. বলুন কি বলবেন?”
আরিয়ান বলে, ” কিছু না”
ইশা এবার হাত নেড়ে বলে, ” তাহলে আমাকে এখানে বসিয়ে রেখেছেন কেন?”
আরিয়ান গালে হাত দিয়ে বল,”তোমাকে দেখবো তাই ”
ইশা আরিয়ানকে একটা ভেংচি কেটে বলে,
“আগে দেখিন নি?এতো দেখার কি আছে?”
আরিয়ান কিছু না বলেই ইশার দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ আরিয়ান ইশার হাত ধরে।এবার আর ইশা কেঁপে ওঠে না, কারণ ইশা এসবে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে।এই একমাসে আরিয়ান প্রায় সময় বিনা পারমিশনে ইশার হাত ধরে।ইশা কিছু বলেনা! আরিয়ান হাত ধরলে ওর ও খুব ভালো লাগে
আরিয়ান ইশার হাত ধরে আঙ্গুলগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে বলে,
“আমাকে বিশ্বাস করো ইশা?”
ইশা অবাক হয়ে বলে, “হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
আরিয়ান একটু হেসে বলে, ” উত্তর দাও”
“করি তো ”
“কতটা?”
“আমার বাবা মায়ের পর আমি সব থেকে বেশি বিশ্বাস করি আপনাকে!”
আরিয়ান ইশার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “সত্যি?”
ইশাও আরিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “হুম”
“আমি যদি কখনো তোমার বিশ্বাস ভঙ্গ করি?”
ইশা এবার কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,
“আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন?”
আরিয়ান একটু হেসে বলে,
” আরে এমনি মনে হল তাই বললাম, এসব সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই”
কিছুক্ষণ পর আরিয়ান আবার বলে, ” আমার একটা কথা রাখবা?”
ইশা আরিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, ” কি কথা?”
“আগে বলো রাখবা”
” আরে আপনি বলুন তো”
“আমাকে তুমি এবার থেকে তুমি করে বলবে,নো আপনি”
ইশা অসহায় মুখ করে বলে, ” তুমি করে বলতে হবে? ”
“হ্যাঁ,কেনো?পারবে না?”
“আমার আপনাকে আপনি করে কথা বলতে ভালো লাগে,, প্লিজ আপনি করে বলি”
” না না তুমি করে বলতে হবে”
তারপর আরিয়ান মন খারাপ করে বলে, ” আচ্ছা ঠিক আছে তোমার ইচ্ছে!ক্লাসে যাও”
আরিয়ানের মন খারাপ দেখে ইশা হাত কচলে বলে আস্তে আস্তে বলে,
” আচ্ছা ঠিক আছে আমি চেষ্টা করবো”
আরিয়ান ইশার দিকে তাকালে ইশা বলে, ” প্রথমে তো আপনি থেকে তুমি তে চলে যেতে পারবো না আস্তে আস্তে চেষ্টা করবো”
আরিয়ান খুশি হয়ে হঠাৎ করে ইশার গালে কিস করে।ইশা অবাক হয়ে গালে হাত দিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকায়।এই প্রথম আরিয়ান ওকে কিস করল!আগে শুধু হাত ধরা,জড়িয়ে ধরা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল,,আজকে কিস..!
ইশার অবাক চাহনি দেখে আরিয়ান হেসে ফেলে।তারপর বলে,
“কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? ”
ইশা গালে হাত দিয়ে বলে, ” আপনি আমাকে কিস করলেন!”
“নাহ পাপ্পি দিলাম।কিস তো করে… বলে আরিয়ান ঠোঁটের দিকে ইশারা করে। ইশা চোখ বড় বড় করে আরিয়ানের দিকে তাকায়।
তখন আরিয়ান বলে,
” আসো তোমাকে কিস করি”
আরিয়ান ইশার দিকে এগুলে ইশা তাড়াতাড়ি করে গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ে। তারপর যাওয়ার আগে জানালা দিয়ে বলে, ” অসভ্য”
আরিয়ান ইশা কথায় জোরে হেসে দে।
রাইমা ভার্সিটির গেট দিয়ে ঢুকে যাবে তখন কারোর ডাকে পেছনে ফেরে। তাকিয়ে দেখে রিহান পকেটে হাত দিয়ে মিষ্টি হেসে দাঁড়িয়ে আছে। রাইমাকে পেছনে ফিরতে দেখে রিহান এগিয়ে আসে। তারপর বলে,
” আজকে কি বেশি ইম্পরট্যান্ট ক্লাস আছে?”
রাইমা ভ্রু কুঁচকে বলে, “কেনো?”
রিহান বলে, “বলোনা!”
“না বেশি ইম্পরট্যান্ট ক্লাস নেই কিন্তু কেনো?”
“আসলে তোমার সাথে কিছু কথা ছিল”
রাইমা রিহানের দিকে তাকিয়ে বলে, “তো বলেন”
“না এখানে না.. আজকে ক্লাস না করলে খুব বেশি ক্ষতি হবে? আমার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে তারপর বলব। যাবে?”
রাইমা অবাক হয়ে ভাবতে থাকে রিহান কি এমন বলবে আর কোথায় নিয়ে যাবে! তারপর রাইমা কি যেন ভেবে রাজি হয়ে যায়!
রাইমা বলে, “আচ্ছা চলেন”
ইশা ক্লাসে বসে মিটিমিটি হাসছে ও বারবার গালে হাত দিচ্ছে আর আরিয়ানের কিস করার কথা মনে পড়ছে।ইশা লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। ইশা ভাবছে,রাইমাকে কি এটা বলবে নাকি বলবে না!বললেতো রাইমা এটা নিয়ে খেপাবে আবার না বলেও থাকতে পারবে না!ইশা রাইমার সাথে সবকিছু শেয়ার করে।ইশা ভাবে রাইমা আসলে দেখা যাবে,বলবে কিনা! তারপর ঘড়ির দিকে তাকায় রাইমা এখনো আসছে না কেন!!
.
রিহান বাইক নিয়ে একটা পার্কে যায়। রাইমা অবাক হয়ে চারদিক দেখছে। রিহান ওকে এখানে কেন নিয়ে আসলো। রিহান রাইমাকে নিয়ে পার্কে একটা বেঞ্চে গিয়ে বসে। রিহান বলে,
“আমি চাইলে তোমাকে বড় কোন রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে কথাটা বলতে পারতাম কিন্তু আমার মনে হয় এখানেই,খোলা আকাশের নিচে কথাটা বলাই বেটার”
রাইমা অবাক হয়ে ভাবতে থাকে রিহান কি এমন বলবে! তাই জানার জন্য রাইমা বলে,
“কি বলবেন বলেন”
রিহান আমতা আমতা করে বলে, ” কিছু মনে করবে না তো?আমার সাথে আবার কথা বলা বন্ধ করে দেবে না তো?”
“আরে আপনি আগে বলুন তো কি বলবেন?”
“আচ্ছা একটু পরে বলবো.. বাদাম খাবে?”
বলে রিহান ওখানে একটা বাদামওয়ালার কাছ থেকে বাদাম কিনে রাইমাকে দে।রাইমা অবাক হয়ে রিহানের কর্মকাণ্ড দেখছে।রিহান বাদামের খোসা ছাড়িয়ে রাইমার হাতে দে।রাইমা এখনো অবাক হয়েই রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। রিহান বলে,
“কি হলো? খাও”
রাইমা কিছু না বলে বাদাম মুখে দে।কিছুক্ষণ পর রাইমা বলে,
“আপনি কি বলবেন, নাকি আমি চলে যাবো?”
রিহান উত্তেজিত হয়ে বলে, ” আরে রেগে যাচ্ছো নাকি?”
“না রাগছি না, কিন্তু আপনি কি বলবেন বলেন,না হলে শুধু শুধু এখানে বসে থাকবো কেন?”
“আসলে…”
” কি????”
রিহান হঠাৎ হাঁটু গেড়ে রাইমার সামনে বসে পড়ে। রাইমা বেঞ্চে বসে আছে। রাইমা তাড়াতাড়ি করে বলে,
“কি হলো,, এখানে বসে আছেন কেন?”
রিহান রাইমার হাত ধরে রাইমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, ” রাইমা আমি তোমাকে ভালোবাসি”
রাইমা অবাক হয়ে রিহানের দিকে তাকিয়ে আছে। রিহান এটা বলবে রাইমা ভাবতে পারেনি।রিহান একদৃষ্টিতে রাইমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।এভাবে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর রাইমার ওঠে পড়ে রিহাম রাইমার হাত ধরে বলে,
“কি হলো কিছু বলো?”
রাইমা রিহানের দিকে না তাকিয়ে বলে, ” আমার একটু টাইম লাগবে”
রিহান প্রথম একটু ভয় পেয়ে যায় তারপর হেসে বলে,
“আচ্ছা ঠিক আছে. তোমার যত খুশি সময় নাও।আমি তোমাকে চাপ দেবোনা।আমি নিজের মনের কথাটা না বলে থাকতে পারছিলাম না, তাই আজকে বলে দিলাম। কিন্তু তুমি প্লীজ আমার সাথে আনইজি ফিল করো না।তুমি চাইলে আমরা আগের মতোই বন্ধু হিসেবে থাকতে পারি… প্লিজ”
রাইমা রিহানের দিকে তাকিয়ে বলে, ” আচ্ছা চলেন”
রিহান অনুরোধের সুরে বলে, ” আরেকটু বসো না”
রাইমা রিহানের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভেবে বসে পড়ে। রাইমা,রিহান পাশাপাশি বসে আছে।রিহান বলে,
“আচ্ছা আমি কি খারাপ একটা ছেলে?”
রাইমা রিহানের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,
” আপনি খারাপ হবেন কেনো?”
“তাহলে আমি যখন ভালোবাসার কথা বললাম তুমি চলে যাচ্ছিলে কেন?”
রাইমা হাত কচলে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,
“আসলে আপনি আমাকে ভালোবাসেন এটা কেন জানি বিশ্বাস করতে পারছি না”
“কেন পারছো না?’
“জানি না”
রিহান একটু মুচকি হাসে কিছু বলেনা।সামনে কিছু বাচ্চারা খেলাধুলা করছে রাইমা দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছু একটা ভাবছে..
চলবে….