মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব:২৪
গতকালকের ঘটনার কথা ভার্সিটির অনেকেই জেনে গেছে, সবাই ইশার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। কিছু কিছু মেয়ে তো মিটিমিটি হাসছে। এতদিন ইশার সাথে আরিয়ানকে ওরা মেনে নিতে পারেনি। এখন আরিয়ান ইশাকে ধোঁকা দিয়েছে, ওদের খুশি দেখে কে!
সেকেন্ড ক্লাসটা ওই স্যারের ক্লাস ছিল, যিনি ইশাক আর আরিয়ানকে লাইব্রেরীতে দেখেছে। ক্লাসে এসে ইশাকে দেখে স্যার অনেকটা অবাক হয়।কারণ কালকের এত বড় ঘটনার পর ইশা ভার্সিটিতে আসবে ওনি ভাবতে পারেনি।তারপর ভাবে হয়তো মেয়েটাও তার ভুল বুঝতে পেরেছে। স্যার একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে পড়া শুরু করে। ইশা নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে।
তিনটা ক্লাস পর এক ঘন্টার একটা ব্রেক আছে। রাইমা ইশাকে বলে,
“চল ক্যান্টিনে যাবো”
“ইশা বলে, ” নারে যাবো না,ভালো লাগছে না”
“তোর খিদে পায়নি?”
” না,,তুই যা না”
রাইমা ইশার পাশে বসে ইশার কাঁধে হাত রেখে বলে, “মন খারাপ? ”
“না না.. আমি ঠিক আছি”
“তাহলে চল”
“রাইমা…”
“না আমি কিছু শুনতে চাই না। তোর যেতে হবে চল”
রাইমা ইশার হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দেয়। অজ্ঞতা উপায় না পেয়ে ইশা রাইমার সাথে যায়। রাইমা জানে ইশার মন খারাপ, তাই ইশার মন ভালো রাখার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করে।
ক্যান্টিনে বসে রাইমা বার্গার খাচ্ছিল আর ইশার সামনে বার্গার কিন্তু ও চুপচাপ বসে আছে। রাইমা খেতে খেতে বলে, ” কিরে খাচ্ছিস না কেনো?”
ইশা বার্গারের প্লেটে হাত দিতে যায় তখন ইশার সামনে থেকে কে যেনো প্লেট সরিয়ে দেয়। ইশা চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে আরিয়ান পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।ইশার দৃষ্টি অনুসরণ করে রাইমাও তাকায়।
আরিয়ান পাশের টেবিল থেকে একটা চেয়ার এনে,চেয়ারটা উল্টো করে ইশার সোজাসুজি বলে,
“তুমি এত স্ট্রং জানতাম না তো! এত কিছুর পরও কিভাবে সবার সামনে ক্যান্টিনে বসে খাচ্ছ!”
রাইমার প্রচুর রাগ উঠছে কিন্তু ও শান্তকণ্ঠে বলে,
“আরিয়ান ভাই আপনার সাথে আমার কথা আছে”
আরিয়ান রাইমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“হ্যাঁ বলো..”
“কালকের ঘটনাটা কি সত্যি?”
আরিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
“অফকোর্স কোনো সন্দেহ?”
রাইমা রেগে বলে, ” আপনি ইশাকে ভালোবাসেন না?”
“ওহ কিউটি পাই তুমি কি সবটা শোনোনি?আমি ইশার সাথে নাটক করছি,নো লাভ”
বলেই আরিয়ান জোরে হেসে দে।ইশা একদৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।রাইমা বলে,
” আপনার লজ্জা করে না এভাবে বলতে?একটা মেয়ের সাথে ভালোবাসা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে?”
” লজ্জা?কিসের লজ্জা? আমি তো খুব খুশি! আমাকে চড় মারার প্রতিশোধ নিতে পেরেছি”
রাইমার রাগে ফুঁসছে আর আরিয়ান বাঁকা হাসি দিয়ে ইশার দিকে তাকিয়ে আছে।এইদিকে ইশা মাথা নিচু করে রাইমার আরিয়ানের কথা শুনছে। রাইমা রেগে বলে,
“তো এখানে কেন এসেছেন?”
আরিয়ান হেসে বলে, “আরে কুলকুল এতো রাগ করছ কেন? আমিতো দেখতে এলাম বেচারী মেয়েটা কেমন আছে?”
” ইশা কেমন আছে না আছে আপনাকে দেখতে হবে না, আপনি আর ওর আশেপাশে আসবেন না”
আরিয়ান একটু রাইমার দিকে এগিয়ে বলে, “আসবো,একশোবার আসবো!তোমার সমস্যা?”
” হ্যাঁ সমস্যা।আপনি ইশাকে এত কষ্ট দিয়েছেন এখন আমি চাই না আপনি ওর আশেপাশে ঘুরঘুর করেন”
“ও হ্যালো আমি ওর আশেপাশে ঘুরঘুর করিনি, আমি তোকে একটু জ্বালাতে এসেছি! আচ্ছা থাক তুমি মনে হয় রেগে আছো আজকে একটু বেশি হয়ে গেছে। বাকিটা কালকে!”
তারপর আরিয়ার উঠে চলে যায়। কিছুটা গিয়ে আবার ফিরে এসে টেবিল থেকে সসের বোতলটা নিয়ে পুরোটা সস ইশার বার্গারে ঢেলে দে। ইশা অবাক হয়ে একবার আরিয়ানের দিকে আর একবার বার্গারের দিকে তাকায়।আরিয়ান ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
“বাইইইই ইশু…”
তারপর বাঁকা হেসে পকেটে হাত দিয়ে চলে যায়। রাইমা রেগে কিছু বলতে যাবে ইশা রাইমাকে থামিয়ে দেয়। তারপর বলে,
“ওনার যা ইচ্ছে করুক। আমরা চুপ থাকলেই তো হবে”
“কিন্তু তাই বলে…”
ইশা রাইমাকে থামিয়ে দে। রাইমা আা কিছু বলে না ওর খুব রাগ হচ্ছে। রাইমা ইশার জন্য নতুন করে আবার বার্গার অর্ডার দে। তারপর খাওয়া দাওয়া করে দুজন চলে যায় ক্লাসে।
.
বাসায় এসে ইশা সোজা ওর রুমে চলে যায় ফ্রেস হতে। তারপর আর রুম থেকে বের হয়না।
বিকালে ইশার আম্মু এসে ইশাকে দেখতে না পেয়ে ইশার বাবাকে বলে, ” ইশা কোথায়?”
“ঘুমোচ্ছে মনে হয়।ভার্সিটি থেকে এসে রুমের দরজা দিয়েছে আর খুলেনি”
“তুমি ডেকেছিলে?”
” হ্যাঁ কিন্তু সাড়া দেয়নি”
ইশার মা চিন্তিত মুখে বলে, ” আজকে ভার্সিটিতে নিশ্চয়ই কেউ অপমান করেছে,ও একা এতোসময় রুমে কি করছে?”
“চিন্তা করো না আমাদের ইশা যথেষ্ট স্ট্রং, ও কোনো ভুল পদক্ষেপ নেবে না”
ইশার মা ও ইশাকে চিনে,কারোর অপমানে ইশা কোনো ভুল পদক্ষেপ নিবে না। ইশা আরো যতই কষ্ট পাক ও যথেষ্ট স্ট্রং,মরার কথা মাথায় আনবে না কিন্তু মায়ের মন তো,তাই একটু বেশিই দুশ্চিন্তা হয়!ইশার রুমের দরজা এতক্ষণ বন্ধ তাই ইশার মা চিন্তায় পড়ে যায়।
ইশার মা ইশার রুমের সামনে গিয়ে দরজায় টোকা দিয়ে বলে,
“ইশা ইশা… দরজা খোল”
দুইবার ডাকার পর ইশা এসে দরজা খুলে দেয়।পড়নে একটা গোলাপি কালার টি-শার্ট আর কালো প্লাজু। ওর চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে, মুখটা ফোলা ফোলা দেখে বুঝাই যাচ্ছে এতক্ষণ ঘুমাচ্ছিল।
ইশার মা মিষ্টি হেসে বলে, ” ঘুমাচ্ছিস?”
“হম এতক্ষণ ঘুমাচ্ছিলাম, এখন ঘুম ভেঙ্গে গেছে।দাঁড়াও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি একসাথে কফি খাবো”
“হুম তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়”
ইশার মা ইশার বাবার দিকে তাকালে ইশার বাবা হাসে। এ হাসির মানে উনার বিশ্বাসই ঠিক ইশা কোনো ভুল কাজ করবেনা।ইশা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ওর বাবা-মা ড্রইংরুমে বসে আছে। ইশা বাবার পাশে বসে কফির মগ হাতে নে। ইশার মা জিজ্ঞেস করে,
“ভার্সিটিতে কোন সমস্যা হয়নি তো?”
ইশা একটু হেসে করে বলে, “না,,সব ঠিক আছে”
“আরিয়ান কিছু বলেছে?”
” না!”
ইশার মা সন্দিহান চোখে ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
“সত্যি তো?”
ইশা হাত কচলে বলে, “আসলে…”
ইশার বাবা ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“কি হয়েছে বল”
ইশা ওর বাবা-মার কাছে সব কথা শেয়ার করে। আরিয়ান আর ওর রিলেশনের কথাটা বলেনি তাই এখন এত বড় শাস্তি পাচ্ছে কিন্তু ইশা প্রতিজ্ঞা করেছে এবার থেকে বাবা মাকে সব খুলে বলবে।
তারপর ইশা ওর বাবা-মা কে ভার্সিটিতে আরিয়ান আর জারার সকালের বলা কথাগুলো তারপর ক্যান্টিনের কথা,,সব বলে। সব শুনে ইশার বাবা বলে,
“ছেলেটা এভাবে আমার মেয়েকে জ্বালাবে আর আমরা এখনও চুপচাপ বসে থাকবো”
“আরিয়ান কি চাইছে সেটা তো বুঝতে পারছি না কিন্তু ইশা আরিয়ান তোকে যত ইচ্ছে জ্বালাক,তুই সব সময় নিজেকে শক্ত রাখবি,ভেঙে পড়বি না।দেখিয়ে দিবি ও যাই বলুক না কেন তোর তাতে কিছু যায় আসে না”
ইশা মাথা নীচু করে বলে, ” হুমমম”
ইশার মা ইশার বাবাকে বলে,
” তুমি এত উত্তেজিত হচ্ছো কেনো দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে”
ইশার ওর মাকে জড়িয়ে ধরে।আজকে যদি ওর মা-বাবা ওকে না বুঝতো ইশা সত্যি খুব ভেঙ্গে পড়তো,রাইমা ঠিকই বলে ইশা খুব লাকি।এসব ভেবে ইশা মিচকি হাসে।তারপর কেউ কিছু বলেনা,প্রসঙ্গ পাল্টাতে ইশার মা উনার স্কুলের গল্প করতে থাকে। হাসি মজার মধ্য দিয়ে ওদের তিনজনের ভালোই সময় কাটে।
.
পরদিন….
আজকে শুক্রবার তাই ভার্সিটি অফ।রাইমা রিহানকে ফোন করে বলেছে দেখা করার জন্য।রিহান গতকাল ভার্সিটিতে আসেনি। ফোন বন্ধ ছিল তাই রাইমা রিহানের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি আজকে দেখা করার কথা বলতে রিহান বলেছে দেখা করবে।
রাইমা একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে। কিছুক্ষণ পরে রিহান আসে একটু হেসে বলে,
“সরি সরি একটু দেরি হয়ে গেল”
“ওকে বসো”
রিহান বসতে বসতে বলে, ” হুম কেমন আছো?”
রাইমা একটু হেসে বলে, “ভালো তুমি?”
“হুম ভালোই, সরি কালকে তোমার সাথে কথা বলতে পারিনি আসলে আব্বুর একটা বন্ধু এক্সিডেন্ট করেছে। উনার কোনো ছেলে নেই,, ছোট ছোট মেয়ে আর আপনজনরাও কাছে নেই তাই আমাকে সব করতে হয়েছে”
রাইমা হেসে বলে, ” এতে সরি বলার কী আছে?তুমি তো ভালো কাজই করেছো”
” হ্যাঁ আচ্ছা কি খাবে বলো”
“বেশি কিছু না এক কাপ কফি হলেই চলবে”
রিহান বলে, “শুধু কফি?”
রাইমা মুচকি হেসে বলে, “হুম”
তারপর রিহান ওয়েটারকে ডেকে কফি অর্ডার দিয়ে রাইমাকে বলে,
“তো আজকে নিজ থেকে আমাকে ডাকলে কোনো স্পেশাল কারণ?”
“হ্যাঁ আসলে….”
রাইমা কে থামিয়ে দিয়ে রিহান দুষ্টু হেসে বলে,
“একদিন আমাকে না দেখেই এতো এত পাগল হয়ে গেলে যে দেখার জন্য ছুটে এসেছো!”
রাইমা বিরক্তি নিয়ে বলে, ” ফালতু কথা রাখো তো তোমার সাথে ইম্পরর্টেন্ট কথা আছে”
চলবে….