মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব: ২৬
রিহানের কথা শুনে জারা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কেনো?আরিয়ান আমার সাথে থাকলে তোর কি প্রবলেম?”
রিহান একবার জারার দিকে তাকিয়ে মুখ সরিয়ে নেয়।জারা খুব ছোট একটা ড্রেস পড়েছে,ওর বুকের ভাজ বুঝা যাচ্ছে।রিহান আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে জারা কে বলে,
“আমি তোকে বলিনি।
আর তোকে জিজ্ঞেস করছি,কিরে বল ফোন ধরলি না কেন?”
রিহান আরিয়ানের দিকে তাকায়।আরিয়ান বিরক্তি নিয়ে বলে,
“দেখছিস তো বিজি আছি”
রিহান রাগি কন্ঠে বলে “সে তো দেখতেই পাচ্ছি তুই কি কাজে বিজি আছিস!”
তারপর একটু শান্ত হয়ে বলে,
“তোর সাথে কথা আছে।চল…”
আরিয়ান মদের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বলে,
“কি কথা বল?”
“এখানে না তুই চল”
আরিয়ান রিহানের দিকে তাকিয় বলে,
“এখন কি আমার তোর কথা মতো চলতে হবে? যা বলার এখানেই বল”
রিহান এবার খুব রেগে যায়। এমনিতেই রাইমা কল ধরছেনা তার উপর আরিয়ানের এমন কথা। রিহান আরিয়ানকে বলে,
“তুই কি চাইছিসটা কি?তুই নাকি এতদিন ইশার সাথে নাটক করেছিস?ইশার মন নিয়ে খেলে এখন এখানে ফুর্তি করা হচ্ছে?তোর সমস্যাটা কি??”
আরিহান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হেসে বলে,
“আরে আগে শান্ত হ!এতো রেগে আছিস কেন? আর তোকে এসব কী বলল?ওহ… তোর গার্লফ্রেন্ড রাইমা?”
রিহান এবার আরিয়ানের পাশে বসে বলে, “হ্যাঁ রাইমা বলেছে।আরিয়ান এসব কি সত্যি?”
“হ্যাঁ সত্যি!”
“মানে তুই সত্যিই ইশার সাথে নাটক করেছিস?কিন্তু কেন?”
“আরে ইয়ার রিহান,, তুই আমার বন্ধু হয়ে আমাকে বুঝতে পারিস না? ইশা আমাকে চড় মেরেছিল!এই আরিয়ান চৌধুরীকে?আর আমি ওকে এমনি এমনি ছেড়ে দেবো?”
রিহান এবার রেগে বলে, “কিন্তু তাই বলে ওর সাথে এরকম একটা খেলা খেলবি?”
আরিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
“হ্যাঁ আমার যা ইচ্ছা তাই করবো তোর এত গায়ে লাগে কেনো?”
“ইশা আমার বোনের মতো…”
জারা এতক্ষণ বসে বসে আরিয়ান আর রিহানের কথা শুনছিল।জারার খুব মজা লাগছে!
জারা প্রথমে ভেবেছিলো আরিয়ান হয়তো সত্যিই ইশাকে ভালোবাসে কিন্তু এখন সব শুনে জারা প্রচন্ড খুশি হয়। রিহানের কথা শুনে জারা মুখ ভেঙ্গিয়ে বলে ,
“ইশা তোর কোন জন্মের বোন রে?”
রিহান রেগে কিছু বলতে যাবে কিন্তু মাঝখানে আরিয়ান বলে,
“ও বুঝেছি তুই কেনো এতো রেগে আছিস!রাইমার সাথে ঝগড়া হয়েছে?”
রিহান মন খারাপ করে বলে,
“রাইমা আমার সাথে ব্রেকআপ করতে চায়।ও ভাবে তুই যেহেতু ইশার সাথে এরকম করছিস, আমিও বোধহয় ওর সাথে এরকম করবো!কিন্তু আমি ওকে সত্যি ভালোবাসি ”
আরিয়ান হেসে বলে, “চিন্তা করিস না আমি রাইমাকে বলে দেবো তুই খুব ভালো ছেলে”
“আরিয়ান তুই ইশার সাথে কাজটা ঠিক করিস নি”
“আমার যা ইচ্ছা তা করবো তুই বাধা দেওয়ার কে?”
“আমরা বন্ধু আরিয়ান, এভাবে কেন কথা বলছিস?”
“বন্ধু রাইট?বন্ধু তো বন্ধুর পাশে থাকে তুই কি আমার পাশে আছিস?তুই তো ইশার হয়ে কথা বলছিস,ওর দলে..”
রিহান রেগে বলে, “আমি কারোর দলের না। যেটা সঠিক সেটাই বলেছি”
“তুই থাক তোর ঠিক নিয়া।জারা বেবি চলো একটু ডান্স করি”
আরিয়ান জারার কোমরে হাত রাখে জারা আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরে তারপর দুজন ডান্স ফ্লোরের দিকে যায়।রিহার এক দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। ও আরিয়ানকে চিনতে পারছে না!
.
ইশা ভার্সিটিতে এসে ক্লাসে এসে দেখে রাইমা এখনো আসেনি।ইশা ভ্রু কুচকে তাকায় রাইমার তো এতক্ষণে চলে আসার কথা।ইশা ক্লাস থেকে বেরিয়ে রাইমাকে খুঁজতে থাকে। হঠাৎ ওর চোখ যায় ভার্সিটির ডান পাশে ঘাসের উপর একটা মেয়ে বসে আছে। মেয়েটা একটা লাল জামা পড়ে আছে। রাইমার ও এরকম একটা জামা আছে। ইশা সেদিকে এগিয়ে যায়।গিয়ে দেখি রাইমা বসে আছে।
ইশা রাইমার পাশে বসে বলে,
“কিরে তুই এখানে কেনো বসে আছিস?আমিতো তোকে ক্লাসে খুঁজলাম”
রাইমা একটু মুচকি হেসে বলে, “এমনি কখন এলি?”
“এইতো এইমাত্র”
“ওহ..”
রাইমার মন খারাপ দেখে ইশা রাইমার কাঁধে হত রেখে বলে, “কি হয়েছে? মন খারাপ?”
রাইবা হেসে বলে, ” না ”
“তাহলে শরীর খারাপ? তোকে তো ঠিক লাগছে না!”
“আমি ঠিক আছি ইশা”
ইশা সন্দিহান চোখে রাইমার দিকে তাকিয়ে বলে,
” রিহান ভাইয়ের সাথে কিছু হয়েছে?”
রাইমা আনমনে বলে উঠে, “হুম..আমাদের ব্রেকআপ হয়ে গিয়েছে”
ইশা অবাক হয়ে বলে, “কিহ..!কেন???কি হয়েছে বল আমাকে।রিহান ভাইয়া নিজ থেকে ব্রেকআপ করছে?”
রাইমা ইশার দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি ওর সাথে ব্রেকআপ করেছি!”
“কিন্তু কেন??”
“আরিয়ান ভাইয়া তোর সাথে এরকম করেছে,এখন যদি রিহান ও…”
রাইমার কথার মাঝে ইশা বলে,
“তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস?রিহান ভাইয়া কত ভালো ছেলে।আর ওনি কেনো শুধু শুধু তোর সাথে নাটক করবে?তুই রিহান ভাইয়াকে ভালবাসিস না?”
“বাসিতো,,খুব বাসি! আমি উনার প্রতি প্রতিদিন দুর্বল হয়ে পড়ছি। কিন্তু ওনি যদি আরিয়ান ভাই এর মতো আমাকে ঠকায় তাহলে আমি বাঁচতে পারব না।তাই আগে থেকে সরে আসতে চাই”
“রাইমা শোন…”
ইশা কিছু বলতে যাবে তখম রাইমার ফোন বেজে ওঠে। ইশা রাইমাকে ইশারা করলেন রাইমা ফোন হাতে নিয়ে দেখে একটা আননোন নাম্বার। রাইমা কল কেটে দে। ইশা বলে,
“কিরে কাটলি কেন?”
“এটা নিশ্চয়ই রিহান! ”
“কিন্তু এটাতো রিহান ভাইয়ার নাম্বার না”
“আমি ওর নাম্বার ব্লক করে দিয়েছি।তাই বারবার আননোন নাম্বার থেকে কল দিচ্ছে আর কত নাম্বার ব্লক করবো বলতো?”
“ব্লক করার দরকার কি? তুই ওনার সাথে কথা বল,শুধু শুধু নিজে কষ্ট পাচ্ছিস আর উনাকে ও কষ্ট দিচ্ছিস”
রাইমা কিছু বলে না চুপ করে বসে থাকে।ইশা ব্যাগ থেকে ওর নিজের ফোন বের করে রিহানকে কল দে। কল দেওয়ার সাথে সাথে রিহার রিসিভ করে বলে,
” ইশা রাইমা কি তোমার সাথে?”
“হ্যাঁ ভাইয়া আমরা ভার্সিটি ডানপাশে বটগাছটার কাছে আছি, আপনি চলে আসেন”
“আমি এক্ষুনি আসছি”
ইশা কল কেটে দে।রাইমা ইশাকে বলে, “উনাকে কেনো আসতে বললি? আমি চলে যাচ্ছি”
রাইমা ওঠতে নিলে ইশা রাইমার হাত ধরে বলে,
” তুই যদি এখন চলে যাস তাহলে আমাদের বন্ধুত্ব আজকেই শেষ রাইমা”
রাইমা অসহায় দৃষ্টিতে ইশার দিকে তাকায়। রিহান ২ মিনিটের মধ্যেই চলে আসে। রাইমা কে দেখে একটা হাসি দেয়। কাল থেকে রাইমার সাথে কথা হয়নি। রিহানের বুকটা ছটফট করছিল এখন শান্ত হয়েছে।রিহার রাইমাকে বলে,
” কি হলো আমার নাম্বার ব্লক করেছ কেনো?”
পাশ থেকে ইশা বলে উঠে, “ও পাগল হয়ে গিয়েছে রিহান ভাইয়া, ওকে বোঝান একটু ”
রিহান ইশার দিকে তাকায়।আরিয়ান ইশার সাথে এরকম একটা কাজ করার পর,রিহান আজকে ফাস্ট ইশাকে দেখছে। ইশার চোখ মুখ কেমন পাল্টে গেছে।মনে হয় সারারাত ঘুমায় না। রিহান ইশাকে বলে,
” ইশা আরিয়ানের হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি, আমি তোমার বড় ভাইয়ের মতো আরিয়ানের দোষের শাস্তি আমাকে দিও না প্লিজ”
ইশা হেসে বলে, ” ভাইয়া এসব কি বলছেন? আরিয়ানের দোষের শাস্তি আপনাকে কেনো দিবো?আমি জানি আপনি কেমন”
তারপর ইশা রাইমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“রাইমা তুই কিন্তু রিহান ভাইয়ের সাথে কাজটা ঠিক করিসনি।ওনি তোকে ভালবাসে তুই যদি এখন উনাকে ছেড়ে চলে যাস তাহলে তোর আর আরিয়ানের মধ্যে তফাৎ কি!”
রাইমা চমকে বলে, “আরিয়ান ভাইয়ার সাথে কেনো আমার তুলনা করছিস?”
“তো করবো না?তুই রিহান ভাইয়াকে কষ্ট দিচ্ছিস কেনো?”
“কিন্তু উনার বন্ধু যে তোকে কষ্ট দিল!”
” সেটা ওনার বন্ধু দিয়েছে উনি না, তুই এক্ষুনি রিহান ভাইয়াকে সরি বলবি”
রাইমা মাথা নীচু করে বলে, “সরি..”
রিহান রাইমার গালে হাত রেখে রাইমা মাথা উঁচু করে ধরে বলে, “এই পাগলি সরি বলছো কেন? আর কখনো আমার ছেড়ে যাবার কথা বলবে না তো?”
রাইমা কেঁদে দে তারপর বলে, ” বলবো না”
ইশা মুচকি হেসে ওদের কাছ থেকে চলে আসে। ওদেরকে এখন একটু সময় দেওয়া দরকার। ইশার চোখের কোণায় পানি জমে! ইশা চোখে পানি দেখে নিজেই অবাক হয়।ওদের ভালোবাসা দেখে ইশার আরিয়ানের কথা মনে পড়ে যায়।
ইশা চোখের পানি মুছে দুই কদম এগুতেই কেউ সামনে এসে দাঁড়ায়!ইশা মাথা তুলে দেখে আরিয়ান দুহাত পকেটে রেখে দাঁড়িয়ে আছে।ইশা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নে তখন আরিয়ান আবার ইশার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
“বাব বাহ.. তোমার তো দারুন বুদ্ধি কিভাবে ওদের মিলিয়ে দিলে! অন্যের ভালোবাসাকে মিলিয়ে দাও আর নিজের ভালোবাসা ধরে রাখতে পারো না?”
ইশা চোখমুখ শক্ত করে বলে, ” আমি কাউকে ভালোবাসি না”
“আমাকেও না?এখন তো মিথ্যা বলবেই.. ”
ইশার আরিয়ানের সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই তাই ও বলে,
“আমার পথ ছাড়ুন”
আরিয়ার সরে দাঁড়ায় ইশা চলে যেতে নিলে আরিয়ান আবার বলে,
“রাতে ঘুমাও না?”
ইশা পেছন ফিরে ভ্রু কুঁচকে বলে, “কি?”
আরিয়ান ইশার কাছে এসে বলে, “বলছি রাতে ঘুমাও না?”
“আপনাকে কেনো বলবো?”
ইশা চলে যেতে নিলে আরিয়ান আবার বলে,
“আরে দাঁড়াও। এত যাই যাই করো কেন? তোমার চোখ মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে রাতে ঘুমাও না।আমার কথা ভাবো নাকি?”
ইশা রাগি মুখ করে বলে, “কোনো বিশ্বাসঘাতকের কথা ভেবে আমি রাতের ঘুম নষ্ট করি না”
ইশা আর একমুহূর্ত দাঁড়ায় না। তাড়াতাড়ি হেঁটে চলে যায়। আরিয়ান ইশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে,ইশাকে আরিয়ানের কাছে অন্যরকম লাগছে!
চলবে….