মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব: ৩৫
ক্লাস শেষে রাইমা আর ইশা ভার্সিটির করিডোর দিয়ে হাঁটছে।রাইমা একটা ফানি ভিডিওর কথা বলছে আর ইশা হেসে কুটি কুটি। ওদের দুজনের হাসাহাসির মধ্যেই কোত্থেকে আরিয়ান আসে।
রাইমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“হাই কিউটি কেমন আছো?”
রাইমাও একটু হাসিমুখে বলে, “ভালো।জিজু আপনি কেমন আছেন?”
রাইমার কথা শুনে ইশা রাগী চোখের রাইমার দিকে তাকালে রাইমা মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ হয়ে যায়। আরিয়ান বাঁকা হেসে বলে,
“তোমার মুখে জিজু ডাকটা শুনে খুব ভালো লাগছে”
ইশা একবার আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে রাইমার হাত ধরে বলে, ” রাইমা চল..”
আরিয়ান ইশার সামনে দাঁড়িয়ে বলে, “আরে দাঁড়াও, এত তাড়া কিসের? তোমার জন্য কালকে একটা সারপ্রাইজ আছে”
ইশা চোখ ছোট ছোট করে বলে, “কি সারপ্রাইজ?”
“সেটা আগে বলে দিলে কি সারপ্রাইজ থাকবে?আগামীকাল দেখতে পাবে”
ইশা মুখ বাঁকিয়ে বলে, “আপনার সারপ্রাইজ দেখার আমার এতো শখ নেই”
তারপর হনহন করে হেঁটে চলে যায়।রাইমা একবার আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে ইশার পেছনে ছুটে..
.
রাত নয়টা..
ইশা পড়ার টেবিলে বসে বসে ভাবছে আরিয়ান ওকে কি সারপ্রাইজ দিবে?আচ্ছা আরিয়ান কি জারাকে নিয়ে এসে বলবে,জারা আজ থেকে ওর গার্লফ্রেন্ড?এটাই কি সারপ্রাইজ!
ধুর.. ও এসব কি ভাবছে! ইশা যতটা চাচ্ছে আরিয়ানের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে ততো বেশি আরিয়ানের কথা মাথায় আসছে। ইশা বই নিয়ে একবার ফ্লোরে বসে! তারপর আবার খাটে উপুড় হয়ে শুয়। তারপর আবার টেবিলে বসে!ইশার কিচ্ছু ভালো লাগছে না,সবকিছু বিরক্ত লাগছে। এমন কেন হচ্ছে?
আচ্ছা কালকে তো শুক্রবার তাহলে ইশা আরিয়ানের সাথে তো দেখা হবে না তাহলে আরিয়ান সারপ্রাইজ দিবে কিভাবে? আর কি সারপ্রাইজ দিবে! ইশা ভাবে আরিয়ানের হয়তো মনে নেই যে কালকে ভার্সিটি বন্ধ।ভার্সিটি বন্ধ থাকলে তো আর ওদের দেখা হবে না তাহলে সারপ্রাইজ দিবে কিভাবে?ইশা সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ব্যালকনিতে যায়।
সকাল এগারোটা বাজে,ইশা সব কাজ শেষ।সেই কোন ভোরে উঠেছে,তারপর নামাজ পড়ে নাস্তা করে ঘর পরিষ্কারের কাজে লেগে পরেছে।আজকে শুক্রবার,ইশার কাজ করার দিন!সব পরিষ্কার করে কাপড় ধুয়ে ইশা রান্নাঘরে যায় মাকে হেল্প করার জন্য। গিয়ে দেখে ওর মা রান্না করছে। ইশা পাশের পাতিলে ঢাকনা উঠিয়ে একটা বড় হাসি দিয়ে বলে,
“ওয়াও কাঁঠালের বিচি দিয়ে মুরগির মাংস?আজকে দুপুরের খাবার খুব মজা হবে।আম্মু কোনো হেল্প করতে হবে?”
ইশার মা বলে, “না কোনো হেল্প করতে হবে না।আমার প্রায় শেষ। তুই বরং গিয়ে গোসল করে নে”
“আম্মু মাত্র এগারোটা বাজে। আরেকটু পর করবো”
ইশার মা তরকারিতে কাঠি নাড়তে নাড়তে বলে, “তোর ইচ্ছে”
ইশা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে এসে ওয়াশরুমে ঢুকে।তারপর হাত মুখ ধুয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে বের হয়।তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে কলিংবেলের আওয়াজ শুনে।ইশার মা রান্নাঘর থেকে বলে,
“ইশা দেখতো কে এসেছে..”
ইশা জোরে বলে, ” দেখছি আম্মু”
তারপর ইশা দরজা খুলতে যায়।দরজা খুলেই ইশা চোখ বড় বড় করে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজনের দিকে তাকিয়ে থাকে।একজনকে তো ইশা চিনে কিন্তু বাকি দু’জনকে ঠিক চিনতে পারছেনা।ইশা ভাবনার মাঝে আরিয়ান হাসিমুখে বলে,
“এভাবে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবে? নাকি ভেতরে ঢুকতে দিবে?”
ইশা দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়ালে আরিয়ার আর ওই দুজন বাসার ভেতরে ঢুকে। আরিায়ন ইশাকে বলে,
“ইশা ওনারা আমার মম,ড্যাড”
ইশা একটু বেশিই অবাক হয়ে আরিয়ানের বাবা-মাকে দেখছে।ও বুঝতে পারছে না আরিয়ান কেনো ওর মা-বাবাকে নিয়ে এসেছে।এটাই কি আরিয়ানের সারপ্রাইজ!
আরিয়ানের মা এগিয়ে এসে ইশার থুতনিতে হাত রেখে বলে, ” এটাই ইশা? মাশাল্লাহ খুব মিষ্টি দেখতে”
ইশা ভদ্রতার খাতিরে আরিয়ানের মা-বাবাকে সালাম দিয়ে বসতে বলে। তারপর ভেতরে চলে যায় ওর মা-বাবা কে ডাকতে।
আরিয়ান ওর মা-বাবাকে সব বলেছে। ইশাকে ও ভালোবাসে, তারপর ইশার সাথে কি কি অন্যায় করেছে সব নিজেই বলে।আরিয়ানের কথা শুনে ওর মা অনেক রেগে যায় একটা মেয়ের সাথে এরোকম করার জন্য!তারপর আরিয়ার অনেক বোঝানোর পর আসতে রাজি হয়। আরিয়ান এটাও বলে যে ও ইশাকে বিয়ে করতে চায়।আরিয়ানের মা-বাবা অনেক অবাক হয়েছিল ছেলেদের নিজের মুখে বিয়ের কথা বলছে! তারপর আবার ছেলের পাগলামি দেখে হেসেছে। ওদেরও ইচ্ছে ছিলো ছেলে কোন মেয়েকে পছন্দ করেছে তা দেখার।তাই আজকে চলে এসেছে।
আরিয়ানের মা আরিয়ানের বাবাকে বলে,
“মেয়েটা খুব মিষ্টি দেখতে,তাই না?”
“হ্যাঁ আমাদের ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে”
আরিয়ার বাবা,মার কথা শুনে মুচকি হেসে মাথা চুলকায়।
ইশা রান্নাঘরে গিয়ে ওর মাকে বলে,
“আজকে আবার কোন নতুন নাটক শুরু করলে? তুমি ওদেরকে আসতে বলেছো?”
ইশার মা অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কিসের নাটক? কাদের কথা বলছিস?”
“আরিয়ান এসেছে ওর বাবা-মাকে নিয়ে!”
“কি বলছিস?আরিয়ান ওর বাবা-মাকে নিয়ে?”
“হ্যাঁ, তুমি জানতে না?”
“আরে আজব আমি কিভাবে জানবো? আরিয়ান আমাকে কিছু বলেছে নাকি?আচ্ছা তোর বাবাকে গিয়ে ডেকে আন।আমি দেখছি”
ইশা চলে যেতে নিলে ইশার মা পেছন থেকে ডেকে বলে, “ইশা তুই আবার ওদের সাথে বাজে ব্যবহার করিস নি তো?”
ইশা পেছনে তাকিয়ে বলে, ” আরিয়ান যা করেছে,করেছে কিন্তু ওর বাবা-মা তো কিছু করেনি।ওদের সাথে আমি বাজে ব্যবহার করবো কেনো?তোমার আমাকে ওইরকম মনে হয়?ধুর কিচ্ছু ভালো লাগেনা”
ইশা বিড়বিড় করতে করতে ওর বাবার রুমে চলে যায়।
ইশার মা হাত ধুয়ে শাড়িটা একটু ঠিকঠাক করে কিছু নাস্তা নিয়ে বসার ঘরের দিকে যায়।
“সরি আপনাদের এতোক্ষন বসিয়ে রেখেছিলাম আসলে রান্নাঘরে….”
ইশার মায়ের মুখ দিয়ে আর একটাও শব্দ বের হয় না।ওনি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে! হাতে থাকা ট্রে টা কোনোরকমে টেবিলের উপর রেখে অবাক হয়ে আরিয়ানের বাবা-মাকে দেখছে।আরিয়ানের মা-বাবারও একই অবস্থা!
“ইশা ওরা হঠাৎ কেন এসেছে?”
“আমি কিছু জানিনা আব্বু, তুমি দেখো”
ইশা আর ওর বাবা কথা বলতে বলতে বসার ঘরে আসে।বসার ঘরে এসে দেখে সবাই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইশা কিছু বুঝতে পারছেনা।ইশার বাবা কিছু বলতে যাবে কিন্তু আরিয়ানের মা-বাবাকে দেখে ওনিও স্তব্ধ হয়ে যায়।আরিয়ানও সবাই দেখছে।ও সবাই রিয়েকশন বুঝতে পারছে না!আরিয়ান বলে,
” কি ব্যাপার তোমরা এভাবে চুপ করে আছো কেনো?”
তবু কেউ কোনো কথা বলে না।আরিয়ান ইশারায় ইশাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? ইশা ঠোট উল্টিয়ে বলে,ও কিছু জানেনা।
আরিয়ানের বাবা ছলছল চোখে ইশার বাবার দিকে এগিয়ে যায়।তারপর ইশার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“ভাই তুই এতদিন কোথায় ছিলি?তুই জানিস আমি তোদের কতো খুঁজেছি?আমাদের সাথে রাগ করে ঐদিন কোথায় চলে গিয়েছিলি?প্লিজ আমাদের ক্ষমা করে দে। আর তোর এই অবস্থা কেন?হুইলচেয়ারে..!”
ইশা চোখ বড় বড় করে সব দেখছে।আরিয়ানেরও।কিছু মাথায় ঢুকছেমনা।আরিয়ান ওর বাবাকে বলে,
“ড্যাড এসব কি বলছে?ভাই মানে?”
কেউ আরিয়ানের কথার উত্তর দে না। আরিয়ানের মা ইশার মায়ের দিকে এগিয়ে যায়।তারপর বলে,
“হাসি (ইশার মায়ের নাম) তুই আমার উপর রাগ করে আছিস তাই নারে? তোর এই বড় বোনটাকে ক্ষমা করে দে”
ওদের সবার চোখে পানি। ইশা এবার আর চুপ থাকতে পারেনা ওর বাবাকে বলে,
“আব্বু এসব কি শুনছি?ওনারা কারা? আমাদের সাথে ওনাদের কি পরিচয়?”
আরিয়ানের মা হাসি মুখে ইশা হাত ধরে বলে, “আমাদের পরিচয় হলো আরিয়ানের বাবা আর তোমার বাবা ভাই হয়”
ইশা অবাক হয়ে বলে, “ভাই?কিন্তু আমি তো জানতাম আৃারআব্বুর পরিবারের কেউ নেই”
ইশার বাবা চোখমুখ শক্ত করে বলে, “তুই ঠিকই জানতি আমার পরিবারের কেউ নেই ”
আরিয়ানের বাবা বলে, ” তুই এখনো আমাদের উপর রাগ করে আছিস?আমি বড় ভাই হয়ে তোর কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছি। প্লিজ সব ভুলে আমাদের সাথে চল”
এবার আরিয়ান বলে, ” ইশার বাবা আমার চাচ্চু হয় ড্যাড? কিন্তু আমিতো কখনো জানতাম না তোমার ছোট ভাই আছে আর থাকলেও উনারা আমাদের সাথে থাকে না কেন..?”
চলবে….