কিনারে তুই পর্ব : ৪৪

0
2751

মনের কিনারে তুই
লেখিকা:Tarin Niti
পর্ব: ৪৪

প্রায় এক ঘন্টা ধরে ইশা কাজী অফিসে বসে আছে।আরিয়ানও চুপচাপ পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে ফোন টিপছে!ইশা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সবাইকে দেখছে।আরিয়ানের বন্ধুরাও আরিয়ানের উপর বিরক্ত,,শুধু রিহান বাদে।রিহান শুধু দাঁত কেলিয়ে যাচ্ছে। কাজীও গালে হাত দিয়ে বসে আছে।ইশা একেকজনের কর্মকান্ড দেখছে।তখন কাজী বলে উঠে,

“আপনারা কি আদৌ বিয়ে করবেন?”

আরিয়ান ফোন স্ক্রল করতে করতে বলে, “তা না হলে এখানে কেন এসেছি?”

“দেখুন মেয়েটা তো রাজি হচ্ছে না। তাহলে ওকে জোর করে..”

আরিয়ান কাজীর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে, “আপনার যেটা কাজ সেটাই করেন,অন্য কিছু দেখতে যাবেন না”

তারপর ইশার দিয়ে তাকে বলে, “তুমি কি এখনো বসে থাকবে নাকি সাইন করবে?”

ইশা ঠোঁট উল্টিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকায়।প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বসে আছে।আরিয়ান বলে দিয়েছে সাইন না করে বাসায় যাওয়া যাবে না। এদিকে ইশার ফোনটাও আরিয়ানের কাছে তাই বাসায় কল দিতে পারছে না। ইশার সবকিছু অসহ্য লাগছে।
আচ্ছা ইশা কেনো সাইন করতে চাচ্ছে না? ইশা তো আরিয়ানকে ভালোবেসে,তাহলে বিয়ে করতে সমস্যা কি!ইশা কি আরিয়ানকে এখনো ক্ষমা করতে পারেনি !নাকি বাবা-মাকে না জানিয়ে এভাবে বিয়ে করতে চায় না!
কিন্তু আরিয়ান তো শোনার পাত্র নয়।ইশা আর থাকতে না পেরে কান্না করে দে।সবাই অবাক হয়ে ইশার দিকে তাকায়। আরিয়ান ফোনটা রেখে ইশার হাত ধরে বলে,

“কাঁদছো কেনো?”

ইশা কান্না করতে করতে বলে, “প্লিজ আমাকে যেতে দিন”

আরিয়ান ইশার গালে হাত রেখে ইশার চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে, ” সাইন করো! তারপর আমি নিজে তোমায় বাসায় নিয়ে যাবো”

ইশা জানে এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।আরিয়ান অনেক জেদি!ও যখন বলেছে সাইন না করে বাসায় যাওয়া যাবে না তার মানে যাওয়া যাবে নাই।
ইশা কিছুক্ষণ পরে নিজেকে শান্ত করে বলে,
“কলম? ”

আরিয়ান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ইশার দিকে তাকালে ইশা ইশারায় কলম দিতে বলে।আরিয়ান ইশার কথা বুঝতে পেরে হাসিমুখে ইশার হাতে কলমে দে আর পেপার তো সামনেই আছে।
ইশা আর কিছু না ভেবে সাইন করে দে! ইশা সাইন করার সাথে সাথে আরিয়ান ইশাকে জড়িয়ে ধরে।এখানে সবাই আছে কিন্তু তাতে আরিয়ানের কোনো খেয়াল নেই।ও ইশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইশার কপালে চুমু দিয়ে বলে,
“থ্যাংক ইউ!থ্যাংক ইউ সো মাচ ইশা”

ইশা সেভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে শান্ত গলায় বলে, “আমি বাসায় যাবো”

আরিয়ান হাসি মুখে ইশার হাত ধরে বলে, “চলো”

তারপর আরিয়ান রিহানের কাছে সব কাগজপত্র বুঝিয়ে দিয়ে ওর ফ্রেন্ডেদেরকে বলে ইশাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।গাড়িতে বসেই ইশা একদম চুপচাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।না কোনো কথা বলছে আর না কান্না করছে!একদম রোবটের মতো বসে আছে।আরিয়ান চাইছে ইশা ওর সাথে কথা বলুক,অন্তত ঝগরা করুক!কিন্তু ইশা একদম চুপচাপ। আরিয়ান ভাবে হয়তো এভাবে জোর করে বিয়ে করাটা মেনে নিতে পারেনি,কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যাবে।
আরিয়ান গাড়ির গিয়ার চেঞ্জ করার উছিলায় ইশার হাতের টাচ করে। ইশা একটু কেঁপে ওঠে আরিয়ানের দিকে তাকায়। আরিয়ান ইশার দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দে।আরিয়ানের হাসি ইশার কাছে অসহ্য লাগছে, ও আবার বাইরের দিকে তাকায়।

বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালে ইশা তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে বাসার ভিতরে চলে যায়। ইশার পিছুপিছু আরিয়ানও ভেতরে যায়।ইশা ভেতরে গিয়ে দেখে ওর মা-বাবা আরিয়ানের মা-বাবা ড্রইংরুমে বসে গল্প করছে। ইশার বাবা অসুস্থ তাই ওর মা স্কুল থেকে ছুটি নিয়েছে।আর আরিয়ানের বাবা আজকে অফিস যাইনি তাই সবাই বাসায় রয়েছে।
ইশা দৌড়ে গিয়ে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কান্না করে দে। হঠাৎ কেউ এভাবে জড়িয়ে ধরায় ইশার মা অবাক হয়ে যায়।তাকিয়ে দেখে ইশা কান্না করছে। আরিয়ানের মা-বাবা ইশার বাবা সবাই ইশার দিকে তাকায়।ইশার মা বলে,

“ইশা এভাবে কান্না করছিস কেনো? আর তুই ভার্সিটি থেকে এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলি?”

ইশা কিছু বলছে না শুধু কান্নাই করে যাচ্ছে। আরিয়ানের মা ইশার পাশে বসে ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “কি হয়েছে মামনি?কান্না করছিস কেনো?”

ইশা এবার আরিয়ানের মাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কান্না করতে করতে বলে, “বড়আম্মু তোমার ছেলে..”

এবার আরিয়ানের বাবা বলে, “আরিয়ান কি করেছে?নিশ্চয়ই আবার তোর পেছনে লেগেছে! আজকে আসুক ছেলেটা ওর মজা বুঝাবো”

ইশার মা হেসে বলে, “আরিয়ান তোর সাথে দুষ্টামি করে তাই বলে এভাবে কাঁদতে হয়?”

ইশা সবার কথা শুনে মাথা নীচু করে বলে,
” উনি আজকে আমাকে কাজী অফিসে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছেন!”

প্রথমে কেউই ইশার কথা বুঝতে পারেনি।কিন্তু পরক্ষনে আরিয়ানের বাবা চেঁচিয়ে বলে, “হোয়াট???”

ইশার মা ইশার দিকে তাকিয়ে বলে, “ইশা কি বলছিস এসব?”

ইশার বাবা বলে, “ইশা আরিয়ান সত্যি তোকে বিয়ে করেছে?”

ইশা আগের মতোই মাথা নীচু করে বলে, “আমি ভার্সিটি যাওয়ার সময় জোর করে ওনার গাড়ীতে তুলে,আমি ভেবেছিলাম ভার্সিটিতে নিয়ে যাবে। কিন্তু পরে কাজী অফিসে নিয়ে গিয়ে আমাকে জোর করে আটকে রেখে বলে সাইন না করলে নাকি বাসায় আসতে দিবে না। তাই উপায় না পেয়ে আমিও…”

ইশা মা ইশার দিকে তাকিয়ে বলে, “সাইন করে দিয়েছিস?”

ইশা মাথা নীচু করে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়।
আরিয়ান এতক্ষণ দূর থেকে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিলো।আরিয়ান জানে বাসায় আসলে ওর উপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে যাবে, তাই আরিয়ান আগে থেকেই প্রস্তুত।এবার আরিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে পকেটে হাত দিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে।

আরিনের বাবা আরিয়ানকে দেখে বসা থেকে উঠে বলে, “আরিয়ান এসব কি শুনছি? ইশা যা বলছি সব সত্যি”

আরিয়ান গিয়ে সোফায় বসতে বসতে বলে,
“হুম সত্যি”

“সত্যি মানে? তুই ইশাকে জোর করে বিয়ে করেছিস কেনো?”

“তো কি করবো? ওকে বললে তো ও আমাকে কখনো বিয়ে করতে রাজি হতো না।আর ইশা গতকালকে একটা ছেলের সাথে কথা বলেছিলো আমি বারণ করাতে ও বলেছিল আমার ওকে বারণ করে কিসের অধিকার!আজ থেকে আমি ওর হাজবেন্ড,সো অধিকার রয়েছে”

আরিয়ানের মা আরিয়ানার কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “বাবা তুই একটা মেয়েকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেললি!আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।তুই কবে এত বড় হয়ে গেলি?”

আরিয়ানের বাবা বিরক্তি নিয়ে বলে, “তোমার ছেলে কবেই বড় হয়ে গিয়েছে, শুধু তুমিই দেখতে পাও না। ও এতো বড় কান্ড করলো আবার ওকে বাবা ডাকা হচ্ছে! আজকে ওর একদিন কি আমার একদিন”

ইশার বাবা আরিয়ানের বাবাকে বলে, “ভাইয়া একটু শান্ত হন। এভাবে মাথা গরম করলে চলবে না”

আরিয়ানের বাবা বলে, ” তো এখন কি করবো?”

আরিয়ান বাবার কথা শুনে বলে, ” বিয়ে তো হয়ে গিয়েছে এখন তোমরা মেনে নাও!সিম্পল”

আরিয়ানের বাবা বলে, ” সিম্পল?সিম্পল আমি দেখাচ্ছি তোকে”

“দেখো ড্যাড তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারোনা”

“তো কিভাবে বলবো। তুই মেয়েটার সাথে এটা কি করলি?”

আরিয়ান দাঁত কেলিয়ে বলে, “বিয়ে করেছি”

আরিয়ানের বাবা ইশার মা বাবার কাছে গিয়ে বলে, “তোরা আমাকে ক্ষমা করে দিস আমার ছেলের হয়ে আমি তোদের কাছে ক্ষমা চাইছি”

ইশার মা বলে, “না না এসব কি বলছেন?আরিয়ান তো আমাদেরই ছেলে।হ্যাঁ ও একটা ভুল করেছে কিন্তু আপনি কেনো মাফ চাইছেন?”

ইশা ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি উনাকে সাপোর্ট করছো?”

ইশার মা বলে, “আরিয়ানের সাথে তোর বিয়েতে আমার কোন আপত্তি নেই কিন্তু এটা ঠিক এভাবে বিয়ে করা ঠিক হয়নি।তবে বিয়ে তো হয়ে গিয়েছে”

আরিয়ান হেসে বলে, “আমার শাশুড়ি আম্মা রাজী, আমার মাও রাজী!এখন শুধু দুই বাবা রাজি হলেই হবে”

আরিয়ানের মা ওর কান টেনে বলে, “আমি রাজি তোকে কে বললো?তুই ইশার সাথে এটা ঠিক করিস নি”

ইশার বাবা বলে, “হ্যাঁ বাবা তুমি কাজটা ঠিক করনি। তোমাদের বিয়েতে তো আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না তাহলে এভাবে কেনো?”

“কি করবো চাচ্চু? আপনার মেয়ে তো রাজি হচ্ছিল না!”

ইশা এতক্ষণ চুপচাপ সবার কথা শুনছিল।এবার ও দাঁড়িয়ে শক্ত গলায় বলে, “আমি এই বিয়ে মানি না আর কখনো মানবোও না”

তারপর দৌড়ে উপরে গিয়ে ওর রুমে দরজা লাগিয়ে দে। সবাই উপরে ইশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।আরিয়ান মুচকি হাসে,ওর বউটা তো খুব রাগী!!!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here