ভালোবাসার চেয়েও বেশি💞পর্ব-২

0
11159

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-২

★হেই গার্লস সি, হিয়ার কাম আওয়ার হিরো। একগাদা উৎসাহ আর উত্তেজনা নিয়ে একটি মেয়ে তার পাশে থাকা মেয়েগুলোকে কথাটি বললো।

সাথে সাথে মেয়েগুলো আরো চারগুণ উত্তেজনা নিয়ে সামনে তাকালো কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটিকে দেখার জন্য। যেন এখনি না দেখলে ওদের চোখ অন্ধ হয়ে যাবে আর কখনো কিছু দেখতে পাবেনা।
তারা শুধু ওই ব্যাক্তিটিকে দেখছে বললে ভুল হবে। একপ্রকার চোখের তীর দিয়ে ছিদ্র করে ফেলছে।
দেখতে দেখতে প্রথম মেয়েটি বুকের বাম পাশে দুই হাত চেপে ধরে বললো।
হায়…ইয়ার..একটা মানুষ এতটা হট এ্যান্ড হ্যান্ডসাম কিভাবে হতে পারে।

তার সুর সাথে মিলিয়ে দ্বিতীয় মেয়েটি বললো।
আই সোয়্যার ইয়ার..যত দেখি মনে হয় আগের দিনের তুলনায় আজ বেশি হ্যান্ডসাম লাগে।
জগিং করার সময়েও যে কাওকে এতটা হট লাগে এই ব্যাক্তিকে না বুঝতামই না।

…তৃতীয় মেয়েটি বললো, একদম গ্রিক গডের মতো দেখতো।হাইটটাও সেই।পুরো ছয়ফুট এক ইঞ্চি।
ইশশ..ফর্সা সিক্স প্যাক বডির ওপর কালো হাতা কাটা টিশার্টে কি মারাত্মক লাগছে। লুক এট হিজ মাসালস্ ওফফ..একদম ঘায়েল করে দেয়।

..এতক্ষণে চতুর্থ মেয়েটি হায় হুতাশ করতে করতে বললো।
আমার তো মমতাজ আন্টির মতো গাইতে ইচ্ছে করছে,”পোলা তো নয় একখান আগুনের গোলা”।

..এতক্ষণে পঞ্চম মেয়েটি বলে উঠলো।
আরে এমনি এমনি কি ওনাকে ২০২০ এ বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান আর ওয়ার্ল্ডের নাম্বার টেন মোস্ট হ্যান্ডসাম ব্যাচেলর ঘোষণা করা হয়েছে। আমিতো ওনাকে ফেসবুক ইন্সটাগ্রাম টুইটার সব জাইগায় ফলো করি। ওনার সব আর্টিকেলই আমার পড়া। উনিতো তো অনেক বছর লন্ডনে ছিলেন গত বছর দেশে ফিরেছেন। এজন্যই তো চেহারায় একটা ফরেনার ভাব আছে।

..ইশশ একবার যদি ছুয়ে দিতে পারতাম। আপসোসের সুরে প্রথম মেয়েটি বললো।

তার প্রতিউত্তরে দ্বিতীয় মেয়েটি বললো।
.. এই তোর না এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে? তারপরও অন্য ছেলেকে ছুতে চাস ছিঃ ছিঃ তওবা তওবা।বলেই হেসে দিলো।

তৃতীয় মেয়েটি বললো,আরে ওর তো শুধু এনগেজমেন্ট হয়েছে। ওরকম একটা ছেলের সাথে একবার রিলেশন করতে পারলে, আমিতো আমার হাসবেন্ড কেই রেখে চলে যেতাম। হি হি….

..পঞ্চম মেয়েটি তাছ্যিলের হাসি দিয়ে বললো।
এসব চিন্তা করে কোনো লাভ নেই।উনি যেই গম্ভীর আর রাগী লোক ,উনার সাথে রিলেশন তো অনেক দূরের কথা। কোনো মেয়ে ভয়ে উনার সামনে যাওয়ারই সাহস পায়না।শুনেছি মেয়েদের থেকে উনি দশ হাত দূরে থাকেন। কোনো মেয়েকে কাছে ঘেষতে দেইনা।

…চতুর্থ মেয়েটি হতাশ স্বরে বললো।
হুম ইয়ার দেখিস না আমরা প্রতিদিন এই পার্কে ওনার জন্য সেই সকাল থেকে এসে দাঁড়িয়ে থাকি।অথচ উনি আমাদের সামনে দিয়ে এমনভাবে চলে যায়,যেন এই পার্কে থাকা নির্জীব বেঞ্চগুলো আর আমাদের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। যেন আমরা ওনার জন্য এগজিস্টিই করিনা।

অতপর আজও ওদের সবাইকে ইগনোর করে সবার সামনে দিয়ে ওই ব্যাক্তিটি এমন ভাবে চলে গেল। যেন এখানে কখনো কেউ ছিলোই না।

এতক্ষণ এই মেয়েগুলো, সকাল সকাল জগিং করার নামে পার্কে এসে,যাকে দেখে নিজেদের লোলুভ আখির তৃষ্ণা মেটাচ্ছিল।
..সে মহান ব্যাক্তিটি হলো। “মিস্টার সাদমান শাহরিয়ার আদিত্য” বয়স ২৬।বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট ” আরমান শাহরিয়ারের ছেলে। বাবার পরে এখন সে নিজেই বিজনেসের ভার নিজের হাতে নিয়েছেন।
আদিত্যর যখন বারো বছর তখন ওর মা মারা যায়। পরিবার বলতে বাবা আর ছোট বোন আছে।নাম সানা।
আদিত্য এইচ এস সি পরিক্ষার পরে লন্ডন চলে যায়। ওখানে যেয়ে বাকি এডুকেশন করে। ধীরে ধীরে পড়াশোনার পাশাপাশি লন্ডনে ওদের যে ব্রাঞ্চ আছে ওখানকার বিজনেসও দেখাশোনা করেন।
আদিত্য বিজনেসে হাত দেওয়ার পর থেকে ওদের বিজনেস আরো সফলতা লাভ করে।
পুরো ওয়ার্ল্ডে এখন ওদের ব্রাঞ্চ আছে।
গতবছর আদিত্যর বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায়।আদিত্য দেশে চলে আসে।দেশে আসার পর সব বিজনেস এখন ওই দেখাশোনা করে।

নিজের ফ্লাটের সামনে এসে চাবি দিয়ে লক খুলে ভিতরে ঢুকলো আদিত্য। কিছুদিন হলো ফ্লাটটি কিনেছে।এখানে সে একাই থাকে।সাভারে ওদের বিশাল বাড়ি আছে সেখানে ওর বাবা বোন আর চাচার পরিবার একসাথে থাকে।
আদিত্য একা থাকতে বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাই ওর অফিসের কাছাকাছি একটা ফ্লাট কিনে এখানেই থাকে।

ভিতরে ঢুকে চাবিটা টেবিলে রেখে সোফায় বসে শরীরটা এলিয়ে দেয়।
হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠে। আদিত্য ফোন হাতে নিয়ে চেয়ে দেখে তাসিরের কল। আদিত্য ফোনটা রিসিভ করে বললো।
হ্যা বল।

..ওয়াট বল। আরে কেও ফোন করলে অন্তত কেমন আছো,কি অবস্থা,বাড়ির সবাই কেমন আছে এসব জিগ্যেস করে। এটা একটা বেসিক ম্যানার্স।আর এক তুই। সোজা বল।
…তুই কি আমকে ম্যানার্স শেখানোর জন্য ফোন করেছিস।তুই জানিস না, আমার এসব ন্যাকামো একদম পছন্দ না।কি বলার জন্য ফোন করছিস সেটা বল।
…হ্যা,হ্যা তা পছন্দ হবে কেন।খালি জানিস ঝাড়ি দিতে।আমি দেখেই তোর মতো মানুষের সাথে বন্ধুত্বটা টিকিয়ে রেখেছি।তোর তো সকাল দুপুর নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানানো উচিত।আমার মতো একটা বন্ধু পেয়েছিস হুহ্।
…হইছি তোর ড্রামা শেষ? নাকি আরকিছু বলবি।
…হ্যা বলবো, আজকে ক্যাম্পাসে আসিস ইম্পরট্যান্ট লেকচার আছে।
…ওকে।আবির আসবে?
..হ্যা আসবে।
..ওকে বাই।
..বাই।
আদিত্য ফোন রেখে মনে মনে মুচকি হাসলো।ও জানে তাসির ঠিকই বলেছে। আদিত্যর গম্ভীর সভাবের জন্য ওর সাথে তেমন কেউ মিশতো না।মিশলেও সব বোর হয়ে যেত।নাহয় ওর রাগের কাছে ভয় পেয়ে যেতো। তাই ওর সাথে কেউ মিশতো না।একমাত্র তাসির আর আবিরই ওকে সহ্য করার ক্ষমতা রাখে। সেই ছোট বেলা থেকে এই দুইজনই ওর বন্ধু ভাই সবই।
তাসির আদিত্যের বেস্ট ফ্রেন্ড আর আবির আদিত্যর কাজিন। ওর চাচার ছেলে। আদিত্য আর আবির সমবয়সী হওয়ায় ওদের মধ্যে ভাইয়ের চেয়ে বেশি বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আদিত্যর সাথে ওরা দুজনও লন্ডনে গিয়েছিল একসাথে। আদিত্য চলে আসায় ওরাও চলে আসে।আদিত্য অবশ্য মানা করেছিল। কিন্তু ওরা শোনেনি। ওদের একটাই কথা থাকলে একসাথেই থাকবো গেলে একসাথেই যাবো ব্যাচ্।বাত খতম।সেদিনই আদিত্য বুঝেগিয়েছিল ওরা দুইজন কতবড় পাগল ওর জন্য।

আদিত্য উঠে কিচেনের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।আদিত্য নিজের কাজ নিজেই করতে বেশি পছন্দ করে।তাই কোনো বুয়া রাখেনি।
নিজের জন্য নাস্তা রেডি করে শাওয়ার নিতে বেডরুমে যায়।
আদিত্য শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখে ওর ফোন বাজছে। ফোনটা উঠিয়ে দেখে ওর পিএ নিসা কল করেছে। আদিত্য ফোনটা রিসিভ করে বললো।
..ইয়া টেল মি নিসা।
..গুড মর্নিং স্যার।
..কাম টু দা পয়েন্ট নিসা।
..আসলে স্যার আজকে আপনার আর আর গ্রুপের সাথে মিটিং ছিল সেটাই মনে করানোর ফোন দিয়েছিলাম।আপনি কখন আসছেন স্যার।আর মিটিং টা কয়টায় রাখবো।

আদিত্য কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো। আমি কখন অফিসে আসবো না আসবো সে কৈফিয়ত নিশ্চয় আপনাকে দিতে হবে না।আর আপনাকে আমি আগেও বলেছি অফিসিয়াল ব্যাপারে যত কথা সব অফিসের ভিতরে বলবেন অফিসের বাইরে না।তাই যখন তখন আমাকে ফোন করা আমার একদম পছন্দ না।তেমন কোনো দরকার হলে আমি নিজেই জানাবো।গেট দ্যাট?
..সরি স্যার।
..এনিওয়ে ফোন যখন দিয়েই ফেলেছেন, তাহলে শুনুন আমার আজ অফিসে যেতে দেরি হবে।মিটিংটা তিনটায় রাখুন।
..ওকে স্যার।
নিসা কোনরকমে ফোনটা রেখে লম্বা একটা নিশ্বাস ছাড়ে।এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নেয়।বাপরে কি এমন জিজ্ঞেস করেছিল যে এতকথা শুনিয়ে দিল।
বেচারি নিসা কত ট্রাই করে আদিত্যর এ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য। কিন্তু সেতো কখনো পাত্তাই দেয়না।এসব ভেবে নিসা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

আদিত্য রেডি হয়ে নাস্তা করে বেড়িয়ে যায় ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
আসলে আদিত্যরা লন্ডনে এমবিএ করা অবস্থায় আদিত্যর বাবা হঠাৎ হার্টএট্যাক করে। তার অবস্থা অনেক গুরুতর হয়ে গিয়েছিল। তাই ওদের কোর্স কমপ্লিট না করে বছরের মাঝখানেই চলে আসতে হয়।
দেশে আসার পর আদিত্যর বাবা কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর আবার যেতে চাইলে আদিত্যর বাবা মানা করেন।দেশেই থাকতে বলেন।আদিত্যও মানা করতে পারেনা।
তারপর ওরা ঢাকায়ই একটা ভার্সিটিতে ভর্তি হয় কোর্স কম্পলিট করতে। যেহেতু আদিত্যর বাবা ওই ভার্সিটির ট্রাস্টি। তাই বেশি সমস্যা হয় না।এখন ওদের ফাইনাল ইয়ার চলছে। আর দুই মাস পরেই ফাইনাল এক্সাম। যেহেতু অফিসে যেতে হয় তাই আদিত্য রেগুলার যায়না।ইম্পরট্যান্ট কিছু হলে তবেই যায়। তাসির আর আবির ক্লাসের সব আপডেট ওকে দেয়।

আদিত্য কার ড্রাইভ করছিল এমন সময় ওর বাবার ফোন এলো।
আদিত্য কানে নিয়ে বললো,
..হ্যা বাবা বলো। সব ঠিক আছে তো?
..হ্যা,হ্যা সব ঠিক আছে। এমনি তোর খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য ফোন করলাম।তা কেমন আছিস বাবা?অনেকদিন হলোতো আর বাসায় আসিস না।সানাও তোকে মিস করছে।
..ঠিকাছে বাবা রাতে আসার চেষ্টা করবো। আমিতো এখন ভার্সিটিতে যাচ্ছি। বিকালে আবার মিটিং আছে। তাই রাতে ছাড়া সময় হবেনা।
..ঠিকাছে।
আরমান সাহেব অপরাধীর স্বরে আবার বললেন।
..আমার জন্যে তোর উপর খুব প্রেসার পড়ে গেছে তাই না?স্টাডি, বিজনেস সব একসাথে করতে হচ্ছে।
…কি বলছো বাবা?এমন কিছুই না।অযথা চিন্তাভাবনা না করে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করো আর ঔষধগুলো নিয়মিত নেও।তোমরা ভালো থাকলেই আমার সব ঠিক আছে।
..হুম।
..আচ্ছা রাখছি তাহলে।
..আচ্ছা।

ফোনটা কেটে আরমান সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। খাটের পাশে ছোট টেবিলের ড্রয়ার থেকে স্ত্রী সামিহার ফটো ফ্রেমটা বের করলো।ছবির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ছবির উপর দিয়ে হাত বুলিয়ে দিল।ছবির দিকে তাকিয়ে থেকে বলতে লাগলো।
তুমিতো আমাদের একলা রেখে চলে গেলে স্বার্থপরের মতো।একবারও ভাবলে না তোমাকে ছাড়া আমরা কিভাবে থাকবো।জানো তোমার ছেলে মেয়ে গুলো এখন কত বড় হয়ে গেছে। ওদের মুখের দিকে তাকিয়েই তো এখনো বেচে আছি। নাহলে কবেই চলে যেতাম তোমার কাছে। তোমাকে ছাড়া এতগুলো বছর কিভাবে কেটেছে তা শুধু আমিই জানি। তোমার চলে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পরেছে আদিত্যর ওপর। সানাতো ছোট ছিল তাই অতটা বুঝতে পারেনি। আদিত্য তোমার এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেনি।ওতো তোমার সাথেই বেশি ক্লোজ ছিল। আগে কত হাসিখুশি প্রানচঞ্চল ছিল।তুমি যাওয়ার পর থেকে চুপচাপ থাকতো,কারো সাথে তেমন কথা বলতো না। ধীরে ধীরে গম্ভীর আর রাগী হয়ে উঠলো।ওকে দেখলে আমার খুব খারাপ লাগে। দিনে দিনে কেমন রোবটের মতো হয়ে যাচ্ছে।এখন তো কেবল আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া। ওর জীবনে যেন এমন কেউ আসে, যে আমার ছেলেটাকে আবার আগের মত হাসিখুশি জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারবে।

এতক্ষণ সানা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ওর বাবার কথা শুনছিলো। সানা খুব চঞ্চল প্রক্রিতির মেয়ে। ও দৌড়ে এসে খাটে ওর বাবার পাশে বসলো। তারপর ওর বাবার এক হাত জরিয়ে ধরে বললো।
…তুমি চিন্তা করোনা বাবা।আমরা ভাইয়ার জন্য লাল টুকটুকে একটা মিষ্টি বউ বিয়ে করিয়ে আনবো তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।
আরমান সাহেব একটু মুচকি হেসে বললেন।
..সেই চেষ্টা কি কম করলাম? সেতো বিয়েতে রাজিই হয়না।
..আরে হবে হবে সময় আসলে ঠিকই হবে।
সানা ওর মায়ের ছবিটা হাতে নিয়ে বললো।
..আম্মু কত সুন্দর ছিল। ভাইয়াও আম্মুর মতো সুন্দর। শুধু আমিই সুন্দর না।
আরমান সাহেব বললো।
..ধুর বোকা মেয়ে।কে বললো তোকে এসব কথা। শুধু কি ফর্সা হলেই মানুষ সুন্দর হয় নাকি?সৌন্দর্য মানুষের মন থেকে আসে। যার মন সুন্দর সেই আসল সুন্দর।
সানা মুচকি হেসে বললো, হুমম।

————————————-
নূর ভার্সিটির গেটের সামনে এসে দাড়াতেই ওর ফোন বেজে উঠল। ফোন বের করে দেখলো তানি কল করেছে। নূরের ঠোঁটে মুচকি হাসি চলে এলো। নূরের অতি সামান্য কিছু আপন লোকের মধ্যে এই ব্যাক্তি একজন। যে ওকে অনেক ভালোবাসে। সুখে দুঃখে সবসময় ওর পাশে থাকে।
নূর ফোন রিসিভ করে বললো।
..কোথায় তুই?আমিতো চলে এসেছি।
..পিছনে দেখ।
নূর পিছনে ফিরে দেখে তানি দাঁড়িয়ে আছে। নূর এগিয়ে গেলো ওর দিকে।তানি মুখে একরাশ হাসি নিয়ে জরিয়ে ধরলো নূরকে।
..নূর.. নূর..”জেইন কসম” আ্যাম সো এক্সাইটেড।আমরা দুইজন একই ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি আমার যে কি মজা লাগছে তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।কথাগুলো বলে নূরকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাড়ালো তানি।
নূর বললো, সেটাতো তোকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এখন কি এখানেই দাড়িয়ে থাকবি নাকি ভিতরে যাবি।
…হ্যা,হ্যা চল যায়।
তানি নূরের হাত ধরে ভিতরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই ওর চোখ পরে নূরের গালে।তানি ভ্রু কুচকে সাথে সাথে দাঁড়িয়ে বলে।
..এই এই তোর গালে দাগ কিসের? তারমানে ওই মহিলা আবার তোর গায়ে হাত তুলেছে তাইনা?
নূর মুখটা ছোট করে ফেলে।
তানি রাগী কন্ঠে বলে।
…উফফ ইচ্ছে করে ওই মহিলাকে কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে আসি।বদমাইশ খচ্চর মহিলা কোথাকার।
নূর তানির হাতধরে বললো।
..বাদ দেনা এসব আজকের দিনে মন খারাপ করিস না। চল ভিতরে যাই।
..তোর জন্যই আমি কিছু করতে পারিনা। নাহলে “জেইন কসম “। দেখিয়ে দিতাম ওই মহিলাকে এই তানি কি চিজ।😡
..আচ্ছা দিস।এখন চল।
..হুম চল।

দুইজন ক্যাম্পাসের ভেতরে এসে অবাক হয়ে চেয়ে রইল। কতো বড় আর সুন্দর ক্যাম্পাস। দুইজন ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো।
হঠাৎ ওরা দেখতে পেল।মাঠের একপাশে অনেক লোক জড়ো হয়ে আছে। তানি উৎসুক হয়ে বললো চলতো দেখি ওখানে কি হচ্ছে। নূর মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল। ওরা একটু এগিয়ে যেতেই বুঝতে পারলো আসল ব্যাপার টা। এখানে কিছু বদমাইশ সিনিয়ররা জুনিয়রদের রেগিং করছে। তাও বাজেভাবে। এসব দেখে নূর তো ভয়ে শেষ। আসলে ছোট বেলা থেকে ভয় ছাড়া আর কোনো অনূভুতি ওর হয়নি।তাই ও অনেক ভীতু স্বভাবের। তানি নূরের হাত চেপে ধরে বললো।
..ভয় পাস না। আমি আছি তো।চল আমরা এখান থেকে চলে যাই।নাহলে আমাদের সাথেও এমন করবে।
নূর কোনো রকমে মাথা ঝাকিয়ে বললো।
..হ্যা, হ্যা চল চল।
দুইজন যেই উল্টো দিকে ঘুরে যেতে নেয়। তখনি পেছন থেকে কেউ আওয়াজ দেয়।
..হেই ফুলটুসিরা কোথায় যাচ্ছো এদিকে আসো আমাদের কাছে।

নূর তানির হাত শক্ত করে ধরে আছে। যে ভয়টা পাচ্ছিলো। সেটাই হতে চলেছে।
…কি হলো কথা কানে যায় না, এদিকে আসতে বলেছি।
দুইজন কোনো রকমে ওদের সামনে গিয়ে দাড়ালো। ওখানে পাঁচ ছয়জনের মত একটা গ্রুপ আছে। এবং চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এরা সবগুলো বড়লোক বাপের বিগড়ে যাওয়া ছেলেমেয়ে। নূরের তো ভয়েই অবস্থা কাহিল মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না।
তানি বুঝতে পারছে ওদের কথা না শুনলে খুব খরাপ হবে। তাই সে নিচু স্বরে বলে উঠলো।
…জ্বি ভাইয়া বলুন কিছু বলবেন।

ওদের ভিতর একজন সয়তানি হেসে জিজ্ঞেস করলো।
..নাম কি? কোন ইয়ার?
..তানি।ফাস্ট ইয়ার।
…আর তোমার নাম কি।নূরের দিকে ইশারা করে।
..ওর নাম নূর।তানি বললো।

ওদের ভিতরে লিডার ছেলেটা বললো।
..ক্যাম্পাসে আসলে সিনিয়রদের সম্মান করতে হয় জানোনা?

..তানি বললো জ্বি জানি।

..তাহলে আমাদের দেখে সালাম না করে চলে যাচ্ছিলে কোন সাহসে।

..সরি ভাইয়া ভুল হয়ে গেছে আর হবে না এরকম।

লিডার ছেলেটা আবার বলে উঠলো।
…সব কথা শুধু তুমিই বলে যাচ্ছো। ও কি কথা বলতে পারে না নাকি বোবা?বলেই সবাই উচ্চস্বরে হাসা শুরু করলো।

নূর কথা বলবে কি করে । ভয়ে ওর গলা শুকিয়ে গেছে।ও মাথা নিচু করে তানির আরো গা ঘেঁষে দাড়ালো।
তানি ওর অবস্থা দেখে বললো।
..ভাইয়া আসলে ও একটু লাজুক স্বভাবের। সহজে কারোর সাথে কথা বলতে পারে না। তাই আর কি।
লিডার ছেলেটা এবার ব্যাঙ্গকরে বললো।
..লাজুক লতা ও মাই গড।লাইক সিরিয়াসলি! এই শুনেছিস তোরা। হিয়ার কাম আওয়ার লজ্জাবতী। হা হা হা…সবাই উচ্চস্বরে হাসা শুরু করলো।

নূরের চোখে পানি চলে এসেছে ভয়ে। তানির ভিতরে ভিতরে রাগ লাগলেও কিছু বলতে পারছে না।কারণ ও জানে এদের কিছু বললে,আরো বেশি খারাপ হবে।

সবাই কতক্ষণ হাসার পর।লিডার ছেলেটা আবারো সয়তানি হাসি দিয়ে বললো।
..হুমম.. তাহলে তো লজ্জাবতীর লজ্জা ভাঙতে হয় কি বলিস সবাই।
সাথে সাথে সবাই সায় দিয়ে বললো। হ্যা ভাই একদম ঠিক বলছেন।
এদের কথা শুনে নূর আর তানি আৎকে ওঠে। লজ্জা ভাঙবে মানে কি বলছে এরা?
তানি ভয়মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো।
..না না ভাইয়া তার কোনো দরকার নেই।প্লিজ আমাদের যেতে দেন।
..উঁহুহ্ তাতো হয়না। সিনিয়রদের দায়িত্ব জুনিয়রদের হেল্প করা। তাই আমাদের দায়িত্ব এখন ওর লজ্জা কি ভাবে ভাঙ্গানো যায়।উমম…কি করা যায়। লেট মি থিংক, লেট মি থিংক।
গালে হাত দিয়ে চিন্তার ভঙ্গিতে কথাগুলো বললো।একটু পর মুখের সামনে তুরি বাজিয়ে বললো।
.. ইয়েসস.. পেয়ে গেছি আইডিয়া।
তারপর হাত উঠিয়ে মেইন গেটের দিকে ইশারা করে নূরের উদ্দেশ্যে বললো।
..ওইজে গেট দেখছো, ওই গেটের সামনে যেয়ে দাঁড়াও।তুমি দাঁড়ানোর পরে সর্বপ্রথম যে ওই গেট দিয়ে ঢুকবে। সে যেই হোকনা কেন,তাকে তোমার চুমু খেতে হবে। ডোন্ট ওয়ারি গালে দিলেই চলবে।

ওদের কথা শুনে নূরের এখন অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম।কি বলছে এসব ওরা। ও কখনো এটা করতে পারবেনা।
আর তানি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। ওদের কথায় ভয় পেয়ে গেছিল। ভেবেছিলো ওরা নাজানি কি করে। এটা তো তাও সহজ আছে।

লিডার ছেলেটা বললো। যাও তাহলে শুরু করো।
তানি নূরের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো যেতে। নূর অসহায় মুখ করে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো সে পারবে না।তানি কিছু একটা ভেবে ওই ছেলেটাকে বললো।
..ভাইয়া ওর জায়গায় কাজটা আমি করে দেই?
..না না যার কাজ তাকেই করতে হবে। তা না হলে শাস্তি পেতে হবে।এখন ভেবে দেখো কোনটা করবে।
তানি নূরের হাত ধরে ওখান থেকে একটু সরে এসে আস্তে করে নূরকে বললো।
..দেখ নূর সাহস করে কাজটা করে ফ্যাল।নাহলে এরা আমাদের ছাড়বে না।তুই তো দেখছিসই এরা কত ভয়ংকর। এদের কথা না শুনলে আমাদের এখানে টিকে থাকতে দিবেনা। শুধু একটা চুমুই তো তাও গালে। এটা কোনো ব্যাপার না।
নূর এবার কেঁদেই ফেলল। কাঁদতে কাঁদতে বললো।
…আমি কিভাবে করবো এমন কাজ। যদি কোনো ছেলে হয় তখন?আমার অনেক ভয় করছে। আমার দ্বারা হবেনা।
…আরে নেগেটিভ ভাবছিস কেনো মেয়েও তো হতে পারে। এখানে কি শুধু ছেলেরাই পড়ে নাকি মেয়েরাও তো পড়ে। তুই পজিটিভ চিন্তা কর। দেখ তুই কত কষ্ট করেছিস এই পর্যন্ত আসার জন্য। তুই কি চাস ওদের ঝামেলার কারণে তোর এখানে পড়ালেখার ক্ষতি হোক?
নূর মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো।
তানি নূরের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো।
তাহলে যা মনে সাহস নিয়ে কাজটা করে ফ্যাল।নূর মাথা নাড়িয়ে সায় দিল।
…লিডার ছেলেটা তাড়া দিয়ে বললো।
কি হলো তোমাদের ডিসকাশন শেষ হলো?আমরা কি সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকবো?
তানি নূরকে নিয়ে ওদের সামনে যেয়ে বললো।
এইতো ভাইয়া হয়ে গেছে ও রেডি।
..হুম তাহলে যাও কাজ শুরু করো।আর তুমি এখানেই থাকবে। তানিকে ইশারা করে বললো।ও একাই যাবে।

তানি নূরের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে আস্বস্ত করে যেতে বললো।

নূর কাপা কাপা পা নিয়ে গেটের দিকে এগুলো। বারবার পিছন ফিরে তানির দিকে তাকাচ্ছে। ধীরে ধীরে গেটের কাছে এসে পৌছালো।এখন শুধু কেচি গেটটাই খোলা আছে।আপাতত গেটে কেউ নেই।ওরা সবাই আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে।ভয়ে হাত পা কাপছে নূরের হার্টবিট জোরে জোরে চলছে। মনে মনে শুধু দোয়া করছে, যেনো কোনো মেয়েই হয়।

কিছুক্ষণ পরে নূর দেখতে পেল। একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা গেটের দিকে আসছে।নূর মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। যাক বেচে গেছি। মহিলা মানুষ আছে এখন আর বেশি খারাপ লাগবে না।তারপরও নূরের ভয় করছে। উনি যদি কোনো অধ্যাপিকা হন তখন?
যাক্ এখন আর এত ভেবে লাভ নেই পরে মাপ চেয়ে নিলেই হবে।
নূর গেটের মাঝামাঝি যেয়ে দাড়ালো। যাতে মহিলাটি যেতে না পারে। চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিল।তারপর এক চোখ একটুখানি খুলে দেখলো মহিলাটি কাছে চলে এসেছে। নূর আবার চোখ বন্ধ করে নিল।একটু পর ওর সামনে কারো অস্তিত্ব টের পেল।নূর মনে করলো মহিলাটি হয়তো ওর সামনে। নূর চোখ বন্ধ করা অবস্থাতেই আরকিছু না ভেবে মুখটা একটু এগিয়ে চট চুমু দিয়ে দিল সামনে থাকা ব্যাক্তির গালে।
চুমু দিয়েই ভয়ে চোখ মুখ খিচে দাঁড়িয়ে রইলো নূর । কিছুক্ষন পর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে,ধীরে ধীরে চোখ খুলে সামনে তাকালো।

সামনে তাকাতেই নূরের চোখদুটো রসগোল্লার
মত বড়ো বড়ো হয়ে গেলো। যেন এখনি কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।তিব্র মাত্রায় একটা শক খেল।ভয়ে,বিস্ময়ে ঠোঁট দুটো আপনা আপনি ইয়া বড়ো হা হয়ে। সাথে সাথে নূর হাত দুটো একসাথে করে নিজের হা করা মুখের ওপর চেপে ধরলো।

নূরের নিজের চোখের ওপর বিশ্বাস হচ্ছেনা। ও তো ওই মহিলাকে চুমু দিয়েছিল তাহলে এই ছেলেটা কোথা থেকে আসলো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here