সেই সন্ধ্যা পর্ব-২৭

0
1594

#সেই_সন্ধ্যা
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_২৭
.
সাদা রঙের বড় গাউন পড়ে তৈরি হয়ে বসে আছে সকাল। চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই কি চলছে তার মনে। আজ সে অনুভূতিহীন। যাকে ভালোবেসেছে তার কাছ থেকে নির্দেশ পেয়েছে এই বিয়ে করার। তাই সে কথা না বাড়িয়ে তৎক্ষনাৎ ফোনটা কেটে দিয়েছে। আজ স্নিগ্ধ তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে সে সকালকে ভালোবাসে না। সকালকে তার জীবনে চায় না। টেবিলের ওপরে থাকা ফুলদানির দিকে তাকিয়ে আছে সে। ফুলদানিতে এখনো স্নিগ্ধর পাঠানো সেই ব্লু অর্কিড ফুলগুলো সাজানো রয়েছে। ফুলগুলো শুঁকিয়ে গেলেও অনুভূতিগুলো এখনো রয়েছে ভেবে সেগুলো আর ফেলে দেয়নি। বাইরে থেকে গাড়ির হর্ণের আওয়াজ কানে আসতেই চোখ বন্ধ করে নিজের হাত মুঠো করে ধরলো সকাল। নখগুলো বড় থাকায় হাতে সেগুলো বিঁধে যাচ্ছে টের পেয়েও সেভাবেই বসে রইলো।

আসমা বেগম বাড়িতে ঢুকেই রেহেনা বেগমের সাথে কুশলাদি বিনিময় করলেন। দু’জনেই ভীষণ খুশি আজ। আসমা বেগম খুশি কারণ তার ছেলে এতদিন পর নীলামকে ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করতে চাইছে। আর রেহেনা বেগম খুশি কারণ তার অবুঝ মেয়েকে তিনি একজন সৎ পাত্রের হাতে তুলে দিতে চলেছেন। স্নিগ্ধ ছেলেটাকে বেশ পছন্দ তার। বয়সটা হয়তো সকালের তুলনায় একটু বেশি, তবে তাতে কিছু যায় আসে না। মেয়ে ভালো থাকবে, সুখে থাকবে এই অনেক। আসমা বেগমকে একা দেখে রেহেনা বেগম বেশ অসন্তুষ্ট হলেন।
-“স্নিগ্ধ আসেনি!”
-“এসেছে তো। স্নিগ্ধ আর তার বাবা বাইরে আছে, আসছে।”
-“ওহ আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি বসুন, আমি সকালের বাবাকে ডেকে নিয়ে আসছি।”
আসমা বেগম মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতেই রেহেনা বেগম সন্তুষ্টির হাসি দিয়ে উপরে চলে গেলেন। আসমা বেগম দরজার দিকে তাকিয়ে নিজের ছেলে আর স্বামীকে দেখতে না পেয়ে বিরক্ত হয়ে ফোন বের করে কল দিলেন স্নিগ্ধকে। পরক্ষণেই দরজা দিয়ে তাদের ঢুকতে দেখে কলটা কেটে দিলেন তিনি। স্নিগ্ধ আর তার বাবা উপহার হিসেবে নিয়ে আসা জিনিসপত্রগুলো বাড়ির কাজের লোকদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে আসমা বেগমের পাশে এসে বসলেন।
-“বাড়িতে লোকজন নেই?”
-“আছে। রেহেনা আপা ভাইকে ডাকতে গিয়েছেন। এখুনি চলে আসবেন।”
স্নিগ্ধর বাবা ‘ও’ বলে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলেন। স্নিগ্ধ উপরে তাকিয়ে সকালের রুম কোনটা তা বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো। আজ সে যা বলেছে সকালকে তা শোনার পর সকাল নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট পেয়েছে! অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন সে নিচে এসে দেখবে যাকে সে ভালোবাসে সেই স্নিগ্ধই তার পরিবার নিয়ে তাকে দেখতে এসেছে তখন তার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে! নিশ্চয়ই অনেক অবাক হবে! অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। কথাগুলো ভেবে মিটমিটিয়ে হাসছে স্নিগ্ধ। পরক্ষণেই তার মনে পরলো সকাল যখন তাকে কল করেছিল তখন সে কি পরিমাণ ভয়ে ছিল।
-“ডা..ডাক্তার সাহেব!”
-“আমি একটু ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলছি।”
-“আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন না!”
-“হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন! যাই হোক প্রশ্নটা যখন করেছো তখন এ-র উত্তর আমি অবশ্যই দিব। তবে এখন নয়। এই মুহূর্তে আমি ভীষণ ব্যস্ত আছি।”
-“আজ আমাকে কারা যেন দেখতে আসছে।”
-“বাহ্! তোমার মতো একটা পিচ্চিকেও কোনো ছেলে বিয়ে করতে চায়?”
-“কি বলতে চাইছেন আপনি?”
-“আমি বলতে চাইছি যে শুভ কামনা রইলো। দু’আ করি এই ছেলের সাথেই যেন তোমার বিয়ে হয়।”
-“মানে কি! আমি যাবো না তাদের সামনে।”
-“বাড়াবাড়ি করো না মিস বিকাল। চুপচাপ তৈরি হয়ে তাদের সামনে চলে যাবে। আর ছেলেকে পছন্দ হলে অবশ্যই বিয়েতে মত দিয়ে দিবে। কতদিন অন্যের অপেক্ষায় বসে থাকবে!”
-“সোজাসুজি বললেই পারেন যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না। শুধু শুধু এতদিন আমার অনুভতিগুলো নিয়ে না খেললেই পারতেন। যাই হোক বাদ দিন। ধন্যবাদ এত তাড়াতাড়ি আপনার প্রতি আমার অনুভূতিগুলোকে বেড়ে যাওয়া থেকে আঁটকে ফেলার জন্য। রাখছি, ভালো থাকবেন।”

স্নিগ্ধ মুচকি হাসলো কথাগুলো ভেবে। আজ ওর কপালে শনি আছে জেনেও সে স্বাভাবিক। সকালকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় তার বেশ ভালো করেই জানা আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর আরিফুল ইসলাম আর রেহেনা বেগম এসে উপস্থিত হলেন। স্নিগ্ধর সাথে আর তার বাবার সাথে আরিফুল ইসলাম হ্যান্ডশেক করে আসমা বেগমকে সালাম দিয়ে সোফায় বসলেন তিনি। স্নিগ্ধর সাথে অনেক্ক্ষণ কথা বললেন আরিফুল ইসলাম। ছেলে হিসেবে বেশ পছন্দও হলো তাকে। তার মেয়ের জন্য এরকম একজনকেই সব সময় চাইতেন তিনি। আজ তার মনের আশা পূরণ হয়েছে। তিনি নির্দ্বিধায় এই ছেলের হাতে তার মেয়েকে তুলে দিতে পারবেন বলে খুশি হলেন। এসব এর মাঝে আসমা বেগম বলে উঠলেন,
-“সকাল মা কোথায়! নিয়ে আসুন তাকে।”
-“জ্বি আপনারা বসুন আমি নিয়ে আসছি।”
রেহেনা বেগম উঠে গেলেন সকালকে নিয়ে আসার জন্য। সকালের রুমে ঢুকে তিনি দেখলেন, সকাল চোখ বন্ধ রেখে হাত মুঠো করে বসে আছে। সকালের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই সকাল চোখ মেলে তাকিয়ে বললো,
-“উনারা এসে গিয়েছে?”
-“হ্যা। তোমার বাবার তো ভীষণ পছন্দ হয়েছে ছেলেকে।”
-“এখন কি আমার যেতে হবে!”
-“হ্যা। আমি তোমাকে নিতেই এসেছি।”
-“আচ্ছা চলো।”
-“দাঁড়াও। তোমার কান, হাত, গলা খালি কেন?”
-“কিছু পড়তে মন চাইছে না।”
-“এভাবে কারো সামনে যেতে হয় না। বসো এখানে আমি আসছি।”
রেহেনা বেগম সকালের আলমারির লকার থেকে থেকে একটা বক্স বের করলেন। বক্সটা সকালের সামনে খুলে ধরতেই সেখানে গোল্ডের ভেতরে ডায়মন্ড বসানো খুব সুন্দর একটা ব্রেসলেট, এক জোড়া কানের দুল আর একদম সিম্পল একটা চেইন দেখতে পেলো সকাল। চেইনটা সকালের সব থেকে বেশি ভালো লাগলো। চেইনের মধ্যে গোল্ডের লকেট, তার উপরে ডায়মন্ডের কাজ করা। সেগুলো সকালকে পড়িয়ে নিচে নিয়ে গেল। মাথা তুলে সামনে তাকানোর বিন্দুমাত্র আগ্রহ সকালের নেই। তাই সে মাথা নিচু রেখেই আরিফুল ইসলামের পাশে এসে বসে পড়লো।

স্নিগ্ধ সকালের সামনের সোফায় বসে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। মেয়েটার মুখ দেখে কিছু বোঝা না গেলেও ওর মনে কি চলছে তা ভালো মতোই জানে স্নিগ্ধ। সকালের চেহারাটা লাল হয়ে আছে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো সে। মুখ তুলে তাকাচ্ছেও না কারো দিকে সকাল, এই জিনিসটা বেশ ভাবাচ্ছে স্নিগ্ধকে। আসমা বেগম মুচকি হেসে সকালের সামনে গিয়ে ওর মাথায় চুমু দিলেন।
-“মাশাআল্লাহ তুমি খুব মিষ্টি মেয়ে। তোমাকে তো আমার আগেই পছন্দ হয়েছে। তাই তো দেরি না করে চলে এসেছি তোমাকে আমার ছেলের বউ করে নিয়ে যেতে। তবে বউ হওয়ার পর তুমি কিন্তু আমার মেয়ের মতো থাকবে।”
সকাল কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলো। এখানে ওর বলার কিছুই নেই। হাতের নখ দিয়ে বারবার হাতের তালু খোঁচাচ্ছে। স্নিগ্ধর বাবা বললেন,
-“মেয়ে তো আমাদের অনেক পছন্দ হয়েছে। এখন আপনারা বলেন ছেলে পছন্দ হয়েছে কি-না। তাহলে আজই আংটি পড়াতে চাচ্ছি আমরা।”
-“আমার তো ভীষণ পছন্দ হয়েছে আপনাদের ছেলেকে। এখন আমার পছন্দ হলে তো হবে না, মেয়ের পছন্দ হতে হবে। আর তাছাড়া স্নিগ্ধরও তো পছন্দ হতে হবে।”
স্নিগ্ধর নাম শুনে সকাল চমকে উঠলো। তৎক্ষনাৎ মুখ তুলে সামনে তাকিয়ে আসমা বেগম, স্নিগ্ধর বাবা আর স্নিগ্ধকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো। অবিশ্বাস্য চোখে স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে সে। তার মানে স্নিগ্ধই নিজের বাবা-মাকে নিয়ে ওকে দেখতে এসেছে! কথাটা বিশ্বাস হতে চাইলো না সকালের।
সকালের অবাক চাহনি দেখে স্নিগ্ধর প্রচুর হাসি পেলো। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে সে। নাহলে এই মুহূর্তে একটা বিদঘুটে কাণ্ড ঘটে যাবে সবার সামনে। সকালের ধ্যান ভঙ্গ হলো আরিফুল ইসলামের কথায়।
-“মামনি তোমার কি পছন্দ হয়েছে স্নিগ্ধকে!”
-“(……)”
-“বলো কিছু।”
আরিফুলকে থামিয়ে দিয়ে স্নিগ্ধ বললো,
-“আঙ্কেল আমি ওর সাথে একটু আলাদা কথা বলতে চাই, যদি আপনার আপত্তি না থাকে।”
-“না না আমার কোনো আপত্তি নেই। তুমি ওকে নিয়ে ছাদে চলে যাও। আরামসে কথাবার্তা শেষ করে তারপর এসো। ততক্ষণ আমরা বড়রা একটু গল্পগুজব করতে থাকি।”
-“ধন্যবাদ আঙ্কেল।”
-“মামনি ছাদে নিয়ে যাও স্নিগ্ধকে।”
সকাল স্নিগ্ধর দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। মাথা নাড়িয়ে আরিফুলের কথায় সায় দিয়ে উঠে গেল সেখান থেকে। সিঁড়ি বেয়ে উপরে যাওয়ার সময় সবাই সেদিকে তাকিয়ে ওদেরকে দেখছিল। বেশ মানিয়েছে দুজনকে একসাথে এই ভেবে আসমা বেগম মুচকি হাসলেন। চোখে তার খুশির জল। অবশেষে তার ছেলে একটা নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছে।

ছাদের সিঁড়িতে এসে স্নিগ্ধ পেছন থেকে সকালের হাত ধরতে যাবে তখন একজন কাজের লোক ছাদ থেকে বেরিয়ে এলো বলে স্নিগ্ধ হাত সরিয়ে নিলো। সকালকে দেখে একপাশে যেয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো কাজের লোকটা। জিনিসটা সকালের কাছে বিরক্ত লাগলো। মাথা নিচু করার কি আছে এখানে! মালিক বলেই কি মাথা নিচু করতে হবে! আজব পাবলিক। ছাদের ভেতরে প্রবেশ করতেই যে দু’জন লোক গাছগুলোর পরিচর্যা করছিল তারা চলে গেল ছাদ থেকে।
সকাল মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। স্নিগ্ধ মুচকি হেসে সকালের দিকে ঝুঁকে বললো,
-“কেমন লাগলো আমার সারপ্রাইজ!”
-“(……)”
-“কি হলো মিস বিকাল সেই কখন থেকে দেখছি চুপ করে আছো। বোবা হয়ে গেলে না-কি!”
-“(……)”
-“রাগ করেছো? অভিমান বেড়েছে?”
-“(……)”
-“আচ্ছা বাবা স্যরি। আমি শুধু তোমাকে একটু সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। সেজন্যই সকালে একটু কঠোরভাবে কথা বলেছি।”
-“(……)”
-“ও মিস বিকাল কথা বলো না।”
সকাল তাও কোনো কথা বলছিল না বলে স্নিগ্ধ আলতো করে ওর হাতটা ধরতেই ব্যথায় ককিয়ে উঠলো সকাল। তৎক্ষনাৎ সকালের হাত ছেড়ে দিয়ে ভীত চোখে স্নিগ্ধ সকালের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-“স্যরি আমি বুঝতে পারিনি। কিন্তু কি হয়েছে তোমার হাতে?”
-“(……)”
-“দেখি হাত দেখাও আমাকে।”

সকাল জেদ দেখিয়ে হাত মুঠ করে ফেললো। স্নিগ্ধ এবার রেগে সকালের বাহু ধরে পেছনে ঠেলে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে ধরলো ওকে। জোর করে হাতের মুঠ খুলে হাতের অবস্থা দেখে আঁতকে উঠলো সে। সকালের হাতের তালুর বিভিন্ন জায়গায় কেটে রক্ত বের হচ্ছে। হাতের নখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে নখ দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে এগুলো। সকালের দিকে তাকিয়ে দেখে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।
-“এসব কি মিস বিকাল! হাতের এ-কি অবস্থা করেছো? পাগল তুমি! কথা বলছো না কেন! রাগের বশে কেউ নিজেকে কষ্ট দেয়? আমার উপর রাগ ছিল যখন, তখন আমাকে আঘাত করতে! নিজেকে আঘাত করে কি মজা পেয়েছো?”
বেশ রেগেই কথাগুলো বললো স্নিগ্ধ। সকাল চোখ মেলে স্নিগ্ধর বিচলিত মুখটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল নিজের কাছ থেকে। স্নিগ্ধ সকালের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। চোখ দু’টো লাল টকটকে হয়ে আছে। রাগে কাঁপছে সে।
-“আমাকে পুতুল মনে হয় আপনার! আমার কি অনুভূতি বলতে কিছু নেই! আমি আপনাকে ভালোবাসি বলেছি শুধু মাত্র আপনার জন্য। আপনি বলেছিলেন আমার মনে কি চলছে তা যেন আমি আপনাকে জানিয়ে দিই। কি বলেননি আপনি! আর আজ আপনাকে যখন আমি বললাম যে আমাকে কারা যেন দেখতে আসছে তখন আপনি কি নিশ্চিন্তে বলে দিলেন আমি যেন কোনো ঝামেলা ছাড়াই তাদের সামনে চলে যাই। আপনি একবারও ভেবেছিলেন তখন যে আমার মনের অবস্থাটা কি হতে পারে! হ্যা মানলাম আপনি নিজেই আসছেন বলে আপনি ওই কথাগুলো বলেছিলেন আর তাই আপনার টেনশনও ছিল না। কিন্তু আমি তো জানতাম না। আমার অনুভূতিগুলো নিয়ে খেলে কি মজা পান আপনি? আপনি জানেন আপনাকে আমার ঠিক কতটা বিরক্ত লাগছে এখন! সহ্য হচ্ছে না আপনাকে আমার। চলে যান এখান থেকে। একা থাকতে দিন আমাকে।”
কথাগুলো বলেই কেঁদে দিল সকাল। একহাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে ছাদ থেকে বেরিয়ে মাঝ সিঁড়িতে আসতেই পেছন থেকে কে যেন খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। সকাল জানে এই মানুষটি স্নিগ্ধ। কিন্তু এই মুহূর্তে তার কাছে সবকিছু বিষাদময় লাগছে। যদি আজকে নিচে আসা ওই পরিবারটা স্নিগ্ধর না হতো আর এই মানুষটি যদি স্নিগ্ধ না হতো তবে আজ কি করতো সে ভেবে পাচ্ছে না। স্নিগ্ধকে দেখে তার সমস্ত আবেগ, দুঃখ, কষ্ট, ভয় সব কান্না হয়ে দু’চোখ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

স্নিগ্ধ সকালের কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে অনুতপ্ত হয়ে অসহায় গলায় বললো,
-“স্যরি মিস বিকাল। আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি তুমি এতটা কষ্ট পাবে। আমি তো শুধু তোমায় একটু বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিলাম। তুমি যাতে আমাকে এখানে দেখে অনেক অবাক হও শুধু এইটুকুই চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি ভাবিনি যে তোমাকে আমি কষ্ট দিয়ে ফেলবো। আর কখনো এমনটা হবে না। প্লিজ কেঁদো না। তোমাকে কাঁদতে দেখলে ভালো লাগে না আমার। স্যরি পিচ্চি।”
সকাল পেছন ঘুরে দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো স্নিগ্ধকে। যেন ছেড়ে দিলেই দূরে চলে যাবে সে। স্নিগ্ধ নিজেও জড়িয়ে ধরলো সকালকে। মাথায় বেশ কয়েকটা চুমু দিল যাতে সকালের কান্না থেমে যায়। স্নিগ্ধ বুঝতেই পারেনি যে ও সকালকে কষ্ট দিয়ে ফেলবে। মেয়েটা যে এত আবেগপ্রবণ আগে বুঝেনি ব্যাপারটা। এখন থেকে বুঝে শুনে কথা বলতে হবে ভেবে একহাত দিয়ে সকালকে জড়িয়ে ধরে অন্য হাত দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here