#নীল_অপরাজিতা
#পার্টঃ১১
#Rifat_Amin
মিথিলাকে এমন কান্নারত অবস্থায় দেখে ভরকে গেলো সৌমিত্র। কোনোভাবেই থামছে না সেই অশ্রুপাত। অবশ্য মেয়েদের একটা টেলেন্ড আছে,তারা কিছু করতে পারুক আর না পারুক। হুটহাট কান্না করে দেয়া স্বভাবটা তাঁরা জন্ম থেকেই আয়ত্ব করে নেয়। সৌমিত্র কিভাবে কি করবে তা বুঝতে পারলো না। সে ক্ষীণস্বরে বললো-
– আরে পাগলী মেয়ে কান্না করছো কেনো? আমি তো এটা মজা করে বলছিলাম।
প্রতুত্তরে মিথিলা শুনেও কোনো কথা বললো না। সৌমিত্র পরে গেলো বিপাকে। কি করা যায় এখন? ঘুরতে এসে কোথায় আনন্দ করবো, তা আর ভাগ্যে জুটলো না। এমনিতেই মিথিলা মুড অফ করে থাকে, এখন এই ঘটনার পর আগামী কয়েকদিন মুখ ফুটে কথা বলবে কি না সন্দেহ। সৌমিত্র আবার বললো-
-তখন যদি আমি মেয়েটার সামনে মাথা নিচু করে থাকতাম সেটা কি ভালো দেখাতো? সৌজন্যতার খাতিরেও তো দুএকবার তাকানো উচিত।
– তুমি একবার না বারবার তাকিয়েছো। আমি সেটা ভালোভাবেই লক্ষ্য করেছি।
হিচকি তুলতে তুলতে কথাগুলো বললো মিথিলা। সৌমিত্র বললো-
– আচ্ছা আমি দুঃখিত। আর তাকাবো না প্রমিস।
বলেই সৌমিত্র মিথিলার কাছে এসে ওকে বুকে টেনে নিলো। মিথিলা ছারা পাবার জন্য হাত নড়াচড়া করতে লাগলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে সৌমিত্র বললো –
-ওরে আমার সোনা বউরে। এটুকুর জন্য কাঁদতে হবে? আমি বলছিতো আর তাকবোনা। একদম মাথা নিচু করে থাকবো। এবার হাসো।
– আমি কারো বউ না। আপনিও কাউকে বিয়ে করেন নি আর বউ বাচ্চাও নাই। তাই তাকাতেই পারেন যত খুশি।
বলেই সৌমিত্রর থেকে নিজেকে আলাদা করে হন হন করে রুম বেড়িয়ে গেলো মিথিলা৷ এটা নতুন কিছু না। সৌমিত্রর উপর রাগ করে থাকলে মিথিলা আপনি করে বলা শুরু করে দেয়। তবে এখন মনে হচ্ছে রাগ একটু হলেও কমেছে। রুম থেকে বেড়োনোর আগে সৌমিত্র বললো-
– বিকেলে আড্ডার সময় মন খারাপ করে বসে থেকো না মহারাণী। মিষ্টি নাহলে আমার বিচার বসাবে।
আড্ডার মাঝে এসব ভাবতে ভাবতে ফোন টিপছে সৌমিত্র। মিথিলার দিকে আঁড়চোখে কয়েকবার তাকিয়েছে সে৷ এখনো বোধহয় রাগ করে আছে মিথিলা। আড্ডার মাঝে সবাই উপস্থিত এখন যে যার মতো হালকা নাস্তা করে নিচ্ছে। সৌমিত্র কিছু না খেয়ে ফোন টিপেই যাচ্ছে। অভি সৌমিত্রর দিকে লক্ষ্য করে বললো-
– কি রে চুপচাপ বসে আছিস কেনো? সামনে খাবার রেখে চুপচাপ ফোন টিপছিস যে।
সৌমিত্র ফোন থেকে চোখ সড়ালো না। বললো-
– আমার খিদে পায়নি দোস্ত। তোরা খেয়ে নে। আমি একটা জরুরী কাজ করছি।
– তোর জরুরী কাজ বন্ধ কর। আগে খেয়ে নিয়ে আশেপাশে হাটঁতে বের হবো। রাতে যা করার করে নিস।
সৌমিত্রর অভির কথায় ফোনটা রেখে সবার সাথে গল্প গুজব শুরু করে দিলো। তবে তানিয়া মেয়েটার দিকে তাকালো না। মিথিলা এসব দেখে মনে মনে হাসলেও তা প্রকাশ না করে মুখে কাঠিন্য ভাব বিদ্যমান রাখলো। এখন কথা হচ্ছে তানিয়ার বিয়ে নিয়ে৷ একমাস পর’ই নাকি তানিয়ার বিয়ে। ঢাকার কোনো এক শিল্পপতির ছেলের সাথে। অবশ্য উঁচু শ্রেণির মানুষের সাথে তার সমকক্ষ মানুষের বিয়ে হওয়াই ভালো। এতে মানিয়ে নিতে সুবিধা হয়। মিষ্টি মনে মনে অপমানিত হলো। তানিয়া মেয়েটাকে কি না কি ভেবেছিলো সে। কথার মাঝখানে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে তানিয়া বললো-
– বিয়ে শাদি করবে না মিষ্টি?
উত্তরে মিষ্টি হাসলো। কি বলা যায় ভেবে পেলো না সে। নিঁচুস্বরে বললো-
– এ বিষয়ে ভেবে দেখিনি আপু। বাবা যা করবে তাই।
– তোমার নিজস্ব কোনো পছন্দ নেই?
– না
– না থাকাই ভালো। তবে তোমাকে একজন পছন্দ করে৷
মিষ্টি প্রথমে একটু বিস্মিত হলেও মানিয়ে নিলো। বললো-
– কে আপু?
– সময় হলে ঠিক জানতে পারবে। বিয়েটাও হবে হয়তো।
বলেই মিটিমিটি হাসতে থাকলো তানিয়া। অভি এসব কথা শুনেও এড়িয়ে চললো। এই বিষয়ে এখন না কথা বলাই ভালো। আপতত ঘুরতে এসে ঘোরাঘুরি করি দুয়েকদিন। অভি তানিয়ার দিকে দৃষ্টি রেখে বললো-
– তোমাদের রিসোর্ট টা সুন্দর। সুন্দর বললে ভূল হবে। অনেক সুন্দর।
তানিয়া প্রসস্ত করে হাসলো। অতঃপর হালকা পিছনে ঘূরে একটা পাহাড়ের দিকে হাতের আঙ্গুল উদ্দেশ্য করে বললো-
– এই যে পাহাড়টা দেখছো না অভি? এটা হলো মেঘালয় পর্বতমালা। এটা ভারতে অবস্থিত। আমরা বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছিই আছি। সুন্দর না?
অভি বিষ্মিত হলো না। বিভিন্ন কাজের চাপে অভি আর সৌমিত্র এখানে এসেছিল দু-একবার। এত স্থিরভাবে দেখতে না পেলেও কিছুটা দেখেছে তারা। তবুও বললো-
– তাই নাকি? আসলেই অনেক সুন্দর। মেঘালয় ঝর্ণার কাছাকাছি যেতে পারবো কি আমরা?
– না। ওখানে যাওয়া যাবে না।
মিথিলা আর মিষ্টি ঘুরেফিরে চারদিক দেখতে লাগলো। মনে হচ্ছে তারা কোনো বিরাট কোনো সবুজ বিছানার মধ্যে বসে গল্প করছে। মিষ্টির ভালো লাগছে। তবে খারাপ’ও লাগছে এই ভেবে যে তানিয়া কার কথা বলছিল তখন । তানিয়া কি অভির কথা বলছিলো। তা কি করে হয়? অভির মতো খাটাশ ছেলে আমায় পছন্দ করবে? আর করলেও বা কি। আমি তো বিয়ে করবো না। না মানে না। ওকে বিয়ে করলে আমার বাকি জীবনটা’ও নরকে কাটাতে হবে৷
সৌমিত্র চেয়ার ছেরে উঠে গিয়ে মিথিলার দিকে এগিয়ে গেলো। মিথিলা এখন প্রকৃতির অপরুপ দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত। আর এটাই রাগ ভাঙ্গানোর মক্ষম সময়। সৌমিত্র ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো মিথিলার দিকে। মিথিলা চোখ বন্ধ করে আছে। সৌমিত্র পেছন থেকে মিথিলার চোখদুটো চেপে ধরলো৷ মিথিলা বুঝে ফেললো এটা সৌমিত্র। অত্যন্ত বিরক্তের সাথে বললো-
-আপনি এখানে এসেছেন কেনো? ওখানে গিয়ে বসুন আর ঐ আপুটার দিকে তাকিয়ে থাকুন।
সৌমিত্র চোখ থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মিথিলার পাশাপাশি দাঁড়ালো। বললো-
– তুমি দেখেছো তো আমি ঐ মেয়েটার দিকে আর একবারো তাকাইনি। তবুও এখন পর্যন্ত রাগ করে আছো।
– তাকাতে মানা করছি নাকি? আপনি একটা কাজ করুন আমায় সিলেট যাবার ব্যাবস্থা করে দিন। আমি ওখান থেকে ঢাকা চলে যেতে পারবো। ভালো লাগছে না আমার এখানে।
-বেশী বারাবাড়ি করিও না মিথিলা। আমি সরি বলেছি তো। তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি আমি। আর আমার সাথেই যাবে।
– আম্মু ফোন করেছিলো একটু আগে।
-কি বলেছে?
– বলেছে, এতদিন লাগছে কেনো আসতে? আমি বলেছি আর দুএকদিন থেকে যাবো। তবে এখন মনে হচ্ছে এখান থেকে চলে গেলেই কারো ভালো হবে। যা খুশি তাই করতে পারবে। আপনি যাওয়ার ব্যাবস্তা করে দিলে খুশি হবো। আর তা নাহলে অভি ভাইকে বলতে বাধ্য হবো।
– পাগলানো বন্ধ করবে তুমি? শুধু শুধু ঝগড়া করছো কেনো।
– আমাকে তো তোমার পাগল মনেই হবে। পাগলরা পাগলামো করে না’তো কি করে?
সৌমিত্র আর কথা বাড়ালো না। কাছে এসে মিথিলার হাত ধরে বললো –
– চলো গিয়ে গল্প করি৷ মন ভালো হয়ে যাবে।
– হাত ছাড়ুন। সবাই কি ভাববে বলুন তো।
সৌমিত্র হালকা হেসে বললো-
– এখানে সবাই আমাদের বিষয়ে জানে মহারাণী। এত চিন্তা করতে হবে না।
– আমি ভাইয়া,আপুর কথা বলছি না। ঐ তানিয়া আপুর কথা বলছি। যদি জানে আপনি প্রেম করেন তাহলে তো আর পটতে চাইবে না।
– উফফ! তুমিও না। এতো ঝগড়া কই থেকে শিখলে। মিষ্টির সাথে থাকতে থাকতে তোমার মাথাটাও গেছে একদম। আরে তানিয়ার তো বিয়ে ঠিক হইছে শুনলে না।
– বিয়ে তো আর হয় নি এখনো।
সৌমিত্র আর পারছে না রাগ ভাঙ্গাতে। রাগ ভাঙ্গাতে রিতীমত ক্লান্ত সে। মিথিলা চুপ করে আছে তখন থেকে। সৌমিত্র কোনো কথা বলেই মিথিলাকে দুই হাতে কোলে তুলে নিলো। হঠাৎ শুন্যে উঠছে ভেবে বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেলো মিথিলা। যখন বুঝলো সে সৌমিত্রর কোলে তখন ছাড়া পাবার জন্য ছোড়াছুড়ি শুরু করে দিলো। সৌমিত্র কোনো কথা না বলে হুরহুর করে মিথিলাকে কোলে নিয়ে আড্ডার মাঝখানে এসে অভির উদ্দেশ্যে বললো-
– দোস্ত ফোন বের করে ছবি তোল এই পুঁচকে মেয়েটার। দেখ সেই কখন থেকে রাগ করে আছে। বাধ্য হয়ে কোলে তুলতে হলো। তারাতারি কর দোস্ত। আস্ত লবণের বস্তা একটা।
অভি, মিষ্টি, তানিয়া, মাহিন সবাই চোখ তুলে তাকালো সৌমিত্রর দিকে। এদিকে লজ্জায় নড়াচড়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে মিথিলা। মনে হচ্ছে শ্বাসবন্ধ হয়ে এখানেই মারা যাবে সে৷ চোখ খিঁচে বন্ধ করে রইলো সে। মাহিন সৌমিত্রকে দেখা মাত্র ফোন বের করে ভিডিও করতে লাগলো। এই ভিডিও তার ইউটিউবে ছাড়তে পারলে ভালোই ভিউ পাওয়া যাবে। অভি মাহিনের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে বললো-
– ভিডিওটা ভূলেও ইউটিউবে ছাড়িস না। তাহলে কিন্তু ঝামেলা হতে পরে। অতঃপর সৌমিত্রর দিকে দৃষ্টি রেখে বললো- মহারাণী খুব রাগ করেছে না কি সৌমিত্র?
– হয় রে ভাই। সেই দুপুর থেকে রাগ করে কথা পর্যন্ত বলছে না। একটু আগেও রাগ ভাঙ্গাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু মহারাণীর রাগ কমছে না। তাই বাধ্য হয়ে কোলে তুলতে হলো।
বলেই সৌমিত্র মিথিলার কানে কানে বললো- সবাইকে বলে দেই কেনো রাগ করে আছো। বলে দেবো?
মিথিলা কথাটা শোনা মাত্র আবার চোখ খিচে বন্ধ করলো। দাতে দাত চেপে বললো-
– আপনি ভীষণ খারাপ একটা মানুষ। সাথে পাগল’ও।
সৌমিত্র মুচকি হেসে বলল-
– জানিতো মহারাণী
চলবে?