অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part:23
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
.
.
🍁
.
না মানে আসলে..
.
এতো তুতলাচ্ছেন কেন??সোজাসাপ্টা ভাবে বলে দিন তাহলেই হয়।।ভাই?উনি আমাকে বিয়ে করে নিয়েছেন।
.
রিয়ার কথাটা পুরো বাড়িতে যেনো বোমের মতো ফাটলো।।তারপরই শান্ত হয়ে গেলো পুরো বাড়ি।।কেউ যেন বলার মতো কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না।।একসপ্তাহ পর বিয়ে ঠিক করা হয়েছে পারিবারিক ভাবেই তাহলে এভাবে হুটহাট বিয়ে করে নেওয়ার মানে টা কি??শেষমেষ এনামুল সাহেবই নীরবতা ভাঙলেন।।ছেলের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে উঠলেন…
.
এসব কি ফাহিম?তুমি বাচ্চা নও তবে এসব বাচ্চামো কেন??যদিও একা একাই বিয়ে করার ছিলো তাহলে আমাদের এর মধ্যে জড়ানোর কি প্রয়োজন ছিলো??
.
ফাহিম কি বলবে বুঝতে পারছে না।।এতোগুলো মানুষের সামনে বাবাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলাও সম্ভব নয়।।রিয়া আড়চোখে ফাহিমের দিকে তাকালো।।ফাহিম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।।রিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো…
.
বাবা?(ফাহিমের বাবা তাকাতেই ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো রিয়া) আপনাকে তো বাবা ডাকতেই পারি তাই না??আমার তো বাবা নেই।।সেই ছোট্ট বেলায় “বাবা” শব্দটা উচ্চারন করেছিলাম তারপর থেকে এই শব্দটা ডিকশনারি থেকে বেরিয়েই গেছে।।আপনাকে বাবা ডেকে শব্দটাকে কি আবার এড করে নিতে পারি??
.
রিয়ার কথায় গম্ভীর এনামুল সাহেবও যেনো নড়ে চড়ে উঠলেন।ধীর পায়ে রিয়ার সামনে গিয়ে ওর মাথায় হাত রেখে বললেন,,”অবশ্যই মা” রিয়া মুচকি হাসি দিয়ে আবারও বলে উঠলো..
.
বাবা?উনাকে বকো না।।উনার কোনো দোষ নেই আমিই উনাকে রাগিয়ে দিয়েছিলাম।।যার জন্য উনি আজই বিয়েটা করে নিয়েছেন।।তোমার ছেলে খুব ভালো আমায় ভীষন ভালোবাসে তাই হয়তো আমাকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চায় নি।।
.
তুমি যখন বলছো বকবো না।।কিন্তু আমরা যে বিয়ের এত্তো এত্তো লিস্ট করলাম তার কি হবে??
.
কিচ্ছু হবে না।।তোমরা তোমাদের মতো বিয়ের আয়োজন করো।।আমাদের যে বিয়ে হয়ে গেছে সেই ব্যাপারটা ভুলে যাও।।আমরা নাহয় আবার বিয়ে করে নিবো।তাতে কি??বাবা আমরা আমরাই তো,,কি বল??
.
রিয়ার কথায় এনামুল সাহেবও হুহা করে হেসে উঠলেন সাথে সবাই।।ফাহিম অবাক চোখে রিয়াকে দেখছে,,মেয়েটার মধ্যে বাচ্চামো থাকলেও পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে।।ফাহিমকে সামলে নেওয়ার ক্ষমতাও তার আছে।এমন গম্ভীর একটা পরিস্থিতিকে কেমন হাসির বাজার বানিয়ে ছেড়ে দিলো।।আয়ানের কনুইয়ের গুঁতো খেয়ে ভাবনার প্রহর কাটলো তার।।আয়ানের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই আয়ান শয়তানী হাসি দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো…
.
তোর বাসর গেলো দোস্ত।।আজ তো তোর বাসর রাত হওয়ার কথা ছিলো বাট তা আর হলো না রে…সো স্যাড(চোখ টিপে)
.
আমি তোর মতো না।।সারাদিন ওসব নিয়ে ভাবি না।।আই হেভ প্যাশেন্স।।
.
হইছে মামা।আর চাপা মাইরও না।।তোমার চিন্তার শুরু আর শেষ সবই যে রিয়াময় তা আমি জানি।।তো তুলশী পাতা সাজার দরকার নেই।।
.
ফাহিম এবার আয়ানের পেটে গুতো মেরেই ওর কাছ থেকে সরে অদিতির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।। আয়ান হাসতে হাসতে আবারও ফাহিমের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।।অদিতি হাসিমুখে আদ্রিতাকে সাদিয়ার কোল থেকে নিয়ে ফাহিমের মা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো…
.
আন্টি?বিয়ের ডেইট কবে ঠিক হলো??
.
এরপরের সপ্তাহেই মা।।পরশো থেকেই অনুষ্ঠান শুরু।পরশো যা লাগবে আজই শপিং করে নাও।।বিয়েটা চট্টগ্রামেই হবে নয়তো ঢাকা টু চট্টগ্রাম খুব সমস্যা হয়ে যাবে।।মেহমানদের আজকের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হবে।।সব কাছের আত্মীয়গুলোকেই ইনভাইট করবো আপাতত।।তারপর রিসেপশনের দিন অল গেস্টদের ইনভাইট করবো।।
.
ওহহ(মন খারাপ করে)তাহলে আমি আজই ঢাকা চলে যাই।। রিসেপশনের দিন ঠিকঠাকভাবে পৌঁছে গেলেই হলো।(মুচকি হেসে)
.
একটা চড় বসাবো।। কই যাবে শুনি??তোমার বোনও আসছে কাল।।সাথে ফাহিমের ভার্সিটির সব ফ্রেন্ড আর তুমি চলে যাবা??
.
মামনি শুধু ও নয়।।আমাকেও যেতে হবে।।(ফাহিমের দিকে তাকিয়ে)সরি দোস্ত,,বিয়ের সব ফাংশন এটেন্ট করতে পারছি না।।
.
কি বলছিস এসব সমস্যা টা কি??
.
একটা প্রজেক্টে কাজ করছি আমরা দুজনেই।।ওখানে এই একসপ্তাহে অনেক কাজ।।কমপ্লিট না করতে পারলে কোম্পানির অনেক লস হয়ে যাবে।।তাছাড়া আমাদের প্রোজেক্ট সফল না হলে বাচ্চারা কোম্পানির কাছ থেকে ডোনেশনটাও পাবে না।।।সো ইউ হেভ টু গো।
.
আচ্ছা?ওই বাচ্চাদের এখানে নিয়ে চলে আসুন তাহলেই তো হয়।।বাড়িটাও আনন্দে মেতে উঠবে আর বাচ্চাদের উপর ডিফারেন্ট ইনভারোনমেন্ট কি প্রভাব ফেলে এটা নিয়ে রিচার্জও হয়ে যাবে।।চাইল্ডহোমের থেকে বাচ্চাদের ফিলিংসগুলো আই থিংক এখানেই বেশি প্রকাশ পাবে।।
.
রিয়ার কথায় আয়ান, ফাহিম দুজনেই কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রইলো।।তারপর হঠাৎই দুজন চেঁচিয়ে উঠলো।।ফাহিম তো উত্তেজনায় রিয়াকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা টাইট কিস করে দিলো।।রিয়া তো লজ্জায় লাল।।ফাহিম পরিস্থিতি বুঝতে পেরে নিজেও লজ্জায় অস্থির।।আয়ানের তো খুশি যেনো ধরছেই না।।
.
রিয়া?পিচ্চি পাখি ইউ আর জাস্ট ব্রিলিয়ান্ট।।দারুন একটা আইডিয়া দিয়েছো।।তোমার জন্যই আমার কলিজার বিয়েতে থাকতে পারছি আমি লাভ ইউ সোনা…..
.
ওই আমার বউকে তোর এতো লাভ ইউ লাভ ইউ বলা লাগবে না।।আমি বললেই যথেষ্ট।।
.
ফাহিমের কথায় আবারও সবাই উঠলো।।সবার হাসির মাঝেই অদিতি চিন্তিত মুখে বলে উঠলো…
.
সব তো ঠিক আছে কিন্তু ৩০ জন বাচ্চাকে সামলানো কি সহজ কাজ??তারসাথে চারজন মেইড আর মিষ্টার খান তো আছেই।। ওদের নিয়েই তো ৩৪ জন হয়ে যাবে।।কিভাবে সামলাবে সবাইকে?তাছাড়া মিষ্টার খান কি রাজি হবেন?
.
অদিতির কথায় আয়ানের মনটাও খারাপ হয়ে গেলো সত্যি তো।।মুখ কাচুমাচু করে বলে উঠলো…
.
আমি মিষ্টার খানকে ম্যানেজ করতে পারবো।।বাট বাচ্চারা??মামনি?(মুখ ভার করে)
.
এই ছেলে একদম মুখ ভার করবি না।।মামনি থাকতে আয়ানের মুখ ভার থাকবে ইম্পোসিবল।।আমি সব ম্যানেজ করছি।।
.
লাভ ইউ মামনি।
.
লাভ ইউ টু মাই সান।
.
অদিতি এবার বুঝতে পারলো আয়ান কেনো এই মহিলাকে এতোটা ভালোবাসে।উনি আয়ানকে ফাহিমের থেকে কোনো অংশে কম ভালোবাসেন না তা উনার ব্যবহারেই বুঝা যাচ্ছে।আয়ানের চোখের ভাষা বুঝার ক্ষমতা উনার আছে,, যা শুধু একজন মা ই পারে।।তাই আয়ানও তাকে মায়ের সমানই ভালোবাসে।। ফাহেমার কথায় অদিতির চিন্তার সুতো ছিড়লো,,,আবারও মুচকি হেসে মনোযোগ দিলো সবার কথায়,,,
.
রিয়াদ??বাবা ম্যানেজ করা যাবে তো??তোমাদের জন্য বেশি চাপ তৈরি করে ফেললাম না তো??কি করবো বলো?আমার এক ছেলের বিয়েতে অন্য ছেলে থাকবে না তা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না।।আমার দুই ছেলেকেই চাই।।
.
না আন্টি কোনো সমস্যা নেই।ম্যানেজ হয়ে যাবে।।বাড়িতে ৮ টা বেডরুম আছে।।চারটা বাচ্চাদের জন্য ছেড়ে দিলেই হবে।।আর বাকি চারটির দুটোতে মেয়েরা থাকবে বাকি দুটোতে ছেলেরা।।তাও জায়গা না হলে ছাদ আর ড্রয়িং রুম তো আছেই।।নো টেনশন।।তবে সবাইকে মেজের সাথেই ম্যানেজ করে নিতে হবে।।
.
তাতে কোনো সমস্যা নেই।।বিয়ে বাড়িতে এভাবে কুচাঁকাচি করে থাকার মজাই আলাদা।।কি বলুন বিয়াইন??
.
রিয়াদের মার কথায় সাই জানালো ফাতেমা।।সে প্রচুর খুশি।।যেভাবেই হোক তার আয়ান তার কাছেই থাকছে শেষমেষ।।আয়ান চুপচাপ দাঁড়িয়ে মামনির দিকেই তাকিয়ে আছে।।এই মহিলাটাকে যতো ভালোবাসা যায় ততোই কম মনে হয় আয়ানের কাছে।।একমাত্র এই ব্যক্তিটাই আয়ানকে নিজের ছেলে ভেবে ২২ টা বছর ধরে বুকে আগলে রেখেছে।।ফাহিম আর মামনির জন্যই হয়তো আজও ওর মধ্যে ডিপ্রেশন বলে কিছু নেই।।নয়তো এই ২২ বছরে এই পৃথিবীর নিষ্ঠুরতাই হারিয়েই যেতো।।মামনিকে কেউ জিগ্যেস করলে সবসময়ই উনি উনার দুই ছেলের কথা বলেন।।কারো থেকে যে কেউ কম না সেটাও বুঝিয়ে দেন সকলকে।।আয়ানের কাছে মামনিই তার শেষ আশ্রয় আর শেষ ভালোবাসা।।কতোরাত গিয়েছে চোখের জলে মামনির কোল ভিজিয়েছে আয়ান।।মাদার্সডে তে সবসময় নিজের ছেলে হিসেবে পরিচয় দিয়ে দুহাতে দুজনের হাত চেপে স্কুলে পাড়ি দিয়েছে মামনি।।ফাহিমও আয়ানকে ভাই হিসেবেই মেনে এসেছে ছোট থেকে।।মামনির কোলে শোয়ে যখন কাঁদতো আয়ান,,ছোট্ট শরীরটা যখন কেঁপে কেঁপে উঠতো।।ফাহিম আয়ানের পাশপ বসে অস্থির হয়ে পড়তো।।অতিতের কথাগুলো মনে পড়েই চোখ ভিজে গেলো আয়ানের।। দুগালে দুটো থাপ্পড়ে ধ্যান ভাঙলো তার।।চমকে গিয়ে সামনে তাকাতেই বুঝতে পারলো এটা ফাহিম আর মামানির কাজ। ওরা সবসময় এমন করে,,যখন আয়ান কাঁদে তখনই দুজনই দু’গালে দুটো চড় দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেই।।আয়ান মুচকি হেসে দুজনকেই জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।।এই দুটো মানুষ যে তার দু দুটো দুনিয়া।।ঠিক তখনই পেছন থেকে এনামুল সাহেব বলে উঠলেন…
.
এক্সকিউজ মি??তোমাদের হেপি ফ্যামিলিতে আমি ভিলেন হলাম কবে থেকে??(মন খারাপ করে)
.
আয়ান আর ফাহিম মুচকি হেসে এনামুল সাহেবকে জড়িয়ে ধরলো।।
.
🍁
.
দুপুর ১টা ২০….বাচ্চারা চলে এসেছে।।সাথে এসেছেন খান সাহেব।।আর চারজন মেইড বাচ্চাদের সামলানোর জন্য।।খান সাহেব এসেই বোম ফাটালেন বাড়িতে।।আই মিন এসেই বলে উঠলেন…
.
অদিতি মা?তুমি সুস্থ আছো তো?
.
সবাই চোখ ঘুরিয়ে অদিতিকে একবার দেখে নিয়ে খান সাহেবের দিকে তাকালেন।।এখানে ফাহিম ছাড়া এত্তো কাহিনী কারো জানা নেই।।সবাইকে এভাবে তাকাতে দেখে খান সাহেব বলে উঠলেন….
.
আসলে প্রেগনেন্ট অবস্থায় জার্নি করাটা রিস্কি তাই বললাম।।তো আয়ান বউয়ের খেয়াল রাখছো তো ঠিক মতো??মুখ চোখ কেমন শুকিয়ে গেছে।।তোমার মা কে বিচার দিতে হবে।।কোথায় তোমার মা??
.
আয়ান যা ভয় পেয়েছিলো তাই হলো।।এরা যে বিষয়টা কিভাবে নিবে আল্লাহ জানে।।অদিতির অবস্থাও সেইম।।কালকে ওর বোন,, দুলাভাই আসবে।।এদের কিভাবে সামলাবে কে জানে তারউপর যদি বাবা-মা চলে আসে তাহলে তো কথায় নেই।।একেবারে ঝাড়ুর বাড়ি।।খান সাহেব আবারও একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করায় আয়ান চোখের ইশারায় মামনিকে দেখিয়ে দিলো…
.
ওইতো সবচেয়ে সুন্দর মহিলাটাই আমার মামনি(মুখ ভার করে)
.
অদিতি আয়ানের বউ তাও প্রেগনেন্ট এতোবড় খবর টা শুনার পরও আয়ানের এমব কথায় হেসে উঠলো মামনি।।নিজেকে কন্ট্রোল করে বলে উঠলেন উনি…
.
জি আমিই ওর মা…
.
.
#চলবে🍁