#চলো_ভিজি_বৃষ্টিতে
#Tanjima_Islam
২৫
.
.
.
.
.
পলাশ নিজের নামের এমন বারোটা বাজতে দেখে তার কান্না পাচ্ছে! তার দাদু কত শখ করে তার নামটা রেখেছিলো!!
পলাশ নিজেকে সামলে নিয়ে কাচুমাচু করে বলল, ” আমরা কি একটু আলাদা করে কথা বলতে পারি!?
সুমু তড়িৎ গতিতে বাটি রেখে উঠে বলল, ” হোয়াই নট!? লেটস গো!!
বলেই হনহন করে নিজের রুমে চলে গেল সুমু, পলাশও গেল তার পিছুপিছু।
.
.
.
রুমে ঢুকেই দরজা লক করে দিল সুমু, তা দেখে পলাশের তো প্রাণ যায়যায় অবস্থা।
সুমু মাথা থেকে ঘোমটা ফেলে বলল, ” তো, কি কথা বলবেন বলুন!
বলেই চোখ টিপ দিল সুমু, পলাশ চোখ জোড়া বড়সড় করে ইতস্ততভাবে বলল, ” আপনার কি কারো সাথে প্রেমের সম্পর্ক আছে!?
সুমু চোখ ছোটছোট করে বলল, ” আপনি কিভাবে বুঝলেন!? আপনি কি সাইকোলজিস্ট!!
পলাশ বুঝতে পেরেছে সুমুর রিলেশন আছে তাই বিয়েটা ভাংতে চাইছে! কিন্ত সে তার ভালবাসা দিয়ে সুমুকে সব ভুলিয়ে দেবে।
তাও কিছুটা মনোক্ষুণ্ণ হয়ে পলাশ বলল, ” দেখুন, বিয়ের আগে প্রায় সব মেয়েরই কমবেশি রিলেশন থাকে! এটা কোনো ব্যাপার না, বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে!!
সুমু বুঝল ব্যাটা পলাশ তাকে পছন্দ করেছে!এতোকিছুর পরেও ব্যাটার দেখছি শিক্ষা হয়নি!!
নো প্রব্লেম, এবার শুরু হবে লাস্ট টার্ম, “পলাশের সাথে পলাশীর যুদ্ধ”!!!
সুমু দু’হাতে চুল গুলো উঁচু করে খোপা বেধে নিল, শাড়ির আচল কোমরে গুজে দিয়ে বলল, ” বিয়ের পর কিচ্ছু ঠিক হবে না পলাশ বাবু!
সুমুর শাড়ি কোমরে গুজতে দেখে কিছুটা ভড়কে গেল পলাশ।
এমন ভাবে চুল বেধেছে যেন, ঝড়ের বেগে তার দিকে ধেয়ে আসবে সুমু!!
সুমু বেডের তলা থেকে বেড ঝাড়ু হাতে নিয়ে আদুরে স্বরে বলল, ” আমার প্রেমিক না খুবই ডেঞ্জারাস পলাশ বাবু! আমার বিয়ে হয়ে গেছে শুনলে, আপনার বাড়িতে পেট্রোল দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেবে! অবশ্যই তার আগে আমাকে নিয়ে বেরিয়ে আসবে, তখন আপনার কি হবে পলাশবাবু!! তখন কি পেট্রোল বোমার সাথে রোম্যান্স করবেন!!!?
পলাশ বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থেকে আচমকা চিৎকার করে উঠল!
চেচাতে চেচাতে রুম থেকে বেরিয়ে দিল এক ছুট!! এদিকে সুমু জয়ের হাসি দিয়ে বেড ঝাড়ু দিয়ে তার বেডটা ঝাড়তে লাগল!!!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ডক্টর শোভনের কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আফসা, সিরিয়ালে তার নাম ডাকতেই কেবিনে ঢুকল সে।
শোভন হটাৎ আফসাকে তার কেবিনে দেখে বেশ অবাক হল।
আফসা অবাক হওয়ার ভান করে বলল, ” আরে শোভন! আপনি এখানে!!?
শোভন ভ্রু কুচকে বলল, ” এটা তো আমার আপনাকে জিজ্ঞেস করা উচিৎ!
আফসা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, ” আমি তো এখানে এসেছি ডক্টর দেখাতে!
শোভন হেসে বলল, ” আর আমি বসে আছি রোগী দেখতে!!
আফসা মাথা চুলকে বলল, ” বসতে পারি!?
শোভন চেয়ার দেখিয়ে বলল, ” হ্যাঁ অবশ্যই!
আফসা চেয়ারে বসে বলল, ” সেদিন বাসায় ফিরতে অনেক লেট হয়েছিলো না!?
শোভন মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে বলল, ” হুম, তা তো হয়েছিলই! আর ঘুম ভেঙে উঠতেও লেট!!
আফসা এদিক ওদিক তাকিয়ে শোভনের কেবিনটা দেখছে।
শোভন গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, ” তো হটাৎ হসপিটালে! সিরিয়াস কিছু হয়েছে নাকি!?
আফসা হেসে বলল, ” না, মানে আসলে। আজ কয়দিন খুব মাথাব্যথা করছে!
বলেই আঙুল দিয়ে কপালে ম্যাসাজ করতে লাগল আফসা।
শোভন মুচকি মুচকি হাসছে, কিন্ত আফসাকে বুঝতে না দিয়ে বলল, ” ঠিক কতদিন ধরে এমন হচ্ছে!? আই মিন মাথা ব্যাথাটা!!
আফসা আনমনে বলে উঠল, ” সেই প্রথম দিন থেকে!
আফসার কথা শুনে শোভন তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে আফসার দিকে।
আফসা কিছুটা ইতস্ততভাবে বলল, ” এই তো, বেশ কয়দিন ধরে আর কি!
শোভন বেশ সিরিয়াস মুডে বলল, ” হুম বুঝেছি!
বলেই চেয়ার ছেড়ে আফসার সামনাসামনি চেয়ারে এসে বসল শোভন।
আফসা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে শোভনের দিকে।
শোভন আফসার কপালে আসা চুল গুলো সরিয়ে আঙুল ছোয়ালো আফসার কপালে! শোভনের স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠছে আফসা!!
শোভন স্মিত হেসে বলল, ” শুধু কপালে নাকি মাথার পেছনেও ব্যাথা করে!?
আফসা কাপা কাপা গলায় বলল, ” হুম!
সে কেন হুম বলল নিজেও জানেনা, শোভন মুগ্ধ হয়ে দেখছে আফসাকে।
মেয়েটাকে প্রথম দেখেই থমকে গেছিলো সে, অচেনা অজানা একটা রাস্তার বাচ্চার জন্য মেয়েটার কত টেনশন!
শোভন নিজেও এমনই, ছোট থেকেই অন্যের বিপদে যতটা সম্ভব সাহায্য করতো।
শোভন আফসাকে দেখে সেদিনই বুঝেছিলো, সে তার মনের মতো কাউকে পেয়ে গেছে!
কপাল থেকে হাত সরিয়ে আফসার ঘনকালো সিল্কি চুলে আঙুল ডোবালো শোভন!
আফসার কাপাকাপি আরও বেড়ে গেল, শোভন সেদিকে তাকিয়ে বলল,” এই ব্যাথা ধীরে ধীরে তীব্র হবে! এই ব্যাথা থেকে মুক্তির উপায় নেই আফসানা!! আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে!!!
শোভনের কথা গুলো আফসার কানে মাদকের মতো লাগছে!
ইচ্ছে করছে শোভনের হাত ধরে জীবনের পথে হারিয়ে যেতে!! যদি সময়টা সেখানেই থমকে যেতো!!!
হটাৎ সেইরাতে কুকুরের তাড়া খাওয়ার কথা মনে পড়তেই আফসার চুল থেকে হাত সরিয়ে উঠে দাড়ালো শোভন!
আফসা সচকিত হয়ে বলল, ” কি হয়েছে!?
শোভন আমতাআমতা করে বলল, ” আমার শরীরটা ভাল লাগছেনা। পরে কথা হবে!
বলেই দরকারি জিনিসপত্র নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো শোভন!
আফসা হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শোভনের যাওয়ার পথে!!
মনেমনে বলল, ” এর আবার কি হল!?
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আকাশে ঘনকালো মেঘ জমেছে! যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে!
শহর থেকে দূরে একটা রিসোর্টে এসে দাড়ালো আরহামের গাড়ি।
রিসোর্টে ঢুকে গাড়ি থেকে নেমে গেল আরহাম! রিয়াও নেমে ছুটল তার পিছুপিছু!!
আরহাম শার্টের কলার আলগা করে টাই টেনে ছিড়ে ফেলে দিল! প্রচন্ড রাগে মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে তার!!
রিয়া আস্তে আস্তে আরহামের পাশে গিয়ে বলল,” মি. আরহাম! মি. আরহাম শান্ত হোন!! প্রব্লেম যেমন হয়েছে এর সল্যুশনস নিশ্চয়ই আছে!!! আমরা একসাথে মিলে এর সল্যুশন বের করবো!!!
আরহাম রাগান্বিত চোখে তাকালো রিয়ার দিকে, রিয়া একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল, ” আমি বুঝতে পারছি মি. আরহাম, মিস ইকরা এতো সহজে আমাদের শেয়ার ফেরত দেবেনা। কিন্ত সেজন্য মাথা গরম করলে তো হবেনা, আমাদেরকে ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে!
আরহাম শার্টের হাতা ফোল্ড করে রিয়ার দুই বাহু চেপে ধরে বলল, ” কি তখন থেকে মি. আরহাম মি. আরহাম লাগিয়ে রেখেছো হ্যাঁ! তুমি জানো! কেন আমি ইকরাকে কোম্পানি থেকে বের করে দিতে চাই!!?
রিয়া ভয়েভয়ে মাথা নাড়িয়ে না করল, আরহাম আরও জোরে রিয়ার দুই বাহু চেপে ধরে বলল, ” কারণ আমি চাই না ইকরা আমার আশেপাশেও থাকুক! আমি শুধু তোমাকে আমার পাশে চাই রিয়া!! আমি শুধু তোমাকে চাই!!!
প্রায় সাথেসাথেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল, সেইসাথে রিয়ার চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে!
না এই কান্না কষ্টের না, এই কান্না সুখের!! আরহামের চোখে রিয়ার জন্য ভালবাসা দেখে আনন্দে কেদে ফেলেছে রিয়া!!!
আরহামের মুখ থেকে এই কথাটা শোনার জন্য কত অপেক্ষাই না করেছিলো সে!
নিজেকে আর সামলাতে না পেরে আরহামকে জড়িয়ে ধরল রিয়া!
আরহাম একটা প্রশান্তির হাসি দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল রিয়াকে!!
বৃষ্টির বেগ বেড়েই চলেছে, আরহাম আর রিয়া তো ভিজে একাকার! ঠান্ডা লেগে হাচি দিয়ে উঠল রিয়া!!
আরহাম চিন্তিত গলায় রিয়ার মুখে হাত বুলিয়ে বলল, ” তোমার তো ঠান্ডা লেগে গেছে রিয়া!
রিয়া সলজ্জ হেসে মাথা নাড়িয়ে সায় দিল, আরহাম রিয়ার ধরে হোটেলে গেল। একটা রুম নিয়ে ফ্রেশ হতে গেল দুজন।
.
.
.
.
.
রুমে ঢুকে আরহাম দেখল রিয়া শীতে কাপছে! আরহাম বলল, ” তুমি আগে ফ্রেশ হয়ে নাও, দেন আমি যাবো।
রিয়া একবার নিজের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমাকে বরং বাসায় দিয়ে আসুন, একে তো বৃষ্টিতে ভিজেছি। ঠান্ডা লাগলে আম্মু খুব ঝাড়বে!
আরহাম বুঝল রিয়া ড্রেস নিয়ে ভাবছে, দু’হাতে চুল গুলো ওল্টাতে ওল্টাতে বলল, ” ওয়াশরুমে বাথরোব আছে, ফ্রেশ হয়ে পরে নাও। আমি ড্রেস গুলো ড্রায়ার এ দিয়ে দিবনি।
.
.
.
.
.
আরহামের শার্ট প্যান্টে জমা বৃষ্টির পানি গায়েই শুকিয়ে গেছে।
এবার কিছুটা শীত শীত লাগছে তার, ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল বিকাল চারটা বিয়াল্লিশ বাজে!
উফফ এই মেয়েটা এখনও বের হয় না কেন!?
আরহামের ভাবনায় ছেদ পড়ল ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে।
ডিপ ব্লু কালারের বাথরোব পরে বেরিয়েছে রিয়া! ঘনকালো লম্বা চুল গুলো বেয়ে ফোটায় ফোটায় পানি পড়ছে!!
আরহামের যেন নেশা ধরে যাচ্ছে, নেশাগ্রস্তের মতো রিয়াকে দেখছে সে!!!
রিয়া তোয়ালে দিয়ে চুল গুলো মুছতে মুছতে খেয়াল করল আরহাম তার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে!
রিয়া জিজ্ঞেস করল, ” এভাবে কি দেখছেন!?
আরহাম নিজেকে সংযত করে বলল, ” কি আর দেখবো! কেউ যে গোসল করতে এতো টাইম লাগায় তাই দেখছিলাম!!
রিয়া দাত কিড়মিড়িয়ে বলল,” এতই যদি গোসলের তাড়া থাকে তো অন্য রুমে যাননি কেন! হুম!?
আরহামও সেইসাথে হালকা চেচিয়ে বলল, ” আজ এই একটাই রুম খালি ছিলো, নাহলে কি এভাবে বলদের মতো গোসলের আশায় বসে থাকি!!
রিয়া চোখমুখ খিচিয়ে বলল, ” আপনার এ কি ফকিরে মার্কা রিসোর্ট! যে গোসলের জন্য এক্সট্রা রুমই পাওয়া যায় না হুহ!!
আরহাম বিড়বিড় করে বলল, ” রুম চাইলে তো পেতামই, কিন্ত তোমার সাথে তো সময় কাটাতে পারতাম না শ্যামবতী!
আরহামের বিড়বিড় শুনে রিয়া ভাবল আরহাম তাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কিছু বলছে!
রিয়া তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলল, ” ঐ! ঐ আপনি কি বললেন!!?
আরহাম আর একমুহূর্ত দেরি না করে এক ছুটে ওয়াশরুমে ঢুকল। রিয়া জোরে জোরে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে!
.
.
.
.
.
(চলবে)
বিঃদ্রঃ আজকে পর্বটা মেবি একটু ছোট হয়ে গেছে। আমি গতকাল দুপুরে ফুপ্পি হয়ে গেছি😇, সো সেই খুশিতে লেখার টাইম পাইনি। হসপিটাল আর বাসা করতে করতেই টাইম শেষ হয়ে যায়🥴
সো, নেক্সট কয়েকদিন হয়তো পর্ব গুলো এরকমই হবে। তবে চেষ্টা করবো বড় করে লেখার।
এবং সবাই দোয়া করবেন আমার ভাইপোর জন্য🥰
#happyreading 🤍