#আয়নামতী
#পর্ব_২৯
#পুষ্পিতা_প্রিমা
নর্তকীদের পায়ের নূপুরের আওয়াজ আর বাদ্যযন্ত্রের শব্দে রঙ্গমহল মুখোরিত। ওই দূরে মঞ্চে নাক অব্দি ঘোমটা টানা নর্তকী নাচছে।
তার চারপাশে তাকে অনুসরণ করে নাচ করছে আরও অনেক মেয়ে। সারি সারি গোল গোল টেবিলগুলোর চারপাশে বসা মদের বোতল হাতে কয়েকজন। বেশিরভাগই দূর দূরান্ত থেকে আসা এবং বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। দেশ মানুষের কাছে বিশিষ্ট আসনে থাকা বিশিষ্ট মানুষজন। কেউ গ্রাম্য থানার প্রধান পুলিশ অফিসার, মিডিয়ার থেকে আগত কয়েকজন কিংবা বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। বাইরে তাদের নীতিবান হিসেবেই মানুষ চেনে।
ঝুমঝুম নূপুর আর বাদ্যযন্ত্রের সাথে অদ্ভুত গানটা ও থেমে গেল। সাথে সাথে মদের বোতল থেকে মুখ সরিয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে হুংকার ছাড়লো খালেক নামের লোকটি। ছুটে আসলো অনেকেই।
‘ কেন শব্দ বন্ধ হলো?
‘ তারা ক্লান্ত।
‘ টাকা বাড়িয়ে দেব। শুরু করতে বল তাড়াতাড়ি।
হ্যাংলা পাতলা ছেলেটি পা বাড়ানোর আগেই আবার মুখোরিত হয়ে উঠলো পরিবেশ। এবার আগের মেয়েটির বদলে অন্য একটি মেয়ে। তার সারা অঙ্গ নড়ানোচড়ানোর ভঙ্গিতে এবার বেশ মত্ত নারীসঙ্গ পাগল পুরুষদল। ঠোঁটের কোণায় চড়ে বসলো তৃপ্তির হাসি। শেষ হতে লাগলো মদের বোতল পরপর। খালেকুজ্জামান বেশ আয়েশ করে গা এলিয়ে বসলো। নৃত্যরত মেয়েটির দিকে আঙুল বাড়িয়ে বলল
‘ এইটা কে? আগে তো দেখিনি মনে হচ্ছে। কে এই রমণী?
মাতাল গলার আওয়াজে তার কথা শুনে কেউ একজন কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল
‘ নতুন। খয়রাত সাহেব এনেছেন। বেশ কাজে লাগবে।
উৎসুক চোখে সামনের দিকে তাকালো খালেকুজ্জামান। বলল
‘ আমার বেশ কাজে লাগবে বলে মনে হচ্ছে। সবার প্রস্তুতি নেওয়া শেষ হলো?
‘ না স্যার। সবাইতো মনে হচ্ছে কথা বলার অবস্থায় নেই। ঢলে পড়ছে।
‘ ঢলে পড়লেই কুপিয়ে গুম কর শালাদের। ঢলার জন্য ডাকিনি এখানে।
শব্দ আবার থেমে গেল। খালেকুজ্জামান সামনে তাকালো বিরক্তি চোখে। ঝাপসা ঝাপসা চোখে তাকালো তার দিকেই এগিয়ে আসছে একটি নর্তকী। মদের বোতলে আরেক চুমু বসালো সে। বলল
‘ স্বাগতম। কি নাম?
বেশ রসালো কন্ঠে ভেসে আসলো।
‘ সরকার। কুহেলী সরকার।
চোখ বন্ধ করে নিল খালেকুজ্জামান। চারপাশে কেন এত মিষ্টি ঘ্রাণ?
‘ আমাকে কেন ডেকে আনা হয়েছে। লাখ চাই আমার। নাহলে,,,,,,
‘ লাশ হয়ে যাবে নয়তো, লাখপতি হয়ে ।
গাল এলিয়ে হাসলো কুহেলী । হাতে হাত রেখে দু পা হেঁটে বলল
‘ কুহেলী সরকার এত কাঁচা কাজ করেনা এমপি সাহেব। আমার নিজের ঘরেই চিঠি লিখে এসেছি আমি এমপি সাহেবের গোপন আস্তানার যাচ্ছি। আমার কিছু হলে আপনি বাঁচতে পারবেন তো?
বেশ চালাক এই মেয়ে বুঝে ফেলেছে খালেকুজ্জামান। এই মেয়েই তাহলে চৌধুরীর প্রাক্তন স্ত্রী? শত্রু? কাজে লাগাতে হবে। ব্যবহার শেষ হলেই ভোগ, তারপরই লাশ। মনে মনে ভীষণরকম ভাবে আনন্দিত হলো খালেকুজ্জামান। পরপর তিনজন মেয়ে গুপ্তচরের এই হালই হয়েছে। বেচারিরা কত রূপবতীই না ছিল? গড়গড়িয়ে বমি করলো খালেকুজ্জামান। টক পানি দেওয়া হলো তাকে। কয়েক ঘন্টা চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিল। তারপর যখন মজলিসে চলে এল দেখলো সবাই তার অপেক্ষায় ছিল। আশেপাশে চোখ বুলালো খালেক। ভুড়িওয়ালা একজনকে ডেকে বলল
‘ কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কিছুর হদিস পেয়েছিস?
‘ ওই চৌধুরী শালা বোকা স্যার। সে মানবসেবা করতে জানে শুধু, অতটা চালাক নয় যে গুপ্তচর রাখবে। এখানে সবাই আমাদের নিজের লোক। আপনি চিন্তামুক্ত থাকুন।
খালেকুজ্জামান সামনেই তাকালেন ধারালো দৃষ্টিতে। শুরুতেই ডাকলেন কানুয়া গ্রামের পুলিশ অফিসারকে। কালো একটি ব্যাগ দেখিয়ে বললেন
‘ এটাতে অর্ধেক। যদি শুনেছি ঠিকঠাক কাজ করতে পারছিস না তাহলে তোকে সাইজ করতে দুবার ভাববো না।
পুলিশ অফিসার বলল
‘ না না কোনো সমস্যা হবে না। আমার সব মনে থাকবে।
‘ ঠিক আছে। এই ডিরেক্টর?
আজমল খয়রাত উঠে এল।
‘ ওই মেয়েটা কোথায়?
‘ ও বিশ্রাম নিচ্ছে। ওর কাজ আমাকে বুঝিয়ে দিতে বলেছে৷
‘ বেশ দাম দেখাচ্ছে ওই মেয়ে। বের করে দেব দাম। ওই বোকাগাঁদার বউ ছিল আগে, এবার বুঝতে পারছি কেন ঠেকেনি। সে যাইহোক আসল কাজটা ওই মেয়েকেই করতে হবে।
‘ আপনি যেভাবে বলেন। তবে ও মনে হয় না গ্রামে আর যাবে। একবার অপমানিত হয়ে এসেছে।
‘ দেখাই যাক৷
_____________
ভারী আয়রনটা রাখা টেবিলের উপর। আয়না বারবার হাত দিচ্ছে সরিয়ে নিচ্ছে। আয়রনটা কি গরম হলো?
অনুরাগ ঘরে ঢুকতেই দেখলো আয়না ইস্ত্রি নিয়ে টানাটানি করছে। দুহাত দিয়ে তুললো আয়রনটা। অনুরাগের হাসি পেল খুব। বলল
‘ মুরগির মতো খাও, গরুম মতো হাল চাষ করতে নামো কেন?
আয়না চট করে ফিরলো। হাত শাড়িতে মুছে চলে গেল বেডের কাছে। বালিশগুলো ঠিকঠাক বসাতে বসাতে বলল
‘ এমনি দেখছিলাম। কে আপনার পাঞ্জাবি ইস্ত্রি করাতে যাচ্ছে? আপনার কাজ আমি কেন করব?
‘ করতেই বা কে বলেছে? তুমি আমার কোন কাজটা করে দিয়ে উদ্ধার করে দাও জানি আমি।
আয়না গরম চোখে তাকালো। বলল
‘ এখন ঝগড়া কে করছে? আপনি না আমি? দোষ তো সবসময় আমারই হয়। আর আপনার কাজ আমি করিনি? এই যে খান, বেশিরভাগ সময় তো আমিই রান্না করি।
‘ ওগুলো শখের বশে করো। আমি বলিনি কাজ করতে। আমার বাড়ির মানুষের সাথে ভালো করে কথাই বলো না, রান্না করে খাইয়ে কি হবে? তাদের আপন ভাবো আগে, অতটা ও খারাপ না তারা , আর রান্না না করলে ও চলবে।
আয়না কথা বললো না।
‘ এখন চুপ কেন? মেনে নিচ্ছ আমার কথা?
‘ বলব না। আপন ভাববো না। পর কখনো আপন হয় না। আপনি যেমন কখনো আমার আপন হবেন না তেমনি তারাও। আপন ভাবতে পারব না আমি।
অনুরাগ পাঞ্জাবিটা রেখে দিল। বলল
‘ পর আপন হয় না? আমি কিভাবে আপন করে নিলাম তাহলে?
আয়না পরাজিত দৃষ্টিতে তাকালো অনুরাগের দিকে। বালিশটা ধপ করে রেখে দিয়ে বের হয়ে গেল রুম থেকে।
অনুরাগ বিড়বিড় করলো
‘ সঠিক কথা বললেই রাগ। ওরেহ আমার রাগিনী!
______________
নিস্তব্ধ, নির্জন চারপাশে । মধ্যরাত। অনুরাগ বাড়ি ফেরেনি এখন। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির মাত্রা তেমন ভারী নয়। গুঁড়িগুঁড়ি। তারপর ও চিন্তা হচ্ছে আনহিতার। ফোন ও তুলছেনা ছেলেটা। অনিমা ও ঘুমোয়নি। অনুরাগ এত রাত করে বাড়ি ফেরেনা কখনো। বারান্দায় পায়চারি করতে করতে মাকে বলল
‘ ওই মেয়ে দেখেছ মা ? নিজের স্বামী এখনো বাড়ি ফেরেনি অথচ সে দিব্যি ঘুমোচ্ছে। বাহ। আর এই মেয়ের জন্যই আমার ভাই এত দিওয়ানা।
আনহিতা কিছু বলল না। তার ভীষণ চিন্তা। ছাতা হাতে শায়খ চৌধুরী বাড়িতে ঢুকে পড়লেন। আনহিতা বলল
‘ খোঁজ পেয়েছেন?
‘ হ্যা। ওই মতিউর রহমানের বাড়িতে গিয়েছে। করিম দোকানদারের ছেলে ও নাকি তার সাথে গিয়েছে। ফিরবে চিন্তা করোনা।
আনহিতা বলল
‘ আমার চিন্তা হয় সেটা একবার ভাববে না? আশ্চর্য ছেলে আমার। সন্তানের বাবা হোক তারপর বুঝবে।
আয়না ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে নিচে নেমে এল। অনুরাগ এখনো ফেরেনি বুঝতে পেরেছে। এত সাজগোছ করে কোথায় গেল কে জানে? একটু শান্তিতে ঘুমাতেও দেয় না। আনহিতা এসে বলল
‘ বৌমা সোহাগ ফিরবে। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। আমরা আছি।
আয়না গেল না। দাঁড়িয়েই রইলো।
আনহিতা বলল,
‘ ঠিক আছে। যেওনা। তোমার চোখে তো ঘুম। দাঁড়িয়ে না থেকে সোফায় বসো।
আয়না চুপচাপ গিয়ে বসলো। বসতে বসতে ঝিমুনি এল আবার। ধীরে ধীরে কুশনে মাথা রাখলো। অনিমা বলল
‘ মনে হচ্ছে কয়েকবছর ঘুমায়নি। যত্তসব।
প্রায় অনেক্ক্ষণ পর কাঙ্ক্ষিত মুখটা দেখে আনহিতার প্রাণ ফিরে এল যেন। ছেলের মুখে ঘনঘন হাত বুলাতে বুলাতে কপালে আদর দিল। বলল
‘ চিন্তা হয় আব্বা। মাকে বলে যাবে না কোথায় যাচ্ছ?
‘ আমি কি ছোট আছি মা? তোমরা ও পারো। এত রাত জেগে আছ কেন? অসুস্থ হলে সে আমারই কষ্ট হবে।
আনহিতা বলল
‘ আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি। খেয়ে এসেছ তো?
‘ হ্যা হ্যা।
অনিমা বলল
‘ এক ভাই আছে আমার। আর কার কার এমন ভাই আছে আল্লায় জানে।
অনুরাগ হেসে ফেলল। বলল
‘ তোরই একটা।
মুখ মোচড়ে চলে গেল অনিমা। বলে গেল
‘ সোফায় দেখ। হুহহ।
অনুরাগ তার কথামতো সোফায় তাকালো। দেখলো গুটিসুটি করে ঘুমে ঢলে পড়া একটি মেয়ে। এই মেয়ে এত ঘুম কাতুরে কেন? আশ্চর্য তো?
আনহিতা আর শায়খ চৌধুরী চলে গেল। অনুরাগ পেছনে দুহাত রেখে বেশ আয়েশ করে বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো। দেখলো আয়নার ঘুম ছুটার নয়। আবার ছুঁলেই চিল্লিয়ে উঠতে পারে৷ অনুরাগ একটু এগিয়ে গেল। বসলো আয়নার মুখোমুখি। ফিসফিসিয়ে ডাকল,
‘ নাগিনী, রাগিনী, মনোহারিণী।
আয়নার চোখ খুলার জন্য সম্ভাবণা নেই। অনুরাগ বলল
‘ বউ হওয়ায় এদের এক সুবিধা। এরা এত বড় হয়েও কোলে চড়তে পারে। শালার সুবিধা শুধু আমাদের পুরুষসমাজের জন্য নাই। কপাল কপাল। সবই কপাল।
অতঃপর বউকে কোলেই চড়াতে হলো অনুরাগকে৷ কোলে তুলতে তুলতে বলল
‘ আল্লাহুআকবর। মেয়ে তো ছোট, ভার তো কম না। বাপরে বাপ।
ঘরে আসতেই আয়নার নড়াচড়া অনুভব হলো। অনুরাগ তাড়াতাড়ি তাকে রেখে দিল। বেশ দূরে সরে পড়ে নিজে নিজেই বলল
‘ তো আমি কি আমার বউকে ওই নিচে রেখে এসে এখানে ঘুমাবো? কোলে এজন্যই নিলাম। এখন রাগলে আমার কি করার? যখন তখন রাগ দেখানো মানায় না।
আয়না নড়েচড়ে উঠে আবার ঘুমের দেশে তলিয়ে গেল। অনুরাগ হাঁফ ছাড়লো। পাঞ্জাবি পাল্টে নিয়ে মুখ হাত ধুঁয়ে নিল। তারপর মশারি টাঙিয়ে দিয়ে ডিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো।
আয়নার মুখখানা দেখে মনে হলো এই মেয়ের আসল রূপ এটাই। আর যেটা মেয়েটা দেখানোর চেষ্টা করে সেটা সাজানো। এটুকুনি একটা মেয়ে এত সুন্দর করে কিভাবে এতটা পাথর সেজে থাকতে পারে। তার সামনে আসল চেহারাটা উন্মুক্ত হবে কবে? কবে এই মেয়ে তার কাছে এসে ধরা দেবে? কবে হাতে হাত রেখে ভরসা দেবে? চোখে চোখ রেখে আশ্বাস দেবে? কবে ঠোঁটের কোণায় এক চিলতে তৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে বলবে
‘ আমার প্রাণপুরুষ, প্রাণসখা, প্রিয় স্বামীটা, শুনুন আমি আপনার প্রাণবন্তা।
দীর্ঘশ্বাস মাখামাখি অনুরাগের চোখে ঘুম নামতে শুরু করলো। আয়নাকে পিঠ করে শুয়ে পড়লো সে। ঘুমের দেশে হারিয়ে যাওয়ার শুক্ষণে যেন মনে হলো পিঠের কাছে উষ্ণ কিছু একটা গিয়ে ঠেকে গেল। পিছু ফিরতে গিয়ে আটকে গেল অনুরাগ। একটা হাত এসে ঠেকল তার বুকের কাছে। ঘুমঘুম মস্তিষ্ক জানান দিল তাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে একটি হাত। যদিও বাঁধনটা খুব হালকা তারপরও অনুরাগের ভীষণ ভালো লাগলো। হাতটা এভাবে থেকে যাক না। ইচ্ছে করে একবার ধরুক না।
অনুরাগ ধীরেধীরে ফিরলো আয়নার দিকে। ঘুমন্ত মুখটাতে যেন বিরক্তি ফুটে উঠলো কেন এত নড়াচড়া হচ্ছে দেখে। ভালো লাগার সাথে সাথে ভয় কাজ করলো অনুরাগের। যদি চোখ মেলে এই মেয়ে তাকে দেখে? এতটা দূরত্ব কমানো মধ্যিখানে তা যদি দেখে? চরিত্রহীন উপাধি দেবে না তো? ছুটে যেতে চাইলো অনুরাগ। হাতটা যেতে দিল না। বরঞ্চ আদুরে বিড়ালের মতো ঠান্ডা থেকে বাঁচতে উষ্ণতা খুঁজতে খুঁজতে মুখটা এসে হাজির হলো একেবারে বুকের কাছটাই। যেখানে সে সজ্ঞানে মাথা রাখলে নিজেকে শুনতে পাবে। নিজেকে অনুভব করতে পারবে। অনুরাগ ফাঁকা ঢোক গিললো। আয়নার মাথার পেছনে হাত দিয়ে আরও ভালোভাবে দূরত্ব কমিয়ে এনে কপালে আদুরে প্রলেপ দিল বেশ ঘন করে। অনুরাগের চোখে আর ঘুম নামলো না। টান,মায়া, ভালোবাসাগুলো এমন কেন? ভাবতে আর অনুভব করতেই যেন হাজার বছর চলে যায় । তাহলে ভালোবাসাবাসি হয় কখন? আর ভালোবাসা ফুরোয় কখন? যারা বলে ভালোবাসা ফুরোয় তারা আসলে ভালোবাসা কাহাকে কয় সেটাই জানেনা। অনুরাগের বড্ড গর্ব হয় সে একজন বেকুব পুরুষ মানুষ হয়েও ভালোবাসা বুঝে, অনুভব করে, আর একজন লৌহমানবীকে ভালোও বাসে।
আয়নার ঘুমের ঘোর ছুটলো তখন মাত্রই অনুরাগের চোখে ঘুম নেমেছে। বাহুডোরে নিজেকে বন্দী পেয়ে দমবন্ধ হয়ে এল আয়নার। মুখতুলে ঘুমন্ত মুখটার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকালো৷ কি অপবাদ দেবে সে এখন? বিয়ে করা বউ বক্ষবন্ধনী হয়ে থাকতেই পারে, তাকে চরিত্রহীন উপাধি দেওয়া যায় না৷ অসভ্য, অভদ্র ও বলা যায় না। তাহলে কি বলবে এখন আয়না। নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা ছাড়া মুখ দিয়ে কিছু বের হলো না তার।
ধস্তাধস্তি করায় অনুরাগ চোখ খুলে ফেলল৷ চারটা চোখ একত্রিত হয়েও ভাষা নেই যেন। বুঝার চেষ্টা না করলে কি করার থাকে?
‘ মেরে ফেলব আপনাকে। অনেক অনেক বড় শাস্তি দেব৷ ছাড়ুন।
কথাটা শুনে ভীষণ হাসি পেল অনুরাগের। এই যে এত শক্ত শক্ত কথা বলে সেসব কি শাস্তি নয়? এত কাছে থেকে যে এতটা দূরে সরে থাকে সেসব শাস্তি নয়? চোখে চোখে দুটো কথা না বলে, চোখ সরিয়ে নেওয়াটাই কি শাস্তি নয়? ভালোবাসা তো দূর, ভালোবাসতে না দেওয়াটাই তো অনেক বড় শাস্তি। আর ও বড় ধরনের শাস্তি আছে নাকি?
অনুরাগের বলতে ইচ্ছে হলো এর চাইতে বড় শাস্তিটা আমি মাথা পেতে নেব, কিন্তু এসব নয়। আমাকে আর শাস্তি দিও না।
কিন্তু এই মেয়ে তো সেসব শুনে বলবে,
শাস্তি এখনও দিলাম কই?
নিজের উপর রাগে ফোঁসফোঁস করলো আয়না। সে কেন এই লোকটার পাশে এলোমেলো ঘুমোতে যায়?
‘ আপনি কেন আমায় ছাড়ছেন না?
‘ তুমি নিজেই এসেছ। আর আমি শুধু ধরে রেখেছি।
‘ ছেড়ে দিন।
‘ নাহ।
‘ কেন? আপনি তো,,
তাকে বলতে দিল না অনুরাগ। নাকের ডগায় আলতো করে চুমু বসিয়ে বলল
‘ ” মেরে ফেলব ” বলতে বলতে তুমি যেদিন ক্লান্ত হয়ে ” মেরে ফেলব ” বলা ছেড়ে দেবে দেখবে সেদিনই আমি মরে যাব।
আয়না ধস্তাধস্তি করা ছেড়ে দিল। অবাকচোখে তাকিয়ে বলল,
‘ আমি তো ওইকথা এমনিই বলি।
‘ এমনি এমনি, মিছিমিছি ভালো ও তো বাসতে পারো। সত্যি তো বাসবে না।
চলবে,,,,,