ভুলের মাশুল পর্ব: ১৪

0
1319

গল্প: ভুলের মাশুল
পর্ব: ১৪
লেখক: হানিফ আহমেদ

মাটিতে তিনটা কংকাল পরে আছে।
হানিফ আস্তে আস্তে কংকাল গুলোর কাছে গিয়ে, একটা কংকালে হাত লাগাতে যাবে, তখনি অর্ণব বলে উঠলো

অর্ণব: এখানে থাকা কোনো জিনিশেই হাত দিবি না।
আমি CID টিমকে আসতে বলেছি।
তোরা এখানেই থাক।
হানিফ: আরো একটা কোথায়, এখানে তো তিনটা কংকাল, আমার ইশু পাখি চারজনের সুখী ফ্যামিলি ছিলো।
কোথায় আরেকটা।
(হানিফ চিৎকার করে কাঁদছে ,
বেষ্ট-ফ্রেন্ড হারানোর ব্যথা এতোদিন লুকিয়ে রাখলেও আজ সে চিৎকার করে কাঁদছে।)
মৌ: শান্ত থাক একটু,
অর্ণব কি থেকে কি হয়ে গেলো?
অর্ণব: জানি না আমি কিছুই জানি না, আমার মন বলছিলো কোনো প্রমাণ পাবো, কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ আমি আশা করিনি, সত্যিই আশা করিনি।

রেজা আর হানিফের দুলাভাই সহ আরো পাঁচ জন CID অফিসার আসছেন।

রেজা: অর্ণব তোমার এ অবস্থা নিয়ে বাসা থেকে বের হলে কেন?
অর্ণব: স্যার আমাদের ফ্রেন্ডকে আজ ১ বছর ধরে খুঁজে পাচ্ছিলাম না! তাই আজ ছুটি পেয়ে ওর বাসায় ছোটে এসেছিলাম। কিন্তু এমন কিছু দেখবো কখনো আশা করিনি। (কাঁদছে অর্ণব)
রেজা: CID দের কাঁদতে নেই। পাথরের মতো শক্ত হতে হয়,
রাজিব সব কংকাল গুলো পরীক্ষা করতে লেভে পাঠাও। (তাদের মধ্যে একজনকে বললো)

সারা বাসা তল্লাশি করে আর একটাও কংকাল পাওয়া যায় নি।
CID টিম হতাশ হলো,
কেউ জানে না এই ৩ টে কংকাল কার কার।

অর্ণব জাবিনকে ফোন দেয়।
অর্ণব: জাবিন,
জাবিন: কে আপনি?
অর্ণব: আমি অর্ণব বলছি। তুমি তোমার আব্বুকে সাথে করে নিয়ে CID অফিসে যাও।
জাবিন: কেন?
কি হয়েছে?
অর্ণব: গেলেই বুঝবা।

অর্ণব আর হানিফকে ওর বাকি ফ্রেন্ডস গুলো বুঝাচ্ছে।
কিন্তু ওদের কান্না থামছেই না।
হানিফ: আমাদের সাথেই কেন এমন হয়? কি করেছিলো ইশু আর কি অপরাধ করেছিলো ওর ফ্যামিলি, যার শাস্তি এতো ভয়াবহ?
সজিব: হয়তো আমাদের অজানা, যা ইশিতা আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিলো।
অর্ণব: সজিব আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখলেও হানিফ থেকে কিছু লুকাতে পারতো না ও, সব বলতো হানিফকে।
হানিফ: এমন কোনো ঘটনাই আমার মনে হচ্ছেনা। কি হয়েছে আমার ইশুর? কে করেছে এসব? এভাবে নির্মম ভাবে মেরেছে?
অর্ণব: সব প্রমাণ পেয়ে যাবি। শুধু অপেক্ষা কর হানিফ অপেক্ষা কর।

অর্ণব ক্লান্তো শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।
অর্ণির সাহস হচ্ছেনা অর্ণবের পাশে গিয়ে বসতে।
বাসায় এসে ওর মা বাবা কে সব বলেছে ইশিতার কথা।
ওর মাবারা একটাই কথা এমন ভালো ফ্যামিলির কোনো শত্রু থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছে না?

রাত গভীর হয়েছে।
আকাশে তারার মেলা। চাঁদটা মনে হচ্ছে আজ পূর্ণতা পেয়েছে।
একরাশ কষ্ট নিয়ে অর্ণব দাঁড়িয়ে আছে ছাদের রেলিং ধরে।
হাজারো প্রশ্ন মনে আসছে। কিন্তু খুঁজবে কোথায় প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর।
~স্বপ্ন ছিলো পাথর ভাঙবে।
গড়বে সেখানে একটা ছোট্ট ঘর।~
আজ খুব মনে পরছে ইশিতার কথা।
অর্ণব সবসময় ইশ ইশ ইশি ইশি এসব বলেই চেতাতো ইশিতাকে।
অনেক ভাবে বুঝিয়েছিলো সে ইশিতাকে ভালোবাসে, কিন্তু ইশিতা বুঝতো না। নাকি বুঝেও না বুঝার অভিনয় করতো?
অর্ণবের সব ফ্রেন্ড বলেছে, অর্ণব প্রপোজ করে ফেল। কিন্তু ওর একটা কথাই ছিলো।

~ষাঁড় কে তুমি লাল কাপড় দেখিয়ে খেপাতে পারো।
কিন্তু কয়টা ষাঁড় আছে লাল কাপড় ছাড়া খেপে?
আমি ইশিতাকে প্রপোজ না বরাবর বিয়ে করবো। চাইনা লাল কাপড়, আমি কোনো কিছুতে ওরে খেপাবো না। ~
কিন্তু কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো।

সময় টা ছিলো ২০১৯এর এপ্রিল মাস,
মৌ বলেছিলো
অর্ণব আমার মনে হয় ইশিতা তোরে ভালোবাসে।
তুই মাঝেমধ্যে উধাও হলে। ইশিতাও নীরব হয়ে যায়, হানিফ হাজারো চেষ্টা করেও হাসাতে পারে না।
অর্ণব বলেছিলো,,
তাহলে আব্বুকে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দেই?
মৌর কথা ছিলো।
একা কথা বল ইশিতার সাথে।
বুঝ ওকে, ওরেও বুঝতে দে তোকে।

সেদিন রাতেই অর্ণব গিয়েছিলো, ইশিতার বাসায়।
দেখেছিলো বাসার দরজায় তালা ঝুলছে।
ভেবেছিলো চাচা বা খালার বাসায় গেছে।

সেই দিন থেকে আজো অপেক্ষায় আছে অর্ণব।

ফজর এর আজান দেয়।
অর্ণব এর ঘুম ভাঙে।
ছাদেই একপাশে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ঘুমিয়েছিলো।
অর্ণি আমায় ডাকতে আসলো না?
আসবেইবা কি করে ওরে তো ঘুমেই রেখে এসেছি।

সকালটা খুব সুন্দর।
আকাশটাও আজ পরিষ্কার।
কিন্তু আমার মনটা যে আজ অপরিষ্কার,
অর্ণব হাসছে আর ভাবছে।
~কিছু চাওয়া অপূর্ণ থাকে,
আবার কিছু অপূর্ণ চাওয়া থাকে।~
খুব সুন্দর নিয়ম দুনিয়ার।
যে যা চায় তা কখনো পায় না। আবার যা চায় না তাই পায়।

আকাশে সূর্যটাও উঁকি দিলো,
এখনো অর্ণব ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।

অর্ণির ঘুম ভাঙলো, পাশে অর্ণব নাই, ওয়াশরুম খুঁজলো, সেখানেও নাই।
নিচেও গেলো সেখানেও নাই।
এখন শুধু ছাদটাই রইলো বাকি।

অর্ণি ছাদে উঠছে আর ভাবছে।
সময়টা কতোই না স্বার্থপর।
কালকেই ভালো ছিলো। আর আজকেই কিনা সব হারিয়ে গেলো।
কেন কালকেই যদি সময়টা থমকে যেতো। রাতটা যদি আরো গভীর হতো। তাহলে হয়তো অর্ণবের বুকেই থাকতাম।
অর্ণির ডাইরি পড়া শেষ। ডাইরি পড়ে তারো ইচ্ছা করছে ইশিতাকে দেখতে, কেমন জানি মায়া আর হিংসে দুটুই কাজ করছে অর্ণির মনে, এতোটা সুন্দর কি? যতোটা ডাইরিতে লিখা আছে ইশিয়াত রুপের বর্ণনা।

অর্ণি ছাদে গিয়ে দেখলো এক পাশে অর্ণব দাঁড়িয়ে আছে।
অর্ণি ভয়কে তোয়াক্কা করেও অর্ণবের পাশে গেলো।

অর্ণি: অর্ণব?
,,,,,
আবার,
অর্ণি: অর্ণব কথা বলছো না যে?
এতো ভাবনায় ছিলো যে তার কানে অর্ণির কণ্ঠস্বর যাচ্ছিলো না।
তাই বাধ্য হয়ে অর্ণি অর্ণবের শরীরে ঝাঁকানি দিলো।
অর্ণব তার নিজের মধ্যে ফিরে আসলো।

অর্ণব: কি? কিছু বলবে?
অর্ণি স্বাভাবিক দেখে কিছুটা সাহস পায়।
অর্ণি: ঘুম থেকে উঠেই যে চলে আসলে? আমায় ডাকলেও না?
অর্ণব মনে মনে হেসে,
অর্ণব: সকালটা একা উপভোগ করতে চেয়েছিলাম। ( মিথে বললো)
অর্ণি: ভালোই, নিচে আসো?

অর্ণব রুমে বসে আছে,
অর্ণি হয়তো নাশতা বানাচ্ছে।
হঠাৎ অর্ণির ফোন বেজে উঠলো।
অর্ণব ফোন হাতে নিয়ে দেখলো রেজার ফোন।
অর্ণব: আসসালামু আলাইকুম স্যার। ( রেজার বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই, ফ্যামিলি নিয়ে সুখী থাকলেও আজ এক বছর ধরে ফ্যামিলিকে লুকিয়ে রেখেছেন।
)
রেজা: ওয়ালাকুম আসসালাম।
অর্ণব রিপোর্ট চলে আসছে ওই তিনটা কংকালের।
অর্ণব: স্যার স্যার কার কার কংকাল ওই গুলো?
রেজা: অর্ণব তিনটা কংকালের মধ্যে একটা মহিলার আর দুইটা পুরুষের।
অর্ণব: আর কিছু জানতে পেরেছেন স্যার?
রেজা: মহিলাটা হলো তোমার ফ্রেন্ড এর মা, যাকে শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে, আর আরেকটা হলো ওর বাবার যাকে কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারা হয়েছে,
আর অন্যটা হলো ১৪&১৫ বছরের কোনো ছেলের কংকাল যাকে শ্বাসরোধ করে মেরেছে।
অর্ণব: এমন নির্মম ভাবে কে করলো এই কাজ? আর কাদের আজ এটা?
রেজা: তাড়াতাড়ি জানতে পারবো আমরা।
আমার মনে হয় তোমার ফ্রেন্ডকে ওরা কিডন্যাপ করেছে।
আর ওদের কাছেই আছে।
অর্ণব: স্যার আপনার পারমিশন পেলে আমি নিজে ইশিতার বাসাটা ভালোভাবে দেখবো। যদি কোনো প্রোভ পাই।
রেজা: হু, দেখতে পারো, তোমায় আর কোনো কেইচ নিয়ে দেখতে হবে না, তুমি এটাই দেখো।
অর্ণব: ধন্যবাদ স্যার।

অর্ণি: নাশতা করবে আসো?
অর্ণব: ভালো লাগছে না আমার।
অর্ণি: আমি জানি কারো প্রিয়জন হারালে অনেক কষ্ট হয়, তারপরেও বলি, এভাবে নীরব হলে চলবে না।
অর্ণব: আমি নীরব না, তবে খাবার ভিতরে যাবে না।
অর্ণি: রাত থেকে খাও নি কিছু, এখন না হয় হালকা কিছু খেয়ে নাও।
অর্ণব: যাও আমি তৈরি হয়ে আসছি।
অর্ণি: কোথাও যাবে নাকি?
অর্ণব: ফোন কিনতে যাবো।

অর্ণব নাশতা করলো, ওর বাবা রফিকুল ইসলাম বললেন,
রফিকুল: বাবা তোর চাচ্চু ফোন দিয়েছিল,
অর্ণব: কেন আব্বু?
রফিকুল: আম কাঁঠাল পেকেছে। তাই যাইতে বলছে আমাদের।
অর্ণব: আব্বু চাচ্চুকে বলে দিও আমরা সবাই যাবো এবার, আর ওরা অর্ণির কথা কি জানে?
রফিকুল: হুম আমি অর্ণিকে ভিডিও কলে ওদের সাথে কথা বলিয়েছি।
অর্ণব; ওও
রফিকুল: এই অবস্থার মধ্যে যাবি কিভাবে?
অর্ণব: আব্বু চিন্তা করবে না, তাড়াতাড়ি সব শেষ হবে, ওদের খুব তাড়াতাড়িই ধরবো আমরা।
রফিকুল: তাই হবে।
রফিকুল অফিসে যাবেন তাই চলে যান।

অর্ণব গাড়ির চাবি আনতে ভুলে যায়।
অর্ণব: নিধী বুড়ি,
নিধী আম খাচ্ছিলো
নিধী: বলো পিচ্ছি ভাইয়া।
অর্ণব অবাক হয়ে,
অর্ণব: আপনি আমার গাড়ির চাবিটা এনে দেন তো কষ্ট করে,
নিধী: আচ্ছা আচ্ছা, যাচ্ছি যাচ্ছি।

অর্ণি: এই অবস্থা নিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করবে?
অর্ণব: হুম।
অর্ণি: গাড়ি ছাড়া যাবা তুমি।
অর্ণব: আমি পারবো,
অর্ণি: আম্মুকে ডাক দিচ্ছি আমি।
অর্ণব আর কথা না বাড়িয়ে বেড়িয়ে যায় বাসা থেকে।
জানে আম্মুকে ডাক দিলে সে আর বের হতে পারবে না।

অর্ণি আজো ভাবছিলো
কপালে ভালোবাসার পরশ পাবে।
কিন্তু তার সেটা অজানা।
~ময়না মন মরা থাকলে গান গায় না।~
~ মাছ বৃষ্টি ছাড়া পাড়ে উঠে না।~
~আকাশ মেঘ ছাড়া কান্না করে না।~
অর্ণবের মনটাও আজ মেঘলা, নেই গান গাওয়ার সুখ।
তাহলে কিভাবে অর্ণি পাবে অর্ণবের ঠোঁটের ছোঁয়া।

অর্ণব একটা ভালো ফোন কিনলো, নিউ সিম কিনলো।
অর্ণবের মনে হচ্ছে কেউ থাকে ফলো করছে। সামনে হাত দিলো দেখলো বন্ধুক সাথেই আছে।
অর্ণব কখনো ভয় পায় না।
তারপরেও তার মনে হচ্ছে তার আড়াকে কেউ থাকে দেখছে।
একটু পিছনে গিয়ে দেখলো রাহুল(রিয়াদ) আর অনু (অদ্বিতীয়া)
অর্ণব: কিরে তোমরা আমায় লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছো কেন?
রিয়াদ: কি বলিস, আমরা এই মাত্র আসলাম।
অর্ণব: ও, কেন এসেছিস।
রিয়াদ: অনুর জন্য ফোন কিনবো। শুনলাম তুই এক্সিডেন্ট করেছিস, তা এই শরীর নিয়ে বের হয়েছিস কেন?
অর্ণব: কবে শুনেছিস?
রিয়াদ: কয়েকদিন আগে হানিফ বলেছে।
অর্ণব: ও, জানিস তুই ইশিতার মাবাবা আর ভাইদের কেও খুন করেছে?
অদ্বিতীয়া: মানে? কখন,?
অর্ণব: সম্ভবত এক বছর আগে, কাল ওদের কংকাল পেয়েছি ওদের বাসায়।
রিয়াদ: মানে কি? আর ইশিতা কোথায়?
অর্ণব: এক বছর ধরে নিখুজ। পাগলের মতো খুঁজছি ওরে।
অদ্বিতীয়া: আল্লাহ জানেন কে করছে এসব।
অর্ণব: হুম, অন্যদিন বের হলে বোরখা পরে বের হবা, পর্দা করবা।
অনু কথাটা শুনে লজ্জা পেলো।
রিয়াদ: আমায় কেমন লাগছে বললি না যে?
অর্ণব: মাশা’আল্লাহ, দোয়া করি দাড়ি রাখার পাশাপাশি নেক আমল কর।

অর্ণব চলে আসে, ফোনটা অন করে,
ওরা যদি আমায় ফলো না করে তাহলে কে ছিলো?
ফোন অন করার সাথে সাথেই একটা কল আসলো।
অর্ণব: হ্যালো!
ওপাশে: বোকা তুই, আমায় খুঁজলেও পাবি না।
আর হ্যাঁ তোকে আমি দেখে নিবো।
অর্ণব: কে তুই আর কিসের কথা বলছিস?
ওপাশে: খুব তাড়াতাড়িই তোকে উপরে পাঠাবো, তার আগ পর্যন্ত আমায় খুঁজতে থাক, শালা গাড়ি দিয়ে শুধু সামান্য সতর্ক করেছি।
অর্ণব ফোন কেয়ে দেয়
কণ্ঠটা হালকা চেনা চেনা লাগছে।

অর্ণব দাঁড়িয়ে আছে ইশিতার রুমে।
রুমটা এখনো গুছালো আছে।
অর্ণব গ্লাপ্স পরে, প্রতিটা জিনিশ খুব নিখুঁত ভাবে দেখছে।
অর্ণব প্রতিটা রুম দেখেছে, খুনিকে খুঁজে নেওয়ার মতো কোনো প্রমাণ পায় নি।
অর্ণব ইশিতার রুমের এক পাশে একটা টেবিলের উপর ডাইরি দেখতে পেলো।
ডাইরিটা হাতে নিয়ে দেখতে পেলো এটা তার দেওয়া ডাইরিটি।
ডাইরির প্রথম পৃষ্ঠা খুললো।
অর্ণবের চোখে পানি চলে আসে।

~ আমার প্রিয় জনের দেওয়া গিফট।
কতো চেষ্টাই না করে আমায় ভালোবাসার কথাটা বুঝাতে, পাগল একটা।
পড়া শেষ হলে দুজন এক হবো, তার আগে কোনো প্রেম না।~
লাভ দিয়ে O+E লিখা।
অর্ণবের বুঝতে সময় লাগে নি, কার কথা বুঝাচ্ছে।

অর্ণব এর কষ্টটা আরো বেশি হচ্ছে।
তার প্রাণ পাখিও তাকে ভালোবাসতো।

পরের পৃষ্ঠেতে লিখা।
কখনো ডাইরি লিখিনি,
ভাবছিলাম আমার আর ওর প্রতিটা মুহূর্ত ডাইরিতে লিখে রাখবো।
আর বিয়ের পর বাসর রাতে, ও যখন প্রপোজ করবে, তখন এই ডাইরিটা ওরে দিয়ে বলবো, এই নাও এটাতে যা লেখা আছে সব পড়ে শুনাও।
হিহিহি
তখন মজা হবে।
কারণ ওর প্রপোজের উত্তর ও পেয়েই যাবে।

তখন আমি বলবো,
এই যে, আগে প্রপোজ করলে কি হতো?
কেন শুধু বুঝাতে চাও ভালোবাসি।
মুখ ফুটে বলতে পারো নি কেন?
তখন অভিমান করে বসে থাকবো।
হু সে অভিমান ভাঙাতে চাইলে বলবো গান শুনাও তোমার মধুর কণ্ঠে।

অর্ণব এই লেখাটা পড়ে শব্দ করেই কান্না করে দেয়।
ইশিতা তাকে নিয়ে কতো স্বপ্ন দেখেছে, কিন্তু তার একটা ভুলের জন্য সব শেষ।
কেন সে প্রপোজ করলো না তখন ইশিতাকে?

সে শুধু অর্ণিকেই শাস্তি দিলো ওর ভুলের,
কিন্তু তার ভুলটাও তো অনেক বড়,
প্রপোজ করলে হয়তো আজ তিনটা কংকাল পেতে হতো না।
আচ্ছা আমার এই ভুলের শাস্তিই কি এই কংকাল গুলো।
কেন এমন করলাম? কেন পারলাম না মনের কথা বলতে?
কেন কারো স্বপ্ন ভঙ করলা?
হয়তো এই ভুল গুলোই আমার জীবনের কালশাপ।
এই ছোট্ট ভুলটাই আমায় পাহাড় সমান মাশুল দিচ্ছে।

অর্ণব পরের পৃষ্ঠা উল্টালো।
এতে লিখা

পাগলটা আমায় জালাচ্ছে খুব।
শুধু শুধু ঝগড়া করে।
মন চায় মৌ কে দিয়ে আমি নিজেই প্রপোজ করাই।

অর্ণব এসব পড়ে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারছে না।
বারবার ইশিতার ওই মায়াবী মুখটা ওর সামনে আসছে।

( আমরা অনেক সময় ভাবি। আমি কেন প্রপোজ করবো, ও আমায় করবে।
আমি কেন ওরে মেসেজ দেবো।
ও আমায় দেবে।
এসব অভিমান আর মনমানুষীকতায় কিন্তু, মনের কথা গুলো লুকিয়ে থাকে।
এই ভুল গুলোই শেষে কাঁদায়।)

অর্ণব পরের পাতায় গেলো,

আজ চার নাম্বার দিন ডাইরি লেখার, কিন্তু এতেই আমার অর্ণবকে ছাড়া অন্য কিছু লিখতে হচ্ছে।

অর্ণব এই লেখা পড়ে ধাক্কা খেলো।
তাহলে কি এমন যা আছে পরের পাতায়।

অর্ণব পরের পাতা খুলে দেখলো তার সব অজানা কথা, তার সব প্রশ্ন এখানে আছে।

অর্ণব খুশিতে আলহামদুলিল্লাহ বললো, সে পেয়ে গেছে খুনিদের।
এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
ডাইরি পড়া শেষ অর্ণবের।
তাড়াতাড়িই সে খুনিদের ধরবে।

দুদিন কেটে যায় অর্ণব এখন সুস্থ।
স্বাভাবিক থাকছে সে,
অর্ণির বাসায় আজ দুদিন ধরে।
অর্ণি বায়না ধরেছে ওর বাসায় যাবে তাই, গিয়েছে

অর্ণির ফ্যামিলি খুব খুশি। অর্ণব আর অর্ণি সুখী আছে।
সাহিল লাখ লাখ শুকরিয়া করছে আল্লাহ্‌ এর কাছে, তার বোন সুখী আছে।

সকালে অর্ণব ঘুম থেকে উঠে,
নাশতা করছে সাহিলদের সাথে বসে,
হঠাৎ অর্ণবের ফোনে ফোন আসলো।
সাহিল: ফোন ভাজছে তোমার,
অর্ণব: জ্বি ভাইয়া ধরছি।
ওদের সামনেই ফোন ধরলো,

আনকমন নাম্বার।
ফোনের ওপাশেরর কথা গুলো শুনে, অর্ণব চিৎকার দিয়ে উঠলো।
চোখ বেয়ে পানি পরছে ওর।
অর্ণবের চিৎকার করে কান্না শুনে অর্ণি আর ওর মা রান্না ঘর থেকে আসেন।
অর্ণবের কান্না থামছেই না।
ওরা অর্ণবকে বুঝাচ্ছে কান্না না করতে আর কি হয়েছে সেটা বলতে।
সাহিল: কে ফোন করেছে? আর কি হয়েছে? বলো আমাদের?

চলবে,,,,

(গল্পের ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আশাকরি গল্পের সাথেই থাকবেন।
উৎসাহ দেবেন।)

ভালো থাকবেন
ঘরেই থাকবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here