অজানা_আলোর_খোঁজে পর্ব-১১ ১২

0
1958

#অজানা_আলোর_খোঁজে
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১১,১২

কারণ খেয়াল করে দেখল তানভীরের চোখ থেকে অনর্গল জল পড়ছে। রুকুর আর বুঝতে বাকি রইল না তানভীর নিশাকে প্রচন্ড রকম ভালোবাসে। তা না হলে একটা ছেলে একটা মেয়েকে হুট করে দেখে এত বছর পার করার পরও চোখের জল ফেলতে পারত না। রুকু শুধু তানভীরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর তানভীর চোখটা বন্ধ করে চোখের জল ফেলছে। কিন্তু কেন জানি না রুকুর বড্ড কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে রুকুর ভেতরটায় যেন কোনো অসহনীয় ব্যাথায় তাড়না করছে। তানভীর কাঁদছে সেটার থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছে তানভীর যে কারণটা নিয়ে কাঁদছে সেটা ভেবে। তাহলে কী সে তানভীরকে ভালোবেসে ফেলেছে। না না একি ভাবছে সে। এটা ভাবা নেহাৎ অন্যায়। কথাগুলো মনে মনে আওরাতে লাগল রুকু। চোখটা তানভীরের দিক থেকে সরিয়ে বাসের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে পড়ল। মৃদু মগ্ন বাতাস জানালা দিয়ে ধেয়ে আসছিল। রুকু উড়নাটা মুখ থেকে সরিয়ে মুখটা বাতাসের দিকে ধরে রাখল। হালকা হালকা বাতাসে রুকুর মুখের সামনে থাকা চুল গুলো পেছন দিকে গিয়ে তানভীরের মুখের উপর পড়ছিল। আচমকা চুলের স্পর্শ পেয়ে তানভীর চোখের জলটা মুছে তাকিয়ে দেখল রুকুর চুলগুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে। কিছুটা ঝড়ের বাতাস বইলে গুল্ম জাতীয় গাছগুলো যেমন নড়ে চড়ে ঠিক ওমন ভাবে।

এর মধ্যেই রুকু জানালার দিক হতে মুখ ঘুরাতে খয়াল করল তানভীর তাকিয়ে আছে। তানভীরকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার বুকের ভেতরটা চমকে গেল। নিজেকে সামলে নিতেও পারছে না। যতই তানভীরের দিকে তাকিয়ে আছে ততই যেন তার চোখে ডুবে যাচ্ছে। তাহলে কি সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছে তানভীরকে। নাকি এটা নিছকেই মায়া। মনের মধ্যে প্রশ্নগুলো বারবার বিদ্ধ করছিল।

এর মধ্যেই তানভীর তার ভাবনায় ব্যাগরা দিয়ে চোখের সামনে হাত দিয়ে নাড়াতে নাড়াতে বলল

– কি ব্যাপার কি দেখছেন? এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

রুকু তানভীরের প্রশ্নের তোয়াক্কা না করে প্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে বলল

– আমাদের আর কতক্ষণ লাগবে যেতে?

তানভীর রুরুকে এড়িয়ে যেতে দেখে বুঝতে পারল সে এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছে না৷ তাই বাড়াবাড়ি না করে সোজাসোজি বলল

– আর বেশিক্ষণ লাগবে না। দুই ঘন্টার মতো। আর নয়টার মধ্যেই পৌঁছে যাব। ঐখানে গিয়ে কিছু খেয়ে নিব তারপর সরাসরি পটকার কাছে চলে যাব।

– ওরা কোথায় আছে?

– ওরা একটা রিসোর্টে উঠেছে। ঐখানে আমার জন্য থাকার ব্যবস্থা করেছে। তবে আপনার থাকা নিয়ে ঝামেলা হতে পারে। আমার সাথে তো আর থাকতে পারবেন না। আর পটকাকে যদি বউ পরিচয় দিই তাহলে আমার বাসায় খবরটা পৌঁছাতে বেশি সময় লাগবে না।

– তাহলে আমি কোথায় থাকব?

– আমার মেয়ে ফ্রেন্ড কতজন গেছে। ওদের সাথে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। আর আমি যা বলি সেটা শুধু মাথা নেড়ে যেতে হবে। কারণ উনিশ বিশ হলেই পটকা মায়ের কাছে কথা লাগাবে আর মা কান্নাকাটি আর আহাজাড়ি জুড়িয়ে দিবে। মায়ের একমাত্র সন্তান তো তাই।

– কেন আপনার কোনো ভাই বোন নেই?

– না ভাইবোন নেই।

– আপনার বাবা কি করে?

– বাবা নেই। আমার বয়স যখন ছয় বছর তখন বাবা মারা যায়। এরপর মা আর বিয়ে করেনি। আমাকে নিয়েই বাকিটা জীবনটা পার করে দেয়।

– দুঃখিত আপনাকে ঐভাবে প্রশ্ন করা উচিত হয়নি।

– আপনি তো ইচ্ছা করে এমন করেন নি আমি মনে কিছু নিইনি। সত্যটা তো আর মিথ্যা হয়ে যাবে না।

– হুম তা তো অবশ্যই। আন্টি কি করেন?

– মা প্রাইমারি স্কুলের টিচার। মা গ্রামে থাকে আর আমি ঢাকায় পড়াশোনা করেছি।

– চাকুরির জন্য চেষ্টা করেননি?

– নাহ এখনো করিনি। নিজের হাত খরচটা হয়ে যায় ঐরকম কিছু একটা করছি। আপাতত ঘুরাঘুরিটাকে উপভোগ করতে চাই।

– আপনার তো ভালোই বয়স হলো বিয়ে করবেন না?

প্রশ্নটা শোনে তানভীর একদম চুপ হয়ে গেল। কী উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না। মনের গহীনে একটা চাপা কষ্ট শুধু অনুভব করছে। কষ্ট টা কি সেটাও বুঝার অন্তরায়। চুপ হয়ে নীরব হয়ে গেল। নীরবতা দেখে রুকুও আর প্রশ্ন করার সাহস পেল না। তবে এটা বুঝতে পেরেছে নিশার প্রতি তানভীরের একটা টান এখনো কাজ করছে। রুকু চুপ হয়ে সিটে হেলান দিয়ে বসলো। অপরদিকে তানভীর ইয়ারফোন কানে গুজে মাথা বাসের সিটে হেলান দিয়ে রইল।

“ভালোবাসি ভালোবাসি
সেই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায়…
বাজায় বাসি
ভালোবাসি ভালোবাসি”

গানটা মৃদু স্বরে বাজতে লাগল। আর তানভীর সেটা চোখ বন্ধ করে মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করতে লাগল। বেশ মনোযোগ দিয়েই গানটা শোনছিল। আর আস্তে আস্তে গুণগুণ করছিল। রুকু আড়ঁচোখে তানভীরকে দেখছিল। কেন জানি না এভাবে দেখতে বেশ ভালো লাগছে তার। অদ্ভূত একটা মায়া তার মনে তৈরী হয়েছে। যতই তানভীরের দিকে তাকাচ্ছে ততই যেন ভালোবাসার অতল সাগরে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছে। চেষ্টা করেও যেন সেখান থেকে বের হতে পারছে না। কেন? কি কারণে? এমন হচ্ছে সব প্রশ্নই তার অজানা। মনে হচ্ছে এটা উচিত না তবুও যেন মন সে বাধাঁ মানতে নারাজ।

” মন বড়ই অদ্ভূত জিনিস। সে কখন কোন পথে চলে সেটা মনের মালিকেরও অজানা।”

তানভীরকে দেখতে দেখতে রুকু কখন ঘুমিয়ে গেল টের পেল না। ঘুমটা ভাঙ্গল তানভীরের হালকা ডাকে।

– এই যে আমরা চলে এসেছি উঠেন। বাস থেকে নামতে হবে।

রুকু চোখ টেনে টেনে চোখ খুলে বলল

– হ্যাঁ উঠছি।

বলেই সব গুছিয়ে সিট থেকে উঠে দাঁড়াল। মাথাটা বেশ চক্কর দিচ্ছিল। হুট করে ঘুম থকে উঠায় শরীরটাও বেশ দুর্বল লাগছিল। তবুও শক্তি জুগিয়ে বাস থেকে নীচে নামল। তানভীর বুঝতে পারছিল রুকুর হয়তো খারাপ লাগছে। তাই রুকুর হাত থেকে রুকুর ব্যাগটা নিতে চাইলে। রুকু চটপট তানভীরের হাত থেকে ব্যাগটা ছাড়িয়ে নিয়ে কর্কশ গলায় বলল

– আপনাকে আমার ব্যাগ ধরার সাহস কে দিল? এত সাহস দেখাতে আসবেন না আমার সাথে।

তানভীর যেন বোকাবনে গেল। কী বলবে উত্তর দিতে বেশ হিমশিম খাচ্ছিল। খানিকটা বিরক্তি কাজ করছিল। তাই একটু গলাটা গম্ভীর করে জবাব দিল

– আজিব মেয়ে তো আপনি।আমি তো ব্যাগটা নিতে চেয়েছিলাম আপনার ভালোর জন্য। ব্যাগ হাতে নিয়ে হেল দুল খাচ্ছিলেন। তাই ব্যাগটা নিয়ে আপনার কষ্ট কমাতে চাচ্ছিলাম।এ ব্যাগে কি এমন আছে যে এমন করে উঠলেন। আমি ছিনতাইকারী না। আর ছিনতাইকারী হলে এতক্ষণে আপনার সব নিয়ে পালাতাম। এতটুকু পথ আপনাকে নিয়ে পাড়ি দিয়েছি। আর আপনি এখন আমাকে সাহস দেখানোর কথা বলছেন? সাহস দেখানোর হলে আগেই দেখাতে পারতাম।বেশ স্বার্থপর মেয়ে আপনি। একজন মানুষ এতটা করেছে আপনার জন্য আর আপনি এমন করে বললেন। আপনার মতো আজিব পাবলিক দুনিয়াতে দ্বিতীয়টি দেখি নি।

বলার সাথে সাথে রুকু বলে উঠল

– আপনি একটু সাহায্য করেছেন বলে আমার মাথা কিনে নেন নি। আমার পারসোনাল কত কিছুই ব্যাগে থাকতে পারে। আমার অনুমতি ব্যাতীত ব্যাগটা কেন নিতে চাইবেন? আমার অনুমতি না নিয়ে সরাসরি ব্যাগ ধরে টান দিচ্ছিলেন এটা কি ঠিক? এটুকু সাহায্য করে কী নিজেকে হিরো ভাবা শুরু করেছেন?

তানভীর রুকুর কথা যতই শোনছিল ততই তার রাগে গা ফেটে যাচ্ছিল। রাগে গিজগিজ করে কর্কশ গলায় বলল

– আমি তো আর আপনার ব্যাগ খুলে দেখতে চাই নি। অহেতুক রাগ কেন দেখাচ্ছেন? আমাকে মনে হয় আপনার প্রয়োজন নেই। তাই এমন করছেন৷ থাকেন আপনি আপনার মতো করে। আপনাকে গায়ে পড়ে সাহায্য করতে যায়নি যে হিরো সাজতে যাব। আজিব পাবলিক। আপনাদের মতো মেয়েদের সাহায্য করাই ভুল। থাকেন আপনি গেলাম আমি।

বলেই হনহন করে সামনের দিকে এগিয়ে গেল তানভীর। রুকু তানভীরকে পিছু ডাকলেও কোনো কথা শোনল না। পাঁচ মিনিটে বেশ সামনে এগিয়ে গেছে তানভীর। খেয়াল করল রুকুর কন্ঠ শোনা যাচ্ছে না। রুকু আর পিছু ডাকছে না। তানভীর পিছনে ফিরে খেয়াল করলো রুকু পেছনে নেই।

পর্ব-১২

রুকুকে না পেয়ে একটু সামনে এগিয়ে গেল। খেয়াল করল রুকুর অস্তিত্বও নেই। বেশ চিন্তায় পড়ে গেল তানভীর। এতক্ষণ সাহায্য করল আর শেষমেষ রুকুর কোনো বিপদ হলো না তো। এটা ভেবেই তানভীরের মন ভয়ে কেঁপে উঠল। নিজের ভেতরেই অপরাধবোধ কাজ করছে কেন এতগুলো কথা বলতে গেল এজন্য। রুকু বয়সে ছোট কিন্তু সে তো বয়সে বড় ছিল তাহলে এমন ছেলে মানুষী কেন করতে গেল এটা ভেবেই কপাল চাপড়াতে লাগল।
আশে পাশে ভালো করে খেয়াল করল কোথাও রুকু নেই। মনের ভেতরটায় একটা শূন্যতা কাজ করছে তানভীরের। মনে হচ্ছে কি নেই কি নেই। এমন কেন লাগছে বুঝতে পারছে না। মনে হচ্ছে রুকুকে ছাড়া সে অসম্পূর্ণ। মনের গহীনে চাপা কষ্টটা যেন আবার চিনচিন করে উঠছে। নিশার থেকে পাওয়া কষ্টটা যেন রুকুর মাধ্যমে দ্বিতীয় বার পেল এমন মনে হচ্ছে। তাহলে কি তানভীর রুকুকে ভালোবেসে ফেলেছে। এসব প্রশ্নই মনে মনে আওরাতে আওরাতে হতাশ হতে লাগল। ভেতরটা পুড়ে ছাড় খাড় হয়ে যাচ্ছিল। সামলাতে চেয়েও পারছে না। একটু এগিয়ে গিয়ে রুচিতা হোটেল পেল। কি আর করবে কিছু খাওয়াও দরকার। তাই বুক ভরা কষ্ট নিয়ে রুচিতা হোটেলে ঢুকল। সেখানে গিয়ে একটা সাদা দই অর্ডার করে বসে চোখ বন্ধ করলো। চোখটা বন্ধ করতেই রুকুর মুখটা চোখে ভেসে উঠল। তানভীর পরক্ষণে চোখ খুলে খেয়াল করল রুকু সামনের চেয়ারটায় বসা। তানভীরের বুকটা যেন ধক করে উঠল। বুকে হাত দিতেই যেন মনে হলো বেশ জোরে জোরে হার্টবিট কম্পন তুলছে। স্তব্ধ হয়ে গেল কিছুক্ষণের জন্য। মনে মনে ভাবতে লাগল এটা স্বপ্ন নাকি কল্পনা নাকি বাস্তব। বেশ অবাক চোখে রুকুর দিকে তাকিয়ে রইল। আর রুকু মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। এর মধ্যেই সাদা দইটা টেবিলের উপর আসতেই রুকু সেটা টান দিয়ে নিয়ে খেতে আরম্ভ করলো। তানভীরের বুঝতে বাকি রইল না এটা রুকুই সামনে বসে আছে এটা তার কোনো কল্পনা না এটা বাস্তব। তাই চুপ করে অবাক নয়নে রুকুর খাদ্য আহরণটা দেখছিল।

এদিকে রুকু খাচ্ছিল আর মুচকি মুচকি হাসির ফিরিক তুলছিল মুখে। রুকুর হাসি যেন তানভীরের মনকে শীতল করতে লাগল। তানভীর কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার একটু অস্থির হয়ে বলল

– কোথায় ছিলে তুমি? কত খোঁজেছি। আশে পাশে কোথাও তো পায়নি তোমায়?

রুকু হালকা হেসে বলল

– একটু লুকিয়ে ছিলাম। দেখছিলাম আপনি কি করেন। এতগুলো বকা দিয়েছেন। তার উপর এত পিছু ডাকলাম সাড়া দেননি তাই এমন করেছি।

– কাজটা ঠিক করো নি তুমি। আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম জানো। এরকম করা একদম ঠিক না।

রুকু কথার জবাব না দিয়ে হালকা হেসে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিল। তানভীর যে কখন রুকুকে তুমি করে বলে ফেলল সেটা তার বুঝার অন্তরালে রয়ে গেল। রুকুর গা ছাড়া ভাব দেখে তানভীর কিছুটা রাগ করলেও রুকুকে তেমন কিছু বলল না। আরেকটা দই অর্ডার করে খেতে লাগল। তারপর আরও কিছু নিয়ে খাওয়া শেষ করে দুজন উঠল।

তারপর তানভীর রুকুকে নিয়ে সিকদার রিসোর্টের সামনে উপস্থিত হলো। সেখানে গিয়ে রুকু খেয়াল করল একটা মোটা পেটটা বের করা এক যুবক দাঁড়িয়ে আছে। দুই হাতে একটা করে পাউরুটি আর কলা নিয়ে। তানভীর ছেলেটার কাছে গিয়ে সিগারেট দুটো বাড়িয়ে দিয়ে বলল

– তোর জন্য সেই সদরঘাট থেকে এগুলো বয়ে এনেছি।

রুকুর বুঝতে বাকি রইল না এই ছেলেটায় হলো পটকা। পটকা একটা হাসি দিয়ে কলা আর পাউরুটি একহাতে নিয়ে সিগারেট দুটো অন্য হাত দিয়ে তানভীরের হাত থেকে নিয়ে হাসতে হাসতে বলল

– তোকে খুব মিস করতেছিলাম।

বলেই রুকুর দিকে তাকাল। রুকুর দিকে তাকিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতে লাগল। এরকম ভাবে দেখছিল যে রুকু বেশ অস্বস্তি অনুভব করছিল। কিছুক্ষণ রুকুকে দেখে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।

– এই মেয়ে কে? কোথায় থেকে ধরে নিয়ে এসেছিস? তোর সাথে কেন আসলো? একে তো আগে কখনো দেখি নি। আগে তো তুই এমন কোনো মেয়ের কথা বলিস নি। নিশাকে ছাড়া তো তোর জীবনে কেউ আছে শোনি নি।

গধোগধো করে আরও এক গাদা প্রশ্ন করতে লাগল। তানভীর পটকার এত প্রশ্ন শোনে উত্তর দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। বেশ বিরক্ত হয়ে শুধু প্রশ্নই করে যাচ্ছে। তানভীর কিছুক্ষণ প্রশ্নগুলো শোনে একটা দমক দিয়ে বলল

– তুই থামবি নাকি? আমাকে আগে বলতে দে।

পটকা তানভীরের দমক খেয়ে একদম চুপ হয়ে বলল

– হ্যাঁ বল কি বলতে চাস?

– এ হলো আমার জুনিয়র। কুয়াকাটা বেড়াতে যায়নি কখনো তাই আমাকে আসতে দেখে আমার সাথে আসতে চাইল। ভাবলাম আমাদের গ্রূপে মেয়ে আছে ও থাকলে তো সমস্যা নেই তাই সাথে নিয়ে এসেছি। ওর নাম রুকু। পুরো নাম রুকাইয়া। আর ওকে তিরা, সাথী, আর শষীর সাথে থাকার ব্যবস্থা করে দিবি।

পটকা একটু চুপ থেকে বলল

– ওহ এ কাহিনি আমি ভাবলাম অন্য কিছু। সে নাহয় থাকার ব্যবস্থা করা যাবে।

– চল এবার।

বলেই তানভীর রুকুকে নিয়ে রিসোর্টের ভেতরে গেল। ভেতরে যেতেই সাথীর সম্মুখীন হলো তানভীর। সাথী তানভীর আর রুকুকে এভাবে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল

– দোস্ত এটা কে? চিনলাম না তো?

– আমার পরিচিত এক জুনিয়র আমার সাথে ঘুরতে এসেছে। কখনো কুয়াকাটা দেখেনি। আমাকে আসতে দেখে বলল আসতে চায় তোরা আছিস তাই নিয়ে আসলাম।

সাথী তানভীরের দিকে একটু আঁড় চোখে তাকিয়ে বলল

– নিশার কাহিনির পর থেকে কোনো মেয়ের সাথে তো কথা বলতে দেখিনি। আর এখন একটা মেয়েকে নিয়ে চলে এসেছিস। তাও তেমন পরিচিত না। ব্যাপারটায় তো কেমন গোলমেল মনে হচ্ছে। তিরা শোনলে কষ্ট পাবে।

তানভীর কথাটা এড়িয়ে গিয়ে বলল

– তিরাকে কে কষ্ট পেতে বলেছে। কবে কি ঘটেছে সেটা নিয়ে এখনো পড়ে থাকলে চলবে? বাদ দে এসব কথা। ওকে নিয়ে তোদের রুমে যা। আমি পটকার সাথে যাচ্ছি।

সাথী রুকুর দিকে তাকিয়ে মৃদু গলায় বলল

– এই যে চলো আমার সাথে। তোমাকে রেস্ট নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিই।

বলেই রুকুকে নিয়ে রুমে গেল। রুমের দরজা নক করতেই তিরা দরজা খুলল। তিরা দরজা খুলার সাথে সাথে রুকুকে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল

– এ মেয়েকে কোথায় থেকে ধরে নিয়ে এসেছিস। এ মেয়ে কে?

সাথী গা ছাড়া ভাবে জবাব দিল

– আমি না তোর প্রাণের নাগর তানভীর ধরে নিয়ে এসেছে। তোকে তো পাত্তা দেয় না। কথা বলতে গেলেও কথা বলতে চায় না। আর এখন অল্প পরিচয়ে এ মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে চলে এসেছে।

কথা শোনেই তিরা রাগে গিজগিজ করতে লাগল। কিছুটা রাগ নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। গিয়েই তানভীরের সামনে গিয়ে একটা কান্ড বাঁধিয়ে বসল। তানভীর তিরার কান্ড দেখে ভয় পেয়ে গেল। কারণ….

চলবে?

(কপি করা নিষেধ)

গল্প সম্পর্কিত আপডেট পেতে কমেন্টে দেওয়া গ্রূপ লিংকে ঢুকে গ্রূপে জয়েন করুন।

(আর আমার ইদানীং পড়ার চাপ বেশি তবুও আমি চেষ্টা করব প্রতিদিন পর্ব দেওয়ার। কালকে থেকে রাত ১০ টায় পর্ব দেওয়া হবে। আর আপনাদের একটা পর্ব পড়তে পাঁচ মিনিট লাগলেও আমার লিখতে, রিচেক দিতে পোস্ট করতে করতে তিন ঘন্টার উপর সময় লাগে😊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here