অন্তরালের অনুরাগ ❤ পর্বঃ১১

0
7089

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ১১

সকালের কড়া রৌদ্রের আলো নীলার চোখে-মুখে এসে লাগছে। পাশ থেকে আরেকটা বালিশ তুলে নিয়ে নীলা মুখ ঢেকে নিলো। কিন্তু শান্তির ঘুমটা বেশিক্ষণ ঘুমাতে পারল না। কেননা শান্ত নামক অশান্ত ব্যক্তি রীতিমতো অত্যাচার শুরু করে দিয়েছে। বালিশ, গায়ের চাদর এমনভাবে টানাটানি শুরু করাতে নীলা ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠল,

— ” ইশশ যা তো বিরক্ত করিস না। ”

কিন্তু কে শুনে কার কথা। শান্তর অনবরত ধাক্কা ধাক্কিতে নীলার চোখের ঘুম পালালো। পিটপিট করে চোখ খোলতেই সে দেখতে পেল, কোমড়ে হাত দিয়ে শান্ত রাগী চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

— ” তোর সমস্যা কি? সকাল সকাল এমনভাবে বিরক্ত করছিস কেন? ”

— ” তোকে যে তুলে আছাড় দিচ্ছি না, তার জন্য শুকরিয়া আদায় কর। ”

নীলা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সকাল সকাল শান্তর এমন তিরিক্ষি মেজাজের কারণটা সে ঠিক আঁচ করতে পারছে না।
নীলাকে সুবিধা করে দিতে শান্ত-ই এগিয়ে আসলো।

— ” রাতে কোথায় গিয়েছিলি? ”

শান্তর সামান্য কথাটাতে নীলার এবার কাশি উঠে গেল। দৃষ্টি এলেমেলো হয়ে সে কথা সাজাতে মনোযোগ দিলো। কিন্তু পরিস্থিতি সামলানোর মতো তেমন কোনো কথা মাথায় আসছে না।

— ” আসলে.. না মানে..

— ” আসলে নকলে বাদ দিয়ে সত্যি করে বল। ”

শান্তর এমন রাগীস্বরে নীলা আরও ঘাবড়ে গেল। যতটুকু সাজাতে পেরেছিল এখন সেটাও ঘুলিয়ে ফেলল।
এমতাবস্থায় প্রিয়তী রুমে আসলো। শান্তকে আবারও রাগী চেহারায় দেখে সে হাসিমুখেই বলল,

— ” শান্ত, তুমি আবার নীলাকে জেরা করতে লেগেছ? একটা রাত নিয়ে এত পরেছ কেন? ”

— ” দিদিভাই তুমি বাধা দিও না। তুমি না হয় অর্ণব ভাইয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলে। কিন্তু নীল কোথায় গিয়েছিল সেটা আমাকে জানতেই হবে। আমাকে এমন বিপদের মধ্যে ফেলে কোথায় গিয়েছিলি তুই? ”

— ” মানে, কি বিপদ? ”

— ” সেটা তোকে জানতে হবে না। তুই বল তুই রাতে কোথায় ছিলি। ”

নীলা এবার আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে উঠে দাঁড়াল। বেশ আয়েশ করে একটা মিথ্যা কথা বলে ফেলল,

— ” ঘুম আসছিল না, তাই হাটাহাটি করতে বাহিরে গিয়েছিলাম। ”

বলেই একপ্রকার কেটে পরল। বিপদজনক জায়গা থেকে দ্রুত সরে যেতে পারলেই মঙ্গল।
নীলা চলে যেতেই শান্ত রেগে গিয়ে ধুম করে বিছানায় বসল। তানবীরকে ব্লেন্ডার মেশিনে দিয়ে জুস করে খেতে পারলে শান্তর বোধহয় কলিজাটা শীতল হতো।

নীলা টুথব্রাশে পেস্ট নিয়ে আয়নার দিকে তাকাতেই তার হাত থেমে গেল। তার পরনে এখনও রাতের জামাটাই রয়েছে। আবারও রাতের কথাগুলো মনে পরতেই নীলার শরীর মৃদু শিরশির করে উঠল। মনে হচ্ছে সাদিদের স্পর্শগুলো এখনও তার শরীরে কম্পন সৃষ্টি করছে। নীলা মাথা নিচু করে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে লাজুক হাসল। আর সাদিদের লজ্জাজনক কথাগুলো মনে হতেই নিজেই আওড়াল,

— ” অসভ্য পুরুষ। ”

.

সবাই ব্রেকফাস্ট করে নিয়েছে। কেবলমাত্র নীলা-সাদিদ-ই বাকি রয়ে গিয়েছিল। একসাথে দুইজনের দেরী করে ঘুম থেকে উঠা নিয়ে সবাই কিছুটা অবাক হলেও, কোইন্সিডেন্স ভেবে আর মাথা ঘামাল না। কিন্তু শান্ত তীক্ষ্ণ চোখে দু’জনের হাবভাব পরখ করেছে। তার জহুরির চোখ বলছে কিছুতো একটা ঘাপলা রয়েছে। কিন্তু সেই ঘাপলাটাই ঠিক ধরতে পারছে না। কিন্তু তার সন্দেহ অভিযান বহাল রয়েছে।

সাদিদ নীলাকে সাথে নিয়ে ব্রেকফাস্টের জন্য আসলো। বাকি সবাই তখন রিসোর্টটা ঘুরে ঘুরে দেখছে।
রাতের কথাগুলো নীলার মাথায় অনবরত ঘুরঘুর করছে। তাই সাদিদের সামনে সে লজ্জাও পাচ্ছে।

— ” কি হলো খাও। ”

— ” জ্বি খাচ্ছি। ”

সাদিদ খেতে খেতে খেয়াল করছে নীলা শুধু চামচ নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। একবার মুখে দিলে আর দেওয়ার নাম নেই।
সাদিদ এবার নিঃশব্দে উঠে দাঁড়াল। নীলার একেবারে পাশে নিজের চেয়ারটা টান দিয়ে বসল।
এমন পাবলিক প্লেসে সাদিদকে নিজের এতটা কাছে আসতে দেখে নীলা সরে দূরে যেতে চাইল। কিন্তু সাদিদ সেটা হতে দিলে তো!

— ” কোথায় যাও? ”

— ” একটু দূরে বসি৷ সবাই দেখলে খারাপ ভাববে। ”

— ” তোমাকে এত পন্ডিতি মারাতে হবে না। চুপচাপ বসো আর হা করো। ”

— ” কি? ”

— ” ওপেন ইউর মাউথ। ”

— ” একদম না। দূরে সরুন বলছি। ”

কে শুনে কার কথা। সাদিদ নিজেই নীলাকে খাইয়ে দিতে লাগল। আর সে নিজেও খেয়ে নিলো। আর নীলাতো লজ্জায় প্রায় শেষ। এক প্লেট এমনকি একি স্পুন দিয়ে তারা খাবার খাচ্ছিল।
সাদিদের অবশ্য সেদিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। সে কেবল মনোযোগ সহকারে খাবার শেষ করেছে।

— ” পাখি, ক্যাপেচিনো কফি না ক্রিমি লাটে? ”

— ” আপনার যা ভালো লাগে। ”

— ” সেটা কেমন কথা? তুমি বলো। ”

নীলা কিছু না বলে মৃদু হাসল। সাদিদ বুঝতে পেরে নিজেও হাসল। তারপর নীলার নাকটা টিপে দিয়ে এলজন ওয়েটারকে ডেকে ক্রিমি লাটে দিতে বলল।
টেবিলে একটা কফি দেখে নীলা কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে সাদিদের দিকে তাকালো। অপরদিকে সাদিদ ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু হাসছে। নীলার আর বুঝার বাকি নেই যে সাদিদের দুষ্টু বুদ্ধি।

— ” বুঝলে পাখি, একপাত্রে আহার করলে মোহাব্বত বৃদ্ধি পায়। তাই মোহাব্বত বৃদ্ধিকরণের প্রক্রিয়া চালাচ্ছি। ”

নীলা নিজের মনেই বলে উঠল এই ছেলে মারাত্মক লেবেলের চাপাবাজ। নিজের দিক ঠিক রাখতে দুনিয়ার সব আজগুবি লজিক এনে দাঁড় করাতেও সে পিছুপা হয় না।
সাদিদ নীলার কুঁচকানো কপাল দেখে মৃদু হাসল। তারপর নীলার দিকেই প্রথমবার কফিটা এগিয়ে দিলো। তারপর নিজেও কফি কাপে চুপুক দিলো। তারপরই বেশ খুশি হয়ে বলে উঠল,

— ” লাজাবাব! জীবনে এতো কফি খেয়েছি কিন্তু এত টেস্টি কখনও মনে হয়নি। অল ক্রেডিট গ্রেস টু…

এতটুকু বলেই সাদিদ থেমে গেল। নীলার দিকে খানিকটা ঝুঁকে এসে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,

— ” মাই কুইন্স লিপস্। ইটস রিয়েলি ডেলিসিয়াস বেব। ”

বলেই সাদিদ ছোট্ট করে নীলার কানের লতিতে চুমু খেল। নীলা কারেন্টের শক খেয়েছে এমনভাবে মাথা নিচু করে পিছিয়ে আসলো। হার্টবিট তার অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে। এই ছেলে না জানি কোনো একদিন তার অসভ্য কথাবার্তায় আর কাজকর্মে নীলার এট্যাক-ফ্যাটাক করিয়ে ফেলে। নীলার লজ্জারাঙা মুখটা দেখে সাদিদ মাথা চুলকে নিঃশব্দে হাসল। এই মেয়েটা সামনে থাকলেই তার ভয়ংকর সব কাজ করে ফেলতে ইচ্ছে করে। নিজের এমন নিয়ন্ত্রণহীন কাজকারবারে সাদিদ এবার নিজেই হাসল।
নীলা তার দিকে মাথা তুলে তাকাতেই সাদিদ-ই আবার বলল,

— ” আর অপেক্ষা করা যাচ্ছে না। লজ্জায় তোমার এই লাল লাল মুখটা দেখলে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। ”

নীলার পক্ষে আর সম্ভব নয় এইসব লাগামছাড়া কথাবার্তা হজম করা। তাই সে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল। কিন্তু সাদিদ দ্রুত তার হাতের কব্জিতে ধরে আটকিয়ে নিলো।

— ” আচ্ছা, বসে কফিটা শেষ করো। আর কিছু বলব না। ”

— ” সত্যিতো? ”

— ” আমার পাখি সত্যি। ”

নীলা মুচকি হেসে চেয়ারে বসল। সাদিদও এবার ভদ্র ছেলের মতো নিজের লাগামহীন কথাবার্তা বন্ধ করল।

_______________

সাদিদরা খুব কম সময়ের জন্য এসেছিল। তাই নীলাদের ব্রেকফাস্টের পরপরই তারা রিসোর্ট থেকে বাসার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ল। নীলা আর শান্ত এবারও গিয়ে পিছনের সিটে বসেছে।
তানবীরকে বাসে উঠতে দেখেই শান্তর মেজাজ আবারও তিরিক্ষি হলো। সকাল থেকে এই মানুষরূপী সাদা ভুতের দর্শন সে একবারও পায়নি। কে জানে কোথায় গিয়ে গা ঢাকা দিয়েছিল। কিন্তু এতক্ষণপর এখন তাকে দেখেও আবার রাতের ঘটনা মনে পরল এবং তার রাগও ক্রমাগত ফুঁসিয়ে উঠল।
সাদিদ এসে নীলাদের সিটের সামনে দাঁড়িয়ে খানিকটা শুকনো কেশে গলা পরিষ্কার করল। নীলা তাকে দেখেই জানালার বাহিরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। আর সাদিদের অবস্থা বুঝতে পেরে সে মিটমিটিয়ে হাসতে লাগল।
এবার শান্তর কোানোদিকে খেয়াল নেই। সে কেবল তানবীরকে পিছন থেকে তীক্ষ্ণ চোখে দেখছে।

— ” শান্ত, তুমি কি এখানেই বসতে চাও? ”

— ” জ্বি ভাইয়া। কেন? ”

— ” আসলে…

শান্ত এবার সাদিদের ভাবভঙ্গি খেয়াল করছে। সাদিদ সরাসরি তাকে উঠে যেতে বলতে পারছে না। তাই মাথা চুলকাচ্ছে। শান্ত এবার আড়চোখে নীলাকেও পরখ করল।
সে ক্রমাগত ব্ল্যাশ করছে। বুদ্ধিমতি শান্তর আর বুঝার বাকি নেই যে কোন নদীর পানি কোন সমুদ্রে গিয়ে পরছে।

— ” হারামি! তুই আমার সামনে সাধু সাজস? তলে তলে টেম্পো চালাস আর আমি জানতে চাইলে বলস হরতাল? ”

— ” দোস্ত আস্তে। রাজা হাঁসের মতো চেঁচাস কেন? সবাই এখনই শুনতে পাবে। ”

শান্ত এবার চুপ করে গেল। গতরাতে তানবীরও তাকে ভূত সেজে এমনটা বলেছিল।
শান্ত আর কথা না বাড়িয়ে হাসিমুখে সিট থেকে উঠে গেল। ইতিমধ্যে সবাই সিটে বসেছে। তাই শুধুমাত্র তানবীরের পাশের সিটটা খালি রয়েছে। কিন্তু শান্তর সেখানে বসার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই। আর অপরদিকে সাদিদ-নীলার মধ্যে কাবাব মে হাড্ডি হবারও ইচ্ছা নেই। তাই শান্ত বাধ্য হয়ে তানবীরের পাশের সিটটাতে গিয়েই বসল।

— ” নিজে কাবাবের মধ্যে হাড্ডি হবার থেকে পাশের জনকে কাবাব বানিয়ে খেয়ে ফেলা অতি উত্তম। ”

শান্ত আড়চোখে তানবীরকে একবার দেখে নিয়ে কুটিল হাসল। তানবীরকে রাতের জন্য আরেকচুট ধুলায় করবে ভেবেই শান্তর মনে খুব শান্তি লাগছে।
পাশে কাউকে বসতে দেখে তানবীর এবার মাথা তুলে তার দিকে তাকালো। শান্তকে দেখে এমন একটা ভাব করল যেন তাকে সে এই জীবনে দেখেনি। অপ্রত্যশিত আগুন্তকের ন্যায় তানবীরের এমন ব্যবহারে শান্ত ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালো। তানবীর সেটা দেখেও না দেখার ভান করে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করল।
শান্তর রাগে পিত্তি জ্বলছে।

— ” ভাব? আমার সাথে ভাব মারে! তোর ভাবের গুষ্টি কিলায়। ”

শান্ত নিজেই বকবক করে তানবীরের গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগল।

— ” সমস্যা কি তোমার? এমন ষাঁড়ের মতো কেও কেও করছ কেন? ”

শান্ত বিস্ফোরিত চোখে তানবীরের দিকে তাকালো। সে তো নিজের মনে আওড়ালচ্ছিল। এই ছেলে শুনল কিভাবে? কিন্তু পরমুহূর্তেই চমকিত ভাব বাদ দিয়ে সে ক্ষেপে উঠল,

— ” যাদের ষাঁড়ের মতো কান তাদের কাছে সবকথা-ই কেও কেও মনে হয়। ”

শান্তকে অবাক করে দিয়ে তানবীর আবারও চোখ বন্ধ করল। শান্তর যেন নিজের চোখকেও বিশ্বাস হচ্ছে না। ছেলেটা হঠাৎ এত ভালো হয়ে গেল কিভাবে? দুইদিন আগে তো হুমড়ি খেয়ে তার সাথে ঝগড়া করত। এখন এতো ভদ্র হয়ে গেল কিভাবে? অদ্ভুত!

.

বেশ কিছুক্ষণযাবত সাদিদ বেশ ভদ্রতা বজায় রেখেছে। নো দুষ্টুমি নো খুনসুটি। এককথায় নীরবতায় বাস ভ্রমণ উপভোগ করেছে এবং নীলাকেও করতে দিয়েছে।
চোখে রৌদ্র লাগছে এমন একটা ভাব নিয়ে সাদিদ এবার জানালার পর্দাটা টেনে দিলো। নীলা কিছু বলার জন্য ফিরে তাকাতেই দেখল পেল, সাদিদ সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করেছে। হয়তো ঘুম পেয়েছে তাই নীলাও আর কিছু বলল না। চুপচাপ সে কানে ইয়ারফোন গুঁজে দিলো।
মিনিট দুই-এক পরে পিঠের দিক থেকে সাদিদের বামহাতটা নীলার কোমড় স্পর্শ করতেই, নীলা দ্রুত চোখ খোলে সাদিদের দিকে তাকালো। সাদিদ এখনও চোখ বন্ধ করেই রয়েছে। কিন্তু তার হাতদুটো একজায়গায় সীমাবন্ধ হয়ে থাকল না। নীলার কোমড়ে সাদিদের আঙ্গুলগুলো ক্রমাগত চলতে লাগল। কোমড়ে সাদিদের এমন করে আঙ্গুল স্লাইড করাতে, নীলার শরীর বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে। সে নিজের কাঁপা হাতে সাদিদের হাতটা কোমড় থেকে সরাতে গেলেই, সাদিদ একহাতে তার কোমড়ে মৃদু চাপ দিলো। নীলা এবার সহ্য করতে না পেরে সাদিদের কাঁধে মুখ গুঁজে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,

— ” প্লি..জ ছেড়ে দি..ন। ”

সাদিদ এবার দুষ্টুমি থামিয়ে দিলো। চোখ খোলে আশেপাশে একবার সব বড় সদস্যদের দেখে নিয়ে নীলার কপালে নিঃশব্দে চুমু খেল।
নীলা এবার নিজেকে সরিয়ে নিতে চাইলেই সাদিদ আবারও তাকে আটকে ফেলল। নীলাকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে সে সিটে হেলান দিলো। নীলাও বাধ্য হয়ে সাদিদের বাহুবন্ধনে আটকা পড়ল। কিন্তু তার দৃষ্টি এদিক-ওদিক। কেউ যদি তাদেরকে এভাবে দেখে ফেলে নিশ্চয়ই সেটা ভালো চোখে দেখবে না।
সাদিদ আচমকা নীলার ডানকানের ইয়ারফোনটা টান দিয়ে খোলে নিলো। নীলা কিছুটা অবাক হতেই সাদিদ মৃদু হেসে নিজের কানে সেটা লাগাল। এবার নীলাও হাসল, লাজুক হাসি।
কিন্তু এতকিছুর মধ্যে নীলার মিউজিক প্লেয়ারে যে জাস্টিন বিবারের লেট মি লাভ ইউ গানটা চলছে সেদিকে তার খেয়াল নেই। কিন্তু দুষ্টু সাদিদ কি নীলাকে এরজন্য ছেড়ে দেবে নাকি?
সাদিদ নিচু হয়ে নীলার কানে কানে ফিচেল স্বরে বলে উঠল,

— ” আমি বাধা দিলাম কবে? বরং তুমিইতো দূরে সরিয়ে রাখ। নিজেও কাছে টানো না, আর আমি যখন টেনে নিতে চাই তখনও তোমার কাঁপা-কাঁপি, দাপাদাপি শুরু। ”

নীলা সাদিদের বুকে আস্তে করে একটা কিল বসাল।

— ” অসভ্য। ”

নীলার মুখ থেকে আবারও এই শব্দ শোনে সাদিদ হেসে ফেলল। সবাই যেন না শুনতে পায় নীলা দ্রুত সাদিদের মুখে নিজের হাত চেপে ধরে এদিক-সেদিক তাকাতে লাগল। কেউ খেয়াল করেনি দেখে হাফ ছাড়ল।
কিন্তু সাদিদের থেকে বাঁচতে পারল না। নীলার হাতটা ধরে রেখে সাদিদ তার হাতের তালুতে চুমু দিলো। নীলা শিহরিত হয়ে হাত সরিয়ে নিতে চাইলেই, সাদিদ তাকে আরও টেনে নিয়ে গভীর চুমু দিতে লাগল।
অবশেষে দীর্ঘ একটা চুমু দিয়ে সাদিদ নীলাকে নিজের মুখ থেকে হাত নামাতে দিলো।
সাদিদের থেকে ছাড়া পেয়ে নীলা লজ্জায় লাল-নীল হয়ে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করল। নীলার লজ্জায় রাঙা মুখটা দেখে সাদিদ নিঃশব্দে হাসতে লাগল।

#চলবে…

[ পাঠকগণ আপনাদের পাঠপ্রতিক্রিয়াগুলো আমাকে জানাবেন। আমি আপনাদের ভালোলাগা-মন্দলাগাগুলো জানতে আগ্রহী। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here