শঙ্খচিল পর্ব-৪

0
2649

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ- ০৪

একদল বখাটে ছেলে বাইকে হেলান দিয়ে, রাস্তা ঘাটে যাতায়াত করা মেয়েদের উত্যাক্ত করছে, তানহা তখন কথাটা ভুল বলে নি। তার খুব জানতে ইচ্ছা করে মেয়েরা আসলে কোথায় নিরাপদ, শহরের অলি-গলিতে কত এমন নর পিশাচ ঘুরে বেরায় যারা দিনের আলোয় নারীদের ইশারায় ধর্ষণ করে আর রাতে বাস্তবে, ভাবতেই গা ঘিন ঘিন করে উঠলো তানহারা। মনে মনে এক গাঁদা গালি দিয়ে কলেজে ঢুকে গেলো।

কেন্টিনে বসে মানহা চা খাচ্ছে, কিন্তু এখন সে একা। সকালে নাস্তা করে অনেকেই চলে গেছে তাই খুব বেশি ভীর নেই ক্যান্টিনে। মানহার বিপরীত পাশের চেয়ারটা খালি, কেনো জানি না মানহার বার বার চেয়ারটার দিকে চোখ যাচ্ছে, আর বার বার মনে হচ্ছে চেয়ার টায় যদি ডাক্তার ওয়াহাব বসে থাকতে তবে মন্দ হতো না৷ মানহা চা টা শেষ করে, ওয়ার্ডের দিকে গেলো, দাদী ঘুমাচ্ছে। সকাল বেলা ঘুম ভাংগার পর যখন বাবার সাথে ফোন কলে কথা বলছিলো, তখন কে বলবে এই মানুষ টা অসুস্থ।
তানহা চাঁদর টা ঠিক করে দাদীর গাঁয়ে জরিয়ে দিলো।

একজন নার্স এসে ঔষধ গুলো ঘেটে দেখছে। মনহা পাশে দাঁড়িয়ে আছে। নার্স মহিলার ঔষধ গুলো চেক করা হলে মনহা জিজ্ঞেস করলো, ” আপনি কি গত রাতে এই বেডের সামনে এসেছিলেন? ”

নার্স উত্তর দিলেন, ” না।”
এমন উত্তর মোটেও আশা করেনি মানহা সে। নার্স যদি গত রাতে না এসে থাকে তাহলে তার মাথার নিচে বালিশ দিলো কে? দাদীর সদ্য অপারেশন হয়েছে সে তো এখন হাটতে পারবে না। সব কিছু কেমন গুলিয়ে আসছে মানহার। এই হাস্পাতালের জ্বিন- ভুত আছে নাকি? ভাবতেই দো’আ দূরুদ পরে বুকে ফুঁ দিলো।
সারা দিন কেটে গেলো দাদীর পাশে বসে, ডাক্তার ওয়াহাব সারাদিন ও ওয়ার্ডে আসেন নি। মানহা পা টিপে টিপে একবার ওয়াহাবের কেবিনের দিকে পা বাড়ালো, পরক্ষনেই মানহা নিজের কাছেই নিজে প্রশ্ন ছুরে মারলো, ডাক্তার কে দেখার তার এতো তাড়া কিসের?

আর দু এক দিনের মধ্যেই দাদীকে রিলিজ দিবে, তার পর তো এই অচেনা লোকটার সাথে দেখা পর্যন্ত হবে না। এই লোকটা কে দেখার পর থেকে কেনো জানি না মানহার অন্যরকম লাগতে শুরু করেছে, আসেলেই কি ওয়াহাব অন্যরকম নাকি তারই এমন টা মনে হচ্ছে, মানহা বুঝে উঠতে পারছে না। দাদীর মাথার কাছে টুলে বসে আনমনে আপেল কাটছে, এবং মনে মনে কল্পনা জল্পনায় প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে। ঠিক তখনি হঠাৎ কেউ কেঁশে উঠলো। মানহা কাঁশির শব্দ অনুসরণ করে তাকাতেই বা হাতের মাঝের দুই আংগুলে ছুড়ির পোচ লাগলো। মানহা চমকে ” আউউউচ! ” বলে শব্দ করলো।

মানহার ধ্যান ভাঙ্গানোর জন্য ওয়াহাব কাঁশি দিয়ে ছিলো। মানহার দুই আংগুল বেয়ে ঘন খয়েরী রক্ত বেয়ে পড়লো, ওয়াহাব ঘাবড়ে গিয়ে বলল, ” ওহ মাই গড, আপনার হাত কেন কাঁটলেন? ”

মানহা রক্ত দেখে ক্ষানিক ভয়ে পেয়ে বললো, ” আ আ আসলে খেয়াল করি নি। ভুলে পোঁচ লেগে গেছে।”

ওয়াহাব নার্স কে উদ্দেশ্য করে বললো, ” তাড়াতাড়ি ব্যান্ডেজ নিয়ে আসুন, রক্তক্ষরণ থামাতে হবে৷ ”

নার্স ওয়াহাবের কথা মতো দ্রুত ব্যান্ডেজ নিয়ে এলো, তাতে খুব একটা লাভ হলো না, ধারালো ছুরি হবার কারনে হয়তো গভীর ক্ষত হয়েছে, তাই রক্ত পড়া,থামছে না। ওয়াহাব পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বললো, ” আমি ইমারজেন্সি রুমে যাচ্ছি ওনাকে নিয়ে আসুন। ”

মানহা কাচুমাচু মুখ করে বললো, ” হ্যাক্সিসল লাগাবেন না প্লিজ অনেক জ্বলবে।”

নার্স বললো, ” তোমার তো শিলি লাগবে। ”

মানহা ছলছল দৃষ্টিতে ওয়াহাবের দিকে তাকালো, ওয়াহাব ইমারজেন্সি রুমে চলে গেলো। পিছু পিছু নার্স এবং মানহা ও গেলো। শেহতাজ বেগম অসহায় দৃষ্টিতে নাতনীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলেন। বিপদ যেন পিছুই ছাড়ছে না, শেহতাজ বেগম দো’আ পরে নাতনী জন্য প্রার্থনা করলেন।

ইমারজেন্সি রুমে এক পাশে একটা রোগীর বেড পাশেই কিছু কাঁচি বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র রাখা। আরেক পাশে টেবিল এবং দুটো চেয়ার রাখা একটা চেয়ারে ডাঃ ওয়াহাব বসে আছেন, রুমে ঢুকে মানহা একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। নার্স কে ইশারা করে, মানহা কে বসাতে বললো, মানহার কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, চোখের কোনা বেয়ে নোনা পানি গরিয়ে পড়ছে, ওয়াহাব একবার মানহার দিকে তাকিয়ে ঔষধ হাতে নিলো, মানহা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
” জ্বলবে না তো?”

ওয়াহাব স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ” না। ”

” সত্যি বলছেন। ”

” বিশ্বাস করেই দেখুন। ” বলেই ওয়াহাব খয়েরী রঙের এক ধরনের তরল ঔষধ লাগিয়ে দিলো, শুরুতে একটু জ্বালা করলে ওয়াহাব ফুঁ দিয়ে সাবধান ঔষধ লাগিয়ে দিলো।
” এবার বলুন জ্বালা করেছে?”

” উঁহু। ”

” এবার চোখটা বন্ধ করুন তো। ভাবুন এখন আপনার দাদী একা বসে কি করছেন। ”

মানহা চোখ বন্ধ করলো, না কিন্তু এক মনে ভাবতে শুরু করলো তার দাদী এখন কি করছে৷ দাদী নিশ্চয়ই এখন দুশ্চিন্তা করছেন, তার জন্য দো’আ করছে.. মানহা চট করে বললো,
” দাদী এখন দুশ্চিন্তায় বসে আছেন। আমার অপেক্ষা করছেন, এবং দো’আ করছেন আমার জন্য। ”

” আবস্যালিউটলি রাইট৷ আমার কাজ শেষ? ”

” এ্যা.. ” বলে হাতের দিকে তাকাতেই দেখলো তার বাম হাতে চার টা শিলি। ওয়াহাবের কথার জালে সে অন্যমনস্ক হয়ে দাদীর কথা ভাবছি তার সুযোগ নিয়েছে বজ্জাত ডাক্তারটা। মানহা অবাক হয়ে বললো,
” আপনি তো ভারী ধাপ্পাবাজ লোক। কথার জালে ফাঁসালেন, আমি একটু ব্যাথা ও পেলাম না।”

ওয়াহাব স্মিথ হেসে বললো, ” পেশেন্ট কে অন্য দিকে মনোযোগী করার এটাই একটা টেকনিক। আপনি যদি অন্যদিকে মনোযোগ না দিয়ে হাতের দিকে তাকাতেন তাহলে আরো ভয় পেতেন বেশি। ”

মানহা হা করে ওয়াহাবের দিকে তাকিয়ে রইলো। ওয়াহাব মনোযোগ সহকারে হাত ব্যান্ডেজ দিয়ে ড্রেসিং করতে করতে বললো,
” এই টেকনিক টা বাচ্চা দের বেলায় প্রয়োগ করে থাকি, আপনার বয়স বাইশ -তেইশ হলে কি হবে, আপনার আচারন একদম বাচ্চা দের মতো৷ এতো ভয় নিয়ে ডাক্তারী পড়া পড়ছেন কি ভাবে বলুন তো?”

উজ্জ্বল শ্যামলা গালে টোল কি সুন্দরই না লাগছে, কথার তালে তালে গালের টোলটাও তার অবস্থান পরিবর্তন করছে, একবার গালের মাখানে তো একবার ঠোঁটের পাশে..
” কি হলো? ”

” এহহ। ”

ওয়াহাব আবারো স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ” আপনার মনোযোগ কোথায় থাকে?”

” আপনার গালের টোলে।”
মানহা আনমনে বলে ফেললো। পরক্ষনেই সে ডান হাত দিয়ে নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরলো। ইসস নির্লজ্জের মতো এটা কি বলে, ফেললো সে?

মানহা আংগুল ফাঁকে করে ওয়াহাবে কে দেখার চেষ্টা করলো, প্রথমে ওয়াহাব একটু অবাক হলেও হঠাৎ সে মিটি মিটি হাসতে শুরু করেছে। মানহা লজ্জায় আবারো চোখ দুটো ঢেকে ফেললো।
ভাগ্যিস নার্স কিছুক্ষণ আগে জরুরি কাজে বাইরে চলে গেছে। না হলে লজ্জায় এখানেই মিশে যেতো মানহা।

হাতে ব্যান্ডেজ করা শেষ। হাত টা আগের থেকে একটু হাল্কা লাগছে। চোখ খুলে মানহা দেখতে পেলো….



চলবে

কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here