শঙ্খচিল পর্ব-৫

0
2400

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ০৫

হাতে ব্যান্ডেজ করা শেষ। হাতটা আগের থেকে হাল্কা লাগছে, তবে একটু ঝিমিয়ে আছে। চোখ খুলে মানহা সামনে তাকাতেই দেখলো, ওয়াহাব দু’হাত ভাজ করে একটু দূরে বিপরীত পাশের চেয়ারে বসে আছে। ওয়াহাব মুখে হাসির ছাপ বুঝা যাচ্ছে কিন্তু সে খুব কষ্টে হাসি চেপে আছে,
” এখন কেমন লাগছে?”

মানহা মাথা দুলিয়ে বললো, ” ভালো। ”

” কিছুক্ষণ আগে কি বলছিলেন, যেনো? ”

মানহা লজ্জা পেয়ে বললো, ” দাদী চিন্তা করছেন, আমি এখন আসি। ” বলেই উঠে চলে গেলো। মানহার যাওয়ার পানে ওয়াহাব তাকিয়ে রইলো, ওয়াহাব মুচকি হাসলো। পাগল মেয়ে একটা..

মানহা দ্রুত এসে দাদীর পাশে চুপ করে বসে রইলো, বুকের ভেতর ডুগডুগি বাজছে তার। উফফ নিজেই নিজের হৃদ স্পন্দন শুনতে পারছে। লোকটা তো ভারী দুষ্টু, মানহা মুখ ফসকে কি না কি বলে ফেলেছে এটা আবার রিপিট করতে হয়? বজ্জাত ডাক্তার একটা।
” ব্যাথা লাগছে?”

মানহা চোখ বুজে বললো, ” উহু।”

” তাহলে থ মেরে বসে আছিস কেনো৷ আসার পর কিছু বলছিস ও না। ”

মানহা চোখ খুলে একবার দাদীর দিকে তাকিয়ে জোরে নিঃশ্বাস ফেললো। কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা তার বার বার চোখের সামনে ভাসছে৷ ভাসুক, তার যে ভাবতে বড্ড ভালো লাগছে।
শেহতাজ বেগম স্থির দৃষ্টিতে নাতনির দিকে তাকিয়ে আছেন, কি এমন ঘটলো, মেয়েটা আসার পর থেকে স্তব্ধ হয়ে আছে, খুব জানতে ইচ্ছা করছে তার…

—————————————————

জানালার কাছে আনমনে বসে আছে তানহা। টিফিন ব্রেকে কেন্টিনেও যায় নি কিছু খেতে। দু দিন আগেও তার জীবনটা এমন ছিলো না। সব কিছু কি সুন্দর স্বাভাবিক ছিলো, আর আজ নিজের প্রানের সংশয় নিয়ে ভুগছে৷ কাকে বলবে এই বোবা যন্ত্রনার কথা, কে বিশ্বাস করবে তাকে?
আচ্ছা ওই লোকটা কি তাকে ভয় দেখাচ্ছে, নাকি সত্যি তাকে হাতের নাগালে পেলে মেরে ফেলবে? মানুষ একটা পাপ ঢাকার জন্য হাজার টা পাপ করে। এই খুনি লোকটা আগে খুন করে নি তার কি গ্যারান্টি, যে একবার খুন করতে পারে তার পক্ষে দ্বিতীয় বার খুন করা টা খুব কঠিন কাজ না৷
কি করবে সে এখন, আর কত দিন এভাবে আতংক নিয়ে থাকতে হবে তাকে। তানহার ভেতর টা ছট ফট করছে, না কাউকে বলতে পারছে না নিজে সয্য করতে পারছে…

” কি হয়েছে দোস্ত? এমন চুপ করে কি ভাবছিস? ”

তানহা চোখ তুলে দেখলো, তার বন্ধবী মিশু দাঁড়িয়ে আছে। তানহা নিজেকে স্বাভাবিক করে, বললো ” কিছু না দোস্ত৷ দাদীর হাস্পাতালে ভর্তি তাই একটু চিন্তা হচ্ছে। ”

” এখন কেমন আছেন উনি?”

” ভালো আছে..” তানহা কথা শেষ করতে না করতেই বাইরে তাকালো। কলেজ গেইটে হট্টগোলে হচ্ছে। তানহা হতবাক হয়ে, তাকিয়ে দেখলো, সেই খুনি লোকটা কলেজের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বখাটে ছেকে গুলোর সাথে তর্ক করছে। তর্ক ঝগড়ার এক পর্যায়ে মারামারি শুরু করে দিলো। দারোয়ান দ্রুত কলেজ গেট তালা মেরে দিলো।

বখাটে ছেলেদের লিডার কে গাড়ির সাথে আটকে রেখেছে খুবি লোকটা, একটা সিগারেট জ্বালিয়ে ধূমপান করতে শুরু করলো, অপর দিকে বখাটে ছেলেটা ছট ফট করছে। খুনি লোকটা বিরক্ত হয়ে, জ্বলন্ত সিগারেট টা বখাটে ছেলেটার গালে লাগিয়ে দিলো৷
তানিহার পাশে দাঁড়িয়ে মিশু-ও বাইরের দৃশ্য দেখছিলো হঠাৎ করে সে বললো,” বেশ হয়েছে বেশ হয়েছে৷ আরো বখাটেমি কর, তোর পাপের বোঝা ভারী হয়েছে৷ ”

তানহা অবাক হয়ে বললো, ” তুই ওই লোকটাকে চিনিস?”

” কোন লোকটা যে সিগারেট চেপে ধরলো? ”

” হ্যাঁ।”

” না চিনি না। ”

তানহা দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ” তাহলে এতো লাফা লাফি শুরু করলি কেনো? বখাটের ছেলে গুলোর মতো এই লোকটাও খারাপ হতে পারে। ”

মিশু অবাক হয়ে বললো, ” হ্যাঁ কিন্তু এই পাজি বখাটে ছেলে গুলো কে সাইজ করতে পারলে খারাপ কি? ”

তানহা উত্তর দিলো না। চুপ চাপ বাইরের দৃশ্য তাকিয়ে দেখতে লাগলো, জ্বলন্ত সিগারেট গাঁয়ে লাগতেই বখাটে ছেলেটা ব্যাথায় কোকিয়ে উঠলো। সাথে ছেলে গুলো, কিছু একটা ইশারা করতেই, ছেলে গুলো বখাটে ছেলে এবং তার সাথীদের গাড়িতে তুলে নিলো৷ অতঃপর খুনি লোকটা সিগারেট টা পায়ে পিষে নিজেও গাড়িতে চড়ে চলে গেলো।

” একটা কথা বলবি? ”

তানহা মিশুর দিকে তাকালো, হ্যাঁ না কিছু বললো না। মিশু নিজে থেকেই বললো, ” আচ্ছা তুই কি করে জানলি ওই লোকটা খারাপ? ”

তানহা কি বলবে বুঝতে পারছে না, একটু ভেবে বললো, ” ধারনা করলাম৷ ”

ক্লাসের ঘন্টা বাজতেই যে যার সিটে গিয়ে বসলো। তানহা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
ক্লাস অতঃপর কোচিং শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হলো, বাসার গলির মোরে নামতেই তানহার মনে পড়লো দু’দিন আগের কথা। কি অদ্ভুত দু দিন কেটে গেলো অথচ তানহার মনে হচ্ছে সে অতীতে থমকে আছে। এদিক সেদিক না তাকিয়ে তানহা বাসার দিকে হাটা শুরু করলো, তিন তলায় উঠতেই দেখলো বসার গেট খোলা।

তানহা ক্ষানিক অবাক হলো, আপুর তো এখন বাসায় আসার কথা না তাহলে কে এলো, তানহা ধীরে ধীরে বাসায় ঢুকতেই দেখলো দরজার কাছে তিনটা বড় বড় ব্যাগ৷ তানহার বুঝতে আর বাকি রইলো না, তার বাবা এসেছে। তানহা সোফায় ব্যাগটা রেখে বাবা কে ডাক দিলো, মুকুল সাহেব রান্না ঘর থেকে মেয়ের ডাকের সারা দিলেন,
মুকুল সাহেব কিছু একটা রান্না করছেন, তানহা বুঝতে পারলো না কি রান্না করছে, তবে ডিম সিদ্ধ দেখে বুঝতে পারলো বাবা হয়তো, ডিম ভুনা করবেন।

” বাবা তুমি কখন এসেছো? ”

” ঘন্টা খানেক হবে। বাসায় কি কিছু রান্না হয় নি নাকি?”

” সকালে রহিমা খালা নাস্তা বানিয়ে গেছেন, বাসায় আমি একা তাই দুপুরে রান্না করতে না করেছি। ”

মুকুল সাহেব আড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ” তার মানে তুমি দুপুরে খাওনি? ”

তানহা কিছু বললো না। মেয়ের নিরবতা মুকুল সাহেব কে বুঝিয়ে দিলো তার মেয়ে কিছু খায় নি। মুকুল সাহেব থম থমে গলায় বললেন,
” যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। রান্না প্রায় শেষ। ”

তানহার মনে মনে খারাপ লাগলো, এত দূর জার্নি করে এসে, বাবা নিজেই রান্না করছেন, আগে জানলে হয়তো নিজেই কিছু একটা রান্না করে রাখতো। তানহা ব্যাগ টা নিয়ে রুমে চলে গেলো৷

————————————————-

মেঘে ঘন আকাশ, একটাও তারা দেখা যাচ্ছে না। আজ রাতে হয় তো তুমুল বর্ষণ নামতে পারে। ফাল্গুন মাসে বৃষ্টি হয় তা সবারই জানা তবে এবারে এতো ঝড় বৃষ্টির কারণ মানহার জানা নেই৷

দাদীর বেডের পাশে মাঝারি আকারের জানালা দিয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে মানহা৷ রাতের বেলা আকাশ দেখতে তার ভীষণ ভালো লাগে তার…

” মুকুল তুই..”

দাদীর কথা শুনে পেছনে ফিরতেই দেখতে পেলো, বাবা এসেছে। মানহা বাবা কে সালাম দিয়ে, বসার জন্য টুল টা এগিয়ে দিলো। দাদী কান্না জরানো কন্ঠে বললো, ” কখন এসেছিস বাবা?”

” পাঁচটার দিকে ঢাকায় এসেছি মা। তুমি এখন কেমন আছো?”

” আর আছি। বেঁচে ফিরে আসবো তা -ই কল্পনা করি নাই রে বাপ। ”

” কি বলছো মা৷ চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে। ”

শেহতাজ বেগম কিছু বললেন না৷ ছেলের হাত ধরে চুপ করে বসে রইলেন, মুকুল সাহেব মানহার উদ্দেশ্য বললেন, ” তোমার জন্য খাবার এনেছি, ডিম ভুনা আর ভাত। চলবে না?”

” হ্যাঁ। তুমি রান্না করেছো? ”

মুকুল সাহেব হ্যাঁ বললেন৷ ঠিক তখনি একজন নার্স এসে বললেন,
” বেড নং ৫৭ রুগির কালকে রিলিজ। ”

মানহার ভেতরটা ধক করে উঠলো, হাত পা মৃদু কাপছে তার, কিছু একটা বলতে গিয়েও চুপ করে রইলো মানহা…



চলবে
কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই ❤️

আমার পেইজে লাইফ দেওয়ার অনুরোধে রইলো
Story by Ruhi jahan

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here