শঙ্খচিল পর্ব-৬

0
2188

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-০৬

রাত টা পার হয়ে গেলো কিন্তু ওয়াহাব সে রাতে আর এলো না। মানহার আর ঘুম হলো, না। সারা রাত সে ওয়াহাবের অপেক্ষায় কাটিয়ে দিলো, ভেবেছিলো হয়তো ওয়াহাব রাতে রাউন্ডে আসবে এই ওয়ার্ডে, কিন্তু এলো না। ভোর হতেই মানহা, টুক টাক জিনিস পত্র গুছিয়ে নিলো। হঠাৎ যে কেনো এতো শূন্য লাগছে, কিছু হারিয়ে যাওয়ার ভয় মানহা কে এক চাপা যন্ত্রণা গ্রাস করে নিচ্ছে।

দাদী ঘুম ঘুম চোখে বললো, ” রাতে তুই ঘুমাস নি কেনো? ”

মানহা ক্লান্ত স্বরে বললো, ” ঘুম আসছিলো না দাদী? ”

মানহার কথা শুনে, শেহতাজ বেগম চোখ মেলে নাতনির দিকে তাকালেন, ” তোকে এমন লাগছে কেনো বলতো? মন খারাপ? ”

মানহা দাদীর কথায় চমকে উঠলো, এক নজর তাকিয়ে বললো, ” মন খারাপ হবে কেনো দাদী? ”

শেহতাজ বেগম মানহার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ” সেটা তুই জানিস, কেনো মন খারাপ। ”

মানহা মুখটা প্রশস্ত করে বললো, ” মন খারাপ না দাদী। বাড়ি ফিরতে হবে তো একটু বাদেই, বাবা গাড়ি নিয়ে আসবে। ”
শেহতাজ বেগম কিছু বললেন না। উঠে বসার চেষ্টা করলেন।

———————————————–

সকাল থেকে বাসায় খুব তোড় জোড় চলছে, দাদীর বাসায় আসবে, তানহা আজ কলেজে ও যায় নি। একা একা আপু আর কতো সামলাবে, তানহা রুম থেকে বেড়িয়ে রহিমা খালার উদ্দেশ্য বললো,

” খালা নাস্তা নরম রুটি, এবং পাঁচমিশালী সবজি বানাবে। ”

” আইচ্ছা। আর কিছু? ”

” না খালা। আমি যাই দাদীর ঘর টা পরিষ্কার করে আসি৷ ”

” তুমি পরিষ্কার করবা ক্যা৷ আমি কইরা দিমু নি?”

” না খালা। আপনি নাস্তা বানান।”

তানহা কোমরে ওরনা গুজে ঘর সাফা করতে শুরু করলো, দাদীর বিছানার মাথার কাছে পর্দা খুলতেই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ভাংগা কাঁচের ফাঁক দিকে এক ফালি রৌদ্র ঘরে প্রবেশ করলো। তানহার মাথায় বার বার প্রশ্ন ঘুর পাক খাচ্ছে, কাঁচ ভাংগলো কিভাবে? তিন দিন আগেও তো এই রুমে সে এসেছিলো, তখন তো সব কিছু ঠিক ঠাক ছিলো। দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে কেউ ইচ্ছা করে কিছু ছুড়ে মেরে জানালাটার কাঁচ ভেংগেছে।
তানহা আলতো করে জানালাটা খুলে দিলো৷

————————————————-

” তোমাদের সব কিছু রেডি তো?”

মানহা পিছনে ঘুরে বাবার দিকে তাকালো, অতঃপর শ্বাস ফেলে বললো, ” হ্যাঁ বাবা। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। ”

” তুমি তোমার দাদী কে নিয়ে বের হও আমি হাস্পাতালের ফর্মালিটি, বিল পে করে আসি। ”

” আচ্ছা বাবা। ”

মুকুল সাহেব বেরিয়ে গেলেন। মানহাও দাদী কে নিয়ে ধীরে ধীরে ওয়ার্ড থেকে বের হলো। দাদী স্ট্রেচারে বসে আছে, পাশেই মানহা দাঁড়িয়ে আছে৷ মনের ভেতর অনুভূতি গুলো প্রগর হতে শুরু করলো, ভীষণ অভিমান হচ্ছে তার। শেষ মূহুর্তে কি একটু দেখা হবে না?

ভাবতে ভাবিতেই মানহা একবার ইমারজেন্সির দিকে তাকাচ্ছে আরেক বার ওয়াহাবের কেবিনের সাইডে।
পরক্ষনেই সে মনে মনে ভাবলো, এক জন অচেনা পুরুষের জন্য এতো উত্তেজিত হওয়াটা হাস্যকরবই কিছু না।
মানহার চোখ দুটো ঘোলা হয়ে এলো, তবে তা দাদীর দৃষ্টি ফাঁকি দিতে পারলো না৷ নিরব চাহুনিতে শেহতাজ বেগম মানহা কে পর্যবেক্ষণ করছেন। মানহার চোখের পানির কারণ জানার চেষ্টা করছেন।

” মানহা..”

” হুঁ।” বলে মাথা নিচু করে বাবার ডাকের সারা দিলো।

” এদিকে সব কাজ শেষ, চলো যাওয়া যাক। ”

মানহা কিছু বললো না, শেষ বারের মতো পিছু ফিরে তাকালো ও না। চুপ করে হেটে হাস্পাতালের বাইরে চলে গেলো, দাদী কে গাড়িতে উঠিয়ে নিজেও বসে পড়লো, গাড়ি ছুটতে শুরু করলো পলাশীর উদ্দেশ্য।

তখন ওয়াহাব মাত্র ওটি থেকে বের হয়েছে, ওটির জামাও এখনো খুলে নি। হঠাৎ মানহা এবং তার দাদীকে দেখে ওয়াহাব বেশ অবাক হলো, এই অবস্থায় মানহাকে ডাক দিতে যাবে ঠিক তখনি ওয়াহাব খেয়াল করলো
পাশে একজন ভদ্র লোক কে। মনে মনে ভেবে নিলো, এটা হয়তো মানহার বাবাই হবে। ওয়াহাব মানহাকে ডাক দিতে গিয়েও মনের অজানা দোটানায় আর ডাক দিলো না। মনহা চলে যাচ্ছে, ওয়াহাব শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে মানহার যাবার পানে তাকিয়ে রইলো৷ ভেবেছিলো হয়তো মানহা পেছনে ঘুরে তাকাবে, এক সময় মানহা গাড়িতে চড়ে দূর দিগন্তে মিলিয়ে গেলো।
ওয়াহাব শ্বাস ফেলে, চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। তবে কি মানহার সাথে তার আর দেখা হবে না…

———————————————–

গাড়ি ছুটে চলেছে পলাশীর উদ্দেশ্য। খুব বেশি বেলা হয় নি সারে নয় টা কি দশ টা বাজে রাস্তা ঘাটে এখনো ভীড় জমে নি, গাড়ির কাঁচে জমা শিশির টপ টপ করে কাঁচ বেয়ে পড়ছে বাইরের দৃশ্য ঘোলাটে দেখাচ্ছে, তবুও জানালার দিকে তাকিয়ে আছে মানহা। নিজের চোখের কোনে জমা শিশির বিন্দুকে আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

হঠাৎ গাড়ি থামতেই, মানহার হুশ ফিরে এলো, বাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে গাল দুটো মুছে নিলো। মুকুল সাহেব পেছন ঘুরে তাকিয়ে বললেন,
” মানহা তুমি তোমার দাদীকে নিয়ে বসায় যাও৷ আমি ব্যাগ গুলো নিয়ে আসছি। ”

মানহা মাথা এলিয়ে সম্মতি জানালো, দাদী কে নিয়ে শিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করলো৷ তিন তলায় বাসার সামনে এসে কলিং বেল বাজাতেই রহিমা খালা লাফিয়ে বললো,
” আম্মায় আইছে আম্মায় আছি। ও তানহা তাড়াতাড়ি আসো। ” বলেই দরজা খুলে দিলো। মানহা দাদী কে নিয়ে ঘরে ঢুকতেই রহিমা খালা দাদী কে জরিয়ে ধরে কান্নার সুর ধরলো।

দাদী বিরক্ত হয়ে, রহিমা খালাকে ছাড়িয়ে বললো, ” ছাড় তো রহিমা। আর নাটক করতে হবে না। সে দিন তোর ওপর জেদ করেই আমি একা বাথরুমে গিয়েছিলাম, আর তার পর আমার এই অবস্থা। ”

রহিমা খালা ঠাঁট উল্টিয়ে বললো, ” মাফ কইরা দেন আম্মা।বুঝতে পারি নাই আপনি এতো ব্যাথা পাইবেন। ”

দাদী আর কিছু বললো না, মানহা রহিমা খালার উদ্দেশ্য বললো, ” খালা নাস্তা হয়েছে? দাদীকে কিন্তু সময় মতো খাওয়াতে হবে৷ ”

” হও মানহা।নাস্তা রেডি। গরম রুটি ভাজুম আর দিমু৷ ”

” ঠিক আছে। তুমি নাস্তা রেডি করো জলদি৷ তানহা কোথায়? ”

“খালাম্মার রুম পরিষ্কার করতাছে। ” বলেই রহিমার রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো। মানহা দাদীর রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো, তানহা কে দেখা গেলো না। মানহা দাদীর উদ্দেশ্য বললো,

” দাদী তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। ”

” আচ্ছা যা। ”
মানহা নিজের রুমে চলে গেলো৷ তিন দিন ধরে গোসল করা ও হয়নি তার৷ তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলো। বাইরের চেঁচামেচি শুনে যে-ই তানহা দাদীর রুম থেকে বের হতে যাবে ঠিক তখনি রুমের এক কোনায় ইটের টুকরোর সাথে বাধা একটা কাগজের দলা দেখতে পেলো। মানহার বুঝতে আর বাকি রইলো না এই ইটের টুকরোর কারনেই জানালার কাঁচ ভেংগেছে।

কাগজটা খুলতেই মানহা দেখতে পেলো এটা সাধারণ কাগজ না। ছোট কাগজের টুকরোয়ে গোটা গোটা করে লেখা…
❝ সমুদ্রে শামুক খুঁজতে যেও না,চোরাবালিতে ডুবে মড়বে৷ ❞



চলবে
কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই 🌹

আমার পেইজে লাইক দেওয়া আমন্ত্রণ রইলো

Story by Ruhi jahan

  1. RUHI JAHAN MAYA-রুহি জাহান মায়ার গল্প ঝুড়ি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here