শঙ্খচিল পর্ব-৭

0
2194

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-০৭

❝ সমুদ্রে শামুক খুঁজতে যেও না, চোরাবালিতে ডুবে মড়বে।❞

তানহা আবারো চিরকুট টায় চোখ বুলালো। গলা শুকিয়ে আসছে, শুকনো একটা ঢোক দিয়ে বিছানায় বসে পড়লো। ইনডারেক্টলি কেউ তানহা কে হুমকি দিচ্ছে। তানহার মাথা টা ভন ভন করে উঠলো৷
তানহা কাগজটা মুড়িয়ে, রেখে দিলো৷ দ্রুত রুম টা পরিষ্কার করে তানহা বেড়িয়ে এলো। দাদীর সাথে দেখা করে, তানহা নিজের রুমে গেলো।

তানহা চিরকুটা আবারো মনোযোগ দিয়ে দেখলো, কিছু একটা স্বাভাবিক নেই, তানহা চোখ বুজে লাইন দুটো মুখে আওড়ালো, চোখ খুলে আবারো চিরকুট টার দিকে তাকালো, একটা গুন্ডার ভাষা হবে অশুদ্ধ, হাতের লেখা হবে অগোছালো। এতো নিখুঁত হাতের লেখা, হওয়ার কথা না। তানহা বিড় বিড় করে বললো, “সামথিং ইজ রঙ ভেরি রঙ। ”

————————————————

বাড়ির নাম “কুসুমতি” ভিলা৷ মনহা একবার ফোনের দিকে তাকিয়ে এড্রেস টা চেক করে নিলো। ধানমন্ডি ৩২ রোডে একুশ নম্বর বাড়ি টা। হ্যাঁ ঠিকানা তো ঠিকই আছে গেইটে কোন দারোয়ান নেই, মানহা ঢুকবে কি না বুঝতে পারছে না। মনে মনে ঠিক করলো, কেউ আসলেই, মানহা ভেতরে যাবে। কারো পার্মিশন ছাড়া বাসায় ঢোকা তো ঠিক না।

সে দিনের পর একটা মাস কেটে গেছে। দাদী এখন সুস্থ, কিন্তু হাস্পাতাল থেকে বাসায় আসার পর ওয়াহাবের সাথে মানহার দেখা হয় নি। কিছুটা চাপা অভিমানের কারনে সে চেষ্টা করে নি হাসপাতালে যাওয়ার। তাই বাবা-ই দাদী কে চেক আপ করাতে নিয়ে গেছিলো। কি হত যদি শেষ মূহুর্তে একটু দেখা হতো। একটা মাসে মানহা যত ওই লোকটাকে ভুলার চেষ্টা করেছে, ডাক্তার ওয়াহাব তত বার মানহার স্বপ্নে এসে জ্বালাতন করেছে। অসভ্য ডাক্তার।

” কি চাই? ”

মানহা পেছনে তাকাতেই দেখলো, ধূসর বর্নের পোশাক পড়া একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। লোকটা আবারো বললো, ” কি চাই আপ্নের?”

” এটা কি মিসেস তানিয়ার বাসা?”

” জ্বে। তানিয়া আফা এই বাড়ির মেয়ে। ”

” আমি ওনা ছেলের নতুন টিউটর? ”

লোকটা কনিষ্ঠ আঙুলে দিয়ে কান মোচড়াতে মোচড়াতে বললো, ” কিটর?”

” টিউটর, মানে শিক্ষিকা, ম্যাডাম। ”

” ওহ বুজছি। খাড়ান আমি আপারে যাইয়া বলতেছি৷ ”

মানহা বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এটা টার প্রথম টিউশনি রাগলে চলবে না। মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। লোকটা ক্ষানিক পরে এসে বললো,
” তাড়াতাড়ি আসেন। আপা আপনেরে ভেতরে যাইতে বলছে। ”

মানহা শিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেই, দারোয়ান লোকটা ইশারা করে, ভেতরে যেতে বললো। মানহা ভেতরে যেতেই তানিয়া ভদ্রতার হাসি দিয়ে বললো,
” আপনি কি তাহলে সকালে ফোন করেছিলেন? ”

” জ্বি৷ আমার বন্ধু রশিদের আসার কথা ছিলো।কিছু ব্যাক্তি গত কারনে ও রাজশাহী চলে গিয়েছে, ওর রিকুয়েষ্ট আমি এসেছি। ”

” আমি তানিয়া, স্টুডেন্টের মা।” বলেই একটু শ্বাস ফেলে আবার বললো, ” আচ্ছা। আপনি কিসে পড়েন?”

” মেডিক্যাল দ্বিতীয় বছরে পড়ছি। ”

” বাহ। স্টুডেন্টের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই? ”

” জ্বি অবশ্যই। ”

তানিয়া নামের মেয়েটা, দু’বার শিহাব বলে ডাকতেই বারো – তেরো বছরের একটা ফর্সা নাদুস নুদুস টাইপের ছেলে চলে এলো৷ মানহার দিকে এক নজর তাকিয়ে রইলো।
” উনি তোমার নতুন মিস৷”

” আসাল্লামু আলাইকুম মিস.. ”

মানহা মুচকি হেসে, সালামের উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ” তুমি কিসে পড়ো?”

” আমি ফাইভে পড়ি, তুমি কিসে পড়ো? ”

” আমি? আমি মেডিক্যাল কলেজে পড়ি! ”

” আমার বড় মামুও পড়ে।”

মানহা থমকে গেলো, হয়তো শিহাবের মামাও মেডিক্যাল স্টুডেন্ট। মানহা কথা আগানোর জন্য বললো, ” আচ্ছা। ”

” শিহাব তুমি মিস কে নিয়ে যাও৷ ”
মানহা হাল্কা হেসে শিহাবের পিছু পিছু তার রুমে গেলো। ছোট একটা রুম, দেয়ালে স্পাইডার ম্যানের বড় বড় পোস্টার টাংগানো। মানহা একবার রুম টায় চোখ বুলিয়ে নিলো, টেবিলের এক পাশের চেয়ারে বসে মানহা বললো, ” তোমার সবচেয়ে অপছন্দের সাব্জেক্ট কোনটা?”

শিহাব চোখ মুখ খিচে বললো,
” মিস আমার সব চেয়ে অপছন্দের সাব্জেক্ট গণিত। আই হেইট ম্যাথ৷ মানুষ করে এগুলো?”

মানহা একটু ভেবে বললো, এক দম, ম্যাথ আমারো অনেক অপছন্দের বিষয়। ”

শিহাবের চোখে মুখে চক চক করে উঠলো। শিহাব খুশি খুশি হয়ে বললো, ” তাহলে এবার মিলাও হাত। ”

মানহা শিহাবের সাথে হ্যান্ড শেক করলো। এই গলু মলু পিচ্চিটাকে তার বেশ পছন্দ হয়েছে, মানহা ইংলিশ বোর্ড বই বের করে শিহাব কে পড়াতে শুরু করলো।

———————————————–

কেটে গেছে একটা মাস, তবে তানহা মাঝে খুব একটা পরিবর্তন আসে নি আগের মতোই সে বোরখ পড়ে নিজেকে আবরণ করে করে রাখে, আগের থেকে পরিস্থি স্বাভাবিক হলেও তানহা অতীতের ঘটনা একে বারে মুছে ফেলতে পারে নি। চিরকুট টা পড়ে আছে ড্রয়ারের কোন এক কোনায়৷
কিছুতে কিছু যায় আসে না তানহার।

নীলক্ষেত তৈলের পাম্পের কাছে আসতেই রিকশা থেমে গেলো, তানহা একটু চমকে গিয়ে বললো, ” রিকশা থামালেন কেনো মামা?”

রিকশাওয়ালা পান চিবুতে চিবুতে বললো, ” কি জ্যাম দেখছেন। রিক্সা আর সামনে যাইবো না। ”

” তাহলে অন্য রাস্তা দিয়ে রিকশা নিয়ে যান। ”

” নাহ। আর যামু না। ”

তানহা বিরক্ত হয়ে বললো, ” আপনি তো বললেন, পলাশীবাজার পর্যন্ত যাবেন। ”

” নাইম্মা যান। আমার বাসায় যাইতে অইবো। ”

তানহা নেমে গেলো, সন্ধ্যা নামবে, কিছুক্ষণের মাঝেই মাগরিবের আজান দিবে। তানিহা আজীমপুরের রাস্তার দিকে হাটা শুরু করলো, ফুটপাতে দু -চার জন ফেরিওয়ালা ছাড়া আর মানুষ দেখা যাচ্ছে না। চারিদিকে প্রাচীর ঘেরা। এভাবে হাটতে থাকলে এই নির্জন রাস্তায় অন্ধকার নেমে পড়বে৷ তানহা বাধ্য হয়ে, দাঁড়িয়ে রইলো। মিনিট পাঁচেক পড় একটা ট্যাম্পু তানহার সামনে এসেতেই তানহা দ্রুত হাত দিয়ে থামতে ইশারা করলো, তবে ট্যাম্পু থামলো না। ক্ষানিক দূর থেকে ট্যাম্পুর ভেতরে একটা লোক ভয়ার্ত কন্ঠে ডাক দিলো।

তানহা ট্যাম্পুর দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো, ট্যাম্পুর ভেতরে একা একটা লোক বসে আছে, চোখে মুখে আতংক। বাইরে একটা ছেলে ঝুলে দাঁড়িয়ে আছে, ছেলেটার চেহারা বাইরে অন্ধকারে কারনে দেখা যাচ্ছে না৷ টেম্পুর কন্ট্রার হবে হয়তো। ছেলেটা তানহা কে ইশারা করে ভেতরে যেতে বললো,
তানহা গেলো না। ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। অতঃপর ছেলেটা ভ্যাস ভ্যাসা কন্ঠে বললো,

” কই যাইবেন? ”

তানহা আমতা আমতা করে বললো, ” পলাশী বাজার। ”

ছেলেটা হাসি দিলো, যেমন খুব মজা পেয়েছে। অন্ধকারে দাঁত গুলো স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। এই হাসি তানহা চেনে, মূহুর্তে সব কিছু এলো মেলো হয়ে গেলো। তানহা দৌড়াতে গিয়েও দৌড় দিতে পারলো না, হঠাৎ কি যে হলো, সব কিছু ঘোলা হয়ে এলো, মাথা ঘুরে পড়ে গেলো তানহা।

মাথার ওপর ধূসর রংয়ের সিলিং ফ্যান চলছে, পরক্ষণেই তানহা আবিষ্কার করলো…


চলবে
কেমনে হয়েছে জানাবেন সবাই 🌹

RUHI JAHAN MAYA-রুহি জাহান মায়ার গল্প ঝুড়ি
👆আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইলো

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here