শঙ্খচিল পর্ব-১৬

0
1859

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্ব-১৬

হঠাৎ ধপাস শব্দ শুনে তানহা চমকালো পরক্ষনেই শব্দটা কে অনুসরণ করে বাম পাশের গলির পথে হাটা,শুরু করলো। কয়েক কদম হাটতেই তানহা থমকে দাঁড়ালো।
বাইকে বসা ছেলে দুটোর সাথে মার পিট করছে, এক জন ছেলের হাতের ডানা অলমোস্ট মচকে দিয়েছে, ওই হাত ভালো হবে বলে তানহার মনে হলো না। মারামারি এক পর্য্যায়ে মুখের কাপড় সরে গেলো।
বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা আসলে বৃদ্ধ নয়। নোংরা ঢিলে ঢালা শার্ট আর মুখ পেচানো দেখে তানহা লোকটাকে বৃদ্ধ ভেবেছিলো।
এটা সেই গুন্ডা ছেলেটা, তানহা চোখ চরক করে তাকিয়ে রইলো।

তানহা আবারো এই গুন্ডার পিছু নিয়েছে, জানলে না জানি এবার কি করে বসে ভাবতেই। মাথার ভেতর ভোতা যন্ত্রণা হচ্ছে তানহার৷ ভীষণ বমি পাচ্ছে, তানহা বের হতে গিয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলো। চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেছে এই পথ দিয়ে সে কি ভাবে যাবে। তানহা দৌড়াতে শুরু করলো, হঠাৎ হোচট খেয়ে গর গর করে বমি করে দিলো।
শরীর টা ভীষণ দূর্বল লাগছে। তানহা কোন মতে গলি থেকে বেড়িয়ে এলো। হাটতে হাটতে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো, হঠাৎ দারোয়ান তানহা কে দেখতেই তানহার দিকে এগিয়ে গেলো, তানহা কাধের ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললো,

” কোন সমস্যা আপা? ”

” না। ”

” আপনাকে এমন লাগতেছে কেন, আপা?”

” শরির টা ভালো না। আমাকে একটু বাসা পর্যন্ত দিয়ে আসেন রমিজ ভাই৷ ”

” আপনে আগান, আমি আপনার পিছনে আইতেছি। ” তানহা সিঁড়ির রেলিংয়ে ধরে আস্তে আস্তে উঠতে শুরু করলো।

————————————————

তানহা বাসায় এসে দেখতে পেলো, তার বড় বোন মানহা আরো বেশি অসুস্থ। মানহা চোখে কাপড় দিয়ে ঘুমিয়ে আছে তানহা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিজের রুমে চলে গেলো৷ জামা কাপর নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো।
শাওয়ার বেয়ে ঝরনার মতো পানি পড়ছে, তানহা আবারো অতীতের কথা রোমন্থন করলো,
ওই ছেলে দুটো কে এই পাশান লোকটা কি করবে?
কি হবে ওদের পরিনতি? মৃত্যু? ভাবতেই তানহা কেঁপে উঠলো, এই খুনি লোকটার দ্বারা কোন কিছুই অসম্ভব নয়। যে একবার খুন কর‍তে পারে তার পক্ষে আবার খুন করা অসম্ভবের কিছু না।

হঠাৎ বাথরুমের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে তানহা ভাবনার ঘোরের থেকে বাস্তবে, ফিরে এলো। বাইরে থেকে দাদী বললো,
” তানহা গোসল সেরে খেতে আয়, আমি তোর জন্য অপেক্ষা করছি। ”

” কেনো দাদী তুমি দুপুরে খাও নি? ”

” না। মানহার কাছে বসে ছিলাম।”

” আপু খায় নি? ”

” না এক গ্লাস দুধ কোন মতে খেয়েছে৷ ”

” আচ্ছা তুমি যাও। আমি আসছি৷ ”

শেহতাজ বেগম চলে গেলেন। তানহা গোসল সেরে কিছুক্ষণ বসে রইলো। বমি হবার কারনে মুখটা তেঁতো হয়ে গেছে, কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না, তবুও তানহা দাদীর কথা ভেবে ডাইনিং রুমে গেলো। খাওয়ার রুচি না থাকার কারনে, কোন মতে ভাত খেয়ে তানহা উঠে গেলো।
মানহার রুমে মানহা কে দেখতে গেলো, তার বোন এখনো ঘুমিয়ে আছে৷ ভ্যাগিস আপুর পরিক্ষা শেষ নয় তো জ্বর নিয়ের পরতে বসতে হতো।
তানহা বিছানার পাশের চেয়ার টায় বসলো। বাইরে থেকে দক্ষিনা বাতাস বইছে, বাতাসের সাথে সাথে ডালিম গাছের ডাল টাও দুলছে৷
তানহার বেলকনির দরজা খুলে বাতাসে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা করলো তবে তানহা দরজা খুললো না। মানহার পাশেই বসে রইলো।

—————————————————

বাতাসের দোলে সাদা পর্দা গুলো নড়ে উঠলো, সাথে সাথেই এক ফালি সূর্যের আলো মানহার চোখে মুখে গিয়ে পড়লো। বার বার পর্দার দুলনি কারনে মানহার ঘুম ভেংগেলো। আড়মোড়া হয়ে চোখ মেলতেই ডালিম গাছের ডালের দিকে চোখ পড়লো।
ডালিম গাছের লাল সবুজ মুকুল ধরেছে। ডালিমের প্রথম ফলন হবে তার রুমে, বিছানার বসে ক্ষানিক ডালিমের ভবিষ্যৎর কথা চিন্তা করলো মানহা।
হঠাৎ ভু ভু শব্দে বালিশের নিচের থেকে ফোনটা বের করলো, বেলা সারে দশটা বাজে একটা আননোন নম্বর থেকে কল এসেছে, মানহা ফোনটা রিসিভ করে ” হ্যালো। বলতেই ক্ষানিক পরে একজন পুরুষ সুকন্ঠে বললো,
” এখনো ঘুম থেকে ওঠেন নি? ”

মানহা থমকে গেলো, এই কন্ঠ তার খুব চেনা। শুকনো ঠোঁট টাকে জ্বিভের সাহায্য ভিজিয়ে মানহা বললো, ” আসলে কাল বাড়ি ফেরার পর জ্বর শর্দি লেগেছিলো। ”

” এখন কেমন আছেন? ”

” আছি ভালো। তবে এখন ভালো লাগছে না। ”

” রেস্টে থাকুন। ভালো মতো খাওয়া দাওয়া করে, ঔষধ খান। ভালো হয়ে যাবেন। ”

” আচ্ছা। আমাকে ফোন ক…” মানহা কথা শেষ করার আগেই হঠাৎ ওয়াহাব বললো উঠলো,
” আমাকে এক্ষুনি ইমারজেন্সি তে যেতে হবে। পড়ে কথা বলছি।”

” আচ্ছা। “, বলে মানহা ফোনটা কেটে দিলো।
এতো অল্প কথা মানহার মন ভরলো না। মানহার ভীষণ ইচ্ছে করেও ওয়াহাবের কাধে মাথা রেখে বসে থাকতে। মানহার ইচ্ছে করে ওয়াহাবের হাত ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করে দিতে৷ মানহার এই ইচ্ছে গুলো কি পূরণ হবে? হয়তো না। এই ব্যাস্ত শহরে৷ ব্যাস্ত মানুষের ভীরে ইচ্ছে গুলো এক সময় মিলিয়ে যাবে। ইচ্ছা গুলো ইচ্ছাই রয়ে যাবে৷ না হয় সত্যি মানহার ইচ্ছা গুলো পূরণ হবে।

মানহা ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে গেলো, তানহাও আজ কলেজে যায় নি। টেবিলে বসে, মানহার জন্য মালতা কাটছে, সবাই মিলে এক সাথে নাস্তা সেরে নিলো।
বিকেল বেলা শরীর ভালো হওয়া স্বত্তেও মানহা শিহাব কে পড়াতে গেলো না, তানিয়া আপু নিজেই মানহা কে বলেছে, বাসায় কিছু দিন রেস্ট নিতে।
মানহা বিকেল বেলা শুয়ে শুয়ে ওয়াহাবের কথা ভাবছে ঠিক তখনি হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ হলো।

রহিমা খালা দরজা খুলবে, সে আশায় মানহা উঠলো না। তবে পর পর পাঁচ বার কলিং বেল বাজতে, মা নহা নিজে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজায় ওয়াহাব দাঁড়িয়ে আছে, মানহা প্রথমে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারলো না, বিড় বিড় করে বললো, ‘আজকাল এই পাজি টা আমার কল্পনায় ও উপস্থিত হয়ে যাচ্ছে। ধুর!” চোখ ডলে সামনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো সত্যিই ওয়াহাব দাঁড়িয়ে আছে, তার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে। মানহা অবাক হয়ে বললো, ” আপনি? ”

” জ্বি আমি। ” মানহা খেয়াল করে দেখলো হাতে দুটো জ্যুসের বোতল নিয়ে শিহাব ও দাঁড়িয়ে আছে। শিহাব হালকা হেসে৷ একটা জ্যুসের বোতল এগিয়ে দিয়ে বললো,
” মিস এটা তোমার জন্য। ”

মানিহা ফিনিক হেসে , জ্যুসের বোতল টা হাতে নিয়ে বললো, ” ভেতরে আসুন।”

ওয়াহাব এবং শিহাব বাসার ভেতরে ঢুকলো। দুজনেই সোফায় গিয়ে, বসলো। মানহা কি বলবে বুঝতে পারছে, তোতলাতে তোতলাতে বললো, ” হঠাৎ? ”

ওয়াহাব হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললো, ” আসলে আজীমপুর পাত্রী দেখতে এসেছিলাম। আপনার বাসার গলি পার হতেই আপনার কথা মনে পড়লো। ”

মানহা ঢোক গিলে বললো, ” কার জন্য মেয়ে দেখতে গিয়েছিলেন? ”

ওয়াহাব কোর্ট টা ঠিক করে বললো, ” আমার জন্য। ”

মানহা মুখ ফসকে বলে ফেললো, ” কিহহহ৷ ”

ওয়াহাব মানহার এক্সপ্রেশন দেখে থতমত খেয়ে তাকিয়ে রইলো। মানহা দুঃখী দুঃখী মুখ করে বসে রইলো। মনে মনে ওয়াহাব হাসলো, তবে প্রকাশ করলো না।
কথা বলার শব্দ পেয়ে শেহতাজ বেগম বাসার রুমে উঁকি দিলেন। ওয়াহাবে কে দেখে বেশ অবাক হলেন। বসার রুমে যেতেই ওয়াহাব দাদীকে সালাম দিলো। মানহার ধ্যান ভাংলো….


চলবে
কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই 🌹

আমার লেখা সকল গল্পের লিংক Story by Ruhi jahan পেইজে পাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here