#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================
❝ ফিরে_আসা ❞
———————-
লেখিকা- Umma Hurayra Jahan
পর্ব-১৭
দরজা খুলার আওয়াজ শুনে ফাতেমা চমকে উঠলো।
চোখ খুলে দেখল মাহিন দরজা খুলে ভিতরে এসেছে।মাহিনকে দেখে ফাতেমা খাট থেকে নেমে দাড়ালো।ঘরে ড্রিম লাইট জ্বালানো ছিলো। তাই মাহিন ঘরের লাইটা জ্বালালো।
লাইট জ্বালাতেই মাহিন চোখের সামনে ফাতেমাকে দেখতে পেল।এই প্রথম মাহিন ফাতেমাকে কাছ থেকে দেখছে। এর আগে মাহিন ফাতেমাকে একবারের জন্যও দেখে নি।ফাতেমাকে দেখে মাহিন হা করে তাকিয়ে আছে।
ফাতেমা- আসসালামুআলাইকুম।
ফাতেমা দেখছে মাহিন তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
মাহিন এর আগে ফাতেমার মতো সুন্দরি মেয়ে দেখে নি।মিমিও অনেক সুন্দরি কিন্তু ফাতেমার মতো না।
ফাতেমা- কি হলো সালামের জবাব দিলেন না যে।সালামের জবাবটা দিন।কারন সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব।না হলে গুনাহ হবে।
ফাতেমার কথায় ঘোর কাটলো মাহিনের।
মাহিন সেই মুহূর্তেই ফাতেমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।
মাহিন মনে মনে বলছে “এ আমি কি করছি?আমি এই মেয়ের দিকে কেন তাকিয়ে আছি। হোক সে অনেক সুন্দরি তাতে আমার কি? আমি তো মিমিকে ভালোবাসি।
মিমিকে ছাড়া আমি কারো দিকে তাকাতে পারবো না।এ আমি কি করছি?
ফাতেমা – কি হলো কোন কথা বলছেন না যে।?সালামের জবাবটা দিন।
আর এতো রাত হয়ে গেছে আপনি এতো রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলেন?কেউ কি বিয়ের দিন নতুন বউকে রেখে এতো রাত পর্যন্ত বাইরে থাকে??
ফাতেমার এই কথাগুলো মাহিনের গায়ে কাটার মতো বিদছে।
ফাতেমা- আচ্ছা এসেছেন তো এসেছেন এবার ওযুটা করে আসুন।আমরা দুজনে মিলে দুরাকাত নফল নামায আদায় করে আমাদের নতুন জীবন শুরু করবো।
আর হে আমি আপনার জন্য একটি দোয়া লিখে এনেছি এটা আপনি আমার মাথায় হাত রেখে পড়বেন।
মাহিন সব কিছু দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুনেই যাচ্ছে কিছুই বলছে না।শুধু রাগে গদগদ করছে। রাগে মাহিনের চোখ লাল হয়ে গেছে।
মাহিনচিৎকার করে জোরে ধমক দিয়ে বললো
এই মেয়ে অনেক ক্ষন ধরে তোমার বকবকানি শুনেই যাচ্ছি।কি মনে করেছো কি হে???তোমার মতো গাইয়্যা ক্ষেত কে আমি আমার নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছি??আমি তোমাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছি????তোমার সাহস কি করে হয় আমার উপর হুকুম চালানোর উপর ।?
ফাতেমা তো মাহিনের এসব কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো।ফাতেমা কিছুই বুঝতে পারছে না যে এসব কি হচ্ছে ওর সাথে।
মাহিনের চোখ রাগে লাল হয়ে গেল
মাহিন- আমি তোমাকে নিজের ইচ্ছায় না আমি তোমাকে বাবার ইচ্ছায় বিয়ে করেছি। আর নতুন জীবন?????হু……..
কোন দিনও আমার কাছে স্ত্রীর মর্যাদা পাবে না।তুমি কি মনে করেছো তোমার মতো একটা ক্ষেত আমার বউ হওয়ার যোগ্য???কোন দিন আমার কাছ থেকে এসব কিছু আশা করো না । আর এসব জ্ঞান আমাকে না দিয়ে কুকুর কে গিয়ে দাও । আর আমার কাছে কোন দিন ভালো ব্যবহার আশা করো না।
ফাতেমা বোবার মতো শুধু তাকিয়ে আছে মাহিনের দিকে।
মাহিন- আর কোন দিন আমার সাথে এক খাটে থাকার কল্পনাও করো না। আর তোমার ধর্মের জ্ঞান নিজের কাছেই রাখো।
ফাতেমার চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে আর ফাতেমার দুনিয়াটা যেন এক নিমিশেই উলট পালট হয়ে গেলো।
চোখ দিয়ে শুধু টপ টপ করে পানি পড়ছে।
মাহিন- [রেগেমেগে] এই কথাগুলো যেন আমার পরিবারের কেউ না জানে এটা বলে দিলাম।
এই বলে মাহিন বেলকনিতে চলে গেল।
ফাতেমা মাহিনের এই ব্যবহার দেখে দাড়ানো থেকে ফ্লোরে বসে পড়লো। আর ফাতেমার পৃথিবী যেন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।
ফাতেমা – হে আল্লাহ ………এটা কি হলো আমার সাথে????
হে আল্লাহ তুমি কি আমার ধৈর্য্যর পরিক্ষা নিচ্ছো???
হে আল্লাহ …..
তুমি আমার সহায় হও ।ফাতেমা কাদতে কাদতে কথাগুলো বলছে।
ফাতেমার মন চায়ছে চিৎকার করে প্রাণ খুলে কাদতে । কিন্তু সে অপারক। কারন পরিবারের সবাই তাহলে জেনে যাবে।
ফাতেমা কতক্ষন ফ্লোরেই অসহায়ের মতো বসে রইলো নি:শ্চুপ হয়ে। হাজারো বেদনা কষ্ট বুকে নিয়ে ফাতেমা পড়েই রইলো একি জায়গায়।
কিছুক্ষন পরে মাহিন এসে শুয়ে পড়লো বিছানায়।ফাতেমার দিকে একটি বারের জন্যও তাকালো না।
এই নি:স্তব্ধ শহরে ফাতেমার মতো দুখি মনে হয় এখন একজন ও নেই
হয়তো সেই মেয়ের মতো দু:খি আর কেউ নেই যাকে বাসর রাতে তার স্বামী এরকম খারাপ ব্যবহার করে।
ফাতেমা চোখের পানি মুছে উঠে দাড়ালো।
ফাতেমা মনে মনে বললো “ আমাকে ভেঙে পড়লে চলবে না । এটা আমার রবের নিকট হতে প্রদত্ত পরিক্ষা ।কারন আল্লাহ বান্দাকে তার ইমান পরিক্ষা করার জন্য নানা কিছু দিয়ে পরিক্ষা করেন।হয়তো এটাই আমার পরিক্ষা। আমি কিছুতেই হাল ছাড়বো না ।আমি কিছুতেই এই পরিক্ষায় অকৃতকার্য হবো না।
এই বলে ফাতেমা ওযু করে সোজা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্য নামাযে দাড়িয়ে গেল।
নামাযের মোনাজাতে
ফাতেমা- হে আল্লাহ আমি তোমার এক ক্ষুদ্র বান্দি ,গোনাহগার বান্দি আমাকে তুমি সাহায্য করো ।আমাকে তুমি ধৈর্য ধারন করার ক্ষমতা দাও। আমাকে তুমি শক্তি দাও। আমি তোমার কাছে পানাহ চাই ।তুমি উনাকে হেদায়েত করো। তুমি উনাকে ফিরিয়ে আনো তোমার ছায়া তলে। তিনি যাতে ফিরে আসে দ্বীনের পথে। সেই ফিরে আসা যেন হয় ইমানের সাথে। আমি যেন উনার সাথে জান্নাতে যেতে পারি। হে আল্লাহ আমি যেন উনাকে ফিরিয়ে আনতে পারি হেদায়েতের পথে। আমি যেন হাল না ছাড়ি।
এই কথাগুলো বলছে আর চোখ বেয়ে পানি পরছে ফাতেমার।
ফাতেমা তাহাজ্জুতের নামায পড়ে জায়নামাজে বসে রইলো। আজ ঘুম নেই ফাতেমার দুই নয়নে।
হঠাৎ করে দূর থেকে ভেসে আসছে মিষ্টি মধুর আজানের ধ্বনি ।ফাতেমা আজানটা শুনে কেমন জানি মনে এক প্রশান্তি খুজে পেল। আজানের প্রত্যেকটা বাক্য ফাতেমা মনযোগ দিয়ে শুনলো আর আযানের জবাব দিলো। কারন আযানের জবাব দেওয়া যে ওয়াজিব।
আযানের জবাব দিয়ে ফাতেমা উঠে দাড়ালো।
ফাতেমা মনেমনে বলছে মিস্টার আপনি আমাকে যতই অপছন্দ করেন না কেন আমি তো আর হাল ছাড়ছি না ।আমাকে তো চিনেন না আমি খুব দুষ্ট একটা মেয়ে। হিহিহি।আপনাকে কিভাবে দ্বীনের পথে আনতে হয় সেটা আমি ভালো করেই জানি।আপনি যতই অপমান অবহেলা করেন না কেন আমি তো আপনাকে ছাড়ছি না মিস্টার ।আজ থেকে আমার মিশন শুরু। হিহিহিহি
ফাতেমা- এই যে মিস্টার শুনছেন?এই যে মহারাজ শুনতে পারছেন আযান পড়েছে উঠুন ।নামাযের সময় হয়েছে উঠুন।
মাহিন গভীর ঘুমে একবার এদিকে ঘুরে আরেকবার ওদিকে ঘুরে।
মাহিনের আর উঠার নাম নেই।
ফাতেমা – বুঝতে পেরেছি।আপনি এভাবে উঠবেন না।এবার অন্য পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
এই বলে ফাতেমা বাথরুম থেকে মগে করে পানি নিয়ে এসে মাহিনের মুখে ছিটিয়ে দিলো।
মাহিন হকচকিয়ে উঠলো।
মাহিন- কে….কে….???
ফাতেমা – হিহিহি।আরে আরে আমি আপনার বউ।
মাহিন- How. Dare you?তোমার সাহস কি করে হয় এতো সকালে আমার মুখে পানি দেওয়ার জন্য।আর তুমি এখানে কি করছো।???
{মাহিন রেগে গিয়ে কথাগুলো বললো।}
ফাতেমা – আরে এতে সাহসের কি হলো।আমি তো আপনার বিয়ে করা একটা গুলুমুলু কিউট বউ।
মাহিন- কি????? বউ?????
তোমার সাহসের আর বেহায়াপনার তো তারিফ করতে হয়। মনে হয় কালকে রাতের অপমানটা কম হয়ে গেছে। তাই না?????
ফাতেমা- হিহিহি।এতে বেহায়াপনার কি হলো। আমি তো আমার স্বামীকে ডাকছি অন্য কাউকে তো না। আর এখন তো ফজরের সময়। আর যে স্ত্রী তার স্বামীকে ফজর. এর সময় মুখে পানি ঝাপটা দিয়ে ঘুম ভাঙায় তাহলে তাদের মধ্যে মোহাব্বত বাড়ে।
মাহিন- এই সকাল সকাল মুডটা নষ্ট করার কি মানে?????তোমার সাহস তো কম না। আমি তো তোমাকে বলেছি যে আমি তোমাকে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করিনি। সেটা কি ভুলে গেছো।
[মাহিন রেগে গিয়ে কথাগুলো বললো।}
ফাতেমা – আমি এতো কিছু বুঝতে চাই না । এখন ফজরের নামাযের সময় হয়েছে বিছানা ছেড়ে উঠে ওযু করে আসুন।আজ একসাথে নামায পড়বো। কিন্তু কাল থেকে মসজিদে গিয়ে নামায পড়তে হবে।কারন মসজিদে গিয়ে নামায পড়ার অনেক ফজিলত।আমি আরেকদিন আপনাকে এগুলো সব বুঝিয়ে বলবো। এখন তাড়াতাড়ি উঠুন তো দেখি।
মাহিন- এই তুমি বয়রা নাকি???কথা কি শুনতে পাও না? অপমানটা কি কম হয়ে গেছে নাকি আরো করতে হবে????
মাহিন ফাতেমাকে অপমানের উপর অপমান করেই চলেছে কিন্তু ফাতেমা সব কিছু সহ্য করছে আল্লাহর দিকে চেয়ে ।অপমানের কারনে ফাতেমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু সে এমন ভাব করছে যে তার কিছুই হয়নি ।
ফাতেমা – আপনি এবার উঠবেন কি?????নাকি…………
চলবে ইনশাল্লাহ…..