কখনো রোদ্দুর কখনো মেঘ পর্ব-২

0
1569

কখনো রোদ্দুর কখনো মেঘ
পর্ব ২
__________________
২।
পলাশ দিঘির গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট নদী অহনা। সারাবছর মোটামুটি ভাবে জল পূর্ণ থাকে। নদীর দু’পাশে সবুজের অভয়ারণ্য আর অসংখ্য গ্রাম রয়েছে। নদীর এপারে এবং ওপারে চওড়া দুটো রাস্তা শহরের দিকে চলে গেছে। আবার অনেকটা দূরত্ব বরাবর নদীর উপর গড়ে উঠেছে ছোট্ট ছোট্ট ব্রিজ, খুব সহজে পারাপার করা যায়। ক্ষেতের পর ক্ষেত চাষীদের জমি রয়েছে। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই জমিতে চাষ করে; কিংবা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। পলাশ দিঘি থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে রয়েছে ছোট্ট শহর। শহর বলা ভুল। শহর আর গ্রামের মিলিত রূপ। চওড়া চওড়া রাস্তা বড়ো বড়ো বিল্ডিং এর পাশাপাশি রয়েছে সবুজের সমারোহ। আশেপাশে সমস্ত গ্রামের ভরকেন্দ্র এই ছোট্ট শহর। প্রায় সমস্ত ধরনের জিনিস এখানে পাওয়া যায়। গ্রাম থেকে উঁচু ক্লাসের ছাত্র ছাত্রীরা শহরে পড়তে আসে। সারাদিন কোলাহলে ভরপুর থাকে। বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে বসবাস করতে দেখা যায়। কুয়াশাময় রাত। নদীর পাশ দিয়ে খুব দ্রুত বেগে হাঁটছে স্নেহা। ভীষণ রকমের উত্তেজিত। তার প্রেমিক বিক্রমের সঙ্গে দেখা করবে। উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রী স্নেহা, গ্রামে সাইন্সে তেমন কোনো ভালো শিক্ষক নেই। তাই রোজ শহরে পড়তে আসে। ইলেভেনে কয়েক মাস প্রাইভেট পড়ার পর তার সঙ্গে পরিচয় হয় বিক্রমের। দুজনেই সমবয়সী। প্রথম দেখাতেই প্রেম নয়। এমনি স্বাভাবিকভাবে বন্ধু হয়ে কথা হতো। হঠাৎ একদিন বিক্রম স্নেহাকে প্রপোজ করে বসে। সমস্ত শরীরে কাঁটা ফুটে উঠেছিল স্নেহার। কি বলবে উত্তর খুঁজে পায়নি। মৃদু কন্ঠে বলে ছিল,’সময় লাগবে ভাবার।’
‘ভালোবাসা ভেবে আসে না।’
‘না ভেবেও ভালোবাসা হয় না।’
আর কথা না বাড়িয়ে বাড়ি ফিরে আসে। ভেবেছিল ঘটনাটি সম্পূর্ণ কাকতালীয়। তার পক্ষে প্রেম করা সম্ভব নয়। বাবা জানতে পারলে আস্ত রাখবে না। এখন ক্যারিয়ার গড়তে হবে। পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়া উচিত। কিন্তু বিক্রমের কথা বলার ছন্দ, আচরণ তাকে বারবার ব্যাকুল করে তোলে। প্রথম কোনো পুরুষের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলা। প্রথম প্রেমের প্রস্তাব, সহজে ভুলতে পারল না সে। কখন নিজেই বিক্রমের মায়ায় জড়িয়ে গেল বুঝে উঠতে পারল না। কয়েকটা মাসের মধ্যে বিক্রমের প্রস্তাবে রাজি হয়। তারপর শুরু হয় একে অপরের হাত ধরে ঘোরা। চোখে লাল নীল স্বপ্নের আঁকিঝুকি। লুকিয়ে লুকিয়ে একে অপরকে দেখা, চোখে চোখ পড়লে লাজুকতা। আলাদা এক আবেগ, নতুন ছন্দ, একসঙ্গে কিছু মুহুর্ত কাটানোর জন্য তীব্র ব্যাকুল হয়ে ওঠা। প্রাইভেট ফাঁকি দিয়ে দেখা করতে যাওয়া। বাবা মাকে মিথ্যা কথা বলা নিত্যনতুন হয়ে উঠেছে।সাদামাখা অগোছালো মেয়েটি নিজেকে গোছাতে শুরু করেছে। স্নেহা আজও এমনটা করল। প্রথম প্রাইভেটটি সম্পন্ন করেছে কিন্তু দ্বিতীয় প্রাইভেট করল না। স্নেহা কিছুটা এগিয়ে যায় তারপর পেছন ঘুরে দেখে। প্রায় বার তিনেক এমনটা করল। আজ বিক্রমের সঙ্গে প্রথম দেখা করতে যাচ্ছে তেমনটা নয়। একটা বছর ধরে এমন করে আসছে। কিন্তু আজকের দিনটি কেমন একটা আলাদা। মনে হচ্ছে পেছন থেকে তাকে কেউ ফলো করছে। শতভাগ নিশ্চিত, কেউ একজন আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে দেখছে। স্নেহা বুঝতে পারছে না, তার উদ্দেশ্য কি? তবুও কারোর অনিশ্চয়তায় নিজেকে স্থির রাখল না। দ্রুত গতিতে নদীর পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল। কিছুটা হাঁটার পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। স্নেহার চোখ মনের মানুষকে খুঁজে পেয়ে গেছে। বিক্রম মুচকি হাসি দিয়ে তার কাছে চলে এসে হাত জড়িয়ে ফেলে। এত ঠান্ডার মধ্যেও স্নেহা হাত গরম। আশ্চর্য হয় বিক্রম।
“হাঁপাছো কেন?”প্রশ্ন করল বিক্রম।
“কই! না তো।” স্নেহার কণ্ঠস্বর একটু ভয়ার্ত আর কাঁপা কাঁপা।
“সত্যি করে বলতো কি হয়েছে?”
“তেমন কিছু না। মনে হচ্ছে,কেউ একজন আমাকে ফলো করছে। ভয় পেয়ে গেছিলাম।” স্নেহা বিক্রমের অনেক কাছে চলে আসে। বিক্রম স্নেহার বাহু ধরে পুরো শরীর কাছে টেনে আনে। একে অপরের ওপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। হেসে ওঠে বিক্রম। স্নেহা লজ্জায় পড়ে যায়। মাথা নিচু করে ফেলে। খুব ধীর গলায় বিক্রম জানতে চাইলো, তাকে কে ফলো করছিল? স্নেহা কোনো উওর দিতে পারলো না। সে নেজেই জানে না তার পেছনে কে আসছিল। অন্ধকারে তার মনের ভুল বলে কথা এড়িয়ে যায় বিক্রম। কিন্তু স্নেহা বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিল না। মনের কোঠায় অনেক প্রশ্ন জমা হয়েছে। সেগুলো আড়াল করেতে পারলো না। মনের মধ্যে প্রশ্ন জমিয়ে রেখে তাদের গন্তব্যের দিকে হাঁটতে লাগল..
শীতের রাতে কুয়াশার মাঝে
নদীর ধারে প্রকৃতির মাঝে
তুমি প্রেমিকা আর আমি প্রেমিক।
দুটি শীতল হাত উষ্ণ হয়েছে
একে অপরের ছোঁয়াতে।

খাবারের ঢাকনা খুলতেই অদ্ভুতভাবে মুখ প্যাঁচালো আর্য। রোজ রোজ আলু মাখা ভাত খেতে ভালো লাগে না। খাবারের ঢাকনা খুলে বুঝতে পারে তার বাবা এখনও বাড়ি ফেরেনি। বাড়ি ফিরলেও,তিনি খাবার খাননি। শীতকালে গ্রাম বাংলার মানুষ খুব তাড়াতাড়ি রান্না বান্না শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে। নিশি জাগতে ভালোবাসে না। শীতকাল তাদেরকে ঢিলে করে তোলে। অন্নপূর্ণা দেবী বিকেল থেকেই উনুনে রান্না চড়িয়ে ছিলেন। সন্ধ্যে নামার কিছুটা সময় পর খাবার খিয়ে সারাদিনের ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিয়েছেন বিছানায়। উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র আর্য খুব শান্তশিষ্ট সাদাসিদে। নিজের কাজ অন্য কেউ করে দিক সেটা কখনোই চায় না। প্রয়োজন ছাড়া কারোর সঙ্গে কথা বলে না। কখনো কারোর কাছে আবদার পর্যন্ত করে না। আর্যর খামখেয়ালী মনোভাব, তাকে পৃথিবীর একটা কোনে বন্দি করে রেখেছে।এমন কি মা ছেলের যে গভীর সম্পর্ক সেইটুকু পর্যন্ত নেই। গর্ভে ধারণ করলেও উনার প্রতি কখনো মাতৃত্ব অনুভব করেনি। সব সময় দূরত্ব বজায় রাখে। এর পেছনে শুধু আর্য নয়, অন্নপূর্ণা দেবীও সমান দায়ী। সামান্য ভাত নিয়ে খেতে বসল। দু’মুঠো ভাত মুখে তুলতে না তুলতে আগড় খোলার শব্দ কানে ভেসে আসে। তারপর দরজায় টোকা পড়ে। বুঝতে পারে বাজার থেকে বাবা এসেছেন। দরজা খুলে দেয়। আর্যের একমাত্র প্রাণের মানুষ বাবা। উনাকে দেখলেই পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ ভুলে যায়। বেশ লম্বা রোগা, তামাটে বর্ণ বিশিষ্ট মানুষটিকে বড্ড ভালোবাসে আর্য। তবে, এই বয়সেও উনার মাথায় বেশ ঘন আর মজবুত চুল রয়েছে। তিনি কখনো পরিশ্রম ছাড়া বসে থাকেন না। সব সময় কোনো না কোনো কাজে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। ব্যস্ত থাকতে ভালোবাসেন। কাজ করতে ভালোবাসেন। ছেলেকে দেখে এক পলক হাসি দিলেন। ভেতরে প্রবেশ করে নির্দিষ্ট জায়গায় বাজার ব্যাক রাখলেন। আর্য বাবার কাছে এগিয়ে গেল। জিজ্ঞেস করল,”এখনই খাবে?”
“হ্যাঁ, মা কোথায়?”
“ঘুমিয়ে পড়েছে।” অশোক বাবু চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। কোনো কথা না বলে জামার বোতাম খুলতে থাকলেন। জামার বোতাম খোলার অর্থ বুঝতে বাকি থাকল না আর্যর। এমনটা নিত্যদিনই ঘটে। খিড়কির দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসলো আর্য। বাইরে‌ রাখা বালতির জলে ভালো করে হাত-মুখ দ্বিতীয়বারের মতো ধুয়ে নিল। বাবার জন্য খাবার বাড়লো। তারপর দুজন মিলে খেতে বসলো। কোনো কথা নেই। চুপচাপ বসে খেয়ে যাচ্ছে। বেশ খানিকক্ষণ নীরবতা কাটিয়ে, অশোক বাবু জোরে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লেন। আদুরে কন্ঠে বললেন,”সকালে টিউশন আছে?” আর্য চোখ তুলে বাবার দিকে তাকালো। মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সুচক উত্তর প্রদান করলো।
“সকালে একটু তাড়াতাড়ি উঠে পড়বি, বাগানে জল দিতে হবে।”এতক্ষণে আর্যের খাওয়া শেষ। বাবার শেষ কথাটি একদম পছন্দ হয়নি। শীতকালে ভোরে ওঠা কতটা দুষ্কর সে জানে। তারপর দু’ঘণ্টা ধরে নিজেকে জলের সঙ্গে যুক্ত রাখা সহজ নয়। বাগানে জল দেওয়ার পর তাকে আবার আট কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে শহরে (টিউশন) যেতে হবে। একটুকু শরীর নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কাজ করা তার পক্ষে অসম্ভব। তবুও কখনো বাবার মুখের উপর কথা বলার সাহস হয়নি। বাড়ির আর্থিক অবস্থার তেমন টা ভালো নয়। আঠারো বছরের যুবক। তাকে বাড়িতে কোনো না কোনো কাজ করতে হবে। সে যদি বাগানে জল দিতে রাজি না হতো, অশোক বাবু কিছু বলতেন না। ছেলের পিঠে হাত চাপড়ে দিতেন। কিন্তু আর্য সেটা কখনো করতে পারে না। সে জানে, তার বাবা খুব পরিশ্রমিক মানুষ। যখন তিনি পেরে ওঠেন না তখন তিনি ছেলের কাছে সাহায্য চান। ছেলে হিসেবে তার কর্তব্য বাবাকে সাহায্য করা। সে যদি সাহায্য না করে, তাহলে বাবা ভোর হওয়ার অনেক আগে বাগানে চলে যাবেন। একা একা বাগানে জল দেবেন। যেটা আর্যের কাছে শোভনীয় নয়। খাওয়া শেষ হবার সত্বেও ছেলেকে বসে থাকতে দেখে অশোকবাবু বলে উঠলেন,”যা ঘুমিয়ে পড়।”
“না…” আর্যে মুখের কথা কেড়ে নিয়ে তিনি দ্রুত বললেন,”আমি থালা-বাসন পরিষ্কার করে দেবো। তুই ঘুমিয়ে পড়। নিঃশব্দে উঠে আসলো। হাতমুখ ধুয়ে নিজের রুমের মধ্যে প্রবেশ করল। তারপর দরজা বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে একটা জোরে বিকট শব্দ হলো। যেটা প্রতিনিয়ত ঘটে। তার রুমের দরজা বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে একটা আওয়াজ হয়। আশোক বাবু জোরে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লেন। আর্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর অনুমান করল বাইরের আলো নিভে গেছে। বাবা ঘুমিয়ে পড়েছেন। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। বাবারা মনের করেন, তাদের জীবনের সবচেয়ে বড়ো ব্যর্থতা হলো,সন্তানের চোখের জল মুছতে না পারা। সন্তানের চোখের জল মুছে না দেওয়ার মতো ব্যর্থতা কি অন্য কোনো দ্বিতীয় ব্যর্থতা পৃথিবীতে আছে? তাঁরা সন্তানের চোখের জল সহ্য করতে পারেন না। অন্তর থেকে শেষ হয়ে যান। নিজের সব কিছুর বিনিময় সন্তানকে খুশি রাখতে চান। কিন্তু তাঁরা কখনো বোঝে না সন্তানরা বাবার চোখের জল কখনোই সহ্য করতে পারে না। বাবার এক ফোঁটা চোখের জল তাদেরকে কতটা দুর্বল করে দেয়। তাদের সমস্ত ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। তারা কখনোই চায় না, বাবার চোখের কোনে জলের ফোঁটা জমুক।

ঘন কুয়াশা তখনও পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে শুরু করেনি। বরং আরও জাঁকিয়ে জমতে শুরু করেছে। খুব ভোরে ক্ষেতের জমির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন তারা। গায়ে মোটা জ্যাকেট জড়িয়ে রেখেছে। মাথায় টুপি। তবুও কনকনে ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। উত্তরা হওয়া কম্পিত করে তুলছে তাদেরকে। গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। চার বিঘা ক্ষেতের জমি তাদের। যার মধ্যে দুই বিঘা জমি প্রায় সময় সবজি চাষ হয়ে থাকে। দু’দিন আগেই ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। সবজি গাছের পাতাগুলো যেন বরফে জমে গেছে। পাতা গুলোর উপর সাদা আস্তরণ পড়ে আছে। পরিবেশটি দেখতে যতটা মনমুগ্ধকর,ভেতরের কষ্টটা ঠিক ততটা অসহ্য কর। অশোক বাবুর সংসার ক্ষেতের জমির উপর নির্ভরশীল। এখানে ভালো ফলন হলে তাদের দিন কাল ভালো মতো করে কেটে যায়। ফসল ভালো না হলে তাদের সংসারে অনটন চলে আসে। যদিও বেশির ভাগ চাষী তাদের ন্যায্য মূল্য কখনোই পায় না। কখনো বন্যা কখনো খরায় তাদের তিলে তিলে বড়ো করা সবজির বাগান নিমিষে শেষ হয়ে যায়। আবার কখনো ন্যায্য দাম পায় না। তবুও চাষীদের একটা জেদ রয়েছে। নিজেদের জেদের কারণে বছরের পর বছর লস হওয়ার পরেও চাষবাস বন্ধ করে না। যদিও অতিরুক্ত লোকসানের কারণে সরকার থেকে অনেকগুলো আর্থিক অনুদান ব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলো সম্পূর্ণরূপে না পৌঁছালেও কিছুটা পৌঁছায়। কিন্তু আশোক বাবু কখনো সরকারের কোনো অনুদান গ্রহণ করেন না। কারোর দয়ায় তিনি বড়ো হতে চান না। তিনি মনে করেন, কোনো মানুষ কাউকে সাহায্য করলে সে একটু একটু করে ওই মানুষটির উপর একটা অধিকার গড়ে তুলে। নিজের ছেলে মেয়েকে নিজের ঘামের মূল্য দিয়ে বড়ো করেছেন। আজ গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে কিছু সাহায্য করবে। পরশু সেই সাহায্য নিয়ে খোঁটা দেবে। কিন্তু সাহায্য টা তো সরকারের পক্ষ থেকে ছিল। সেখানে কথা শুনানোর প্রসঙ্গ কি করে আসতে পারে? কিছু স্বার্থসিদ্ধি,লোভী মানুষের কাছে প্রসঙ্গ আসার কোনো প্রয়োজন হয় না। তারা এমনিতেই সৃষ্টি করে ফেলেন।সেই জটিল গোলকধাঁধায় কখনো প্রবেশ করতে চাননি তিনি। তাইতো,সরকারের সমস্ত অনুদান অবহেলা করে আসছেন বছরের পর বছর। পাইপ ঠিকমতো বিছিয়ে মেশিন চালু করলেন। একটার পর একটা গাছে জল দিতে লাগলেন। গাছে জল দেওয়ার সাথে সাথে নিজের পায়েও জল পড়লো। শীতে থর থর করে কেঁপে উঠলো। তবুও থামার উপাই নেই। মিনিট দশেক জল দেওয়ার পর সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। ঠান্ডা কে আর ঠান্ডা মনে হয় না।পা-হাত ইটের মতো শক্ত হয়ে যায়। ঘন্টাখানেক জল দেওয়ার পর তারা মাঠের একটা কোনায় গিয়ে বসলেন। কিছুটা সময় বিশ্রাম নেবেন। তখনো আকাশ পরিষ্কার হয়নি। হালকা আলোর ছটা দেখা দিয়েছে।আশোক বাবু ধীরে-সুস্থে ছেলেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কিছু কিছু কথা বলছেন। তিনি চান, ছেলে সব সময় শক্ত থাকুক। তার সমবয়সি বন্ধুরা কেউ হয়তো এমন পরিশ্রম করে না। সে করছে। তার খারাপ লাগা ব্যাপারটি স্বাভাবিক। সেই খারাপ লাগাকে বিবর্ণ করতে চান অশোকবাবু। সবার জীবনে নানান সমস্যা আর চাপ থাকে, দায়িত্ব থাকে। সবার কাছে সবার নিজের সমস্যা এই পৃথিবীর বড় সমস্যা বলে মনে হয়। শুধু যে মানুষ গুলো সেই সমস্যা, দায়িত্ব আর কাজের চাপ গুলোকে নিয়ে সারা জীবন অভিযোগ করে কাটিয়ে দেয়। সে হয় জীবনের সব সময় বিফল মানুষ। তার জীবনে কোনদিনও আনন্দ আর সাফল্য আসতে পারে না। সাফল্য তারাই পায়, যারা সেই সমস্যা গুলোকে নিয়ে অভিযোগ না করে তার সমাধান খোঁজে। দায়িত্ব গুলোকে এড়িয়ে না গিয়ে পালন করার চেষ্টা করে।

পর্ব ৩ আসছে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here