কখনো রোদ্দুর কখনো মেঘ পর্ব-২১

0
182

কখনো রোদ্দুর কখনো মেঘ
পর্ব ২১
______________________
পনেরো দিন ছুটি পেয়ে গ্রামে ফিরেছিল আর্য। দু মাস পেরিয়ে গেলেও কলেজে ফেরার ইচ্ছেটুকু নেই। ইতোমধ্যে কলেজ থেকে অনেকবার মেইল এসেছে সেখানে ফিরে যাওয়ার জন্য, নানা ধরনের অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে গেছে। বাড়িতে একের পর এক মিথ্যা বলে যাচ্ছে। এই হাসিমাখা ছটপটে জীবন থেকে মুক্ত হতে চাইছে না। পাণ্ডববর্জিত এলাকায় পৌঁছলে একঘেঁয়ে হয়ে থাকতে হবে। কিন্তু কিছু মানুষের আকুল ভালোবাসা তাকে শহরে টানছে। অদ্ভুত একটা টানাপোড়নে রয়েছে। একদিকে এত মানুষের ভালোবাসা ছেড়ে পাণ্ডববর্জিত এলাকায় যেতে ইচ্ছে করছে না। অন্যদিকে,সেখানকার কিছু মানুষের ভালবাসা এবং তাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতে থাকা মানুষের কথা মনে পরতেই তার কেমন হতে শুরু করল। বাবার বলা পুরনো কথা মনে পরল,’The flowing river reaches the sea.The standing water dries up.’ দাঁড়িয়ে পড়লে চলবে না। প্রবাহমান নদীর মত এগিয়ে চলতে হবে। অনেকদিন তো প্রিয় মানুষদের কাছে রইল। আর কত? এ কটা দিনে স্নেহার সঙ্গে নতুন করে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ওই সম্পর্ক তাকে বাইরে যেতে বাধা দিচ্ছে। তার সঙ্গে দেখা করা, হাত ধরে হাঁটা, চোখের দিকে তাকিয়ে সব কিছু ভুলে যাওয়া একটা বদ অভ্যাস হয়ে গেছে। সেখানে ফিরে গেলে এমন মুহূর্ত হারিয়ে ফেলবে। ভালো লাগবে না কিছু। মন খারাপ হবে। তবুও অনেক ভেবে চিন্তে মনের মধ্যে জেদ তৈরি করল। এই মূহুর্তের ভালোবাসা দীর্ঘ করতে হলে তাকে অবশ্যই ফিরতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে। তবেই ভালোবাসা জিতে যাবে। বেশি কিছু না ভেবে ট্রেনের টিকিট বুকিং করে ফেলল। স্নেহাকে সব কিছু জানালো। সেও খুশি হলো। আর্য পড়াশোনা ফেলে এখানে পড়ে থাকুক চায় না। সে দুরত্বকে ভয় পায় না। মনের টানই আসল। যা দুজনের মধ্যে যথেষ্ট রয়েছে।
আর কয়েকদিন পর শহরে ফিরে যাবে আর্য। আবার গ্রামে কবে ফিরবে জানে না। নতুন কোন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবে তাও বলা অসম্ভব। অচেনা পথে চলার নামই তো জীবন। মন ভারাক্রান্ত। আবার, কয়েকদিন ধরে স্নেহা বারবার তাদের বাড়িতে আসতে বলছে। সে অনেক রান্না শিখেছে। নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতে চায়। আর্য কিছুতেই রাজি নয়। নানা ধরনের চিন্তা মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। মন চাইছে তাদের বাড়িতে যেতে। তাতে স্নেহা অনেক খুশি হবে। স্মৃতিতে অনেক মুহূর্ত বন্দি হবে। নিজেকে নতুন করে চিনবে। স্নেহার সঙ্গে অনেকটা সময় থাকতে পারবে।কিন্তু পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে শিউরে উঠছে। প্রথমত, তার বাবা কিছুতেই রাজি হবেন না। দ্বিতীয়ত, লোকে কি ভাববে? এমন সব ভাবনা নিয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়লো আর্য। সকালে ঘুম থেকে উঠে অবাক হলো। অশোক বাবু নিজেই বললেন স্নেহার বাড়িতে যেতে। মুহুর্তের মধ্যে অপ্রতিভ হয়ে পড়লো। ধীরেসুস্থে চিন্তা করে বুঝতে পারল, এমন কাজ একমাত্র স্নেহা করতে পারে। সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে। অশোক বাবু বরাবরই স্নেহাকে নিজের সন্তানের মত দেখেছেন। স্নেহার কথা তিনি ফেলতে পারেননি। সহজে রাজি হয়ে যান। ইতস্তত বোধ করলেও মনে মনে অনেক খুশি হলো আর্য।
বেলা বাড়তেই যত্নসহকারে তৈরি হয়ে স্নেহার বাড়ি পৌঁছলো। তাদের বাড়ি পৌঁছতে মনের আনন্দ উবে গেল। কেমন একটা অস্বস্তি হলো। ভয় করছে। মনে হচ্ছে, না এলেই ভালো হতো। বাড়ির ভেতরে পৌঁছে স্নেহার বাবা-মাকে প্রণাম করতে একটু আস্বস্ত হলো। তার উপস্থিতি তাঁদের চোখে মুখে কোনো রূপ বিরক্ত নেই। বরং অনেক খুশি হয়েছেন।একজন মেয়ের বাড়িতে একজন ছেলে বন্ধু আসতে পারে না,এই ভাবনা যে তাদের মধ্যে জাগ্রত হয়নি,তা ভেবেই ভালো লাগলো। সে বুঝলো, তাদের পরিবারের মতো এদের পরিবার নয়। তাদের পরিবারে অচেনা কেউ প্রথম আসলে অনেক খুঁটিনাটি দেখে। সহজে গ্রহণ করে না। তাছাড়া যদি বিপরীত লিঙ্গের কেউ হয় -তাহলে আর দেখতে হবে না। অচেনা মানুষ চলে যাবার পর একটা বচসা বাঁধবেই। এই তো কদিন আগে রিম্পির সঙ্গে কোনো এক ছেলে দেখা করতে এসেছিল পড়ার বিষয়ে। তাদের বাড়ির সবাই বিস্ফারিত চোখে সেই ছেলেটির দিকে তাকিয়ে ছিল। সে চলে যাওয়ার পর রিম্পিকে কঠিন জেরার মধ্যে পড়তে হয়। বড্ড বিরক্ত হয়েছিলো রিম্পি। তার এ সব ভালো লাগে না। ছেলে মেয়ে বন্ধু হতে পারে এই সহজ বিষয়টি কেন সহজ ভাবে নেয় না, তা জানে না সে। হলঘরে সোফায় অনেকক্ষণ বসেও স্নেহাকে দেখতে পেল না। বারবার এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে তাকে খুঁজতে লাগল। ইতিমধ্যে ছাদ থেকে ঋষি দুমদাম করে নেমে এসেছিল, কিন্তু তাকে দেখামাত্র ছুটে আবার পালিয়ে গেছে। লজ্জা পেয়েছে। আর্যর হাসি পেল। এমন অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত সেও। সে যখন ছোট ছিল তখন বাড়িতে আত্মীয় স্বজন আসলে তাদের দেখে লজ্জা পেত। সামনে যেতে কুণ্ঠা বোধ করতো। কিছুক্ষণ পর কবিতা দেবী এক গ্লাস শরবত নিয়ে এসে আর্যকে দিলেন। শরবত নেওয়া উচিত না অনুচিত, কিছুই বুঝতে পারলো না। সারা শরীর জুড়ে অদ্ভুত এক জড়তা নেমে এসেছে। বেশি কিছু ভাবলো না। শরবত নিয়ে ঘট ঘট করে পান করে ফেলল।
তারপর অনেকটা সময় দীপক বাবুর সঙ্গে বসে গল্প করল। গল্প করতে করতে আর্য বুঝতে পারল, স্নেহা অনেক কিছুই তার ব্যাপারে বলেছে। দীপক বাবু অনেক কিছুই জানেন। সে কি করে? কোথায় থাকে? তাদের পরিবারের কতজন সদস্য ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কিছুই জানা। তবে আর্য যে তার মেয়েকে ভালবাসে তা জানেন না। জানতে পারলে তিনি হয়তো কখনো সহজ-সরল ভাবে সবকিছু মেনে নিতেন না। এ বিষয়ে আগে থেকে অবগত ছিল স্নেহা। তাই বাবা-মার কাছ থেকে লুকিয়ে গেছে। সবকিছু বন্ধুত্বের দৃষ্টি দিয়ে দেখছেন। একসময় কবিতা দেবীও পাশে এসে বসলেন। নানা ধরনের প্রশ্ন করতে লাগলেন। আর্য বড্ড বিরক্ত লাগলো। অস্বস্তি হলো। তবুও যথাযথ উত্তর দিল। তবে মুখ ফুটে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলো না। তখনো স্নেহাকে দেখতে পায়নি। কোথায় গেছে মেয়েটি? তাকে তাদের বাড়িতে আসতে বলে নিজেই উধাও! একবারের জন্য জিজ্ঞেস করল না, স্নেহা কোথায়? তাকে দেখা যাচ্ছে না কেন? আরও কিছুটা সময় গল্প করার পর আর্য স্নেহাকে দেখতে পেল। ঘাড় থেকে কোমর পর্যন্ত ওড়না খুব সুন্দর করে পেঁচিয়ে বেঁধেছে। চুলগুলো উস্কোখুস্কো ভাবে উড়ে বেড়াচ্ছে। একদম গ্রাম্য মেয়ে। এত শীতের মধ্যেও ঘামছে সে। আর্য বুঝতে পারল, এতক্ষণ ধরে রান্না করছিল। তাই দেখতে পায়নি। আর্যকে দেখে হেসে ফেললো। ভালো লাগলো। তার কথা রেখেছে। তাদের বাড়িতে এসেছে। সহজ সরল একটা হাসি দিয়ে বলল,”কি রে! কখন পৌঁছালি?” আর্য মুখ তুলে জবাব দিল,”এই তো ঘন্টা খানিক হলো।” ধীর পায়ে এসে তাদের পাশে বসলো। কাছে বসতেই কবিতা দেবী বলে উঠলেন,” আবার বসে পড়ছিস কেন? বেলা তো হলো স্নান করে আয়।” স্নেহা মায়ের কথাকে গুরুত্ব দিলো না। আর্যকে কিছু বলতে চাইল। তার আগেই কবিতা দেবী আবার বললেন,”বাবু তুমি স্নান করবে না?”
“ও সকালে স্নান করে নেয়।” আর্যর জবাবটা স্নেহা দিয়ে দিল।
“হ্যাঁ! ও ছেলে হয়ে সকালে স্নান করে, আর তুই দুপুর দুটো না হলে স্নানের ঘরে যাওয়া হয় না। তা আবার গর্বের সঙ্গে বলছিস।”
“আবার ছেলে-মেয়ের মধ্যে পার্থক্য খুঁজছো? এই ব্যাপারটি আমার বড্ড বিরক্ত লাগে।” জোর গলায় বলে উঠল স্নেহা। আর্য হতভম্ব হলো। কোথাকার জল কোথায় গড়িয়ে যাচ্ছে। দীপক বাবু চুপ করতে বলে উঠে গেলেন। কবিতা দেবী ঠান্ডা মাথায় বললেন,”আমি কোথায় ছেলে-মেয়ের মধ্যে পার্থক্য খুঁজলাম?সমবয়সী হয়ে সে সকালে স্নান করে নেয় আর তুই করিস না, এটুকুই তো।”
“ও ব্রাহ্মণ, সকালে পুজো করে। সকালে স্নান করার প্রয়োজন হয় তাই করে। আমার প্রয়োজন নেই তাহলে কেন মিছেমিছি স্নান করতে যাব?”
“দেখেছো বাবু, সামান্য কথায় কেমন মুখ করছে। সব সময় এভাবে মায়ের উপর চেঁচাতে থাকে।” আর্য কোনো জবাব দিল না। চুপ করে রইলো। কবিতা দেবী আর কিছুটা সময় বসে উঠে গেলেন। আর্য বুঝতে পারল, মেয়ের এমন ব্যবহারে মনোক্ষুন্ন হয়েছেন। তিনি চলে যাওয়ার পরে আর্য বলল,”তোর বড্ড মুখ হয়েছে। মায়ের উপর এভাবে চেঁচাচ্ছিস কেন?”
স্নেহা কোনো উত্তর করলো না। কথা এড়িয়ে গেল। স্নেহা সহজ সরল একটা হাসি দিয়ে বলল,”মাকে খেয়াল করেছিস? মা তোকে বাবু বলছে।”
“তো কি হয়েছে? অসুবিধা কোথায়?”
“অসুবিধা নেই। যখন আমরা আমাদের বিয়ের কথা বাড়িতে বলব, তখন তাদের মুখের অবস্থা কেমন হবে ভাব?” আর্য ভীষণ লজ্জা পেল। তার লজ্জামাখা মুখের দিকে তাকিয়ে স্নেহা আবার বলল,”এখন তুই এ বাড়িতে এমনি এসছিস। কয়েকবছর পরে তো জামাই হয়ে আসবি। ভাবা যায়! ভাবতেই কেমন একটা হচ্ছে।”
“হুশশশ।” দুজনে হেসে উঠলো। আর্য লজ্জায় মাথা নিচু করে রইল। বিষয়টি কল্পনা করতেই অদ্ভুত এক ভালো লাগা শরীরকে নাড়িয়ে দিল। কি আজব এই বন্ধুত্ব ভালোবাসার সম্পর্ক গুলো? বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা সম্পর্ক গুলো একটু বেশি কিউট হয়। আলাদা কেমন একটা ভালোলাগা থাকে। একদম সিনেমার মতো। আর্য এ ও বুঝতে পারল, শুধুমাত্র তার মধ্যে ছেলেমানুষিকতা নেই। স্নেহার মধ্যেও যথেষ্ট ছেলেমানুষিকতা রয়েছে। এখনো দুজনে বাচ্চা রয়েছে। যা সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। অল্প সময় মৌন থেকে স্নেহা বলল,”আচ্ছা তুই এখানে বস। আমি স্নান করে আসি। নাহলে আবার চেঁচামেচি শুরু করবে।” আর্য মাথা নাড়ালো।

দুপুরে খাওয়া শেষ হওয়ার পর পুকুর ঘাটে গিয়ে বসলো আর্য আর স্নেহা। বড় একটা পুকুরের চারিদিকে গাছপালায় ভর্তি। নরম রোদ তাদের শরীরকে আরাম প্রদান করছে। মাতাল হাওয়া বইছে। ঘাটের কাছে অসংখ্য ছোট ছোট পোনা মাছ ভেসে বেড়াচ্ছে। মাঝে মধ্যে দু একটা বড় মাছ আসছে তবে তারা কোনো ভাবে মানুষের উপস্থিতি টের করতে পেরে জল গুলিয়ে দ্রুত ফিরে যাচ্ছে। কখনো কখনো বড় মাছ পুকুরের মধ্যিখানে ডুপডাপ করে শব্দ করছে। পুকুরের উপর দিয়ে একটা লম্বা ক্যাবল তার কোথাও গেছে। তারের উপর তিনটে মাছরাঙ্গা পাখি বসে তীক্ষ্ণ ভাবে জলের দিকে তাকিয়ে আছে। ছোটো মাছ ভেসে উঠা মাত্র ছো মেরে তুলে নিয়ে দূরে উড়ে যাচ্ছে। আবার কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে তারে বসছে । পুকুর ঘাট পাকা তবে অনেক পুরনো।যেখানে সেখানে সিমেন্ট খোয়া গেছে এবং শ্যাওলা ধরেছে। আর্য পুকুর ঘাটে বসে পাখিদের খেলা লক্ষ করল। এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে দেখল দুজনের ছায়া লম্বাভাবে জলে পড়েছে। খোপা করে বাঁধা চুল খুলে ফেলেছে স্নেহা। খুব অযত্ন ভাবে ঘাড়ের দুই দিকে চুল সমান ভাবে মেলে ধরেছে। অসংখ্য চুলের মধ্যেখানে হাতের আঙ্গুল ভরে জট কাটানোর চেষ্টা করছে। আর্য তীক্ষ্ণ চোখে স্নেহাকে দেখতে রইল। বর্তমানে প্রকৃতির ললিত দৃশ্যর চাইতে স্নেহার রূপ তাকে মোহিত করছে। আপন-মনে অনেকক্ষণ দেখল। কিছুক্ষণ পর গলা খাঁকরে স্নেহা বলল,”আর কতদিন বাকি ফিরতে?”
“সাত দিন।”
“বেশি মন খারাপ করবি না। আবার তো সবার সঙ্গে দেখা হবে। অনেকদিন বই খুলিস নি। এবার অন্তত পড়ায় মনোযোগ দে। তোর দিকে অনেকে তাকিয়ে রয়েছে। তাদের কথা ভাব।”
“হুম, বুঝতে পারছি সব কিছু। আমি ভাবছি এখন আর ফিরবো না। একদম দুটো বছর কাটিয়ে ফিরব।”
“বেশ ভালো তো। তবে রোজ ফোন করে বাবা-মার খোঁজ নিবি। আমাকে না করলেও চলবে। আমি ঠিক মতো করে ফোন করে নেব। আবার ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়াশোনার ক্ষতি করিস না।গত দেড় বছর আমি কেমনভাবে কাটিয়েছি ঠিক জানি না। কিন্তু দুটো এই মাস খুব তাড়াতাড়ি কেটে গেল। আনন্দ হই হুল্লোড় করে বয়ে গেল। আমারও একটু মন খারাপ করছে। আমি শক্ত মানুষ। খুব সহজে মেনে নিয়েছি। তুইও একটু মানিয়ে নে। আর তো কটা বছর, তারপর দুজন সব সময় পাশে থাকবো। হারাবো না কোথাও। একদম মন খারাপ করবি না।” স্নেহা আর্যর চোখের দিকে তাকাল। চোখের কোণে জল টিপটিপ করছে।
“দৃর! কাঁদছিস কেন? তোকে কোনো কথা মনে করানো যাবে না দেখছি। একটুতে ভেঙে পড়লে চলে নাকি।”
“এই কয়দিনের স্মৃতি বারবার মনে পড়বে রে। তোর মনে পড়বে তো -না ভুলে যাবি?” কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল আর্য। স্নেহার কাছ থেকে দ্রুত জবাব আসলো না। সে মাথার ক্লিপ দাঁতে কামড়ে দুই হাত উপরের দিকে তুলে চুলের খোপা করছে। তারপর দাঁত থেকে ক্লিপ টা নিয়ে চুলে বাঁধলো। আর্যর খারাপ লাগলো। ক্লিপটা দাঁতে কামড়ানোর কি ভীষণ প্রয়োজন ছিল? কিছু বলতে যাচ্ছিল তার আগেই স্নেহা বলল,”তুই এখানে একটু বস। আমি আসছি।” স্নেহা দ্রুত স্থান ত্যাগ করল। আর্য পুনরায় মুখ ফিরে পুকুরের দিকে তাকালো। এখন তিনটের জায়গায় ছয়টা মাছরাঙ্গা এসে জুটেছে। চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে জায়গা দেখার চেষ্টা করল। বাড়ির একদম পশ্চিম দিকে পুকুরঘাট। ওই দিকে আর কোনো বাড়িঘর নেই। বিঘার পর বিঘা জল জমি রয়েছে। জমিগুলোর বুক চিরে ট্রেন লাইন চলে গেছে দূর-দূরান্তে।আরও কিছুক্ষনের পর একটা লোকাল ট্রেন ধীরগতিতে বেরিয়ে গেল। স্নেহা তখনও ফেরেনি। একটু বিরক্ত হয়ে বাড়ির মধ্যে গেল। ভেতরেও কাউকে না দেখে অস্বস্তি হলো। বেশি ভেতরে ঢোকার সাহস পেল না। যতই হোক নতুন এসেছে। আগ বাড়িয়ে কিছু করতে চাইল না। হল ঘরে সোফায় গিয়ে চুপিসাড়ে বসলো। মুহুর্তের মধ্যে স্নেহা কোথায় হারিয়ে গেল ভাবতে রইল। কিছুক্ষণ পর দরজা খোলার শব্দ কানে ভেসে আসলো। আর্য মুখ তুলে দরজার পানে চেয়ে রইল। চোখের সামনে যা ভেসে উঠলো তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। হিন্দু পরিবারে মা কাকিমারা বাথরুমে যাওয়ার পূর্বে তাড়াহুড়োয় পেটিকোট এবং ব্লাউজ ছাড়া অগোছালোভাবে যে ভাবে শাড়ি পরে, স্নেহা ঠিক ওই ভাবে একটা শাড়ি পড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো। পুরনো রূপকথার গল্পে দাসিরা যেভাবে শাড়ি পরে ঠিক ওই ভাবে। পা দুটো ভেজা রয়েছে। শ্বেত বর্ণ পায়ে জলের বিন্দু বিন্দু ফোঁটা গুলো হীরের মতো লাগছে। হাত দুটোও ভেজা। হাতে ঝাঁকুনি দিয়ে জল নিংড়ানোর চেষ্টা করল। তারপর অপ্রতিভ ভাবে চোখ ঘোরাতে আর্যর চোখে চোখ পরল। মুহূর্তের মধ্যে চোখ নামিয়ে নিল। লজ্জা মাখা হাসি বিনিময় করে দৌড়ে পালিয়ে গেল। কখনো বুঝে উঠতে পারেনি আর্য বাড়ির ভেতরে চলে আসবে। এমন অবস্থায় কোনো‌ পুরুষ মানুষের মুখোমুখি হতে হবে। আর্য এই প্রথম তার প্রতি স্নেহার চোখে লজ্জা দেখল। লজ্জায় একেবারে লাল হয়ে গেছে সে। তার ভেজা পায়ে জলের ছাপগুলো রেখে গেছে। আর্য তীক্ষ্ণ চোখে ছাপগুলো দেখতে রইল। বেশ অনেকক্ষণ পর স্নেহা এসে পাশে বসলো। এবার আর পরনে মায়ের পুরনো শাড়ি নেই। পূর্বের পোশাকটি পরে নিয়েছে।ততক্ষণে জলের ছাপ গুলো শুকিয়ে গেছে। আর্য তার দিকে চোখ ঘোরাতেই স্নেহা অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে নিল। দুজনেই দুজনের দিকে তাকাতেই লজ্জা বোধ করছে। কিছুক্ষণের আগের মুহূর্ত কথা মনে পড়তেই শরীর শিরশির করে উঠছে। ভালো লাগছে।বেহায়ার মতো কোনো প্রেমিক প্রেমিকাকে এমন ভাবে দেখলে অস্বস্তি হয় না বরং কোনো কারণ ছাড়াই দুজন স্থির হয়ে যায়। লজ্জা পেতেও ভালো লাগে। হৃদয় ভরে ওঠে। শ্রাবনের প্লাবনে ভাসতে থাকবে। বেশ অনেকক্ষণ ধরে দুজন মৌন রইল। মৌনতা কাটিয়ে আর্য বলল,”এবার আমি বাড়ি যাই।”
“সে কি রে! এই ভর দুপুরে বাড়ি যাবি? বিকেল হতে দে।”
“শীতকালে তিনটে মানে অনেক বেলা।”
“হোক ঠিক আছে। আরেকটু অপেক্ষা কর তারপর যাবি। তুইতো সারাটা দিন নিচের রুমগুলোতে ঘুরিয়ে কাটিয়ে দিলি। আমার রুমে চল।” কথা শেষ করে উঠে পড়ল। সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে গেল। কিছুটা যাওয়ার পর মুখ ঘুরে দেখল আর্য তখনও সোফায় বসে রয়েছে।
“কি রে। আয় বলছি। কি এত ভাবছিস?” আর্য চোখ ফিরে স্নেহাকে দেখল। একটা একটা পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। স্নেহার রুম খোলা ছিল। দুজনে ভেতরে ঢুকলো। বিছানায় লেপ মুড়ি দিয়ে ঋষি শুয়ে আছে। স্নেহা বেডের কাছে পৌঁছে এলোমেলো বিছানা ঠিক করল। বিছানার উপর বসতে বলল। আর্য বসলো না দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক দেখতে লাগলো। ঘরটি বেশ সাজানো গোছানো। দুটো জানালা রয়েছে। পশ্চিম দিকের জানালাটি খোলা। জানালায় চোখ রাখতে দূরের রেললাইন ছাড়া তেমন কিছু দেখা গেল না।ঘরের মধ্যে অসংখ্য টব রয়েছে। তাই একটু বেশি শীত করছে। এক পাশে স্নেহার আর ভাইয়ের জামাপ্যান্ট সাজানো-গোছানো রয়েছে। পাশে আলমারি রয়েছে। তার ভেতরে অসংখ্য বই রয়েছে বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছে। আলমারির উপর অনেক স্মারক স্তম্ভ রয়েছে। এই স্মারক স্তম্ভ সম্পর্কে অপরিচিত নয় আর্য। বেশিরভাগ স্মারক স্কুলে পড়াকালীন পেয়েছিল। রুমের মধ্যে এদিক ওদিক ঘুরে খুঁটিনাটি দেখতে রইল।রুম পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারল স্নেহা অনেক হাতের কাজ পারে। ঘরের দেওয়ালে হাতের কাজ করা অসংখ্য জিনিস রয়েছে। চোখ ফিরে দেখল স্নেহা পালঙ্কের উপর বসে হাতের পায়ের নখে নেইলপলিশ লাগাচ্ছে। তার কাছে গিয়ে বসলো। স্নেহা মুখ তুলে হেসে ফেললো।নেইলপলিশ লাগানো শেষ হতে অলস ভাবে হাই ভাঙলো।দয়ালু মাখা কন্ঠে আর্য বলল,”তোর কোলে মাথা রেখে একটু ঘুমোই?”
“কি! আর একবার বল?” দাঁত বের করে হাসলো স্নেহা। লজ্জা পেল। আর্য নিশ্চিত, স্নেহা কথাটি বুঝতে পেরেছে। সে আরও একবার তার মুখ থেকে কথাটা শুনতে চাইছে।
“তোর কোলে মাথা রেখে একটু ঘুমাই?” স্নেহা লজ্জা মাখা হাসি বিনিময় করল। এতগুলো বছর আর্যর সঙ্গে কথা বলেও এক মুহূর্তের জন্য লজ্জা পায়নি। কিন্তু এখন ভীষণ লজ্জা হচ্ছে। এমন হওয়ার কারণ খুঁজে পেল না। অত্যন্ত আপ্লুত হয়ে বলল,”আচ্ছা, ঠিক আছে।” আর্য পা মেলে স্নেহার কোলে মাথা রাখল। উপরের দিকে তাকিয়ে রইল। স্নেহা কিছুতেই আর্যর দিকে তাকাতে পারলো না। কেমন অস্থির লাগছে। কিছুক্ষণ পর আর্য আবার বলল,”তুই আর স্মারক স্তম্ভ পাসনি? এগুলোতো অনেক পুরনো।”
“মাধ্যমিকের পর আমি আর ঠিকমতো পড়াশোনা করিনি। কি করে পাব বল?”
“কে তোকে পড়তে বারণ করেছিল?”
“কেউ না। নিজে থেকে পড়ায় মন দিতে পারিনি।” স্নেহা একটু একটু করে আর্যর মুখের দিকে তাকালো। তার কোলে কত সুন্দর মাথা রেখে শুয়ে পড়েছে। তার মুখ মুগ্ধতায় ভরে গেছে। তার চাহনিতে রয়েছে সৃষ্টির সৌন্দর্য। বেশ কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল। চোখের মধ্যে অসম্ভব মায়া রয়েছে। এই মায়ার জাল ছিঁড়ে বেরোনো সহজ নয়। একে অপরে উষ্ণতা অনুভব করল। আনন্দে স্নেহার চোখ থেকে জল গড়িয়ে আর্য মুখের উপর পড়লো। তার মাতাল চোখে শ্রাবন নেমেছে। আর্য স্থির চোখে তাকিয়ে বলল,”আমার খুব ভালো লাগছে। আরেকটু মাথা দিয়ে থাকি ।”
“হুম,থাক। বারণ করিনি তো।” মৃদু হাসল স্নেহা। আর্যর এলোমেলো চুলগুলো স্নেহা আংগুল দিয়ে কাটতে রইল। বলল,”চুলগুলো কেটে ফেল। চুল বড় হলে ভালো লাগে। তবে এত বড় ভালো না। তাছাড়া তুই তো রোগা। বেশি বড় চুল ভালো লাগে না।” আর্য মাথা নাড়িয়ে বোঝালো, শিগগিরই চুল কেটে ফেলবে। আর্য ভালো করে স্নেহাকে লক্ষ করল। তার ঘাড়ের কাছে তিল দেখতে পেল। কানের কাছে কাটা অংশ দেখতে পেল। এই অংশটি নাকি স্নেহাকে বিচ্ছিরি দেখায়। কই আর্যর চোখে তো বিচ্ছিরি লাগছে না। তার চোখ সৌন্দর্য খুঁজে পেয়েছে। স্নেহার শরীরের ঘ্রাণ আর্যকে অস্থির করে তুলল। তার ভালো লাগছে। শুধু তার নয়, এমন মুহূর্ত স্নেহাকেও ভীষণ খুশি করেছে। অল্প সময়ের পর স্নেহা বলল,”তুই আজকে আমাদের বাড়ি থেকে যা।সকালে উঠে চলে যাবি।”
“পাগল না কি!”
“পাগল হতে যাবো কেন? পাগলী হব। আকাশ আর নিলেশকেও বলব আমাদের বাড়িতে আসতে। পাঁচজন মিলে কত আনন্দ হবে বল। রাতে ছাদে গিয়ে চাঁদ দেখব। চোর-পুলিশ খেলব। একটা খাটে পাঁচজন শুবো। ঘুমাবো না সারারাত ধরে গল্প করব। কত মজা হবে বল?”
আর্য এবার তার কোল থেকে মাথা তুলে নিয়ে পা মুড়ে বসলো। বলল,”বাচ্চা নাকি!”
“হ্যাঁ, তুই বেশি বুড়ো হয়ে গেছিস? থেকে যা না রে।”
“পাগলের মত আবদার করবি না। তুই তাদেরকে নিয়ে থাক। তাদের সঙ্গে খেল। আমি বাড়ি ফিরব।”
“আমি জানি তুই কেন পালিয়ে যেতে চাইছিস!”
“কেন?” ভ্রু কুঁচকে বললো আর্য।
“লোকে কি বলবে? তাই….।” আর্য কোনো জবাব দিল না। জবাব না পেয়ে স্নেহা বলল,”এই যে তুই আজকে আমাদের বাড়িতে আসতে চাইছিলি না। শুধুমাত্র লোক কি বলবে তাই। যদি তুই বাইরের লোক গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে আমাদের বাড়িতে আসতিস না, তাহলে কি এমন মুহূর্ত তৈরি হতো? বাবা-মার সঙ্গে বসে গল্প করলি। আমরা দুজনে অনেক গল্প করলাম। খেলাম। পুকুরঘাটে বসলাম। না এলে,এমন মুহূর্ত কি তৈরি হতে পারত? দেখবি এই মুহূর্তগুলো একসময় তোকে সুখ দেবে। জীবনের কষ্টের মুহূর্তে এই মুহূর্তগুলো শুধু আপন হয়ে থাকবে। লোকে কি বলবে কি ভাববে তাদের উপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এরা অনেক কিছুই বলবে। ওদের সব কথা শুনতে নেই। আমরা চাইলেও তাদের মুখ বন্ধ করতে পারবো না। দেখ, একটা সাবালক ছেলে মেয়ে একটা রাত্রে একটা ঘরে কাটিয়েছে মানে তারা শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে এমন নয়। তাহলে পৃথিবীতে কাউকে বিশ্বাস করা যেত না। শুধুমাত্র শারীরিক সম্পর্ক করে সৌন্দর্য সৃষ্টি করা যায় না। একে অপরের মন বুঝে আবেগময় প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় কথোপকথনে দারুন সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়। ওই সৌন্দর্য কখনো ভোলা যায় না।” আরও অনেক কিছু বোঝাল আর্যকে। কিন্তু কোনো যুক্তি শুনলো না সে । বেশি জোর করলো না স্নেহা। বুঝতে পারল, আর্য প্রতিবাদী ছেলে হলেও সমাজকে ভীষণ ভয় পায়। শেষ বিকেলে আর্যকে একা বাড়ি পাঠাতে চাইলো না স্নেহা। আর্যর সঙ্গে গেলেও তাকে আবার একা ফিরতে হবে। তাই চারটা সাইকেল (স্নেহা, আর্য, আকাশ, নিলেশ) আর্যর বাড়ির উদ্দেশ্যে গড়লো।

রাতের বেলা বাবার দেওয়া প্রথম উপহার খাতার মত দেখতে বই নিয়ে বসলো আর্য। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটা পৃষ্ঠায় জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছে। আজকের এই বিশেষ ঘটনাটাও লিপিবদ্ধ করতে চাইল। লিখতে গিয়ে আবিষ্কার করল আগের মত তার হাত কাঁপছে। বইটি বন্ধ করে খাতায় লিখলো। আগে প্র্যাকটিসের প্রয়োজন। কারণ, বাবার দেওয়া দামি জিনিসে কোনো রকম ভুল লিপিবদ্ধ করতে চায় না। আর ভুল হলে পেজটিকে ছিঁড়ে ফেলা সম্ভব নয়। বইয়ের বাঁধন এমনভাবে যে একটা পেজ ছিঁড়লে সম্পূর্ণ বই খুলে যাবে। আর্য বইটি হাতে নিয়ে ভাবতে রইল, এতদিনে এই জিনিসটি তাকে কি শিখিয়েছে? কি পেয়েছে? আদৌ কি বইটি কিছু দিতে পেরেছে? বইটি হাতে পাওয়ার পর চিন্তা ধারা এবং আচার-আচরণে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে? সেগুলো স্মৃতিতে খুঁজতে রইল। বেশ অনেকক্ষণ ধরে ভাবার পর কিছু একটা বের করল। এই বইটি তাকে ধৈর্য ধরতে শিখিয়েছে।বইটি যদি নিছক একটি সাধারণ বই হতো,তাহলে সে কবে থেকে পড়া শেষ করে আলমারির মধ্যে রেখে দিত; কিংবা এটি যদি শুধুমাত্র খাতা হতো,তাহলে সে কবে থেকে লেখে ভর্তি করে ফেলে দিত। বইয়ের মধ্যে কি আছে খুঁজতে গিয়ে ধৈর্য ধরতে শিখেছে। আবার এই বই তাকে অনেক কিছু ভাবতে শিখিয়েছে। এই বই নিয়ে যখন সে একা বসেছে তখন অনেক কিছু ভেবেছে। মনের মধ্যে অনেক কিছু কল্পনা করেছে। একাকীত্ব ঘিরে ধরেছে। জীবনে বড় হওয়ার জন্য একাকীত্ব প্রয়োজন। মোবাইল হাতে বসে থাকাটা একাকীত্ব নয়। কোনো কিছু ছাড়া সম্পূর্ণ একা একাকীত্বের কথা এই বই বলছে। এই বই নিজেকে প্রশ্ন করতে শিখিয়েছে। নিজের মধ্যে কি লুকিয়ে রয়েছে তা ভাবতে শিখিয়েছে। এবং সর্বশেষ এই বইতে কিছু লেখার আগে তাকে অনেকবার প্রিপারেশন নিতে হয়েছে। কোনো ভুল হতে পারে এই ভয় তাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। সহজে কোনো কিছু বইয়ের মধ্যে লিখে ফেলেনি।আর্য নিজের মনে মনে এই যুক্তি গুলো সাজালো। অশোক বাবু এই বইয়ের মাধ্যমে ছেলেকে তিনটে জিনিস শেখাতে চেয়েছেন। প্রথমত, জীবনে বড় হতে গেলে ধৈর্যের প্রয়োজন। ধৈর্য একসময় সব কিছু ফিরিয়ে দিবে। দ্বিতীয়তঃ বইটি নিজেকে ভালবাসতে শেখায়।অন্যকে ভালোবাসলে ধোঁকা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু নিজেকে ভালবাসলে বিন্দুমাত্র ধোকা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। নিজেকে ভালোবাসলে সুখ-শান্তির পরিমাণ বেশি থাকে। তৃতীয়তঃ এই বইটি কিছু করার আগে ভাবতে শেখায়। অর্থাৎ জীবনে কোনো কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যদি ওই বিষয়ের সম্বন্ধে স্টাডি করা যায় তাহলে জীবনে ভুলের পরিমাণ খুব কম হবে।

পর্ব ২২ আসছে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here