তুমি আমার স্বপ্নচারিণী পর্ব-৪০ ৪১

0
1095

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:40

জীবন্ত স্বর্গ সত্যিই আজ জীবন্ত হয়ে গেছে।সবার সাথে আড্ডায় গল্পে ভরপুর।অপলা এদের যত দেখছে তত ভালো লাগছে।ওর মতো ইন্ট্রোভার্ট ধরনের একটা মেয়ে এত কম সময়ে এদের সাথে এতটা মিশে গেলো ভাবতেও পারছেনা। ওর খুব খুব ভালো কাটলো সময়টা।সবার সাথে মিন্টু ভাইয়ের টং দোকানে বসে চা খেলো।এই প্রথমবার এইভাবে চা খেলো।খুব ভালো লাগলো।ওর জীবনের বেস্ট দিনগুলোর মধ্যে আজকের দিনটাও থাকবে।

সবাই মিলে এইটাও ঠিক করলো যে oldhome এর নামে এই ক্লাবের নাম রেখেছে সেখানে ওদেরকেও নিয়ে যাবে।ওরা offday তে এমনিতেও যায়।অপলার খুব আগ্রহ নিয়ে শুনছে সেসব কথা।ঐখানে যারা থাকে তারা খুব ভালো।কিন্তু তাদের মনে অনেক কষ্ট।তাদের ছেলে মেয়েরা তাদের খোজ নেয় না,ওনারা অপেক্ষা করে থাকেন তাদের সন্তানের।মাঝে মাঝে কেউ আসে কিন্তু সে আসা না আসার মত।পেমেন্ট করে চলে যায়।আবার কেউ কেউ সেটুকুও করেনা।তাদের জন্যে আমাদের মত ছোট ছোট সংগঠন সাহায্য করে।অনেক বড় বড় ব্যাবসায়ীরাও সাহায্য করে।।তবে আমরা যখন যাই সেদিন সবাই একসাথে খুব ভালো সময় কাটায়।আমাদেরকে উনারা নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসে।ঐখানে গেলে আর ইচ্ছে হয়না ঐখান থেকে ফিরে আসি।অপলার খুব ইচ্ছে করছে এক্ষুনি যেতে।ওর বাবারও এইখানে একটা oldhome আছে।কিন্তু নামটা জানা নেই।বাবাতো সে ব্যাপারে কখনো বলেও না।একবার একজন বাবাকে ফোন করেছিল ঐখান থেকে তখন শুনছিল।কিন্তু এরপর আর কখনো বলেনি।

লুবনার অসস্তি বোধ আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে।ও যা ভেবেছিল তা ভুল।রিজভী ছেলেটা খারাপ না এতক্ষণে বেশ বুঝে গেছে।লিপি আপুর ভাই একদম উনার মতোই।তবে ছেলেটা কিছুটা বোকা।না হয় কেউ ওমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে??তবে আর যাই হোক ওরা এখন বন্ধু হয়ে গেছে। বোকা বা চালাক তাতে কি আসে যায়।রিজভী খুব কাছ থেকে লুবনাকে দেখছে।না সে এই মেয়েটার প্রেমে এইবার পরেই গেছে।কিছু একটা ভাবতে হবে।মাহিমতো অপলাতেই মশগুল।হয়তো এতক্ষণে ভুলেও গেছে।না বেশি দেরি করা যাবেনা।যা করার আমাকেই করতে হবে।

ওরা সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলো। আন্টি বলে দিয়েছে তাড়াতাড়ি ফিরতে সুতরাং মাহিম লেট করতে চায় না।

বাড়ি ফিরে সবাইকে নিয়ে লিপি ছাদে চলে গেল। চা স্নেকস নিয়ে পাটি পেতে চাঁদের আলোয় আড্ডায় বসলো।হাসি আনন্দ চলছেই।কিছুক্ষণ পর বাড়ির ছোট বড় সবাই এলো।এইবার শুধু গল্প আড্ডাতেই থেমে নেই।ছোটখাটো একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এর মত হয়ে গেল।যে যা পারছে বলছে করছে।আর সবার থেকে বেশি এগিয়ে আছে তুর্য।সে নাচ গান দুটোই করলো।সবাই ওকে খুব আদরও করলো।রিজভীকে কিছু করে দেখাতে বললে সে বলল সবার শেষে করবে।অপলা হুট করেই বলে উঠলো মাহিম ভাইয়াতো ভালো গান করে একটা গানতো এখন না হলেই না।লিপিও সম্মতি দিয়ে বলল মাহিমের গান না হলে প্রোগ্রামটাতো অপূর্ণ থেকে যাবে।মাহিমতো রাজি তার স্বপ্নচারিণী বলেছে আর সে গাইবে না তাতো হবেনা।মাহিম অপলার দিকে তাকিয়ে গান গাওয়া শুরু করলো।

কবিতা, তুমি স্বপ্নচারিনী হয়ে খবর নিও না..
কবিতা, এই নিশাচর আমায় ভেবোনা সুখের মোহনা..
দেখবে আমাদের ভালোবাসা
হয়ে গেছে কখন যেনো
পদ্ম পাতারও জল….
কবিতা, তুমি স্বপ্নচারিনী হয়ে খবর নিও না..
কবিতা, এই নিশাচর আমায় ভেবোনা সুখের মোহনা..

বেদনাসিক্ত অশান্ত এই মন-
খুঁজে ফিরে মেটায় প্রয়োজন..
যতদূর জানে এ ব্যাকুল হৃদয়-
নীল বিষের পেয়ালা মনের বাঁধন..

দেখবে আমাদের ভালোবাসা
হয়ে গেছে কখন যেনো
পদ্ম পাতারও জল….
কবিতা, তুমি স্বপ্নচারিনী হয়ে খবর নিও না..
কবিতা, এই নিশাচর আমায় ভেবোনা সুখের মোহনা..

নয়ন গভীরে আঙ্গিনা
নিবিড়তার ছোঁয়ায় হৃদয় প্রতিমা..
কোথায় হারালে বলো পাবো তোমায়
বসন্তে মাতাল আমি এক অপূর্ণতা..
নয়ন গভীরে আঙ্গিনা
নিবিড়তার ছোঁয়ায় হৃদয় প্রতিমা..
কোথায় হারালে বলো পাবো তোমায়
বসন্তে মাতাল আমি এক অপূর্ণতা..

দেখবে আমাদের ভালোবাসা
হয়ে গেছে কখন যেনো
পদ্ম পাতারও জল….
কবিতা, তুমি স্বপ্নচারিনী হয়ে খবর নিও না..
কবিতা, এই নিশাচর আমায় ভেবোনা সুখের মোহনা..

অপলা এখনো অপলক তাকিয়ে আছে।মাহিমও তাকিয়ে আছে তার স্বপ্নচারিণীর দিকে।লিপি অপলার কাধে হাত দিয়ে ঝাকুনি দিতেই অপলা পলক ফেলল সাথে মাহিমও।অপলা খুব লজ্জা পেলো।লিপি,রিজভী,লুবনা মিটমিটিয়ে হাসছে।বড়রা সামনে তাই কিছু বললো না।মাহিম সব স্বাভাবিক করতে বললো,এইবার রিজভীর পালা, নে নে শুরু কর।রিজভী শুরু করার আগেই অপলার ফোনটা বেজে উঠলো।

হাতে নিয়ে দেখলো ওর বাবা ফোন করছে।অপলা উঠে গেলো তার সাথে ওর মাও গেলো।ওরা ফোনে কথা বলছে।কিছুক্ষণ পর রুনু ঝুনুও উঠে গেলো কথা বলতে।সবাই একসাথে আড্ডা দিচ্ছে শুনে হিশাম আহমেদ এক এক করে সবার সাথেই কথা বললেন।উনি আগামীকাল ব্যাক করবেন বাংলাদেশে।উনি আর বাসায় যাবেন সোজা এইখানেই চলে আসবেন।অপলা খুব খুশি হলো।আবার সবার মাঝে এসে বসলো।কিন্তু এখন সবাই এক এক করে উঠে চলে যাচ্ছে।প্রোগ্রাম আজকের মত এখানেই শেষ।

রেহনুমা আহমেদ মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,আল্লাহ দেখো আমার মেয়েটা যেনো এমনই হাসিখুশি থাকে।সব কিছু যেনো ঠিক থাকে।গোপনে চোখের পানি মুছে নিচে নেমে গেলেন।

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:41

রিজভী খুব গভীরভাবে কিছু একটা ভাবছে।এত মনোযোগ দিয়ে কি এত ভাবছে সেটা ভাবতেই ওর মনে পড়লো ও তো অপলাকে বলতেই ভুলে গেছে রিজভীর কথা।ইতস্ত করে বিছানায় শুয়ে পড়লো মাহিম।রিজভী সেই একইভাবে এখনো বসে আছে।মাহিমের কেমন একটা লাগছে।উঠে বসলো কিন্তু কি বলবে বুঝতে পারছে না।তাই লেপটপ হাতে নিয়ে এমন একটা ভাব করছে যেনো ও খুব busy।রিজভী ঘার ফিরিয়ে দেখল মাহিমকে।জানতাম তুই পারবিনা। তোর দ্বারা হবেনা জানতাম।মাহিম লেপটপ থেকে মুখ তুলে কিছু বললি?রিজভী কিছুটা আহত হওয়ার মতো করে বললো,জানতাম তুই পারবিনা।আমাকেই কিছু একটা করতে হবে।মাহিম লেপটপ রেখে গড়গড় করে বলল,ব্যাটা তুই একটা আহম্মক,বলদ,গাদা।তোর এত তাড়া কিসের?আগে সবটা বুঝতে দে,তারপর না হয় যা করার করবি।লুবনার দিকটাও ভাবতে হবে।ও তোকে কতটা ভাবছে বা আঁধেও ভাবছে কিনা জানতে হবে তো?তোকে নিয়ে যদি না ভাবে তাহলে ওর মনে তোর ভাবনা তৈরি করতে হবে।ব্যাটা তুই আর মানুষ হইলি না।

রিজভী মাহিমের কোনো কথাই শুনছে না।মাহিম একাই বকবক করে চলেছে।মাহিম বুঝতে পারলো রিজভী খুব serious হয়ে আছে তাই নিজে থেকে চুপ হয়ে গেল।রিজভী গভীর চিন্তায় মশগুল।কিভাবে ওর মনের কথা জানাবে?ওর যে আর দেরি করতে ইচ্ছে হচ্ছে না।ওর মন যে কোনোভাবেই মানছে না।বিভিন্ন আইডিয়া মাথায় আসছে।কিন্তু কোনোটাই ওর কাছে যুক্তিসঙ্গত মনে হচ্ছে না।আসলে নিজেই কনফিউজড হয়ে যাচ্ছে। ওতো নামটা ছাড়া কিছুই জানেনা।কি পছন্দ বা কেমন মেন্টালিটি কিছু জানে না।তবে এটুকু জানি খুব ধীর শান্ত একটা মেয়ে।এইটুকুই যথেষ্ট কি?অবশ্যই যথেষ্ট।ভালোবাসার জন্যতো এটুকু জানারও দরকার হয়না,কোন কারণ ছাড়াই ভালোবাসা যায়।আমিওতো কোনো কারণ ছাড়াই ওকে ভালোবাসি আর সারাজীবন বাসবোও।তবে ওর জীবনে অন্য কেও নেই তো?আর যদি না থাকে আসতেও তো পারে?নাহ আর লেট করা যাবেনা।বসা থেকে উঠে মাহিমের সামনে চেয়ার টেনে বসলো।

– মাহিম শোন ভাই,তুই একটা কিছু করনা।
– আমি এতক্ষন এত কিছু বললাম তুই শুনিসই নাই?
– আমার মাথা কাজ করছে না।
– কি করতে চাস?
– তোকে একটু হেল্প করতে হবে।
– আমি কি করবো?
– তুই ভাবীকে বলে বিকেলে লুবনাকে নিয়ে বের হতে।
– সেটা বললাম তারপর?
– তারপর লুবনার সাথে আলদা করে কথা বলবো।
– যদি লুবনা না যেতে চায়?
– ভাবী ওকে নিয়ে ঘুরতে যাবে ও কি না করবে?
– সে কথা বলিনি।
– তাহলে?
– যদি তোর সাথে আলাদা কথা বলতে না চায়?
– সেজন্যই তো তুই আর ভাবী আছিস।
– বুঝলাম না তোর কথা।কি ভাবছিস clearly বলতো?
– এটাও বুঝিস না?তুই আর ভাবী যদি আলাদা কথা বলতে চাস তাহলে লুবনাতো তোদের মাঝে বসে থাকবেনা একাই থাকবে।স্বাভাবিকভাবে আমিও একাই থাকব।তখনতো আমরা কথা বলতেই পারি??
– প্রেমে পড়ে মনে হচ্ছে তোর ব্রেইন শার্প হচ্ছে।
– মজা নিস না।ভাবীকে ফোন কর।
– ওকে করছি।তবে এখন না পরে।
– ঠিক আছে।

লিপি সবাইকে খাওয়ার জন্য ডাকছে।মাহিম রিজভীকে বলল, চল ভাবী ডাকছে। হ্যা, চল।আর খেতে খেতে লুবনাকে আবার মন ভরে দেখে নিস।মজা নিস না তো।ওকে চল।দুজনে গেটের দিকে যাচ্ছে।আমার না কেমন যেন লাগছে ওর সামনে যেতে।এই রিজভী এইসব মেয়েলি স্বভাব তোর কবে থেকে হল?এমন করিস না তো,সত্যিই কেমন যেন লাগছে।তাহলে তুই থাক আমি গেলাম খুব ক্ষুধা লাগছে বলে একটা ধাক্কা দিল রিজভীকে।

ঠিক তখনই অপলা আর লুবনা সেখান দিয়ে যাচ্ছিল।মাহিম সেটা লক্ষ্য করেই ধাক্কা দিয়েছে।রিজভীও গিয়ে ধাক্কা খেল একদম লুবনার সাথে।লুবনা হকচকিয়ে গেল তবে লজ্জা পেলো বেশি।রিজভী নিজেকে সামলে নিয়ে মাথা চুলকে বলল,sorry!!লুবনা লজ্জা মুখে হালকা হেসে বলল, it’s okk!!রিজভীতো সেই হাসিতেই বেহুঁশ প্রায়।সেদিকেই তাকিয়ে আছে।লুবনা আরও লজ্জা পেলো।একটু সরে দাঁড়ালে ভালো হতো।রিজভী ইতস্তত করে sorry বলে সরে দাঁড়াতেই লুবনা প্রায় ছুটতে চলে গেল।রিজভী ঠায় দাড়িয়ে আছে।মাহিম আর অপলা সশব্দে হেসে উঠলো।

দুপুরে খেয়ে সবাই যে যার ঘরে চলে গেল।অপলা শুবে ভেবে সবে গা টা বিছানায় এলিয়ে দিল আর তখনি ওর ফোনটা বেজে উঠল।মাহিম এঘর থেকে ওঘরে ফোন করছে।ছেলেটাতো আচ্ছা পাগল।অপলা ফোন রিসিভ করতেই রিজভী গড়গড় করে বলতে শুরু করল ভাবী প্লিজ আজকে বিকেলে তুমি আর তোমার কাজিন আমাদের সাথে ঘুরতে যাবে প্লিজ প্লিজ…. অপলাকে কিছু বলার সুযোগই দিচ্ছে না।মাহিম রিজভীর থেকে ফোন কেড়ে নিল।তারপর অপলাকে রিজভীর পুরো ব্যাপারটা খুলে বলল।অপলা হাসলো,এই ব্যাপার?আমি নিয়ে বের হতে পারবো তবে….তবে আবার কি?এরপর যা হবে সবটা ওর ইচ্ছেতে,আমি ফোর্স করতে পারবোনা।সেসব নিয়ে ভেবোনা তুমি শুধু একসাথে বের হবে।ওকে।ফোন কেটে লুবনার দিকে তাকালো।লুবনাও কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, কার কথা বলছিলে?তোমার কথা।আমার?hmm তোমাকে নিয়ে বিকেলে বের হতে বলেছে।আমাকে আবার কেনো তোমাদের মাঝে নিবে?তুমি একা একা বোর হও তারচেয়ে ভালো একসাথে যাবো।কিন্তু আপু……কোনো কিন্তু না।ওকে আপু।আচ্ছা লুবনা রিজভী ভাইয়া খুব ভালো তাই না?ভালো না ছাই,কেমন করে তাকায়।কই আমার দিকেতো তাকায়ই না।লুবনার লজ্জা লাগছে ,কি জানি আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।তবে যাই বলো মানুষ হিসেবে খুব ভালো।কি জানি আপু,তবে একটু বোকা উনি বলেই হেসে ফেললো।অপলা পাল্টা প্রশ্ন না করে ও হাসলো।

রিজভী পারেনা এখনই চলে যায়।মাহিম বহু কষ্টে ওকে শান্ত করে বসালো।কি বলবি ভেবেছিস?অনেক কিছু ভেবেছি কিন্তু মনে হয় না বলতে পারবো।তাহলে শুধু শুধু ডেকে পাঠাবো কেনো?আসতে মানা করে দেই?একদম না শোন সামনে গিয়ে যে ফিলটা আসবে সেটা দিয়েই বলে দিতে পারবো দেখিস।প্ল্যান করে কি আর মনের কথা বলা যায়?মাহিমের এখন সে দিনটার কথা মনে পড়ছে।সেতো হুট করেই ওর মনের কথা বলে ফেলেছিল তার স্বপ্নচারিণীকে।আসলেইতো প্ল্যান করে কি ভালোবাসা হয় নাকি?ভালোবাসতো পুরোটাই মনের উপর।মন তো কোনো প্ল্যান করে না,কোনো বারণ মানে না।সেতো তার জায়গায় স্থির।ভালোবাসার জন্যতো কোনো প্ল্যানের দরকার হয়না।ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলেই উল্টো জীবনের প্ল্যানটা বদলে যায়।সুন্দর হয়ে উঠে পৃথিবীটা।

চলবে……..

সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/chayabithi.11/photos/a.158674299705436/158673836372149/?type=3

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here