ছায়া হয়ে থাকবো পাশে part-4

0
1564

ছায়া হয়ে থাকবো পাশে
partঃ 4
writer ঃ humayra khan

মায়ের কথা শুনে আহানের গলায় খাবার আটকে যায়।
আর সে জোড়ে জোড়ে কাশতে থাকে। তাড়াতাড়ি করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয় ও।
আহানঃ আসলে মা।আমি তো ওই দিক এ তাকিয়ে আমাদের সোফা দেখছিলাম। অনেক সুন্দর সোফা গুলা।তাইনা?? (জোরপূর্বক হাসি দিয়ে)
কি বলছি আমি আবল তাবল।মনে মনে
সাবিনা ঃ বাবা তুই ঠিক আছিস? তুই এত ক্ষন সোফা দেখে যাচ্ছিলি(অবাক হয়ে)।মানুষ ডাক্তারি পরা পরে পাগল হয়ে যায় শুনেছিলাম।আজ নিজের ছেলের মাধ্যমে বুঝতে পারলাম মানুষ এমনি এমনিই বলেনা।
তুই বাইরে থেকে ডাক্তারি পরা পরে এসে কেমন জানি বদলে গেছিস।
আহানঃ যদি আমি তোমাকে বলি আমি সোফাকে নয় সোফায় বসে থাকা মেয়েটি আই মিন চারুকে দেখে যাচ্ছিলাম এতো ক্ষন ধরে তাহলে তো তুমি আমার বারো টা নয় গুনে গুনে তেরো টা বাজিয়ে দিবে।(আনমনে)
মা ওই সব কথা বাদ দাও তো। দেখেছো মা ভাইয়া ভাবি কেমন আমি আসলাম আর তারা একবারও দেখতে আসলোনা শুধু ফোন দিয়েই খবর নিলো আমার।
সাবিনা ঃ তোর ভাই এর কথা বাদ দে।আস্ত একটা বউ পাগলা।তাইতো বউ পেয়ে নিজের জন্মদাতা বাবা মাকে ছেড়ে চলে গেছে বউকে নিয়ে আলাদা হয়ে।এই কারনেই বলি ছেলেদের পছন্দ করা মেয়ে ঘরের বউ করে আনা ঠিক নয়।এই সব মেয়েরা ভুলিয়ে ভালিয়ে মা বাবার থেকে আলাদা করে দেয় তাদের সন্তানকে
মিরাজ ঃ আলাদা হয়েছে কি আর শখে।তুমি যে বউ মাকে উঠতে বসতে ওকে কথা শুনাও সেই কারণেই আবির তার বউকে নিয়ে আলাদা হয়ে গেছে।
সাবিনা ঃ আমি কি ওকে কথা শুনাই নাকি ওর কারণে আমাকে সমাজের মানুষ এর কথা শুনতে হয়।কত বছর হয়ে গেল বিয়ের। এখন পর্যন্ত ও নাতি নাত্নি মুখ দেখার সৌভাগ্য হলো না।(কান্নার মুখ করে)
মিরাজ ঃ সাবিনা তোমার উচিৎ প্রতি দিন একটু করে মধু খাওয়া। মধু খেলে হয়ত তোমার করল্লার মত মুখ কিছুটা মিষ্টি হবে।
সাবিনা ঃ কি আমার মুখ করল্লার মতো তেতো(রেগে)
মিরাজ ঃ হুম।আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় আমার বউ সাবিনা খান নয় রিনা খান।রিনা খানকে ও হার মানাবে( হেসে হেসে)
সাবিনা ঃ এই তুমি কিন্ত বেশি বলছো। দেখ না আহান তোর বাবা আমাকে কি সব কথা শুনাচ্ছে।আমি নাকি রিনা খান!
আহানঃ বাবা তো ভুল কিছু বলেনি।
সাবিনা তার ছেলের কথা শুনে তার ছেলের দিক এ রাগি দৃশটিতে তাকিয়ে থাকে।
আহানঃ ও মা রাগ করছো কেন। আমি তো তোমাকে রিনা খান বলছিনা।আমি বলছি যে। সমাজের মানুষ তো কতো কথাই বলে। তাই বলে কি তাদের কথা গুরুত্ব দিতে হবে।আর কিছু মানুষ এর স্বভাবই এমন। মানুষকে কষ্ট দিয়ে কথা বলা।তাই বলে সমাজের মানুষ এর কথায় তুমি ভাবিকে কথা শুনাবে।আমাদের তো উচিৎ এইসব মানুষ থেকে নিজের আপনদের আগলে রাখা। তাছাড়া সন্তান হওয়া তো একমাএ আল্লাহর হাতে।আল্লাহ যে দিন চাইবে সেই দিন ই হবে।
আর তুমি দেখো খুব জলদি আল্লাহ আমাদের বাসায় ফুটফুটে একটা বেবি পাঠাবে।
সাবিনা তার ছেলের কথা শুনে কিছু বললো না কিন্তু তাকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে সে আহানের কথা এক কান দিয়ে শুনেছে আরেক কান দিয়ে বের করে দিয়েছে।
চারু খাওয়া শেষ করে প্লেট হাতে নিয়ে যেই রান্না ঘরে যেতে নিবে।মিসেস সাবিনা তার সব রাগ চারুর উপর ঝেড়ে দেয়।
সাবিনা ঃ এই যে নবাবজাদি।খুব মজা করেই তো গরুর মাংস দিয়ে ভাত খেলেন। এখন হাত ধুয়ে বাকি কাজ গুলো করে ফেলুন কষ্ট করে।
মিরাজ ঃ ওও করতে যাবে কেন বাসায় এতো সার্ভেনট থাকতে।
সাবিনা ঃ কেন এই নবাবজাদিকে কি বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবো।(চেচিয়ে)
আহান ঃ বাবা ঠিকই তো বলেছে মায়।ওকে কি বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবো আমরা?? তাছাড়া কাজ করলে তো শরীর ফিট থাকে। এই চারু তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে আমার রুমে আয়।আমার কতো গুলো ময়লা কাপড় আছে সেগুলো ধুয়ে দিবি। কথাটা বলে আহান চলে যায় নিজের রুমে।
মিসেস সাবিনা আহানের কথা শুনে বেশ খুশি হয়।
আর মিরাজ সাহেব রাগ করে চলে যায় সে খান থেকে।
চারু ওর হাত ধুয়ে আহানের রুমে এসে দরজায় নক দিলে-
আহানঃ ভিতরে আসো। চারু
চারু আহানের পারমিশন পেয়ে রুমের ভেতরে প্রবেশ করে
চারু ঃ দিন ভাইয়া কাপড়গুলো আমি ধুয়ে দিচ্ছি।
আহান আলমারিতে থাকা কাপড় গুলা নারা চাড়া করে
আহানঃ উফ কাপড় গুলা যে কই রেখেছি আমি খুজেই পাচ্ছিনা।
থাক খুজে পেলে পরে তোমাকে ডাকবো নে। এখন তুমি যাও
চারু আহানের কথা শুনে মাথা নাড়িয়ে জ্বী ভাইয়া বলে রুম থেকে চলে যেতে নিলে আহান ওকে পিছন থেকে ডাক দেয়।
আহানের ডাক শুনে চারু ঘুরে তাকিয়ে –
চারু ঃ জ্বী ভাইয়া কিছু বলবেন।
আহানঃ হুম।ভূতের মতো এই দিক ওই দিক ঘুর ঘুর করবেনা ।সোজা নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পরবে
বুঝেছো কি বললাম।
চারু আহানের কথায় মাথা নাড়িয়ে রুম থেকে চলে গেল।
পরের দিন দুপুরে আহান সবার জন্য আইস্ক্রিম কিনে আনলে সবাইকে একটা করে আইস্ক্রিম দেয়।
যেইনা চারুকে দিতে যাবে মিসেস সাবিনা থপ করে আহানের হাত থেকে আইস্ক্রিম টা নিয়ে –
সাবিনা ঃ চারু আইস্ক্রিম খেলে ওর ঠান্ডা লেগে যাবে আহান।তাই ওর আইস্ক্রিম টা আমিই খাই। সারা দিন কতো কাজ করি।অনেক ক্লান্ত হয়ে পরেছি।দুইটা আইস্ক্রিম খেলে একটু ভালো লাগবে আমার।কথাটি বলে দুই হাতে দুইটা আইস্ক্রিম নিয়ে চলে যায় নিজের রুমে।
আহানের বাবা চারুকে তার আইস্ক্রিম দিতে চাইলে চারু মানা করে দেয়।।
চারু নিজের রুমে চলে যেতে নিলে-
আহানঃ দাড়া চারু আমার একটু গলা ব্যথা করছে।তাই আইস্ক্রিম খেলে স্যমসা হবে তুই আমারটা খেয়ে নে
কথাটি বলে আহান নিজের আইস্ক্রিম টা চারুকে দিয়ে দেয়। আইস্ক্রিম আর ফুচকা চারুর খুব প্রিয়।কেউ দিলে ও সহজে না করেনা।তাই আহানের দেওয়া আইস্ক্রিম হাতে নিয়ে মনের সুখে খেতে থাকে ও
হঠাৎ আহানের মোবাইলে ফোন বেজে উঠে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো ওর ভাবি দিশা ফোন দিয়েছে।
আহান তাড়াতাড়ি করে ফোনটা রিসিভ করে।
আহানঃ হ্যালো আসসালামু আলাকুম ভাবি
দিশা ঃওয়ালাইকুম আসসালাম আমাদের আদরের দেবর।
আহানঃ হয়েছে রাখো।আর পাম দিতে হবেনা।যদি আদর করতে তাহলে আমার সাথে দেখা করতে আসতে।
দিশা ঃ তুমি তো জানো আমি কেন আসি না।আচ্ছা এই সব কথা বাদ দাও। তুমি আমাদের বাসায় কয়েকদিন এর জন্য বেড়াতে আসো।আমি আর তোমার ভাই খুশি হবো তুমি আসলে।আসবেন্না ডাক্তার সাহেব এই গরিবের বাসায়???
আহানঃ কি যে বলোনা ভাবি অবশ্যই
দিশাঃ হুম কালই চলে আইসো।
আহানঃ কি বললে চারুকেও সাথে করে নিয়ে আসবো?
চারু আহানের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ওর দিক এ
দিশা ঃ এই কথা কবে বললাম আমি??(কনফিউজড হয়ে) ।মনে মনে
আচ্ছা ভাইয়া তুমি চারুকেও সাথে করে নিয়ে এসো।
আহানঃ দাড়াও ভাবি একটু হোল্ড করো ফোনটা
তারপর চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে তার মাকে ডাকতে থাকে
মা মা………।
মিসেস সাবিনা আহানের ডাক শুনে দৌড়ে রুম থেকে চলে আসে।
সাবিনাঃ কি হলো আহান এই ভাবে গলা ফাটিয়ে ডাকছিস কেন??
আহান ওর মোবাইলটা স্পিকার এ দিয়ে-
আহানঃ হ্যা ভাবি আবার বলো তো কি জানি বলছিলে
দিশাঃ কি বলছিলাম??
আহানঃ আরে লাস্ট এর কথাটা আবার রিপিট করো।
দিশাঃ ওও। চারুকেও তোমার…………

চলবে…………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here