ভালবাসা বাকি আছে পর্ব-২

0
601

#ভালবাসা_বাকি_আছে – ২
Hasin Rehana – হাসিন রেহেনা

এয়ারপোর্টে বুশরাকে রিসিভ করতে এসেছে তানিয়া। আগে থেকে যে ওদের দুজনের খুব একটা চেনাশোনা ছিল, এমন না কিন্তু। ইংল্যান্ড আসার আগে মেডিকেল কলেজের এলামনাইদের ফেইসবুক গ্রুপ পোস্ট করেছিল বুশরা। যদি কোন সিনিয়রকে পাওয়া যায় সেই আশায়। ভাগ্যক্রমে পেয়েও যায়। সেখান থেকেই তানিয়ার সাথে পরিচয়, তারপরে ম্যাসেঞ্জারে আলাপ। সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে বুশরার দুই বছরের সিনিয়র ছিল তানিয়া। একই ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষার জন্য এসেছে বছরখানেক আগে।

বিদেশ বিঁভুইয়ে এই স্বল্পচেনা মানুষগুলোও বড্ড আপন হয়। তার প্রমাণ দিতেই বোধহয় ম্যানচেস্টার থেকে এতটা পথ ড্রাইভ করে তানিয়া এসেছে কলেজের ছোট বোনকে রিসিভ করতে। তানিয়াকে খুঁজে পেতে খুব একটা কষ্ট হলো না বুশরার। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, তানিয়ার বিদেশী পোষাকের আড়ালে দেশি আন্তরিকতা ফিকে হয়নি একদমই। বুশরাকে দেখেই যেভাবে উচ্ছ্বসিত হয়ে জড়িয়ে ধরলো যেন কতদিনের চেনা৷ তারপর একটা লাগেজের ভার নিজে নিয়ে নিল।

“কোন সমস্যা হয়নি তো আসতে?”, কন্ঠে উদ্বেগ ঢেলে প্রশ্ন করলো তানিয়া।

“না আপু। তেমন কোন সমস্যা হয়নি।”

“খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে তোমাকে। চলো গাড়ির ব্যাকসিটে শুয়ে চোখ বন্ধ করে একটা ঘুম দিবা। পৌঁছে আমি ডেকে দিব।”

“আপু একটা সিমকার্ড কেনা দরকার।”, একটু থেমে আবার যোগ করলো, ” খুব ঝামেলা দিচ্ছি আপনাকে আপু।”

বুশরা ইতস্তত করছে দেখে তানিয়া বনেটে লাগেজপত্র রাখতে রাখতে বললো,
“বাসায় কথা বলবা তো, গাড়িতে বসে আমার ফোন দিয়ে কথা বলো। কাল আমরা দুজনে গিয়ে সিমকার্ড কিনবো। ঠিক আছে? আর হ্যা ঝামেলার কথা আবার বললে কিন্তু র‍্যাগ দিবো এই বয়সে। তখন বুঝবা মজা। হা হা…”

গাড়িতে উঠে রায়হানকে ফোন করলো বুশরা। একবার রিং হয়ে কেটে গেলে অযথাই অভিমান হলো বুশরার। নিজেকেই নিজে বুঝালো হয়ত ফোনের কাছে নেই মানুষটা। তবে মন খারাপ দীর্ঘস্থায়ী হলো না। তার আগেই ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।

“বুশরা..”

“কি করে বুঝলে যে এটা আমিই?”

ফোনের ওপাশে মৃদু হাসলো রায়হান, “আমার একটাই প্রিয় মানুষ বিদেশে ম্যাডাম।”

এই কথার পিঠে কথা খুঁজে পেলোনা বুশরা। আর পেলেও তানিয়া আপুর সামনে বলতে ইতস্তত লাগছে। তাই ছোট্ট করে বললো, “হুম।”

“কি হুম? ঠিকমত পৌঁছাতে পেরেছো? মিস তানিয়াকে পেয়েছো? এটা কি তোমার নতুন নাম্বার?”

একবারে এতগুলো প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললো বুশরা। কৌতুকের সুরে বললো, “আরো কয়েকটা প্রশ্ন করো, একবারে উত্তর দিই। কি বলো?”

ওপাশের মানুষটা একটু থেমে এবার বললো, “ঠিক আছো তুমি?”

“জি জনাব। পৌঁছে তানিয়া আপুকে পেয়েছি। এটা আপুর নাম্বার। কাল সিম কিনে ফোন করবো নতুন নাম্বার থেকে। এখন তানিয়া আপুর বাসায় যাচ্ছি। মা কে একটু দাও, কথা বলবো।”

“আমার সাথে কথা নেই? তাহলে মায়ের ফোনে কল দিলেই হতো।”

মুখে যাই বলুক, ফোন কানে মায়ের ঘরের সামনে পায়চারী করছে মানুষটা। মাকে নামাজ পড়তে দেখে আর ভেতরে যায়নি। মেয়েটা ভালোমত পৌঁছে গেছে এই খবর মাকে কতখানি স্বস্তি দিবে সেটা রায়হানের চেয়ে ভালো কে বা জানে।

“আম্মা নামাজ পড়ছে। ততক্ষণ আমার সাথে কথা বলতে না চাইলে কেটে দাও ফোন।“

অভিমানী অভিযোগে অসহায় বোধ করলো বুশরা। বিড়িবিড় করে বললো, “আপনি খুব হিংসুটে হয়েছেন চেয়ারম্যান সাহেব।“

রায়হান মনে মনে ভাবে, আসলেই হিংসুটে হয়েছে সে। বুশরার প্রতি মায়ের ভালবাসা দেখে মাঝে মাঝে সে ভাবে মা আসলে কার?

“তা হয়েছি একটু।“

“একটু?“

ফোন কানে চেপে রেখে হাজার হাজার মাইল দূরে দুজন মানুষ হেসে উঠলো একসাথে। সে হাসিতে আনন্দ আছে, আছে বিষাদ।

শিউলি বেগম নামাজ শেষ করে ঘরের বাইরে আসলেন। তিনি ছেলের কন্ঠ শুনেছেন ঘরের ভেতর থেকেই, বুশরা ফোন করেছে হয়ত।

মাকে দেখে রায়হান বলল, “মা বুশরার ফোন। কথা বলো। আমি রুকুকে ডাক দিই। পরে নাহলে চিল্লাচিল্লি করবে।“

ছেলেকে ইশারায় দাঁড়াতে বলে চুপচাপ ফোনটা হাতে নিলেন তিনি। মনে মনে দোয়া পড়া শেষ করে রায়হানের গায়ে ফুঁ দিলেন। বিদেশ বিভুইয়ে থাকা বৌমা নামক আদরের মেয়েটাকেও অদৃশ্য ফুঁ দিলেন ফোন মারফত। তারপর কথা বলা শুরু করলেন। রায়হান চলে গেল ছোট বোনটাকে ডাকতে।

“শরীর ঠিক আছে বুশরা?”

“একদম ঠিক আছে। এত্ত চিন্তা কইরো না মা? তুমিই অসুস্থ হয়ে যাবা কিন্তু পরে।”

“মায়ের মন তোমরা তো বুঝবা না এখন। আগে নিজেরা মা বাপ হও তখন বুঝবা আম্মা কেন এত চিন্তা করে।“

মায়ের ভালবাসা কি সেটা তো বছরখানেক আগেও বুঝতো না বুশরা। অথচ এখন নিজেকে বড্ড সৌভাগ্যবতী মনে হয় শিউলি বেগম মাতৃস্নেহের শীতল ছায়ায় নিজেকে পেয়ে। ও তো কখনো ভাবেইনি জীবনে কখনো মায়ের স্নেহ পাবে। সত্যি বলতে, রায়হানকে ছেড়ে আসতে যতটানা কষ্ট হয়েছে এই মময়াময়ী নারীকে ছেড়ে আসতে তার চেয়ে কিছু কম কষ্ট হয়নি মেয়েটার।

টুকটাক কথাবার্তা বলতে বলতেই শিউলি বেগমের হাত থেকে ফোন বেহাত হয়ে যায়। চঞ্চলা রুকু ফোন কানে নিয়েই হড়বড় করে বলতে থাকে,

“কখন পৌঁছালি? কেমন লাগছে ওখানে? তানিয়াপুর বাসা কতদূর পৌঁছে গেছিস বাসায়?”

“আস্তে দোস্ত, আস্তে। তুই ও যে তোর ভাইয়ের মত করছিস।“

ভুল যায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে বুঝে জিহ্বায় কামড় দিল বুশরা। কথা ঘুরানোর চেষ্টা করলো তাই, “প্লেন ল্যান্ড করছে ঘন্টাখানেক…”

তবে তাতে খুব একটা লাভ হলো না। চোর ধরা ধরলো রুকু, “এই ওয়েট ওয়েট, আমার ভাইয়া এত ইম্পালসিভ হলো কবে থেকে? কি মায়াজাদু করে গেছো বন্ধু?”

লজ্জার রেখা ছড়ালো বুশরার শ্যামলা গালদুটায়। এদিকে ছোট বোনের কান ধরে মুচড়ে দিয়েছে রায়হান।

“আহ ভাইয়া”

“অন্যের ফোন থেকে আর কত কথা বলবি তোরা?”, বলল রায়হান। তারপর নিজ মনে বিড়বিড় করে বলল, “খালি আমার সাথেই কথা পায়না।“

প্রিয় বান্ধবীকে বিদায় জানিয়ে ভাইকে বললো, “কিছু বললে ভাইয়া?”

“কই কিছু না তো। আমার ফোন দে।“

ফোনটা হাতে নিয়ে গটগট করে হেঁটে চলে গেল রায়হান।

ভাইয়ের গমনপথের দিকে তাকিয়ে রুকু মন মনে বলল, “দূরত্ব থেরাপি তো ভালই কার্যকর!!”

চলবে…

#ডাক্তার_মিস – সিকুয়েল
#ভালবাসা_বাকি

আপনাদের ভালবাসাকে পুঁজি করে আমার প্রথম ইবুক “বর্নিল সাদাকালো” আজ প্রকাশ হয়ছে বইটই ইবুক প্ল্যাটফর্মে। খুব খুশি হবো যদি আপনারা আমার বইটই প্রোফাইলের ফলোয়ার(অনুসারী) লিস্টে এড হোন। ধন্যবাদ।

ইবুক লিংকঃ https://link.boitoi.com.bd/gRyX

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here