#আমি_সেই_চারুলতা
#Shuvra_Priya (স্নেহা)
#পর্বঃ৩৬
_______________________
কারোর পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। নীচ থেকে কেউ একজন উপর আছে। সম্ভবত সাজিদ! চারু বিন্দুমাত্র নড়লো না। এখন আর লুকোচুরির কিছু নেই। যা হওয়ার সরাসরি হবে। চারু কেমন অপ্রকৃতস্থের মতো তাকিয়ে আছে ছবিটির দিকে। ছবিতে থাকা ছেলেটি হামিদ তা এখনো বিশ্বাস হতে চায়না চারুর। মনে হচ্ছে এখনই কিছু হবে আর তার ঘুম ভেঙে যাবে। তারপর দেখা যাবে, সে স্বপ্ন দেখেছে। হামিদ জড়িত নয় এসবের সাথে। এইটা কেবলই এক দুঃস্বপ্ন। দুনিয়ায় সবাইকে সে খারাপ হিসেবে মানতে পারবে কিন্তু হামিদ! সবসময় যাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে এসেছে সে কিভাবে? হামিদ কিভাবে পারলো চারুর বুকের ভিতরটাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে? চারুর শরীরে যে একটা আঘাত সহ্য করতে পারেনা সে কিভাবে মনে এতটা আঘাত করতে পারে? চিন্তাশক্তি এমন লোপ কেনো পাচ্ছে চারুর? এমন সময়েই দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো সাজিদ। চারুর হাতে থাকা ছবিটা দেখে এক মুহুর্তের জন্য চমকে উঠলো সে।
– এত বড় ছলনা কিভাবে করলেন সাজিদ?
চারুর শান্তকণ্ঠে এমন কথায় দিশেহারা হয়ে গেলো সাজিদ।
– না বেলিফুল, আপনি ভুল বুঝছেন আমাকে। আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমন কিছুনা।
চারু কিছু না বলে স্টোর রুম থেকে বেড়িয়ে নিজের ঘরের দিকে গেলো। সাজিদও চারুর পিছুপিছু ছুটলো।
– বেলিফুল, আমার কথাটা শুনুন বেলিফুল।
সাজিদের কথার প্রতিউত্তর করলোনা চারুলতা। গোপনে বিছানার নীচে লুকিয়ে রাখা ছু*ড়িটা বের করলো সে।
– আপনাদের আজ আমি খুন করবো সাজিদ। বিশ্বাসঘাতকদের জায়গা আমার জীবনে নেই।
– বেলিফুল আপনি ভুল বুঝছেন আমাকে। আমার কথাটা আগে শুনুন।
– কি মনে হয় আপনার? আপনি আমাকে যাচ্ছেতাই বুঝিয়ে দেবেন আর আমি তা মেনে নেবো?
– আপনি আগে শুনন।
চারু হঠাৎই খুব আক্রমনাত্মক হয়ে উঠলো। হামিদের ছলনা মেনে নিতে না পেরে কাছে থাকা সাজিদের উপরই সে আক্রমণ করে বসে। সাজিদের হাতের কিয়দংশ কে*টে র*ক্তক্ষরণ শুরু হয়,
– কেনো এমনটা করলেন সাজিদ? আমার মনে একটু হলেও জায়গা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন আপনি তবে কেনো মূহুর্তে সব তছনছ হয়ে গেলো?
– বেলিফুল আপনি,,,
চারু এইবার চিৎকার করা শুরু করলো। ঘরের মাঝে সাজিয়ে রাখা ফুলের টবগুলো ছুড়ে মারলো সাজিদের দিকে। প্রচন্ডরকমের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় তার সাজিদের সাথে। সাজিদ শুধু নিজেকে বাচ্চাছিলো কিন্তু চারুকে আ*ঘাত করছিলোনা ফলে একটা পর্যায়ে গিয়ে চারু সাজিদকে কাবু করে ফেললো। সাজিদকে ছু*ড়ির আঘাত করতেই যাবে এমন সময়েই কেউ জাপটে ধরলো চারুকে। সাজিদের কাছ থেকে সরাতে চাইছে। চারুর মাঝে কোনো হিতাহিত জ্ঞান নেই। সে চেষ্টা করে যাচ্ছে নিজেকে ছাড়ানোর। একজন পারছেনা বলে আরো একজন এসে চারুকে শান্ত করার চেষ্টা করে থাকে। দুজন মিলে আটকে নেয় চারুকে। চারু একবার পেছনে ফিরে তাকায়। প্রথমে যে তাকে ধরেছলো সেটা হামিদ এবং পরবর্তীতে হিমেল এসে সাহায্য করেছে তাকে।
– চারু কি করতাছস তুই? সাজিদরে খু*ন করতে চাইতাছস ক্যান?
হামিদের কথায় একমুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো চারু। কলিজাটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে তার।
– তুমি কিভাবে পারলে এমনটা করতে?
চারুর কথায় থমকে গেলো হামিদ। চোখেমুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট! তবে কি চারু সব জানতে পেরে গেলো?
– অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছিলাম তোমাকে আমি। এই প্রতিদান দিকে আমার বিশ্বাসের?
– চারু আমি,, আমার কথাটা শোন। আমি,,,
চারু সুযোগ দেয়না। হঠাৎই এলোমেলো আ*ঘাত করা শুরু করে হামিদকে। হাত দিয়ে করা আঘাত হামিদের শরীরে না লাগলেও কলিজা ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে তার। চারুর এ অবস্থা সে কিছুতেই মানতে পারছেনা। যার জন্য এতকিছু হলো, তারই এই অবস্থা কিভাবে মানবে হামিদ? সাজিদ আর হিমেল চারুকে আটকানোর চেষ্টা করলে ঘরে থাকা বড় ফুলদানিটা দিয়ে হিমেলের মাথায় সর্বশক্তি দিয়ে আঘা*ত করলো চারু। হিমেল অচেতন হয়ে মেঝেতে পড়ে গেলো। চারুর পাগলামি থামলো না। সে সাজিদকেও ফুলদানি দ্বারা আঘা*ত করলো কিন্তু সেটা খুব বেশি জোরে লাগলো না। তারপরও সাজিদ মেঝেতে পড়ে গেলো। এইবার চারুর সকল আক্রশ গিয়ে পড়লো হামিদের উপর। চারু এখন আহত বাঘিনীর ন্যায় খেপেছে। তাকে শান্ত করার সাধ্য কার? একজন মানুষ যখন জীবনের সবটা হারিয়ে ফেলে তখন আর তার বেঁচে থাকতে ইচ্ছে হয়না আর যখন একটা মানুষের মৃত্যুকে সবচেয়ে বেশি আপন মনে হয়, মৃত্যুকে সে স্বীকার করে নিতে পারে ওমনি সে ভয় পেতে ভুলে যায়। হয়ে যায় ভয়ংকর থেকে ভয়ংকরতম। এতক্ষণ ধস্তাধস্তির ফলে ছুড়িটা নীচে পড়ে গিয়েছিলো৷ নীচে থাকা ছু*ড়িটা নিয়ে আক্রমনাত্মকভাবে চারু ছুটে যায় হামিদের দিকে। হামিদ একপ্রকার ভড়কে যায়৷ ফলাফলস্বরূপ, চারুর এক ধাক্কায় নীচে পড়ে যায় সে। চারু পাগলের মতো সেটাকে হামিদের বুকের বা পাশে চালাতে গেলে হামিদ নিজের চোখ বন্ধ করে নিলো। কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও হামিদ কোথায় কোনো আঘা*তের স্পর্শ পেলো না। হামিদ ধীরে ধীরে নিজের চোখ খুলতেই দেখা গেলো অশ্রুজলে টইটম্বুর চারুর আঁখিদ্বয়। হাত থেকে পড়ে গেলো ছু*ড়িটা।
– আমি পারলাম না। তোমাকে আঘা*ত করা আমার পক্ষে সম্ভব না। তুমি আমাকে ভালো নাই বাসতে পারো আমার ভালোবাসাটা তো মিথ্যা ছিলোনা। কেনো করলে এমনটা আমার সাথে? আমি তো তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম? ধরনীতে আমার বিশ্বাসযোগ্য মানুষ তো কেবল তুমিই ছিলে। তবে কেনো এক মুহুর্তে সব শেষ হয়ে গেলো? কেনো খেললে আমার বিশ্বাস নেই? শরীর হ*ত্যার চেয়ে আত্মা হ*ত্যা যে অনেক বেশি যন্ত্রণাদায়ক! তবে তুমি আমার আত্মাকে কেনো খুন করলে? কেনো খু*ন করলে আমার আত্মাকে? উত্তর দাও।
চারু হামিদকে জড়িয়ে ধরেই হাউমাউ করে কাদতে শুরু করলো। হামিদও স্তব্ধ। আসলেই কি সে হ*ত্যাকারী? নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকেই সে হ*ত্যা করেছে?
– আমি কেনো তোমাকে খু*ন করতে পারলাম না? আমি যেনো তোমাকে না খু*ন করি তাই এভাবে আমার বিশ্বাস অর্জন করেছিলে তুমি, তাই না? তুমি যদি ভেবে থাকো তুমি এভাবে বেঁচে যাবে তাহলে আমাকে বলতে হয় তোমার পরিকল্পনা শতভাগ সফল হয়েছে ভাইয়া। আজ আমি হেরে গেলাম। বাস্তবতার কাছে হেরে গেলো আমার আবেগ। আমি এতদিন ভাবতাম দুনিয়ায় একজন মানুষ অন্তত আমাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে কিন্তু আমার জীবনে ভালোবাসা নেই। সবটাই মিথ্যা। চারুলতার অস্তিত্বটাই মিথ্যা। ব্যাস আমি হার মেনে নিলাম। আমি সত্যিই ভীষণ ক্লান্ত! তোমার চারুলতা আজ হেরে গেলো ভাইয়া। কি চাও তুমি? বলে দাও, তুমি যা চাইবে তাই হবে। আমাকে মে*রে ফেলতে চাও? মেরে ফেলো। বিশ্বাস করো একবারও বাধা দেবোনা আমি। এমনকি চাইলে সেই বসের কাছে দিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধারও করতে পারো। আমার জীবনের সিদ্ধান্ত আমি তোমার উপর ছেড়ে দিলাম। তোমার চারুলতা আজ জীবন্ত ম*রে গেলো ভাইয়া। আর তাকে নিজের হাতে খু*ন করলে তুমি। তবুও আফসোস নেই, মৃ*ত্যুর আগ পর্যন্ত তোমাকে ভালোবেসে যাবো আমি কারণ আমার যে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই। তোমাকেই নিজের আপনজন ভেবে নাহয় মৃ*ত্যুবরণ করলাম। তুমিই দুনিয়ার একমাত্র মানুষ যে আমার সাথে অন্যায় করেও বিন্দুমাত্র শা*স্তি পায়নি এর কারণ আবেগ। এই আবেগ দুনিয়া ভুলিয়ে দিতে সক্ষম। আমার আবেগই আমাকে শেষ করে দিলো। আমাকে জীবন্ত খু*ন করলো। তোমার কাছে আমার কিছু চাওয়ার নেই শুধু প্রশ্ন কেনো করলে এমনটা আমার সাথে?
– চারু আমি,,,
– থাক বলোনা। আমি সহ্য করতে পারবোনা। তুমি বরং এক কাজ করো, যেভাবে আমার আত্মাকে খু*ন করেছো সেভাবে আমাকেও মে*রে ফেলো। আমি এইবার একটু শান্তি চাই৷ আর যদি মারতে না-ই পারো, বসের সাথে মিলে আমাকে বিক্রি করার ইচ্ছেই থাকে তবে আমাকে সব ভুলিয়ে দাও। আমি এই বিষাক্ত স্মৃতি নিয়ে আর থাকতে পারছিনা। একেকটা মুহূর্ত যেনো আমাকে একেবার নতুন করে মেরে ফেলছে।
চারুর প্রতিটি বাক্য হামিদের বুকে ধারালো ছু*ড়ির ন্যায় বিধছে। সেখানে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। চোখে অশ্রুজলেরা হানা দিচ্ছে। হামিদ আজ সব বলে দিতে চাইছে চারুকে। চারুর এমন কষ্ট সে সহ্য করতে পারবেনা আর এখানে চারুর কষ্টের কারণ স্বয়ং সে! কিন্তু চারুকে সত্য জানানোর সাহস তার নেই। কিভাবে সে মেনে নেবে এইসব? হামিদ কিছু বলার আগেই পেছন থেকে সাজিদ, চারুর ঘাড়ে ইঞ্জেকশন দিয়ে তাকে অজ্ঞান করে ফেললো।
– এইডা কি করলেন আপনে? কি করলেন আমার চারুর সাথে।
– শান্ত হও হামিদ, কিচ্ছু করিনি। অজ্ঞান করে দিয়েছি। জ্ঞান থাকলে কি থেকে কি করবে বলা যায়না। চিন্তা করো না কিচ্ছু হবেনা ওর।
– আপনেরে আমি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করিনা।
– হঠাৎ কি এমন হলো যে তুমি আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারছোনা।
– কারণ চারু আপনেরে বিশ্বাস করেনা। আর চারু যহন আপনেরে বিশ্বাস করেনা তারমানে আমিও করতেছিনা। চারু যহন আপনেরে সন্দেহ করছে তারমানে নির্ঘাৎ ঘাপলা আছে আপনের মাঝে।
– হামিদ ও কিছু জানেনা তাই সন্দেহ করছে। তুমি তো সবটা জানো।
– আপনে যে আমারে সত্যি বলেন তার কি গ্যারান্টি? ওরে নিয়া আমি একফোঁটা ঝুকিও নিতে চাই না।
– ঠিক আছে। আগে ওকে খাটের উপরে তুলে দেই। বাকিটা পরে দেখা যাবে। মেঝেতে ফেলে রাখা উচিত হবেনা।
– আপনের কিছু করতে হইবো না। আমার বোনরে আমিই দেখতে পারমু। আপনে ওই মরাটারে বাঁচান। ফুলদানির আঘা*তেই সে কাহিল। এমন বলদ পুলিশে ঢুকলো ক্যামনে কে জানে!
– একটা কথা বলি?
– কি?
– জ্ঞান ফিরলে আবার কোনো পাগলামি করবে। হাত-পা বেধে ফেলি চারুর?
– খবরদার না। ও যাই করুক হাত-পা কিচ্ছু বাধা হইবো না।
– ভাই-বোন দুটোই পাগল।
সাজিদের বিরবির করে কথাটা হামিদ শুনলেও কিছু বললোনা। এখন চারুর সুস্থতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
– ওর জ্ঞান কহন ফিরবো?
– বেশিক্ষণ সময় লাগবেনা।
★
সাজিদ ভেবেছিলো চারুর জ্ঞান ফেরার পরে সে আবার পাগলামি শুরু করবে কিন্তু এমন কিছুই হলোনা। চারু শান্তভাবেই উঠে বসলো। মনে হয় যেনো সদ্য ঘুম ভেঙে উঠে বসা এক তরুনী। হামিদ এবং সাজিদ খাটে বসে ছিলো এবং হিমেল সোফায়। চারুকে উঠতে দেখে প্রথমে সে কিছুটা পিছিয়ে গেলেও পরক্ষণে হামিদের পাশে এসে দাঁড়ায়,
– কেমন আছো চারুলতা?
– আপনাদের দুজনকে খু*ন করতে পারলে ভালো লাগতো।
হিমেল ভেবেছিলো চারু উত্তর দেবেনা কিন্তু চারুর এহেন উত্তরে ভড়কে গেলো সে। দুজন বলতে কে? সে আর সাজিদ? এটাই হবে হয়তো। চারু যে হামিদকে কিছুই করতে পারবেনা সেটা কিছুক্ষণ আগেই সাজিদের কাছে জেনেছে সে।
– আপনি আমাদের ভুল বুঝছেন। অন্তত এক্সপ্লেইন করার সুযোগটা দিতে পারতেন।
– দিতে চাইছিনা।
– চারু তুই কথাটা শোন আমাদের৷ আমরা,,,
– যদি আমার হাতে থাকতো তো আমার আত্মাকে খু*ন করার অপরাধে আমি তোমাকে ভয়ংকরতম শা*স্তি দিতাম৷ কিন্তু আফসোস, সেটা কখনো সম্ভব নয়। বিশ্বাস নামের অনুভূতিটাও আজ থেকে চিরতরে উঠে গেলো ভিতর থেকে, শুধুমাত্র তোমার জন্য৷
– তুই আমারে বিশ্বাস কর বা না কর সত্য এইটাই যে আমি যা করছি তোর জন্য করছি৷ তোর জীবনডা স্বাভাবিক করতে করছি৷
– এভাবে?
চারুর কণ্ঠে এমন কিছু একটা ছিলো যেটা সরাসরি হামিদের বুকে গিয়ে লাগলো।
– চারু আমি চাই নাই তুই বসটারে খুজতে যাস। তুই তারে খুজিস না।
– কেনো খুজবো না?
– তুই একটা স্বাভাবিক জীবন মাইনা নে। শুধু শুধু আর কারোর পেছনে লাগার প্রয়োজন নেই। তারা যহন আমাদের আর বিরক্ত করতাছেনা তহন ব্যাপারটা এইখানেই শেষ করা উচিত।
– তুমি বিশ্বাস করো আমি এইটা মেনে নেবো?
– তুই মানবিনা বইলাই আমি এতদিন তোরে কিছু বলি নাই।
– নাজমা বেগম আসলে কে?
– তুই-ই বল।
– সারদা দেবী? আর সাজিদ আর তার মতো দেখতে আরেকজন তার সন্তান?
– কিসব পাগলের প্রলাপ বলছেন আপনি? আপনি আমার স্ত্রী বেলিফুল। আমি যদি সারদা দেবীর ছেলে হই তাহলে আমাদের সম্পর্ক কি দাঁড়ায়? পাগল হয়েছেন আপনি?
– তাহলে তিনি প্রতিমা দেবী যিনি সারদা দেবীর সাথে পালিয়ে এসেছিলেন?
– হ্যাঁ৷
– ছবিতে দাঁড়িয়ে থাকা নাজিমুদ্দিন আর তার অপরপাশে আরেকজন লোক ছিলো। সে কে?
– প্রতিমা আন্টির হাসবেন্ড ছিলেন।
– আন্টি?
– হ্যাঁ। প্রতিমা আন্টি আমার মা নন। আমার মায়ের মতো।
– নাজমা বেগম বলতে কেউ নেই?
– আছে। আমার মায়ের নাম নাজমা বেগম। আমি প্রতিমা আন্টিকেই আমার মায়ের নামটা দিয়েছি।
– ছবিতে থাকা দুটো সাজিদ?
– আমার একটা জমজ ভাই ছিলো।
– ছিলো?
– হুম। কয়েকবছর আগে রোড এক্সিডেন্টে তার মৃ*ত্যু হয়।
– তারমানে আমার ভাইয়ের সাথে আপনাদের পরিচয় অনেক বছরের?
– প্রায় আট বছর।
– হিমেল কে?
– আমি জানি আপনি বুদ্ধিমান। হিমেল কে সেটা নাহয় আপনিই বলুন।
– নাজিমুদ্দিন ওরফে বিশ্বজিতের সন্তান ছয়জন। তন্মোধ্যে দুজন মেয়ে। চার ছেলের মাঝে দুজন ভিনদেশে আছে৷ আরেক ছেলে হামিদ এবং আমার অনুমান ভুল না হলে হিমেলই তার ষষ্ঠতম সন্তান।
– ঠিক ধরেছেন।
– নিজের বাবার খু*নীকে কেনো সাহায্য করলেন হিমেল?
– তাকে আমি নিজেও খু*ন করতে চেয়েছিলাম। সাহসের অভাবে পারিনি। আমি তোমার মতো এত সাহসী না চারুলতা।
– তাও তো আমার জীবনটা এভাবে এলোমেলো করে দিলেন।
– আমি ইচ্ছে করে করিনি। ব্যাস তোমার ভালোর জন্য করেছি।
– আমার ভালো আপনি কেনো চাইবেন হিমেল? যেখানে আপনি নিজের জন্মদাতাকে ঘৃণা করেন সেখানে তার কন্যা হিসেবে আমার জন্য আপনার চোখে কিসের মায়া?
– র*ক্ত তো একই।
– ঠিকই বলেছেন। বেইমানির র*ক্ত, স্বার্থপরতার র*ক্ত, নিকৃষ্টতর মানুষটির র*ক্ত। নাজিমুদ্দিন ওরফে বিশ্বজিত আপনার বাবা ছিলো। তাকে ছাড়িয়ে সত বোনের প্রতি কিসের মায়া?
– হয়তো তুমি আমার অপূর্ণ ইচ্ছে পূরণ করেছো তাই মায়া লাগছে তোমার প্রতি।
– এটাকেই বলা হয় স্বার্থপরতা। অবশ্য আমি নিজেও কম স্বার্থপর নই। নিজ স্বার্থের জন্য সব করতে পারি আমি শুধু পারলাম নিজের পেছনে ছু*ড়ি গাথা সেই বিশ্বাসঘাতককে খু*ন করতে। নাজিমুদ্দিনের মতো এতটা স্বার্থপর হতে পারলাম না। নাজমা বেগম মানে প্রতিমা দেবীর কোনো বোন নেই। সে কোথায় গেছে সাজিদ?
– তীর্থে গেছে। আপনাকে সেটা বলা যেতো না তাই বলা হয়েছে বোনের বাড়িতে গিয়েছে।
– আপনারা তিনজন আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে মাসুম চেহারার বিশ্বাসঘাতক।
– আমরা বিশ্বাসঘাতক নই বেলিফুল। আপনি শুধু একবার সবটা শুনুন।
– কার কথা শুনতে বলছেন? একজন অস্তিত্বহীন ব্যক্তির? আপনি তো সাজিদ নন। সাজিদের জমজ ভাই। আমি কার কথা শুনবো?
চারুর কথায় সকলে ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো। সাজিদ অবাক বিষ্ময়ে জিজ্ঞেস করলো,
– আপনি কিভাবে জানলেন?
– এতটাও বোকা আমি নই। সন্দেহ আগেই ছিলো আপনার উপর। কি বলেছিলেন আমাকে, আমি আপনার জীবনের প্রথম নারী অথচ আপনার একটা মেয়ে আছে। আমি কথাটা ঘোরানোর জন্য ঘাবড়ে গিয়ে বলে দিলেন “তাড়াহুড়ো করে এইটা বলে দিয়েছেন।” আপনি যদি ঘাবড়ে না যেতেন তাহলে বোধহয় সন্দেহ করতাম না।
– আমি তো আগেই কইছিলাম আপনেরে বিশ্বাস করা যায়না। এত বড় ধোকাটা ক্যামনে দিলেন? কে আপনে? সত্যি কইরা বলেন।
– আমি সিফাত।
গল্পের আসল লেখিকা শুভ্রা আহমেদ প্রিয়া।
– সাজিদ কেনো সাজলেন?
– প্রথম থেকে একটু ধৈর্য্য নিয়ে সবটা শুনুন দয়া করে। আমার পরিবার বলতে শুধু ছিলো, আমার মা বাবা আর আমরা দুই জমজ ভাই। সাজিদ আর সিফাত। আমরা মুসলিম হলেও আমাদের বাড়িটা ছিলো হিন্দু পাড়ার কাছাকাছি তাই তাদের সাথে আমাদের এক সখ্যতা হড়ে ওঠে। সেখানেই আমাদের প্রথম পরিচয় হয় প্রতিমা আন্টির সাথে। উনি ছিলেন খুবই সহজসরল। সারাক্ষণ পূজা পার্বনে ব্যস্ত থাকতেন। আন্টির ছোট একটা ছেলেও ছিলো। আন্টির সাথে আমাদের পরিবারের মিলবন্ধন হলো খুবই দ্রুত। আমার বাবার শখ ছিলো বিদেশি স্টাইলে বাড়ি বানাবে। আপনি হয়তো খেয়াল করেছেন এমন বাড়ি সচারাচর দেখা যায়না। উন্নত বিশ্ব্বের অধিকাংশ জায়গায় বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে ওঠে ফলে অনেকে জায়গা নিয়ে বাড়ি তোলা সম্ভব। আমার বাবাও তাই করলেন। পঁচিশ বছর যাবত একটু একটু করে টাকা জমাতে লাগলেন আর শেষে প্যানশনের বাকি টাকাটা দিয়ে নিজের পছন্দের বাড়িটা তুললেন তবে বাড়িটা পছন্দের হলেও সেই বাড়িতে থাকার স্বপ্ন আমার বাবার পূর্ণ হলোনা৷ আমি আর সাজিদ সামার ভ্যাকেশনে হাওয়াই গিয়েছিলাম তখন। বাবা-মা, প্রতিমা আন্টি, তার স্বামী এবং ছোট ছেলেটা সকলে মিলে সপিং করতে যাচ্ছিলো। কিন্তু যাওয়ার পথেই গাড়ি খুব জোরে একটা ধাক্কা খায় ট্রাকের সাথে। মুহূর্তের মাঝে আমার বাবা, প্রতিমা আন্টির ছেলে আর তার স্বামী স্পট ডেড। মা আর প্রতিমা আন্টি বেঁচে থাকলেও তাদের অবস্থা ছিলো করুন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। খবর পেয়ে আমি আর সাজিদ ছুটে এলাম। ডাক্তাররা প্রতিমা আন্টিকে বাঁচাতে পারলেও মা-কে বাঁচতে পারলেন না। মুহূর্তের মাঝে বাবা-মাকে হারিয়ে এতিম হয়ে গেলাম আমরা দুই ভাই আর প্রতিমা আন্টি নিজের স্বামী আর একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে গেলেন। সেই দুর্ঘটনা আমাদের জীবনটাকেই বদলে দিলো। মুহুর্তের মাঝে সব তছনছ হয়ে গেলো। প্রতিমা আন্টি আমাকে আর সাজিদকে আকড়ে ধরলেন বাঁচার জন্য আর আমরা আন্টিকে। আমাদের জন্য আন্টি মায়ের চেয়ে কিছু কম ছিলেন না।
– এসবে আমি কিভাবে জড়ালাম?
– আমি আগেই বলেছিলাম আমাদের দুই পরিবারের সম্পর্ক খুব ভালো ছিলো তাই মাঝেমধ্যে নাজিমুদ্দিন ওরফে বিশ্বজিত যখন প্রতিমা আন্টিকে দেখতে আসতেন তখন তার সাথেও আমাদের পরিচয় হয়। কথায় কথায় জানতে পারি তারও দুজন ছেলে। প্রতিমা আন্টি অনেকদিন নিজের দিদিকে দেখেনি বিধায় খুব জোর করতে লাগলেন দুই ছেলে আর তার দিদিকে নিয়ে আসতে। এইটা সেই এক্সিডেন্টের আগের ঘটনা। নাজিমুদ্দিন উপায়ন্তর না দেখে বলেন সারদা দেবী কাজে আটকে গেছেন আর ছেলে হিসেবে নিয়ে আসেন হামিদ এবং হিমেলকে। আপনার হাতে যে ছবিটি সেটা সেদিনেরই।
– তারমানে তুমি আগে থেকেই হিমেলকে চিনতে? সবটা জেনেও তুমি লুকিয়েছিলে ভাইয়া?
– কি বলতাম আমি? আমি যদি মা-কে বলতাম তার স্বামীর আরেকটা বউ আছে আবার সেখানে আরেক ছেলেও আছে তাইলে মা কি ওইডা মানতে পারতো? (হামিদ)
– বেইমান কোথাকার! (চারু)
– সেদিন হামিদ ভুল করে চারুর একটা কথা টেনে ফেলে। নাজিমুদ্দিন নিজেকে ঢাকতে বলে তার একটা মেয়েও আছে। হামিদের মতই দেখতে। আর আপনার জীবনের মোর সেদিনই ঘুরেছিলো চারুলতা। জানতে চান কি হয়েছিলো?
বিঃদ্রঃ অনেক চেষ্টা করেও আজ সম্পূর্ণ রহস্যের সমাধান হলোনা। কাল হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। ভালো রেসপন্স আসলে পরবর্তী অংশ আগামী কালই আসবে।
_______________________
To Be Continued…
®শুভ্রা আহমেদ প্রিয়া