এমনও প্রেম হয় পর্ব:-৩৪

0
827

#এমনও_প্রেম_হয়
#ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:-৩৪

অনেকটা শোক কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হইছে লিয়া। নিজেকে সামলে নিয়েছে। সারাদিন কলেজ, পড়াশুনা আর মাঝে মাঝে আয়ুশের দেখাশুনা করেই ওর সময় কেটে যায়। সপ্তাহ শেষে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে ঘুরে আসে।

শোক করার সময় কই ?

.
সামনেই ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা। সেশন শুরুর অনেক পরে কলেজে ভর্তি হয়েছে। তাই ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষাটা ওর জন্য খুব দ্রুত এগিয়ে এসেছে। যেটা সেশনের শুরুতে হলে পুরো বছর পেতো এখন পাচ্ছে মাত্র কয়েক মাস। লিয়া শুরুর ক্লাসগুলো পায়নি। তাই পরীক্ষার প্রিপারেশন নিতে খুব পরিশ্রম করতে হচ্ছে। সারাক্ষণ পড়া আর পড়া। অনেক রাত অব্দি পড়াশোনা করে। পড়তে পড়তে নাওয়া খাওয়ার টাইম টেবিল এলোমেলো হচ্ছে।

.
লিয়া যে টাইমে কলেজে ভর্তি হয়েছিলো, ওই টাইমে কোন কলেজে ভর্তি হতে পারার কথা না। ভর্তি নেয়ারও কথা না।

ওর আব্বু মিজান সাহেব অনেক ভেবে চিন্তে মেয়ের ডিপ্রেশন দুর করতে, অনেক হাই লেভেলের লোকের সহযোগিতায় ওকে বছরের মাঝে ভর্তি করতে পেরেছে।

.
আব্বুর কোন বিশাল চেষ্টায় আমাকে অসময়ে কলেজে ভর্তি করতে পেরেছে এটা লিয়া ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। কিন্তু কিভাবে কলেজে ভর্তি করেছে, লিয়া সেসব কখনোই ওর আব্বুকে জিজ্ঞেস করেনি বা জানতে চায়নি।

.
দীর্ঘ চার বছর পড়াশুনার সাথে সম্পর্ক ছিলো না। এতো দিন পর আবার পড়াশুনার দুনিয়ায় ফিরে আসা।

ব্রেক অফ স্টাডি তারপর আবার ডিপ্রেসন নিয়ে
হঠাৎ করেই মাঝ পথে পড়াশুনা আরম্ভ করা খুব সহজ ছিলো না লিয়ার জন্য। অনেকদিন পড়াশুনার সাথে সম্পর্ক ছিলো না তাই পড়ার টেবিলে নিজেকে ফিরিয়ে আনতে একটু বেগ পেতে হয়েছে। তারপরও সে এই অসাধ্য সাধন করেছে। পড়াশুনায় নিজেকে ব্যস্ত করে নিয়েছে।

.
বাসায় টিচার আছে, আর কোচিংয়ে ও যায়।

সিলেবাস কমপ্লিট করতে কষ্ট একটু বেশিই হচ্ছে। তাও সে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। যে কোনভাবে ওকে ভালো রেজাল্ট করতেই হবে।

.
ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা দিলো। ভালো রেজাল্টও করলো। লিয়াতো বরাবরই ভালো ছাত্রী ছিলো।

.
সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। লিয়া একদিনও ক্লাস মিস দেয়নি। ওর যেনো ধ্যান জ্ঞান সব কিছুই শুধুই পড়াশুনা করা।

কোন সমস্যা হলে নাফিসার কাছে ফোন করে বুঝে নেয় পড়াটা। নাফিসা ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয়।

.
নাফিসা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। এখনও বিয়ে করেনি সে। বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়ে আছে। হবু হাসবেন্ড দেশের বাইরে থাকে। সে ফিরে এলেই বিয়ে হবে।

নাফিসা
মাঝে মাঝে এসে লিয়ার সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে যায়।
আয়ুশের সাথেও নাফিসার ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সে আসার সময় বেবিটার জন্য চকলেট চিপস আইস্ক্রিম নিয়ে আসে। নাফিসা আসলে আয়ুশও খুব খুশি হয়। আম্মা আম্মা ডেকে কোলে উঠে বসে। অনেক কথা বলতে বলতে অস্থির করে তোলে। নাফিসাও আয়ুশকে খুব ভালোবাসে, মায়া করে। আয়ুশকে কোলে নিলে ওর চোখ ছলছল করে উঠে, এতো ছোট বয়সে বাবাকে হারালো। বড় হলে বাবার চেহারাটাও মনে করতে পারবে না। এর চাইতে কষ্টের আর কি হতে পারে।

.
সব ব্যাস্ততার মাঝেও লিয়া সপ্তাহের শেষে শ্বশুর শাশুড়িকে দেখতে যায়। সেখানে গিয়ে শ্বশুর শাশুরির সেবা যত্ন করে, খোঁজ খবর নেয়। ঘরবাড়ি গুছায়। রান্না ঘর নিজের মনের মত ঘষে মেজে পরিষ্কার করে। সবার পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়ায়।

.
নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে একাকী কিছু সময় কাটায়। চোখের পানিতে ভেসে অতীতের স্মৃতিতে হারিয়ে যায়।

.
উদয়ের কোন জিনিস ফেলতে দেয়নি লিয়া। ঘরটা যেমন ছিলো তেমন করেই সাজিয়ে রেখেছে। ঘরটা দেখলে মনে হয় এখনও উদয় এই ঘরে বাস করে। বাইরে থেকে এখনই ফিরে আসবে।

উদয়ের সব জিনিস ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে লিয়া।
আলমারির সব জিনিস এক এক করে নামিয়ে ঝেড়ে মুছে নতুন করে আবার গুছিয়ে রাখে।
উদয়ের প্রিয় জিনিসগুলো বুকে জড়িয়ে ধরে কাদে।

উদয়ের কাপড় চোপড় নাকের সামনে ধরে ঘ্রাণ নেয়। কাপড়গুলো বুকে জড়িয়ে রাখে। এতে মনে শান্তি পায়। মনে হয় উদয় ওর কাছেই আছে।

সাপ্তাহিক ছুটি শেষ হলে আবার কলেজ খুলে গেলে বাসায় ফিরে আসে।

.
মাঝে মাঝে তারাও ধানমন্ডি আসে লিয়াকে আর আয়ুশকে দেখতে।

ওদের জন্য অনেক শপিং করে নিয়ে আসে আসার সময়। অনেক রকমের খাবার রান্না করে নিয়ে আসে। কখনো পিঠা বানিয়ে নিয়ে আসে। সারাদিন ওদের সাথে থেকে আনন্দ উল্লাস করে সময় কাটিয়ে যায়।

.
লিয়ার মানসিক পরিবর্তন দেখে, ওকে হাসি খুশি দেখে তারাও খুব খুশি হয়।
ছোট মানুষ, বয়স কম ও কতদিন মনের ভিতর কষ্ট পুষে রাখবে। কতদিন উদাস চোখে কাউকে খুজে বেরাবে।

সামনে ওর বিশাল জীবন পরে আছে। সেই জীবনে চলার জন্য ওর পরিবর্তনটা জরুরি ছিলো।

তারপরও মায়ের মন বলে কথা।বুকের গভীর থেকে একটা দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে আসে ছেলের কথা মনে হয়ে।

আজ ছেলেটা বেঁচে থাকলে বউ আমাদের বাসায়ই থাকতো। ওকে তো আমরা অনেক পছন্দ করে ঘরে তুলে নিয়েছিলাম ছেলের বউ করে।

আর ছেলের বউ হিসাবে লিয়ার কোন তুলনা হয় না। ও সবার মন জয় করতে পারে। সবার ভালোবাসা আদায় করে নিতে জানে। ওকে ভালো না বেসে থাকা যায় না। স্বভাব চরিত্রে অতুলনীয়। শরীরে রাগ বলতে কিছু নেই। ও মেয়ে হিসেবে শান্তশিষ্ট ভদ্র, ধৈর্য্যশীল, কোন কিছুতেই কোন অভিযোগ নেই , সাত চড়েও মুখে রা নেই টাইপের মেয়ে।

.
লিয়ার ফ্যামিলিও ভালো। লিয়ার মা খুব ভালো মনে মহিলা। লিয়া স্বভাবে ওর মায়ের মতই।
অর্থ প্রতিপত্তিতে তাদের মতই বিত্তবান, সম্ভ্রান্ত পরিবার।

.
লিয়ার শ্বশুর শাশুড়ি মনে মনে লিয়াকে তাদের ছোট ছেলে উচ্ছাসের সাথে বিয়ে দিয়ে বউ হিসেবে ঘরে নিতে চায়।

এই মেয়েটাকে উচ্ছাসের বউ করে নিতে পারলে ভবিষ্যতের জন্য নিশ্চিন্ত। লিয়া পুরো সংসার ধরে রাখতে পারবে। আত্মীয় স্বজন সবাই লিয়াকে খুব পছন্দ করে। তারা আর কদিন বাঁচবে, বয়স হয়েছে তাদের। তার ওপর বড় ছেলের মৃত্যুটা ভিতর থেকে তাদের ভেঙ্গে দিয়েছে সাংঘাতিকভাবে। মনের জোর হারিয়ে ফেলেছে তারা।

.
উচ্ছাসের সাথে লিয়ার বিয়ে দিতে পারলে ঘরের বউ ঘরেই থাকতো আর তাদের আদরের নাতি আয়ুশও তাদের কাছেই থাকবে।

.
অনেক ভাবে কিন্তু সংকোচ করে বলতে পারে না। ওরা যদি না করে দেয়, তবে মান সম্মান সব যাবে। না করে দেয়াটা তারা মেনে নিতে পারবে না। তাই আর বলা হয়ে উঠে না।

মনের কথা মনেই চেপে রাখে। ভাবে আগে উচ্ছাসকে জিজ্ঞেস করে দেখি। ও রাজি হলেই লিয়াদের বাসায় প্রস্তাব পাঠাবো।

.
কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য বের হয় লিয়া।
রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখে রিয়া আর উচ্ছাস ভাইয়া এক রিক্সায় কোথায় যেনো যাচ্ছে। উচ্ছাস ভাইয়া একটা নীল রঙের পাঞ্জাবী পরা আর রিয়া লাল রঙের ওপর গোল্ডেন জরি সুতার কাজ করা একটা জামদানী শাড়ি পরা।
আমি ওদের দেখেছি, ওরা আমাকে দেখেনি।

.
উচ্ছাস ভাইয়া বি বি এ পড়ে। ফাইনাল পরীক্ষা দিবে এইবার।

আর রিয়া ইন্টার পাশ করেছে। ভার্সিটি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

লিয়ার আর রিয়ার কলেজ আলাদা।

রিয়া পড়তো
ভিখারুননেসা কলেজে।

লিয়া ব্রেক অফ স্টাডির কারণে নামী দামী কলেজে ভর্তি হতে পারেনি। সাধারণ একটা কলেজে পড়ে।

.
লিয়া অনেকদিন ধরেই লক্ষ্য করছে রিয়া আর আগের মতো ওর সাথে মিশে না। একটু দূরে দূরে থাকে। কারনটা কি? ওর বোন তো এমন ছিলো না। ওতো খুব মিশুক ছিলো। কেনো এমন করছে সেটা বুঝতে পারেনি।

.
লিয়া নিজের পড়াশুনা নিয়ে ব্যাস্ততার কারনে ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছে। রিয়াকে কখনো জিজ্ঞেস করেনি কথাটা।

.
লিয়ার মনে খটকা লাগলো রিয়া উচ্ছাস ভাইয়ার সাথে কোথায় যাচ্ছে? তাও আবার শাড়ি পরে।

.
রিয়া বাসায় ফিরে এলে ওকে জিজ্ঞেস করতে হবে। মাথা থেকে চিন্তাটা নামাতে পারছে না।

রিয়া ছেলেদের সাথে ঘুরে বেড়ানো টাইপের মেয়ে না।

আর উচ্ছাস ভাইয়াও খুব ভালো মানুষ। স্বভাব চরিত্র খুব ভালো। ভাবি হিসেবেও কোনদিন আমার সাথে কোন ইয়ার্কি ফাজলামি করেনি। শ্রদ্ধার চোখে দেখেছে।

তার চোখে আমি আর রিমি আপু একই। বোনের চোখেই দেখতো সবসময়।

ঘরময় পায়চারি করছে আর ভাবছে লিয়া,
হিসেব মিলাতে পারছে না কিছুতেই।

.
রিয়ার কোচিং আর উচ্ছাস ভাইয়ার ভার্সিটি দুটোই আলাদা দিকে।

আমাদের বাসা ধানমন্ডি। আর উচ্ছাস ভাইয়াদের বাসা গুলশান।

উচ্ছাস ভাইয়া নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়ে আর রিয়া ফার্মগেট যায় ভার্সিটি কোচিং করতে।

উচ্ছাস ভাইয়া গাড়িতে করে ভার্সিটিতে যায় সবসময়। আজ গাড়ি ছেড়ে রিক্সায় কেন সে?

আর আমাদের দুটো গাড়ি, একটা আব্বু নিয়ে যায়, আরেকটা রিয়া নিয়ে যায় কোচিংয়ে যাওয়ার সময়। আমি রিক্সায় কলেজে যাতায়াত করি। তাহলে রিয়া গাড়ি রেখে রিক্সায় কোথায় যাচ্ছে?

সবচেয়ে বড় কথা হলো ওরা দুজন একসাথে কোথায় যাচ্ছে?

.
লিয়ার আর কোচিংয়ে যাওয়া হলো না। টেনশনে মাথার শিরা ছিঁড়ে যেতে চাইছে। মনের মধ্যে কু ডাকছে।

একজন ওর আপন বোন আরেকজন ওর নিজের ভাইয়ের মত দেবর। দুজনকে এইভাবে দেখে মনের মধ্যে এক অজানা ভয় কাজ করছে।

.
বাসায় ফিরে আগে রিয়ার গাড়ির খোঁজ করলো। ড্রাইভার আংকেলকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো সে রিয়ার সাথে যায়নি কেনো?

ড্রাইভার বললো, রিয়া মামনি বলেছে আজকে সে তার বান্ধবীর সাথে যাবে। তাই গাড়ি নিয়ে যায়নি।

আনতে যেতে বলেছে কখন?

বলেছে গাড়ি লাগলে ফোন দিবে। তাই আমি বাসায় ফিরে যাইনি, এখানেই বসে আছি।

.
বাসায় ঢুকে ওর মাকে সবটা খুলে বললো। ও এলে তুমি ওকে বিষয়টা জিজ্ঞেস করো।

আমি নিজেই জিজ্ঞেস করবো বলে ভাবছিলাম। পরে চিন্তা করে দেখলাম ও ইদানিং আমাকে এড়িয়ে চলে, তাই আমার জিজ্ঞেস করাটা ঠিক হবে না। আর আমাকে সঠিক উত্তরটা দিবে বলে মনে হয় না।

.
আফরোজা চিন্তিত হলো রিয়া এখনও ফিরেনি। কোথায় গেলো মেয়েটা। সন্ধ্যা হয়ে এলো। এর মধ্যে ওর বাবা বাসায় ফিরে যদি মেয়ে এখনো বাসার বাইরে শোনে তাহলে আর রক্ষে নেই।

মিজান সাহেব সন্ধ্যার পর মেয়েদের বাইরে থাকা পছন্দ করে না। কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা আছে এই ব্যাপারে।

.
লিয়া আর ওর আম্মু দুজনেই রিয়ার জন্য ভীষন চিন্তা করছিল।

.
উচ্ছাস ভাইয়াকে ফোন করে জিজ্ঞেস করবে সেটাও পারছে না কারণ এমনও হতে পারে উচ্ছাস ভাইয়া কোথাও যাচ্ছিলো পথে ওকে দেখে রিক্সায় লিফট দিয়েছে।

তাকে রিয়ার কথা জিজ্ঞেস করলে সে যদি রিয়াকে খারাপ ভাবে, তাই আর জিজ্ঞেস করলো না।

.
রিয়া বাসায় ফিরলো সন্ধ্যার পরে। সে এতো দেরিতে কখনো বাসায় ফিরেনি।

.
লিয়া একটু অবাক হলো, ওর পরনে এখন সকালের সেই শাড়িটা নেই। লাল জামদানী শাড়ির পরিবর্তে এখন সালোয়ার কামিজ পড়ে আছে। তাহলে শাড়ি পেলো কোথায়, চেঞ্জ করলো কোথায়! আর সালোয়ার কামিজ চেঞ্জই বা করলো কোথায়? প্রশ্ন গুলির উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত পড়াশুনা বা অন্য কোন কাজেই মন বসবে না।

.
রিয়া বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিজের ঘরে শুয়ে রইলো।

রিয়াকে নিজের ঘরে ডেকে নিলো আফরোজা। সাথে লিয়াকেও ডাকলো।

.
রিয়া আজকে সারাদিন কোথায় ছিলি? ফিরতে এতো দেরি হলো কেন? কোথায় গিয়েছিলি? ফিরতে দেরি হবে জেনে একটা ফোনও সারাদিন দিসনি কেনো?

.
রিয়া বললো , এক বান্ধবীর বাসায় গ্রুপ স্টাডি করছিলাম। সারাদিন সেখানেই ছিলাম। ব্যস্ততার কারণে ফোন দিতে ভুলে গেছি আম্মু।

.
সাথে সাথে ওর মা রিয়ার গালে সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিলো।

.
চড় খেয়ে রিয়া ফ্লোরে পড়ে গেলো।
সত্যি করে বল কোথায় গিয়েছিলি?

.
আফরোজা আবার মারতে গেলে লিয়া মায়ের হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, মিথ্যে বলছিস কেনো? আমি তোকে শাড়ি পড়ে উচ্ছাস ভাইয়ার সাথে রিক্সায় করে যেতে দেখেছি।

.
রিয়া দেখলো আপু যখন জেনে গেছে, এখন আর লুকিয়ে রেখে লাভ নেই। সত্য বলে দেয়াই বেটার। সত্য বলার পর যা হয় হবে।

.
তারপর রিয়া বললো, আমি আর উচ্ছাস আজকে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেছি।

অনেকদিন থেকেই আমরা একে অপরকে ভালোবাসি।

.
লিয়া চোখ কপালে তুলে বললো,
ভালোবাসিস বলে বাড়ির কাউকে না জানিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করতে হবে?

আর কাউকে না বললেও আমাকে বিষয়টা বলতে পারতি!

উচ্ছাস ভাইয়া আমার দেবর আর তুই আমার বোন। আমাকে তোদের ভালোবাসার ব্যাপারটা জানানো উচিত ছিলো না?
আকার ইঙ্গিতেও বলতে পারতি, আমি তখন কিছু একটা ব্যবস্থা করতাম, একটা পরামর্শ অন্তত দিতে পারতাম। বংশের মান সম্মান আর রইলো না।

.
সব দোষ তোমার আপু। তোমার জন্যইতো আমাদের লুকিয়ে বিয়ে করতে হলো। তুমি না হলে আজকে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।

.
আমি আকাশ থেকে পড়লাম যেনো, আমার জন্য মানে! কিছু বুঝলাম না। কি বলতে চাস বুঝিয়ে বল।

.
রিয়া আফরোজার দিকে তাকিয়ে কাদতে কাদতে বললো, আমাদের এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করার প্ল্যান ছিলো না। পড়াশুনা শেষ করে তারপরই তোমাদের জানাবো ভেবেছিলাম।

কিন্তু আপুর শাশুড়ি আপুকে উচ্ছাসের সাথে বিয়ে দিতে চায়। উচ্ছাসের বউ করে নিয়ে যেতে চায়।

উচ্ছাস রাজি হয়নি। তাই তারা উচ্ছাসকে চাপ দিচ্ছিল যেকোন ভাবে আপুকে বিয়ে করতে রাজি হতে।

.
আমি উচ্ছাসকে ছাড়া বাঁচবো না। আমি ওকে হারাতে চাই না এইজন্য আমি আর উচ্ছাস আজকে কোন উপায় না দেখে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

.
এসব কি বলছিস আবোলতাবোল। আমি তো এসবের কিছুই জানি না। আমি এসবের মাঝে কখন জড়ালাম? বাজে কথা বলার জায়গা পাস না। নিজের দোষ ঢাকতে মিথ্যে কেনো বলছিস। আমাকে জড়িয়ে বাজে কথা বলতে তোর মুখে আটকালো না একটু?

.
এতো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তুই আমার সাথে বা আম্মুর সাথে আলাপ করতে পারতি। এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত তুই একাই নিয়ে নিলি?

.
আফরোজা বললো, তোর আব্বু শুনলে কি হবে ভেবে দেখেছিস একবার? তুই তো আমাদের মান সম্মান সব ধুলায় মিশিয়ে দিলি।

লিয়া বললো আর তুই যে ব্যাপারটার কথা বলছিস, আমার আর উচ্ছাস ভাইয়ার বিয়ের কথা, এই ব্যাপারটা তো আমরা কেউ জানিও না। আমাকে জিজ্ঞেস করে শিওর হতি আগে। কি করলি তুই এটা ?

.
আফরোজা মাথায় হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে পরলো।
আমি এখন কি করবো? তোর আব্বুকে কি বলবো? কিভাবে বলবো? সেতো তোকে খুন করে ফেলবে। না হলে ঘর থেকে বের করে দিবে। সাথে আমাকেও খুন করবে। তোর আব্বুর রাগ কি পরিমাণ সেটা কি তুই জানিস না?

(বানানের ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here