অতঃপরঃ ইতি পর্ব -৫

0
1899

পর্ব – ৫

“অতঃপর ইতি”
লেখিকাঃ অপরাজিতা আফরিন মিম

এবার জুই কিছুটা চমকে গেলো, লাফিয়ে শুয়া থেকে ওঠে বসলো…..

এইটা তো ফাহাদের কন্ঠ, কিন্তু ফাহাদ তার নাম্বার পেলো কই? তাছাড়া এত রাতেই বা কেন কল দিছে?
ওপপপপপ!আর ভাবতে পারছে না জুই। তখন ফাহাদ বলে ওঠলো —

— কী ভাবছেন মেডাম?
— কিছু না।আপনি আমার বেলি ফুলের মালাটা নিয়ে গেলেন কেন? ( কিছুটা রাগী সুরে বললো)
— কেন নিয়ে গেছি সেটা তো জানিই না, প্লাস আরো একটা কথাও জানি না….
— কী কথা জানেন না?
— এই যে, একটা ফুলের কী ফুলের প্রয়োজন হয়?তুমি নিজেই তো একটা ফুল। জুই ফুল।আমার জুই ফুল।
— আপনার জুই ফুল মানে?
— আমার জুই ফুল মানে আমার জুই ফুল। থাক সে সব আপনি বুঝবেন না,অবশ্য আপনার বুঝার প্রয়োজন ও নেই।অনেক রাত হয়ে গেছে ঘুমিয়ে পড়েন…।
–আমি ঘুমাবো কী ঘুমাবো না, সেটা বলার আপনি কে?
— আমি কে? আমি কে? আসলেই তো আমি কে? হুমম খুব তাড়াতাড়ি জানতে পারবেন আমি কে? জাস্ট ওয়েট এন্ড সি…..

এইটা বলেই ফাহাদ ফোন কেটে দিলো।আর জুই তো অবাকের ওপর অবাক, কী হচ্ছে এইসব ওর সাথে….

পরের দিন জুই আর কলেজে গেলো না,শরীর টা মেজ মেজ করছে,তাই সোফায় বসে চিপস খাচ্ছিলো আর টিভি দেখছিলো,তখন জুইয়ের মা রোহেনা বেগম এসে জানালেন যে জুইয়ের সাদা গোলাপ গাছে ফুল ধরেছে,যেটা জুই গত ২ দিন কাজের চাপে খেয়াল ই করে নি।
এই কথা শুনে জুইয়ের আনন্দ কে দেখে,সারা বাড়ি জুড়েই চলে তার লাফালাফি, বেচারী রোহেনা বেগম ও মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যায় তার নিজের মেয়েকে দেখে,এই মেয়ে কিসে যে খুশি হয়, আবার কিসে যে রেগে যায়, বলা বড্ড মুশকিল। কিন্ত জুই যে বরাবরই ফুল পছন্দ করে সেটা তার মা রোহেনা বেগম বেশ ভালো করেই জানে,মেয়েটা রাগী হলেও ফুলের প্রতি নরম, ফুলের প্রতি রয়েছে তার অন্য রকম ভালোবাসা….।

এদিকে জুইও দৌড়ে এসে বাগানে হাজির হয়।বাগানটা খুব বেশি বড় নয়,আবার খুব বেশি ছোটও নয়,তবে দেখতে বেশ সাজানো গোছানো,পুরোটাই করেছে জুই একা।বাগানের এক পাশে রয়েছে জবা গাছের সমাহার, যেখানে ফুটে আছে নানা রঙ্গের জবা…বাগানের অন্য পাশে আছে লাল, কালো,গোলাপের সমাহার আর এই সবের মাঝ খানেই রয়েছে, গাদা,জুই, পুর্তলিকা,ডেইজিল আর এলোবেরার সমাহার।দেখলেই যেন চোখ জুড়িয়ে আসে।জুই তার সাদা গোলাপটা কে বেশ কিছুক্ষণ ধরেই পর্যবেক্ষণ করলো,সাথে বেশ কিছুক্ষণ ধরে দুচোখ ভরে ফুলটাকে কয়েকবার দেখেও নিলো।তারপর নিজের ফোনটা বের করে কয়েক কপি ছবিও তুলে নিলো।তারপর বেশ কিছু বাগানে ঘুরাঘুরি করলো,বাগানের ফুল গুলোর টুকটাক যত্ন ও নিলো, হালকা করে পানিও দিলো। তারপর আরো কিছুক্ষণ থেকে রুমে চলে এলো।ফ্রেশ হয়ে বিছানায়, আলতো করে গা হেলিয়ে নিলো,চোখ দুটোও আলতো করে বন্ধ করে নিলো।
ঠিক তক্ষণই জানলা দিয়ে কিছু একটা এসে জুইয়ের রুমে পড়লো জুই কিছুটা লাপিয়ে ওঠে বসলো।
একবার সাবধানে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো,তারপর ফ্লুরের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা কাগজ মুড়ানো পাথর পড়ে আছে,, জুই সাবধানে গিয়ে কাগজ টা তুললো, তারপর কাগজটা একটু একটু করে খুলে দেখে, সেখানে নীল রঙ্গের কালি দিয়ে লেখা…….

“শুধু ফুলকেই ভালোবাসলে কি চলবে?
মানুষকেও ভালোবাসতে শিখুন ।”

জুই কিছুটা অবাক ই হলো, কে পাঠালো এই চিঠি? কেই বা তার ওপর নজর রাখছে? জুই এবার কিছু না ভেবেই জানালার পাশে এসে দাড়ালো, তার রুমটা দোতালার একদুম কর্ণারে আর জানালাটাও একদুম রাস্তা বরাবর, রাস্তা থেকে বেশ সহজেই এমন কাগজ জড়ানো পাথর তার রুমে ছুড়ে মারা যাবে।কিন্তু ছুড়ে মারলো টা কে? জুই বেশ কিছুক্ষণ জানালার পাশে দাড়িয়ে রইলো,কিন্তু তেমন কাউকেই দেখতে পেলো না…….
এদিকে রোহেনা বেগমও খবর পাঠিয়েছেন,খাবার খাওয়ার জন্য নিচে যেতে, তাই জুইও চিরকুট টা কে ডয়ারে রেখেই নিচে চলে গেলো খেতে……

খাবারের টেবিলে সদস্য বলতে জুই আর জুইয়ের বাবা সোহাগ চৌধুরী, দুইজনেই চুপচাপ খাচ্ছিলো,আর ওদের কে খাবার স্লাভ করছিলো জুইয়ের মা….
তখন সোহাগ চৌধুরী কোমল সুরে বলে ওঠলেন,

— জুই মা নতুন কলেজ কেমন কাটছে তোমার?
— এই তো আব্বু, ভালোই।( খেতে খেতে উওর দিলো জুই)
— কোন রকম সমস্যা হলে আব্বুকে জানাবে,আব্বু মেনেজ করবো কেমন …
— তোমাকে জানাতে হবে কেন? তোমার মেয়ে কি সমস্যা ফেইস করতে পারে না নাকি?
–অবশ্যই পারে, কিন্তু,আমি তো বুঝাতে চাচ্ছি যে যদি কোন সমস্যা ফেইস করতে না পারো, মানে একটু বেশিই যদি সমস্যায় পড়ে যাও তাহলে আমাকে জানাবে কেমন..?
– হুম জানাবো ( খাবারে চামুচ নাড়তে নাড়তে উওর দিলো জুই)

এদিকে গোধূলি লগ্নে ফাহাদ এসে উপস্থিত হয়েছে একটা অনুষ্ঠানে,যেখানে আজ শহরের নামীদামী সব বিজনেস ম্যানরা এসে হাজির হয়েছে। চারি দিকে ক্যামেরা, আর সাংবাদিকে গিজগিজ করছে,আজকের এই অনুষ্ঠানেই ঘোষণা করা হবে এই বছরের ‘সেরা’ বিজনেস ম্যানের নাম। ফাহাদ আসতে চায় নি, তার বাবা আসাদ নুর ই জোর করে পাঠিয়েছে তাকে।জুইয়ের বাবাও উপস্থিত আছে এই অনুষ্ঠানে। ইতি মধ্যেই মঞ্চে এসে হাজির হয়েছে একজন মধ্যবয়সি পুরুষ, যার পড়নে নীল রঙ্গের কোট আর প্যান্ট,সাথে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়া একজন মধ্য বয়সী মহিলা,দেখে বুঝাই যাচ্ছে যে, ওরাই আজকের অনুষ্ঠান উপস্থাপন করবে,সবাই বেশ আগ্রহ নিয়েই মঞ্চের দিকে তাকিয়ে আছে,,আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে এই বছরের সেরা বিজনেস ম্যানের নাম…..।

কে হবে এই বছরের সেরা বিজনেস ম্যান……?

চলবে?

[ গল্পটি কেমন হইছে অবশ্যই জানাবেন, কারণ আপনাদের মন্তব্যই আমাদের গল্প লেখার অনুপ্রেরণা,, ধন্যবাদ ❤️ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here