#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ৩৩
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
দুই পক্ষের লড়াই খুব ভালো ভাবে চলছে। এনার মনস্টার সেনার মধ্যে যারা উড়তে জানে তারা সবাই ড্রাগনদের সাথে লড়তে লাগলো, তাতে আমার কিছু সংখ্যক ডেভিল সেনাও সাহায্য করছে। আর বাকি সব যারা আক্রমন করছে সবাই ভাইকিংসদের সাথে লড়তে লাগলো। থর বিশাল জোশের সাথে তার হাতের কুরাল দিয়ে এক এক করে তার রাজ্যের সৈন্যকে আহত করছে। থর চাচ্ছে না তাদেরকে মেরে ফেলতে, তাই সে তাদের বেশী আহত করছে না। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। আমি এনাকে রক্ষা করতেই এগিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু এনা যে পুরো হিংস্র পশুর মতো লড়বে সেটা আমি জানতাম না। কিছুদিন হলো এনা পুরো পাল্টে গেছে। সেটা কিভাবে আমি জানি না। কিন্তু ওর মাঝে আমি নতুন কাউকে দেখতে পাচ্ছি এখন। ওর হাতে একটা তলোয়ার। আমি এরকম তলোয়ার কোথাও দেখি নি। এনা তলোয়ারটা দিয়ে একের পর এক শত্রুকে মারতেই আছে। আমি কখনো এনাকে এমন ভাবে দেখতে চাই নি। মনে হচ্ছে ও নিজে একাই এক হাজার শত্রুকে শেষ করতে পারবে। তাছাড়া যখন ও শত্রুদের হাত, পা, মাথা তাদের শরীর থেকে আলাদা করছে কেমন জানি একটা অনুতৃপ্তির হাসি দেখতে পেলাম। জানি না হঠাৎ এনার কি হলো, কিন্তু ওর এই অবাক করা আচরনে আমি তো পুরো ভয় পেয়ে গেলাম। কোথায় ভেবেছিলাম আমি ওকে এখানে রক্ষা করে ওর কাছে হিরো হয়ে যাবে। কিন্তু মনে হচ্ছে আমি এখন কোনো বিপদে পরলে ও নিজেই আমাকে সেই বিপদ থেকে মুক্ত করতে পারবে। ওর কিউট চেহারায় এখন ওর হত্যা করা শত্রুর রক্ত লেগে আছে, যেটা দেখতে মোটেও কিউট লাগছে না। বরং আমার আরো ওর কাছে যেতে ভয় করতে লাগলো।
।।
।।
আমি এখন পর্যন্ত একটা শত্রুকে হত্যা কিংবা আহত করি নাই। আমার আশে পাশে আমার চার জেনারেল ছিলো। তারা আমার কাছে একটা শত্রুও আসতে দেই নি। আমি এই প্রথম আমার চার জেনারেলের আসল পাওয়ার দেখলাম। তারা এতোটা শক্তিশালী হবে আমি সেটা কল্পনাও করি নাই। তাদের এক একটা স্পেলের আঘাতে পঞ্চাশ জনের মতো সেনা আহত হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে আমার নজর পরলো ড্রাগনরাও তেমন সুবিধা করতে পারছে না। বেশ কিছু ড্রাগন এতোক্ষনে মারা গিয়েছে। মনস্টার সেনাদের কেউই শত্রুকে দয়া দেখাচ্ছে না। বরং তারা পুরো হিংস্রতার সাথে লড়ছে। যেমনটা এনা করছে। এনার একের পর একজন কে মারতেই আছে, কিন্তু হাপাচ্ছে না। আমি বুঝতে পারছি না হঠাৎ এনার কি হলো, এতো ক্ষমতা কোথা থেকে আসলো।
।।
।।
যুদ্ধের পরিস্থিতি অনেকটা আমাদের দিকে চলে এসেছিলো। জয় নিশ্চিত ছিলো। কারন ড্রাগন সেনা পিছনে ফিরে গিয়েছিলো, আর ভাইকিংসদের বেশীর ভাগ আহত কিংবা নিহত হয়েছে। এই যুদ্ধে মৃত এর সংখ্যা অনেক। আমি সব সময় শুনেছি একটা যুদ্ধে অনেকে মারা যায়। কিন্তু যুদ্ধে যারা থাকে তারা কেমন ফিল করে এটা কখনো ভাবি নি। আমাদের সেনার মৃত এর সংখ্যা তেমন না। কিন্তু মনস্টার সেনার মধ্যে অনেকেই নিজেদের জীবন হারিয়েছে। কিন্তু যারা জীবিত আছে আমি তাদের মধ্যে কোনো রকম কষ্ট দেখতে পেলাম না। বরং তারা আরো খুশি আছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না আমার এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে। আমি তো ডেভিল কিং। কারো জীবন মরন নিয়ে আমার ভাবনার কিছু নেই। তারপর ও এতো লোকের লাশ দেখে আমার মন কাদছে৷ আমি বুঝতে পারলাম আমার এন্জেল সাইড ভিতরে ভিতরে হাহাকার করছে। কষ্ট হচ্ছে তার। ভিতর থেকে বের হয়ে যেতে চাচ্ছে।
.
–মাই কিং লোকির বাকি সেনা পিছনে চলে যাচ্ছে। মনে হয় আমরা জিতে গেছি।(লুসেফার)
.
–এতো সহজে না। হয়তো তোমরা খেয়াল করো নি। আমাদের চারিদিক দিয়ে একটা বিশাল বড় ডার্ক ম্যাজিক ব্যবহার করা হয়েছে।(আমি)
.
–ডার্ক ম্যাজিক?(এনা)
।।।
।।।
হঠাৎ চারিদিকে কুয়াশার মতো হয়ে গেলো। এবং আস্তে আস্তে লড়াইয়ে যত সেনা মরেছিলো সকলেই নরতে লাগলো। এটা একটা ডেভিল ম্যাজিক। এই ম্যাজিকটা ডেভিল কিং ছাড়া অন্য কারো জানা উচিত ছিলো না। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না আমি তো এই স্পেল ব্যবহার করি নি। কিন্তু কে করলো এইটা?
.
–সবাই সাবধান। এটা একটা লেজেন্ডারী ডার্ক স্পেল। এটা খুবই মারাত্মক একটা স্পেল। এই স্পেলের মধ্যে কেউ পরলে এই কুয়াশার মধ্য থেকে কেউ বের হতে পারবে৷ যতই বের হওয়ার চেষ্টা করো, ঘুরেফিরে আবার এই জায়গায় এসে পৌছাবে। আর শুধু তাই না। এটার সাথে আরেকটা লেজেন্ডারী স্পেল ব্যবহার করা হয়েছে। সেটার কাজ হলো সকল মৃত লাশকে জীবিত করা। কিন্তু সেই লাশগুলোর নিজের কোনো জ্ঞান থাকবে না৷ বরং যে তাদের জীবিত করেছে তার আদেশই তারা শুনবে। বলতে গেলো সকল লাশ গুলো zombie হয়ে গেছে।(আমি)
.
–এটা লোকির আরেকটা চাল।(এনা)
.
–না এটা লোকির কোনো চাল হতে পারে না। কারন এই দুটো স্পেল শুধু ডেভিল কিং ছাড়া কেউ ব্যবহার করতে পারে না। যদিও একসময় ডার্ক এল্ফসরা এটা ব্যবহার করতো, কিন্তু এখন এসব স্পেল স্যয়ারতালফাইমে বাতিল করা হয়েছে।(থর)
.
–হ্যা থর ঠিকই বলেছেন। তারপরও ধারনা করা যায় ডার্ক এল্ফসরা এটা ব্যবহার করেছে। কিন্তু তাদের কোনো অস্তিত্ব আমি দেখতে পাচ্ছি না।(আমি)
।।।
।।।
হঠাৎ আমাদের সামনে টেলিপোর্ট হয়ে আসলো আলিয়ানা আলফাইম। সাথে তার অনেক সেনা ও এসেছে।
.
–আমি নিজে এখানে আসতে চাই নি। কিন্তু পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেছে আপনাদের, তাই আমাকেই আসতে হলো।(আলিয়ানা)
.
–রানাী আলিয়ানা। কি হয়েছে একটু বলতে পারবেন?(থর)
.
–ম্যালিকিত এর সেনাপতি এসেছে এখানে। তাকে স্যয়ারতালফাইমে ম্যালিকিত এর পরে শক্তিশালী ধারনা করা হয়। আর এই দুটো স্পেল সেই ব্যবহার করেছে।(আলিয়ানা)
.
–এজন্যই তো বলি এই বাতিল করা স্পেল কিভাবে ব্যবহার করতে পারলো ডেভিল কিং ছাড়া। ম্যালিকিত এর সেনাপতির নাম হ্যালিন। অনেক পুরানো ডার্ক স্পেল গুলোর মাস্টার সে।(থর)
.
–আমাদের ডেভিল কিং তো এই বিষয়ে কিছু করতে পারে। কিন্তু না উনি ছোট বাচ্চার মতো দাড়িয়ে দাড়িয়ে সবার লড়াই দেখছে প্রথম থেকেই।(এনা রাগি চেহারা নিয়ে বললো)
.
–এটা কোনো কথা হলো?(আমি)
.
–আপনি ডেভিল কিং, নিন এই স্পেলের কিছু একটা করুন।(এনা)
.
–ডেভিল কিং এর এখন কার অবস্থায় উনি কিছু করতে পারবেন না। এই যুদ্ধটা উনার জন্য খুব তারাতারি হয়ে গেছে। আমাদের পুরাতন ডেভিল কিং এর মেমোরী গুলো আস্তে আস্তে তার মধ্যে আসছে, তাই তার পুরো ক্ষমতা ব্যবহার করতে একটু সময় লাগবে।(লুসেফার)
.
–হ্যা হ্যা। আমরা জানি, ডেভিল কিং ভিতরে ভিতরে বিশাল বড় একটা প্লান করছে। যত হোক সে একজন ডেভিল।(এনা)
।।।
।।।
মূলত আমার পরিস্থিতি অনেক খারাপের দিকে। আমি ভয় পাচ্ছি অনেক। যদিও আমি ডেভিল কিং তারপরও আমার পুরোটা সময় কেটেছে মানুষ হয়ে পৃথিবীতে। এসব কিছু আমার কাছে নতুন। এর আগেও আমি মারামারি দেখেছি, কিন্তু আমার সামনে এতো লোক মারা গেলো এটা দেখে অনেক ভয় করেছে। আর ভয় হলো ডেভিল কিং এর পাওয়ারের মূল উৎস। আশেপাশের লোকজন যত আমাকে দেখে ভয় পাবে আমার ক্ষমতা আস্তে আস্তে তত বারতে থাকবে। আর যদি আমি নিজেই ভয় পাই তাহলে তো নিজেই শক্ত হতে পারবো না। যাইহোক, এমনিই আমি চাচ্ছি না আমার আর কোনো ডেভিল পাওয়ার ব্যবহার করতে। আমি সাধারন ম্যাজিক ব্যবহার করতে পারি নিজের প্রতিরক্ষার জন্য। এতোদিন আমার সাধারন ম্যাজিকের উপরে নজর দেওয়া হয় নি। আমি প্রথমে দেখেছি আমি শুধু ফায়ার ম্যাজিক ব্যবহার করতে পারি। কিন্তু আসলে শুধু ফায়ার ম্যাজিক না। বরং আমি সব ধরনের এট্রিবিউটের ম্যাজিক ব্যবহার করতে পারি। এটা চেষ্টা করি নি। কিন্তু যেহেতু আমার মান সম্মান এখন পথে দাড়িয়েছে তাই কিছু একটা করতেই হবে আমাকে। আর এমনিতেও আমার সামনে এখন জীবিত কেউ নেই। বরং আমার শত্রু গুলো এখন মৃত।
.
–মাই কিং এখন আমরা কি করবো।(আমার সকল জেনারেল)
.
–সকল ডার্ক এল্ফসরা এই কুয়াশার মধ্যে প্রবেশ করেছে। তাদেরকে লাইট এল্ফসরা দেখে নিবে। সকল ডেভিল সেনা শুধু লাইট এল্ফসদের সাহায্য করবে। এবং মনস্টার সেনা।(আমাকে আর এনা বলতে দিলো না)
.
–আদেশ করতে হবে না। আমি জানি আমাদের কি করতে হবে। সকল মনস্টার সেনা মৃত জম্বিদের দেখে নিবে।(এনা)
.
–হ্যা। আর হ্যা আমিও কিছুটা সাহায্য করবো তাতে।(আমি)
।।।
।।।
সবাই আদেশ মতো নিজেদের মতো ছড়িয়ে পরলো। আলফাইমের এল্ফসরা ডার্ক এল্ফসদের খুজে খুজে হারাবে। ডেভিল সেনা তাদের সাহায্য করবে। আর আমি আর মনস্টার সেনারা মিলে মৃত জম্বিদের হারাবো। ডেভিল কিং হওয়ার পর আমি আজ প্রথম সাধারন ম্যাজিক ব্যবহার করবো। সাধারন ম্যাজিকের জন্য ডেভিল কিংবা এন্জেল পাওয়ারের প্রয়োজন হয় না। এটা সেগুলো থেকে সম্পূর্ন আলাদা। এনা ওর তলোয়ার নিয়ে ঝাপিয়ে পরলো জম্বিদের দিকে। ও পরোয়া করছে না কিছু। হিংস্র পশুর মতো একের পর এক মারতেই আছে। আমি একটা বিষয়ে অবাক, ও নিজে কোনো ম্যাজিক ব্যবহার করছে না। শুধু ঔ তলেয়ারটা দিয়েই এই পর্যন্ত সবাইকে হত্যা করছে। ওর লড়াই দেখে আমার আর লড়তেই মন চাচ্ছে না। আমিও আমার সাধারন ম্যাজিক ব্যবহার করতে লাগলাম। ইগড্রাসিল এতোক্ষন আমার ছায়ার মধ্যে ছিলো। ও এসব লড়ায় এর মধ্যে পরতে চাইছে না। কারন ওকে ফায়ার ড্রাগন কিং কে হারাতে হবে। তাতেই ওর প্রতিশোধ পূরন হবে। তাই আমাকেই লড়তে হচ্ছে। আমার সাধারন স্পেল গুলোও অনেক মারাত্মক। এগুলো সাধারন মনস্টার কিংবা সেনার জন্য অনেক ক্ষতিকর। কিন্তু আমি কখনো শক্তিশালী কাউকে সাধারন ম্যাজিক দিয়ে হারাতে পারবো না। আমি আমার হাত দিয়ে অসংখ্য আগুনের বল বানিয়ে সেগুলো জম্বিদের দিকে ছুড়ে মারছি। এক একটা আগুনের বল অনেকটা এলাকা জুড়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আর সেটুকুর মধ্যে যত জম্বি আছে সেগুলো জ্বলে ছাই হয়ে যাচ্ছে।
।।।।।
।।।।
।।।
।।
।
(((চলবে)))
।
।।
।।।
।।।।
।।।।।
আজকে অনেকটা ছোট হয়ে গেছে। ভেবে পাচ্ছি না কি লেখবো। কালকে পেয়ে যাবেন পরের পার্ট একটু বড় করে।আশা করি বুঝতে পারছেন। কেমন হলো জানাবেন।