ধ্রুব অরিত্রিকা আহানা পর্বঃ১৮

# ধ্রুব
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১৮

আমি বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। ধ্রুবর কথা শুনে থেমে যেতে হলো। ও খুব আফসোস করে বললো,”তুমি এত বেরসিক কেন নিশাত?” আমি অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম। একটু আগে যাকে এত রোমান্টিক রোমান্টিক ফিলিংস নিয়ে সালাম করলাম সে এখন আমাকে বেরসিক বলছে? কেন? ধ্রুব সিরিয়াস সিরিয়াস মুখ করে বললো,”দুদিন বাদে আমার সাথে তোমার বিয়ে অথচ তুমি আজকে খালি হাতে চলে এলে? তা
ওপর আজকে ঈদ! আর কিছু না পারো অন্তত একটু পায়েস তো রান্না করে নিয়ে আসতে পারতে? একটু তো রোমান্টিক হও।”

লজ্জায় আমার মুখ লাল হয়ে গেলো। এই কথা আমার মাথায় একেবারেই আসে নি। কিন্তু তাই বলে ও যে এভাবে মুখের ওপর লজ্জা দিয়ে বসবে তা আমি স্বপ্নেও ভাবি নি। নিরুপায় হয়ে বললাম,”আমি পায়েস রান্না করতে পারি না।” ও বললো,”শিখে নিতে? আমার জন্য নাহয় একটু কষ্ট করতে? যাই হোক! বাদ দাও!”
আমি বুঝতে পারলাম ও আমাকে এত সহজে ছাড়বে না। এই নিয়ে বেশ খোঁচাখুঁচি চালাবে! ঈদের দিনটাতেও শান্তি নেই! রাগে দুঃখে, দাঁতেদাঁত চেপে বললাম,”তুমি জীবনে পায়েস খাও নি?” আমার রাগত মুখের দিকে চেয়ে ও হেসে ফেললো। বললো,”খেয়েছি। কিন্তু একটা কথা বলতো, তুমি একবার বাথরুমে গেলে কি আর যাও না?”

আমি হতাশ! পুরোপুরি হতাশ! পায়েসের সাথে বাথরুম! ইয়া আল্লাহ,আমাকে ধৈর্য দাও! আমি যেন সুস্থভাবে বাসায় ফিরে যেতে পারি! এই ছেলে আমাকে সুস্থ থাকতে দেবে না! তোমার কাছে বিচার দিলাম খোদা!

আমার কাঁদোকাঁদো মুখের দিকে চেয়ে ধ্রুব হো হো করে হেসে উঠে বলল,”তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি এক্ষুনি কেঁদে ফেলবে! পায়েস খেতে চেয়েছি তোমার চোখের পানি না!” আমি রেগে বেরিয়ে গেলাম। বাসায় চলে যাবো ভাবতেই মনে পড়লো চুলায় বিরিয়ানি বসানো। রাগ সামলে রান্নাঘরে গেলাম। আন্টি বেরোনো পর্যন্ত রান্নাঘরে বসে বিরিয়ানি পাহারা দিলাম, তিনি বেরোতেই তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে এলাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত আর নিচে নামলাম না।

বিকেলের দিকে মা আমার হাতে দুটো টিফিন ক্যারিয়ার দিয়ে ধ্রবদের বাসায় নিয়ে যেতে বললেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কি আছে আছে এতে?”
মা পায়েস, হালুয়া, জর্দাপোলাও, ফিরনি সহ আরো অনেকগুলো নাম বললো। আমার কানে গেলো না! আমার মন অন্য দিকে। মা পায়েসের কথা মনে বলতেই ধ্রুবর ওপর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। দুপুর থেকে যতবার মনে পড়েছে ততবারই মেজাজ খারাপ হয়েছে! কিন্তু যতই মেজাজ খারাপ করি না মনের মধ্যে খানিকটা খচখচানিও হচ্ছিলো। বুঝতে পারছিলাম না আমার কি করা উচিৎ, ধ্রুবর জন্য পায়েস রান্না করে নিয়ে যাবো নাকি নিবো না! অবশেষে মনের খচখচানিরই জয় হলো। মায়ের রান্নাকরা পায়েস রেখে নতুন করে নিজে হাতে রান্না করলাম। রান্না শেষে পায়েস নিয়ে দোতলায় গেলাম। দরজা খুললো ধ্রুব। আমি খুব ভাব নিয়েই ওকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলাম। ও পেছন পেছন এলো। আন্টির ঘরে উঁকি দিয়ে দেখলাম তিনি নামাজ পড়ছেন।

বাটিতে পায়েস নিয়ে ধ্রুবর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,”ধরো!” ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে সরু চোখে চেয়ে থেকে বললো,”তুমি রান্না করেছো?”

—“হ্যাঁ! আমি রান্না করেছি!”

ও সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,”খাওয়া যাবে? চিনি লবণ সব ঠিকমত দিয়েছো তো?”

—“খেয়েই দেখো সব দিয়েছি কি না!”

—“ঠিক আছে। যদি ভালো হয় তবে আমার তরফ থেকে তোমার জন্য একটা গিফট আছে!”

গিফটের বিষয়ে যদিও আমার কোন আগ্রহ নেই কিন্তু আজকে ছাড়া যাবে না। অসভ্যটা আমাকে পায়েসের খোঁটা দিয়েছে। সুতরাং গিফট তো আমি নিবোই! তাড়া দিয়ে বললাম,”তাহলে তাড়াতাড়ি খেয়ে দেখো কেমন হয়েছে?”

ধ্রুব পায়েসের বাটিটা নিলো। চামচে করে একটুখানি মুখে দিতেই সেটা গলাধঃকরণ করার আগেই আমি তড়িঘড়ি করে জিজ্ঞেস করলাম,”কেমন হয়েছে?” আমার এক্সাইটমেন্ট দেখে ওর ভাব বেড়ে গেলো। বেশকিছুক্ষন সময় নিয়ে প্রতিউত্তরে ওর শয়তানি হাসিটা দিয়ে বললো,”বুঝতে পারছি না!” ভয় পেয়ে গেলাম। উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, “ভালো হয় নি?”
কিন্তু এবার ওর মুখচিপে হাসা দেখে বুঝতে বাকি রইলো না ইচ্ছে করে শয়তানি করছে! আরেক চামচ মুখে দিয়ে বললো,”চিনি কম হয়েছে, বাট চলবে।” আমি রাগে কটমট করে ওর দিকে চাইলাম। জানতাম এমন কিছুই বলবে। জীবনেও আমার প্রশংসা করবে না! রাগ উঠে গেলো! ছোঁ মেরে ওর হাত থেকে পায়েসের বাটিটা নিয়ে নিতে চাইলাম। বললাম,”আমি জামি তুমি ইচ্ছে করে এসব বলছো। লাগবে না তোমার খাওয়া! আমার পায়েস আমি খাবো! দাও বাটি দাও!” ধ্রুব বাটি সরিয়ে ফেললো। পরপর আরো দুই চামচ পায়েস মুখে দিয়ে বললো,”আচ্ছা সরি! সরি! ভুল হয়ে গেছে!”
আমার হাতের নাগাল থেকে সরে গিয়ে বললো,”এভাবে মুখের সামনে থেকে নিয়ে যাচ্ছো কেন? জানো না কারো মুখের খাবার কেড়ে নেওয়া অভদ্রতা?”
আমি বললাম,”বেশ করেছি। তুমি উল্টোপাল্টা কথা বলছিলে কেন?”
ও মুখের শয়তানি হাসিটা বজায় রেখে চুপচাপ পুরো পায়েসটুকু শেষ করলো। এবং খাওয়া শেষে ভালো ছেলের মত নিজের ঘরে চলে যাচ্ছিলো, আমি পথ আগলে দাঁড়লাম। কোমরে হাত রেখে কাঠ কাঠ গলায় প্রশ্ন করলাম,”ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছো কোথায়? আমার গিফট কে দেবে?”
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই ও ঝড়ের বেগে চুমু খেয়ে নিয়ে বলল,”ডান! গিফট পেয়ে গেছো? এবার যাও!”
আমি হতভম্ভ! কিংকর্তব্যবিমূঢ়! তব্দা খেয়ে গেলাম!
ভাবছি এবার থেকে হেলমেট পরে ওর সামনে আসবো! আর রিস্ক নেওয়া যাবে না! সম্বিৎ ফিরতেই দেখলাম নেই হয়ে গেছে!
আমিও কোমর বেধে রেডি হলাম ওর সাথে ঝগড়া করার জন্য, কতবড় অসভ্য আমাকে পায়েসের খোঁটা দিয়ে এখন নিজে গিফট না দিয়ে পালাচ্ছে!
অবশ্যম্ভাবী ঝড়ের ঠিক পূর্বমুহূর্তে আন্টি বেরিয়ে এলেন। ধ্রুবও তাঁর পেছন পেছন বেরোলো। আন্টি জানালেন বাসা থেকে মায়ের ফোন এসেছে। আমাকে জলদি যেতে হতে। বাসায় মেহমান এসেছে। অগত্যা আমি ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে,’তোমাকে দেখে নেবো টাইপ’ একটা দৃষ্টি নিক্ষেপ বাসায় চলে এলাম। এবং বরাবরের মতই সে তার গা জ্বালানো হাসিটা দিলো।

বাসা গিয়ে বাবার বন্ধু আর বন্ধুর ওয়াইফ এসেছেন। তাদের জন্য নাশতাপানির আয়োজন করতেই আমাকে ডেকে আনা হয়েছে। সারাদিনের খাটাখাটনিতে মা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। অতএব মেহমানদের সমাদরের দায়িত্ব আমার!

আমি কিচেনে ঢুকে অন্যান্য নাশতার সাথে আমার বানানো পায়েসও বাটিতে নিলাম। বাটিতে নেওয়ার পর অভ্যাসবশতই চামচে লাগা অবশিষ্ট পায়েসটুকু মুখে দিতেই আমার আক্কেলগুড়ুম! স্বাদহীন বিশ্রী হয়েছে! বাটি থেকে বেশি করে নিয়ে মুখে দিলাম! কিন্তু এবারো সেইম টেস্ট!
ধ্রুব বলেছিলো পায়েসে চিনি কম হয়েছে। মুখে দেওয়ার পর বুঝতে পারলাম পায়েসে চিনি কম হয় নি বরং চিনিই দেওয়াই হয় নি! ওকে এই পায়েস খাইয়েছি ভাবতেই লজ্জা লাগলো। কিন্তু ও খেলো কেন? ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই রোমান্টিক রোমান্টিক একটা ফিলিংস এলো! আহা! ধ্রুব আমার জন্য চিনি ছাড়া পায়েস খেয়েছে! ভালোবাসা!আহা!

কিন্তু ব্যাপার যাইহোক আমি যে বুঝতে পেরেছি পায়েসে চিনি হয়নি সেটা যে ওকে কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না। কারণ বুঝতে পারলেই নিজের স্বরূপে ফিরে আসতে ওর একসেকেন্ডও সময় লাগবে না! আমার রোমান্টিক ফিলিংস নাম নিশানা সহ উড়িয়ে দেবে! কাজেই আমি কিছু জানি না!

মেহমানরা চলে যাওয়ার পর আবার নিচে নামলাম। উদ্দেশ্য পায়েস সম্পর্কে ধ্রুবর গূঢ় কি মতামত জানা!
দরজা খোলা ছিলো। ভেতরে ঢুকতেই আন্টির গলার আওয়াজ পেলাম। তরুর সাথে ভিডিও কলে কথা বলছেন। আমি খুব সন্তর্পণে ধ্রুবর ঘরের দিকে গেলাম। ও মুভি দেখছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই ওর পাশে গিয়ে বসলাম। হাসিহাসি মুখে প্রশ্ন করলাম,” কি মুভি দেখছো?”

আমার আওয়াজ পেয়ে ও মুভি পজ করে সোজা হয়ে বসলো। আবারো আমার ভেতরে অস্বস্তি শুরু হয়ে গেলো। ধ্রুব পায়েস নিয়ে কিছু বললেই আমিও গিফট ওকে খোঁটা দেবো ভেবে রেডি হয়ে নিলাম! কিন্তু না! ও কিছুই বললো না। চোখে চোখ রেখে নিরুত্তরভাবে হাসলো। মনে মনে খুশি হলাম। ও হয়ত ভেবেছে আমি কিছু জানি না! স্বস্তি পেলাম। এবার একটু রোমান্টিক হওয়া যায়! মিষ্টি হেসে বললাম,”মাঝে মাঝেই তো পাঞ্জাবি পরতে পারো! পাঞ্জাবিতে তোমাকে দারুণ লাগে!”
ও অবাক হয়ে বললো,”উদ্দেশ্য কি তোমার?” আমি নিরীহ বোকা বোকা চেহারা বানিয়ে বললাম,”এভাবে কেন বলছো?”
ও পলকহীন ভাবে আমার দিকে চেয়ে রইলো। বেশ বুঝতে পারলাম আমার মাসুম চেহারা ওকে খানিকটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলেছে। সন্দিগ্ধ কন্ঠে প্রশ্ন করলো,”হঠাৎ প্রশংসা?”

ওর রিয়েকশন দেখে মনে মনে রাগ হলেও সামলে নিলাম। বেচারা আমাকে খুশি করার জন্য চিনিছাড়া পায়েস খেয়েছে ওর সাথে রাগ করতে মন সায় দিলো। গদগদ টাইপ একটা ভাব নিয়ে বললাম,”সত্যি বলছি! সকালে দেখে আমি তো চোখই ফেরাতে পারছিলাম না।”
কথাগুলো সত্যি হলেও ধ্রুবর জন্য সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত! অনেক সময় মন চাইলেও ইচ্ছে করে বলি না। কারণ বললেই অসভ্যটার ভাব বেড়ে যায়!” কিন্তু আজকে বলার পরেও ধ্রুব যতটা অবাক হওয়ার কথা ছিলো ওকে দেখে মনে হচ্ছে না ততটা অবাক ও হয়েছে। নিরুত্তরভাবে হাসলো কেবল। শয়তানি হাসি! রহস্যের গন্ধ পেলাম! কথা বলতে বলতেই হঠাৎ খেয়াল করলাম ধ্রুব মুভি বন্ধ করে নেট অন করেছে। ইউটিউব এর লোগো দেখা যাচ্ছে! উপরে হেডলাইন লিখা হাউ টু কিস আ গার্ল প্যাশোনেটলি!”

আমার হৃদযন্ত্রে অশনীসংকেত বেজে উঠলো! ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,” পালা নিশাত! ধ্রুবর লক্ষণ ভালো নয়!”

একমুহূর্তও দেরি করলাম না। এক দৌঁড়ে দিলাম পালানোর জন্য কিন্তু শয়তানটা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো। লাফ দিয়ে উঠে আমার হাত ধরে ফেললো। দরজার সাথে শক্ত করে চেপে ধরে বললো,”পালাচ্ছো কোথায়?”
ধরা খেয়ে ভেতরে ভেতরে অসহায় বোধ করলেও মুখ দিয়ে গোলা বর্ষণ করলাম। ঝাড়ি মেরে বললাম,”এসব কি অসভ্যতা ধ্রুব? ছাড়ো আমি ব্যথা পাচ্ছি!” কিন্তু কোন লাভ হলো না! ধ্রুবকে দেখা মনে হচ্ছে না সে বিন্দুমাত্রও বিচলিত হয়েছে। বরং অনেক বেশি কনফিডেন্ট দেখাচ্ছে। ভ্রু জোড়া দুষ্টুভাবে নাচালো।

আমাকে উদ্দেশ্য করে নিজের কুখ্যাত গাত্র জ্বলুনিদায়ক হাসিটা দিয়ে বললো ,” একে তো আমাকে চিনি ছাড়া পায়েস খাইয়েছো। এখন আবার ভাগছো? কি ভেবেছো মিষ্টি মিষ্টি কথা বললে আমি ছেড়ে দেবো? নো ডার্লিং! এত সহজে তো তুমি ছাড় পাবে না!”
বুঝতে পারলাম ধ্রুবর সাথে রেগে কথা বলে কোন লাভ হবে না। সে আমাকে আরো রাগিয়ে দিয়ে। অতএব অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে! কাঁদোকাঁদো গলায় বললাম,”বিশ্বাস করো, আমি ইচ্ছে করে করি নি। তাড়াহুড়োতে চিনি দেওয়ার কথা ভুলে গেছিলাম। তোমাকে ছুঁয়ে বলছি!

কিন্তু এবারও ধ্রুবর কোন হোলদোল হলো না। আমার সন্দেহ আরো বেড়ে গেলো। ও একহাতে আমার দুটো হাত ধরে রেখে অন্যহাত দিয়ে ট্রাউজারের পকেট থেকে ফোন বের করে ফেইসবুকে ঢুকলো। স্ক্রিনে কিছু লেখা দেখা যাচ্ছে। ও বেশ জোরে জোরেই লেখাগুলো পড়তে শুরু করলো,”ফিলিং পাঙ্খা! আপুরা, আজকে রেস্টুরেন্টে সবার সামনে এক্স আমার পা ধরে মাফ চেয়েছে! খুব খুশি লাগছে! জীবন স্বার্থক!”

আতংকে আমার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।ভয়ে ভয়ে ঢোক গিললাম। ধ্রুব যেদিন রেস্টুরেন্টে আমার ছেঁড়া জুতো নিয়ে টানাটানি করেছিলো এটা সেদিনের পোস্ট! ওর সাথে তরুর বিয়ে হয়ে যাবে ভেবে রাগে দুঃখে অন্য একটা আইডি থেকে পোস্টটা করেছিলাম! কিন্তু ধ্রুব পেলো কি করে সেটাই বুঝতে পারছি মা। খেয়াল করে দেখলাম ওর হাতে আমার ফোন। সেই সকালে যে ফেলে গেছিলাম তারপর আর নিজেরই মনে নেই। হাতখালি থাকলে এবার নিজের গালে কষে দুটো চড় বসিয়ে দিতাম!

কিন্তু এখন আমার কি হবে! ধ্রুব তো আমাকে কাঁচা গিলে ফেলবে! ভয়ে ওর দিকে তাকানোর সাহস পেলাম না। ও হাতের তালুতে আমার মুখটা তুলে ধরে বলল,”তো মিস পাঙ্খা নিশাত, এবার তুমিই বলো তোমার এক্সের কি করা উচিৎ?”

আমি করুণমুখে ওর দিকে চেয়ে রইলাম। ও নিজের জিরাফের মত মাথাটা নিচু করে একেবারে আমার মুখের কাছে নিয়ে এলো। ওর তপ্ত নিশ্বাস এসে আমার মুখে বাড়ি খেলো। ভয়ে অটোমেটিক চোখ বন্ধ হয়ে করে ফেললাম। ঠোঁটজোড়া তিরতির করে কাঁপতে শুরু করলো। হাতের মুঠো শক্ত হয়ে গেলো। এভাবে বেশকিছুক্ষন অতিবাহিত হওয়ার পর হঠাৎ কপালে ধ্রুবর ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ অনুভব করলাম। হৃদযন্তের ভাইব্রেশন দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়ে গেলো। এবার আর ভয়ে নয়! ভালোবাসার পবিত্রতম স্পর্শে! পিটপিট করে চোখ খুলতেই ধ্রুব আলতোভাবে আমার নাক টেনে দিয়ে মুচকি হেসে বললো,”বাসায় গিয়ে তোমার আপুদের জন্য আরেকটা পোস্ট করবে, ‘তোমার এক্স তার পাঙ্খা নিশাতকে খুব ভালোবাসে!’
.
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here