ত্রয়ী পর্ব ১৭

0
1063

ত্রয়ী
মোর্শেদা হোসেন রুবি
১৭||

বারসাত চলে গেছে অনেকক্ষণ হয়। সায়রাকে নামিয়ে দিয়েই সে আর দেরী করেনি। সব শুনে সায়রার বাবা মেয়ের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন। নীলিমা রাজি হয়নি। সে তাকে খাবার খাইয়ে শুতে পাঠিয়ে দিয়েছে। লোকটা উচ্চ রক্তচাপের রুগী। রাত জাগা বারণ। তার উপর মেয়েটা নাকে দম করে রেখেছে।
মঈনকে দেখা গেল এখনও ড্রইংরুমে বসে আছে। টিভি দেখছে। বেচারা ঘুমাবে বলে চলেই যাচ্ছিল। নীলিমা তাকে আটকেছেন। সায়রার ব্যপারে কিছু কথা আছে ওর সাথে। নীলিমা ভাল করেই জানেন এই মেয়ে সোজা পথে হাঁটবে না। নিশ্চয়ই পথে কোন ঝামেলা হয়েছে যার কারণে আজকের দার্জিলিং যাত্রা বাতিল। বারসাত যতই বলুক। তিনি মানতে রাজী নন। সায়রাকে হাড়ে মাংসে চেনা আছে তার। সে তার বাপের মতই ঘাউড়া আর জেদী হয়েছে। এটা আর কেউ না জানলেও তিনি জানেন। তার প্রতিটা লোম জানে যে সায়রার মাঝে ইকবাল সানার আচরণ কতটা স্পষ্ট। আমির সানার শান্ত মেজাজ সায়রার মাঝে নেই। সে তার বাপ ইকবাল সানার মতই একরোখা আর গোঁয়ার। আমির সেটা জানেন বলেই ভাইঝিকে কখনও বকেন না। বরং নীলিমার দুর্দিনে এই আমির সানাই বিধবা ভাই বৌ আর এতিম ভাইঝিকে নিজের করে নিয়েছিলেন যারা আজ তার স্ত্রী আর কন্যা। কিন্তু একথা সায়রার জানার কথা নয়। সে তো তখন ছয় মাসের শিশু কন্যা। সুন্দরী পুত্রবধূ আর একমাত্র নাতিনকে হাতছাড়া করতে চাননি সায়রার দাদী। চিন্তাভাবনা করে বিয়ে করিয়ে দিয়েছিলেন ছোট ছেলে আমির সানার সাথে। সেই থেকে সায়রা আমির সানার মেয়ে। তবে সেটা শুধুই নামে। স্বভাবে সে পুরোপুরিই ইকবাল সানা। যে ছিল বদমেজাজী আর একরোখা। যার অনাচারে নীলিমা ছিল অসুস্থ। এখনও নীলিমার পিঠে খুঁজলে ইকবাল সানার অত্যাচারের দাগ পাওয়া যাবে।
নীলিমা পণ করলেন মেয়ের সাথে রাগারাগি করবেন না। শান্ত মুখে ওর কথা শুনবেন।

সায়রা নির্বিকার চিত্তে দু’পা সোফার উপর তু্লে হাঁটুতে বের দিয়ে বসে আছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছেনা সে বিন্দুমাত্র চিন্তিত। নীলিমা মেয়ের মুখোমুখি বসলেন। মঈনকে ডাকলে সে উঠে এল। নীলিমা মেয়ের দিকে তাকিয়ে শক্ত কণ্ঠে বললেন, ” ঠিক করে বল্ তো, রাস্তায় কী কী হয়েছিল। তুই বারসাতকে কী বলে যাত্রা বাতিল করিয়েছিস? ”
সায়রা মায়ের দিকে তাকাল। শান্ত ভঙ্গিতে বলল, ” এখন এসব নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না আমার। তোমার খুব বেশি জানতে ইচ্ছে হলে বারসাতকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে নিতে পারো। এমনিতেও সে…!” কথা শেষ করার আগেই প্রচন্ড চড় খেয়ে কাত হয়ে পড়ে গেল সায়রা। মঈন ছুটে গিয়ে ধরতে যাবার আগেই নীলিমা হিসহিস করে উঠলেন,” মঈন, ধরবিনা ওকে। একদম ধরবিনা। কুলাঙ্গার এই মেয়ে কারো অনুকম্পার পাত্রী হবার যোগ্যতা রাখেনা। ওকে যত আমি ছাড় দিচ্ছি সে ততই মাথায় চড়ে বসছে। এতক্ষণ ওর বাপের কারণে বহুকষ্টে শান্ত ছিলাম। হারামজাদি প্রথমে বলল দার্জিলিং যাবেনা। তারপর বলল সাতদিনের জন্য যাবে। এখন মাঝপথ থেকে ফিরে এসে বলছে বারসাত যাত্রা বাতিল করেছে। ও মনে করেছে ওর আর বারসাতের বানানো কথা শুনে আমি বিভ্রান্ত হয়ে যাব। ও নিশ্চয়ই বারসাতকে এমন কিছু বলেছে যার কারণে বারসাত পুরো দায়টা নিজের ওপর নিয়ে ফেলেছে। আজ শুধু ওর কারণে মির্জাদের কাছে ওর বাপের নাকটা কেটে গেল। আরমানের মায়ের মুখে কথা শুনিয়ে মন ভরেনি ওর। এখন বারসাতদের কাছে ধূলিস্যাত করবে। একটাবার ভাবলো না যে বারসাত কী ভাববে ওকে। ” নীলিমার চোখে যেন আগুন জ্বলছে। সায়রা গালে হাত রেখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। মইন দুজনকেই থামাবার চেষ্টা করলে নীলিমা রেগে বলে উঠলেন, ” এই মেয়ের জন্য আমির কী না করেছে মঈন ? তুই তো সব দেখেছিস। দেখেছিস না ? ”
-” বাপ মেয়ের জন্য করবে এটা দুনিয়ার রীতি। এজন্য যদি সন্তানকে কৃতজ্ঞ থাকতে হয় তাহলে তো..!”
-” কীসের সন্তান ? তুই আমিরের মত মানুষের সন্তান হতেই পারতি না। তোর রক্তই তো খারাপ। তোর বাপ যেমন, তুই তেমন। নেমকহারাম।”
-” আহ্, আপা। কী শুরু করেছ। পাগল হয়ে গেলে ? ”
-” আমি পাগলই হয়ে গেছি মঈন। এই অসভ্য মেয়ে আমাকে পাগলই বানিয়ে ছাড়বে। ”
-” হয়েছে, তুমি যাও তো। আমি ওর সাথে কথা বলছি।” মঈন মাঝখানে এসে দাঁড়াল।
-” তুই কী কথা বলবি তা আমার জানা আছে। ও আমাকে পাত্তা দেয়না আর তোকে পাত্তা দেবে। দেখি সর, আমাকে ওর সাথে কথা বলতে দে।”
-” না, দেব না। তুমি এক্সাইটমেন্টে এলোমেলো বলা ধরেছ। আমাকে বলতে দাও। আমি ওকে বোঝাব। প্লিজ, আপা। তুমি ঘরে যাও। আর একটা কথা না। পরে নিজেই আফসোস করবে। যাও তো।” নীলিমাকে এক প্রকার ঠেলেই পাঠিয়ে দিল মঈন। সায়রার দিকে তাকিয়ে দেখল সে গালে হাত দিয়ে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে আছে মায়ের গমন পথের দিকে । মঈন এবার হয়ে ওর সামনে বসল। শান্ত স্বরে বোঝাতে চেষ্টা করল, সায়রার উচিত মা বাবার কথা মেনে নেয়া। সায়রা মঈনের কোন কথার জবাব না দিয়ে সরাসরি বলল, ” তার আগে বলো আম্মি কী বলতে চাচ্ছিলেন।”
-” কী বলতে চাইবে ? আজব তো।”
-” লুকাবেনা মামা। ঠিক করে বলো। আমি দেখেছি তুমি আম্মুর হাত ধরে তাকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছ।”
মঈন দীর্ঘশ্বাস ফেলল, ” দেখ সায়রা। কিছু কথা আছে যা আমাদের না জানাই ভাল। যতটুকু দরকার ততটুকুই জানা উচিত। আরমানকে তুই পছন্দ করিস ঠিক আছে কিন্তু তুই কী জানিস তোর পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড জানার পর আরমানের মা তোর মা’কে এটা সেটা কত কিছু বলে অপমান করেছে ? ”
-” আমার ফ্যামিলির ব্যাকগ্রাউন্ড মানে ? ”
-” তোর ফ্যামিলি মানে তোর দাদার বাড়ীর।”
-” কী বলেছে আরমানের মা ? ”
-” সেটা তোর না জানলেও চলবে। তুই শুধু এতটুকু জেনে রাখ, তুই আরমানকে বিয়ে করলে সেটা তোর মায়ের জন্য ভাল হবেনা। তাছাড়া আরমানের সাথে তোর এমন কোন লাইলি মজনুর প্রেম নেই যে ওকে ছাড়া বাঁচবি না।”
-” খুব যে বাহাদুরি ঝাড়ছো ? মিলি আপার সাথে তোমার কী এমন প্রেম যে মায়ের বিরুদ্ধে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছ ? ”
-” মিলি আমার শক্তি হতে পারবে কিন্তু আরমান তোর শক্তি হতে পারবেনা। উল্টো তোর দুর্বলতা হয়ে দাঁড়াবে। আমার কথা শোন্, আরমান চ্যাপ্টার ক্লোজ করে আগামীকাল বারসাতের সাথে দার্জিলিং চলে যা। বিয়ে করা না করা পরের ব্যাপার। খালার বাড়ি যেতে তো আর বাধা নেই। কী বলিস।? ”
-” না, আমি কোত্থাও যাব না।” মুখ ভার করল সায়রা। ” আম্মু আমাকে চড় মারল কেন?”
-” তোর মায়ের দিকটা বুঝতে পারলে আর রাগ করবি না। তাছাড়া মা কী খালি আদর করতে পারবে, মারতে পারবে না? ” সায়রা আর কোন কথা না বলে নিজের রুমে চলে এল। ওর মন বলছে এখানে কিছু একটা ঘটনা আছে যা মামা কাছ থেকে দেখেছে। কিন্তু কী সেটা ? মায়ের বাকি কথাগুলো জানার জন্য অস্থির লাগছে সায়রার। কী এমন কথা যেটা বলতে গিয়ে আম্মুর চোখে পানি চলে এল ? ”
=====

সাবার বোরকা পরে অভ্যাস নেই। কখনো পরেনি। কিন্তু গতরাতের ঐ ঘটনার পর ঠিক করেছে এখন থেকে যেখানে যাবে বোরকার সাথে নিকাবও করবে। তাতে কেমন দেখাবে সেটা নিয়ে আর ভাববে না। পথ চলতে গিয়ে যেখানে সেখানে এমন সব হ্যারাসমেন্ট আর ভাল লাগেনা। গতকাল বোরকা পরে থাকলে ছেলেগুলো ওকে চিনতে পারতো না আর বিরক্তও করত না। তাছাড়া ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে সাবাকে দিনে অন্তত দশবার বেরোতে হচ্ছে। বোরকা ওর একটা খুবই দরকার। কিন্তু এ মুহূর্তে কোথায় পাবে সে? বোরকা কেনার মত টাকাও তো নেই। কী করা যায়। ভাবতে ভাবতেই সুরমা আপার কথা মনে পড়ল। আপার কাছে চাওয়া যেতে পারে কিন্তু আপা নিজ থেকেই এত কিছু এ ঘরে দেয় যে কিছু লাগলে চাইতে সংকোচ বোধ হয়। নিজের ব্যাগের কথা ভাবল সাবা। খুব অল্প কিছু টাকা আছে। এ দিয়ে বোরকা তো দুর একটা হিজাবও হবেনা। সকালে নাস্তা খেয়ে এক জায়গায় টিউশনি আছে। ভেবেছিল আজ থেকেই বোরকা পরে বেরুবে। কিন্তু উপায় নেই। এভাবেই বেরুতে হবে। কে যেন বলেছিল, আল্লাহর কাছে চাইলে নাকি সব পাওয়া যায়। কিন্তু এই মুহূর্তে সাবার যা দরকার তা আল্লাহর কাছে চাইলেও পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ আছে ওর। আর এ কথাটা ভাবতে গিয়ে আনমনে দুইগালে হাত ছুঁয়ে তওবা করে নিলো। নিজের চওড়া ওড়নাটা দিয়েই নিজেকে উত্তমরূপে ঢেকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল বাড়ি ছেড়ে। টিউশনিতে পৌঁছানোর পরপরই ফোন পেল সাবা। সায়রা ফোন করেছে।
-” সাবু তুই কৈ রে?”
-” টিউশনিতে। কেন? ”
-” কখন শেষ হবে ওটা? ”
-” ঘন্টাখানেক। কেন সেটা বল না।’
-” আমার সাথে একটু বেরুতে পারবি? ”
-” কোথায়?”
-” কোথায় পরে জানাব। আগে বল পারবি কিনা?”
-” সায়রা আমি গতরাতের একটা বিশ্রী ঝামেলার পর ঠিক করেছি যখন তখন এখানে সেখানে আর যাব না। বোরকা পরার প্রাকটিসও করব আস্তে আস্তে। বুঝতেই পারছিস।”
-” সাবা শোন। আমি কোন মার্কেট বা সিনেমায় আমি যাচ্ছি না। আমি একটু আরমানদের বাসায় যেতে চাচ্ছি । আরমানের মায়ের সাথে দেখা করতে। তুই যদি এভাবে একদম যেতে না চাস তবে তোর জন্য আমি বোরকার ব্যবস্থা করতে পারি। করব? একদম ব্রান্ড নিউ। ভাল লাগলে পরে ফেরত দিয়ে দিলি বা নিজে রেখে দিলি। কোন সমস্যা নেই। আমার এক ড্রয়ার ভর্তি শুধু বোরকা জিলবাব আর আবায়া। ”

সাবা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রইল। একবার আনমনেই উপরের দিকে তাকাল। তারপর মৃদু স্বরে বলল, ” ওকে, আমার জন্য বোরকা নিয়ে আয় পারলে। এভাবে আর এদিক সেদিক যাবো না। অনেক ঝামেলা হয়। ”
-” ওকে, তুই লাটিমীর সামনে আয়। আমি সেখানেই আসছি। ” সায়রা ফোন রেখে দিল। আম্মু বাড়ীতে নেই। কাঁচাবাজারে গেছে। এটাই মোক্ষম সুযোগ। দেখা যাবে আম্মু দুই ঘন্টার আগে বাড়ী ফিরবেনা। এই পরিসরে আরমানদের বাড়ী হয়ে আসা যায়। সায়রা বেরিয়ে পড়ল।
তৃণা মেয়েটাকে পড়িয়ে সাবাও সোজা লাটিমীর সামনে চলে এল। তার একটু পরেই সায়রা এলো সিএনজি করে। সাবা সিএনজিতে বসেই বোরকা পড়ে নিল আর মনে মনে আল্লাহর কুদরতী কারিশমায় বিস্মিত হয়ে শত কোটি শুকরিয়া জানাল। ও সত্যিই ভাবতে পারেনি বোরকা একটা আসলেই জুটে যাবে।

===

আরমানের মা দারুণ বিস্মিত হলেন সায়রাকে দেখে। তবে মুখোভাবে সেটা টের পেতে দিলেন না। সরাসরিই বললেন, ” কী চাও ? ”
-” একটা কথা জানতে চাই। ”
-” কী কথা ? ”
-” আপনি আমার আম্মুকে সেদিন কী বলে অপমান করেছিলেন। ” বলেই সারাণ্ডারের ভঙ্গিতে দুহাত তুলে বলল, ” দেখুন, আমি আপনার সাথে পুরোনো প্রসঙ্গ তুলে তর্ক বা ঝগড়া করতে আসিনি আন্টি। আমি শুধু জানতে চাই আপনি আমার মা’কে এমন কী বলেছেন যে সে কোন অবস্থাতেই আপনাদের সাথে আত্মীয়তা করতে প্রস্তুত না ? ”
-‘ তোমার মা প্রস্তুত না মানে ? যেন আমি পা বাড়িয়ে রেখেছি?”
-” কিন্তু কেন ? আমার অপরাধটা কী ? ”
-” সেটা তোমার মায়ের কাছ থেকেই জেনে নাও।”
-” না, আমি অাপনার মুখ থেকেই শুনতে চাই। যদি আপনি চান যে আমি সবসময়ের জন্য আরমানের লাইফ থেকে সরে যাব তাহলে আপনাকে সত্যি বলতে হবে। নিশ্চিত থাকুন, একথা আমার মা বা আমার বাড়ীর কেউ জানবে না।”
-” জানলেও আমাদের কিছু যাবে আসবে না। আমি বানিয়ে তো আর বলিনি। যার মেয়ের জন্মের কোন ঠিক ঠিকানা নেই সেই মেয়েকে নিয়ে তার মায়ের এত দেমাগ থাকা উচিত না।” সায়রা নিরব বিস্ময়ে চেয়ে রইল আরমানের মায়ের দিকে।
====

ক্লান্ত পায়ে বাড়ী ফিরল সায়রা। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ওর হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। নীলিমা দু’বার জিজ্ঞেস করলেন ওর কী হয়েছে। সায়রা এড়িয়ে গেল। মা’কে বলল, ” আম্মু, বারসাতকে ফোন করে আজকের কথাটা তুমি বলে দাও না। উনি যেন যাবার সময় আমাকে সাথে করে নিয়ে যান।”
নীলিমা বিস্মিত চোখে মেয়ের দিকে তাকালেন। সায়রাকে এত বেশী সুবোধ বালিকার ভূমিকায় মানায় না। হলো কী মেয়েটার। গত রাতে ঝোঁকের মাথায় চড়টা মেরে নিজেই কষ্ট পেয়েছিলেন উনি। আসলে চড়টা বেশী হয়ে গিয়েছিল, তার উপর ওসব কথা বার্তা। ভাগ্যিস মঈন সময়মত সামলে নিয়েছিল। নইলে সায়রা এসব কথা সহ্য করতে পারতো না। নীলিমা ওর মাথায় হাত রেখে বোঝাতে গেলে সায়রা ম্লান হেসে মায়ের হাত সরিয়ে দিয়ে বলল ” আমি ঠিক আছি মা। তুমি বারসাতকে ফোন দাও।”
-” সত্যি ? ”
-” তিন সত্যি।”
নীলিমা মেয়ের দিকে বারদুয়েক দেখেই বারসাতকে ফোন করলেন। কিছুক্ষণ কথা বলার পর সায়রার দিকে তাকাতেই সায়রা বুঝতে পারল বারসাত ওকে চাইছে। সে ফোন ধরে শান্ত ভঙ্গিতে বলল, ” গতকালকের ব্যপারটার জন্য আমি সত্যিই লজ্জিত। আজ কী আমাকে লিফট দেয়া যায়।? ”
-” আমি নিশ্চিত আপনি সায়রা নন।”
-” আমি নিশ্চিত আপনিই বারসাত।”
-” হলো কী আপনার।? হঠাৎ এত সুবোধ বালিকা বনে গেলেন কী করে? ”
-” মানুষ বেঁচে থাকলে বদলায় বলে একটা প্রবাদ আছে।”
-‘ যাক্, খুবই ভাল কথা। সন্ধ্যায় দেখা হচ্ছে তাহলে। রাখছি। ”
সায়রা ফোন রেখে বিমর্ষ হয়ে পড়ল। ওর এখন দার্জিলিং যাওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। অর্ধেকটা আরমানের মায়ের কাছে জানলেও আসল ঘটনা তো রুৎবা খালামনিই জানে।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here