ত্রয়ী পর্ব ১৬

0
861

ত্রয়ী
মোর্শেদা হোসেন রুবি
১৬||

মঈন মামা পাশ থেকে বললেন, ” শুনেছিলাম ছেলেটা রাগী আজ তার প্রমান পেলাম। সায়রার সাথে বিয়ে হয়নি ভালই হয়েছে।”
সাবা মঈনের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে ফের অপসৃয়মান গাড়ীর দিকে তাকাল। অজান্তেই বুঝি একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল ওর। কিছুটা বিড়বিড় করে বলল, ” বিয়ে হলেও সায়রাকে বিশেষ সুবিধা করতে পারত বলে মনে হয় না। ”
-” হম, এটা ঠিক। তবে সায়রার সাথে ওর বিয়ে না হওয়াই ভাল।” স্বগোতক্তির সুরে বলল মঈন। বলেই মোবাইল কানে চেপে অন্য পাশে সরে গেল সে। মঈনের কথার মর্মার্থ ধরতে না পেরে প্রশ্নবোধক চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইল সাবা । এমন সময় পেছন থেকে তোয়া বলে উঠলে সাবা সে দিকে তাকাল। তোয়া ওর কাঁধে হাত রাখল।
-” হয়নি বলে যে হবেনা এমন তো কোন কথা নেই। কী বলিস ? ”
সাবা মাথা নাড়ল। আরেকবার দীর্ঘশ্বাস পড়ল ওর। মুচকি হেসে বলল,
-” সায়রার কী রাজ কপাল দেখ। একের পর এক রাজপুত্র জুটে যাচ্ছে। অথচ ওর কাউকেই মনে ধরেনা।”
-” আরমানকে তো ধরল। ”
-” কী জানি। আমার তা মনে হয়না। তবে এই আরমানের ব্যপারটাও আমি বুঝি না, সে কী আসলে মেরুদন্ডহীন নাকী সায়রার ব্যপারে কনফিউজড আল্লাহই জানে। ”
-” জানি না। বা দে। চল এবার বেরোই। রাত বাড়ছে। খামোকা এত হুলুস্থুল করে এলাম। ও তো দেশেই থাকল। ”
-” অবশ্য না এলে বারসাত মিয়ারে দেখতি না। টর্কিশ হিরো। ” সাবা স্বভাসূলভ হেসে বলল। তোয়া অবাক।
-” ওমা, এই বিলাতি ইন্দুর আবার টার্কিস হলো কবে রে ?”
-” উফ্, আর বলিস না। যা কথা শুনাইল। আমি পুরা ফলস পজিসনে পড়ে গেছি।” সাবা ঘাড় ফিরিয়ে মঈনকে খুঁজল। একটু আগেই তো ছিল। গেল কোথায় লোকটা ? আজ উনি না থাকলে এত রাতে এখানে আসার অনুমতি পেতাে না সে।
– ” কাকে খুঁজিস? ”
-” আমার হইলেও হইতে পারে দুলাভাইকে।”
-” ওহ্, ইয়েস। উনি তো আবার তোর হবু দুলাভাই।” বলে তোয়া হাসল।
-” হম, দুলাভাই। এটা আরেক ব্যাক বোনলেস। মিলি আপা তো রাগে চিড়বিড় করে ওনার কান্ড দেখলে। ব্যাটা তার বড় বোনকে যমের মত ভয় পায়।”
-” আর এদিকে ওনার মেয়ে ওনারে পাত্তাই দেয়না। ” তোয়ার একথায় সাবা তাকালে তোয়া ফের বলল, ” সায়রার আজকের এ অবস্থার জন্য উনি দায়ী মানিস এটা ? সায়রা একদিনে কিন্তু এমন হয় নি। সায়রার আরো ঘটনা আছে। সেদিন সজীব ভাইয়া বলল। ” সাবা জবাব দিলো না তবে মাথা নাড়ল। মঈন ভাইও এরকমই কিছু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন একদিন। মিলি আপার অনাগ্রহের কারণে ঠিকমত শোনা হয়নি কথাটা। সাবাকে চিন্তিত দেখাল। তোয়া জানাল ওকে নিতে সজীব ভাই আসবে। ওকে এখুনি মেইন রোডে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। সাবা সায় দিলে তোয়া বিদায় নিয়ে চলে গেল। সাবা মঈনকে খুঁজতে মার্কেটের ভেতরে চলে এল এবার। দোকানপাট বন্ধ হওয়া শুরু করেছে। কয়েকটা তো শাটারও টেনে ফেলেছে। মঈনকে কোথাও না পেয়ে তাকে ফোন দিল সাবা। আর তখনই মনে পড়ল, মঈন ভাইয়ের আজ মিলি আপুর জন্য কী যেন কেনার কথা বলছিলেন। আসার সময়ই কী সব সারপ্রাইজ গিফটের কথা বললেন উনি । উত্তেজনায় তখন কথাটা খেয়াল করা হয়নি। উনি সম্ভবত সেটাই কিনতে গেছেন।
সাবা মঈনের খোঁজে মার্কেটের ভেতরেই হাঁটাহাঁটি করতে লাগল। আর তখনই ওর চোখ পড়ল সামনের দোকানের দিকে। মুহূর্তেই আড়ষ্ট হয়ে উঠল শরীরটা। ছেলেগুলো ওকে দেখে ফেলার আগেই সরে পড়ার প্রয়োজন অনুভব করল সাবা । কিন্তু তিনজনের একজন এরইমধ্যে ওকে দেখে ফেলেছে। শুধু দেখেই ক্ষান্ত দেয়নি। মুচকি হেসে পাশের জনকে খোঁচা মেরে দেখিয়েও দিয়েছে। সাবার দারুণ নার্ভাস লাগছে। ছেলেগুলোকে সে চিনতে পেরেছে। এরা সেই ছেলে যাদের কারণে সিনেমা হল থেকে কোনমতে দৌড়ে বেরিয়ে এসেছিল ওরা তিনজন। চঞ্চল চোখে চারপাশে তাকাল সাবা । মঈনের টিকিটিরও দেখা নেই। আজব কিসিমের এই লোকটার উপর মাঝেমধ্যে এমন রাগ উঠে যে বলার নয়। সাবা দ্রুত পাশের কাপড়ের দোকানটাতে ঢুকে পড়ল। এখানে অন্তত ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করতেও কয়েকবার ভাববে ঐ বদগুলা। এরা না থাকলে সাবা এতক্ষণে মঈনকে ফেলেই চলে যেত। পরে মিলি আপাকে দিয়ে ইচ্ছামত বকা খাওয়াত। কিন্তু এত রাতে একা যাবার সাহস নেই ওর। আগে জানলে তোয়ার সাথে চলে যেত।
ছেলেগুলোর দিকে না তাকিয়েও সাবা বুঝতে পারছে ওরা ওকেই ফলে করছে। সাবা ডিসপ্লেতে ঝোলানো কাপড়গুলো এমন ভাবে নেড়ে চেড়ে দেখতে লাগল যেন মনে হল ও কাপড় কিনতেই ঢুকেছে। পছন্দ হলে এখনই কিনে ফেলবে। অথচ ব্যাগের ভেতরের অবস্থা খুব খারাপ। অনেকটা মেলা শেষের ধানমন্ডি ক্লাব মাঠের মত । খুঁজে পেতে যা মিলবে তা দিয়ে বড়জোর রিক্সা ভাড়া হবে ।
-” কেমন আছেন ম্যাডাম ? ” টানা টানা কণ্ঠ শুনে সাবা তাকাল। শপের বাইরে থেকেই জিজ্ঞেস করছে লম্বা ছেলেটা। সাবার মনে পড়ল এই অসভ্যটাই সেদিন ওর পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রেখেছিল। আর ওর সাথের দুজনের একজন সায়রার সাথে অসভ্যতা করছিল। অপরটা তোয়ার সাথে। পুরো দৃশ্যটা মনে পড়তেই গা শিউরে উঠল সাবার। সিনেমা হলের আলো আঁধারী। কুৎসিত তিনজন মানুষ। আর তাদের নোংরা মানসিকতা। সেদিন সায়রা ওভাবে সিনক্রিয়েট না করলে ছেলেগুলো আরো বদমায়েশী করত।
সাবা না চেনার ভান করে মুখ ফিরিয়ে নিল। কাপড় বাছাই করছে গভীর মনোযোগে। একই সাথে মাথায় চিন্তার ঝড়। যদি ছেলেগুলো আজও বাড়াবাড়ি করে তাহলে কী করবে। ভয়ে ঘামতে লাগল সে। তবে মুখে তা প্রকাশ পেতে দিল না। মুখোভাবে নির্বিকার রইল। ছেলেটার কথা শোনেনি এমন ভান করে ব্যাগ থেকে ফোন বের করল। মঈনকে কল দিয়ে সে অবস্থাতেই ডিসপ্লের থ্রিপীসটার দাম জিজ্ঞেস করল দোকানীকে। ভাবখানা এমন ছিল যে, দামটা রেঞ্জের মধ্যে হলে এখনই কিনে ফেলবে। দোকানী জানাল ওটার দাম চার হাজার টাকা। মনে মনে ঢোক গিলল সাবা। তবে বাইরে শান্ত রাখল নিজেকে। পাল্টা প্রশ্ন করল।
-” এটার আর কালার আছে ? ”
দোকানী ঝুঁকে বক্স থেকে তিন চারটা প্যাকেট বের করে সামনের ডেস্কের উপর রাখলে সাবা সেদিকে এগিয়ে গেল।
-” বের করেন দেখি। ”
পুরো কাজটা সে বাইরের ছেলেগুলোকে পাত্তা না দিয়ে করার চেষ্টা করছে। একই সাথে ফোনের বাটন চালু করে রেখেছে। অনবরত কল যাচ্ছে অথচ মঈন ভাই ফোন তুলছে না। শান্ত ভঙ্গিতে আবার কল চাপল সাবা। বাইরের ছেলেগুলো অলরেডী শপের ভেতর ঢুকে পড়েছে। ওরা কাপড় নাড়াচাড়া করার ভঙ্গিতে একে অপরকে টিপ্পনী কাটছে।
-” আচ্ছা, এই আপিরে কোন ড্রেসটা মানাইব ক তো ?” তিনজনের একজন বলে উঠলে লম্বা ছেলেটা ওর মাথায় চাঁটি মারল, ” হই, আপি কী, ভাবি ক।”

শুনে পরক্ষণেই শুধরে নিল প্রথমজন।
-” ওহ্, স্যরি। উনি তো আবার তর ডাল্লিং লাগে। আহ, সিনেমা হলে যা মজা হইসিল না !”
সাবা কট করে ফোন কেটে দিয়ে আবার কল করল মঈনকে। একই সাথে মনে কসম খেল, মঈনকে আজ মিলি আপার হাতে মাইর না খাইয়েছে তো ওর নাম সাবা না।”
-” আপি, চিনতে পারছেন ? ” লম্বা ছেলেটা সাবার পেছনে এসে দাঁড়াল। ঘাড়ের ওপর দিয়ে বলল, ” আমার নাম মিন্টু । ঐ যে সিনেমা হলে।”

সাবা ঘাড় ফেরাল। কঠিন কণ্ঠে বলল,
-” ফাজলামি করলে একটা চড় খাবি। বেয়াদব ছেলে। আমি জীবনে কোনদিন সিনেমা হলে যাই নাই। কার সাথে না কার সাথে মিলাতে আসছে। মেয়েদের সাথে কথা বলার জন্য বাহানা চাই, তাই না? ‘ বলেই প্রৌঢ় সেলসম্যানের দিকে তাকাল সাবা।
-” এরকম আজেবাজে লোক ঢুকে আপনাদের শপে। আপনারা ব্যবস্থা নেন না কেন ? ”
প্রৌঢ় সেলসম্যান নড়েচড়ে উঠলেন। এসব বখাটেগুলোর উৎপাত নতুন না। মেয়েদের জোট দেখলে এরা নানান ছুতোনাতায় শপে এসে গ্যাঁজাবে। কিন্তু আজ একা এই মেয়েটার পেছনে কেন এল বুঝতে পারছেন না তিনি। রাত বলে নাকী মেয়েটা একা বলে কে জানে। যাই হোক, মেয়েটা দামী কাস্টমার। চার হাজার টাকা দামের থ্রিপীস নাড়াচাড়া করছে। গছাতে পারলে নির্ঘাত এক হাজার টাকা লাভ আছে। প্রৌঢ় লম্বা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ভদ্রভাবে বললেন, ” এই যে, আপনারা কিছু কেনার থাকলে কেনেন। আমার কাস্টমারকে বিরক্ত করবেন না প্লিজ। ”
-” কী বলেন আঙ্কেল ! আমরা কী ম্যাডামকে বিরক্ত করছি ? উনি তো আমাদের পরিচিত। ওনার সাথে আমার এই বন্ধুর বিয়ে ঠিক হয়েছে। এখন সামান্য মনোমালিন্যের কারণে ব্রেকাপ করে আমাদের চিনতেই চাইতাসেনা। আমার বন্ধুটার দিকে তাকান। সে কী পরিমাণ কষ্টে আছে দেখলেই বুঝবেন।” বলা মাত্রই লম্বা ছেলেটা নিরীহদের মত মুখ করে তাকাল দোকানীর দিকে। সেলসম্যান মোটামুটি বিভ্রান্ত বোধ করছেন।
তিনি হাত তুলে থামানোর ভঙ্গিতে বললেন, ” দেখুন, এটা আপনাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। সেজন্য আমার দোকানের পরিবেশ নষ্ট করবেন কেন ? ”
-” না, না আঙ্কেল। আমরা ভদ্র পরিবারের ছেলে। পরিবেশ নষ্টের প্রশ্নই ওঠে না। আপু, কাইন্ডলি ভাইয়ার সাথে একটু কথা বইলা মিটমাট কইরা নেন নয়ত অযথা ভাইয়া এক্সাইটেড হইলে কিন্তু সমস্যা বাড়বো ! ”
-” আমার পায়ের স্যান্ডেলটা দেখেছিস ? ” সাবা রেগে কাঁই হল এবার। চাপা স্বরে ধমকাল ছেলেগুলোকে। তাতে বিশেষ লাভ হলো না। লম্বা ছেলেটা কানের কাছে মুখ এনে বলল, ” অহন লাইভ হইব। তুমার স্যন্ডেল থিক্কা শুরু কইরা বাকি সবকিছু দেখামু । ” বলে বন্ধুর দিকে তাকালে সে তার মোবাইল অন করে সাবার দিকে তাক করতেই সাবা ছটফট করে উঠল।
-” আপনারা কেন এমন করছেন। আমি আপনাদের চিনি না জানিও না। তবু এভাবে আমাকে হ্যারাস করার মানে কী। কিসের লাইভ ? মোবাইল বন্ধ করুন বলছি। নয়ত আমি পুলিশ ডাকব।”
-” পুলিশ তো আমরা ডাকুম। একটা ছেলের সাথে প্রেমের খেলা খেইলা অর জীবনটা নষ্ট করনের লেগা আপনের জেল হওন উচিত। আজকা সবাই জানব যে নারী কত ছলনাময়ী । দুস্ত, ইস্টাট কর।”

সাবা অসহায় চোখে দোকানের চারপাশে তাকাল। সেলসম্যান এতক্ষণ এদিকে তাকিয়েছিলেন। এখন অন্য কাস্টমার এসে পড়ায় তার সাথে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। যদিও কাজের ফাঁকে ফাঁকে উনি এদিকেই তাকাচ্ছেন বারবার। হয়ত উনি নিজেও একটা ঝামেলার আশঙ্কা করছেন। একই সাথে সাবাকেও বোঝার চেষ্টা করছেন। মেয়েটা পোশাকাশাকে ভদ্র মনে হলেও ঠিক আস্থা রাখতে পারছেন না। আজকালকার মেয়েগুলোকে বোঝা আসলেই মুশকিল। এরা কে যে ভদ্র আর কে যে কলগার্ল তা পার্থক্য করা রীতিমত অসম্ভব ব্যপার।

লম্বা ছেলেটা সাবার সামনে এসে দুই হাত কোমড়ে রেখে নায়োকচিত স্টাইলে ঝুঁকে কিছু বলতে যাবার আগেই কাস্টমার লোকটা এগিয়ে এলেন।
-” কী হচ্ছে এখানে ? ” ভারী কণ্ঠেধমকের সুর। সমীহ না জেগে পারেনা। সাবার চোখে পানি। ভয়ে বুক ধড়ফড় করছে। সে কিছু বলতে গিয়েও কেঁদে ফেলে বলল, ” দেখেন না ভাইয়া। এই ছেলেগুলো কে আমি চিনি না। অথচ ওরা আমাকে…!”
-” ও…ই মিছা কতা কও ক্যান। আমার লগে সিনেমা দেখতে যাওনি তুমি। ট্যাকা দেইনি তুমারে আমি? ” লম্বা ছেলেটা ধমকের সুরে বলে উঠলে আগন্তক কাস্টমার লোকটা পাল্টা ধমক দিয়ে ওকে বলল।
-” এ্যাই। মোবাইল বন্ধ করো আগে। বন্ধ করো বলছি। এখানে কথা হচ্ছে। নাটকের স্যুটিং হচ্ছে না।”
-” অই মিয়া আপনে কেডা। আপনেরে কে ডাকসে এখানে।”
” চড় মেরে ঘাড় ঘুরিয়ে ফেলব বেয়াদব। আমি কে সেই পরিচয় তোমাকে দেবার প্রয়োজন দেখিনা। এখন বল তোমরা কারা। দেখে তো গাঁজাখোর মনে হচ্ছে। এ্যাই মেয়ে তুমি চেনো ওদেরকে ? ”

আগন্তুক জিজ্ঞেস করলে সাবার মুখ শক্ত হল। অন্যসময় হলে ওকে তুমি বলার জন্য একচোট নিত। এ মুহূর্তে এসব বলার সুযোগ নেই। সে মাথা নাড়ল।
-” না, আমি চিনিনা ভাইয়া। আল্লাহর কসম।” সাবা প্রবল বেগে মাথা ঝাঁকাল। ছেলেগুলাও হাল ছাড়ার নয়। তারা সমান তেজে নিজেদের দাবীতে সোচ্চার। আগন্তক এবার কাউকে ফোন দিল। তারপর স্পষ্ট স্বরেই বলল, ” তোর থানা তো কাছেই। একটু আয় তো দোস্ত। এখানে তিনটা বাজে ছেলে একটা মেয়েকে বিরক্ত করছে। হ্যাঁ, আমি আছি এখানে। দোকানের নাম। আঙ্কেল দোকানের নাম কী…? ওহ্, কিরণমালা। দোস্তো তুই দুটা কনস্টেবল নিয়ে কিরণমালাতে চলে আয়।”
ফোন কেটে দিয়ে ছেলেগুলোর দিকে তাকাল লোকটা। সাবা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে। কী কুক্ষণেই যে আজ সন্ধ্যার পর বেরিয়েছিল। পুলিশ এলে কী হবে কে জানে। যদি থানায় নিয়ে যেতে চায় ? ওফ, আল্লাহ, কী যে হবে। মঈনের বাচ্চা কই গিয়ে মরেছে। বান্দর হ্রামি । রাগে দুঃখে ছটফট করতে লাগল সাবা। তবে আগন্তক লোকটার প্রতি কৃতজ্ঞ সে। তিনি থাকাতে এটৃুকু রক্ষা যে বখাটেগুলো ওর ভিডিও করতে পারেনি। সাবার হঠাৎ মনে হল সে লোকটাকে কোথাও দেখেছে। কিন্তু ভয়ে আর আতঙ্ক ওর চিন্তাধারাকে স্বাভাবিক স্রোতে প্রবাহিত হতে বাধা দিচ্ছে। লোকটার চেহারা খুব পরিচিত। কোথায় দেখেছে একে ? কোথায়..?

=====

-” কী হয়েছে আমাকে বলো তো আব্বু ? ” ছেলেকে অনেকক্ষণ ধরে নিরব দেখে প্রশ্ন করতে বাধ্য হলেন পেয়ারী মির্জা। বারসাত সন্তর্পনে দীর্ঘশ্বাস চাপল।
-” কুচ নাই আম্মি। নাথিং এলস।”
-” ঝুট বোলনেসে আল্লাহ গুস্সা হোতা হ্যায় বেটা।”
-” সত্যি বলছি আম্মি। তেমন কিছুই না।”
-” তাহলে সায়রা এলো না কেন। নীলিমা আপা আমাকে ফোনে জানালেন তুমি নাকী হঠাৎ কী একটা ঝামেলার জন্য আজ দার্জিলিং পোস্টপোন করেছ ?”
-” হাঁ…উয়ো..! ” বলে থেমে গেল বারসাত। কী ভাবে কথাটা বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। হঠাৎ যে এমন একটা সিনক্রিয়েট হয়ে যাবে বুঝতে পারেনি। রাগের মাথায় মেয়েটাকে যা তা বলছে ফেরার পথে। শেষ পর্যন্ত মেয়েটা মাফ চেয়েছে ওর কাছে। নিজে অবস্থান ব্যখ্যা করেছে। সব শোনার পর শেষ মুহূর্তে বারসাতকে হার্ড ব্রেক করার মত সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়েছে। সায়রাকে ওদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে ওর আজকের যাত্রা স্থগিতের জন্য স্যরি হতে হয়েছে সায়রার মায়ের কাছে এবং সমস্ত দায় নিজের ওপর নিতে হয়েছে। সবচে বিরক্তিকর ব্যপার যেটা ঘটেছে সেটা হলো কাল মেয়েটাকে নিয়ে সেই দার্জিলিং যেতেই হচ্ছে। এটা কোনভাবেই এড়ানো গেল না। নিজের এই জাতীয় দুর্বলতাকে সবসময় অপছন্দ করে বারসাত। তারপরেও ওর দ্বারা এই কাজটাই বেশী হয়ে থাকে। মেয়েটা এখন উৎপাত হয়ে দেখা দিয়েছে ওর জীবনে।

=====

সাবাকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল লোকটা, ” এখন যেতে পারবেন তো? ”
-” জি, পারব। অনেক ধন্যবাদ।”
-” এভাবে বারবার নিজেকে বিপদে ফেলার মানে হয়না। আজ যদি আমি আপনাকে না চিনতাম তাহলে তো ছেলেগুলোর কথাই বিশ্বাস করতে হত। আপনারা এ যুগের মেয়েরা যা শৃুরু করেছেন। আপনাদের কারণেই ইবলিশ তার শয়তানি দেখবার সুযোগটা পেয়ে যায়।”
-” আপনি যে আমার চেহারা মনে রেখেছেন সেজন্য শুকরিয়া।”
-” শুকরিয়া আল্লাহকে জানান। নইলে তো আপনি নিজেই আমাকে চিনতে পারতেন। সাহায্যের জন্য ডাকতেন। কিন্তু কই, অতক্ষণ কথা বলার পরও তো চিনতে পারলেন না।”
-” চিনতে পারিনি এমন না। চেনা চেনা লাগছিল খুব।”
-” যাক্, এখন মনে পড়েছে তো ? ”
-” জি। আপনি সজীব ভাইয়ার ডাক্তার বন্ধু। একদিন স্কুল গলির মোড়ে বখাটেদের উৎপাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। আপনার এই ফাঁপড় টেকনিকটা দারুণ।'”
-” ছেলেদের সাথে এভাবে তেল মেরে কথা বলবেন না। আমি প্রশংসয় বিগলিত হই না কিন্তু বাকিরা ঠিকই হবে। একটু রিজার্ভ হয়ে চলার চেষ্টা করুন।’
সাবা মুখ নামাল। মনে মনে কষে একটা গালি দিল লোকটাকে। লোকটা মাথা নেড়ে বলল, ” সে যাই হোক। দেরীতে হলেও চিনতে পারার জন্য ধন্যবাদ। দোয়া করি, তৃতীয় সাক্ষাৎ যেন এমন না হয়। তৃতীয়বার আপনাকে আমি যদি এই একই রকম সমস্যার সাথে দেখি তাহলে আপনাকেই খারাপ মেয়ে বলে ধরে নেব। কারণ মুমিন একই গর্তে বারবার দংশিত হয় না। মনে থাকবে ? ”
-” জি।”
-” যান ভেতরে যান। আমি বসছি। ”
লোকটার গাড়ীর ভেতর অপেক্ষা করতে লাগল। তার চোখের সামনে দিয়ে সাবা বাড়ীর ভেতর অদৃশ্য হলে তিনি গাড়ীকে চালাতে নির্দেশ দিলেন।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here