ত্রয়ী পর্ব ১৫

0
816

ত্রয়ী
মোর্শেদা হোসেন রুবি
১৫||

ওরা সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। বারসাতকে ডাকতে হয়নি। সে নিজেই এগিয়ে এসে সালাম দিল। নিজ থেকেই যেচে হাত বাড়িয়ে দিল আরমানের দিকে। করমর্দন করল ওর সাথে। নিজের পরিচয় দিল। মঈনের দিকে তাকিয়ে হাসল, ” আপনার সাথে তো পরিচয় আছেই মামা। বাকী যারা গার্লস আছেন তাদের সবাইকে আমি চিনি না তবে ধরে নিচ্ছি আপনারা সায়রার বান্ধবী। “তোয়ার দিকে তাকিয়ে কথা শেষ করল বারসাত। প্রত্যুত্তরে তোয়া হাসল।
-” জি, ঠিক ধরেছেন। আমরা একদম ছোটবেলার বান্ধবী।”
-” হম, সেটা আপনাদের এটিটিউডেই বোঝা গেছে। যাই হোক, নাম না তো জানলেও পরিচয় তো জানা হল। আর নামের বোধহয় ততটা দরকারও নেই। তবে আমার পরিচয়টা আগেই দিয়ে রাখি। সায়রা হয়ত বলতে ভুলে গেছে। আমি বারসাত মির্জা ফ্রম ক্যালকাটা। নানীর বাড়ী পাবনা। যদিও বর্তমানে আমরা শিলিগুঁড়িতেই স্থায়ী। কাজের সুবাদে বাংলাদেশে মাঝেমধ্যেই আসা হয়। তো এই হল আমার পরিচয়। এবার আপনাদের কাছে অনুমতি চাইব। আপনাদের প্রাথমিক আলাপ শেষ হলে আমি বিদায় নিতে চাই এবং সেটা সায়রাকে নিয়ে।” বারসাতের কথায় বাকিরা কমবেশি চমকালেও সায়রা চমকাল বেশী। সে বিস্মিত ভঙ্গিতে বলল,
-” আমি আপনার সাথে ফিরব মানে ? কোথায় ফিরব ? আপনি কী দার্জিলিং রওনা দেবার জথা বলছেন ? আমি কিন্তু আপনার কাছে এক ঘন্টা সময় চেয়েছিলাম। ”
-” স্যরি সায়রা। এক ঘন্টা সময় আমি আপনাকে দিতে পারছি না। তাছাড়া দার্জিলিং আপনি আমার সাথে যাচ্ছেন না। সেখানে গেলে আমি একাই যাব। আপনাকে সাথে নেবার প্রশ্নই ওঠেনা। আসলে ফেরা বলতে আমি আপনার বাড়ী ফেরাকে মিন করেছি। চলুন, আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আমাকে গুলশান ছুটতে হবে। আ’ম অলরেডি লেইট। ” কব্জি উল্টে ঘড়ি দেখে শান্ত ভঙ্গিতে বলল বারসাত।
সায়রা ঘাড় বেঁকিয়ে বলল,” বাড়ী ফিরতে হলে আমি একাই যথেষ্ট। আপনার সাহায্য লাগবে কেন। আপনার কী ধারণা আমি রাস্তা চিনিনা?”
-” আমার ধারণা শুনলে আপনি লজ্জাই পাবেন কাজেই ওটা শুনতে না চাওয়াই ভাল। আমি আপনাকে বাড়ী থেকে এ পর্যন্ত এনেছি। আই মিন আপনার মা আমার দায়িত্বে আপনাকে ছেড়েছেন। আর আমি নিজেকে যথেষ্ট দায়িত্বশীল মনে করি। বিলাতি ইঁদুর হই আর যাই হই, উচ্ছৃংখল মহিলাদের আমি কোন ভাবেই বাহবা পাবার যোগ্য মনে করিনা। কাজেই প্লিজ, চলুন। বাড়ী ফিরে গিয়ে তারপর ঢাল তলোয়ার নিয়ে নামবেন সমস্যা নেই। এই দিনটার জন্যই তো আপনার বাবা তার সমস্ত শ্রম ঢেলে টাকা পয়সা আর নিজের জন্য সুনাম কামিয়েছেন তাই না ? যেন একদিনে মাত্র কয়েক মুহূর্তে তা ধূলিস্যাৎ করে দিতে পারেন।” বারসাত কথা বলছে অত্যন্ত শান্ত গলায় কিন্তু ওর কণ্ঠের দৃঢ়তা উপস্থিত সবাইকে একেবারে চুপ করিয়ে দিল। সাবা নিদারুণ সংকোচে গুটিয়ে গিয়ে আস্তে করে তোয়ার পেছনে গিয়ে লুকাল। বারসাত আরমানের দিকে তাকিয়ে বলল, ” স্যরি ভাইয়া। আপনাকে সিস্টেমেটিক ওয়েতে আসতে হবে। আমাকে নিয়ে ভাববেন না। সায়রার ব্যপারে এমনিতেও আমার কোন বিরাট এক্সপেক্টশনস ছিল না। বাসা থেকে বেরোবার আগে আল্লাহকে শুধু একটা কথাই বলেছি। মেয়ে আমার জন্য কল্যানকর না হলে তাকে আমার থেকে দুর করে দিও। আমার সুন্দরী দরকার নেই, আই ওয়ান্ট আ গুড ওয়ান।”
-” আপনি কিন্তু আমাকে এবং আমার বান্ধবীদের অপমান করছেন।”সায়রা বলল।
-” তার আগে কী আপনি আমাকে এরচে বড় অপমান করেন নি? আমার গাড়ীতে আমার কাস্টডিতে এসে এখন দিব্যি নিজের বিয়ের কথা পাকা করছেন। একবারও কী ভেবেছেন ব্যপারটা আমার জন্য কতটা অপমানজনক ? কেমন লাগত আপনার যদি একই কাজ আমি করতাম ? ” সায়রা মুখ নামাল।
আরমান এবার উসখুস করে উঠল। মঈন সেই যে মোবাইলে ডুব দিয়েছে তার অন্য দিকে মন নেই।
বারসাত বলে চলল, ” আপনারা অল্পবয়েসী মেয়েগুলো নিজেদের অনেক বেশি ম্যাচিওরড মনে করেন। আর আপনাদের এই বয়সের ভুলের খেসারত দেবার জন্য পুরো পরিবারকে বিপদে ফেলে দেন। যাই হোক, দ্যাটস নান অফ মাই বিজনেস। আমি আমার অংশের দায়িত্বটুকু পালন করেই ক্ষান্ত দেব। কাজেই আমার অনৃুরোধ থাকবে, প্লিজ হেল্প মি।

-” দেখুন। আমরা আসলে…!” তোয়া কিছু বলতে চাইলে বারসাত হাত তুলে তাকে থামাল। ” দেখুন, আপনাদের কারো প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। আপনার সেই বান্ধবীর প্রতিও নয় যিনি আমার আউটলুক দেখেই আমার অতীত বর্তমান ভবিষ্যত বলে দিলেন। কেবল তাঁর পছন্দসই না হবার অপরাধে আমি তার দু’চোখের বিষ হয়ে গেছি। আসলে এ ধরণের এটিকেটসের সাথে আমি পরিচিত নই।” বলেই সায়রার দিকে ফিরল বার্সাত।
-” সায়রা আপনি যাবেন প্লিজ ? নয়ত আমাকেই আপনার গার্ডিয়ান কল করতে হবে। আপনার মা পরে আমাকে এ নিয়ে কথা শোনাবেন সে সুযোগ আমি তাকে দেবনা। আমার পরিবারের একটা সম্মান আছে আর তা কোন উন্নাসিক মেয়ের কারণে নষ্ট হতে পারেনা।” বারসাতের চেহারা লালচে দেখাচ্ছে। সবাই একেবারে থমকে গেল। আরমান কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল, ” সায়রা তুমি বাড়ী যাও। আমি পরে তোমার সাথে যোগাযোগ করছি। ” বলে আরমান হনহন করে সে জায়গা থেকে চলে গেল। মঈন সায়রার দিকে তাকিয়ে বলল,” তুই বাড়ী যা সায়রা। বারসাত ঠিকই বলেছে। নীলি আপা সহ পরিবারের সবাই বারসাতের দিকেই আঙ্গুল তুলবে।”

সায়রা একবার তোয়া আরেকবার সাবার দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে গাড়ির দিকে ফিরে চলল। বারসাত চলে আসার জন্য ঘুরে দাঁড়ালে সাবা পেছন থেকে ডাকল, ” শুনুন।”
বার্সাত থামল তবে তাকাল না। সামনের দোকানগুলোর আলোকসজ্জা দেখতে লাগল। সাবা দু পা এগিয়ে এসে নরম সুরে ক্ষমা চাওযার ভঙ্গিতে বলল, ” আমি সত্যিই দুঃখিত। ঝোঁকের মাথায় কতগুলো বাজে কথা বলে ফেলেছি। আসলে আমি…!”
-” একবার তো বলেছি কোন অভিযোগ নেই।” বার্সাত লম্বা লম্বা পা ফেলে গাড়ীর দিকে এগিয়ে গেলে তোয়া আর সাবা নিরবে ওর যাওয়া দেখল। মঈন মামা পাশ থেকে বললেন, ” শুনেছিলাম ছেলেটা রাগী কিন্তু আজ তার প্রমান পেলাম। সায়রার সাথে বিয়ে হয়নি ভালই হয়েছে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here